আমার বনু সিজন ২ পর্ব-১০

0
1440

#বোনু
#সিজন_০২
#Part_10
#Writer_NOVA

কিছুক্ষণ পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হলো।সবার প্রথমে মিহু ক্লাসিকাল ডান্স করলো।রবীন্দ্র সঙ্গীতে খুব সুন্দর করে নাচলো।নিবরাজ, মেহরাব, আইজান সবাই অবাক।মিহু এতো সুন্দর করে নাচতে পারে,সেটা কারো জানা ছিলো না।

নিবরাজঃ ওয়াও, ফ্যানটাস্টিক।এতো সুন্দর করে নাচছে কি করে?

মেহরাবঃ আমি নিজে ওর নাচ কয়েকবার দেখেছি। কিন্তু আজকেরটা বেস্ট।

আইজানঃ সাপ যদি বিনের তালে নাচতে না পারে তাহলে পারবেটা কে?(রাগে দাঁতে দাঁত চেপে)

নিবরাজঃ চুপ কর। নে মোবাইল ধর।সামনে গিয়ে ভিডিও করে নিয়ে আয়।

আইজানঃ আমি যাবো না। আমাকে হয় নাচের মধ্যেই হকি স্টিক ছুঁড়ে মারবে। নয়তো শাড়ি পরিয়ে ঘুরাবে।

নিবরাজঃ কথা কম বল।জলদী যা।(ধমকের সুরে)

আইজানঃ যাচ্ছি, ধমকাস না।সবসময় বাঁশ খাওয়ানোর জন্য আমাকেই দেখিস।

আইজান স্টেজের সামনে গিয়ে ভিডিও করতে লাগলো।মিহু নাচের মধ্যে সায়েমকে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। সায়েম, আইজানের সামনে এসে দাঁড়ালো।

সায়েমঃ AK এখানে কি করছেন?

আইজানঃ দেখতে পাচ্ছো না ভিডিও করছি।ডিস্টার্ব করো না।(বিরক্ত সুরে অন্যমনস্ক হয়ে)

সায়েমঃ AK আপনার কি শাড়ি পরে সারা কলেজ ঘোরার ইচ্ছে আছে?

আইজানঃ একদম না।কে বলেছে আমি ভিডিও করছি।আমিতো আমার ছবি তুলছিলাম।হে হে হে কি যে বল না তুমি। (বেক্কল মার্কা হাসি দিয়ে)

সায়েমঃ ওহ আচ্ছা।ঐ দিকে গিয়ে তুলুন।

আইজান সামনে থেকে চলে গেল। মিহুর নাচ শেষ হলো।সবার করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠলো পুরো প্যান্ডেল।নাচটা সবার পছন্দ হয়েছে। রাজতো এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। ও জানতো মিহু একমাত্র সবাইকে সবাইকে হসপিটালে ভর্তি করতে পারে। মিহুর নাচ শেষ হলে রুশান গিটার হাতে স্টেজে উঠে গেল। রুশানের গান শেষ হলে রিম স্টেজে উঠে গেল।
কিছু সময়ের মধ্যে ওর রক ডান্স শুরু হয়ে গেলো।

আইজানঃ ভাই, ঘোড়াটা এমন ফালাচ্ছে কেন?

নিবরাজঃ এই নাচ এরকমই।

আইজানঃ ভাই, এটাকে নাচ বলে।তুই যদি এটাকে নাচ বলিস তাহলে এনাকোন্ডারটা কি ছিলো?

নিবরাজঃ ঐ টা ক্লাসিকাল ডান্স আর এটা রক ডান্স।

আইজানঃ আমি আর সহ্য করতে পারছি না।আল্লাহ আরো কত কিছু দেখাবে।এই মেয়েটাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু ওর নাচ দেখে আমার পছন্দ সব তল্পিতল্পা গুটিয়ে মনে হয় পালালো।

The tim of rainbow -এর কেউই এই ডান্স পছন্দ করে না।পুরো টিম কানে আঙুল দিয়ে বসে আছে।

