#বোনু
#সিজন_০২
#Part_20
#Writer_NOVA
Scotland…….
ধূসর চোখের ছেলেটির হাতে বড় রড জাতীয় মোটা লাঠি।ঐটা দিয়ে সারা বাড়ির যা জিনিস আছে তা ভাঙ্গছে।সোকেস,টি-টেবিল,ডাইনিং টেবিল কিছুই বাদ যায়নি।বড় দেয়াল টিভিতে বারি দিতে নিলেই ছেলেটার বাবা অন্তর চৌধুরী হাত ধরে ফেলে।গত কয়েক দিন ধরে তিনি ও তার ছোট ভাই আবির চৌধুরী স্কটল্যান্ড এসেছে।
অন্তরঃ শান্ত হও অঙ্কু। মাথা ঠান্ডা করো।
ইয়েস, আপনারা যা ভাবছেন তাই। স্কটল্যান্ডের অন্যতম বিজনেস ম্যান,বাংলাদেশের চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির ওনার অন্তর চৌধুরীর বড় ছেলে অঙ্কু চৌধুরী। অন্তু চৌধুরী বড় ভাই।
অঙ্কুঃ কি করে শান্ত হবো ড্যাড?অন্তু আজ কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ। ওর কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। আজও আমার ভাই বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে, কেউ বলতে পারে না। আর আমি মাথা ঠান্ডা করে বসে থাকবো।কিছুতেই না।
অাবিরঃ আমাদের শত্রু অনেক চালাক।ওরা কোন প্রমাণ রাখে না।
অন্তরঃ তাই বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। অন্তুকে যে করে হোক জীবিত ফিরিয়ে আনতে হবে।
অঙ্কুঃ আমি দেশে যাবো।অন্তুকে খুঁজতে, ওর কোন ক্ষতি হতে দিবো না।
অন্তরঃ কিন্তু তোর যদি কিছু —
অঙ্কুঃ চিন্তা করো না ড্যাড।অঙ্কু চৌধুরী কখনও হারতে শেখেনি।তুমি আমার ড্যাড হয়ে ভয় পাচ্ছো।সেটা তোমায় মানায় না ড্যাড।
আবিরঃ তাহলে কয়েক দিনের মধ্যে আমরা সবাই একসাথে চলে যাই।
অঙ্কুঃ হ্যাঁ,আমাদের তাই করতে হবে।
অন্তরঃ কাউকে ছারবি না অঙ্কু।যারা আমার ছেলেকে গুম করেছে, তাদের সবাইকে তুই খতম করে দিবি।
অঙ্কু বাঁকা হাসলো।ওর মনে এখন শয়তানি বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে। মনে মনে বললো
অঙ্কুঃ আমি আসছি হির।তোমার জীবন থেকে অনেককে সরিয়ে দিতে। আর তোমাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে নিতে।
☘️☘️☘️
পরের দিন……
রেস্টুরেন্টেের টেবিলে বসে আছে আইজান।ওর হাত-পা চিকন প্লাস্টিকের সুতলি জাতীয় দড়ি দিয়ে বাঁধা। টেবিলের বাকি চেয়ারে বসে আছে দ্যা টিম অফ রেইনবোর সকল সদস্য। খাদকগুলো জানকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে। একটা কিছুও জানকে দিচ্ছে না। টেবিল ভর্তি ফাস্টফুড জাতীয় খাবার। ওরা প্রত্যকে জানের নাকের সামনে দিয়ে খাবার নিয়ে মুখে পুরছে।আইজান মনে মনে নিবরাজকে তো বকছেই সাথে মিহুর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে।
মিহুঃ কি নেংটি ইঁদুর? আরো আমার সাথে লাগতে আসবে?যখনি কোন কাজ করতে যাই তখনি ভেজাল করে।তাই আমি আজকে তোমার এমন হাল করবো যে তোমার সবকিছু বন্ধক রেখে তারপর এখান থেকে যেতে হবে।
আইজানঃ এনাকোন্ডা একটা।তোমাকে আমি দেখে নিবো। (রেগে)
মিহুঃ তুমি তো আমাকে কবের থেকে দেখে নিচ্ছো।
সবাইঃ😅😅
ফ্লাসব্যাক……..
