#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ২৮)
সায়লা সুলতানা লাকী
বেশ কয়েকদিন ধরেই লাবন্যের মনটা বেশ ভার ভার হয়ে আছে। সারাক্ষন কি যেনো ভাবে, কিন্তু নানিকে কিছুই বলে না। বিচক্ষন নানিও আগ বাড়িয়ে তেমন কিছু জিজ্ঞেস করেন না। ভিতরে ভিতরে হিমেলকে দিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন যে নতুন সেমিস্টারে ফি জমা দেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। তিনি তাই ভেবে নিলেন হয়ত এই বাড়তি টাকার জন্যই ও এতটা টেনসড হয়ে আছে। সেমিস্টারের ফি গুছানো হলে পরে তিনি ওকে ডেকে বলে দিলেন যে তিনি ওর আব্বুকে জানিয়ে দিয়েছেন বাড়তি টাকার কথাটা। লিখন টাইমলি তা পরিশোধও করে দিবে বলেছে।এসব নিয়ে যেনো লাবন্য কোন টেনশন না করে।
কিন্তু তারপরও ওর টেনশন যেনো কমল না। দিন যেতে যেতে যখন লাস্ট ডেট চলে এল তখন লাবন্য বেশ সাহস নিয়েই ওর নানির কাছে এসে বলল
“আচ্ছা নানি, এই সেমিস্টারে টাকাটা আব্বুকে বলো না আমার হাতে দিতে, আমিই জমা করে দিব।তাকে আর কষ্ট করতে হবে না তাহলে আমার জন্য ।”
লাবন্যের কথা শুনে নানি এবার বেশ চিন্তায় পড়লেন, মনে মনে বললেন” মেয়েটার আসলে সমস্যাটা কেথায়? সেমিস্টার ফি নিয়ে সমস্যা হলে এতদিনে সে জানতো যে তা দেওয়া হয়ে গেছে। মেয়ের সমস্যাতো অন্য জায়গায়। কিন্তু এখন বিষয়টা হল, জিজ্ঞেস করলে কি সত্যটা বলবে এই মেয়ে?”
নানি চুপ আছে দেখে লাবন্য আবারও বলল
“নানি শোনো ওনার এখন নতুন এক সংসার হয়েছে, শুধু শুধু কেন আমাদের জন্য সময় নষ্ট করবে, তার চেয়ে টাকাগুলো আমাদেরকে দিয়ে দিলেই হল, তার ঝামেলা শেষ। আমাদেরটা আমরাই সমাধান করতে পারবো।”
“টাকা দিয়ে আসলে কি করবি?”
“কি করব মানে? ফি জমা করে দিব!”
“উঁহু, তুইযে সত্য বলবি না তা আমি জানি।”
“আচ্ছা নানি তুমি যে রুশের স্কুলে যাও, তোমার সাথে ওই এডভোকেট আন্টির দেখা হয়েছে কখনও?”
“হুমম, এক দুই দিন দেখা হয়েছিলোতো।”
“কিছু বলেছে তোমাকে?”
“নাতো! কি বলবে? কি সম্পর্কে? ”
“টাকা নিয়ে, আমাকে খোঁজেনি? আমি তো এখন আর যাই না স্কুলে।”
“নাতো, টাকার কথাতো কখনও কিছু বলেনি। তবে হ্যা তোর খোঁজ খবর নিয়েছিলো।”
“জানতাম নিবে। টাকাটাইতো এখনও গোছাতে পারলাম না। কীভাবে যে দেখা করি তার সাথে?”
“কিসের টাকা? তার ফিসটা?”
“হুমম।”
“ওটাতো কবেই শোধ করে দিয়েছে লিখন। ওই টাকার চিন্তায় তুই এতটা কাতর হয়ে আছিস?”
“কি বলছো তুমি? ওই টাকা আব্বু দিয়ে দিয়েছে?”
“হুমম, অনেক আগেই দিয়েছে। সন্তানের করা ঋন, বাজিয়ে রাখবে না কি?”
