#বোনু #সিজন_০২ #Part_01 #Writer_NOVA মির্জা বাড়ির সদর দরজা দিয়ে একটি কিশোরী মেয়ে খুব দ্রুত দৌড়ে হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকলো। পুরো বাড়িটা স্তব্ধ হয়ে আছে। আশেপাশে প্রেস, মিডিয়ার আনাগোনা।চারিদিকে শুধু একটাই খবর গতকাল ১৪ ই ফেব্রুয়ারিতে মির্জা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির মালিকের মেয়েকে কারা জানি গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলা হয়েছে।মৃত মেয়েটি ও যে মেয়েটি ভেতরে ঢুকলো সম্পর্কে তারা বোন।দুজনি সমবয়সী।দুই বোন ক্লাস নাইনে পড়ুয়া হাসিখুশি প্রাণচ্ছল কিশোরী।মেয়েটি ভেতরে ঢুকে দেখতে পেলো,পুরো বাড়ি মানুষে গম গম করছে।বাগানের মাঝে সাদা কাপড়ে ঢাকা সদ্য ১৬ বছরের কৈশোরে পা রাখা এক প্রাণবন্ত কিশোরীর লাশ।তাকে ঘিরে আজ সব আয়োজন। ধীর পায়ে ভিড় ঠেলে লাশের খাটের সামনে দাঁড়ালো মেয়েটি।সারা শরীর কাঁপছে তার।ধপ করে বসে পরলো সে।কাঁপা কাঁপা হাতে লাশের উপর থেকে কাপড়টা সরালো।মৃত মেয়েটির মুখের বিভিন্ন জায়গায় খামচির দাগ,ডান গালে পাঁচটা আঙুলের ছাপ,গলায় গাঢ় কালো ঘায়ের মতো দাগটাও স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে ঠিক কতটা কষ্ট দিয়ে তাকে মারা হয়েছে। ফর্সা মুখটায় অগণিত খামচি ও ছোট ছোট ঘায়ের দাগে ভরে আছে। নিজের প্রাণপ্রিয় বোনটাকে এভাবে নিতে পারলো না মেয়েটি।হাত বাড়িয়ে মাথাটা উঠিয়ে বুকের সাথে শক্ত করে ধরে গগণ বিদারক এক চিৎকার দিলো।তার চিৎকারে পুরো মির্জা বাড়িটা কেঁপে উঠলো। দৌড়ে কয়েকজন মানুষ এসে মেয়েটিকে ছাড়াতে চাইলো।কিন্তু এতগুলো মানুষ তাকে একচুল পরিমাণও নড়াতে পারছে না।সে শক্ত করে তার বোনকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে।মিস্টার মির্জা ড্রয়িং রুম থেকে খুব দ্রুত বাগানে চলে এলো।কেউ যখন মেয়েটাকে লাশের থেকে সরাতে পারছিলো না ঠিক তখনি সে এসে এক ঝাটকায় মেয়েটাকে লাশের থেকে ছাড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।তিনিও ডুকরে কেঁদে উঠলেন। মেয়েটিঃ তুমি দেখো না আমার বোনু আমার সাথে কথা বলছে না। ও কথা না বললে তো আমার যে ভালো লাগে না।সেটাকি ও জানে না।ও না আমার পুতুল খেলার সাথী, তাহলে আমাকে ফাঁকি দিয়ে কেন চলে গেল?আমার বোনুকে তোমরা এভাবে কেন রেখেছো?ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে তো।দেখো মুখের কি অবস্থা করেছে ওরা?কি দোষ করেছিলো আমার সহজ-সরল বোনটা।কেন ওকে এভাবে চলে যেতে হলো।ও না বলেছিলো আমায় ছেড়ে কোথাও যাবে না।তাহলে আজ কেন আমায় ফেলে একা চলে গেল।আমার বোনুর এই অবস্থা কে করেছে?বলো, কে করেছে?তুমি চুপ করে থেকো না।আমি কাউকে ছাড়বো না।তোমরা এখনো কোন খোঁজ নিতে পারলে না।হাত-পা গুটিয়ে কিভাবে বসে আছো তোমরা?আমিও ওর সাথে আজ চলে যাবো।তখন বুঝবে মেয়ে হারানোর ব্যাথা।এখন তো ভাবছো একজন চলে গেছে তো কি হয়েছে আরেকজন তো আছে।সেই ধারণা আমি ভুল করে দিচ্ছি। আমিও চলে যাবে ওর সাথে। মিস্টার মির্জা শক্ত করে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। চোখ দিয়ে তার অনরবত পানি পরছে।তিনি কান্না জড়ানো কণ্ঠে বললেন। মিস্টার মির্জাঃ পাগলামি করিস না মা-মণি।তুই চলে গেলে আমরা কি নিয়ে থাকবো? কিভাবে বাঁচবো বল।তোর ভাইদের কি হবে?আমরা এতো নজর দিয়েও এক মেয়েকে রক্ষা করতে পারিনি।কিন্তু তোর কিছু হতে দিবো না।