#শুকতারা (পর্ব-৩)
#হালিমা রহমান
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে সেই কবে। সূচির হাতে বিশাল ছুটি।দিন যেন কাটছেই না। সবগুলো দিন একই রকম লাগে।পড়া নেই,লেখা নেই,বেড়াতে যাওয়ার জায়গা নেই, গল্প করার মানুষ নেই,ভূমির বাসায় যাওয়ার সুযোগ নেই।এতো এতো অভাবের মাঝে সূচির প্রাণ হাপিয়ে উঠেছে। রত্নার সঙ্গও ভালো লাগে না এখন। একটু বাইরে হাঁটতে গেলেই সে দিব্যি সূচির হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে টিকটক করে। সূচি বেজায় বিরক্ত হয়।রাতুলের প্রেমে মজে গেছে রত্না।দিন-রাত রাতুলের গুনগান গেয়ে কানের কাছে ফ্যাচফ্যাচ করে। দু-জনের মাঝে উথাল-পাথাল প্রেম চলছে।মাঝে মাঝে সূচির দুঃখ হয়।আজ শুধু প্রেম করার মানুষ নেই বলে। প্রেম করার মানুষ থাকলে বন্ধটা এমন নিরামিষ কাটতো না।সূচিও প্রেম করে দুনিয়া উল্টে-পাল্টে ফেলতো।
সূচি এখন বাড়িতেই থাকে। সকাল কাটে আলেয়া বানুর সাথে ঝগড়া করে। সূচি প্রতিদিন সকাল সকাল গোসল সেড়ে রোদ পোহায় উঠোনে বসে।আলেয়া বানুও সূচির পাশে বসে পড়েন।কোন এক আদিকালের চাদর জড়িয়ে সূচির গা ঘেষে বসেন।গন্ধে সূচির পেট মোচড় দেয়,বমি আসে। আলেয়া বানু দূর্বল হাতে সূচির হাত তুলে নিজের মাথায় রাখেন। আদেশের সুরে বলেনঃ” আমার মাথার চুলগুলি টাইনা দে তো, সূচি। মাথা চুলকায় খালি।”
সূচি মুখ বাঁকায়। বিরক্ত হয়ে বলেঃ” তোমার মাথায় কিছুই নাই।সাদা চুল আর সাদা তালু দেখতে দেখতে আমার চোখ ধরে যায়।আমি পারব না।”
_” শয়তানের ছাও,খালি মুখে মুখে কথা কয়।”
_” আমি শয়তানের ছাও না, আমি তো শয়তানের নাতিন।ভুল কথা বলো কেন দাদী?”
ব্যাস! শুরু হয়ে যায় ঝগড়া। আলেয়া বানু নাক-মুখ কুঁচকে গালাগালি শুরু করেন।সূচিও মারাত্মক বেয়াদব।মুখ চলে তারও।কথায় কথায় তালে-বেতালে উত্তর দেয়। শেষে সাহিদা বানু ছুটে এসে ঝগড়া থামান।চাচী শ্বাশুড়ির কাছে ক্ষমা চেয়ে মেয়েকে টেনে-হিঁচড়ে ঘরে নিয়ে যান।
সূচিদের বিশাল বাড়ি। আশে-পাশে সাত-আটটা ঘর,মাঝখানে বিরাট উঠোন।সূচিদের ঘরের বিপরীতে তার আপন চাচা মবিন শেখের ঘর।মবিন শেখ, মমিন শেখের আপন বড় ভাই।তবে দু-ভাইয়ের মুখ চাওয়া-চাওয়ি নেই অনেক বছর ধরে। জায়গা-জমি নিয়ে কি এক ঝামেলায় দুই ভাইয়ের কথা বন্ধ।সূচি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছে চাচা-চাচি তাদের দিকে ফিরে তাকায় না।মা-বাবাও চাচা-চাচির দিকে ফিরে তাকায় না। সূচির ভালো লাগে না এসব।আত্মীয়তার স্বাদ এরা কেউ আসলে বোঝেই না।
