কৌমুদিনী পর্ব-১০

0
1962

#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্ব ১১

২১

চন্দ্রিকা কুশল বিনিময় না করেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলো চন্দ্রিকা৷ এ মেয়ের ভাব ভঙ্গি দেখে অবাক না হয়ে পারলো না কি মনে করে নিজেকে? এক বার জিগ্যেস করা যায় না কি? এতো কিসের তার ব্যাস্ততা? চন্দ্রিকা চুপচাপ যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে এর আগেই হাত আকড়ে ধরলো শ্রেয়াস৷ শ্রেয়াসের এহেন কান্ডে অবাক হলো না চন্দ্রিকা থতমত খেলো৷ আশে পাশে নজর বুলালো কেউ আছে কি না দেখার জন্য৷ প্রিয়ম দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে তবে ওদের থেকে অনেকটা দূরে৷ চন্দ্রিকা চোখ ফেরালো অতঃপর মিনমিনিয়ে বললো,
“ছাড়ুন রাজকুমার৷ ”
ছাড়লো না শ্রেয়াস নিজের কাছে টেনে আনলো৷ এতে যেন চন্দ্রিকার রাগ বাড়লো এমনি ফারহানের ব্যাপার নিয়ে মাথাটা ধরে আছে৷ আবার এখানে ও এমন শুরু করেছে৷ আজকাল সবার এক সাথে মাথাটা গেছে নাকি?
চন্দ্রিকা নিজের শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো রুষ্ট কন্ঠে বললো,
“কথায় কথায় স্পর্শ করার অনুমতি আপনাকে দেইনি রাজকুমার৷ আমার থেকে দূরে থাকুন আপনার জন্যই ভালো৷”
চন্দ্রিকার অকপটে উত্তরে শ্রেয়াসের যেন রাগ বাড়লো আরো চন্দ্রিকা ফের যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তখনই তার বিনুনি ধরে আটকে দিলো শ্রেয়াস৷ বিনুনি ধরায় মাথায় ব্যাথা পেলো৷ মাথায় আঘাত লাগায় আর্তনাদ করে উঠলো চন্দ্রিকা৷ এবার আর রাগ দমিয়ে রাখতে পারলো না৷ রাগে ছিঁটকে দূরে ফেললো শ্রেয়াসকে, তাতে দেওয়ালে লেগে কপালে আঘাত লাগলো শ্রেয়াসের৷
চন্দ্রিকার এহেন কান্ডে ভরকালো শ্রেয়াস অবাক হলো মেয়ের এক এক কান্ডে সে অবাক না হয়ে পারেই না৷ কি সাহস মেয়েটার? নয়তো ওর উপর এমন রাগ দেখায়? মেয়েটা বেশ শক্তিশালী বারংবার প্রমান পায় শ্রেয়াস৷ তার হাতের গতি আঘাত করা শরীরের অঙ্গি ভঙ্গি সব কিছু যেন নিখুঁত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত৷
চন্দ্রিকা নিজের কান্ডে নিজেই চমকালো ভুলেই গিয়েছিলো শ্রেয়াস আহত৷ পরক্ষণে নিজেকে শান্ত করে নিজেই গিয়ে ধরলো শ্রেয়াস কে আমতা আমতা করে বললো,
“আ আপনি ঠি ক আছেন রাজকুমার? দুঃখিত আমার মনে ছিলো না৷ আসুন আমার সাথে৷”
শ্রেয়াসের কি হলো কে জানে দূর্বল হাসলো চন্দ্রিকা কে ছাড়িয়ে নিজেই উঠে ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়ালো৷ অতঃপর স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,
“মেয়ে আপনার এই আঘাতে আমাকে আহত করবে না৷ আপনি পাষাণ আমি জানি৷”
চন্দ্রিকা তপ্ত শ্বাস ছাড়লো৷ একে কিছু বলে লাব নেই যে বুঝলো তাই যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো ঠিক তখনই শ্রেয়াস পিছন থেকে বলে,
“চন্দ্রিকা আমার আপনাকে দরকার৷”
নিঃসংকোচ আবদার৷ শ্রেয়াসের এমন সোজা সাপটা উত্তরে এখন আর চন্দ্রিকা ভরকায় না৷ এ ছেলের উদ্ভব আচরণ সম্পর্কে অবগত ও৷
এবারো কিছু বললো না ক্ষানিকটা পিছন তাকিয়ে হাটা দিলো নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে৷

