শুকতারা পর্ব-১১

0
1227

#শুকতারা (পর্ব-১১)
#হালিমা রহমান

ঘড়িতে ঠিক সাড়ে তিনটা বাজে।আসরের আযানের এখনো প্রায় আধাঘন্টা বাকি। ফকফকা আকাশে নিস্তেজ সূর্য। সূর্যের তাপ খুব একটা আরাম দেয় না। খোলা আকাশের নিচে একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকলে তবেই শরীরে উষ্ণতা ভর করে। দু-দিন ধরে খুব ঠান্ডা পড়ছে। শীতের কাপড়েও শীত মানে না।আশেপাশে শীতের হাওয়া গায়ে লাগছে খুব। চলছে নেতিয়ে যাওয়া বিকাল। সুপারি গাছের লম্বা পাতাগুলো শীতের হাওয়ায় নড়ছে।দেখতে বেশ লাগছে। ছোট্ট একফালি উঠোনের মাঝে আসন পেতে বসলে দূরের ধান ক্ষেতগুলো দেখা যায়।ক্ষেতে ধান নেই,খরখরা মাটি।কিছুদিন আগে ধান কেটে নবান্ন উৎসব করলো সবাই।তার দরুন মাঠগুলো বাচ্চা ছেলের ন্যাড়া মাথার মতো শূন্য।অপলক চোখে শূন্য ধান ক্ষেতে চেয়ে থাকতে ভালো লাগছে।শরীরে দারুন এক অবসন্ন ভাব। শুকনো মাটিতে হাত-পা ছেড়ে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকলে মুহূর্তেই ঘুম নেমে আসবে দু-চোখে।অবসন্নতাও ভালো লাগছে সূচির।এ বাড়িটা এক টুকরো সুখ।এ বাড়ির সবকিছুই ভালো লাগে। রঙচটা টিউবওয়েল, ভূমির ঘরের পাশের লকলক করে বেড়ে ওঠা পুঁইলতা,কুমড়ো ফুল, কবুতরের খালি খোপ,টিনের বেড়া দেওয়া কলতলা, হিজল গাছ, সগর্বে মাথা তুলে রাখা ঘাসের দল, ছোট্ট কাঁচামরিচের গাছ,ঘরের সামনের বিশ-পঁচিশ হাতের একটুখানি উঠোন— সবকিছু ভালোলাগার অন্য নাম। বাড়ির পরিচ্ছন্নতা-পরিপাটি ভাব দেখলেই বুঝা যায়, এ বাড়িটা ভূমির।ভূমির হাত ছাড়া আর কারো হাতে এতো জাদু খুঁজে পায় না সূচি।বড় আপা ছুঁয়ে দিলেই সবকিছু বাধ্য ছেলের মতো পরিপাটি, সুশৃঙ্খল হয়ে উঠে। এ বাড়িতে এক ফোঁটা ধুলো নেই।একটা ঝরা পাতা নেই।পরিষ্কার মাটিতে শলার চিহ্ন।দেখলেই বুঝা যায় সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করে ঝেরে-মুছে পরিষ্কার করা হয় সব। পুরো বাড়িটাই ছবির মতো সুন্দর।সবকিছু ছবির মতো সুন্দর করে রাখার সাধ্য বড় আপা ছাড়া আর কার আছে?

সূচি উঠোনের মাঝে পিঁড়ি পেতে বসে আছে।সে একটু আগে এসেছে এ বাড়িতে। ভেবেছিল ভূমি হয়তো ঘুমিয়ে থাকবে। দুপুরে ভাত খেয়ে দেড়-দুই ঘন্টা ঘুমায় ভূমি।কিন্তু আজ ঘুমায়নি।সূচি এসে দেখেছে, উঠোনের মাঝে বসে ছোট কাঁথা বানাচ্ছে ভূমি।মাটিতে টানটান করে পুরোনো কাপড় বিছিয়ে, চার কোনে ইট দিয়ে সুতোয় বেঁধে দিছে কাপড়ের দু-পিঠ।সূচি বাড়িতে ঢুকেই হুমড়ি খেয়ে পড়লো বোনের উপর। বাচ্চাদের মতো বড় বোনের গলা জড়িয়ে বসে রইলো কোল ঘেষে।কতদিন পরে দেখা! একটু ছেলেমানুষী করলে আহামরি পাপ হবে না।

