#শুকতারা (পর্ব-৩৮)
#হালিমা রহমান
নতুন বছরের আদি লগ্ন থেকেই ঝমঝমে বৃষ্টির দাপটে অতিষ্ঠ জনজীবন।সময়ে-অসময়ে মেঘের কড়কড়ে গর্জন-তর্জন,বিদ্যুতের প্রখর ঝলকানির শেষে সুবিশাল বিস্তীর্ণ কালো মেঘের আকাশ ভেঙে পড়ে মেঘ গলা জল। যখন-তখন ভেজা মাটির গন্ধ এসে ধাক্কা দেয় নাকে।সেই বৈশাখের শুরু থেকে একই নিয়ম চলছে।বাংলা বছরের শুরু দেখে উপায় নেই এবার বর্ষা আগে আসবে নাকি গ্রীষ্ম আগে আসবে।ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন গ্রীষ্ম থাকার কথা । অন্যান্য বছরের মতো চারদিকে গরম ও ঘামাচির যন্ত্রণায় মানুষ কাতরাবে,প্রখর সূর্য তাপে মাটি ফেটে একাকার হবে,বৃষ্টির অভাবে ফসলের গায়ে চাষিরা সেচের পানি ছুঁড়ে মারবে।এই তো হওয়ার কথা।কিন্তু এবারে তেমন কিছুই হচ্ছে না।ঘোর বৈশাখের গরমে যান্ত্রিক ফ্যানের বাতাসের দরকার পড়ে না।প্রকৃতির বাতাসে গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়। রাতে শোয়ার সময় পাতলা কাঁথায় আগাগোড়া জড়িয়ে ঘুমাতে হয়।
দিন-রাত একঘেয়ে বৃষ্টির ঝমঝমে বোল, আকাশ ভাঙা পানিতে চারদিক ভাসিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। অসময়ের অবিরাম পানি পেয়ে আনন্দ জাগে না চাষিদের মনে।বৈশাখের শুরু থেকে যত বৃষ্টি হচ্ছে তাতে ফসলের ক্ষতি হবে।অতিরিক্ত পানি ধানের ক্ষতি করে।চাষিদের মুখ অন্ধকার হয়ে আসে।অন্ধকার হয়ে আসে ঘরের গৃহিনীদের মুখও।ঘরবন্দী একঘেয়ে জীবন।কাদা-পানির মতোই প্যাচপ্যাচে প্রতিদিন।ক্ষনেকের বিরতিতে পশ্চিমাকাশে আবার যখন কালো মেঘেরা মিছিল করে তখন আকাশের মতো গ্রামবাসীর মুখও অন্ধকার হয়ে আসে।বৃষ্টির ঝমঝমানি একঘেয়ে বোল এখন আর মনে আনন্দ জাগায় না।শুনতে শুনতে কান সওয়া হয়ে গেছে।মাটির সোঁদা গন্ধ শিহরণ জাগায় না আর।দমকা হাওয়ার দাপট,ভেজা গন্ধ,পাতাচোয়া জল,বোঁটাখসা আম,বৃষ্টিভেজা চকচকে পাতা এখন আর ভালো লাগে না।দেখতে দেখতে বিরক্তি ধরে গেছে চোখে।মনে হয় যেন অসময়ে বর্ষা এসে উপদ্রব করছে কেবল।বৃষ্টির চোটে আশপাশ শুকানোর সময় হয় না। ভিজতে ভিজতে পচে যাচ্ছে সব।
দাপুটে বৃষ্টি এবার সব পচিয়ে তবেই দম নেবে।
সকালের খাবারের পালা সাঙ্গ হয়নি এখনো।রোমেলা বানু বসার ঘরে খেতে বসেছেন মাত্র।ফয়সাল গোসলে।রান্নাঘরের মেঝেতে পিঁড়ি পেতে প্লেটে গরম ভাত তুলছে সূচি।গরম গরম ভাতের একপাশে সকালের জন্য তৈরি করা ডাল ভর্তা,বেগুন ভর্তা ও ডিম ভুনার কড়াই থেকে অর্ধেক ডিম তুলে রাখলো।