২২

ফারহান কেমন হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো৷ চন্দ্রিকা সবে বাড়ির চৌকাঠে পা রেখেছিলো৷ চন্দ্রিকার দিকে না তাকিয়েই সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো বুঝলো না এতো তাড়াহুড়োর কারণ চন্দ্রিকা৷
নিজেও পিছন পিছন গেলো ফারহানের কিন্তু এর আগেই চিলেকোঠার ঘরটায় ঢুকে গেলো৷
চিলে কোঠার ঘরটায় এমন কি আছে নিজেই বুঝে না চন্দ্রিকা সেই ছোট বেলা থেকেই দেখা যায় ফারহান এখানে আসে৷ এ ঘরে কখনো যায়নি চন্দ্রিকা৷ বড় একটা তালা ঝুলিয়ে রাখে ফারহান৷
চন্দ্রিকা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে প্রস্থান করলো৷ অতঃপর নিজ অলিন্দে এসে দাঁড়ালো বাহিরে মুখ করে ঠিক তখনই টেবিলের উপর খাঁচাটা থেকে প্রাণ আর প্রণয় মসৃন কন্ঠে ‘চন্দ্র চন্দ্র’ বলে উঠলো৷ চন্দ্রিকা মুচকি হেসে ছোট্ট টেবিলের কাছে কাঠের চেয়ারটায় বসলো আয়াসি ভঙ্গিতে৷ চেয়ারটা সাথে সাথে মরমর করে উঠলো৷ পুরনো অনেক বছর আগের চেয়ার খানা মরমর তো করবেই কিন্তু ভাঙে না শত ভারি কেউ বসলেও৷
চন্দ্রিকার প্রিয় জায়গা নিজ বাড়ির তার ঘরের বারান্দা খানা৷ এখানেই যেন সব ক্লান্তির অবসান৷
পাখি দুটো এখনো চন্দ্র চন্দ্র বলেই চলছে৷ চন্দ্রিকা মুচকি হেসে বলে,
” সারা বেলা একটাই বাক্য ছাড়া তো কিছুই বলিস না৷ নতুন কিছু বল৷”
পাখি দুটো যেন বুঝলো চন্দ্রিকার কথা ওমনি চেচিয়ে ‘মিফতা মিফতা’ বলা শুরু করলো৷
তাতে চন্দ্রিকা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো৷ ওদের কাছে নতুন বাক্য মানে ‘মিফতা’ ওর ধারনা পাখি দুটো বুঝে ওর আবেগ ভালোবাসা৷ কি মায়া মিশ্রিত কন্ঠে ‘ চন্দ্র ‘ বলে?
পাখি দুটো কে নিয়ে বেশিক্ষণ সময় কাটানো হয় না মিফতা মারা যাওয়ার পর থেকে৷
চার বছর যাবত পাখি গুলো ওর আঙিনায় আছে৷ না একটা মহলে ছিলো একটা ওর আঙিনায়৷
পাখি দুটো নবাব আহসান মীর আনিয়ে ছিলেন মিফতার জয়ন্তীতে৷ পাখি দুটো কয়েক মাস প্রথমে মহলেই ছিলো মিফতা পাখি দুটো প্রথমে ‘ চন্দ্র’ বলা শিখিয়ে ছিলো৷ সে কথা ভাবতেই আজ ফের কিছু ঘটনা স্মৃতিচারণ হলো৷
মিফতার জন্ম বার্ষিকীর পর পরই চন্দ্রিকার জন্ম বার্ষিকী সে দিন হুট করে এ বাড়িতে এসেছিলো মিফতা পাখি দুটো নিয়ে৷ চন্দ্রিকার সামনে রেখে পাখি গুলো কে বলে ছিলো,
” পাখি চন্দ্রাবতী বল৷ ”
চন্দ্রিকা সে দিন অবাক হয়েছিলো এতো তারাতারি কি কথা সেখানো যায়? কিন্তু সেন চন্দ্রিকাকে অবাক করে দিয়ে প্রথম ‘চন্দ্র’ বলে ছিলো৷ পাখি দুটোর প্রথম শেখা বাক্য ছিলো ‘চন্দ্র’ এর পর প্রাণ কে চন্দ্র কে দিয়েছিলো প্রণয় কে মিফতা রেখেছিলো৷
সে দিন ফারহান কে মিফতার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখেছিলো৷ সে দিন ভারহান বেহায়ার মত মিফতাকে বলে ছিলোও,
“রাজকুমারী আপনার হাসি সুন্দর৷”
সে দিনই বুঝেছে ফারহান মিফতাকে পছন্দ করে৷ তার চোখে মিফতার জন্য মুগ্ধতা দেখেছে সব সময়৷
হঠাৎ পাখির শব্দে ধ্যান ভাঙলো চন্দ্রিকার৷ এখনো উচ্চ কন্ঠে চন্দ্র চন্দ্র বলছে৷
চন্দ্রিকা বিরক্ত মাঝে মাঝে এতো চন্দ্র চন্দ্র করে কেন? এদের জন্য রাজকুমার রেগে যায়৷ অন্যা কথা বললে কি হয়?
চন্দ্রিকা পাখিদের উচ্চ কন্ঠে ধমক দেয় তাতে যেন আরো কিচিরমিচির বেড়ে যায়৷ সে এবার তপ্ত শ্বাস ফেলে মিহি কন্ঠে বলে,
” প্রাণ বল ভালোবাসি৷”