ভূমি বসে আছে সূচির পাশেই।সদ্য পাতা কাঁথায় পা ছড়িয়ে বসে আচার খাচ্ছে।জলপাইয়ের আচার,আসার পথে চম্পা ভাবির থেকে একটুখানি চেয়ে এনেছে সূচি। ভূমি লোভনীয় ভঙ্গিতে খায়।হাতের আঙুল চেটে, জিহ্বা দিয়ে চুকচুক শব্দ করে সাধ মিটিয়ে খায়। জলপাইয়ের আচার মেয়েটার খুব পছন্দ।সূচি কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে চোখ ফিরায়। অযত্নে বেড়ে ওঠা নিমগাছের দিকে চেয়ে থাকে। সব ঘোলা ঘোলা লাগছে। শীতের দুপুরেই কুয়াশা পড়লো নাকি? না,কুয়াশা নয়।সূচির দু-চোখে শীতের শিশির ভর করেছে,টুপটুপ করে ঝরে পড়ার অপেক্ষা মাত্র।ভূমির খাওয়া দেখতে পারে না সূচি।চোখ ফেটে পানি গড়ায়। বাড়ি থেকে লুকিয়ে নেওয়া সামান্য খাবার এমন চেটেপুটে খেতে হবে কেন? ভূমি কি খাবার পায় না? নাকি রান্না করে না? এমন করে কেউ খায়?

বোনের জন্য কলিজা পুড়ে সূচির। অসুস্থ মানুষটা সারাদিন একা থাকে।শরীর খারাপ লাগলে কাউকে কাছে পায় না। লিলি হওয়ার আগে জয়া ভাবিকে দেখেছিল সূচি। বেলুনের মতো ফুলে যাওয়া পেটটা নিয়ে এটা-ওটা রান্না করতো ঠিকই কিন্তু খেতে পারতো না কিছুই।সূচি একটু বেগুন ভর্তা,একটু আলু ভর্তা,পটল ভর্তা করে জয়াকে দিতো।জয়া সেগুলো দিয়ে পেট ভরে ভাত খেত।একটু খারাপ লাগলেই সূচিদের ঘরে চলে আসতো।সাহিদা বেগম তখন মাথায় তেল-পানি দিয়ে দিতেন, স্যালাইন গুলে দিতেন,কখনো কখনো দোয়া-দরুদ পড়ে মাথায় ফুঁ দিয়ে দিতেন।এসব তো ভূমিরও দরকার।ভূমিও তো জয়ার মতো অসুস্থ।মায়ের কি মনে পড়ে না বড় আপার কথা? লেলে-পুলে এতো বড় করার পরেও মনে পড়ে না! আশ্চর্য! মা এতো নিষ্ঠুর কেন? মায়েরা না মমতাময়ী হয়? মাঝে মাঝে তো সূচির মতো লুকিয়ে লুকিয়ে এসে মেয়েটাকে দেখতেও পারে।বাবার চোখ ফাঁকি দেওয়া কি খুব বেশি শক্ত কাজ? না,খুব শক্ত নয়। মা ইচ্ছা করেই দেখে না। ভূমি নামের মানুষটাকে তিনি ভুলেই গেছেন।মায়ের বিরুদ্ধে এক আকাশ অভিযোগ জমে মনে।মা নামের মানুষটা খুবই পাষাণ, খুবই হৃদয়হীনা।

” সূচি,আচারটা দারুন হয়েছে।আম্মা বানিয়েছে?”

আলগোছে চোখে জমা শিশির মুছে নেয় সূচি।মাথা নেড়ে বলেঃ” না,চম্পা ভাবির থেকে এনেছি।”

” চাইতে গেলি কেন?”

