#স্রোতের_টানে
লেখিকা:#Tarin_Niti
পর্ব:২৬
চোখ খুলে ফারিহা নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করলো।ঝট করে ফারিহার মস্তিষ্কে পুরনো ঘটনা টা রিপিট হল।আয়ান যখন ফারিহাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়েছিল আর ফারিহা নিজের একটা বন্দি রুমে ছিল।ঠিক আগের মতো আজকেও আবার ফারিহা কিডন্যাপ।ফারিহা ভাবছে আজকে এবার ওকে কে কিডন্যাপ করলো?ওর জীবনটা কি এভাবেই চলবে!
ফারিহা চারপাশ তাকিয়ে বুঝতে পারে ও একটা স্টোররুমে আছে।একটা চেয়ার এর মধ্যে বসে, হাত-পা বাঁধা কিন্তু মুখ খোলা।তাই ফারিহা একটু জোরে চেঁচিয়ে বললো,
“কেউ আছেন?আমাকে কে এখানে এনেছে?প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।কেউ আছেন এখানে??”
কিন্তু বাইরে থেকে কোনো আওয়াজ আসছে না তা দেখে ফারিহা হতাশ হলো।ফারিহা ভাবছে এখানে কি কেউ নেই!যে লোকগুলো ওকে আনলো তারা কোথায় গেল?আর ওকে কিডন্যাপ কে করলো? ফারিহা এবার একটু জোরে চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। কিছুক্ষণ পর ফারিহার দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল দুটো লোক আসছে।
কাছে আসাতে ফারিহা চিনতে পারল যেই লোকটা তার মায়ের জন্য সাহায্য চাইছিল সেই লোকটা আর তার সাথে আর একটা লোক।ফারিহা ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনারা আমাকে এভাবে বেঁধে রেখেছেন কেনো?আমি কি করেছি?প্লিজ আমাকে্ আমাকে যেতে দিন”
ওই লোক দুটোর মধ্যে একটা লোক এসে বললো,
“আপনাকে ছেড়ে দিতে তো আর ধরে আনি নি।আপনাকে ছেড়ে দিলে তো আমরা টাকা পাবো না।বসের অর্ডার আছে আপনাকে বেঁধে রাখতে হবে”
ফারিহা অবাক চোখে তাকিয়ে বললো, “কে আপনাদের বস? আমাকে কেনো বেঁধে রাখতে বলছে?”
“সেটা বস আসলে জিজ্ঞেস করবেন”
“আচ্ছা আপনাদের বস কে সেটা তো বলুন?আয়ান! আয়ান আপনাদের বস?”
একটা লোক হেসে বললো, “ম্যাডাম এটা ঠিক? হাজবেন্ডকে কিডন্যাপার ভাবছেন?আপনি হাসবেন্ডকে এতো সন্দেহ করেন?কিন্তু শুনেছি আপনাদের মধ্যে তো অনেক ভালোবাসা!”
ফারিহার এসব কথা অসহ্য লাগছে।তাই বিরক্তি মুখে বললো, “আপনাদের বসের নামটা বলুন প্লিজ”
“আয়ান খান আমাদের বস না।আর আপনার হাসবেন্ড আপনাকে কিডন্যাপ করবে কেনো?”
ফারিহা এক মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলো আয়ান ওকে কিডন্যাপ করেছে।আয়ান হয়তো অভিনয় করতে করতে হাঁপিয়ে গিয়েছে তাই এবার যা বলার সামনাসামনি বলবে।কিন্তু এখন শুনছে আয়ান কিডন্যাপ করেনি!
ফারিহার এবার একটু ভয় লাগছে।আয়ান না হলে আর কে ওকে কিডন্যাপ করতে পারে?একটা লোক পাশের চেয়ারে বসে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললো,
“তবে যাই বলুন ম্যাডাম।জীবনে কত কিডন্যাপ করেছি কিন্তু আপনাকে কিডন্যাপ করতে গিয়ে বেশি মজা পেলাম”
ফারিহা অবাক চোখে লোকটার দিকে তাকালো।লুকটা ফারিহার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
“কারণ জানতে চাইবেন না?”
ফারিহা কিছু বললো না,মুখ ফিরিয়ে নিলো।লোকটা ফারিহার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
“আচ্ছা আপনি জানতে চাচ্ছেন না?কিন্তু আমি বলবো।আপনি তো আয়ান খানের স্ত্রী।এত বড় মাফিয়ার বউকে কিডন্যাপ করা তো সহজ কথা নয়।আমরা সেটাতে সফলতা। কি যে মজা হচ্ছে!”