তোর কিছু হলে যে আমরা বাঁচবো না রে।এখন তুই আমাদের একমাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন। মেয়েটিঃ আমি কাউকে ছাড়বো না।কাউকে নয়। ঠিক যতটা কষ্ট দিয়ে ওরা আমার বোনুকে মেরেছে তার চেয়ে দ্বিগুণ কষ্টকর মৃত্যু ওদের দিবো।আমার নিষ্পাপ বোনটাকে জানোয়ারগুলো বাঁচতে দিলো না।ওদের কি করে বাঁচতে দেই।নিজের মান-সম্মান হারিয়ে আজ তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো।কি পাপ করেছিলো আমার বোন,যে তাকে নিজের ইজ্জত ও জীবন দুটোই হারাতে হলো।আচ্ছা আমার বোনের অনেক কষ্ট হয়েছে তাইনা।নিজের জীবনটাও নিশ্চয়ই ভিক্ষা চেয়েছিলো ঐ মানুষ নামক জানোয়ার গুলোর কাছে।কিন্তু ওরা তো তা দেয়নি।নাহ্,ওদের মানুষ বলা যায় না।কারণ ওদের মতো জানোয়ারকে মানুষ বললে পুরো মানুষ জাতিকে অপমান করা হবে।যত বছর লাগুক তাদের আমার ও আমার ভাইয়ুদের হাতেই মরতে হবে।প্রত্যেকটাকে তিলে তিলে শেষ করবো।কাউকে মাফ করবো না। কাউকে না। ☘️☘️☘️ মির্জা সাহেবকে ছেড়ে লাশের খাটের সামনে বসে পরলো মেয়েটি।আলতো হাতে ডান গালটা হাত রাখলো।একজন এগিয়ে এসে মেয়েটাকে নিতে চাইলে মির্জা সাহেব ইশারায় সামনে যেতে বারণ করলেন।মেয়েটি আলতো হাতে সারা মুখ স্পর্শ করছে।সে জানে এটা ঠিক নয়।এতে মৃত ব্যক্তির অনেক কষ্ট হয়।তারপরেও নিজের মনকে শান্ত করতে পারছে না।এই মুখটাকে আর কখনো স্পর্শ করতে পারবে না।তার গলা কখনি জরিয়ে ধরতে পারবে না।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে মৃত মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললো। মেয়েটিঃ তুই কোন চিন্তা করিস না বোনু।তোর মৃত্যুর প্রতিশোধ তোর এই বোন আর আমাদের তিন ভাই অবশ্যই নিবে।আমাকে মাফ করে দিস।আমি তোকে আগলে রাখতে পারিনি।আর কখনো তোর এই হাস্যজ্জ্বল মুখটা আমি দেখতে পারবো না।আমি তো তোকে শেষ বারের মতো ছুঁয়ে দেখতে পারলাম । কিন্তু আমার তিন ভাইয়ুদের কি হবে রে?ওরা তো তোকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারলো না।তোর জানাজায় শরীক হতে পারবে না।তোর কবরে মাটি দিতে পারবে না।ওদের মনের মাঝে কি তুফান চলছে সেটা একমাত্র ওরাই জানে।কি লাভ হলো ওদের বিদেশ গিয়ে। তবে আমার বিশ্বাস আমাদের ভাইয়ুরা তোর হত্যাকারীদের একে একে কঠিন মৃত্যু উপহার দিবে।তুই ভালো থাকিস ওপারে।খুব শীঘ্রই তোর জীবন ও ইজ্জত ধ্বংসকারীদের সাজা তুই দেখতে পারবি। বাড়ি ভর্তি সকলের চোখে পানি।কিছু সময় পর মেয়েটাকে টেনে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেলো কিছু মহিলা।মৃত মেয়েটাকে জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে।কিন্তু মেয়েটি তার বোনকে ছাড়বে না।লাশের খাট নিয়ে সবাই চলে গেল ঈদগাহের ময়দানে। সেখান থেকে জানাজা পড়িয়ে মেয়েটার খুব পছন্দের জায়গায় তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করানো হবে।মির্জা সাহেব পাঞ্জাবীর হাতায় চোখ মুছতে মুছতে লাশের খাটের এক ধার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন।বাবার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টকর বস্তু হলো নিজের কাঁধে সন্তানের লাশ।আজ মির্জা সাহেবকে সেই কষ্ট চাপা দিয়ে লাশের খাট বহন করে নিয়ে যেতে হচ্ছে। মিসেস মির্জা সেই মেয়েটি একে অপরকে ধরে চিৎকার করে কান্না করছে।কেউ তাদের শান্ত করতে পারছে না।আর বিদেশে থাকা তিন ভাইয়ের অবস্থা ঠিক কিরূপ তা আমি বোঝাতে পারবো না।