” এখানে আসব তাই।ভাবি কিছু মনে করে না।”

” তবুও।আসার আগে এতো ঝামেলা করার দরকার নেই।এগুলো কী করে আনলি? আম্মা দেখেনি?”

” না।আম্মা যখন গোসলে ছিল তখন বক্সে ভরে ব্যাগে রেখেছিলাম।টক আর কচু পাতার ভর্তাটা কেমন হয়েছে?”

ভূমি বক্সের ভিতরে রাখা খাবারগুলো থেকে একটু একটু করে মুখে দেয়। ভর্তা খাওয়ার শেষে আঙুল চাটতে চাটতে বলেঃ” খুব ভালো হয়েছে। বাড়ি থেকে কী বলে আসলি? রত্নাদের বাসার কথা?”

” হুম।”

বক্সের ঢাকনা আঁটকে উদাস হয় ভূমি।গলায় একরাশ উদাসীনতা ঢেলে প্রশ্ন করেঃ” বাড়ির সবাই কেমন আছে রে? সেদিন রায়হান ভাইয়ের ফার্মেসীতে গেছিলাম।আব্বার সাথে দেখা হলো।তোর ভাইয়া আর আমি সালাম দিলাম।উত্তর নেয়নি,মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল।আব্বা অনেক শুকিয়ে গেছে।অসুস্থ নাকি?”

” না,অসুস্থ না। তবে খাওয়া-দাওয়া কমে গেছে অনেক।এখন আর আগের মতো খেতে পারে না।”

” আর বাকিদের কী খবর? আম্মা,মনি ভাবি,জয়া ভাবি,আলেয়া দাদি,,চম্পা ভাবি–ওনারা কেমন আছে?”

ভূমির প্রশ্নের বিপরীতে বাড়ির খবর উগরে দেয় সূচি।আম্মা ভালো আছে। তবে বাতের ব্যাথাটা খুব কষ্ট দেয় ইদানীং। কিছুদিন পর পর সর্দি-কাশিতেও ভুগে।ডান পায়ের তিনটা আঙুলে সেদিন ভাতের মাড় পড়লো।একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে।এছাড়া সব ঠিক আছে।জয়া ভাবি আগের থেকে একটু মোটা হয়েছে।তাই লিলির বাবা লতিফ, সারাদিন মোটা বউ বলে খেপায়।লিলিটাও বড় হয়ে গেছে।এই জানুয়ারিতেই বাজারের বড় মহিলা মাদ্রাসায় দিয়ে দেবে।চম্পা ভাবির শরীরও একটু একটু খারাপ।কিছু খেলেই বমি করে।আগের মতো কাজ করতে পারে না এখন।একটু কাজ করলেই দূর্বল হয়ে যায়।রায়হান ভাই খুব যত্ন নেয় ভাবির।আলেয়া দাদি সেদিন বললো, চম্পা ভাবিদের ঘরে নাকি নতুন সদস্য আসবে। আলেয়া দাদি আগের মতোই আছে।কুচক্রী আর খিটখিটে।সূচিকে দেখলেই পা বাড়িয়ে ঝগড়া করে।সূচি অবাক না হয়ে পারে না।ওর সাথেই কেন এতো লাগতে হবে? মনি ভাবি, রনি ওরাও ভালো আছে।রোজ বিকালে তেঁতুল তলায় বসে একসাথে তেঁতুল খায়। তবে রনিটা আগের মতোই আছে। এ আর মানুষ হবে না।

বাড়ির সব খবর দেওয়ার পর সূচি উশখুশ করে।আসল খবরটাই দেওয়া হয়নি।ফয়সালদের কথা বলার জন্যই তো এ বাড়িতে আসা।কিন্তু সূচির খুব লজ্জা করছে।মনে হচ্ছে, এ ব্যাপারে কথা না বলাই ভালো।এর চাইতে লজ্জার কথা আর এই দুনিয়াতে কিছু নেই।

” সূচি, ঘরে চল।সকালে তেলের পিঠা বানিয়েছিলাম।খেয়ে বলবি কেমন হয়েছে।”

ভূমি উঠতে চাইলেও হাত টেনে বসিয়ে দেয় সূচি।ভূমি অবাক হয়।ছোট বোনের চেহারায় কেমন এক অস্থিরতা। সূচির নাড়ী-নক্ষত্র চেনে ভূমি।সে কিছু বলতে চাইছে তা বেশ বুঝতে পারলো। ভূমি আগের মতোই বসে পড়লো।নরম গলায় বললোঃ” কিছু বলবি?”