“উফফ, জানটা বাঁচলো। কি যে একটা টেনশনে ডুবে ছিলাম তা তোমাকে বোঝাতে পারবো না।” কথাটা শেষ করেই লাবন্য আর দাঁড়ালো না নিজের রুমে চলে গেল।
ওর নানি চুপচাপ ওর আচরনগুলো পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। উনি ভেবেছিলেন বাপ টাকাটা দিয়ে দিয়েছে শুনে বাপের উপর কিছুটা হলেও খুশি হবে। কিন্তু না ওর ভেতরে তেমন কোন প্রতিক্রিয়াই দেখা গেলো না।
রাতে খাওয়ার সময় লাবন্য আবার একবার জিজ্ঞেস করল নানিকে, টাকাটা সত্যি সত্যিই দিয়েছেতো ওর আব্বু! আর নানি সে বিষয়ে পুরোপুরি কনফার্মতো!
এমন প্রশ্নে এবার তিনি একটু রেগে গেলেন। বেশ শক্ত গলাতেই বললেন
“এটা কেমন প্রশ্ন হল ? তোর আব্বুকে কি এতটুকুও বিশ্বাস করতে পারছিস না? সে বলছে দিয়েছে তারপরও তুই বলছিস কনফার্ম করতে? লিখন তোর দেওয়া কার্ড নিয়ে সেই এডভোকেটের সাথে দেখা করেছে, এই ফ্ল্যাট তোদের নামে রেজিষ্ট্রেশন করিয়েছে। তার ফিস দিয়েছে।আর তুই ওকে এতোটা অবিশ্বাস করছিস?”
“সত্য বলতে যতদিন শুধু সে আমার আব্বু ছিল ততদিন তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতাম।যখন থেকে সে আরেকজনের বর হয়েগেল তখন থেকে তার উপর থেকে ভরসা,বিশ্বাস সব হারিয়েছি।”
“এটা মোটেও ঠিক না। কখনও নিজের অধিকার রাগ করে ছাড়তে নেই। রাগ ভালো কিছু দেয় না জীবনে। ও তোদের আব্বু ছিল, আছে, থাকবে।তোরা অধিকার ছাড়লে তা অন্য কেউ দখল করবে। নিজের অধিকার নিজেকেই আগলে রাখতে হয়, যত্ন করতে হয়, প্রতিষ্ঠা করতে হয়।”
“মানে, তুমি কি বলতে চাচ্ছো? ”
“কিছুই না, নিজের বাপকে নিজের করে রাখতে বলছি, বাপের প্রতি নিজের অধিকার খাটাতে বলছি। যেমনটা আগে করতি।”
“তুমি সব জেনেও তাই বলছো? সে আমাদের কথা না ভেবে আরেকটা বিয়ে করে এসেছে, তাকে কি করে আবার আগের জায়গায় বসাই? এটা তোমার মতো মানুষ কেমন করে বলে তা বুঝতে পারছি না!”
“তোদের ধারনা কি ভুল শুধু ছোটোরা করে আর বড়রা সবসময় তা ক্ষমা করে দেয়? কখনও এমন কি হয় না যে বড়রা ভুল করে আর ছোটরা তা ক্ষমা করে দেয়?”
“ও মাই গড! আব্বুর এই ভুলতো কোনদিনও ক্ষমা করা সম্ভব হবে না। আমি কেন এটা কোন মেয়েই পারবে না।”
” হুমম, এই ক্ষমাটুকু আমরা করতে পারি না বলেই সারাজীবন শুধু কষ্ট, হাহাকার বহন করে বেড়াই।যদি তোর মা’কে ক্ষমা করতে পারতো তোর নানা, তবে আবার ও আমার বুকেই থাকতে পারতো। তাহলে আর ওর ভিতরটা এতটা দগ্ধ হতো না অনুশোচনায়। জীবনটা আমাদের বেশ আনন্দেই কাটতে পারতো।আমরা সবাই সবার জায়গায় দাঁড়িয়ে শুধু কষ্টের সাগরে ডুবে হাহাকার করতে করতে জীবনটাকে শেষ করতাম না। হায়রে ক্ষমা, হায়রে ক্ষমতা। কেন যে আল্লাহ সবার ভিতরে এই ক্ষমা করার ক্ষমতাটা দেয় না, তা আমি জানি না।” কথাটা শেষ করে একটা জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
“নানি আজ তোমার আসলে কি হয়েছে বলোতো! কিসব আবোল তাবোল বলছো। তাকে ক্ষমা করা মানে বোঝো? আমি আমার এই ছোট্ট মাথায় তা বুঝি আর তুমি এত জ্ঞানী হয়ে তুমি বোঝো না?”
