মেঘে_ঢাকা_চাঁদ পর্ব ৩৮

0
977

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ৩৮)
সায়লা সুলতানা লাকী

“তুমি আমাকে কথা বলতে দিলা না কেন? দোতলার ওরা যে আমাদের কেউ না তা সবার জানা উচিৎ। সবাই ওদেরকে আমাদের লোক ভাববে এটাতো সহ্য হবে না আমার!” লাবন্য চোখেমুখে বেশ বিরক্ত ফুটিয়ে কথাটা বলল।

“কি বোকার মতো কথা বলিস? তোর বলাতে কি কারো ভাবনা বসে থাকবে? ওখানে তোর বাপ থাকে, তোর দাদি থাকেন। তুই হাজারবার বললেও ওরা তোদেরই লোক তা মানুষ গলা ফাটিয়ে বলবে। শুধু শুধু কেন এসব নিয়ে পড়ে নিজের সময় নষ্ট করবি? যা খুশি তা করুক তারা সেটা তাদের ব্যাপার, এসব নিজের গায়ে না মাখলেই হল। এসব নিয়ে প্রতিবেশী বা গার্ডদের সাথে ঝামেলায় জড়ানোর কি দরকার?”
“নানি তুমি বিষয়টা বুঝতেছো না!”
“এতো বোঝার দরকার নাই।চুপ থাক। এসব নিয়ে তুই কোন কথা বলবি না। সময় থাকলে রুশের সামনে পরীক্ষা, ওর পড়াশোনাটা দেখিস। এখন আর কোনো কথা বলবি না।”
নানি মোটামুটি ওকে থামিয়ে দিয়ে রুশকে নিয়ে স্কুলে নেমে গেলেন। লাবন্য চুপ হয়ে গেল আর মনে মনে বলল “নানির কথাই ঠিক এসব গায়ে মাখার দরকার নাই, সবকিছু কানে না তুললেই হলো।”

ছুটির পর রুশকে নিয়ে ওর নানি কোচিং-এ গিয়েছিলেন তাই বাসায় ফিরতে অনেক দেরি হল। কিন্তু ওই সময়তে বাসায় লাবন্যকে না পেয়ে একটু চিন্তিত হলেন। ওর মোবাইলে কল দিয়ে বারবার বন্ধ পেয়ে আরও টেনশনে পড়ে গেলেন। হিমেলকে কল দিতেই জানতে পারলেন যে হিমেলের সাথে লাঞ্চ করতে গিয়েছিলো লাবু এখন বাসায় ফিরছে আর ওর মোবাইলটায় চার্জ নাই তাই বন্ধ পাচ্ছে । মনে মনে তিনি প্রচন্ড রেগে গেলেন ঠিক করলেন বাসায় ফিরলে আচ্ছা মতো বকা দিবেন এমন নির্বোধের মতো আচরন করার জন্য।

বাসায় ফিরতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেল। দ্রুত বাসায় ঢুকতে হবে জেনেও সিড়িতে উঠার সময় দোতলার কাছে এসেই একটু স্লো হয়ে গেলো। সকালে প্রচন্ড তাড়া ছিলো তাই তাদের ঝগড়াঝাটি ভালেমতো শুনতে পারে নাই। কেনজানি ও বাসায় ঝগড়ার শব্দতে ওর মনে শান্তি শান্তি একটা অনুভূতি হচ্ছিল। বিষয়টা খুব সেনসেটিভ বলে কাউকে প্রকাশ করেনি কিন্তু চরম বাস্তব হল ও মনে শান্তি পেয়েছে আর তাই হিমেল লাঞ্চের অফার করতেই আনন্দচিত্তে রাজি হয়ে গেছে।
ঝগড়া হলে দাঁড়িয়ে কিঞ্চিৎ শুনবে মনে মনে এমন আশা ছিল কিন্তু এখন আর কোন শব্দ পেলো না বাহিরে। এরপর আর দেরি করল না দ্রুত পা চালিয়ে উপরে উঠে এল লাবন্য ।

মাগরিবের নামাজের পর লাবন্যের নানি কোরআন পড়েন। তাই আর তখন ওই রুমে ঢুকল না। আজ কোচিং ছিলো তাই আর হাউজ টিউটর আসেনি পড়াতে। রুশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখল ও ঘুমাচ্ছে। সামনে গিয়ে ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আবার ফিরে এল। এই সময়টাতে ও অনেক ক্লান্ত থাকে। ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকাতেই খুব মায়া হল তাই গালে একটা চুমু খেয়ে ফিরে এল।

