মেঘে ঢাকা চাঁদ পর্ব-১৪

0
1041

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ১৪)
সায়লা সুলতানা লাকী

“কি আশ্চর্য লাভ! এমন করে বুঝি কেউ ঘুমায়? উঠ, উঠ বলছি, কতদিন বুঝিয়েছি রাতে না খেয়ে ঘুমানো ঠিক না। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনি।দিন দিন তোর দশা হচ্ছে সেই রকম, আমার কোন কথাই শুনিস না আজকাল। উঠরে লাবু মা আমার লক্ষীসোনা , আর জ্বালাস না আমাকে।” রেশমা বিরক্ত হয়ে কথাগুলো বলতে বলতে লাবন্যর বেডের কাছে এসে দাঁড়ালো। লাবন্য চোখ না খুলেই হাত বাড়িয়ে সবসময়ের মতো আম্মুকে টেনে বেডে বসিয়ে তার কোলে মাথাটা তুলে দিয়ে বলল
“সরি আম্মু, ভুলে গিয়েছিলাম, এবারের মতো মাফ করে দাও, আর ভুল করবো না। সারাদিন এত এত ঝামেলা গেল যে রাতে আর একটুও খেতে ইচ্ছে করছিলো না।”

” ঠিক আছে বুঝলাম, এখন উঠ, সোজা মুখহাত ধুয়ে পেট ভরে খেয়ে নিবি। সাবধান নাম মাত্র খাবি না কিন্তু! উঠ বলছি !”

“প্লিজ আম্মু আর পাঁচ মিনিট, এর পর উঠবো। তোমার কোলে ঘুমাতে খুব আরাম লাগে।”

“মাই ডিয়ার লাভ, এখন কিন্তু আমি নাই। এখন এমন করলে কিম্তু একটুও চলবে না। নিজের সাথে সাথে যে রুশকেও তোর দেখতে হবে, এখন যে তোর দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। তোর মতো ছেলেটাও সারাদিন কিচ্ছু খায় নাই। সেদিকে বাসার কারউ কোন খেয়াল নাই। সবাইতো ঠিক মতোই খেলো কেউ আমার ছোট বাচ্চাটার কথাও একবার চিন্তা করল না। মানুষ এমন কীভাবে করে? আমি কি তাদের সাথে এমন করতাম?”

“তারাতো সবসময়ই এমন। আমি বলতাম তুমি তখন হাসতে। এখন বোঝো! এমন যে হবে তাতো তুমি বুঝতেই পারতে তাহলে আমাদেরকে এভাবে ছেড়ে চলে গেলে কেন? তোমার কি এখনই যাওয়ার অনেক তাড়া ছিল?”

“আমি দুর্বল, তোর মতো অত মানের জোর আমার ছিলো না। চোখের সামনে দেখতাম বুঝতাম আমার উপর অন্যায় হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না। কার ভরসায় বলতাম বল? জোরটা খাটাতাম কার কাঁধে ভর করে? অন্য মেয়েদের বাবার বাড়ির জোর থাকে কিন্তু আমারতো তাও ছিলো না। তবুও যুদ্ধ করে চলছিলাম কিন্তু জীবনের এই মোড়ে এসে ….. ”

“কিন্তু কি আম্মু?”

“পৃথিবীতে কোন মা তার সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। আমিও পারতাম না। তাই আগেই চলে গেলাম। আল্লাহ আমাকে সেই কষ্ট পাওয়া থেকে বাচিয়ে দিলেন। তার কাছে যাওয়ার জন্য ডাক পাঠালেন। আর আমি সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিলাম।”

“কার কষ্ট ? কিসের কষ্ট? কি বলছো? কিছুতো বুঝতেছি না।”

“আমি বলতে পারব না। আমাকে জিজ্ঞেস করিস না। শুধু বলব কখনও শেষ না দেখে হার মানিস না। যতক্ষণ সম্ভব হয় লড়াই করিস। নিজে ভালো থাকিস সাথে ভাইটাকেও দেখিস। ওর যেনো কোন অনাদর না হয়। ওর জন্য মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। এই একদিনে যা দেখলাম তাতে খুবই আশাহত হলাম। ভাবতাম ওরা রুশকে দেখবে আদর করবে। কিন্তু এখন দেখছি ওর সমনে মহা বিপদ। তুই ছাড়া ও বড় একা হয়ে যাবেরে। ওর জন্য বুকটা কেমন হাহাকার করছে।”