“ইশতি ভাই কেমন আছে?”

” ভালো।”

” ভাইয়া ঘরে কিছু বলেছে? আমাদের বাড়ি সম্পর্কে? বাজারের অনেকেই জানে।”

” কি জানে অনেকেই? তোর ভাইয়া কিছু বললো না তো।কি হয়েছে বাড়িতে?”

সূচি একটু অপ্রস্তুত হয়।ইতস্ততভাবে বলেঃ” ওই না তেমন কিছু না।আমাকে সেদিন দেখতে এসেছিল,তার কথাই বলছি।”

ভূমি ভয়াবহ অবাক হয়।সূচি এতো বড় হলো কবে যে ওকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে! বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করলোঃ ” কারা এসেছিলো? আমাদের গ্রামের কেউ?”

” হুম।ওই যে তোমাদের সাথে পড়তো ফয়সাল ভাই।ওনার জন্যই দেখতে এসেছিল।”

” কি!” বিশ্বাস করতে চায় না ভূমি।বিশ্বাস করার মতো কথাও না অবশ্য। ফয়সাল দেখতে এসেছে ওর ছোট বোনকে! ফয়সাল! অবিশ্বাস্য।
ভূমির বয়সী ফয়সাল।একসাথে একই ক্লাসে পড়তো।ফয়সাল বিজ্ঞানের, ভূমি মানবিকের ছিল।তবে একই গ্রামের হওয়ায় বেশ ভাব ছিল দুজনের। মাঝে মাঝে বই,নোট, গাইড নিতে আসতো ভূমিদের বাড়ি। ইংরেজির হেলাল স্যারের হাতে প্রায়ই মার খেত গ্রামার না পারার জন্যে।বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও কেমিস্ট্রি পারতো না।ফিজিক্সে ছিল একদম খারাপ। ফিজিক্সের তুহিন স্যার রাগ করে বলতেন,পদার্থ নিয়েছে একটা অপদার্থ।এই অপদার্থের ব্যাগে থাকতে থাকতে কবে যেন ফিজিক্স বইটাও অপদার্থ হয়ে যায়।
বায়োলজি, হায়ার ম্যাথের কথা না বললেই নয়। প্রতি পরীক্ষায় শূন্য,পাঁচ,সর্বোচ্চ তেরো। প্রতি পরীক্ষার শেষে ফয়সালের পিঠের ছাল উঠে আসতো বায়োলজি স্যারের বেতে।হাই বেঞ্চের নিচে মাথা ঢুকিয়ে ফয়সালকে মারতেন হায়ার ম্যাথের ম্যাডাম। এতো মার খাওয়ার কারণেই বাংলা স্যার মজা করে ওকে ” ভোজন রসিক ” ডাকতো।পড়াশোনা না করে মজা করে মার খায়। সেই ফয়সাল সূচিকে দেখতে এসেছে! কি আশ্চর্য!

” কবের কাহিনী?”

” এইতো কিছুদিন আগের।সোমবারে আংটি পরাতে আসবে ওরা।”— অকারণেই হিজাবের কোনা আঙুলে পেঁচায় সূচি।লজ্জা করছে খুব।

” সোমবার মানে? পরশু দিন?”

” হুম।”

আজ বোধহয় অবাক দিবস।আর কতো অবাক হবে ভূমি? সূচি কী বলছে এসব? এও সম্ভব! এতোকিছু হয়ে গেল অথচ ভূমি জানতেই পারলো না।

” আব্বা এতো সহজে রাজি হয়ে গেল?”

” হ্যাঁ। ছেলে ভালো,চরিত্র ভালো,কর্মঠ,দেখতে-শুনতে সুন্দর।রাজি হবে না কেন?”