ফ্রেশ হয়ে মোবাইল হাতে বিছানায় বসতেই নানি আসলেন লাবন্যের রুমে।

“লাবু, আজকে এটা তুই কি করলি?”
“ও নানি আসো, তুমি কো……”
“আহ! যা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দে।”
“কোনটা নানি?”
“কোনটা মানে? তুই বুঝিস নাই তুই কি করেছিস?” নানি একটু উঁচু স্বরেই বললেন। আর তাতে মনে হল লাবন্য একটু ভয় পেয়ে গেলো।
“ইয়ে মানে নানি….”
“স্পষ্ট ভাষায় কথা বল লাবু। এটা কোনো সময় হল বাসায় ফেরার? তোর যে দেরি হবে তা কি তুই আমাকে ইনফর্ম করছিস?”

“ইয়ে মানে নানি শোনো আসলে হয়েছে কি….”
“লাবু? ইয়ে ইয়ে করছিস কেন ফাজিল মেয়ে। মোবাইলে চার্জ থাকে না কেন তোর? বাসায় যে আমি একজন আছি তা কি ভুলে গেছিস? যা মন চায় তা যে করতি পারিস না তা ভুলে গেছিস?”

“নানি তুমি এতটা রেগে যাবে মানে ভয় পাবে? না মানে, আমি আসলে বুঝিনি তুমি এতটা ভয় পেয়ে যাবে। ”
“কেন বুঝিস নাই? তোরা আর কত ভুল করে শিখবি? তোদের এক একটা ভুলের মাশুল গোনা যে আমার জন্য অনেক ভারী হয়ে যায় তা বুঝিস না?”
“নানি তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো। বসো তুমি আমি মানে আই এম সরি, সরি। আসলে হুট করেই তোমার হিমু….”

“এমনই একদিন বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল রেশমা। কোন খোঁজ নাই, খবর নাই। যার মাশুল টানতে টানতে আমার মেয়েটাই বিদায় নিল পৃথিবী থেকে। আমি একটা বার বুকে নিয়ে বলতে পারলাম না। তোর ভুলের পরও আমি তোকে ঠিক আগের মতোই ভালোবাসি। তুই আমার নাড়ি ছেড়া ধন। তুই তোর সব দুঃখগুলি আমার কাছেই জমা রাখতে পারিস। পারিনি আমি মেয়ের মনের মধ্যে চলতে থাকা কোনো কষ্টের কথা জানতে। আজ এত বছর পর আবার আমি সেখানেই দাঁড়ানো এক মেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছে কিন্তু তার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারছি না। সেই সময়তে লিখনের মা রেশমাকে ঘরে তুলেছিলো। নিজের স্বার্থেই হোক আর রেশমার ভাগ্যেই হোক ওর বিয়ে হয়েছিল, একটা সংসার হয়েছিল ওর। কিন্তু আজ যে মেয়েটা বের হয়েছিল তাকে রেহেনা আপন করে নিবে না বলেছে। তবে এই মেয়ে কোথায় কোথায় ঘুরবে? ওর বিয়েটা যদিও কোনোভাবে হয় তবুও কি ও কোনো সংসার পাবে? মেয়েটা সংসার পেলেও আমার রেহেনাতো ওর ছেলেকে হারাবে। আমি মেয়ে হারিয়ে কাঁদছি, আর আমার বড় মেয়েটা ওর একমাত্র ছেলেকে হারিয়েতো পাগল হয়ে যাবে। কি করব আমি তখন অমন পরিস্থিতিতে? দুই পক্ষই যে আমার। আমি কি তবে এবারও কন্যা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলাম। একবার মা হিসেবে আরেকবার নানি হিসাবে। এটাই কি তবে ঠিক আমি সঠিক ভাবে মেয়েদের দেখাশোনা করতে পারি না? ”