“হুমম আসলেই বুঝি না। বাদ দে এসব কথা। আজ মনটা মনে হয় ভালো নাই। কোন কিছু ভালো লাগছে না। কিছু খেতেও ইচ্ছে করছে না। ”
“তোমার শরীর ভালোতো?”
“হুমম ভালো। তোরা খেয়েনে। আমি উঠি।” বলে নানি উঠে নিজের রুমে চলে গেলেন। লাবন্য বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে, আজ এই এক অন্য নানিকে যেনো দেখছে ও।
খালা বুয়া তরকারি নিতে এসে লাবণ্যকে বলল
“খালাম্মার মনডা আজকা বেশি খারাপ হইছে কারন আপনের মামারা যে কেউ খোঁজ নিতে আসে না সেই দুঃখে।”
লাবন্য প্লেটের খাবারগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে আপন মনেই বলল, পৃথিবীতে কেউ সুখী না।একেকজন একেক দুঃখে দুঃখী। সবারই নিজস্ব কিছু দুঃখ থাকে তা সে কাউকে শেয়ার করতে চায় না। মনের মধ্যেই চেপে রেখে শুধু কষ্ট পায়।
হোমায়রা চলে যাওয়ার পর রেহেনা বেগম একদিন কল দিয়ে তার মায়ের সাথে বেশ অনেকক্ষন কথা বললেন। লাবন্য টের পেলো যে বড় খালামনি কল দিয়েছেন তাই আর নানির সামনে গেলো না।বলুক কথা তারা নিরিবিলি। খালামনি কাঁদ ছিলো তা বোঝা যাচ্ছিলো নানির কথায়। দূর থেকে শুনে নিজেরই মনটা খারাপ হয়ে গেল। সন্তান কষ্ট পেলে মায়ের কাছেই আশ্রয় চায়। সেটা যে বয়সেই হোক। সন্তান সন্তানই হয় আর মা মা’ই হয়। হয়তো মেয়ে চলে যাওয়ায় মনটা বেশি খারাপ খালামনির। হঠাৎ মনে হল খালামনি কতটা ভাগ্যবতী, এই বয়সেও তার মনের কষ্ট জমা রাখার ব্যাংক আছে অথচ এই ব্যাংকটা ওর আম্মুরও ছিলো না আর ওর এই বয়সেই তা নাই। হঠাৎ করেই বুকটা খা খা করে উঠল নিজের মায়ের জন্য। এখন হুটহাট খুব একটা মায়ের কথা মনে পড়ে না আজ এমনভাবে মনে পড়তেই চোখগুলো ভিজে উঠল। রুশকে আড়াল করে নিজের রুমে ঢুকে গেল। বুঝল আজ আর এই কান্না বাঁধ মানবে না।
এভাবে কাটতে লাগল দিনগুলো ওদের সবকিছু কেমন একটা নিয়মের মোড়কে আবদ্ধ হয়েগেল। বেশ কিছুদিন পর একদিন হিমেল আসল ওদের বাসায়।সেদিন হাতে ছিলো মতিচুর লাড্ডু আর রসগোল্লা। লাবন্য ওকে দেখেও না দেখার ভান করে নিজের রুমে গিয়ে বসে থাকল। রুশতো রসগোল্লা দেখেই খুশিতে লাফাতে লাগল। গোটা কয়েক এরই মধ্যে গপাগপ মুখে পুড়ে দিল। ওর অবস্থা দেখে হিমেল বেশ খুশি হয়ে গেল।
“শেষ পর্যন্ত চাকরিটাতেই জয়েন করে ফেললি?” নানি বেশ চিন্তিত মুডে প্রশ্নটা করলেন।
“হুমম, এছাড়া আর কি’ইবা করতে পারতাম? নিজের যোগ্যতা প্রমান করার আর কোন পথ খোলা ছিলো না সামনে।”
“উচ্চতর ডিগ্রি? ”
“ধরে নাও ওটা ভাগ্যে নাই।”
“পরে একটা সময় এটা নিয়ে আফসোস থাকবে মনে।”