কয়েক ঘন্টা আগে মিহু ও তার টিম রেইনবো একসাথে ক্লাশের বাইরে কথা বলছিলো।তারা কিরনের জন্য গিফট কিনে এনেছে।
রুশানঃ কিরন দেখ তোর জন্য আমরা কি আনছি।
কিরনঃ কি?
রিমের হাতে বিশাল বড় একটা গিফট বক্স।গিফট পেপারে মোড়ানো।
কিরনঃ বাঁশ দেওয়নের লিগা আবার কি আনছিস🤨?
আভাঃ সবসময় তুই আমাদের খারাপ ভাবিস।
কিরন গিফট বক্স খুললো।এতবড় বাক্সের ভেতরে ছোট বাচ্চাদের একটা বিড়ালআলা ঘড়ি।ঘড়িটা বাক্সের এক কোণায় পরে ছিলো।যাতে কিরন প্রথমে দেখেও নি।
কিরনঃ কি এটা😒?
সায়েমঃ ঝাকানাকা বিলাই আলা ঘড়ি।
আফরাঃ তুই না সেদিন ঘড়ির জন্য কাঁদলি। তাই আমরা সবাই মিলে এটা তোরে গিফট করলাম।
কিরনঃ এটা তোরা সবাই মিলে গিফট করছিস?(অবাক হয়ে)
রিমঃ হুম☺️।
কিরনঃ 🤬
মিহুঃ আরে মাম্মা রাগতাছিস কে?তুই না সেদিন চিৎকার পাইরা রাস্তায় গড়াগড়ি খাইয়া ঘড়ির জন্য কাঁদলি? তাই আমরা সবাই মিলে ৩০ টাকা করে দিয়ে ১৮০ টাকা খরচ করে তোর জন্য ঘড়িটা কিনলাম।
সায়েমঃ ২০০ টাকা চাইছিলো।অনেক কষ্ট করে ২০ টাকা কমাইছি।আমাদের কাছে তো তোকে গিফট দেওয়ার জন্য ১৮০ টাকা ছিলো।বাকি ২০ টাকা কোথায় পামু বল?তাই দোকানদারের সাথে যুদ্ধ করে কমাই নিছি।
কিরনঃ হার কিপ্টাগুলি।(রেগে)
আভাঃ ঐ তুই কারে কিপ্টা বলিস?তোর জন্য আমরা ৩০ টাকা নষ্ট করছি।৩০ টাকা কি তুই কম মনে করোস।৩০ টাকা দিয়া রহিম মামার দোকানে বইয়া এক প্লেট ফুচকা খাওন যাইতো।
কিরনঃ তোগো ইচ্ছাডা করতাসে তুইল্লা আছাড় মারি।এই প্লানটা কার ছিলো?
রিমঃ রুশানের।
কিরন রুশানের নাম শুনে একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিলো।তারপর ভ্রু নাচিয়ে বললো।
কিরনঃ তাহলে তো রুশান এই খুশিতে একটা ট্রিট দিবো।কি বলিস সবাই?
আফরাঃ কথাডা খারাপ বলিস নাই।
মিহুঃ আমার মনের কথাডা কইছিস।
সায়েমঃ কি রুশান মাম্মা?
রুশানঃ আমি আজকে কলেজে আসি নাই 😭।কে আপনারা?আপনেগো আমি চিনি না।আর আমার নাম রুশান নয়।আপনাদের নিশ্চয়ই কোন ভুল হচ্ছে।
রিমঃ আমগো চিনোন লাগবো না। ট্রিট দিলেই চলবো।
মিহুঃ সায়েম, কিরন।
কিরনঃ বুইঝা গেছি বস।সেইদিন আমারে পালকি দিয়া, নিয়া গেছিলো না।আজকে ওরে নিয়া যামু।
রুশান পালানোর আগেই সায়েম, কিরন ওকে ধরে ফেললো।ঠিক তখনি আইজান ওদের সামনে এলো।
আইজানঃ আবার কোন ঝামেলা করছো তোমারা?
মিহুঃ আহারে!!! দুঃখে বুকটা ফাইট্টা যায়।এই ছেমড়াডার লিগা কোন কাম করতে পারি না। যখন যেইখানে যাই আঠার মতো লাইগা থাকে।এই দুঃখ আমি কই রাখুম?