মাথার আঁচল ফেলে পিঠ ভাসানো আধভেজা চুলগুলোকে শক্ত করে খোঁপায় বেঁধে নিলো সূচি। প্লাস্টিকের ঢাকনা দিয়ে প্লেটটা ঢেকে লুকিয়ে রাখলো মিটসেফের ভিতরে। রান্নাঘরের একপাশের ছোট্ট জানালা দিয়ে এক পশলা বৃষ্টিভেজা ঠান্ডা বাতাস এসে আচমকা ছুঁয়ে দিলো ওকে। একটু শিউরে উঠে বাইরে তাকালো।মন্দগতিতে বৃষ্টি ঝরছে।আরেকটু মন্দাভাব আসুক,সূচি ছুটে গিয়ে খাবারগুলো চালান করে দেবে প্রিয় মানুষের কাছে। চারদিকে বৃষ্টি পতনের শব্দ।বাড়তি কোনো শব্দ নেই।দুষ্টু ছেলে যেমন গড়গড় করে একসুরে নামতা পড়ে তেমনি ঝরঝর করে একসুরে বৃষ্টি ঝরছে।এক সুর, এক তাল।এ যেন বৃষ্টিরাজ্য।হাতের কাজ শেষ করে সবে ফয়সালের প্লেটে ভাত তুলছিলো সূচি।আচমকা চারদিকের ঝমঝম শব্দ ছাপিয়ে বসার ঘর থেকে ভেসে এলো স্টিলের বাটি মেঝেতে আছড়ে ফেলার ঝনঝন শব্দ।তারপরেই চারদিকের একঘেয়ে সুরে ভাঙন ঘটিয়ে একটি কর্কশ তীক্ষ্ম স্বর বসার ঘর থেকে ভেসে এলো বাতাসে। আশপাশের শব্দহীনতাকে চিঁড়ে ফালা ফালা করে ডেকে উঠলেন রোমেলা বানু, ” সূচিইইইইই ”
শাড়ি সামলে একপ্রকারে দৌড়েই বসার ঘরে ছুটলো সূচি।যা ভেবেছে ঠিক তাই।বাটির ভর্তাগুলো সব মেঝেতে ছড়ানো।ওর দু-পা সামনেই বাটিটা উল্টে পড়ে আছ,হলুদ রঙা ডাল ভর্তাগুলো বেগুন ভর্তার সাথে মিলেমিশে একাকার।সূচিকে দেখেই চিৎকার করে উঠলেন রোমেলা বানু।
” কী বানাইছো এগুলি?”
” কী হয়েছে আম্মা?”
” আবার জিগাও কী হইছে! কী রাঁনছো? ঝাল নাই,লবন নাই।সকাল সকাল মুখে দেওন যায় এগুলি? এতোদিন ধইরা সংসার করতাছো এখনো লবন আন্দাজ করতে পারো না।রান্দা মুখে তুলা যায় না।ইচ্ছা কইরা করছো না? কোনোভাবে টক্কর দিতে পারতাছো না দেইক্ষা এখন খাওনে কষ্ট দিতে চাও?”
অবিচল চোখে একপলক চেয়ে দেখলো সূচি।খুব স্বাভাবিক গলায় জবাব দিলো, ” ঝালটা ইচ্ছা করেই কম দিয়েছি আম্মা। কালকে বলেছিলেন, তরকারিতে ঝাল বেশি হয়। তাই আজকে কম দিয়েছি। আর লবনটা ভুলে কম হয়েছে।আমাকে বললেই চলতো, আমি আরেকটু লবন মিশিয়ে দিতাম।”
কালকে বুঝি তরকারিতে ঝাল দেওয়ার জন্য বকেছিলেন? কখন যে কী ভুল ধরে বকেন তা ভুলেই যান ইদানীং। আজ মনে না পড়ায় একটু থমকে গেলেও চমকে গেলেন না রোমেলা বানু। বরং নিজ বক্তব্যকেই জোরালো করতে জোর গলায় দাঁত-চোখ খিঁচিয়ে বললেন, ” আমি জানি তুমি ইচ্ছা কইরাই করছো এগুলা।একদিন কম একদিন বেশি, এগুলি আবার কী? এতোদিন তো এরকম হয় নাই।বাপের বাড়ি থেকা এবার এগুলিই শিক্ষা আসছো না? তোমার মায়ে শিখায়া দিছে এগুলি? আমার উপরে টক্কর দেওনের লেগা শিখায়া দিছে না? ইতরের ঝি ইতর। বাপে ঘর ভইরা ফার্নিচার দিছে তাই তোমার দেমাগে পা পড়ে না মাটিতে।আমগো উপরে যে তুমি চ্যাতা তা আমি খুব ভালো কইরা জানি।ভাবছো যা মন চায় তাই করতে পারবা? অসম্ভব।আমি বাঁইচ্চা থাকতে কখনোই এইটা হইব না।পরের বেলায় এরকম হইলে তোমার খবর আছে।”