“সরি নানি আমি তোমাকে এতটা কষ্ট দিয়ে ফেলছি তা বুঝতে পারিনি। তুমি আমাকে নিয়ে ভেবো না। আমি আম্মুর মতো এত দুর্বল না। আমি পালিয়ে যাবো না। কেউ যদি আমাকে জয় করে নিতে না পারে তবে আর তার কাছে যেয়ে নিজেকে সস্তা করব কেন? আমি মোটেও নিজেকে সস্তা মনে করি না। পালিয়ে যাওয়ার মতো ভুল আমি কোনোদিনও করব না। আম্মু নিজের জীবন দিয়ে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে গিয়েছেন। তোমাকে ছোট হতে হয় এমন কোন কাজ কোনোদিনও করব না তা প্রমিজ করতে পারি। তোমার মেয়ে যেনো কোনো দিন ছেলেকে না হারায় তা আমি সবসময় মনে রাখব।”

“আমার এত প্রমিজের দরকার নাই। এই এক জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু পেয়েছি আর নতুন কিছু চাই না। তোর দায়িত্বটা যখন আমি নিয়েছি তখন কখন কোথায় যাস তা জানিয়ে দিস, টেনশনে রাখিস না। নিজের সন্তানরাই যথেষ্ট আমাকে মানসিক চাপ দেওয়ার জন্য, আর কারো দরকার নাই ওই কাজে।”

“হা হা হা নানি শোনো জীবনে টেনশন লেনে কা নেহি দেনে কা। বুঝলা কিছু? আমার দেরি দেখে তুমি একটা কল দিতে পারতা তোমার বড় মেয়েকে। তাহলেই হয়ে যেতো টেনশন দেনেকা খেলা। খালামনির ছটফটানিগুলো দূরে বসে সুন্দরমতো উপভোগ করতে পারতা। ” বলে খিলখিল করে হাসতে লাগল লাবন্য।

“একচড় দিয়ে চাপার দাঁত ফেলে দিব ফাজিল মেয়ে! আমি ওর মা, আমি ওকে টেনশন দিবো? যা মুখে আসে তাই বলে ফেলিস,খুব সহজ না? কোন মা’ই তা করতে পারে না, পারবেও না।”

“আরে ধুর তুমিও না বেশি ইমোশনাল। বিষয়টা একবার চিন্তা করোতো, তুমি বললা “রেহেনা লাবুতো বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ” কথাটা শোনার সাথে সাথে খালামনি শুরু করতো “হায় হায় আম্মা, এইটা কি শুনাইলেন? ওরে আল্লাহ! ওই বদমায়েশ মেয়েতো আমার নাদান কচি ছেলেটাকে পটিয়ে এতক্ষণে আমার বাসার কাছে চলে আসছে৷ ও আল্লাহ এখন আমি কি করব? আম্মা আপনে এইটা কেন হইতে দিলেন। ধুর আপনেরে কিছু বইলা লাভ নাই। আপনেতো ওই মেয়ের যাদুটোনায় অন্ধ হইয়া গেছেন। কল কাটেন আমি হোমারে কল দেই ওই বুদ্ধি দিতে পারবো কীভাবে এই শয়তান মেয়েরে বাসায় ঢোকা থেকে ফিরানো যায় তার। ও আল্লাহ তুমি রহম কর। ওই শয়তানের কুদৃষ্টি থেকে আমার বাসাকে বাঁচাও। ”

“চুপ ফাজিল, এসব কি? মুরুব্বিদের এমন করে ভেঙানোটা কিন্তু গুনাহ।”
“হুমম কিন্তু… ”
“চুপ আর কোনো কথা শুনব না। নাস্তা করবি আয়।” বলে নানি উঠে গেলেন।

লাবন্য কিছুক্ষন বসে চিন্তা করল পুরো বিষয়টাকে।যে বিষয় চিন্তা করতেই এত সমস্যা বলে মনে হয় তা বাস্তবায়ন হতে না জানি কত ঝামেলার আর কত কষ্টের হবে, তা ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

রাতে বসে পড়ছে ঠিক তখনই ডোরবেল বেজে উঠল। লাবন্য এখন আর তেমন একটা খেয়াল করে না এসব বিষয়ে কে আসল আর না আসল। ইয়ারফোনটা কানে লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে এসাইনমেন্ট করতে ছিল। হঠাৎ করেই এক মহিলার বিকট শব্দের চিৎকার সবকিছুকে উপচে ভেসে এল। লাবন্য ঝট করে উঠে দৌড়ে বের হয়ে এল জানার জন্য ঘটনাটা কী?