আইজানঃ ওকে এভাবে ধরছো কেন?ছাড়ো ওকে।
রিমঃ হির বেবি, ওরে ছাইরা দে।
মিহুঃ কেন?
রিমঃ তার যখন এত দরদ লাগতাছে রুশানের লিগা। তাইলে ট্রিটটা AK-ই দিবো।
মিহুঃ ঠিক কইছিস।সায়েম, কিরন ওরে ছাইরা দে। আর আইজান খানকে পালকিতে উঠা।
☘️☘️☘️
সায়েম,কিরন দুজনেই রুশানকে ধপ করে মাটিতে ফেলে দিলো।তারপর জানের সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।
আইজানঃ খবরদার, সামনে আসবা না বলে দিচ্ছি। এর ফল কিন্তু অনেক খারাপ হয়ে যাবে।
আইজান উল্টো দিকে দৌড় দিলো। ওর পিছন পিছন সায়েম ও কিরন।
রুশানঃ এভাবে কাউরে ফালায়।আহ্ আমার মাজাডা বোধহয় গেলো।(চিৎকার করে)
মিহুঃ আহারে,আয় ভাই। আমার কোলে আয়।
(কলা করে কথাটা বলে রেগে হুংকার দিয়ে বললো)
হারামজাদা, এইখানে বইয়া বইয়া কি দেখোস?যা ঐডারে ধইরা নিয়া আয়। যদি ধরতে না পারস,তাহলে তুই আজকে গেলি।
রুশান ভয়ে দৌড় দিলো। আইজান গিয়ে নিবরাজের সামনে দাঁড়ালো। ওর পেছন পেছন সায়েম,কিরন,
রুশান।রাজ ওর বন্ধুদের সাথেই ছিলো।
নিবরাজঃ কি হয়েছে তোর?
আইজানঃ এনাকোন্ডার দল দৌড়ানি দিছে।
নিবরাজ সায়েমদের দেখতে পেলো।সায়েমরা রাজকে দেখেই উল্টো দিকে রওনা দিয়েছে।
নিবরাজঃ তোমারা এখানে কেন?
রুশানঃ AK নিতে এসেছি।
সায়েমঃ হির পাঠিয়েছে। AK -কে পালকিতে করে নিয়ে যেতে।
নিবরাজঃ তা দাঁড়িয়ে আছো কেন?নিয়ে যাও।
(মুখ চেপে হেসে)
আইজানঃ ভাই —তুই!!! ( অবাক+রেগে)
নিবরাজঃ হুম আমি।
আইজানঃ তুই বেডা ঘরের শত্রু বিভীষণ। তোরে আমি দেইখা নিমু। এই অবলা,অবুঝ শিশুর সাথে তুই এমন করলি।তোর কপালে শনি আছে।আল্লাহ বিচার করবো।
নিবরাজঃ আরে যা যা। সময় হলে দেখা যাবে। কালকে বড় বড় ডায়লগ মারছিস। সেই জন্য এটা তোর শাস্তি।
সায়েম,কিরন,রুশান তিনজন এসে আইজানকে পালকিতে করে নিয়ে গেল।
ফ্লাসব্যাক এন্ড……..
এখন……
মিহু ও তার বন্ধুরা খেয়ে টেবিল থেকে উঠে গেছে। যাওয়ার আগে বিল কাউন্টারে গিয়ে জানকে দেখিয়ে দিয়ে গেছে। ওয়েটার আইজানের কাছে বিল চাইতে এসে দেখে,ওর হাত-পা চেয়ারের সাথে বাঁধা। ওয়েটার ওর বাঁধন খুলে দেয়।কিন্তু জান পেমেন্ট করতে গিয়ে পরলো ঝামেলায়।টাকায় সর্ট পরে গেছে। আজ বেশি টাকা নিয়ে আসেনি।পেটুকগুলো ৫ হাজার টাকার খাবার সাবার করছে।ন্যাচারেলি বড় রেস্টুরেন্টে গুলোতে খাবারের দাম এমনিতেও একটু বেশি থাকে।জানের কাছে ৪ হাজার টাকা আছে।আর এক হাজার টাকা কোথায় পাবে?জান ভেবেছিলো রাজের সাথে আজ কথা বলবে না।কিন্তু ওকে বিপদ থেকে একমাত্র রাজই উদ্ধার করতে পারে। জান, রাজকে কল করলো।
আইজানঃ ভাই, আমাকে বাঁচা। এতক্ষণ এনাকোন্ডা বেঁধে রেখেছিলো।এখন মনে হয় ম্যানেজার বেঁধে রাখবে।হয় বেঁধে রাখবে নয়তো থালা-বাসন মাজাবে।
নিবরাজঃ কেনো?