“আমি বেঁচে থাকতে তুমি ওকে নিয়ে চিন্তা করছো? আজবতো! আমি কি স্বার্থপর না কি? আমি আমার সবটা দিয়ে ওর জন্য করব। ও কখনও একা হবে না। ওকে নিয়ে ভেবো না।”

“সত্যি বলছিস? পারবিতো? থাকবি ওর পাশে? তুই নিজেকে সামলিয়ে শক্ত থাকতে পারবিতো? ভেঙে পরবি নাতো কারউ কথায়, কারউ অবহেলায়?”

“তুমি আমাকে এভাবে বলছো কেন আম্মু? আমি রুশকে কখনওই একা ছাড়ব না। আমি কি একা নাকি? আমার পাশে হিমেল আছে, আব্বু আছে। শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো।”

“ভয়টা যে কোথায় তাইতো তোকে বলতে পারছি না। জীবনের এই সব সীমাবদ্ধতাগুলোকে না ঠেকলে কখনও জানতে পারবি না। কখনও কারউ উপর নির্ভর করবি না। নিজের বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে সঠিক বিবেচনা করে পথ চলবি।কেউ স্বার্থপর ভাবলেও নিজের রাস্তা ছাড়বি না। বাঁচবি, বাঁচার মতো করে বাঁচবি। কারউ করুনার আশা করবি না লাবু।”

“উফফ আম্মু এত কঠিন কঠিন কথা বলছো কেন? সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছেতো!”

“আর কখনও বলার সময় পাবেনাতো তাই বলছি। আমি চলে যাচ্ছি, আর ফিরব না। আমাকে ক্ষমা করিস মা৷ তোর উপর অনেক দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে গেলাম। নিজে ভালো থাকিস, রুশকে দেখে রাখিস।”

“আম্মু কোথায় যাচ্ছো? প্লিজ আম্মু তুমি এভাবে চলে যেও না। তুমি ছাড়া যে আমি অচল, তুমি না আগলে রাখলে আমার অবস্থা কি হবে? আমি যে পদে পদে ভুল করি। আম্মু প্লিজ তোমাকে আমার জীবনে বড় প্রয়োজন, তুমি এভাবে যেও না। আম্মু, আম্মু, ও আম্মু।” বলে চিৎকার করতে করতে লাবন্য উঠে বসল।
ওর শরীর থরথর করে কাঁপছে। চোখ ঘুরিয়ে সারা রুম দেখল, না কোথাও ওর আম্মু নেই। ও আবারও আম্মু আম্মু বলে চিৎকার করে উঠল।হঠাৎ করেই নিজেকে বড় অসহায় লাগল, মনে হল ওর সমস্ত পৃথিবীকে শূন্য করে দিয়ে ওর আম্মু চলে গেল। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না হুহু করে কেঁদে উঠল। বাঁধ ভাঙা জোয়ার যেনো চোখ ছাপিয়ে উপচে পড়তে লাগল।

লাবন্যের চিৎকার শুনে লিখন দৌড়ে এল ওর রুমের সামনে। দরজা লক করা দেখে এক্সট্রা চাবি এনে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে লাবন্যকে জড়িয়ে ধরল। লাবণ্য তখনও কাঁপছে। বাবাকে পেয়ে ও কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুরু করল
” আব্বু আম্মু এসেছিল, আম্মু এসেছিল আমার কাছে। আমাকে ঘুম থেকে জাগালো খেতে বলল, রুশ খায়নি তাই আম্মুর মনটা খুব খারাপ। আম্মু অনেক অনেক কথা বলল। আব্বু, আম্মু এসেছিল আমার কাছে। আম্মুর “লাভ” এর কাছে।

“রেশমা তোদের মা, তোরা না খেয়ে ঘুমালে সবসময়ইতো বকা দিত। তাই এসেছিল। ও তোদের অনেক ভালোবাসতো। ওকে ছাড়া আমাদের জীবন বড় কঠিন হয়ে যাবেরে মা।”