বোনেকে তারা শেষ দেখাও দেখতে পারেনি।তারা টিকিট কেটে চলে আসতে চেয়েছিলো।তাতে অনেক সময় লেগে যাবে।ততক্ষণ পর্যন্ত লাশ রাখা সম্ভব নয়।তাই তাদের আসতে মানা করা হয়েছে।প্রত্যেক ভাই তাদের রুমে চিৎকার করে কাঁদছে। তারা তাদের বোনকে আগলে রাখতে পারেনি।এটাই তাদের সবচেয়ে বড় কষ্ট। কোন অপরাধে জীবন ও ইজ্জত হারাতে হলো মেয়েটিকে?মিথ্যে ভালোবাসা নাকি বাবার বিজনেসের শত্রুতা।সেটা তো তার ভাইরা বের করবে।তবে এতটুকু বলতে পারি,নিশ্চয়ই মেয়েটার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো আবেগ কে প্রশয় দেওয়া।আবেগ নামক বস্তুটা অনেক বেশি ভয়ানক।যেটা মানুষকে মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দেয়। সেই আবেগের বর্শবর্তী হয়ে বোধ হয় পরাপারে চলে যেতে হলো তাকে। তবে বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ না নিয়ে তো ভাইরা ক্ষান্ত হবে না। আমাদের গল্পের মূল কাহিনি এটা।দেখা যাক শেষ পর্যন্ত ভাইরা তার বোনের হত্যাকারীদের ভয়ংকর মৃত্যু উপহার দিতে পারে কি না। ☘️☘️☘️ ৪ বছর পর………. রাস্তা দিয়ে কতগুলো ছেলে পাগলা কুকুরের মতো দৌড়াচ্ছে।ওদের পেছনে স্টীক হাতে ২০ বছরের একটা মেয়ে। নাম মেহরুন।ডাকনাম মিহু ও হির।ছেলেগুলো এমনভাবে দৌড়াচ্ছে মনে হচ্ছে অ্যালেম্পিকে নাম লিখেছে।১০/১২ হাত দূরে মিহুও পেছন পেছন ছুটছে। ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বললো– আমরা এভাবে একটা সামান্য মেয়ে দেখে দৌড়াচ্ছি কেন?আমাকে কেউ কি বলবি? আরেকজন ১ম ছেলেটার পিঠে জোরে চাপড় মেরে বললো— জানে বাঁচতে চাস তো দৌড়াতে থাক।এটা কোন সাধারণ মেয়ে নয়।ধরতে পারলে হাতের স্টিক দিয়ে মাথা ফাটায় ফেলবে।আর কোন মেয়ে পাস নি।ওকেই টিজ করতে হলো।হাসপাতালে ভর্তি হতে না চাইলে জলদী ছুট। মিহুঃ আরে ইন্দুরের বাচ্চা, এখন দৌড়াস কে?দাঁড়া বলছি,দাঁড়া। বাগে পেলে স্টিকে দিয়ে তোদের প্রত্যকের চান্দি ফাটামু।আমাকে টিজ করিস।কি জানি বলেছিলি?(একটু ভেবে) ওহ্ মনে পড়ছে।আমি দেখতে অনেক হট।তা গরমের পদুর্ভাব না দেখে পালাচ্ছিস কেন?কাপুরুষগুলি।মেয়ে দেখলে টিজ করতে মন চায়।তোদের টিজ করার শখ আমি জন্মের মতো ঘুচিয়ে দিবো। রাস্তা ভর্তি মানুষ ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এতোগুলো ছেলে একটা মেয়ের ভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে।সত্যিই ব্যাপারটা খুব হাস্যকর।মিহু ক্লান্ত হয়ে থেমে গেলো।দুই হাত হাঁটুতে রেখে হাঁপাতে লাগলো।ততক্ষণে ছেলেগুলো অনেক দূরে চলে গেছে। মিহুঃ হয়রান হয়ে গেছি।আর পারছি না।তা না হলে আজকে তোদেরকে, তোদের লেভেল দেখিয়ে দিতাম।অনেক দূর চলে এসেছি, এবার ফেরত যাই। মেহরুনের পুরো ব্যাপারটা ক্লিয়ার হতে হলে, আমাদের ঘুরে আসতে হবে কিছু সময় আগের ফ্লাসব্যাক থেকে। চলুন ঘুরে আসা যাক। ফ্লাসব্যাক…….. #চলবে নতুন চরিত্র ও নতুন কাহিনি নিয়ে হাজির হয়ে গেছি।বোনু সিজন ০১ এর সাথে ০২ এর কোন মিল নেই। যারা আগের সিজন পড়েননি তারা এই সিজন পড়তে পারবেন।এখানে গত সিজন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ভাই-বোনের ভালোবাসার সম্পর্ক প্রকাশ থাকবে।ভাই-বোনের ভালোবাসা ছাড়াও এখানে গুরুত্ব পাবে বোনের লাভ স্টোরি,কলেজের ও বন্ধু-বান্ধবীর স্টোরি, আরো অনেক কিছু ।একদম অন্য রকম একটা কাহিনী থাকবে।আপনাদের ভালো লাগলে পরবর্তী পর্ব দিবো।নয়তো এখানেই বন্ধ করে দিবো।হ্যাপি রিডিং।