সূচির কথায় বিরক্ত হলো ভূমি।এখনই এতো গুণ-কীর্তন! কপাল কুঁচকে বললোঃ” তুই এতো সুনাম করছিস কেন? কতটুকু চিনিস ওকে?”

” যতটুকু চিনি ততোটুক বললাম।এগুলো তো আর মিথ্যা নয়।”

” চুপ কর।ছোট মানুষ এতো কথা বলবি না।ফয়সালের মাকে চিনিস তুই? তার সম্পর্কে গ্রামে যে রসালো আলোচনা হয় তা শুনিসনি?মহিলা ডেঞ্জারাস।তোর মতো বোকা মেয়েকে এক হাটে বেঁচে আরেক হাটে কিনতে পারবে।হুমায়রা আপুর মতো শান্ত মেয়েটা একসাথে খেতে পারলো না।তুই পারবি? সুইটিকে চিনিস না?”

” না।”

” আমার সাথে পড়তো।ওর চাচাতো বোনই হুমায়রা আপু।সুইটিদের বাড়িতে যখন পিকনিক খেলতে যেতাম তখন দেখতাম আপুকে।ভীষণ ভালো ছিল আপুটা।অনেক মিশুক।ফয়সালের বড় ভাইয়ের বউ এখন।সুইটির কাছে শুনেছি আপু এখন আলাদা থাকে।শ্বাশুড়ির সাথে নাকি বনিবনা হয় না।তাছাড়া, গ্রামেও তো ফয়সালের মায়ের নামে অনেক দুর্নাম আছে।ওগুলো আব্বা শুনেনি? আমি আশ্চর্য হয়ে যাই।এমন এক জায়গায় কীভাবে সম্বন্ধ করতে যাচ্ছে!

” মানুষ তো অনেক কিছুই বলে আপা। কতজনের সম্পর্কে কত কথাই বলে।এই ধরো, তোমার কথাই বলি।তোমার সম্পর্কেও তো অনেকে অনেক কথা বলে।তোমার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলে তোমাকে চরিত্রহীন,খারাপ বলে।তাই বলেই কি তুমি খারাপ হয়ে গেছো? তাছাড়া, এক হাতে তো তালি বাজে না। ফয়সাল ভাইয়ের মা খারাপ আর ভাবি খুবই ভালো?দোষ ছাড়া এমনি এমনি সংসার আলাদা হয়? ওই হুমায়রা আপু কি ফেরেশতা? সেও তো মানুষ।ভুল তারও থাকতে পারে।”

সূচির চোখ ধিকধিক করে জ্বলে।অস্থিরতা কাজ করে ভিতরে।ভূমিকে সে ভালোবাসে,অত্যধিক ভালোবাসে।ফয়সালকে তো কম ভালোবাসে না।নিজের চেয়ে শতগুন বেশি ভালোবাসে।আপা কী করে ফয়সালের সম্পর্কে এতো কথা বললো? কতটুকু চেনে আপা? না জেনেই এতো কথা বলা উচিত? উঁহু, একদম উচিত নয়।বড় আপা ভুল করেছে।তাই কঠিন ভাষায় তার ভুল ধরিয়ে দিলো সূচি।বোকা মেয়েটা বুঝতেই পারলো না,অবচেতন মনে খুব বড় ভুল করে ফেলেছে সে। ভূমির সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় আঘাত করেছে।ছোট বোন হয়ে বড় বোনের সম্পর্কে চরিত্রহীন শব্দের মতো একটা বাজে শব্দ ব্যবহার করেছে। সূচি আসলেই বেয়াদব।

” তুই বিয়েতে রাজি,সূচি?”

” আব্বার সিদ্ধান্তে আমি অখুশি নই।”— সূচির কাঠখোট্টা জবাব।ভূমির চেহারার দিকে তাকালে বুঝতে পারতো, পুরো চেহারায় একরাশ দুঃখ ভর করেছে।

” পড়াশোনা করবি না?”