“আব্বু ভালোবাসতো বলছো কেন? আম্মু এখনও ভালোবাসে। এখনও আমাদের কেয়ার করে।”

“তোর আম্মু আর নেই এটাই এখন সত্য। আমাদেরকে এটাই মেনে নিতে হবেরে লাবু। ”

“আম্মুকে এত করে বললাম আমাদের কাছে থাকতে আম্মু থাকলো না। আম্মু আর ফিরবে না, আব্বু। আম্মু ও আম্মু তুমি কেন আমাকে এমন একা করে গেলে। আমি যে বড় একা হয়ে গেলাম।”

কে বলে তুই একা? তুই, আমি আর রুশ। আমরা তিনজন, একা কোথায়? একাতো তোর আম্মু হয়ে গেল। চল তোর আম্মুর বিছানায় চল, রুশ ওখানে একা আছে, আমরা আজ তিনজন এক সাথেই থাকব চল।” বলে লিখন লাবন্যকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিজের রুমে নিয়ে রৌশনের পাশে শুয়ায়ে দিল। রৌশন সারাদিন কেঁদে এখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে। ওর মুখটা দেখে লাবন্যের বুকটা আবারও ডুকরে কেঁদে উঠল। লিখন রুশের পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। একটা সময় লাবন্য ঘুমিয়ে পড়ল।

রুমের মধ্যে খুটখাট শব্দে ঘুম ভাঙল লাবন্যের। চোখ মেলে দেখল ওর বড় ফুপু কি যেনো খুঁজছে রুমের মধ্যে। ওর আব্বু বিছানায় নাই। রৌশনও নাই। লাবন্য শুয়া থেকে আস্তে করে উঠে বসল। ফুপুর দিকে তাকিয়ে বলল

“কি খুঁজছো তুমি?”

“আলমারির চাবি, রেশমা কোথায় রাখতো বলতো? বাসার কোথায় কি আছে তা বুঝিয়ে দিয়েতো যাবে? তা না কথা নাই বার্তা নাই সকাল বেলায় সে হইছে নিরুদ্দেশ। লিখনটার জ্ঞান বুদ্ধি আর হলে না।”

“আলমারির চাবি দিয়ে তুমি কি করবে?”

“কি করবো মানে? বাসা ভরা মানুষ, তার কোন খেয়াল আছে তোর বাবার? সবার সকালের নাস্তা কি হবে তা কে দেখবে? টাকা লাগবে না এগুলো আনাতে? চাবি ছাড়া বের করবো কীভাবে?”

“মানে? তুমি আম্মুর আলমারি খুলবে? কার পারমিশনে? আর সকালের নাস্তা বাহির থেকে আনাতে হবে কেন। খালা বুয়া কোথায়? একটা বেলার খাবার তোমরা নিজেরা মেনেজ করতে পারো নাই। আজবতো সব।”

“শুনেছি তুই বেয়াদব, এখনতো দেখছি আসলেই তুই একটা আস্ত বেয়াদব। বড়দের সাথে কথাটাও বলতে শিখিস নাই। তোর মরা মায়ের কাছ থেকে পারমিশন আনতে হবে আমাকে তাই না? বেয়াদব মেয়ে হইছে একটা।” বলতে বলতে রাগে গজগজ করে বের হয়ে গেল রুম থেকে।

লাবন্য চুপচাপ বসে পুরো বিষয়টা নিয়ে ভাবলো কিছুক্ষন।রাতে ওর আম্মুর কথাগুলো বারবার স্মরণ করল। নিজের মাথাটাকে স্থির করল।হঠাৎ করেই বাহিরে চেঁচামিচি শুনে লাবন্য ওর মায়ের রুম থেকে বের হল।
ডাইনিংএ রৌশন বসে আছে আর ওর সাথে ছোট ফুপু চিৎকার করছে।
“মরা বাড়িতে এখন তোর জন্য চুলা কে ধরাবে? হোটেলের পরোটা এনে দিয়েছি তা খাচ্ছিস না কেন? এত মর্জি করতে হয় না রৌশন, আমার ছেলেকে দেখ কি সুন্দর করে খাচ্ছে। তোর অসুবিধা হচ্ছে কেন?”

