#স্রোতের_টানে
লেখিকা:#Tarin_Niti
পর্ব:৭
ভার্সিটির ক্লাস শেষে ফারিহা নওশীন আর শিহাব রেস্টুরেন্ট আসলো।ফারিহার নিজের একটা রেস্টুরেন্ট আছে।পুরোটা রেস্টুরেন্ট কাঠের আর বাশের তৈরি। দোতালার মধ্যে,,নিচে রেস্টুরেন্ট আর দোতালায় কফি শপ।রেস্টুরেন্টের সামনে বিভিন্ন বিদেশি রঙের ফুলের টপ।পুরোটা জায়গা একটা গ্রামীন থিমে তৈরি।রেস্টুরেন্টের সামনে একটা বড় জায়গা আছে পুরোটাই ঘাস তার সাইডে অনেকগুলো সাদা বেঞ্চে বসার জন্য।পাশে একটা দিঘি আছে।
রেস্টুরেন্টের নাম “ঠিকানা”.. নামটা ফারিহার ই দেওয়া।এখানে আসলে মন ফুরফুরে হয়ে যায়।
ফারিহা সব সময় চাইতো নিজে কিছু একটা করবে।বাবার উপর নির্ভরশীল হয়ে না থেকে নিজের জন্য, অসহায়দের জন্য কিছু করবে।যদিও রেস্টুরেন্টটা করতে মিস্টার আজাদের হেল্প নিয়েছে।কারণ ফারিহার কাছে এতো টাকা ছিলোনা।
ফারিহা বাবার টাকায় রেস্টুরেন্ট করলেও ফারিহা ওর বাবাকে বলেছে,রেস্টুরেন্টটা বড় হলে ও বাবার সব টাকা ফিরিয়ে দেবে।মেয়ের কথা শুনে মিস্টার আজাদ ঐদিন অনেক হেসেছে। মিস্টার আজাদ ফারিহাকে নিয়ে গর্ব করে।অন্য বড়লোকের মেয়েদের মতো টাকা উড়ানো ফারিহার স্বভাবে নেই।ফারিয়া নিজে কিছু করতে চায়। তাই মিস্টার আজাদ সর্বোচ্চ সাহায্য করেছে। আর তাছাড়া মিস্টার আজাদের।সবকিছুতো ফারিয়ার ই তবুও ফারিহা বলে টাকা ফেরত দেবে, সেটা শুনে মিস্টার আজাদ হেসেছিলো।
ফারিহা, নওশীন আর শিহাব ভেতরে গেলে
ক্যাশিয়ারে বসে থাকা একটা লোক বলে উঠে,
“আরে ফারিহা! তুমি আজকের তিনদিন পর রেস্টুরেন্টে আসলে? তুমি তো প্রতিদিন এখানে আসো।এবার তিন দিন আসলে না যে,শরীর ঠিক আছে তো?”
ফারিহা হেসে বললো, “জী আঙ্কেল শরীর ঠিক আছে”
উনি ফারিহার তৌহিদ আঙ্কেল।এই রেষ্টুরেন্টের সব হিসাব নিকাশ উনি ই দেখেন। আর ফারিহাকে সবসময় মেয়ের মতো স্নেহ করেন।
নওশীন,শিহান এখানেই কাজ করে।ক্লাস শেষে ওরা তিনজন প্রতিদিন এখানে চলে আসে।শিহাব রেস্টুরেন্টের দায়িত্বে আছে আর নওশীন কফিশপের দায়িত্বে আছে।ওরা দুজন ভেতরে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নে।ফারিহা ভেতরে গেলে শিহাব রাগী চোখে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুই আজকে এখানে কাজ করবি?”
“হ্যাঁ কেনো?কি হয়েছে?”