মিহুঃ ঐ ওরে কেউ ধর তো।ও তো লাফাইয়া স্টেজ ভাইঙ্গা ফালাইবো।

আভাঃ ওরে ফালাইতে দে।
সায়েমঃ ব্যাঙ তো নতুন পানি পাইলে ফালাইবোই।
আফরাঃ আর সহ্য হইতাসে না।
রুশানঃ থামতে ক এইডারে।
কিরনঃ কান দুইটা ঝালাপালা হইয়া গেল।
আভাঃ হির,এই বিচ্ছিরি ডান্স আর সহ্য করতে পারতাছি না। বন্ধ করতে বল।
মিহুঃ আমারে কস কে?আমি কি করমু?
সায়েমঃ চুপচাপ সহ্য কর।কিছু করার নাই।

☘️☘️☘️

অবশেষে রিমের বিখ্যাত ফালাইন্না নাচ শেষ হলো।ওরা ছয়জন বিরক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু বাকি সবাই বেশ ইনজয় করেছে।

আইজানঃ ভাই, তুই একটা গান শুনাবি।
নিবরাজঃ আমি!!!! পাগল হয়ে গেছিস।
মেহরাবঃ গাইলে সমস্যা কি? একটা গানই তো।
নিবরাজঃ আমি গান শুরু করলে,দেখবি অর্ধেকের বেশি মানুষ প্যান্ডেল ছেড়ে পালাবে।
আইজানঃ নিউইয়র্ক থাকতে তো অর্কর গিটার দিয়ে মাঝে মাঝে গান করতি।এখন সমস্যা কি?
রিমনঃ রাজ,প্লিজ একটা গান শুনাবি।
সাদাফঃ ঢং কম কর। জলদী যা।
আরিফঃ কবের থেকে তোর গান শুনি না।প্লিজ একটা শুনাবি।
সিয়ামঃ হবু ভাবীর জন্য অন্তত গান শোনা প্লিজ।
মেহরাবঃ মিহুর জন্যই একটা গান ধর।
নিবরাজঃ আচ্ছা, গান গাইবো।হয়েছে এবার।শান্তি!!

নিবরাজ, রুশানের কাছ থেকে গিটারটা হাতে নিয়ে স্টেজে উঠে গেল।

কিরনঃ ঐ হির NK কি এখন গান গাইবো?
মিহুঃ আমারে জিগাস কে?আমি কি জানি?
রিমঃ যেহেতু গিটার নিয়া গেছে তার মানে গানই গাইবো।
সায়েমঃ তাও ভালো।তোর ঐ বাজে,বিচ্ছিরি নাচতো নাচবো না।
রিমঃ কি কইলি? তুই আমার নাচেরে অসম্মান করলি?(রেগে)
সায়েমঃ তোর নাচের আবার অসম্মান।সম্মান থাকলে না ঐটারে অসম্মান করমু।
রিমঃ সায়েমমমরা তোরে তো আমি —
মিহুঃ থামবি তোরা।কি শুরু করলি?
রিমঃ আমি—
আফরাঃ চুপ কর।
রুশানঃ NK এর গানটা শুনতে দে।
কিরনঃ আর একটা পেচালও কেউ পারিস না।

নিবরাজ গিটার হাতে নিয়ে টুংটাং আওয়াজ করে সুর ঠিক করে নিলো।কলেজের সব মেয়েরা রাজের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। রাজ মিহুর দিকে তাকিয়ে গান শুরু করলো।

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

তোর মন পাড়ায়, থাকতে দে আমায়
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়
তুই চাইলে বল, আমার সঙ্গে চল
ঐ উদাসপুরের বৃষ্টিতে, আজ ভিজবো দুজনায়
অভিমানি মন আমার, চায় তোকে বারবার (×২)
তাই বলি আয়রে ছুটে আয়

তোর হৃদয় আঙিনায়,থাকতে আমি চাই
তুই ছাড়া বাঁচার, নেই রে উপায়
কিভাবে ওরে,তোকে ছেড়ে
একাকি আমি জীবন কাটাই
অভিমানি মন আমার, চায় তোকে বারবার (×২)
তাই বলি আয়রে ছুটে আয়

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

রাজ,মিহুর দিকে তাকিয়ে পুরো গান গেয়েছে। মিহু মুগ্ধ হয়ে ওর গান শুনছে।গানটা যেনো মিহুকেই ডেডিকেট করলো।চারিদিকে করতালিতে মুখরিত হয়ে গেলো।তালির শব্দে মিহুর ধ্যান ভাঙলো।

মিহুঃ বাহ!! ভালো গান গাইতে পারে তো নিবরাজ চিলি মসলা।আমিতো জানতাম সবসময় চিলির মতো ঝাল ব্যবহারই করতে পারে। নাহ, এখন দেখছি বেশ ভালো গানও গাইতে পারে।(মনে মনে)

আইজানঃ কি ভাই, গানটা তো সেই হয়েছে?