সূচির বিকাল কাটে ভাবি মহলের সাথে। চম্পা ভাবি,জয়া ভাবি,মনি ভাবির সাথে সূচি তেঁতুলতলায় পিঁড়ি পেতে বসে। মনি ভাবির ছোট ভাই রনি তার সাথেই থাকে। রনি মানুষের মতোন দেখতে একটা কাঠবিড়ালি। বিকালবেলা তরতর করে তেঁতুলগাছে উঠে যায়। মগডালে বসে নিচের দিকে তেঁতুল ছুঁড়ে মারে। সূচিসহ বাকি সবাই তেঁতুল কুড়িয়ে লবন-মরিচ দিয়ে খায় আর গল্প করে।ভাবিদের শৈশব -কৈশোরের কত কত গল্প! সূচির সব শোনা হয়ে গেছে।তবুও চম্পা ভাবি যখন গলা ঝেড়ে শুরু করেঃ” আমগো স্কুলের একটা ছেলে আমারে অনেক ভালোবাসতো।ওর লগে দুই মাস কঠিন প্রেম করছি আমি;” সূচি তখন কান খাড়া করে চম্পা ভাবির কথা গিলে।তার ভিতর-বাহিরে বয়ে যায় প্রেমের জয়ধ্বনি।আহা প্রেম! আহা প্রেম!
***
সকাল সকাল গোসল সেড়ে সূচি চুপচাপ বসে আছে।সাহিদা বেগম রান্না করছেন,মমিন শেখ বাড়ি নেই। সূচি আজ রোদ পোহাতে গেল না।রোজ রোজ ঝগড়া করতে তার ভালো লাগে না।বেশ কিছুক্ষণ পর রত্না এলো ওদের বাড়ি।সূচির খাটের কোনে বসে প্রস্তাব দিলোঃ” মেলায় যাবি? নদীর পাড়ে মেলা বইছে।”
_” ওসব আমার জন্য বিলাসিতা,বালিকা।”
_” চল না যাই। একা যাইতে আমার ভাল্লাগে না।”
উদাস চোখে তাকায় সূচি।মেলায় যাওয়ার ইচ্ছা তো তারও আছে।কিন্তু বাবা-মা তো রত্নার বাবা-মায়ের মতো ওতো ভালো না। মেলায় যাওয়ার নাম শুনলেই পা ভেঙে বসিয়ে রাখবে।
_” কি রে,সূচি।”
_” আব্বা মারবে।”
_” কাকা জানব ক্যান? আমগো বাসার নাম দিয়া যাবি।”
সূচির মন আনচান করে। মেঘনা নদীর পাড়ে মেলা বসেছে।অটোতে গেলে পনেরো-বিশ মিনিট সময় লাগে মাত্র।শীতের মেলায় সব পাওয়া যায়।পিঠা থেকে শুরু করে শাল,খেলনা,ভাজা-পোড়া খাবার সব।সূচি ঢোক গিলে।আমতা-আমতা করে বলেঃ” যদি আব্বা জানতে পারে?”
_” আরে জানব না।বড় রাস্তার থেকা অটোরিকশায় উঠুম।তারপর একটানে মেলায়।কাকায় ওইদিকে যায় নাকি?”
_” আমি জানি না।”
রত্না ভাবে কিছুক্ষণ। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেঃ” তুই আমার সাথে চল এখন।আমগো বাসায় আজকে থাকবি।তারপর বিকালে আমরা যামু।বুদ্ধি কেমন?”
_” যদি ধরা না পড়ি তাহলে ভালো।কিন্তু আজকেই যেতে হবে কেন? কালকে যাই।”
_” না আজকেই।আব্বা মেলায় যাওয়ার জন্য টাকা দিছে কালকে রাতে।আম্মা জানে না।জানলে নিয়া যাইব। এই দেখ,আব্বা আমারে পাঁচশ টাকা দিছে।”
রত্না ব্যাগ থেকে একটা চকচকে পাঁচশ টাকার নোট বের করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়।সূচি দরজার দিকে একবার ভালোভাবে নজর দিয়ে তোশকের নিচ থেকে ভূমির দেওয়া এক হাজার টাকার নোট বের করে।ফিচেল হেসে বলেঃ” এই দেখ,তোর চাইতে আমার কাছে বেশি আছে।”
_” ক্যামনে কী বইন?”
