গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব -২৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা
—“কাজল তুই যদি আমার এতো কাছে থাকিস। তাহলে আমি কিন্তু রোমান্টিক মুডে চলে আসবো।পরম ভালোবাসা নিয়ে, রুদ্রিকের বুকে লেপ্টে রয়েছে কাজল। কাজলের দুষ্টুমির কথা আন্দাজ করতে পেরে রুদ্রিকের বুকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলে,
—-“তাহলে আপনার মনে সারাদিন এইসব চলে? চলবে-ই’ তো এত্তো গুলো গার্লফ্রেন্ড থাকলে তো হবে-ই’।
রুদ্রিক কাজলের কোমড় চেপে ধরে বলল,
—“নাহ রে কাজল। শুধু তুই কাছে থাকলে-ই’ আমার মুড টা রোমান্টিক হয়ে উঠে। ”
কাজল কিছু একটা ভেবে রুদ্রিকের থেকে দূরে সরে এসে বলে,
—“বাট এখন থেকে সবগুলো গার্ল্ফ্রেন্ড এর সাথে আপনার ব্রেকাপ হুহ। ”
রুদ্রিক ভ্রু কুচকে বলে,
—-“কেনো করবো? ওরাও তো আমার গার্লফ্রেন্ড তাইনা? আমি যদি ব্রেকাপ করে ফেলি ওদের ও তো খারাপ লাগবে তাইনা? মনটা ভেঙে যাবে। আমি কারো মন ভেঙে দিতে পারিনা৷ রাফসিন শেখ রুদ্রিকের মনটা আবার বিশাল বড়। ”
ছোটসাহেবের কথা শুনে আমার কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমি ক্ষিপ্ত গলায় বলে উঠলাম,
—-“ঠিক আছে তাহলে আপনার সেই গার্লফ্রেন্ডের নিয়ে-ই’ থাকেন আমি গেলাম ”
কথাটি বলে আমি চলে যেতে নিলে-ই’ উনি পিছন থেকে আমার জড়িয়ে আমার কাঁধে নিজের থুত্নি রেখে বললেন,
—“সত্যি কাজল তুই ও বাচ্ছা-ই’ রয়ে গেলি।
তোর রুদ্রিকের মনে শুধু তুই ছাড়া আর কে আছে বল?
আমি উনার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম,
—-“হুম আমি আপনার মনে নিজের উপস্হিতি ছাড়া আর কাউকে সহ্য করবো নাহ হুহ বলে দিলাম। ”
(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
আমার কথা শুনে উনি কিছুটা সিরিয়াস ভঙিতে বলে উঠলেন,
—-“কিন্তু আমার মনে আমার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে। যাকে আমি তোর থেকেও বোধহয় বেশি ভালোবাসি। ”
ছোটসাহেবের কথা শুনে আমার মনে অজানা ভয় ঢুকে গেলো। আমি আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,
—“কে সে? ”
ছোট সাহেব বললেন,
—“কে আবার? আমার ছোট্ট গার্লফ্রেন্ড মুসকান। ”
কথাটি বলে-ই’ উনি হেঁসে উঠলেন। যাকে বলে খিলখিলানো হাঁসি। আমিও হেঁসে উঠলাম সত্যি উনিও পারেন।
_________
তনয় কিছুটা রাগ নিয়ে-ই’ বেড়িয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে। আজ কাজল তাকে যথেষ্ট অপমান করেছে বটে। তার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা বলে লাপাত্তা। তার মধ্যে ফোনটাও ধরছে নাহ। তনয় ভেবে নিয়েছে কাজলের কাছে এর জবাব চাইছে।
কথাটি ভেবে তনয় পা বাড়ালে, সে খেয়াল করে ছুটকি (কাজলের বোন) রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে। ছুটকি হঠাৎ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে কেন? নাহ ব্যাপারটা দেখতে হবে।