” না,ভালো লাগে না আমার।”

“ফয়সাল খুব দুর্বল চিত্তের ছেলে সূচি। নিজস্ব কোনো মতামত নেই ওর।দশ বছর ওর সাথে পড়েছি।একটু হলেও তোর চাইতে বেশি চিনি।এসব ছেলেদের নিয়ে পরে অনেক সমস্যা হয়।এরা নিজেরা অন্যদের কথায় কান দেয় বেশি।নিজের ভালো-মন্দ নিজে কম বুঝে।তাছাড়া..

” আসছি আপা।ভালো থেকো।আবার কবে আসব বলতে পারছি না।অসুস্থ লাগলে খবর দিও।চলে আসব আমি।”— ভূমির মুখ বন্ধ করে ঝট করে উঠে দাঁড়ায় সূচি।ফয়সালের সম্পর্কে এতো কথা মোটেও ভালো লাগছে না।খুব রেগে গেছে সূচি।রেগে গেলে উল্টা-পাল্টা কথা বলার স্বভাব তার।তাই আর থাকতে চাইছে না এখানে।কখন কি বলে ফেলে।নিকাব বাঁধতে বাঁধতে বোনের দিকে একবার নজর দেয় সূচি।আপা অবাক হয়ে চেয়ে আছে।হয়তো একটু রেগেও গেছে।রাগলে রাগুক।সূচির কথা শুনেই বুঝা উচিত ছিল ফয়সাল বিশেষ একজন।একটা মানুষের পিছনে এতো কথা বলতে হবে কেন? দশ বছর একসাথে থাকার পরেও মানুষ ভালো-খারাপ বুঝতে পারে না,সেখানে আপা দশ বছর ক্লাস করেই বুঝে ফেললো? অতিরিক্ত একদম।সূচি পা বাড়ায় সামনের দিকে।দিনটাই খারাপ।এমন জানলে কখনো এদিকে আসতো না সূচি।

ভূমির বিস্ময়ের রেশ কাটলো সূচি চলে যাওয়ার পর। সূচিকে খুব ভালো করে চেনে ভূমি।ফয়সালের জন্য ভূমির সাথে উঁচু গলায় কথা বলেছে সূচি,তর্ক করেছে।ঘটনা বুঝতে দেরি হলো না।কবে ঘটলো এই অঘটন? এতো দূর্বলতা? আশ্চর্য! মানুষের মন বুঝা মুশকিল।সূচির প্রতি পদক্ষেপ মুখস্থ ভূমির।অথচ মনের খবর ধরতেই পারলো না।ছোট বোনটা এতো বড় হয়ে গেল?

” সূচিকে ভালো রেখো,খোদা।সুখী রেখো।আমার নসিবের সবটুকু সুখ ওকে দিও।তবুও ভালো রেখো ওকে।মেয়েটা খুব অবুঝ।রহমতের মালিক তুমি।তুমি ওকে রক্ষা করো।”

সূচির মতো ভূমিরও মনে মনে ছোট-খাটো প্রার্থনা করার স্বভাব।সূচি মুঠোভর্তি স্বস্তি নিয়ে এসে দিগন্তসম বিষন্নতা দিয়ে গেল। ভূমির মনটা খারাপ,প্রচন্ড খারাপ।

চলবে…

( রিচেক করা হয়নি।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। প্রথমেই আকাশসম দুঃখ প্রকাশ করছি।অনেক দেরি হচ্ছে ইদানীং। প্রাণপ্রিয় পাঠকের অভিযোগের শেষ নেই , আমিও নিজের উপর বিরক্ত।এতো দেরি মানুষ করে?
আমি একটু ব্যস্ত।তাই চাইলেও প্রতিদিন লিখতে পারছি না। অবশ্য এর আগেও আমি কখনো প্রতিদিন গল্প দেইনি।এক-দুইদিন পরে দিয়েছি।তবে এবারের মতো এতো দেরি কখনোই হয়নি।আরেকটু ধারাবাহিক হওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। হয়তো প্রতিদিন পারব না, তবে একদিন পরপর দেওয়ার চেষ্টা করব।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here