_” ভূমি আপা দিয়েছে।”
_” তাইলে তো আর কথাই নাই। মেলায় ফুসকার বিল তুই দিবি। প্লেট প্রতি আশি টাকা।”
_” যা হতভাগী,নজর দিবি না।”
সাহিদা বেগমের জুতোর শব্দ ভেসে আসতেই তাড়াতাড়ি টাকাটা লুকিয়ে ফেলে সূচি।রত্নাও নিজের টাকা ব্যাগে রেখে শান্ত হয়ে বসে।
সাহিদা বেগম রত্নাকে দেখে জোর করে হাসি দেন।মেয়েটাকে তার পছন্দ না।তবুও কিছু বলেন না।মমিন শেখ রত্নাকে নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করেন।
_” রত্না, ভালো আছো?”
_” জ্বি,কাকি।আপনে ভালো আছেন? ”
_” এই তো।আসছো কখন?”
_” দশ মিনিট আগে।”
_” ওহ।সূচি,পিঠা দে রত্নারে।”
রত্না মাথা দুলিয়ে নিষেধ করে।
_” না, কাকি পিঠা খামু না।সূচিরে নিতে আসছি।আম্মা হাঁসের মাংস রান্না করছে।তাই আমারে পাঠাইলো সূচিরে নিয়া যাইতে।”
সাহিদা বেগম কপাল কুঁচকে ফেললেন মুহূর্তেই।গলা শক্ত করে বললেনঃ” না, এহন যাওন লাগব না।ওর আব্বা দেখলে মারব।”
_” আমি বাড়ি যায়া আব্বার ফোন থেকা কাকারে ফোন কইরা বইলা দিমুনি।আপনে টেনশন নিয়েন না।”
সাহিদা বেগম মোটেও রাজি হন না। মাথা নেড়ে বলেনঃ” না,না যাওন লাগব না।তুমিই থাইকা যাও আমগো বাসায়।সূচিই এহন যাইব,ওর শরীরটা ভালো না।”
সূচি মহা ধুরন্ধর। সে বেশ অবুঝের মতো প্রশ্ন করেঃ” আমার কী হইছে,আম্মা? আমার শরীর ভালো না কেন?”
সাহিদা বেগম খুব রেগে মেয়ের দিকে চোখ পাকিয়ে চেয়ে রইলেন।সূচি ভয় পাবে কি,ওর উল্টো হাসি পাচ্ছে। মাও তবে মিথ্যা কথা বলে! সূচি ভেবেচিল দুনিয়াতে ও একাই পাপী।কিন্তু না। দেখা যাচ্ছে মিথ্যাবাদীদের দলটাই বেশি ভারী।
রত্না বেশ নাছোড়বান্দা। সে সূচিকে নিয়ে যাবেই।এদিকে সাহিদা বেগমও যেতে দেবেন না।সূচি আর কি করে? সে ভালো মেয়ের মতো মায়ের ফোন থেকে মমিন শেখের ফোনে কল করলো।রত্নাকে ধরিয়ে দিয়ে বললোঃ” আব্বার সাথে কথা বল।আব্বা যেতে দিলে আম্মাও যেতে দেবে।”
রত্না ফোন নিয়ে উঠোনে চলে গেল।সাহিদা বেগমের সামনে সেও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।তাছাড়া,মমিন শেখের সাথে মিথ্যা বলা সহজ। কিন্তু সাহিদা বেগমের সাথে মিথ্যা বলতে পারে না রত্না।গলা খুব কাঁপে।
একা ঘরে পেয়ে মেয়ের খোঁপা ধরে দু’বার ঝাঁকুনি দিলেন সাহিদা বেগম।প্রচন্ড রেগে যেয়ে বললেনঃ” এতো অবাধ্য ক্যান তুই? এই অবাধ্যতাই কবে যেন ধ্বংস করে তোরে।”
সূচি কিছু না বলে চুপচাপ রইলো।মাঝে মাঝে পরিস্থিতি সামাল দিতে মার খেতে হয়।এগুলো কোনো ব্যাপারই না তার কাছে।
***
সাহিদা বেগমের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রত্নার সাথী হলো সূচি। রত্নার ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা কথায় মমিন শেখের মন গলেছে। মেয়েকে রত্নাদের বাড়িতে যেতে অনুমতি দিয়েছেন।
দুপুর তিনটা বাজে। আশেপাশে মানুষ কম।সবাই হয়তো ভাত খেয়ে ঘুমাচ্ছে।সূচি ও রত্না দারুন এক পরিকল্পনা করে বেড়িয়েছে। সাড়ে চারটা পর্যন্ত মেলায় ঘুরবে।তারপর ভূমির জন্য আচার-টাচার কিছু কিনে ভূমির বাড়িতে দশ মিনিট বসবে।তারপরে সূচি বাড়ি চলে যাবে।বেশ দারুন একটা পরিকল্পনা।
বড় রাস্তার মাথা থেকে অটোরিকশায় উঠতে হয়। সূচি নিজেকে আগা-গোড়া বোরকা-হিজাবে ঢেকে রেখেছে। তবুও তার পা কাঁপে। যদি বাবা কোনো কারণে মেলায় যায়,যদি দেখে নেয়! কেমন হবে?
সূচি জোর করে দুঃশ্চিন্তাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। রত্না অটোরিকশা থামিয়েছে। ভিতরের দুঃশ্চিন্তাকে গিলে নিয়ে রিকশায় উঠে বসে সূচি।মনে মনে শতবার আল্লাহর নাম নেয়।
***
নদীর পাড়ে মেলা বসেছে।বিশাল মেলা। ছোট ছোট দোকানের মাঝে সরু রাস্তা।সেখানে অনেক মানুষের ঢল। একটু খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে সূচি। মেলা থেকে আসলে কি কেনা যায়? শাড়ি,চুড়ি,শাল, এসব কিছুই কেনা যাবে না।এগুলো বাড়িতেই নেওয়া যাবে না।মা দেখলেই সন্দেহ করবে।তবে কি কিনবে?
রত্না সূচির পিঠে কিল দেয়।ব্যস্ত কন্ঠে বলেঃ” কি রে,যাবি না?”
_” আমি কী কিনব?”
_” আগে মেলায় চল,তারপর দেখ।”
_” চুড়ি-টুড়ি নেওয়া যাবে না।আম্মা সন্দেহ করবে।”
_” আচ্ছা আগে ভিতরে যাই তারপর দেখি।”
সূচির কনুই ধরে সামনে পা বাড়ায় রত্না।আশেপাশে অনেক মানুষ।সূচি সংকুচিত হয়।এতো মানুষের ভীড়ে সাধারণত যাওয়া হয়নি কখনো।সূচি পা চালাতে চালাতে ফিসফিস করে বলেঃ” আমার কেমন যেন ভয় লাগছে,রত্না। চল ফিরে যাই।”
_” আরে কিছু হইব না।মেলায় তো আইসাই পড়ছি।কেনাকাটা করতে আর কতক্ষণ লাগব?”
রত্নার প্রশ্নের উত্তর দেয় না সূচি। কেনাকাটা না করে ফিরে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
রত্না দুই ডজন সাদা-কালো চুড়ি কিনলো, একটা ছোট মেকাপ বক্স কিনলো,একশ টাকা দিয়ে একজোড়া জুতো কিনলো।সূচি কেবল দুঃখীর মতো চেয়ে রইলো।এক হাজার টাকায় অনেক কিছু কিনতে পারতো সে। শুধু সুযোগ নেই বলে কিনতে পারছে না।
_” সূচি, তুই এই জায়গায় একটু দাঁড়া।রাতুল কল করছে। আমি দুই মিনিট কথা বইলাই আসতাছি।”
_” এখানেই কথা বল।”
_” আরে না,এইখানে আওয়াজ বেশি।আমি খালি যামু আর আসমু।তুই দুই মিনিট দাঁড়া।”
সেকেন্ডের মাঝেই রত্না উধাও।সূচি অতিমাত্রায় বিরক্ত।এ কারণেই রত্নাকে ভালো লাগে না।সূচি এদিক-ওদিক নজর বুলায়। নকশি পিঠার ঘ্রাণ নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। চটপটির ঘ্রাণও আসছে। যাওয়ার আগে এগুলো সব খেয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সূচি।
এক জায়গায় চোখ আটকে গেল সূচির।একটু দূরেই একটা লোক বিড়াল ছানা বিক্রি করছে। ছোট ছোট তুলতুলে বিড়াল।সূচির লোভ হয় খুব। এতো সুন্দর তুলতুলে বিড়াল আর কখনো দেখেনি ও।সূচি পা বাড়ায় সেদিকে। বিড়াল ছানাও যে বিক্রি করা যায়, এই বিষয়টা একদম জানত না সূচি।
_” এই ছানাগুলো বিক্রি করবেন?”
কম বয়সী দোকানদার সূচির দিকে চেয়ে মৃদু হাসে।মাথা দুলিয়ে বলেঃ” হ।”
_” এগুলো বিক্রি হয়?”
_” হইব না ক্যান? তয় ঢাকার দিকে বেশি বিক্রি হয়।এদিকের মানুষ এগুলির কদর করতে জানে না।”
_” আপনার কাছে কয়টা আছে?”
_” দুইটা মাত্র।আপনে কি কিনবেন আপা?”
সূচি একটু ইতস্তত বোধ করে। বিড়াল ছানাটা বেশ সুন্দর।কিনে নিলে মন্দ হয় না।আর এটা নিলেও বাসায় ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা কম।মাকে বলবে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে ছানাটাকে।তবেই তো আর ঝামেলা হয় না।
_” দম কত?”
_” একদাম এক হাজার।”
সূচি অবাক না হয়ে পারে না।বিস্মিত গলায় বলেঃ” এতো দাম! আমাদের বাগান ঘুরলেই কত বিড়াল পাওয়া যায়।আর এই ছোট ছানাটার দাম এক হাজার টাকা!”
_” এইগুলা আরো দামে বিক্রি হয়।এই জায়গায় বেচা হইতাছে না তাই এতো কম দাম চাইলাম।”
_” ইশ! মিথ্যা কথা।আমি ছোট বলে আপনি এতো দাম চাইছেন।”
_” আপা আপনে কত দিবেন ওইটা কন। আপনে কত হইলে কিনবেন?”
সূচি একটু ভাবে। বেশ ভেবে-চিন্তে একটা দাম ঠিক করে। কয়েক সেকেন্ড পর বলেঃ” দেড়শ টাকা।এর চাইতে বেশি আর একটা পয়সাও দেব না।”
দোকানদার হা করে চেয়ে রইলো সূচির মুখের দিকে।এরকম কাস্টমার সে জীবনেও দেখেনি।এক হাজার টাকার জিনিস মাত্র দেড়শ!
_” কি হলো,দেবেন এই দামে?”
_” এসব তোমার জন্য নয়, খুকি।তুমি তোমাদের বাগান থেকেই বিড়াল ছানা খুঁজে নিও।মোহন,আটশ টাকা রাখ ছানার দাম।আমি দুটোই কিনব।”
সূচি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো পাশে দাঁড়ানো লম্বা ছেলেটার দিকে।তার সবগুলো বাক্যেই যেন তাচ্ছিল্য জড়ানো। মোটা ফ্রেমের চশমার আড়ালে ঢেকে রাখা চোখ দুটো দিয়ে সূচির দিকে আড়ঁচোখে দেখছে,তা বেশ বুঝতে পারছে সূচি।
সূচি চোখ ফিরিয়ে নেয়।মনে মনে অশ্রাব্য দু-তিনটে গালি দেয়।টাকা বেশি আছে বলেই এতো দাম দিতে গায়ে লাগছে না। এই লোকটা না এলে দোকানদার ঠিকই দেড়শ টাকাতেই দিয়ে দিতো। সূচি চিন্তা করে, এই বেয়াদব কে? কখনো দেখেনি এ গ্রামে? নতুন নাকি?
চলবে…