কথাটি ভেবে তনয় ছুটকির কাছে গেলো।
এদিকে,
ইকবাল শিকদার তার মেয়ে মিশুকে নিয়ে আজ শেখ বাড়িতে এসেছেন। ইকবাল শিকদারকে দেখে আফজাল শেখ এবং ইশানিশেখ এগিয়ে আসেন।
আফজাল শেখ বলে উঠেন,
—“আসুন ইকাবাল সাহেব। ”
ইকবাল শিকদার তার মেয়েকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসে পড়ে। ইশানি শেখ মিশুর থুত্নি উচু করে বললেন,
—“ভারি মিষ্টি মেয়ে তুমি। নাম কী তোমার? ”
মিশি হেঁসে বলে,
–“জ্বী মিশু। ”
ইশানি শেখ ইকবাল শিকদারের দিকে তাঁকিয়ে বললেন,
—“ভারি মিষ্টি মেয়ে আপনার। আমার রুদ্রিকের জন্যে একেবারে উপযুক্ত। ”
মিশু খানিক্টা লজ্জা পায়।
তখনি জেসমিন শেখ এসে ইকবাল শিকদারকে সালাম দেয়।
ইকাবাল শিকদার এইবার আফজাল শেখের দিকে তাঁকিয়ে বললেন,
—“সবাইকে-ই’ তো দেখছি,কিন্তু রুদ্রিক কোথায়। ”
ইকবাল শিকদারের প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় ইশানি। সে তো রুদ্রিককে ফোনে-ই’ পাচ্ছে নাহ । ইশানি শেখ কোনোরকম হেঁসে বললেন,
–“রুদ্রিক একটা কাজে আটকে গেছে এখুনি চলে আসবে। ততক্ষনে নাহয় কিছু নাস্তা সেরে নিন। ”
ইকবাল শিকদার বললেন,
—“হুম তা মন্দ বলেননি। তাহলে আমরা না হয় রুদ্রিকের জন্যে-ই’ অপেক্ষা করি। ”
ইশানি শেখ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
________অন্যদিকে,
——“নিশ্চই মুসকান এবং ‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়ির সম্পর্কে তুই সবকিছু-ই’ জানিস তাইনা? আমাকে দিদুন সব কিছু-ই’ বলে দিয়েছে। কীভাবে তোরা আমার পিছন পিছন ‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়িতে চলে গিয়েছিলি। ”
ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি মাথা নিচু করে বললাম,
—“আমি জানি কাজটা আমার ঠিক হয়নি। আমি সত্যি দুঃখিত। ”
—-“হয়তো ঠিক হয়নি, কিন্তু কাজল তুই যদি আমার
‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়ির সম্পর্কে না জানতি, তাহলে তোর মনে একটা সংষয় থাকতো। তার থেকে সবকিছু ক্লিয়ার হওয়া-ই’ ভালো তাইনা? ”
আমি মাথা নাড়িয়ে উনার বুকে মাথা রেখে বললাম,
—“আমাকে এত্তো সুন্দর মূহুর্ত উপহার দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ ছোটসাহেব। ”
উনি বলে উঠলেন,
—“ধন্যবাদ তো আমার তোকে দেওয়ার উচিৎ কাজল। আমার জীবনে আসার জন্যে। জানিস কাজল? লাইফ টা তখনি সুন্দর যখন নিজের জীবনে সঠিক কোনো মানুষের প্রবেশ হয়। ”
উনার কথা শুনে আমিও মাথা নাড়িয়ে বললাম,
—“হুম জীবনে তো কত মানুষের-ই’ আগমন হয়,কিন্তু সঠিক মানুষ একবার-ই’ আসে। তনয় ভাই আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা হলেও আমার জীবনের সঠিক ভালোবাসা হলো আপনি ছোটসাহেব। ”
ছোটসাহেব মিষ্টি হেঁসে বললেন,