নিবরাজঃ আমার মনে হচ্ছিলো মিহু আমার সাথে বসে আছে। আর আমি গিটার বাজিয়ে ওকে গান শোনাচ্ছি।আমি ভাবতে পারি নি গান গাইতে পারবো।

মেহরাবঃ বুঝতে হবে।প্রিয়তমার দিকে তাকিয়ে কোন খেয়ালে গেয়েছে নিজেও জানে না। (মুখ টিপে হেসে)

নিবরাজঃ হয়েছে তো এবার চুপ কর।

আরো কতগুলো নাচ-গান হয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলো। তারপর যে যার বাড়ি চলে গেল।

☘️☘️☘️

Scotland…….

রাতের সময় ধূসর চোখের ছেলেটা,রেগে জিহানকে বারবার কল দিচ্ছে।কিন্তু জিহান কল তুলছেই না।বেশ কিছু সময় পর জিদান কল ধরলো।

—- কোথায় ছিলে? কতগুলো কল দিয়েছি?

জিহানঃ সরি বস।আসলে আমি ওয়াস রুমে গিয়ে ছিলাম।

— তুমি কার ছবি পাঠিয়েছো?(রেগে)

জিহানঃ কেন বস, মিহুর না মানে ভাবীর।

—ফাইজলামি পাইসো।কোন ছেলেকে শাড়ি পরাইছো সেই ছবি পাঠিয়ে বলছো হিরের ছবি।

জিহানঃ ওয়েট বস।আমি দেখে নেই।

—- তুমি না দেখিয়ে ছবি পাঠিয়েছো।ডিজগাস্টিং।

জিহানঃ আসলে বস,ক্যামেরা ম্যান আমাকে ছবি পাঠিয়েছিলো, আমি ভালোমতো না দেখে আপনাকে সেন্ড করে দিছি।

জিহান ছবি চেক করতে গিয়েতো চোখ চড়কগাছ। এটা তো ক্যামেরা ম্যান।ওকে শাড়ি পরিয়ে ছবি পাঠালো কে? ক্যামেরা ম্যানকে ছবি তোলার জন্য জিহানই টাকা দিয়ে ছিলো।আর মিহুরা ক্যামেরা ম্যানের শাড়ি পরা ছবি জিহানকে পাঠিয়েছে। জিহান তাড়াহুড়োয় ছবি না দেখেই তার বসকে পাঠিয়ে দিয়েছে। নিজের মনে হেসে উঠলো জিহান।ও জানে এই কাজ মিহুর ছাড়া আর কারো না।

জিহানঃ হ্যালো বস।

—- হ্যাঁ,বল।

জিহানঃ এই কাজ আর অন্য কারো নয়।ভাবীই করেছে।ঐ ছেলেটা ক্যামেরা ম্যান।ভাবী বোধহয় ছবি তুলতে দেখে ফেলেছে। তাই ওকে শাড়ি পরিয়ে ছবি তুলে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে।

—- ইন্টারেস্টিং!!! এই না হলে আমার হির।ওকে বাই।(মুচকি হেসে)

জিহানঃ জ্বি বস ভালো থাকবেন,রাখছি।

☘️☘️☘️

দুই দিন পর……

রুশান সারা কলেজ দৌড়াচ্ছে।খুশিতে নয়।ওর পেছনে হকি স্টিক হাতে মিহুও আছে।রুশান আগে মিহু পেছনে।রুশনকে হাতে পেলে আজ হসপিটালে পাঠাবে।কারণ হলো গতকাল রুশানের খালাতো ভাই মিহুকে দেখতে গিয়ে ছিলো।কিভাবে জানি রুশানের মোবাইল থেকে ওর খালাতো ভাই ছবি দেখেছিলো।সব খবর নিয়ে সোজা মিহুদের বাড়ি উঠেছে। মির্জা বাড়ির কেউ বিষয়টা জানতো না।ছেলে-পক্ষকেও মিহু স্টিক হাতে দৌড়ানি দিয়েছে।এখন পালা রুশানের।রুশান, রাজ ও জানের সামনে গেল মিহুর হাত থেকে বাঁচতে।