আধা প্লেট ভাতের মাঝে এক গ্লাস পানি ঢেলে হাত ধুয়ে উঠে পড়লেন রোমেলা বানু।মুখে একটা পান গুজে দিয়ে সোফা ছেড়ে উঠতে উঠতে বললেন, ” কবে জানি বিষ দিয়া আমগো মা-পোলারে মাইরা ফালাও তুমি।একটা বিষওয়ালা সাপ আনছি আমি।আমি দেইক্ষাই মিল্লা খাইতাছি,অন্য মহিলা হইলে আরো আগেই চুলের মুঠি ধইরা বাইর কইরা দিতো।অলক্ষ্মীর জাত অলক্ষ্মী।”
গজগজ করতে করতে কর্তৃত্বের রশিতে শক্ত একটা গিঁট দিয়ে ঘর ছাড়লেন রোমেলা বানু।ইদানীং তার মেজাজটা একটু বেশিই গরম থাকে।কথায় কথায় সূচির ভুল ধরে গালাফালি করেন।আগেও করতেন,কিন্তু এখন যেন একটু বেশিই চলে তার মুখ।এই যে এখন সকালবেলার পর্ব শেষ হলো।আধ ঘন্টা বিরতির পর আবার শুরু হবে দুপুরেরটা।
সূচি কিছুই বললো না,টু শব্দ অবধি করলো না।তিনবেলা যারা খাওয়াচ্ছে,পরাচ্ছে তারা এটুকু অপরাধ সহ্য করবে কেন? সূচিরই ভুল হয়েছে,নিজেকেই নিজে বুঝ দেয় সে।রান্নার পরে একবার দেখা উচিত ছিল।মনে মনে নিজেকে বুঝ দিলেও বুঝটা ঠিকঠাক কাজ করে না। অভ্যাসবশত মাঝখানে একবার দপ করে চোখ দুটো জ্বলে উঠেছিলো অবশ্য।কিন্তু সামলে নিয়েছে সে।চোয়াল শক্ত করে মাটির দিকে চেয়ে ছিলো।মাটির দিকে চেয়ে থাকলে রাগ কমে।রাগ কমাতেই মাটির দিকে একমনে চেয়ে চেয়ে ফ্লোরের রঙ দেখছিলো।
ফেলে রাখা খাবারগুলোর দিকে চেয়ে দুনিয়া কাঁপানো দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে।মাটিতে বসে আঙুল দিয়ে মুছে মুছে ভর্তা তুললো।এ বাড়িতে এতো খাবার নষ্ট হয়! মাঝে মাঝে মনে হয় ম*রার আগে ওরা খাবারে কষ্ট করবে।আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠানোর সময় রিযিক মেপে দিয়েছেন।মূল্যবান নিয়ামতের অংশগুলো তো ওরা এখনই অকারণে অপচয় করে নষ্ট করে ফেলছে।তাহলে ভবিষ্যতের জন্য জমা আর কী থাকলো?
” ভাতে লবন বেশি নিয়েন।ভর্তায় লবন হয়নি।”— মুখোমুখি খেতে বসে মৃদু স্বরে কথাটা বললো সূচি।
” আচ্ছা।”– ভাত মাখতে মাখতে আড়চোখে বউয়ের দিকে চেয়ে দেখলো ফয়সাল।সেও খেতে বসেছে।প্লেটে আধা চামচ ভাত আর একটুখানি ডাল ভর্তা।সহজ মুখ,সহজ তার হাত চালানোর ভঙ্গি।প্লেটে ভাতের পরিমাণ দেখে কপাক কুঁচকে এল ফয়সালের।গলা বাড়িয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু কী ভেবে আর বললো না।এক লহমায় গিলে ফেললো।তারপর কথা ঘুরিয়ে এক লোকমা ভাত গিলে নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করলো, ” তোমার কি কালকে জ্বর এসেছিলো আর?”
” জেগে থাকা অবধি আসেনি।এরপরে আর বলতে পারি না।”
” ঠান্ডাটা তো কমেনি এখনো।গলা ব্যাথা আছে এখনো?”