পাশের লোকটা সিগারেট খাওয়া লোকটা কে বললো,
“তবে যাই বলিস ম্যাডামকে কিডন্যাপ করা কিন্তু এতো সহজ ছিলো না।আমরা কিছুদিন ধরেই তো ফলো করছিলাম কিন্তু দেখলি তো উনার সাথে সবসময় বডিগার্ডরা থাকে।আজকে ম্যাডাম যদি একা একা পার্কে না যেত তাহলে আজকেও সফল হতাম না”
সিগারেট খাওয়া লোকটা হেসে বললো,
“হ্যাঁ এটা ঠিক বলেছিস।ম্যাডামই আমাদরে সাহায্য করল নিজেকে কিডন্যাপ করতে।হা হা হা…”
ফারিহা শুধু লোক দুটোর কথা শুনছে কিন্তু কিছু বলছে না।ফারিহা জানে এদেরকে প্রশ্ন করে কোন লাভ নেই এরা উত্তর দিবে না।তবুও ফারিহা বেহায়ার মতো আবার প্রশ্ন করল,
“আমাকে কিডন্যাপ করতে কে আপনাদের আদেশ দিয়েছে?প্লিজ আপনাদের বস এর নামটা বলুন”
“সেটা তো বলা যাবে না ম্যাডাম।বস আসলে নিজেই দেখে নেবেন”
লোক দুটো উঠে চলে যেতে নিলে ফারিহা আবার জোরে চেঁচিয়ে বললল, “প্লিজ বলে যান।আমার নামটা জানা খুব জরুরি।প্লিজজজজ…”
কিন্তু লোক দুটো শুনলো না।দরজা ভিড়িয়ে চলে গেল।ফারিহা রুমের চারদিকে তাকালো।চারদিকে অনেক অন্ধকার ঠিক ওর জীবনের মতোই!
____________
জিহাদ সবগুলো বডিগার্ডদের ধমকাচ্ছে আর বডিগার্ডরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ওরা এখন ভার্সিটি গেটের সামনে আছে।ফারিহার ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ হয়েছে ফারিহা আসছেনা দেখে জিহাদ ভার্সিটি ভেতরে গিয়েছিল। তারপর গিয়ে শুনলো ফারিহার ডিপার্টমেন্টের ক্লাস অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে।তারপর পুরো ভার্সিটিতে ফারিহাকে খোঁজা হয়েছে কিন্তু ফারিহা কোথাও নেই।জিহাদ ভেবেছিল ফারিহা হয়তো বাসায় চলে গিয়েছে তাই বাসার সার্ভেন্টদের কাছে ফোন দিয়েছিল কিন্তু ফারিহা বাসায় যায় নি। এমনকি জিহাদ মিস্টার আজাদের বাড়িতেও খোঁজ নিয়েছে কিন্তু ফারিহা ওই বাড়িতে যায়নি। রেস্টুরেন্টেও খোঁজ নিয়েছে ফারিহা সেখানেও নেই।
ফারিহা যেখানে যেখানে যেত সব জায়গায় খুঁজা শেষ।জিহাদের ভয়ে গলা শুকিয়ে গিয়েছে।আয়াম জানতে পারলে কি হবে!তাই এখন বডিগার্ডদের উপর রাগ ঝাড়ছে।আর সব বডিগার্ড মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।জিহাদ একটু জোরে বললো,
“তোমাদেরকে কোন কাজে রাখা হয়েছে?তোমাদেরকে ম্যাডামের সাথে পাঠানো হয় ম্যাডামের খেয়াল রাখার জন্য এখন ম্যাডামকে পাওয়া যাচ্ছেনা!তোমরা কোথায় থাকো ম্যাডামের দিকে খেয়াল রাখতে পারো না?আমি শুধু ভাবছি স্যার জানলে কী হবে।আজকে তো তোমাদের শেষ দিন”
জিহাদের কথা শুনেই বডিগার্ডদের ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো। মৃত্যুকে সবাই ভয় পায় ওরাও ব্যাতিক্রম না।আর বডিগার্ডরা সবাই জানে আয়ান রেগে গেলে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।সবাই খুব ভয় পেয়ে আছ।জিহাদ আর উপায় না পেয়ে আয়ানকে কল করলো।
আয়ান অফিসে বসে কাজ করছিল।ফোনের রিংটোনের আওয়াজ শুনে ফোন হাতে নিয়ে দেখল জিহাদের কল।আয়ান ইম্পরট্যান্ট কাজ করছিল তাই ফোনটা পাশে রেখে দিল।জিহাদ আবার কল করলো।এতে আয়াত প্রচুর বিরক্ত হলো।কারণ আয়ান জিহাদকে বলে রেখেছিল যখন ব্যস্ত থাকে তখন একবার কল করলে ও যদি রিসিভ না করে তাহলে যেন বারবার কল না করে।জিহাদ আজকে সেই কাজটা করছে।আয়ান বিরক্তি নিয়ে কল রিসিভ করে বললো,
“কি সমস্যা ?দেখছো না কল রিসিভ করছি না তাহলে বারবার কল করছ কেনো?”