বাহিরে এসে ওর চোখ আটকে গেল মহিলার উপর। সেতো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে। লাবন্যের নানি এক ঝলক দেখেই চলে গেলেন নিজের রুমে মোবাইলটা হাতে নিয়ে। বুয়া দরজা খুলে যেনো বোকা বনে গেছে এমন একটা চেহারা করে দাঁড়িয়ে আছে দরজার কোনায়। আর মহিলা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে বুয়াকে,কারন বুয়া তাকে চলে যেতে বলেছে বলে।

লাবন্য একটু সময় নিলো বিষয়টা বোঝার জন্য, এরপর রুশের রুমের দরজাটা বাহির থেকে টেনে দিল। আর ওকে বাহিরে আসতে নিষেধ করল। এরপর বলল

“এই আপনি কে? এখানে কী চান? কেন আসছেন? বের হোন,এক্ষুনি বের হোন। কার পারমিশন নিয়ে ঢুকছেন এই বাসায়? বুয়াখালা সিকিউরিটি গার্ডকে ডাকো।কোথায় থাকে তারা? মানে মানে বের হোন বলছি না হলে গার্ড দিয়ে বের করবো কিন্তু! ”

“এই বেয়াদব মেয়ে কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা তোকে কেউ শিখায় নাই? তোর মা তোরে কি শিখাইছে তাইলে হু?”

“চুপ একদম চুপ অসভ্য মহিলা, ওই মুখে আমার মা নিয়ে আর একটা কথা বললে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম। কত্তো বড় সাহস আমার মা’কে নিয়ে কথা বলে বদ মহিলা।”

“শয়তান মেয়ে তোর সাহস কতবড় তুই আমাকে অসভ্য বলিস।তুই তো দেখি যা শুনছি তার চেয়েও বেশি বেয়াদব। তোর বাপ আমাকে বিয়ে করছে। আমি কে তা তুই বুঝছোস? এইটা আমার স্বামীর বাসা এইখানে আমি আসব না তো কে আসবেরে? এইখানে আমি থাকবো নাতো কে থাকবে? এইখানে আমারও অধিকার আছে বুঝছিস!”

“ইন্না-লিল্লাহ, কি বলে এই পাগল মহিলা! এটা আমার আর আমার ভাইয়ের বাসা এটা কার স্বামীর বাসা হলো আবার? ওরে আল্লাহ এখনতো পুলিশ ডাকতে হবে দেখছি।”

“ডাক পুলিশ আমি কি ভয় পাই নাকি? আমিও কেইস করব। জোরপূর্বক বাসা লেখায় নেওয়ার জন্য। কি ভাবছোস আমি ছেড়ে দিবো? এতদিন বসে বসে সব কিছুর হিসাব নিছি সবার কাছ থেকে। এত সহজ নাকি লেখায় নেওয়াটা?”

আর কিছু বলতে পারলো না এরই মধ্যে লিখন এসে উপস্থিত হল ওখানে। বাসার ভেতরে ঢুকেই জোরে এক ধমক দিয়ে উঠল
“তুমি উপরে আসছো কেন? কার পারমিশনে তুমি আরেকজনের বাসায় আসছো? তোমাকে না আমি বারন করেছিলাম এখানে আসতে? তবে কেন আসছো?”

“কেন আসবো না? তুমি দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা এখানে এসে পরে থাকতে পারো আর আমি আসলেই বুঝি দোষ?”

“হ্যা দোষ, তুমি আর আমি এক না। আমি ওদের বাবা, কিন্তু তুমি ওদের কেউ না। এখানে আসার কোন অধিকার তোমার নাই। তোমাকেতো আমি সুন্দরমতো বুঝিয়ে বলছি তারপরও তুমি কেন আসছো?”

“তুমি বললেই হলো? বিয়ের সময় তোমার বড় বোন বলছে তোমার ফ্ল্যাট আছে। আর বিয়ের পর তুমি শোনাচ্ছো তোমার কিছু নাই তা আমি মানবো কেন?”