“পরিপূর্ণ ভাবে কেউ সব পেয়েছে এমন মানুষ কয়জন পাবে? কিছু না কিছুতো ছাড় দিতেই হয়েছে জীবনকে গোছাতে গিয়ে৷ আমি না হয় ওটাই ছাড়লাম।”
“আফসোস জিনিসটা খুব খারাপ, খুব পোড়ায় কিন্তু। ”
“উফফ নানু, তুমি আগে ভাগেই এত ভয় দেখাচ্ছো কেন? আমার চাকরির মিষ্টি খাও। লাড্ডু খাও।”
“হুমম খাব, খাবো না কেন? তুই চাকরি পেয়েছিস তাতেতো অনেক খুশি হয়েছি। তুই কি ডিসিশন নিবি তা নিয়ে কয়দিন খুব টেনশনে ছিলাম।”
“কি মনে হয়? ডিসিশনটা ঠিক আছেতো? ”
“তা আমি জানি না। এটা সম্পূর্ণই তোর বিষয়। এই সম্পর্কে আমি কিছুই বলবো না কখনও। ”
“কিছু বলতে হবে না তুমি শুধু আমাদের জন্য দোয়া করো।”
“তা সবসময়ই করি। তোরা সুখে থাকলে আমার চেয়ে আর কে বেশি খুশি হবে।”
“হুমম, যাই তাকেও একটু মিষ্টি খাওয়ায় আসি।” বলে হাসতে হাসতে মিষ্টি নিয়ে লাবন্যের রুমের দিকে গেল হিমেল।
“কিরে আমি আসলাম মিষ্টি নিয়ে সুখবর দিতে আর তুই মুখ ফুলিয়ে নিজের রুমে এসে ঘাপটি মারলি ঘটনা কি?এটা কেমন কথা হল বলতো ?
” এই কি? তুমি আমার রুমে আসছো কেন?”
“একশো বার আসবো। তোর সমস্যা কি? ”
“অনেক সমস্যা, সব তোমাকে বলতে হবে নাকি? তা আজ আসছো কেন? আজতো তোমার নানুমনি তোমাকে ডাকেনি? শুধু শুধু এ বাসায় আসছো কেন?”
“চাকরি পেয়েছি।” বলেই হিমেল একটা রাজ্য জয়ের অনুভূতির মতো একটা হাসি দিল।
“তো।”
“তো, মানে? এতো তো তো কোথায় শিখলি?” হিমেলের মেজাজটা একটু গরম হয়ে গেল ওর প্রশ্নে।
“আমার সাথে চিৎকার করবা না। তোমরা পুরুষরা এত সাহস পাও কোত্থেকে? যার তার সামনে দাঁড়িয়েই চিৎকার শুরু করো।সবকিছু কি তোমাদের নিজের সম্পদ মনে করো নাকি?” এবার লাবন্যও ক্ষেপে উঠল আরও বেগে।
“বন্য তোর হইছেটাকি বলতো? তুই সব কিছুতেই এমন রিয়েক্ট করিস কেন ইদানীং? ”
“আমার আবার কি হবে? আমি শুধু শুধু কেন তোমার সাথে রিয়েক্ট করবো? নিজেকে কি ভাবো তুমি?”
“চুপ একদম চুপ, বেশি ভাব ধরবি না? আসলাম তোকে খুশির খবরটা দিয়ে মিষ্টি মুখ করাতে আর তুই…..”
“মিষ্টিমুখ? এই মুখ বিষাদে ভরা, একেবারে তিতা হয়ে আছে। তোমার এসব মিষ্টিতে কখনওই মিষ্টিমুখ হবে না, বুঝলা?”
“তাহলে বল কি লাগবে তোর? তুই যা চাইবি আজ তাই দিয়ে তোকে মিষ্টিমুখ করাবো।” কথাটা বলে একটা দুষ্ট হাসি হাসলো হিমেল।
“এবার কিন্তু তুমি মাত্রা অতিরিক্ত করছো। তুমি এখনই এই রুম থেকে যাবে। এক্ষুনি যাবে। আমি মা হারা এক মেয়ে। আমার আব্বুর দুই বিয়ে। আমি জোর করে আব্বুর থেকে ফ্ল্যাট লিখিয়ে নিয়েছি। আমি অত সহজ মেয়ে না। এটা তুমি বুঝো না?