“কারন ও বাহিরের খাবার খেতে পারে না। অভ্যাস নাই।গ্যাস হয় খুব। তাই ওর জন্য বাসাতেই পরোটা বাননো হয়। বুঝতে পারছো ফুপু?”

“হুমম বুঝলাম এখন লাবন্য তুইও বুঝ, এই মরা বাড়িতে চারদিন চুলা ধরবে না। এখন ও খাবে কীভাবে? কেউতো নেই আর বাসা থেকে খাবার রেঁধে পাঠাবে।”

“কি সারাক্ষন মরা বাড়ি মরা বাড়ি লাগায় রাখছো, আমরা জানি যে আমাদের মা গতকাল মারা গেছে, বারবার তা আমাদের মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার নাই। আর কোথায় পাইছো এই হাদিস মৃতবাড়িতে চুলা ধরায় না? যত্তসব ফাউল কথাবার্তা। ”
কথাটা শেষ করেই মুখটা ঘুড়িয়ে খালা বুয়াকে ডেকে রৌশনের জন্য পরোটা বানাতে বলল। আর তখন
ওর দাদি এসে বলে উঠল।
“লাবন্য এত বাড়িস না, যা জানিস না তা নিয়া কথা বলিস না। চুলা ধরালে সংসারে অমঙ্গল হবে।”

“আচ্ছা দাদি সংসারটা যখন আমাদের তখন অমঙ্গল হলে আমাদেরই হবে। এসব নিয়ে আর তোমাদের ভাবতে হবে না। খালা বুয়া তুমি পরোটা বানিয়ে আনো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। রুশ তুই একটু অপেক্ষা কর।” বলে আর দাঁড়ালো না নিজের রুমে চলে গেল।

পিছনে দাদি ফুপুরা কি বলছে তা শোনার সময় ওর নাই। মা থাকতে তাদেরকে মায়ের বারনের কারনে বহু ছাড় দিয়ে চলেছে, এখন আর না। নিজেরটাকে নিজের করেই ভাবতে হবে। এটা কিছু সময়ের মধ্যেই আন্দাজ করতে পেরেছে।

ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে টেবিলে বসল রুশকে খাওয়াতে। নিজ হাতে পরোটা ছিড়ে ছিড়ে ডিম দিয়ে ওর মুখে তুলে দিতে দিতে বলল
“রুশ এখন থেকে তোকে আমি মাঝে মাঝে হেল্প করব। বাকিটা সময় তোকো নিজের কাজ নিজে করতে হবে। প্রথমে একটু কষ্ট হবে, কিন্তু একটা সময় পর ঠিকই শিখে যাবি। আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন, আম্মু ছাড়া আমরা ঠিকঠাক চলতে পারি কি না তার! কিংবা আম্মু আমাদেরকে ওয়েল ট্রেনড করতে পেরেছে কি না তার। ইন শাহ আল্লাহ আমরা পাশ করব।কি করব না বলতো রুশ? ”

রুশ কোন কথা বলল না চুপ করে বসে থাকল কিন্তু ওর চোখ ছলছল হয়ে উঠল। লাবন্য আবার কিছু বলবে তখনই ফুপাত বোন ওর মোবাইলটা এনে ওর হাতে দিয়ে বলল
“আপু তোমার মোবাইলটা অনেকক্ষন ধরে বাঁজতেছিল।”
লাবন্য মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল হিমেলের নাম্বার। কলটা রিসিভ করল