আইজান ওর ভাইকে সব খুলে বললো।
নিবরাজঃ তুই থাক,আমি আসছি।
নিবরাজ এসে পুরো বিল দিলো।আইজান মুখ ভার করে ওর সারা চলে এলো।
আইজানঃ পেটকগুলো,খাদকনি,এনাকোন্ডা। আমি সব শোধ তুলে রাখলাম।একদিন ঠিক ফেরত দিবো।
(দাঁতে দাঁত চেপে)
☘️☘️☘️
ইন ভেলাইন্টাইস ডে……
আজ কলেজটাকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। রাজ আজ খুব বড় পার্টি রেখেছে। নিবরাজকে আজ সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে।সাদা কালার বড় ব্লেজার,কালো প্যান্ট,কালো জুতো,সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো করে সেট করা।গলায় কালো টাই,হালকা আকাশি কালার শার্ট,কানে কালো ব্লুটুথ গোজা।সব মিলিয়ে অনেক বেশি সুদর্শন লাগছে।সব মেয়ের নজর আজ ওর দিকে।আইজান সবকিছু ওর ভাইয়ের মতো পরেছে।শুধু কালার ভিন্ন।
অনেকক্ষণ ধরে রাজ গেইটের সামনে মিহুর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু মিহুর আসার নাম নেই। হঠাৎ গেইট দিয়ে দ্যা টিম অফ রেইনবো প্রবেশ করলো। শুধু মিহু ছাড়া সবাই আছে।নিবরাজ সামনে এগিয়ে গেলো।
নিবরাজঃ মিহু কোথায়?
সবাইঃ (নিশ্চুপ)
নিবরাজঃ মিহু কোথায়? কথা বলছো না কেন তোমরা?আমি তোমাদের কিছু জিজ্ঞেস করছি।
আফরাঃ ও আসবে না।
নিবরাজঃ কেন?
আভাঃ জানি না।
নিবরাজঃ মিথ্যা কথা বলছো কেন?
(রেগে+চিৎকার করে)
সায়েমঃ বস,আমরা মিথ্যা বলছি না।গত তিন বছর ধরে ওর সাথে আমাদের বন্ধুত্ব। ও কখনোই এই দিনে আমাদের সাথে বের হতো না।
নিবরাজঃ কারণটা কি?
রুশানঃ তাও জানি না।প্রতি বছর কল করলেই বলে ও আসবে না।
কিরনঃ হির কেন বের হয় না সেটা আমরা জানি না।তবে এতটুকু বলেছিল, হির এই দিনটা ওর এক স্পেশাল মানুষের সাথে কাটায়।
নিবরাজঃ কি??(রেগে)
রিমঃ হ্যাঁ,NK।
নিবরাজঃ তোমারা এখন যাও।
সবাই ভেতরে চলে গেল। কিন্তু নিবরাজের মাথায় রক্ত উঠে গেছে। এই কারণেই রাজকে আজ পর্যন্ত মিহু ভালোবাসতে পারে নি।মিহু ভেলেন্টাইস ডে টা ওর স্পেশাল মানুষের সাথে কাটায়। রাজ রাগে হাত মুঠ করে সামনের স্টীলের গেইট-টাকে সজোরে ঘুষি মারলো।এতে স্টীলের গেইটা কিছু হলো বলে মনে হয় না।কিন্তু রাজের হাতের চামড়া ফেটে রক্ত গড়িয়ে পরলো।তারপর চোখ মুখ শক্ত করে গাড়ি নিয়ে মিহুর বাসার উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলো।
#চলবে
আগামীকাল সকল রহস্যের সমাধান হবে।যেই মেয়েটা মারা গেছে তার নাম,পরিচয় ও মৃত্যুর আসল কারণও জানতে পারবেন।