আয়ানের ধমকে জিহাদ চুপসে গেল এখন যেই খবরটা দেবে সেটা আয়ান জানলে কি হতে পারে জিহাদ শুধু সেটাই ভাবছে।জিহাদ আমতা আমতা করে বললো,
“স্যার একটা কথা ছিল”
“পরে কথা বলবে। আমার ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে”
আয়ান ফোন রাখতে গিয়ে জিহাদের কথা থমকে গেল।জিহাদ বলোল, “স্যার কথাটা ম্যামকে নিয়ে”
আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো, “ম্যাডাম মানে?ফারিহা!!ওর কি হয়েছে?”
তারপর আয়ান ঘড়িতে তাকিয়ে বললো, “ওর তো এতক্ষণে ক্লাসই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।আজকের রেস্টুরেন্টে যায়নি নাকি বাপির বাড়ি যাওয়ার কথা বলছে?ওকে বলে দাও ওই বাড়িতে যেতে হলে আমি ওকে নিয়ে যাবো।এখন যেনো না যায়”
জিহাদ এবার একটু সাহস নিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো, “স্যার ম্যামকে পাওয়া যাচ্ছে না”
আয়ান চেয়ার থেকে উঠে জোরে চেঁচিয়ে বললো,
“হোয়াট?পাওয়া যাচ্ছে না মানে??”
আয়ানের চেঁচানো তে জিহাদ চমকে উঠলো।জিহাদ জানে সামনে আরো বড় ঝড় আসতে চলেছে।আয়ান অস্থির হয়ে বললো,
“কি হলো?পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি?”
“স্যার ম্যাডাম ক্লাস শেষ হওয়ার পরও আসছে না দেখে আমরা ভার্সিটিতে খুঁজেছিলাম কিন্তু ম্যাডাম সেখানে নেই।রেস্টুরেন্ট, বাসা এখন কি মিস্টার আজাদের বাসায়ও যায়নি”
“তোমাদেরকে ফারিহার বডিগার্ড হিসেবে পাঠানো হয়েছে হয় কেনো?ফারিহার খেয়াল রাখতে তাই তো?আর তোমরা এখন আমাকে খবর দিচ্ছো যে ওকে পাওয়া যাচ্ছে না?এক ঘন্টা টাইম দিচ্ছি।
এই এক ঘণ্টার মধ্যে খোঁজ লাগাও ফারিহা
কোথায়!ফারিহার কিছু হলে তোদের সবকটাকে আমি দেখে নেব”
আয়ান কল কেটে দিলো।কল কেটে জিহাদ ভার্সিটির ভেতরে গেল সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে।
আয়ান মিস্টার আজাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অফিস থেকে বের হলো।যদিও জিহাদ বলেছে যে ফারিহা মিস্টার আজাদের বাড়িতে যায়নি তবে নিশ্চিত হতে পারছে না।আয়ান নিজের চোখে দেখতে চায়।
আয়ান ফুল স্পিডে ড্রাইভ করে 10 মিনিটের মধ্যে মিস্টার আজাদের বাড়িতে এসে পৌঁছালো।আয়ান গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে ভাবছে এখানে যদি ফারিহাকে পায় তাহলে দুগালে ঠাস ঠাস করে দুটো চড় মারবে।কত বড় সাহস না বলে এখানে চলে এসেছে।মেয়েটা কি জানেনা আয়ান মেয়েটার জন্য কত চিন্তিত!
আয়ানের গাড়ি দেখে দারোয়ান আয়ানকে আটকালো না। কারণ এখন প্রায় সবাই জানেন আয়ান মিস্টার আজাদের মেয়ে জামাই।আয়ান গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতরে গিয়ে কাউকে দেখতে পেল না।একটা সার্ভেন্ট কাপড় দিয়ে ড্রইং রুম মুচ্ছে।
আয়ান ওই সার্ভেন্টর কাছে গিয়ে বললো,
“ফারিহা কোথায়?”
হঠাৎ আয়ানের কথায় সার্ভেন্টটা হকচকিয়ে গেল। তারপর বললো, “ফারিহা ম্যাডাম তো এ বাড়িতে আসেনি”
আয়ান রেগে বললল, “এখানে আসেনি মানে?কোথায় লুকিয়ে রেখেছো তোমরা?মিস্টার আজাদ কই??”
আয়ানের ধমকে সার্ভেন্ট টা কেঁপে উঠলো।তারপর তড়িঘড়ি করে হাত থেকে কাপড়টা ফেলে দিয়ে উপরে চলে গেল মিস্টার আজাদকে ডাক দিতে।
চলবে…