“হ্যালো বন্য ”
“হুমম বলছি।”
“কল রিসিভ করছিস না কেন? ভয় পাচ্ছিলাম। রাতেও কয়েকবার দিছিলাম।”
” হুমম, কেন কল দিছো?”
“দুপুরে আমি আসব খাবার নিয়ে। বাসায় এখন কত জন আছেন একটু জানাতো।”
“এসব কেন করবা? এসবের কোন দরকার নাই।”
“আহা তুই বুঝছিস না। এটা নিয়ম।”
“উহু, এমন কোন নিয়ম নাই।”
“আচ্ছ তুই আম্মুর সাথে কথা বল।”
“হ্যালো লাবন্য,”
“আসসালামু আলাইকুম খালামনি। ”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম, এখন কেমন আছিস?”
“এইতো আছি।”
“শোন দুপুরের জন্য রান্না করছি বাসায়। হিমেল আসবে খাবার নিয়ে।”
“না খালামনি এ বাসায় কোন খাবার পাঠিয়ো না তুমি।কেন পাঠাবা? কার জন্য পাঠাবা? এখানে কেউ আছে তোমার?”
“বোকা মেয়ে বোঝে না। এটা নিয়ম দিতে হয় শোন…….”
“মানুষ মরার পর এত এত নিয়ম তোমার মনে পড়ল আর বেঁচে থাকতে তার সাথে দুইটা ভালো কথা বলার কোন নিয়ম বের করতে পারলে না? তোমার হাতের রান্না আম্মুর খুব পছন্দের ছিল, কই তখনতো একদিনও তার জন্য এক বাটি খাবার পাঠাও নাই। আজ আম্মুই নাই, তোমাদের জন্য হাহাকার করার মানুষটাই নাই। এখন আর এসব করতে যেও না। লোক দেখানো আদরের কোন দরকার নাই। আমি কখনওই মরনোত্তর আদরে বিশ্বাসী না, যা পাও হাত পেতে নাও নগদে নগদে বুঝছো খালামনি। তাই বলছি এ বাসায় কোন খাবার পাঠাবা না। আমরা চালিয়ে নিতে পারবো। যদি পারো তবে আমাদের জন্য একটু দোয়া করো যেনো শোকটা কাটিয়ে উঠতে পারি তাড়াতাড়ি । রাখি খালামনি।”
বলে কলটা কেটে দিল। রেহেনা বেগমকে আর কোন কথা বলতে দিলো না। খেয়াল করল লাবন্য ওর চোখ উপচে পানি গাল বেয়ে পড়তে শুরু করেছে। কি আশ্চর্য ওর হঠাৎ এত কান্না কেন পাচ্ছে?

“লাবন্য তুই মনে হচ্ছে একটু বেশি বড় হয়েগেছিস। নিজের ইচ্ছে মতো ডিসিশন নিচ্ছিস। আমরা যে বাসায় আছি, আমাদেরকে জিজ্ঞেস করার কোন প্রয়োজনই মনে করছিস না।এতটা বেয়াদব হলি কখন? রেশমা কি তোদের কিছুই শিখায় নাই? আমাদের দেখেওতো আমাদের মতো হতে পারতি। না একেবারে মায়ের মতো হইছিস, দেখছি!” পিছন থেকে ওর বড় ফুপু রাগে ফোঁসতে ফোঁসতে কথাটা বলল।

“বড় ফুপু তুমি ভুল বলল, একেবারে ভুল। আমাকে আমার আম্মুর মতো ভাবছো কেন? তুমি কি এখনও বুঝো নাই, আমি যে আমার আম্মুর মতো সহজসরল, নরমশরম মেয়ে না৷ আমি একেবারে আমার রক্তের মতো হইছি। নিজেরটা খুব ভালো বুঝি।” চোখের পনি মুছেই ফুপুর কথার উত্তর দিল ও।

“এই রুম বন্ধ করল কে? দরজা আটকানো কেন?”
লাবন্যের দাদি ওর মায়ের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একটু রুক্ষ হয়েই জিজ্ঞেস করল।

“আমি বন্ধ করেছি, কেন দাদি তোমার ওই রুমে কি প্রয়োজন?”

“তা কি তোকে বলতে হবে?”

“হুমম দাদি, আম্মুর রুমে যে কেউ ঢুকতে পারবে না। ওখানে সব কিছু অগোছালো। আমি ওভাবেই দেখতে চাই আরও কয়েকটাদিন। ওই রুমে অন্য কেউ ঢুকবেও না। কেউ কিছু ধরবেও না। ওখানে এখনও আম্মুর ছোঁয়া লেগে আছে।গন্ধ আছে।এগুলো নষ্ট করবে না কেউ। ”

“তোর কথা মতো হবে?” দাদি একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল।

“হুমম হবে। আমারতো তাই মনে হয়। এখন থেকে তাই হবে। আম্মুর সংসারটা এখন থেকে আমিই দেখব। আমাকেই দেখতে হবে।”

কথাটা এতটা শক্ত ভাষায় বলল যে সবাই অবাক হয়ে লাবন্যের দিকে তাকিয়ে রইল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here