ঠান্ডায় গলা বসে গেছে সূচির। গলাটা খুব ব্যাথা।ভাত গিলতে কষ্ট হয় খুব।মনে হয় যেন ভাতের কনাগুলো গলার চামড়া কেটে কেটে নামে।তবুও মাথা নিচু করে বললো, ” না।”
” আজকে একবার ফার্মেসীতে নিয়ে যাব তোমাকে। শুধু রাতেই কেন জ্বর আসে? এ আবার কেমন জ্বর? আজকে বিকালে রেডি হয়ে থাকবে।”
এই তিন-চারদিন যাবৎ এই কথাটাই হচ্ছে।সূচির জ্বরের খবর পাওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই ফয়সাল ঘোষণা দেয়, আজ ফার্মেসীতে নিয়ে যাব।কিন্তু যাওয়া আর হয় না।সেও ভুলে যায়,সূচিও মনে করিয়ে দেয় না।তারপরের দিন আবার ভাত খেতে বসে বলে, ” তোমাকে আজ ফার্মেসীতে নিয়ে যাব।”
খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে গোপনে বউয়ের দিকে নজর দিচ্ছিলো ফয়সাল।সেই পহেলা বৈশাখের ঘটনাটার পর থেকে খুব চুপচাপ হয়ে গেছে সূচি।বেশিরভাগ সময় চুপ করেই থাকে,দুটো কথা বললে নিচুস্বরে ছোট ছোট করে উত্তর দেয়।হাসে না,আগের মতো কথা বলে না,মায়ের গলাবাজি-বকাঝকা শোনার পরেও অভিযোগ করে না।খুব রাত করে মায়ের ঘর থেকে ফিরে এসে পাশে চুপচাপ পড়ে থাকে।আবার শেষ রাতে এলার্মের শব্দ শুনলেই চুপচাপ উঠে পড়ে।আগে তো উঠতেই চাইতো না।প্রতিদিন ফয়সাল তুলে দিতো,এখন আর দরকার পড়ে না।আজকাল মেয়েটা কখন পাশে এসে ঘুমায়,কখন উঠে যায় তা বোঝাই যায় না।যদি ফয়সাল কোনোদিন জেগে জেগে অপেক্ষা করে তবে সেদিনই দেখা হয়।ঘুমিয়ে গেলে সকালের আগে আর দেখা হয় না। মানুষের রূপ ধরে একটা মূর্তি হেঁটে বেড়ায় ঘরে যেন।ঘরে আর কোনো অশান্তিই নেই।মা নিজের মতো করে রাগ মেটাতে পেরে খুশি,সূচি চুপ করে থাকে বলে অভিযোগের বালাই নেই।তাকে যা বলে তাই করে,যেভাবে বলে সেভাবেই করে।নিজেকে আজকাল সুখী সংসারের কর্তা মনে হয়।সব ঠিকঠাক, কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই।তবুও কোথাও একটা খচখচ করে।
চোরা চোখে চেয়ে দেখে ফয়সাল।মেয়েটাকে বাড়ি থেকে ফিরার পর খুব ভালো লাগতো।স্বাস্থ্য ভালো হয়েছিলো একটু।চোখের নিচের কালিগুলোও হালকা হয়ে এসেছিলো।এখন আর সেরকম নেই। এই কয়েকদিনে আবার আগের অবস্থা ফিরে এসেছে।মুখ শুকনো,আগের থেকে রোগা হয়ে গেছে আরো।গায়ের ময়লা রঙের উপরেই কে যেন আরেক পোঁচ রঙ মেখে দিয়েছে। মাঝে মাঝে ওকে দেখলে নিজের চেয়ে পাঁচ বছরের বড় মনে হয়। মনে হয় যেন এই কয়েকদিনে বয়সটা খুব বেড়ে গেছে মেয়েটার।মানসিক অশান্তি-অতৃপ্তি মানুষকে এরকম বুড়ো করে দিতে পারে??
” খাওয়া শেষ তোমার!! এতো তাড়াতাড়ি! কতটুকু ভাত খেয়েছো?”
পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ভাত শেষ করে উঠে যাচ্ছিলো সূচি।ফয়সালের কন্ঠের চমক শুনে বসে পড়লো আবার।
” এরকম করলে তুমি কতদিন সুস্থ থাকবে সূচি? পরে না খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাবে।তখন দেখবে কে তোমাকে?”