“কি হয়েছে মানে? তোকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে তোর শরীর ভালো নেই। এখন কোনো।কাজ টাজ করতে হবে না।তুই বসে থাক”
“না শিহাব আমি এখানে বসে থাকতে আসিনি আর আমার বসে থাকতে ভালো লাগে না”
তখন নওশীন এসে বলেলো,
“ফারু,,শিহাব তো ঠিকই বলেছে।না জানি ঐ বাড়ীতে থেকে তোকে কতো অত্যাচার সহ্য করতে হয় আবার ভার্সিটির ক্লাস শেষে এখানে কাজ!তোর কাজ করতে হবে না, আমরা আছি না?আমাদের উপর বিশ্বাস করিস না?আমরা সব দেখে রাখবো”
ফারিহা হেসে বললো, “তোদেরকে বিশ্বাস না করলে আর কাকে বিশ্বাস করবো? কিন্তু তোরা আমাকে বুঝতেছিস না। আমার এখানে আসলে ভালো লাগে।কাজ করলে মনটা ভালো লাগবে। প্লিজ না করিস না”
শিহাব বলে উঠে, “আচ্ছা ঠিক আছে। তবে বেশি কাজ না”
ফারিহা হেসে শিহাবের কাঁধে হালকা থাপ্পড় দিয়ে বললো, ” ওকে মহারাজ”
ফারিহার কথা শুনে ওরা তিনজনই হেসে দিলো।তারপর কাজ শুরু করে।আর দুষ্টুমি তো আছেই..
.
বিকালের দিকে ফারিহা রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় চলে আসলো।ফারিহা এটা ভেবে অবাক হয়ে যে ও ভার্সিটি থেকে রেস্টুরেন্টে গেলো কিন্তু আরিয়ানের বডিগার্ডরা কেউ কিছু বলেনি।হয়তো আরিয়ানের অর্ডার ছিলো যে ফারিহা সেখানে যেতে চায় যাক কিন্তু সব সময় নজরে রাখতে হবে।
ফারিহা বাসায় এসে রূমে ঢুকে অবাক হয়ে যায়,,কারণ ওখানে স্টাডি টেবিলে ওর সব বইগুলো রাখা। ফারিহা দৌড়ে বই গুলোর কাছে গিয়ে বইগুলো দেখতে থাকে।ফারিহার চোখ মুখখুশিতে চকচক করে ওঠে। ফারিহা অবাক হয়ে দেখছি সবগুলো বই আছে এখানে।ওর যা যা দরকার
সবই আছে।
রাতে ফারিহা স্টাডি টেবিলে বসে খাতায় নোট তুলতে ব্যস্ত।যে দুদিন ভার্সিটিতে যায়নি সে দুইদিনের নোট নওশীনের কাছ থেকে এনেছে।এখন ওইগুলো লিখছে।
আয়ান বাসায় এসে রুমে ঢুকে দেখি ফারিহা টেবিলে ঝুঁকে কি যেনো লিখছে।আয়ান একবার সেদিকে তাকিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর দরজার আওয়াজ শুনে ফারিহা ওয়াশরুমে দিকে তাকায়।দেখে আয়ান গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে।পরনে শুধু একটা টাওয়াল।আয়ান চুল ঝাড়তে ঝাড়তে আয়নার সামনে গেলো। ফারিহা এদিকে হা করে আয়ানকে দেখছে।ফারিহাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়ান বাঁকা হেসে বললো,
“কি দেখছো এভাবে?”
আয়ানের কথায় ফারিহা ধ্যান ভাঙ্গে।ফারিহা লজ্জা পেয়ে আবার নোট লেখায় মনোযোগ দেয়।আয়ান হেসে কাবার্ড থেকে একটা গ্রে কালার টি শার্ট আর কালো ট্রাউজারটা বের করে। আয়ান টি শার্ট আর ট্রাউজারটা পড়ে ফারিহার কাছে যায়।গিয়ে দেখে ফারিহা একমনে লিখে যাচ্ছে।
ফারিয়া হঠাৎ চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে আয়ান পকেটে হাত দিয়ে ওর কাছে দাঁড়িয়ে আছে।আয়ানকে এতোটা কাছে দেখে ফারিহা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
তারপর একটু আমতা আমতা করে বললো, “থ্যাংকস..”
আইয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো, “থ্যাংকস ফর হোয়াট?”
ফারিহা বই গুলোর দিকে তাকিয়ে বললো,
“এগুলোর জন্য”
আয়ান একটু হেসে মাথা নাড়ালো।তারপর বললো,
“তুমি বোধহয় কিছু ভুলে যাচ্ছো!”
