#স্রোতের_টানে
লেখিকা: #Tarin_Niti
পর্ব:৫
ভার্সিটিতে এসে গাড়ি থেকে নেমে ফারিহা জোরে নিশ্বাস নেয়। মনে হচ্ছে অনেক দিন পর মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। দুইদিন আয়ানের বাড়িতে বন্দি ছিলো এতেই ওর দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। আয়ানের কথামতো ফারিহাকে আয়ানের বডিগার্ডরা ভার্সিটিতে পৌঁছে দিলো।ওরা এখানেই থাকবে ফারিহার উপর নজর রাখার জন্য।ফারিহার এসব ভালো লাগছে না তবুও ও যে ভার্সিটিতে আসতে পেরেছে এটা ভেবেই অনেক খুশি!
শিহাব আর নওশীন ক্যাম্পাসের একটা জায়গায় বসে কথা বলছিলো।ওদের দুজনের মন খারাপ।ওদের বন্ধুকে পাওয়া যাচ্ছে না! একটু কথা বলে আবার দুজনে চুপ হয়ে যায়।
ফারিহা ক্যাম্পাসে এসে নওশীন আর শিহাবকে দেখে দৌড়ে নওশীনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো জড়িয়ে ধরে।হঠাৎ কেউ এভাবে জড়িয়ে ধরায় নওশীন একটু পিছিয়ে যায়।শিহাব অবাক হয়ে ফারিহাকে দেখছে।ফারিহা নওশীন কে ছাড়ছেই না অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
অনেকক্ষণ পর নওশীন ওকে জড়িয়ে রাখা মেয়েটাকে সরায়।তারপর মেয়েটাকে দেখে বললো,
“ফারিহাহাহা.. তুই???তুুই এতো দিন কোথায় ছিলি? জানিস আমরা কতো টেনশন করছিলাম।কোথায় গিয়েছিলে তুই?তোর কিছু হয়নি তো??”
ফারিহা একটু হেসে বললো,
“আরে আস্তে আস্তে।আমি বলছিতো,,শান্ত হ”
তখন শিহাব ফারিজার হাত ধরে ওর দিকে ফিরিয়ে বললো,
“কোথায় ছিলি এতোদিন?এদিকে আমরা টেনশনে মরে যাচ্ছি আর তুই কোথায় গিয়ে গুম হয়েছিস? তোর ফোন বন্ধ! বাড়িতে কোন খোঁজ নেই। আমার কি পরিমান টেনশন হচ্ছিলো জানিস?আর তুই এখন হাসছিস?”
শিহাবের কথা শুনে ফারিহা মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেললো। নওশিন শিহাবকে চোখের ইশারায় থামতে বলে।তারপর ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে শান্তকণ্ঠে বললো,
“ফারু কি হয়েছে?তুই কোথায় ছিলি?”
ফারিহা হঠাৎ নওশীনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।শিহাব কিছু বলতে গেলে নওশীন হাতের ইশারায় শিহাবকে থামিয়ে দে।তারপর আস্তে আস্তে ফারিহার পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,
“ফারিহা কাঁদছিস কেনো?বলনা..আমাদের টেনশন হচ্ছে তো”
ফারিহা নওশীন কে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে বললো,
“আ আমাকে একটু পানি দে”
নওশীন ওর ব্যাগ থেকে ওয়াটার পট বের করে ফারিহাকে দে।ফারিহা পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে।নওশীন আর শিহাব এক দৃষ্টিতে ফারিহার দিকে তাকিয়ে আছে।ফারিহা একটু চুপ থেকে বললো,
“আমার..আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। নওশীন”
নওশীন আর শিহাবের মাথায় মনে হয় এইমাত্র বাজ পরলো।দুজনেই অবাক হয়ে ফারিহার দিয়ে তাকিয়ে আছে।তারপর শিহাব হেসে বলেলো,
” আরে ইয়ার! এটা মজা করার সময় না।মজা করিস না তো।কি হয়েছে বল?”
“আমি মজা করছি না শিহাব!”
ফারিহার সিরিয়াস কন্ঠে কথা বলা দেখে শিহাব শান্তকণ্ঠে বললো,
“ফারিহা সত্যিই? মানে কিভাবে?”