” যাকে দেখার জন্যে কেউ নেই তার জন্য আল্লাহ আছে।আমার জন্য আপনাকে ভাবতে হবে না।আমি বেঁচে থাকার জন্য দু’মুঠো খাচ্ছি,সুস্থ থাকার জন্য নয়।”— খুব শ্রান্ত গলায় নিজের কথাগুলো বলে ধীর পায়ে উঠে গেল সূচি।একা গেল না,ফয়সালের ক্ষুধা,ভাত খাওয়ার রুচি– সব ছেঁকে নিয়ে গেল আঁচলে বেঁধে।রান্নাঘরে একা বসে বসে ভাত নাড়ে ফয়সাল,মনে মনে নড়াচড়া করে সেদিনের কথাগুলো।না সেদিন বোধহয় একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলো।ঘটনাটা একটু বেশিই ঘেটে দিয়েছে ওদের ভারসাম্যহীন সম্পর্কটাকে।
ঘটনাটা ঘটেছে সূচি বাড়ি ফেরার পর।বাবাকে ঘরের বাইরে থেকে খালি মুখে বিদায় দেওয়ার পর থেকে ওর মন-মেজাজ খিঁচড়ে ছিল।স্বামীর ভীরুতা,শাশুড়ির গলাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে দিনদিন অবাধ্য হয়ে উঠছিলো।মেয়েটার অবাধ্যতাও কেমন যেন।মুখ ফুটে বলে না কিছু।কিন্তু কাজে-কর্মে ওর রাগ-জেদ-অবাধ্যতা ওকে ছাড়িয়ে যায়। বাড়ি ফেরার পর একটু একটু করে নিজের উপর থেকে চাপ কমাচ্ছিলো সে।প্রথমেই সারাদিনের রুটিন থেকে খাটাখাটুনির পর ঝিমাতে ঝিমাতে শাশুড়ির পা টেপার নিয়ম কেটে-কুটে ফেললো। বাড়ি ফেরার পর প্রথম রাতের কথা।ফয়সালের শক্ত বাহু বন্ধনে আঁটকে জোর তর্ক চলছিলো দুজনের মাঝে। তর্ক নয় অবশ্য,জোর জবাবদিহিতা। স্বামীর গলায় দু-হাত জড়িয়ে কঠিন গলায় উত্তর চাইলো সূচি।চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করলো, ” আপনি আমাকে নিতে গেলেন না কেন? আমি কত আশা করেছিলাম।মিথ্যা বললেন কেন সবার সাথে?”
” তুমি জানো আমি এরকমই।আমি সবার মতো সবকিছু পারি না সূচি। তারপরেও কেনো বারবার প্রশ্ন করো।আমি যে কত ভীতু তা..
এবার আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল কাজে দিলো না।এসব কথা দূর থেকে শুনতেই ভালো লাগে।কাছাকাছি থাকলে আর ভালো লাগে না।সূচি গলা শক্ত করে বললো,” থামুন।বারবার নিজের ভীরুতার কথা বলতে লজ্জা করে না আপনার? আপনার লজ্জা না হলেও আমার হয়। আমার এসব কথা শুনতে ভালো লাগে না। আমাকে আনতে গেলে আপনার দোষ হতো না। আচ্ছা,না আনতে গেছেন তা ভালো কথা।কিন্তু আম্মার কাছে কি জিজ্ঞেস করেছেন আমি কী করেছি?আমি তো বাড়িতে ছিলাম না।তাহলে? আবার কী নিয়ে ক্ষেপলো আমার উপর?”
উত্তর শোনা হয় না আর।অন্ধকার রাতে মুখোমুখি বসে এই বাজে কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে হয়নি ফয়সালের।চুপচাপ বসেছিল আগের মতো।বেশ কিছুক্ষণ পর, বোধহয় পনেরো-বিশ মিনিট পরে ক্লান্ত পথিকের মতো ভিন্ন এক অনুভূতিতে হারিয়েই যাচ্ছিলো দুজনে।পাহাড় চূড়া থেকে ঝাপ দেওয়ার অপেক্ষা মাত্র,এমন সময়ে আচমকা একটি ফ্যাসফ্যাসে গলা বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো দুজনকে।রোমেলা বানুর ঘর থেকে ভেসে এলো তার উচ্চ গলা, ” সূচিইই, আমার ঘরে আসো তো।”
ছিটকে দূরে সরে গেল দুজনে।ডাকটা পরিচিত।রাতদুপুরে এ যে কীসের আহ্বান তা বেশ বুঝলো সূচি। কপাল কুঁচকে গেল।গলায় একরাশ বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন করলো, ” কয়টা বাজে?”
” সাড়ে দশটা। আম্মা বোধহয় পা টিপার জন্য ডাকছে। আম্মা ঘুমালে তাড়াতাড়ি চলে এসো।আমি অপেক্ষা করব।”
” এতোদিন কে টিপে দিতো?আপনি?”
