কৌমুদিনী পর্ব-১৫

0
1697

#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্ব ১৫

২৯
অতঃপর সারা দিন পেরিয়ে মধ্য রজনীতে ভেঙে ভুঙে বৃষ্টি এলো৷ তুমুল বেগে বাতাস বইছে ঝড় উঠেছে বৈশাখের আগেই কালবৈশাখী ঝড়৷ চন্দ্রিকা অচেতন হয়ে পরে আছে ফারহানের বিছানার মধ্যখানে৷ ক’ঠোর মেয়েটা কেমন চুপসে গেছে৷ শুভ্র সাদা ব্যা’ন্ডে’জ টা এখনো র’ক্তে লাল হয়ে আছে, ঘাড়ে র’ক্ত শুকিয়ে আছে৷ তখন চাপ পরার কারনে র’ক্ত পরছিলো৷ সে র’ক্ত মুছেওনি ফারহান নতুন ব্যা’ন্ডে’জ করেও দেয়নি এমনকি জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টাও করেনি চন্দ্রিকার৷ তখন রা’গে গলা চেপে ধরেছিলো পরক্ষণে নিজের হুস আসতেই অ’চে’তন চন্দ্রিকাকে নিয়ে নিজেই পা’গ’লামি শুরু করে দেয়৷ পা’গ’লামিটা শুধু নামে মাত্র পা’গ’লামি ছিলো হয়তো, কোন প্রকার প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়নি শুধু অচেতন চন্দ্রিকাকে নিয়ে এসেছে বাড়িতে তারপর নিজের বিছানায় এনে শুয়ে দিয়েছে৷

মধ্য রজনী চলছে রাত তখন গভীর অম্বুদ এর কারণে আঁধার প্রগাঢ়৷
ফারহান এখনো চন্দ্রিকার কাছে পাশেই বসে আছে৷ সামনেই তার ডাক্তারি বাক্সটা এলো মেলো হয়ে আছে যা চন্দ্রিকার মা এনে দিয়ে ছিলো, তখন ছুড়ে ফেলেছিলো বাক্সখানা৷ হাতে একটা ডাক্তারি ছু’রি নিয়ে বসে আছে সে যা দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর চন্দ্রিকার মুখের কাছে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিচ্ছে৷
চন্দ্রিকার মা মেয়ের পায়ের কাছে বসে আছে সেই সন্ধ্যা থেকে৷ মেয়েটার সন্ধ্যা থেকে জ্ঞান ফিরেনি আ’ত্মা তার শুকিয়ে আসছে৷ তার যে চন্দ্রিকা ছাড়া কেউ নেই ফারহানকে কত কাকুতি মিনতি করলো৷ ফারহান সামনেই ঘেঁষতে দিলো না৷ চিকিৎসার বাক্সটা এগিয়ে এনে দিলো তখনো বললো,
” আমার মেয়ে কিছু করলে মাফ করে দাও বাবা৷ ও এক রুখে আমি ওকে শাসন করবো৷ ”
কিন্তু শুনেনি ফারহান কথা অদ্ভুত হেসে লাথি মে’রে ছুড়ে ফেলে বাক্সটা৷ অতঃপর নিচ থেকে ওই ছু’ড়িটা নিয়ে ওই ছু’ড়িটা দিয়ে কেমন চন্দ্রিকার গলার কাছে নিয়ে ইশারা করে শুধু বলেছে,
“কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান আমার পছন্দ নয় চাচি৷”
সে তখনই চুপ হয়ে যায় কলিজায় তার পানি নেই৷ ফারহানকে চেনে ভালো করে চন্দ্রের মা তাই কথা বাড়ায়নি তখন৷ ফারহানের মা মারজিয়া ও তখন অনেক কথা শুনিয়ে গেছে৷
কিন্তু এখন তো বেশি দেরি হয়ে যাচ্ছে মেয়েটাকে আদৌ বাঁ’চাতে পারবে তো? ছুঁতে পারছে না মেয়েটাকে বুঝতে পারছে না মেয়েটা কেমন আছে৷ কি করবে সে? সে যে অসহায় মা৷ চন্দ্রিকার বাবা মা’রা যাওয়ার পর থেকে জান নিয়ে যে এ বাড়িতে বেঁ’চে আছে এই অনেক নয়তো মা ছেলেতে কবে আবার শান্তিতে থাকতে দিয়েছে ওদের?
মেয়েটা তো মা ছেলের দু-চোখের বি’ষ মে’রে ফেললেই তারা বোধহয় রক্ষে পায়৷
ফারহানের ভাবভঙ্গি আজ ভালো ঠেকছে না এ ছেলে রাগী অনেক৷ ওর রাগ সম্পর্কে আরো আগে অনেক ধারনা হয়েছে চন্দ্রিকার মায়ের তাই আর কথা বাড়ায় না৷
চন্দ্রিকার মায়ের মন কু-ডাকছে৷ না এবার তাকেই কিছু করতে হবে ফারহান কে বলবে সে যদি বাড়াবাড়ি করে দরকার পরে অন্য কিছু ভাববে৷ পা ধরবে মেয়েটাকে তো বাঁ’চাতে হবে?
চন্দ্রিকার মা মেয়ের পায়ের কাছ থেকে এসে ফারহানের পায়ের কাছে বসে পরলো৷ অতঃপর হাত জোর করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
” ও বাবা আমার মেয়েটারে ভালো করে দে না৷ ওকে আমি শাসন করবো মা’র’বো এমন করিস না বাবা৷”
ফারহান ভ্রুক্ষেপ করলো না সে কথার প্রেক্ষিতে কথা বললো না৷ বাঁকা হেসে চন্দ্রিকার দিকে আরেকটু ঝুকে ছু’ড়ি টা গলায় তাক করে বলে,
” চাচি তোমার মেয়ে বড্ড সাহসী, আর চালাক৷ কিন্তু আমার সাথে চালাকির পরিনাম কি হতে পারে সে জানে না৷ আমাকে কথার জ্বালে ফাসাচ্ছিলো দেখো কি অবস্থা হলো৷”
চন্দ্রিকার মা এ ছেলের কথা বুঝলো না কিছু এ কথায় পাত্তা না দিয়ে সে ফের বললো,
” বাবা এ বারের মত ওকে ভালো করে দে৷ ও আর কিছু করবে না৷”
চন্দ্রিকার মায়ের কথা শুনে ফারহান বলে,
” তোমার মেয়েকে আমার লাগবে চাচি দিয়ে দাও? দাও না দিয়ে? সারা জীবন পুতুলের মত বসিয়ে রাখবো আর দেখবো৷
কিন্তু ওর কথা আমার পছন্দ না যে৷ ও এমনই থাকুক বরং? এমন করেই আমার কাছে থাকুক?”
চন্দ্রিকার মা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকালো ফারহানের দিকে কিছু বললো না৷ ফারহান ফের বললো,
” চাচি মে’রে দেই তোমার মেয়েকে?”
বলেই ফারহান উন্মাদের মত হাসলো ফারহান৷ ফারহানের এহেন কথা শুনে অন্তর আ’ত্মা কেঁ’পে উঠে চন্দ্রিকার মায়ের৷ হাত পা কাঁ’প’তে থাকে কান্নারত কন্ঠে বলে,
” বাবা এমন করিস না৷ ওকে সুস্থ করা লাগবে না আমি ওকে নিয়ে চলে যাবো এ বাড়ি থেকে দূরে কোথাও৷ তুই আমার মেয়েকে রেহায় দে বাবা৷ ও এক রুখে মেয়ে জানি, ঘাড় বাকা ও তো ক্ষতি করেনি তোর৷ ওরে ছেরে দে বাবা৷”
চন্দ্রিকার মায়ের কথায় রাগ হলো ফারহানের দূরে যাবে মানে? চন্দ্রিকা তার কাছে থাকবে তার চন্দ্র তার কাছেই থাকবে থাকতে হবে কোথাও যেতে দিবে না৷
ফারহান ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
” দূরে যাবে মানে? কোথায় যাবে? ও আমার কাছে থাকবে ওকে দূরে নেওয়ার চেষ্টা করলে ছাড়বো না কাউকে আমি৷ ছাড়বো না৷ ও আমার কাছে আমার চোখের সামনে থাকবে৷”
ছেলের উচ্চ কন্ঠ শুনে ধরফরিয়ে উঠে মারজিয়া বেগম বিরক্ত ফুটে তার মুখে৷ ঘুম থেকে উঠে নিজের ঘর থেকে ছেলের ঘরে দৌড়ে এলো৷ ছেলেটার মাথায় কি যে চলছে সে বুঝেনা৷ মারজিয়া চন্দ্রিকার মায়ের সামনে এসে বিরক্ত নিয়ে উচ্চ কন্ঠে বলে,
“কি শুরু করছিস বল তো? ঘুমাইতে দিবিনা নাকি? আবার ছেলেটারে জালাইতাছোস?”
চন্দ্রিকার মা মারজিয়ার সামনে গিয়ে বলে,
” ভাবি গো ফারহানকে বলো আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দিতে৷ আমরা এ বাড়ি থেকে দূরে চলে যাবো তবুও আমার মেয়েটাকে মারতে না বলো৷”
মারজিয়া বেগম তেতে উঠে বলে,
” ওই মা’ই’য়ারে মা’ই’রা ফালাক আমি কি কমু? এমন বেশরইমা মাইয়া বেটি মইরা যাক ধিঙ্গি মাইয়া কি জানি কি আকাম কুকাম কইরা নিজের এই অবস্থা করছে৷ আমি হইলে গলা টিপ্পা মা’ই’রা ফালাইতাম৷ ও মেয়ে ম’রু’ক না চুলায় যাক আমার কি?”
বলেই অন্য দিকে মুখ ঘুরালো৷ তার আজ পৈচাশিক আনন্দ হচ্ছে৷ যাক ছেলের সু-বুদ্ধি হলো তাহলে৷ ফারহান রক্তিম চোখে মায়ের দিকে তাকালো৷ ছেলের এহেন দৃষ্টিতে থতমত খেলো মারজিয়া কিছু বললো না চুপ চাপ কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে গেলো৷
বেশ কিচ্ছুক্ষণ পর কি হলো কে জানে নিজেই ব্যান্ডেজ করে ইনজেকশন দিয়ে দিলো ফারহান৷
রুম থেকে বের হওয়ার আগে শুধু বললো,
“দূরে নিয়ে যাওয়ার কথা মাথায় এনো না চাচি৷ মে’রে দিবো৷ ”

৩০

মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত বৃষ্টির পর আজকের প্রভাত একটু বেশি ঝলমলে রৌদ্রজ্বল৷
আহসান মীর আজকাল আরো বেশি গুরুগম্ভীর হয়ে গেছে৷ চুপ চাপ হয়ে গেছে, চুপচাপ হয়ে যাওয়ার কারণ সে মনে মনে নিজেকে আর যোগ্য শাসক মনে করছে না তার ধারণা তার আরেকটু বেশি ক’ঠোর হওয়া উচিত ছিলো তাহলে আর এমন হতো না৷
দু-দিন হলো আশরিফ কে পাওয়া যাচ্ছে না কোন খবরো পাওয়া যাচ্ছে না৷ আজ আশরিফের বাড়িতে ত’ল্লা’সি চালাবে৷ এসআই আয়াশ ত’ল্লা’সি নামা বের করেছে আজ৷
একটু আগেই মহলে এসেছিলো জানাতে আয়াশ ছেলেটা সত্যি কাজের৷ মহল থেকে বেড়িয়ে আশরিফের বাড়িতে এলো৷ আশরিফের বাড়িতে এসে কিছুটা অবাক হলো সে দিন তো বাড়িতে ঢুকার জন্য যেই মেইন দরজাটা সেটাও বন্ধ ছিলো তাহলে আজ খোলা কেন? আশরিফ এসেছিলো নাকি? কাল ঝড়ের কারণে এখানে কাউকে পাহারায় রাখতে পারেনি সে সুযোগে আশরিফ এসেছিলো ? ইস তাহলে তো বড় ভুল করে ফেললো৷ কিন্তু আশরিফ এলেও এ দরজাটা লাগিয়ে রাখতে ভুলে গেলো? আয়াশ এগিয়ে গিয়ে তালায় হাত দিলো৷ তালাটা কাঁ’টা কি করে? আশরিফ আসলে নিশ্চয়ই ওর বাড়ির চাবি ওর কাছে থাকতোই? তাহলে কি অন্য কেউ এসেছিলো? কিন্তু কে? না এমনো তো হতে পারে আশরিফ হয়তো চাবিটা হারিয়ে ফেলেছে?

মেইন দরজা দিয়ে বাড়ির অন্দরের দরজার সামনে দাঁড়ালো এ তালাও চেক করলো না এ তালার সাথে কিছু করা হয়নি৷ তাদের কাছে থাকা চাবি দিয়েই তালাটা খুলে প্রবেশ করতেই আয়াশ সহ বাকিরা প্রবেশ করতেই কিছু দেখে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকালো সেদিকে৷

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here