“মানা না মানা তোমার ব্যাপার, আমার কিছু নাই তাই সত্য, এখন তুমি যা খুশি তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারো। আমার সাথে থাকতে হলে ওই ভাড়া বাসাতেই থাকতে হবে।”

“আমি ওই বুড়ি শয়তানের সাথে আর একদিনও থাকবো না। কি পাইছে বুড়ি আমারে, আমি কি বান্দি? বুড়ির সাথে আরও দুই শয়তান মিলে বুদ্ধি করে, কীভাবে আমারে জ্বালানো যায়। আমি সব বুঝি, আমি এত সহজ না। একজনরেতো মারছে এখন আমাকেও….”

“মুখ সামলে কথা বলো, থাকবা না ভালো কথা, সব গোছাও তোমাকে তোমার মায়ের কাছে দিয়া আসি ব্যস ঝামেলা শেষ। কিন্তু তুমি এখানে আসবা কেন?

“ইশশশ বললেই হইলো মায়ের কাছে দিয়া আসবা! আমি কেন যাবো। এটা আমার সংসার। গেলে যাবে তোমার মা। তারে বিদায় করো তারপর আমি বাসায় যাব। এর আগে আমি এক পাও নড়বো না। এই বাসাতেই থাকবো।”

“নড়বো না মানে? এই মহিলা আমি কেন তোমাকে এখানে সহ্য করব? সিকিউরিটি গার্ডকে ডেকে এখনই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করব যদি না মানে মানে বের হও। শখ কত এখানে থাকবো!” বলে লাবন্য এগিয়ে আসল।

“বেয়াদব বজ্জাত মেয়ে, তোর মা কি তোরে আদব কায়দা কিছুই শিখায় নাই। জোচ্চুরি করে সম্পদ সব লিখায় নিছোস। ভালো হইবি কোত্থেকে ফুপু গুলির রক্তইতো গায়ে। সব শয়তানের গোষ্ঠী। সব এক।”

লাবন্যের কি হলো তা বুঝলো না, হঠাৎ যেনো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল তীব্র গতিতে ছুটে আসতে আসতে বলল
” এই মহিলা তুই এখন বের হবি এই বাসা থেকে। তোকে আমিই বের করব ধাক্কা দিয়ে, তোর কোন কথা আমি আর সহ্য করব না। তোর এত্তো বড় সাহস তুই আমার মা নিয়ে কথা বলিস?”

লিখন অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত এগিয়ে এসে লাবন্যকে মাঝ রাস্তায় আটকে দিল। ওকে জড়িয়ে ধরে টেনে টেনে ওর রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাহির থেকে রুমের দরজা আটকিয়ে দিয়ে ড্রয়িং রুমে ফিরে চিৎকার করে উঠল।

“তুমি কি মানুষ? তোমার মধ্যে কি বিন্দুমাত্র মনুষ্যত্ব নেই? আমি বারবার তোমাকে কি বলছি আর তুমি এসব কি করছো? কি চাও তুমি?”

“এই বাসা তুমি আমাকে দিবে। তোমার মা বোনকে আমার সামনে থেকে সরায় নিবে। আমি এদেরকে একটুও সহ্য করতে পারছি না। সহজ হিসাব। ”

“গুড, ভেরি গুড। চলো। এক্ষুনি চলো। ” বলে ওর বৌয়ের হাত ধরে টান দিলো।

“কোথায় যাবো? বললাম না ওই শয়তান বুড়ি বাসায় থাকলে আমি যাবো না!”

“তোমাকে ওখানে যেতে হবে না। সরাসরি উকিলের কাছে যাব। ডিভোর্সের জন্য যা যা করতে হবে তাই করব। আমিও আর তোমাকে একটু সময়ের জন্যও সহ্য করতে পারছি না। আমার জীবনটা একেবারে নরক করে তুলছো তুমি। আর না। চলো।”

“হ্যে ডিভোর্স দিবা কেন? আমি ডিভোর্স নিবো কেন?”
“তুমি কি করবা তা ওখানেই সিদ্ধান্ত নিও এখন চলো।”
“না আমি এই বাসা থেকে যাবো না।”

হঠাৎ করে কি হল লিখন হেঁচকা টানে ওর বৌকে বাসার বাহিরে এনে দরজা জোরে আটকে দিল। আর অমনি বুয়া এসে ভেতর থেকে দরজা ছিটকিনি লাগিয়ে দিল।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here