ফারিহা নওশীন আর শিহাবকে সব খুলে বললো।দুদিন আগে ও ভার্সিটিতে আসার সময় কিডন্যাপ হওয়া। সারাদিন বন্দী থেকে রাত্রে বিয়ে।তারপরের দিন আয়ানের বাড়িতে থাকা আর আজকে ভার্সিটিতে আসা। নওশীন অবাক হয়ে বললো,
“কিন্তু উনি তোকে কেন কিডন্যাপ করে বিয়ে করলো?”
ফারিহা তাচ্ছিল্য হেসে বললো, “উনার নাকি আমার বাপির সাথে কোন শত্রুতা আছে।বাপিকে কষ্ট দেয়ার জন্য আমাকে বিয়ে করেছে!”
শিহাব রেগে বললো, “ওই স্কাউন্ড্রেল টা!এভাবে তোকে জোর করে বিয়ে করে ফেললো?মগের মুল্লুক নাকি”
ফারিহা শিহাবের কথা উত্তর না দিয়ে হঠাৎ মনে পড়ার ভঙ্গিতে বললো, “আচ্ছা তোরা কি আমার বাড়িতে গিয়েছিলি”
নওশীন বললো, “হুম,,তোর খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম।তখনই তো আঙ্কেল বললো তোকে নাকি পাওয়া যাচ্ছে না!”
বাবার কথা শুনে ফারিহা উত্তেজিত হয়ে বললো,
“বাপি..বাপি ঠিক আছে তো? ”
শিহাব বললো, “চিন্তা করিস না।আঙ্কেল ঠিক আছে কিন্তু তোর জন্য অনেক টেনশন করছিলো”
“আমি কালকে অনেক চেষ্টা করেছি বাপির সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু পারিনি।নওশীন তোর ফোনটা দে তো”
নওশীন ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফারিহার হাতে দিতে নিলে ফারিয়া থামিয়ে দিয়ে বললো,
“দাঁড়া!এখানে না ক্লাসে দিস”
নওশীন ভ্রু কুঁচকে বললো,”কেনো?এখানে কি সমস্যা?”
ফারিহা নিচু কন্ঠে বললো, ” আয়ানের বডিগার্ডরা আমার উপর নজর রাখছে”
এটা শুনে শিহাব রেগে বললো, “এখানেও তোর ওপর নজর রাখার জন্য লোক পাঠিয়েছে?যে তুই স্বাধীনভাবে চলতে পছন্দ করিস, সেই তুই এসব মেনে নিয়েছিস!”
ফারিহা অসহায় কণ্ঠে বললো,
“কি করবো বল? না হলে তো আমাকে ভার্সিটিই আস্তে দিতো না।আচ্ছা ক্লাসে চল, ওখানে তো নজর রাখবে না”
ওরা উঠে ক্লাসে চলে গেলো।ক্লাসে গিয়ে ফারিহা নওশীনের থেকে ফোন নিয়ে ওর বাপি কে কল দিলো। ফারিহার বুক ধুকপুক করছে।
দুইদিন!দুইদিন পর বাপির সাথে কথা বলবে।কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর মিস্টার আজাদ কল রিসিভ করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো, “হ্যালো..”
ফারিহা কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বললো,
“বাপি! আমি ফারিহা”
ফারিহার কন্ঠ শুনে মিস্টার আজাদ উত্তেজিত হয়ে বললো,
“ফারিহা মামনি তুই কোথায়?তুই ঠিক আছিস তো?ওই আয়ান তোর সাথে কিছু করেনি তো?”
ফারিহা অবাক কন্ঠে বললো, “তুমি জানো যে উনি আমাকে কিডন্যাপ করেছিলো?”
“জানি রে মা! তোকে সব বলবো।এখন তুই কোথায় আছিস বল।এটা কার নাম্বার?”
“বাপি আমি ভার্সিটিতে এসেছি আর এটা নওশীনের নাম্বার”
“আচ্ছা তুই কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। আমি আসছি”
ফারিহা কল কেটে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। তখন শিহাব বললো,
“কিরে আঙ্কেল কি বললো?”
“বাপি আসছে!”
ফারিহা শুধু এটাই ভাবছে যে ওর বাপী জানে আয়ান ওকে কিডন্যাপ করেছে। তাহলে বাপি ওকে বাঁচানোর জন্য আসলো না কেনো!ফারিহার ভাবনার মাঝেই শিহাব বলে উঠে,
“আজকে আর ক্লাস করতে হবে না। চল কেন্টিনে যাই।আঙ্কেল নাকি আসবে”
নওশীন বললো, “হুম এটাই ভালো।চল..”