উদাস হলো ফয়সাল। উদাসী গলায় বললো, ” এতোদিন তো দরকার পড়েনি।আমি দিতে চেয়েছি,আম্মাই নিষেধ করতো।”
বিকাল থেকে শাশুড়ির উপরে এমনিই প্রসন্ন ছিল না সূচি। ফয়সালের এই কথায় যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটা পড়লো।গর্জে উঠে বললো, ” ও তাই।আমাকে দেখলেই আপনাদের সব জেগে উঠে? জ্বালানোর আর পথ পাচ্ছে না।এতোদিন যখন দরকার পড়েনি তখন আজকেও দরকার নাই।আমি এখন উঠতে পারব না,আমি অনেক ক্লান্ত।সারা বাড়িটা পরিষ্কার করেছি।হাত-পায়ে ব্যাথা করছে আমার।এখন আবার আমি নাকি যাব বসে বসে পা টিপতে! আজাইরা,পারব না আমি।”
” সূচি। সাবধানে কথা বলো।বাড়ি পরিষ্কার করে আমাদের মাথা কিনে নাওনি তুমি।তোমার সাহস হয় কী করে আম্মার সম্পর্কে এভাবে কথা বলার? আম্মা ডাকছে, যাও এখন।রাত-বিরেতে ঝামেলা করবে না।”
অনুভূতির রাজ্যকে গুড়িয়ে দিয়ে ফয়সাল ছুটলো ওয়াসরুমে।ধীরে-সুস্থে অনেক্ষণ হাত-পা সাবানে ঘসে,পানিতে ধুয়ে ঘরে পা দিয়ে দেখলো সূচি ঘুমিয়ে আছে।আম্মার কথা শোনেনি,তার ধমক মানেনি।বালিশে মুখ গুজে সে শুয়ে আছে চুপচাপ।ক্লান্ত দেহের ওঠানামা দূর থেকেই চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো, অবাধ্য মেয়েটা শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে।
সে রাতে আর ভাত খাওয়া হলো না কারো।খাটের উপর শুয়ে শুয়ে অনেক্ষণ এপাশ-ওপাশ করলো ফয়সাল।কাল সকালে ঘরে একটা ভয়ানক ঝামেলা হবে তা বেশ বুঝলো।আম্মার কথা না শোনার সাহস দেখিয়েছে সূচি! আম্মা এমনি এমনি ছেড়ে দেবে? অসম্ভব। সূচিটা আসলে কিছু বোঝে না।আদব-কায়দা জানে না,বড়দের সম্মান দেয় না।নিজের মনে যা আসে তাই করে। এতো বেয়াদব মেয়েটা।
বউয়ের থেকে তফাতে শুয়ে ছিল ফয়সাল। ভাবখানা এই সূচি নামের মেয়েটা অশুচি। রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ফয়সালের দীর্ঘশ্বাস।তাদের মাঝে দূরত্বের সম্পর্কই সুন্দর।সূচিকে আসলে দূর থেকেই ভালো লাগে।কাছ থেকে একে সহ্যও হয় না, ভালোও লাগে না।কাল থেকে আবার শুরু হবে নিত্য অশান্তি। মায়ের চিড়চিড়ে রাগ,বউয়ের অভিযোগ,পারিবারিক দ্বন্দ্ব, কোলাহল,স্নায়বিক যুদ্ধ, সবশেষে মানসিক অশান্তি।আহ! ভালো লাগে না এসব।
পরেরদিন খুব বকা শুনলো সূচি।বিয়ের পর থেকে যেমনটা শুনে এসেছে তার চেয়ে বেশি।রোমেলা বানু দাঁত কিড়মিড়িয়ে প্রথমে সূচিকে বকলেন,তারপর সূচির মাকে,বাবাকে।সকাল থেকে চললো নিরবচ্ছিন্ন পুথিপাঠ।তারপর এক পর্যায়ে ফয়সালকে কাছে ডেকে ওকেও বকলো।বউয়ের ভেড়া,বউ ভাউড়া,দুর্বল ম্যান্দা পুরুষ– আরো কতকিছু। তারপর দরজা আঁটকে মা-ছেলের পরামর্শ চললো কিছুক্ষণ। সূচি কিছুই বললো না।রাগলো না,বিরক্ত হলো না,একটা টু শব্দ অবধি করলো না।ভোর রাতের কাজ সেড়ে রান্না করলো,নিজে খেয়েছে, আকাশের খাবার দিয়েছে,হাঁস-মুরগীকে খাইয়েছে,গরু দুটোকে খাইয়েছে, ঘরের কাজগুলো একে একে সব করেছে।কানের কাছে চলা বকাবাজিতে সে কোনোমতে কানই দিলো না।একদম উপেক্ষা করলো সবকিছু। কানে গুজেছি তুলো,পিঠে বেঁধেছি কুলো, এই কথাটাই সেদিন মাথায় ঢুকেছিলো তার। শাশুড়ির রাগ-বিদ্বেষকে একদম উড়িয়ে দিয়ে কাপড় ধোয়ার উদ্দেশ্যে পুকুরে যাচ্ছিলো সূচি।কোথা থেকে উড়ে এসে একদম সামনে দাঁড়ালো ফয়সাল।শক্ত গলায় বললো, ” আম্মার পা ধরে মাফ চাও।”
” কারণ?”
” তুমি জানো না?”
” আমি কোনো অন্যায় করিনি শুধু এটুকুই জানি।”
প্রবল আক্রোশে বউয়ের কাঁধ চেপে ধরলো ফয়সাল।দানবীয় জোর খাটিয়ে সেখানে দুটো চাপ মেরে বললো, ” এমন করছো কেন সূচি? একটু নত হলে কী হবে? তোমার মাথা কাটা যাবে? আম্মার জায়গায় যদি তোমার আম্মা হতো,তখন কী করতে? এমনই করতে? এতো যে বকা শুনছো তাতেও লজ্জা হচ্ছে না? খারাপ লাগছে না?ছিঃ! কত বাজে কথা বলছে আম্মা।আমারই গা রি রি করছে। এসব শুনে পাথরের দেহেও প্রাণ আসবে।তোমার আত্মসম্মানে লাগে না? লজ্জা করে না তোমার?”
” না,আপনার সাথে থাকতে থাকতে লজ্জা-টজ্জা কাজ করে না এখন আর। তাছাড়া আমার চরিত্র, আমার বাবা-মা-বোনের চরিত্র, জন্ম নিয়ে যা বলছে তা তো ঘোর মিথ্যা।যেই কথাগুলো মিথ্যা,আমার প্রাপ্য নয়,সেসব শুনে আমার খারাপ লাগবে কেন? চামড়ায় সয় এখন। নিজের জন্য আমার খারাপ লাগছে না।শুধু খারাপ লাগছে আপনার জন্য।যেখানে আপনার লজ্জা হওয়ার কথা সেখানে লজ্জা হয় না।আমার দুঃখে লজ্জিত না হয়ে আম্মাকে তো একটু থামালেও পারেন।নাকি সেই সাহসই আপনার নেই?”
কাঁধের কাছের মাংসটুকুতে ফয়সালের দু-হাতের নখ বোধহয় দেবে গেছে একদম।টনটনে ব্যাথায় কুঁকড়ে গেল সূচি।পণ করেছিলো আজ কিছুতেই রাগবে না।কিন্তু এখন আর পারলো না।হাতের বালতিটা খট করে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে স্বামীর বুকে শক্ত হাতে থাবা দিলো।খুব রেগে চোখ পাকিয়ে, নাক ফুলিয়ে,ফয়সালের হাত ঝাকিয়ে বললো, ” জোর দেখাচ্ছেন কেন আপনি? নিজেকে শক্তিমান প্রমান করতে চাচ্ছেন? সাহস তো কম না! আমার বাবা-মা,আমার বোন-বংশ সবকিছু এক করে ফেলছে,আমি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছি,আবার সে এসেছে বীরগিরি ফলাতে। শুধু আমার অবাধ্যতাই দেখেন, আর এগুলো দেখেন না?আপনার আম্মা যা কিছু বলছে তার এক অংশ যদি আমার আম্মা বলতো, তাহলে সহ্য হতো? তখন তো ঠিকই তেড়ে মারতে যাবেন।আপনার মায়ের পা ধরে মাফ চাইতে হবে কেন? কাল রাতে তার অসম্মান হয়েছে তাই? আর আমার আব্বা-আম্মার অসম্মান যে আমি বিয়ের পর থেকে সহ্য করছি।তারা কি মানুষ না? নাকি মেয়ে হিসেবে আমি কুলাঙ্গার? কাল বিকালে যেই অপমান আমার আব্বার হয়েছে, তাতে আমি বলেই এখনো আপনার ঘরে আছি।অন্য কেউ হলে এতোক্ষণে পুলিশের কাছে ছুটতো মামলা করতে।হাত সরান,আর কোনোদিন যেন আমার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস না দেখি।”
বিস্মিত, ক্ষুব্ধ ফয়সালকে পাশ কাটিয়ে পুকুরে চলে গেল সূচি। দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে সবকিছুই নিজ কানে শুনেছেন রোমেলা বানু। তার চোখ জ্বলে ধিকধিক করে।কর্তৃত্বের রশিতে টান পড়লো। জীবনের সবচেয়ে সুখের,গৌরবের অধ্যায়ে দাঁড়িয়ে তিনি এমন এক প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হয়েছেন যার দন্ড বিধান করা অত্যন্ত জরুরি।কিন্তু যে গলাবাজি মানে না,বকাবকি কানে তোলে না,তীব্র ক্রোধকে আমল দেয় না,তার শাস্তি কী হতে পারে? তাকে আর কী শাস্তি দেওয়া যায়? অকারণেই নিজের উপর রাগ জমে রোমেলা বানুর। বিয়ের আগে ছেলের কথায় কান দিলেই ভালো হতো।