চন্দ্রিকার কথায় প্রাণ প্রণয় দুজনই চুপ হয়ে গেলো ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো৷ সে ফের বলে,
“প্রণয় বল ভালোবাসি৷”
পাখি দুটো এবারো কিছু বললো না৷ চন্দ্রিকার ফের কিছু বলবে এর আগেই পুরুষালী কন্ঠে কেউ বলে,
“ভালোবাসি৷ ”
বিস্ময় দৃষ্টিতে পাখির দিকে তাকালো চন্দ্র৷ এমা পাখির কন্ঠ পালটে গেলো কিভাবে?
পরক্ষণেই নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করায় ঘার ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো৷ তীব্র মেডিসিনের গন্ধে নাক মুখ কুঁচকে এলো৷ হঠাৎ মনে হলো এমন গন্ধ আগেও পেয়েছিলো৷ এ তীব্র ঔষুধী গন্ধটা সাধারণ ঔষুধের না৷ কেমন তেজী গন্ধ মাথা ব্যাথা শুরু করে দেয়৷
উরনা দিয়ে নাক ঢেকে চন্দ্রিকা রুষ্ট কন্ঠে বলে,
“ফারহান ভাই সরুন সামনে থেকে আপনার শরীরে গন্ধ৷”
ফারহান শুনলো না এগিয়ে এলো চন্দ্রিকার কাছে পাশে৷ চন্দ্রিকা নাক ছিঁটকে বলে,
” কাছে আসবেন না ফারহান ভাই ভালো হবে না আপনার জন্য৷”
বলার সাথে সাথে চন্দ্রিকার নাসারন্ধ্রে চেপে রাখা হাত খানা পেচচিয়ে ধরলো অতঃপর দাতে দাত চেপে বলে,
“আমি তোর কাছে আসবো চন্দ্র আমি তোকে ছোঁবো৷ ওই পাখি বলবে না ভালোবাসি আমি বলবো তোকে ভালোবাসি৷ ওই পাখির জবান থেকে ভালোবাসি বের হলে মেরে দিবো আমি চন্দ্র৷ বলে দিস ওদের মেরে দিবো৷”
চন্দ্রিকা ধস্তা ধস্তি করতে করতে বলে,
“বলেছিনা আপনার চিকিৎসা দরকার পাগল হয়ে গেছেন৷”
“হ্যাঁ আমিও তো বলেছি তোর পাগল আমি৷ তোকে ভালোবাসি চন্দ্র তোকে ভালোবাসি৷”
ফারহানের এমন খোলাসা কথা পছন্দ হচ্ছে না চন্দ্রের৷ ধস্তা ধস্তি করে ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে ফারহান থেকে৷ ফারহান উচ্চ কন্ঠে বললো,
“আমার ছোঁয়া তোর অপছন্দ কেন চন্দ্র? ওই রাজকুমারের ছোঁয়া তো তোকে কষ্ট দেয় না আমার ছোঁয়া কেন দেয়৷ শেষ করে দিবো আমি সব তুই শুধু আমার৷”
চন্দ্রিকা দাতে দাত চেপে বলে,
“এখান থেকে জান আপনি নয়তো অঘটন ঘটে যাবে৷”
বলে ফারহানের থেকে দূরে সরবে এর আগে ফের ফারহান হাত চেপে পেচিয়ে ধরলো৷ তীব্র ঔষুধী গন্ধে মাথা ধরে আসছে চন্দ্রিকার ঠিক থাকলে আজ ফারিহানের রক্ষে ছিলো না দাতে দাত চেপে শুধু সহ্য করছে নয়তো কখনই দিয়ে বসতো কয়েকটা৷
চন্দ্রিকা কিছু বলবে এর আগেই হঠাৎ অদ্ভুত এক ডানা ঝাপটানোর শব্দ পেলো৷ কৌতুহল নিয়ে দুজনই তাকালো সে দিকে৷ কোথ্যেকে এক সাদা পায়রা এসে পাখির খাঁচার উপর বসলো৷ রাজ পায়রা ছাড়া থাকে রাতে কিন্তু এটা তো রাজ পায়রা না৷ ফারহান চন্দ্রিকাকে ছাড়লো পায়রায় হাত দিবে এর আগেই বিকট শব্দ করে সব কাঁ’পি’য়ে ব’ন্দু’কের আওয়াজ হলো গু’লি এসে লাগলো পায়রার বুকে র’ক্ত ছিঁটে ফারিহানের হাতে লাগলো পায়রাটা ছি’ট’কে দূরে পরলো৷ দুজনেই বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকালো সে দিকে৷
কি হলো এটা? পায়রা টা আসলো কোথ্যেকে? শিকার করার পায়রাতো না এটা? ইচ্ছে করে কেউ পায়রাটা পাঠিয়েছে? আরেকটু নড়চড় হলে পাখি দুটো বা ফারহান নয় চন্দ্রিকার শরীরে গু’লি লাগতো৷ কি হলো হঠাৎ এটা? কে গু’লি করলো? উদ্দেশ্য কি তার? তার নিশানা ছিলো কে? পায়রা শিকার? চন্দ্রিকাকে নিশানা করেছিলো? নাকি ফারহান কে ? নাকি কোন স’ত’র্ক করলো কেউ?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here