“এসবতো তুচ্ছ, এসব কোন ব্যাপার হল? তুই তার চেয়েও ডেঞ্জারাস। তুই বন্য। একেবারে খাঁটি বন্য। আমি তা জানি, এর বেশি আর কিছু জানাটা কি খুব জরুরি? ”
“এসব কথা আর কখনও আমার সামনে বলবা না। এসব এখন আর আমার শুনতে ভালো লাগে না। আমি রেশমা না, এমন সব কথায় মন গলে না। কেউ চাইলেই ধোঁকা দিতে পারবে না আমাকে। কোনো প্রতারকে ফাঁদে আমি পা দিবো না।”
“আমিও লিখন না। ধোঁকা দিতে শিখিনি। সব পুরুষকে এক পাল্লায় মাপিস না।”
“তাহলে তুমি কোন টাইপের পুরুষ? স্বার্থপর টাইপের কি? নাকি ফাঁকিবাজ টাইপের। সঙ্গীর বিপদে নিজে গুম হয়ে যাওয়া কেউ? যেখানে কি না সঙ্গী আশা করে থাকে তার পাশে এসে দাঁড়াবে কেউ। কিন্তু না উলটা ধমকা ধমকি করে দূরে সরে থাকা কেউ তুমি?”
“বাহ দারুন বলছিসতো! টাইপগুলোও ভালো মিলিয়েছিস। দারুন, দারুন। সবাই শুধু নিজেরটা দেখে, নিজের অবস্থান থেকে যা দেখা যায় তাই মনে গিট্টু বেঁধে রাখে। এটা এক প্রকারের অন্ধত্ব।”
“আমি অন্ধ? হুম আমি অন্ধ। হ্যা যাও আমি অন্ধ। আমার সামনে আর কখনও আসবা না। তুমি ভালো, তুমি ভালো নিয়ে থাকো। আমি এখন একা চলতে শিখেগেছি। আমার আর কাউকে লাগবে না। আমি আর কাউকে বিশ্বাস করি না।দুনিয়ার সব পুরুষ খারাপ। চরিত্রহীন, স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক। এদের ছায়াও আমি আর মাড়াতে চাই না।” কথাগুলো এতটাই চিৎকার করে বলে উঠল যে ওদের নানু ছুটে আসল ওদের রুমে এসব শুনে ভয়ে।
“এই কি হল তোদের মাঝে? আস্তে আস্তে লাবু। এতটা রেগে গেলি কেন? শান্ত হয়ে কথা বলা যায় না?”
“সরি নানুমনি, তুমি আবার আসলে কেন? ভয় পেও না। ওতো আগে থেকেই পাগল এখন মনে হচ্ছে আরও বেশি পাগলামি বাড়ছে।”
“হ্যা আমি পাগল, তুমি যাও। ভালোদের কাছে যাও। সাবধান আর কখনও আমার সামনে আসবা না। আসলে কিন্তু ভালো হবে না। পাগলামি কাকে বলে তা দেখিয়ে দিব। আমি লাবন্য একটা শয়তান মেয়ে, বদমায়েশ একটা মেয়ে। আমি আমি হলাম পৃথিবির সবচেয়ে অযোগ্য একট মেয়ে। ” আর বলতে পারলো না হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল।
“উফ, ভয় পাইছি।উফফ ভয়রে….”
“আহ হিমু! এখন এসব দুষ্টুমির সময় না। ওকে এখন একটু একা থাকতে দে। এত রাগ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। লাবু মাথা ঠান্ডা কর নানুমনি আমার।শান্ত হও। বসো সোনামনি, তুমি আমার কাছে বসো।আমার লক্ষী নানুমনি।” বলে লাবন্যকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। আর ইশারায় বললেন হিমেলকে চলে যেতে।
নানুর ইশারায় ও আর দাঁড়ালো না। রুম থেকে বের হয়ে গেল। কিছুক্ষন পর দরজা আটকানোর শব্দ পাওয়া গেল।
চলবে