প্রেম তুমি পর্ব-১৯

0
818

#প্রেম_তুমি
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-১৯

অর্ষা ফুটপাতে বসে বসে চিপস আর কোক খাচ্ছে। বড় রাস্তার উপারে একটা বাড়ি তার পাশে বড় পুরনো কোয়ার্টার। তার পাশে একটা অফিস। অর্ষা বাড়ি, অফিসগুলো দেখছে। ওর পেছনে সারি সারি নারকেল আর সুপারি গাছ। কিছুক্ষণ পর পর পাপচারীরা উদ্ভট দৃষ্টি দিয়ে ওর দিকে তাকায়। অর্ষা এসব কেয়ার করছে না। ও ওর মতো খাচ্ছে।
কাঁধের ব্যাগটা পাশে রেখেছে। ব্যাগের উপর একটা ড্রাই কেক। তার পাশে কোক। অর্ষা চিপ্সের প্যাকেট ফেলে ড্রাই কেকটা হাতে নিল। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। প্যাকেট ছিড়ে ভেতরের দিকে তাকাতেই মোবাইল বেজে উঠল। অর্ষা বিরক্ত হলো কিঞ্চিৎ। কে ওর শান্তি নষ্ট করছে। কেকটা রেখে মোবাইল বের করল। মোবাইল বের করে স্কিনের দিকে তাকাল। প্রিয়া কল করেছে। অর্ষা কল রিসিভ করল।

প্রিয়ার বিচলিত কন্ঠস্বর,
“অর্ষা কই তুই?”

অর্ষার বেখেয়ালি উত্তর,
“জানি না।”

প্রিয়া রেগে বলল,
“এই এটা কেমন উত্তর? তুই কোথায় বল।”

অর্ষার ভাবান্তর হলো না।
“আমি সত্যিই জানি না। একচুয়েলি জানার চেষ্টা করছি না। শুধু সময় আর পরিবেশটা উপভোগ করতে চাই।”

প্রিয়া ওর কথার আগামাথা বুঝতে পারছে না।
“কী উপভোগ করতে চাস? সময় আর পরিবেশ! মানে কী? কই তুই?”

অর্ষা রাগের সুরে বলল,
“বললাম তো আমি জানি না। কল কাট।”

প্রিয়া ওকে শান্ত করে বলল,
“ওকে ওকে। শুধু বল তোর সাথে কে আছে?”

“কেউ নেই। আমি একা। রাস্তার ধারে বসে কেক খাচ্ছি। খাবি?”
অর্ষা কেকে এক বাইট দিল।

প্রিয়া আতংকিত হলো। আতংকের সুরে বলল,
“কলেজে আসিস নি কেন?”

“কলেজেই এসেছিলাম কিন্তু ভেতরে যেতে ভালো লাগছিল না। অস্থির লাগছিল। মুক্ত বাতাসের প্রয়োজন ছিল। তাই একা একা হাঁটতে হাঁটতে এখানে চলে এসেছি।”

প্রিয়া কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,
“এই অর্ষা কোথায় গিয়ে বসে আছিস তুই? আমার ভয় লাগছে খুব। ঠিকানা বল আমি আসছি।”

“কাউকে লাগবে না আমার। কল রাখ।”
অর্ষা কল কেটে দিল। প্রিয়া মোবাইলের স্কিনের দিকে চেয়ে রইল। অর্ষার মাথায় পাগলামি চেপেছে এখন কী করবে বুঝতে পারছে না।

দর্শন ক্লাসে দ্বিতীয় বেঞ্চে বসে চুপচাপ খাতায় কি যেন লিখছে। প্রিয়া দ্রুতগতিতে ক্লাসে ঢুকে দর্শনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ঝাড়ের বেগে আসার জন্য দর্শনসহ আশেপাশের অনেকেই টের পেল। দর্শন চকিত হয়ে ওর দিকে তাকাল। প্রিয়া হাপাচ্ছে। কিছু একটা বলতে চাইছে। আগে ওর শ্বাস প্রয়োজন। ওর আশেপাশে অর্ষাকে না দেখে একটু অবাক হলো।
“কী হয়েছে প্রিয়া?”

প্রিয়া হাপানো বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
“আপনি এটা কী করলেন? অর্ষা পাগলামি করছে।”

দর্শন খাতা কলম রেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। ওর কপালে চিন্তার রেখা। অজানা আতংকে বুক কেঁপে উঠল।
“কী করেছে?”

“সকালে কলেজের সামনে নেমেও ভেতরে ঢুকেনি। একা একা কোথাও একটা চলে গেছে। কিন্তু কোথায় তা জানে না। আমি কল করেছি ও বলল জানে না কোথায় আছে ইনফ্যাক্ট জানার প্রয়োজন মনে করছে না। ওখানে না-কি ওর ভালো লাগছে। অচেনা জায়গা কোন বিপদ হলে? আর ও যেমন মেয়ে কেউ এসে উল্টাপাল্টা কিছু বললে স্থান, পাত্র বিবেচনা করবে না। নিজেই গণ্ডগোল শুরু করে দিবে। ওর সাথে কেন এমন করেন? জানেন তো ও কতটা ক্রেজি।”

দর্শনের মনে অনুতাপের চেয়ে চিন্তা হচ্ছে বেশি। অর্ষা কোথাও চলে গেল। দর্শন মোবাইল বের করে কল করল। কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরে সুইচড অফ বলছে। দর্শন আরো চিন্তায় পড়ে গেল। সেই সকাল থেকে মেয়েটা রাস্তায় ঘুরছে। ও ব্যাগপত্র গুছিয়ে কলেজ থেকে বের হয়ে গেল। বাইকে করে কলেজের ডানে-বামে রাস্তায় খুঁজে এসেছে কিন্তু পায়নি। ওকে না পেয়ে কান্না পাচ্ছে। নিজের প্রতি ভীষণ রাগ হচ্ছে। কেন ওর সাথে রাগারাগি করতে গিয়েছিল। ওকে না পেয়ে দুইটা নাগাদ কলেজে ফিরে এল। ওর বন্ধুদের সব জানাল। প্রথমত রুশান কতক্ষণ ওকে ঝারল তারপর সবাই এক সাথে খোঁজাখুঁজি করলো। প্রিয়া গেছে ওর বাসায় যদি বাসায় যায় কিন্তু না অর্ষা ফিরেনি। বাসায় না ফেরায় আরো ভয় পেয়ে গেল প্রিয়া। ওর বাবাকে জানাতে চাইল একবার তারপর আবার সময় নিল। প্রিয়া দর্শনকে জানিয়েছে অর্ষা বাসায় আসেনি। দর্শন কেঁদে দিচ্ছে প্রায়। ওর বন্ধুরা শান্তনা দিচ্ছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। অর্ষা এমন কেয়ারলেস, হাইপার মেয়ে জানা ছিল না।

পাঁচটা বেজে গেছে। দর্শন এখনো বাসায় ফেরেনি। ওর বন্ধুরা ওর সঙ্গ দিচ্ছে। সবার তাড়া থাকলেও বন্ধুকে এ অবস্থায় একা ফেলে যেতে পারেনি। বন্ধুও তো সুখ-দুঃখের সঙ্গী। গাছের গুড়ির উপর চুপ করে বসে আছে দর্শন। ওর মোবাইল বাজছে। তামিম কল রিসিভ করল।
“হ্যালো ভাইয়া, অর্ষা কিছুক্ষণ আগে বাসায় এসেছে। আমি ল্যান্ডলাইনে কল দিয়েছিলাম।”
তামিম কল কেটে দিয়ে চিৎকার করে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল,
“অর্ষা বাসায় ফিরেছে।”

দর্শন ওর কথা শুনে যেন প্রাণ ফিরে পেল। ঢোক গিলে উঠে দাঁড়ায়। শুষ্ক ঠোঁটে হাসি ফুটেছে। চোখ চকচক করছে।
উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
“আমি যাচ্ছি।”

……

অর্ষা গোসল করে লং স্কাট পরে ভেজা চুলে রুম থেকে বের হয়ে চিৎকার করে বলল,
“আমার মাথা ধরেছে একটু কফি দেন, খালা।”

তারপর ওর চোখ চড়কগাছ। দর্শন ওর বাড়িতে। সাথে প্রিয়া। প্রিয়ার মুখ থমথমে। দর্শনের দিকে তাকাল। ওর চোখমুখ লাল হ’য়ে আছে। মনে হচ্ছে আস্ত খেয়ে ফেলবে। অর্ষা ভয়ভয় চোখে তাকাল।
অর্ষা নার্ভাস হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“তুমি?”

প্রতি উত্তরে দর্শন ওর দিকে এগিয়ে গেল। অর্ষার দৃষ্টি দর্শনের দিকে। দর্শন ওর সামনে গিয়ে আচমকা কষিয়ে চড় মারল অর্ষাকে। অর্ষা আকস্মিক ঘটনায় বিস্মিত, হতবাক, হতবিহ্বল। বিস্ময়ে ওর মুখ হা হয়ে গেল। গালে হাত দিয়ে অবিশ্বাসের চোখে দর্শনের দিকে চেয়ে আছে। প্রিয়া নিজেও হতবাক। প্রিয়া নিজের জায়গা থেকে এক চুলও নড়েনি। অর্ষা তারপর প্রিয়ার দিকে তাকাল। প্রিয়া ওর দিকেই চেয়ে ছিল। চোখে চোখ পড়তে সরিয়ে নিল। তারপর আবার দর্শনের দিকে তাকাল।

দর্শন চোখমুখ শক্ত করে বলল,
“কোথায় গিয়েছিলে তুমি? সবাইকে টেনশন দিতে মজা লাগে? আমাকে শাস্তি দিচ্ছিলে তাই না? পেয়েছি তো আমি। চার চারটে ঘন্টা ছটফট করেছি, হন্য হয়ে এদিক সেদিক খুঁজে বেরিয়েছি।
তুমি জিতে গেছো। তালি দেওয়া উচিত। হ্যাপি নাও?”

অর্ষা কিছুই বুঝতে পারছে না। দর্শন ওকে খুঁজেছে! কেন? নিশ্চয় প্রিয়া বলেছে। অর্ষার গাল বেয়ে পানি পড়ছে। কান্নারত অবস্থায় বলল,
“বেশ করেছি। আমাকে কষ্ট দিলে এভাবেই হারিয়ে যাব। আমাকে তুমি খুঁজে পাবে না যদি না ধরা দেই। অভিমান বেশি হলে ধরাও দেব না।”
অর্ষা ঠোঁটে ফোলাল। দর্শনের বুক ধুক করে উঠল। আচমকা অর্ষাকে জড়িয়ে ধরল। অর্ষা আরেক দফা বিস্মিত, হতবাক, হতবিহ্বল। চোখ গোলগোল করে চেয়ে আছে। শরীর কাঁপছে ব্যাপকভাবে। অর্ষার ভেজা চুলের পানি দর্শনের মুখে পড়ছে।
“আ’ম সরি অর্ষা। প্লিজ আর এমন করো না। প্রাণ পাখিটা উঠে যাচ্ছিল। খুব কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল একবার তোমাকে পেলে সারাজীবনের জন্য বুকে জড়িয়ে রাখব। কোথাও যেতে দেব না। তোমাকে বড্ড ভালোবাসি আমি।”
প্রিয়া ওদের এভাবে দেখে বসার ঘর থেকে রান্নাঘরে চলে গেল।
ওরা দু’জন দু’জনার মান-অভিমান মিটিয়ে নিচ্ছে।
দর্শন যাওয়ার সময় ব্যাগ থেকে ওর জন্য কেনা ব্রেসলেটটা ওর ঘরে রেখে যায়।

নভেম্বর একুশ। আগামীকাল দর্শনের আঠারোতম জন্মদিন। সবাইকে বাসায় ইনভাইটেশন দিয়েছে। অর্ষা ভেবে পাচ্ছে না দর্শনকে কি গিফট দেওয়া যায়। সবার সাথে আলোচনা করেও লাভ হয়নি। রাতে ভিডিও কলে কথা বলার সময় তাই দর্শনকেই জিজ্ঞেস করল,
“আচ্ছা তোমাকে কী গিফট দেব?”

দর্শন ক্যালকুলেটরে কিছু একটা হিসাব করছিল। ওর কথা শুনে স্মিত হাসল। তারপর ওকে কিছুক্ষণ অপলক দেখে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,
“তোমাকে দেবে। অন্য এক তোমাকে চাই যে নিজেকে আমার নিকট উপহার স্বরূপ সমর্পণ করবে, আমাকে মুগ্ধ করবে। পারবে তো?”

অর্ষা আগামাথা কিছু বুঝতে পারল না বোকার মতো শুধু মাথা নাড়াল। দর্শন আবারও হাসল।

অর্ষা পড়েছে বিপদে। দর্শনের কথা কিছুই বুঝেনি অথচ হ্যা বলে এসেছে। তাই প্রিয়াকে কল দিল।প্রিয়া সব শুনে কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে বলল,
“ছিহ! দর্শন ভাইয়া এটা বলেছে?”

“হ্যা, ছিহ এর কি হলো?”

“ছিহ নয়তো কী? আমার তো মনে হচ্ছে তোকে রুম ডেটে নিতে চায়।”

“থাপ্পড় খাবি। ও এমন না।”

“এ কথার মানে তো এটাই দাঁড়ায়। সমর্পণ মানে কী?”

দু’জনেই কিছুক্ষণ চুপ থাকল। দু’জনের মধ্যে নিরবতা। অর্ষা নীরবতা ভেঙে সন্দেহ আর ভয় নিয়ে বলল,
“আসলেই কী দর্শন তাই চাইছে?”

প্রিয়া কনফিউজড হয়ে বলল,
“জানি না।”

আগাম একটা করে বেশি পর্ব পড়তে চাইলে আমাকে এক্ষনি ফ্লো করুন ✊🖐️

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here