রুশানঃ NK,AK আমাকে বাঁচান।
নিবরাজঃ কি হয়েছে? এভাবে হাঁপাচ্ছো কেন?
রুশানঃ বস,আমাকে বাঁচান।তা না হলে আমি আজ হসপিটালে ভর্তি হবো।
আইজানঃ আরে ভাই, বলবিতো কি হয়েছে?
রুশানঃ হির,হির আমাকে স্টিক নিয়ে দৌড়ানি দিয়েছে।
নিবরাজঃ কেন?

ততক্ষণে মিহু হকি স্টিক হাতে ওদের সামনে চলে এলো। রাগে ওর মুখ লাল হয়ে আছে।

মিহুঃ যদি ভালো চাস,এদিকে আয়।তোরে আজকে আমি আলু ভর্তা বানামু। (রেগে)
রুশানঃ হির,বোইনা।আমি সত্যি কিছু জানি না।
মিহুঃ কি জানিস, না জানিস সেটা পরে দেখা যাবে।আগে তুই এদিকে আয়।
রুশানঃ আসমু না।আসলেই তুই মারবি।
মিহুঃ না,মারুম না।তোরে আদর করমু।জলদী এদিকে আয়। (রেগে)

মিহু রুশানের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে রুশান নিবরাজের পেছনে লুকালো।আর মিহুর এক হাত রাজ খপ করে ধরে ফেললো।

নিবরাজঃ শান্ত হও মিহু।কি হয়েছে আমাকে বল?(শান্ত কন্ঠে)
মিহুঃ ছাড়ুন আমায়।ওকে এখন আমি চাটনি বানামু।
আইজানঃ কি হয়েছে বলবে তো?
মিহুঃ ওর খালাতো ভাই গতকাল আমায় দেখতে গিয়ে ছিলো। ওর মোবাইল থেকে আমার ছবি দেখেছে।ওর ভাইকে তো স্টিক দিয়ে দৌড়ানি দিয়েছি।ধরতে পারি নাই।ধরতে পারলে নাক ফাটাইতাম।ওর ভাইকে কিছু করতে পারি নাই তো কি হয়েছে? এখন ওর মাথা ফাটামু।(রেগে)
নিবরাজঃ ওর এত বড় সাহস!!! (রেগে)
রুশানঃ বস,আমি এসবের কিছু জানি না। আমার খালাতো ভাই কখন আমার মোবাইল থেকে ছবি দেখেছে, কখন গিয়েছে,কি করেছে?কিছু বলতে
পারি না।
মিহুঃ তোরে তো আমি—
নিবরাজঃ তোমাকে আর কিছু করতে হবে না।
মিহুঃ কেন?? (অবাক হয়ে)
নিবরাজঃ তোমার হকি স্টিকটা দেও।তুমি আর কষ্ট করে ওর পেছনে কেন ছুটবা?তার চেয়ে আমায় স্টিকটা দেও।ওর ব্যবস্থা আমি করছি।

নিবরাজ রুশানের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো এক নিশ্বাসে বললো।
মিহুঃ এই নিন তাহলে।আমি হয়রান হয়ে গেছি।

রাজ, মিহুর হাত থেকে স্টিকটা নিয়ে রুশানের পেছনে ছুটলো।রুশান তার আগেই ভৌ দৌড়।প্রাণপণে ছুটছে সে।ওকে আর পায় কে?

রুশানঃ বা—প—রে—এ 🥶।হিরের হাতে স্টিকের বারি খেলে সামান্য মাথা ফাটতো।কিছু দিন পর ঠিক ভালো হয়ে যেতো।এখন NK- এর হাতে একটা বারি খেলে আমিতো সোজা উপরে শিফট হয়ে যাবো।
ভাগ রুশান ভাগ।নিজের জীবন বাঁচা। জান বাঁচানো ফরজ, মনে রাখিস।

#চলবে

আগামীকাল থেকে মূল কাহিনি শুরু হবে।আজকেও রিচেইক দেইনি।ভূল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here