—“ভালোবাসি। ”
আমি লাজুক হাঁসলাম।
ছোট সাহেব কিছু একটা ভেবে ‘এক সেকেন্ড ‘ বলে একটু সাইডে চলে গেলেন।
আমিও নৌকার এক পাশ দাঁড়ালাম।
সামনে বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে জলরাশি,ওপরে রক্তিম উদার আকাশ,গোধূলি লগ্নে উন্মুক্ত নদীতীরে দাঁড়ালে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আকাশের রক্তিম রঙে নদীর জল রঙিন হয়ে ওঠে।
ছোটসাহেব ও এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন।
উনার কাঁধে মাথা রেখে বললাম,
—“আজকের দিনটা আমার জীবনের সবথেকে বেশি বিশেষ মূহুর্ত। যা আমার গোধূলী_বেলার_স্মৃতিতে
লিপিবদ্ধ থাকবে। ”
উনি অবাক হয়ে বললেন,
—“গোধূলী বেলার স্মৃতি? ”
—“হুম ‘গোধূলী_বেলার_স্মৃতি ‘। গোধূলী আমার বড্ড
পছন্দ বলে-ই’ আমার সাথে গোধূলীতে ঘটে যাওয়া সবকিছু আমি আমার প্রিয় ডাইরিতে আবদ্ধ করে রেখেছি । যার নাম ‘গোধূলী_বেলার_স্মৃতি ‘।
—–“বাহ ভালো-ই’ তো। আচ্ছা কাজল তুই তোর চোখ বন্ধ কর। ”
ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি বলে উঠলাম,
–“কেনো? ”
উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন,
—-“তুই বন্ধ করবি না নাকি? বেশি কথা বলিস। ”
—-“ওকে আমি এখুনি বন্ধ করছি। ”
আমি চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে-ই’ আমার পায়ে কারো আলতো হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে দেখি, ছোট সাহেব আমি পরম যত্নে এক জোড়া সোনার নুপুর পড়িয়ে দিচ্ছেন।
—“আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন ছোটসাহেব? ছাড়ুন….
কথাটি বলার সাথে সাথে-ই’ উনি ধমকে বলে উঠলেন,
—-“কাজল একদম নরাচড়া করবি নাহ। ”
কথাটি বলে-ই’ উনি নুপুরটি পড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
—“নুপুরটা তোর পায়ে বড্ড মানিয়েছে কাজল। আজকের দিনে আমার দেওয়া ছোট্ট উপহার। কখনো এই নুপুর নিজের কাছ থেকে দূরে রাখবি নাহ।”
আমি উনার চোখের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—“কিসের ছোট্ট উপহার? আপনার দেওয়া প্রত্যেকটা উপহার আমার কাছে খুব খুব স্পেশাল।”
উনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,
—“হুম এই উপহারগুলো-ই’ প্রত্যেক মূহুর্তে তোকে মনে করিয়ে দিবে, আমি তোর অস্তিত্বে সবটুকু অংশ জুড়ে রয়েছি। ”
কথাটি বলে-ই’ ছোট সাহেব আমাকে আচমকা কোলে তুলে নেন। আমি কিছু বলবো তার আগে-ই উনি আমাকে থামিয়ে বলেন,
—“তোকে কুড়েঘরটা ঘুড়িয়ে দেখাবো চল। ”
—-” আমি হাটতে পারি। তাই যেতে পারবো। ”
—-“তুই বড্ড আনরোমান্টিক কাজল। দেখছিস আমি একটু রোমান্টিক হওয়ার ট্রাই করছি,কিন্তু তুই আমার রোমান্টিকের মুডের বারোটা বাজাচ্ছিস। ”
ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি হেঁসে উঠি। ছোটসাহেব ও আমাকে নিয়ে হাটতে থাকেন সেই বেলিফুলের রাস্তা দিয়ে। উনি আমাকে কোলে করে কুড়েঘরের সামনে নিয়ে নামিয়ে দেন। আমিও নেমে পড়ি। ভিতরটা যেনো আরো সুন্দর। চারপাশে ছোট্ট ফুলের তোরা। পাশে ছোট্ট একটি দোলনা তাও বেলীফুল দিয়ে সাজানো। দোলনার পাশে ছোট্ট একটি টি টেবিল। ছোটসাহেব আমাকে ইশারা করে টি টেবিলে পাশের চেয়ারে বসতে বললেন। আমিও বসে পড়লাম। চারদিকে চোখ বুলিয়ে বললেন,
—“এই কুড়েঘরের সম্পর্কে কখনো তো কিছু শুনেনি। তাছাড়াও ঢাকা শহরেও এইরকম জায়গা সত্যি দেখতে পাওয়া মুশকিল। ”
ছোটসাহেব ও বসে বলে উঠলেন,
—“এই কুড়েঘরটা নাম ‘বেলীফুলের কুঞ্জ ‘।”
আমি আনমনে বলে উঠলাম,
—-‘বেলীফুলের কুঞ্জ ‘।
—-“হুম। আমার ফুপি আম্মুর বড্ড শখের একটি জায়গা ছিলো এই ‘বেলীফুলের কুঞ্জ ‘ জায়গাটি। আমার ফুপি আম্মু নিজে এইরকম নির্জন জায়গা খুঁজে নিজের হাতে এখানে এই কুড়েঘরটা সাজিয়েছিলো। আমাকেও এখানে সবসময় নিয়ে আসতো ফুপি আম্মু। ফুপি আম্মুর যখন মন খারাপ থাকতো তখন আমাকে নিয়ে এখানে আসতো। আমাকে বড্ড ভালোবাসতো ফুপি আম্মু। ”
কথাটি বলতে বলতে উনার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। আমি ছোটসাহেবের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—“কে এই ফুপি আম্মু ছোটসাহেব? আমি তো যতটুকু জানি আপনার দুজন পিপি। ”
—“নাহ। আমার তিনজন পিপি। তার মধ্যে আমার মেঝ পিপিকে আমি ভালোবেসে ‘ফুপি আম্মু ‘ বলে ডাকতাম। সে আমার মায়ের থেকে কোনো অংশে কম আমাকে ভালোবাসেনি বরং আমাকে বেশি ভালোবাসি। ”
ছোট সাহেবের কথায় আমি বলে উঠলাম,
—“তার কথা তো কখনো শুনেনি। ”
—“শুনবে কী করে? তার অস্তিত্ব যে সকলের থেকে আড়াল করেছে আফজাল শেখ। আমার ফুপি আম্মুকে
আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছিলো আফজাল শেখ এবং জেসমিন শেখ। বলতে গেলে একপ্রকার মেরে-ই’ ফেলেছিলো তারা আমার ফুপু আম্মুকে। ”
ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। কী বলছেন উনি? বড় সাহেব এবং বড় ম্যামসাহেব মিলে ছোটসাহেবের ‘ছোট পিপিকে ‘ মেরে ফেলেছে?
আমার ভাবনার মাঝে-ই’ উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
—“সত্যি বড় কঠিন রে কাজল। কি ভয়ংকর ঘটনা আমি নিজের ছোটবেলায় দেখেছি তোকে ঠিক বলে বুঝাতে পারবো নাহ। শুধুমাত্র ওদের জন্যে আমার সবথেকে কাছের মানুষকে আমি হারিয়েছি। ”
আমি বলে উঠলাম
—“কী এমন হয়েছিলো অতীতে? ”
ছোট সাহেব অশ্রুমাখা দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললেন,
—“জানতে চাস কী হয়েছিলো অতীতে? শুনতে পারবি তো সেই ভয়ংকর অতীত? ”
—-“পারবো। ”
ছোটসাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
—“তাহলে শুন। ”
চলবে….
বাকীটা আগামী পর্বে…
(কালকে রুদ্রিকের অতীত তুলে ধরবো 🤐)
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু 💙)