ফারিহা ভ্রু কুঁচকে বললো, “কি? ”
তারপর মনে পড়লে একটু হেসে বললো, “ওহ..সরি।আমি এক্ষুনি আনছি”
ফারিহা আয়ানের কফি বানানোর জন্য নিচে যায়।ফারিহা চলে গেলে আয়ান ফারিহার লেখাগুলো দেখতে থাকে।ফারিহার লেখা দেখে আয়ান ভ্রু কুঁচকে।এতো সুন্দর লেখা!মনে হয় যেন কম্পিউটারে টাইপিং করা।আয়াম অনেকক্ষণ ফারিহার খাতা ঘাটে তারপর ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে।
কিছুক্ষণ পর ফারিহা কফি নিয়ে আসে।আয়ান ফারিয়ার হাত থেকে কফি নে। ফারিহা চলে যেতে নিলে আয়ান শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
“ভার্সিটির ক্লাস শেষে কোথায় গিয়েছিলে? ”
আয়নের কথা শুনে ফারিহা কেঁপে ওঠে। না বলে চলে যাওয়ার কারণে কি ওকে আবার মারবে নাকি! ফারিহা আয়ানের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বললো, “রে..রেস্টুরেন্টে”
আয়ান জানে ফারিহা কোথায় গিয়েছিলো।ফারিহা রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর পরই ওর বডিগার্ড আয়ানকে কল করে বলে।ওটা যে ফারিহার রেস্টুরেন্ট এটাও আয়ান জানে।তবে আগে জানতো না,আজকে জেনেছে!
আয়ান বলতে গেলে ফারিহার সম্পর্কে কিছুই জানতো না।শুধু জানতো ফারিহা ওর শত্রু মহিদুল হক আজাদের মেয়ে।এই পরিচয় জেনেই আয়ান ফারিহাকে বিয়ে করে।এখন আস্তে আস্তে ফারিহার সম্পর্কে জেনে অবাক হচ্ছে। এইটুকু মেয়ে এতো বড় রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছে।নিজে কিছু করতে চাই, মেয়েটা সত্যি সাহসী কিন্তু আরিয়ানের সামনে কেমন ভয় পেয়ে থাকে।
আয়ান ফারিহার দিকে তাকায়।ফারিহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে অনেক ভয় পেয়ে আছে। আয়ান ঠোঁট কামড়ে হাসে,তারপর বললো,
“কবে থেকে রেস্টুরেন্টে চালাচ্ছো?”
আয়ানের স্বাভাবিল কন্ঠ শুনে ফারিহা একটু স্বস্তি পায়।যাক এখন আর রেগে নেই।ফারিহা আয়ানের দিয়ে তাকে হাসিমুখে বললো,
“কলেজে থাকতে এরকম কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু তখন ছোট ছিলাম বলে বাপি করতে দেয়নি।তারপর ভার্সিটিতে ওঠার পর বাপি আর বারণ করেনি”
“তাহলে আজকে প্রায় তিন বছর হল রেস্টুরেন্টের চালাচ্ছো?”
ফারিহা হাসি মুখেই বললো, “হুম”
“আমি যদি বলি তোমাকে রেস্টুরেন্ট চালাতে দেবো না।তাহলে কি করবে?”
আয়ানের কথা শুনে ফারিহা আঁতকে ওঠে।ওর কাজ করা বন্ধ করে দিলে হয়তো ও বাঁচবেই না।কারণ ওখানে গেলে ফারিহা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারে। ফারিয়া কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
“প্লিজ এরকম করবেন না। আমি তো আপনার সব কথা শুনি”
ফারিহার কণ্ঠ শুনে আয়ান অন্যদিকে তাকিয়ে হাসে তারপর বললো, “রিল্যাক্স।আমি মজা করছিলাম।তুমি যদি নিজে কিছু করতে চাও করতে পারো।তবে আমার থেকে পালানোর চেষ্টা করো না ”
আয়ানের কথা শুনে ফারিহা হাসিমুখে বললো,
“না না আমি পালানোর চেষ্টা করবো না।আপনি শুধু আমাকে ভার্সিটিতে আর রেস্টুরেন্টে যেতে দিলেই হবে”
আয়ান ফারিহার কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে আমার ল্যাপটপের দিকে তাকায়।ফারিহা গিয়ে স্টাডি টেবিলে বসে বাকি নোটগুলো কমপ্লিট করতে থাকে।
চলবে..