তার অসম্মতিতে, জোর করে কেবল সম্পত্তির লোভে যেই বিয়েটা দিয়েছেন ; সেই বন্ধনের রশিটাই আজ সহসা তার গলায় ফাঁসের মতো চেপে বসেছে।ঘরের বউয়ের দুঃসাহস তাকে হতবিহ্বল করে দেয়।কিন্তু পোড় খাওয়া মানুষ তিনি।বারো বছরের মেয়েটা দীর্ঘ সংসার যাত্রা পাড় করে আজ পঞ্চাশের কোঠা পেরিয়েছে।তার অভিজ্ঞতার, বুদ্ধির তুলনায় সূচি তো কীট মাত্র। তাকে দমাবে সেই দেড় আঙুলে মেয়েটা? এও সম্ভব?সূচি যদি এক সেড় হয় তো তিনি সোয়া সেড়। রোমেলা বানুর সব অবস্থায় সামলে নেওয়ার ক্ষমতা অদ্ভুত।তিনি এক নিঃশ্বাসে ভিতরের অসহ্য ক্রোধকে চেপে ঘরে দুয়ার দিলেন।না, রশি আরো শক্ত করতে হবে।
ঘরের অবস্থা যখন এমন ভারসাম্যহীন, এলোমেলো, তখনই আরেকটি বিশ্রী ঘটনা ঘটলো।কথায় বলে, বিপদ যখন আসে তখন সব দিক থেকেই আসে।এই কথাটাই অক্ষরে অক্ষরে ফললো ওদের মাঝে।বিপদ এলো সূচির বাড়ির দিক থেকে।সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখ।নদীর তীরে যেখানে প্রতিবছর পৌষ মেলা হয় সেখানেই এ বছর মেলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।গত দুবছর করোনার দাপটে মেলা জমেনি।এইবার ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পূরণ করতে আগেভাগেই দোকান ফেলেছে।তাদের প্রচেষ্টার অন্ত নেই।কিন্তু বিধি বাম! এবারেও ক্ষতি।বৈশাখের প্রথম বেলা থেকেই সে কি বৃষ্টি! অসহ্য বৃষ্টিতে মাঠ-ঘাট ডুবে যাচ্ছে।সবার মুখ কালো হলো।বৃষ্টি চললো বিকাল তিনটা পর্যন্ত। সকাল থেকে ঝরতে ঝরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো মেঘেরা।তিনটায় একটু জিরোতে বসেছে,মেঘের ফাঁকে সোনা রঙা আলো একটু একটু করে পৃথিবীতে ঢুকছে।সেই অবসরে মমিন শেখও মেয়ের বাড়িতে ঢুকলেন।একা নয়,তার পিছনে ফার্নিচার ভরা বিরাট ভ্যানটাও মূর্তিমান অশান্তির মতো বাড়ির মরা আঙিনায় ঢুকলো।বৃষ্টি শেষ হওয়ায় সূচি তখন গোয়ালঘরের কাজে ব্যস্ত ছিল। ফয়সালও খামারে যাওয়ার জন্য সবে বেরিয়েছে।এমন সময় চোখে পড়ল এই দৃশ্য।ফয়সালের মুখ শুকিয়ে এলো।শেষ, এইবার সব শেষ।বউয়ের মুখের দিকে তাকানোর সাহস হয় না।তবে না তাকিয়েও বুঝতে পারে মানুষের দেহ জমতে জমতে পাথর হচ্ছে।কল্পনায় সে দেখে সূচির রক্তজবা চোখ দুটো।ফের জবাবদিহিতার ভয়ে তার মন-প্রাণ গুমরে মরে যাচ্ছিলো ভিতরে।এমন সময়ে, মমিন শেখ মহাসমারোহে জামাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ালেন।ব্যস্ত হয়ে বললেন, ” বাবা, এইগুলার একটু ব্যবস্থা করো তো।আবার বৃষ্টি নামলে ভিজ্জা সারা হইব।কি রে সূচি,তুই ওমন দাঁড়ায়া আছোছ ক্যান? দিতে দেরি হইছে বইল্লা বাপের উপরে রাগ করছোছ? রাগ করিছ না মা।তোর শখের কথা আমার মাথায় আছে।কিন্তু বৈশাখের হালখাতার ঝামেলাটা চুকায়া তারপরেই আসতে হইলো।রাগ করিছ না মা। ”
বউয়ের মুখ দেখার সাহস হয়নি ফয়সালের।কফিনের গায়ে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ায় সে কেবল বিতৃষ্ণার দৃষ্টি হেনে চেয়ে রইলো শ্বশুরের দিকে।
চলবে…