.
ফারিহা,নওশীন, শিহাব কিছুক্ষণ বসে থাকার পর প্রায় আধঘণ্টার মধ্যে মিস্টার আজাদ ভার্সিটিতে আসে।ফারিহা বাপিকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দে।মিস্টার আজাদও দুইদিন পর মেয়ে কাছে পেয়ে আবেগপ্লুত হয়ে যায়।ফারিহা পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,
“আমার মা টা কাঁদছে কেনো?তুই না অনেক স্ট্রং”
ফারিহা কাঁদতে কাঁদতে বললো, ” আই মিস ইউ বাপি”
“আই মিস ইউ টু মামনি”
ফারিহা ওর বাবাকে ছেড়ে চোখের পানি মুছে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
“কিন্তু বাপি তুমি জানতে আমি কোথায় ছিলাম?”
মিস্টার আজাদ পাশের একটা টেবিল দেখিয়ে ফারিয়াকে বললো, ” এখানে বস,, বলছি”
নওশিন ইশারায় শিহাবকে চলে আসতে বল। শিহাব আর নওশীন একটু দূরে চলে আসে।এখন বাবা আর মেয়েকে একান্ত সময় দেয়া দরকার।মিস্টার আজাদ ফারিহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“আমি জানতাম রে মা।কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না! হ্যাঁ আমি প্রথম দিন জানতাম না যে তুই কোথায় ছিলি। অনেক খুঁজেছি তোকে তারপর তোর বিয়ের পর আয়ান আমাকে ফোন দিয়েছিলো।তারপর ওই রাতেই আমি আয়ানের বাড়ি যাই কিন্তু তোর সাথে দেখা হয়নি”
“বাপি উনি আমাকে কিডন্যাপ করলো কিন্তু তুমি পুলিশের সাহায্য নিলে না কেনো?”
মিস্টার আজাদ তাচ্ছিল্য হেসে বললো, “আয়ান সবকিছু আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলো।পুলিশে ওর পকেটে!আর তুই তো জানিস ও কত বড় মাফিয়া।কিন্তু আমি আর তোকে ওর কাছে যেতে দেবো না। তুই আমার কাছেই থাকবি”
ফারিহা ওর বাবার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“বাপি একটা কথা বলবে?”
“হুম.. বল মা”
“তোমার সাথে ওনার কিসের শত্রুতা?”
মিস্টার আজাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“সেটা যদি জানতাম তাহলে তো ভালই হতো”
ফারিহা ভ্রু কুঁচকে ওর বাবার দিকে তাকায়। তখন মিস্টার আজাদ আবার বললো,
“আয়ান আমার সাথে কি নিয়ে শত্রুতা করছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।রাজনীতির দিক দিয়েও আমাকে ভেঙ্গে ফেলতে চাচ্ছে।
আর এখন আমার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোকে বিয়ে করলো!ওকে আমি সোজাসুজি জিজ্ঞেস করেছি যে,ও আমার থেকে কি চায়?কিন্তু আয়ান কিছুই বলে না।কেনো আমার উপরে এতো রেগে আছে বুঝতেছি না!”
ফারিহা অবাক হয়ে বললো, “তুমিও জানো না?”
“তোকে কিছু বলেছে?”
“না।শুধু বলেছে তুমি নাকি ওনার আপনজন কেড়ে নিয়েছো। তাই উনি তোমার আপনজন মানে আমাকে কেড়ে নিয়েছে”
“আমি ওর আপনজন কেড়ে নিয়েছে?ওর সাথে আমার কোন শত্রুতা নাই!এমনকি ওর পরিবারের কাউকে আমি চিনিনা!”
“কি জানি!উনি তো সব খুলে বলে না”
কিছুক্ষণ পর মিস্টার আজাদ ফারিহার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“তুই আমার উপর রেগে আছিস।তাই না রে..?আমি একজন এমপি হয়েও নিজের মেয়েকে সুরক্ষা দিতে পারিনা।তোকে বাঁচাতে পারলাম না”
ফারিহা ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” না না বাপি এসব কি বলছো! আমি জানি তুমি চেষ্টা করেছো। আমি তোমার উপর একটুও রেগে নেই।খুব মিস করছিলাম তোমাকে..”
তখন হঠাৎ ফারিহার হাতে টান পড়লো।ফারিহা উঠে দাঁড়িয়ে দেখে আয়ান রক্তচক্ষু নিয়ে ফারিহার দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে…