কৌমুদিনী পর্ব-৯

0
1929

#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্বঃ নয়

১৭
র’ক্তা’ক্ত শরীর নিয়ে এখনো শ্রেয়াস সেখানেই পরে আছে৷ তখন সকাল আট টা পেরিয়েছে৷ প্রিয়ম এসে দুইবার ডেকে গেছে৷ শ্রেয়াসে অনুমতি ব্যাতিত কেউ কক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না তাই ঘুমিয়েছে ভেবে দু-বারই চলে গেছে কিন্তু এখন বেশ খটকা লাগছে তার শ্রেয়াস তো এতো বেলা অবদি ঘুমায় না তাহলে?
সময়ের কাটা যখন নয়টার ঘররে পৌঁছালো তখন প্রিয়ম ছুটলো নবাবের কাছে৷
কিন্তু এখানে এসে ঘটলো বিপত্তি সব দিন তো এ সময় সে লাইব্রেরি রুমেই থাকে আজ নেই৷ নবাব আবার কোথায় গেলো?
ভাবলো তার সয়ন কক্ষে যাবে কিন্তু এর আগেই মেহনুবার সাথে দেখা হয়ে গেলো সাথে চন্দ্রিকা৷ মেহনুবা প্রিয়ম কে এমন দেখে নিজেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,
“কাউকে খুঁজছো প্রিয়ম? কিছু হয়েছে কি?”
প্রিয়ম আমতা আমতা করে একবার চন্দ্রিকার পানে তাকিয়ে অতঃপর মেহনুবাকে প্রশ্ন ছুড়লেন,
“নবাব কোথায়? তাকে একটু প্রয়োজন ছিলো৷”
“সে তো লাইব্রেরি কক্ষে আছে৷”
মেহনুবা বলার সাথে সাথে প্রিয়ম অধৈর্য কন্ঠে বলে,
” নেই সেখানে তাইতো আপনার কাছে যাচ্ছিলাম৷”
মেহনুবা খানিকটা অবাক হলো শ্রেয়াস আসার পর থেকে তো সে কোথাও বের হয় না সকালে আজ কোথায় গেলো? তাও না জানিয়ে?
মেহনুবা প্রশ্ন ছুড়লো ফের,
“কিছু হয়েছে প্রিয়ম? এমন লাগছে কেন তোমাকে?”
প্রিয়ম আমতা আমতা করে বলে,
“রাজকুমারের কিছু হয়েছে হয়তো৷ সে কক্ষের দরজা খুলছে না কোনো উত্তর ও দিচ্ছে না৷ দরজা ভাঙতে হবে বোধহয়৷”
মেহনুবা শোনার সাথে সাথে ছুটে গেলেন ছেলের কক্ষের দিকে কি হলো ছেলেটার কে জানে? তার হাত পা আসার হয়ে আচ্ছে অজানা ভয়ে৷
ছেলেটা কি অসুস্থ হয়ে পরলো? কাল তো সুস্থই ছিলো তাহলে কিছু হয়েছে কি? না না সে আর ভাবতে পারছে না৷
এখানে এসে ডাকলো কিছুক্ষণ কিন্তু প্রতিউত্তর করলো না শ্রেয়াস৷ চন্দ্রিকাও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ হঠাৎ কি হলো লোকটার? কাল তো ঠিকই ছিলো আজ কি হলো তাহলে?
অতঃপর দরজা রাজ প্রহরী দিয়ে কাঁটা হলো ভিতরে প্রবেশ করেই শ্রেয়াস কে দেখতে পেলো কাউচের উপর র’ক্তা’ক্ত অবস্থায়৷ ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে আঁতকে উঠলো মেহনুবা৷ জ্ঞান হারালেন সেখানেই৷
ছেলের এ অবস্থায় দেখে কোন মাই ঠিক থাকতে পারেন না৷ চন্দ্রিকার ধ্যান ভাঙতেই ঝাপটে ধরলো মেহনুবা কে৷
প্রিয়ম এখনো হতবাক হয়ে দাঁড়িয়েই আছে কি করে হলো এমনটা? হাত কা’টা বুকের দিক দিয়ে র’ক্ত৷ কা’ট’লো কি করে?শ্রেয়াস নিজের হাত এমন করে কে’টে’ছে? কিন্তু কেন? শ্রেয়াসই বা কা’ট’বে কেন? খটকা লাগছে কেমন৷
চন্দ্রিকার কি হলো কে জানে? মেহনুবাকে কক্ষে রেখে ফের এলো শ্রেয়াসের পাশে বসলো৷ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ক্ষত গুলো দেখলো তারো মাথা খালি খালি লাগছে কি করে হলো? নিজে কা’টলে এমন নিখুঁত হতো না৷ নিজে কা’ট’বেই বা কেন? ঠান্ডা মাথার কাজ কিন্তু এতো সাহস কার? রাজকুমার রৌজাফ শ্রেয়াস এর কক্ষে এসে তাকে এমন ক্ষ’ত বি’ক্ষ’ত করলো? সব কেমন ধাঁধার মত লাগছে ঘুলিয়ে আসছে সব৷
বুকের সামনে র’ক্ত দেখে নির্দ্বিধায় শার্টের বুতাম টা খুলে ফেললো চন্দ্রিকা৷ বুকের দিকটা দেখে বিস্মিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো বুকটাও ক্ষ’ত বি’ক্ষ’ত করা ব্লেট দিয়ে করেছে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে৷ অজান্তেই কয়েক ফোটা চোখের পানি গড়িয়ে পরলো চন্দ্রিকার৷
ফারহান এলো কিছুক্ষনের মাঝেই৷
ফারহান মহলে আসতেই নজর পরলো চন্দ্রিকার পানে মেয়েটা কেমন অনুভূতি শূন্যের মত বসে আছে তার হাত শ্রেয়াসের বুকে৷
চন্দ্রিকা বুঝতে পারছে না তার এত কষ্ট হচ্ছে কেন? কেন শ্রেয়াসের দিকে দৃষ্টি দিতে পারছে না? কেন ওই পাষাণ লোকটার জন্য এত কষ্ট হচ্ছে ওর? হৃদ গহীনে কি অনর্থক কিছু ঘটছে?
মন এত অবাদ্ধ কেন? যা তার নয় সে দিকেই দৃষ্টি মিলাতে ইচ্ছুক হয়?
ফারহান গিয়ে শ্রেয়াসের পানে বসলো তার চোখ জোরা কেমন রক্তিম হয়ে এলো৷ কিছুর আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো চন্দ্রিকার হঠাৎ ফারহানের চোখে চোখ পরতেই নড়েচড়ে সরে বসলো চন্দ্রিকা৷
ফারহান রক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে কেমন৷ এমন দৃষ্টির মানে বুঝলো না চন্দ্রিকা৷
শ্রেয়াসের হাতের ক্ষতটা একটু গভীর বুকেও আ’ঘা’তের দাগ তবে তা আচরের মত৷ হাত ব্যা’ন্ডেজ করে দিয়েছে৷
জ্ঞান ফিরেনি এখনো শ্রেয়াসের৷ ব্যা’ন্ডেজ শেষ হতেই উঠলো ফারহান মেহনুবাকেও দেখতে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো কিন্তু চন্দ্রিকার কি হলো কে জানে? মেহনুবার কক্ষে গেলো না ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো৷ ফারহান বড় বড় পা ফেলে রানী মেহনুবার কক্ষে গেলো দাসীর সাথে৷ মেহনুবার কক্ষ থেকে ফের শ্রেয়াসের কক্ষে ঢুকলো তা দেখে প্রিয়ম চন্দ্রিকা দু-জনই প্রশ্ন বোধক চাওনি নিক্ষেপ করলো৷ প্রিয়ম প্রশ্ন ছুরলো,
“ঠি ক আছে রানী?”
উত্তর দিলো না প্রিয়মের কথার৷ উপেক্ষা করলো তাকে৷ চন্দ্রিকার পানে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অতঃপর শক্ত কন্ঠে যাওয়ার আগে বললো,
“আমার সাথে চল চন্দ্র৷”
চন্দ্রিকা অবাক না হয়ে পারলো না এবারো কি হয়েছে ফারহানের? এ ফারহান চন্দ্রিকার অচেনা৷ দীর্ঘ শ্বাস টেনে উঠলো যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে এর আগেই প্রিয়ম পিছন থেকে বললো,
“আপনি যদি এখানে কিছুক্ষণ থাকতেন ভালো হতো৷ না মানে রানী একটু ভরসা পেতো আর রাজকুমারো,,,৷ ”
প্রিয়ম সমাপ্ত করতে পারলো না পুরো বাক্য এর আগেই ফারহান চন্দ্রিকার হস্ত চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলে,
“আসতে বললাম তো আমার সাথে? দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
প্রিয়ম ও এবার অবাক হলো৷ চন্দ্রিকা কিছু বলতে পারলো না সে তো বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে৷
ফারহান টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে এলো চন্দ্রিকাকে তখন চন্দ্রিকার বিস্ময় কা’টলো অতঃপর নিজেই জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,
” কি করছেন আপনি? পাগল হয়েছেন? এমন কেন করছেন?”
ফারহান সাদা এপ্রন টা খুলে গলা থেকে স্টেথোস্কোপ নামক শ্বাসক্রিয়া মাপার যন্ত্রটা ছুড়ে বিছানায় ফেললো চন্দ্রিকার বাহুতে হাত চেপে বলে,
” হ্যাঁ পাগল৷ তোর পাগল আমি বললাম না? ছুয়েছিস কেন ওই শ্রেয়াসকে? কেন ছুয়েছিস? এ হাত দিয়ে তার বুকে হাত রেখেছিল তাই না?”
বলে চন্দ্রিকার হাত ধরে হাতের উপর পানি ঢেলে দিলো তাও যেন ক্ষ্যান্ত হলো না৷ সে হাত নিয়ে নিজের বক্ষে রেখে বলে,
“আমায় স্পর্শ কর চন্দ্র৷ তোর স্পর্শ শুধু আমার দেহে থাকবে শুধু আমার দেহে৷ ”
চন্দ্রিকার যেন রাগ বাড়লো আরো ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ফারহান কে রাগে দাতে দাত পিষে বললো,
“পাগল হয়েছিস তুই৷ চিকিৎসা দরকার তোর৷ আমাকে স্পর্শ করলে হাত কে’টে রেখে দিবো তোর৷”
বলে প্রস্থান করলো৷ চন্দ্রিকার যাওয়ার পানে তাকিয়ে অদ্ভুত হাসলো ফারহান৷ অতঃপর মিনমিনিয়ে বললো,
“তোর সীমানা আমাতেই সীমাবদ্ধ করবো চন্দ্র৷ তুই আমারই হবি৷ ”

১৮

রজনী তখন গভীর৷ প্রভাত পেরিয়ে রৌদ্রজ্বল দ্বিপ্রহর পেরিয়েছে, মধ্যাহ্ন পেরিয়েছে৷ লাল কমলায় মিশ্রিত গধুলিও পেরিয়েছে এখন সময় নিরূপক যন্ত্রে বারোটা দশ সবে মহলের বড় ঘড়িটা মহল কাঁপিয়ে নিজের সময় জানিয়ে থেমলো সবে৷ তার হুংকার তোলা শব্দ ধ্বনিতে মানুষের সাথে মহলটাও কাঁপে৷
মেহনুবা তখন নিজের কক্ষে চিন্তায় মগ্ন আহসান মীর সেই সকালে কোথায় না বলে গিয়েছে এখনো তার খবর নেই৷ তার দেহরক্ষী গুলো সাথে নেয়নি এমন আগে অনেকবার হয়েছে কিন্তু আজ তার বেশি চিন্তা হচ্ছে৷
কিছু দিন যাবত যা যা ঘটে যাচ্ছে তার প্রেক্ষিতে চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক নয় কি? ছেলেটার কি করে এমন হলো এখনো জানতে পারলো না কেউ৷
শ্রেয়াসের জ্ঞান ফেরার পর জিগ্যেস করার পর এ ঘটনা নিয়ে কথা এখানেই ইতি টানতে বলেছে এটা নিয়ে কোন প্রকার ত’দ’ন্ত সে চায় না কিন্তু কেন? সব কেমন রহস্যময় হয়ে যাচ্ছে দিন দিন৷ কার এতো সাহস রাজবাড়িতে ঢুকে রাজকুমারের উপরই হা’ম’লা চালায় অথচ কেউ টের ও পায় না৷
এদিকে আবার আহসান মীর নি’খোঁজ কি হচ্ছে এসব? কিছু হলো না তো তার?
শ্রেয়াস এখন পর্যন্ত ওইটুকু কথা বাদে কারো সাথে কথা বলেনি আহসান মীর নি’খোঁজ হওয়ার কথা শুনেও বের হয় নি কক্ষ থেকে৷ কি হলো তার? অদ্ভুত অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে আজকাল এ রাজ্যে৷ এর কারণ কি? এ রহস্য উন্মোচন হবে কি?

চলবে,

[খাপছাড়া হয়ে যাচ্ছে লেখা আপনাদের রেসপন্স নাই কোনো রিচ তো অনেক তাহলে রেসপন্স করেন না কেন? রিভিউ দিয়ে অনুপ্রাণিত করুন আমায়৷ আমার পাঠক মহলে যুক্ত হয়ে সেখানে আপিনার মতামত জানান এইটুকুই তো চাওয়া পূর্ন করতে পারবেন না? নাকি গল্প পড়েন না? আমার গ্রুপ লিংক https://www.facebook.com/groups/355434223093087/?ref=share
মতামত জানাতে ভুলবেন না]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here