কৌমুদিনী পর্ব-৩৩ শেষ পর্ব

0
5634

#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া_মেঘলা
#শেষ_পাতা

৬৪
অন্তরিক্ষ তখন শুভ্র মেঘ গুলো এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জমাট হচ্ছে৷ চারোপাশ সবে ধুসর অন্ধকারে পরিনত হচ্ছে বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস৷ তবুও হাওয়া কেমন থমকে থমকে আসছে৷ পরিনয় প্রহর শুরু হয়ে গেছে৷ এক অন্যরকম প্রণয় পরিনয় ঘটেছে৷ আজ যেন এ খুশিতে অন্তরিক্ষ ও প্রেমময় বর্ষণ হয়ে ঝড়বে৷

শ্রেয়াসের ঘরের দক্ষিণ দিকের বাগান বরাবর জানলায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চন্দ্রিকা৷ গায়ে জরানো লাল টকটকে বেনারসি শাড়ি খোপার উপর লাল দুপাট্টা দিয়ে ঘোমটা দেওয়া মুখে কৃত্রিম সাজ বলতে মোটা করে কাজল নেত্র জুরে আছে৷ আর স্বর্ণালংকার৷ ব্লাউজের ভিতর শুভ্র ব্যা’ন্ডেজের কারণে কাধের দিকটা ফুলে আছে৷ মিফতার ক’বরের দিকে দৃষ্টি স্থীর চন্দ্রিকার৷ একটু আগেই শ্রেয়াসের সাথে নতুন সম্পর্কে জুরে গেলো৷ মিফিতা থাকলে সব থেকে খুশি হয়তো সে হতো? ভেবেই দীর্ঘশ্বাস টানলো চন্দ্রিকা৷

ব্যাথায় স্নিগ্ধ মুখখানা নেতিয়ে আছে, তবুও নিজেকে কতটা শক্ত রেখেছে? কাল বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু শ্রেয়াসের জেদের কারণে আজ হলো৷ চন্দ্রিকা কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর আজ নিয়ে এলো স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে৷ ফারহানের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই জ্ঞান ফিরেছিলো একবার৷ তারপর আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পরে এখনো শ্বাস চলছে৷

দরজার শব্দে ধ্যান ভ’ঙ্গ হয় চন্দ্রিকার, কক্ষে প্রবেশ করলো শ্রেয়াস৷ আজ তার অন্তকরণে বিশ্ব জয়ের আনন্দ৷ প্রেয়সীকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ৷ এ মেয়েটা যে ওর সকল সুখ বিস্তৃত অবশেষে দাম্ভিক মেয়েটাকে নিজের নামে করে নিলো৷ এখন থেকে এ মেয়ের উপর অধিকার এই মেয়ে থেকে ওর নিজের বেশি৷ ভাবা যায় ডিফেন্স অফিসার তার বউ? কি সাংঘাতিক কান্ড ঘটে গেলো? সাংঘাতিক ঘটনাই তো? ঘাড় বাঁ’কা মেয়েটা তার৷

শ্রেয়াস ভাবনার মাঝেই পিছন থেকে সন্তপর্ণে অলিঙ্গন করলো চন্দ্রিকাকে৷ চন্দ্রিকার পিঠ এসে ঠেকলো শ্রেয়াসের বক্ষে৷ কিছু বললো না চন্দ্রিকা দাতেদাত চেপে রইলো৷ শ্রেয়াস চন্দ্রিকার কর্ণদ্বয়ের সামনে গিয়ে বললো,
“ব্যা’থা করছে?”
চন্দ্রিকা ধাতস্ত কন্ঠে বললো,
“না৷ ”
বলে থামলো অতঃপর ফের ক্ষানিকটা শক্ত কন্ঠে প্রশ্ন ছু’ড়লো,
” এবার বলুন, বিয়ে তো হলো আপনার কথা মত৷ ”
চন্দ্রিকার কথায় তপ্ত শ্বাস টানলো শ্রেয়াস৷ এই মেয়ের ধৈর্য্য শক্তি কিছুই নেই৷ শ্রেয়াস সরে দাঁড়ালো চন্দ্রিকা পিছন ফিরে প্রশ্ন বোধক চাওনি দিয়ে তাকালো৷ শ্রেয়াসের কি হলো কে জানে? চন্দ্রিকার হাত ধরে বিছানার কোণে এনে বসালো হাটু গেরে চন্দ্রিকার সামনে বসলো অতঃপর তার হাত জোরা নিজের হাতে চেপে ধরলো৷
চন্দ্রিকা বুঝলো না কিছু৷ অতঃপর শ্রেয়স বললো
” শাহনেওয়াজ তোমাকে আর মল্লিকাকে ধ’র্ষণ করেছে চন্দ্রাবতী৷ ”
শ্রেয়াসের কথায় থমকালো কয়েক মূহুর্তে জন্য চন্দ্রিকা৷ চমকালো হাত পা ঝংকার দিয়ে কে’পে উঠলো৷ শ্রেয়াস জানলো কি করে?
শ্রেয়াস চন্দ্রিকার ভাবনার মাঝেই ফের বললো,
” শাহনেওয়াজ মিফতাকে খু’ন করেছে চন্দ্রাবতী৷ মল্লিকার কাছে একটা প্রমাণ ছিলো মনে আছে? সেই প্রমাণ টা কোন ভাবে মিফতার হাতে এসেছিলো, মিফতা জেনে গিয়েছিলো তোমাকে আর মল্লিকাকে ধ’র্ষণ করেছে শাহনেওয়াজ আর ওর বন্ধু রায়হান মিলে৷ আর রায়হানের সাথেই বিয়ের ঠিক হয়েছিলো মিফতার৷ তা মিফতা কারো কাছে বলার সুযোগ পায় নি মিফতা তার হলুদের দিন ব্যাপারটা জানতে পারে৷ রায়হানকে সে রাতে প্রশ্ন করে এ নিয়ে রায়হান সে দিন উত্তর দেয়নি সে দিন রায়হান প্রমাণটা মিফতার কাছ থেকে চেয়েছিলো মিফতা দেয়নি৷ সে দিনই পরিকল্পনা করে মিফতাকে মে’রে দিবে প্রমান না দিলে৷
বিয়ের দিন আমি শাহনেওয়াজ কে মিফতার কক্ষ থেকে বের হতে দেখে অবাক হয়েছিলাম৷ সে দিন মিফতার কক্ষে প্রবেশ করবো এর আগেই খবর আসে রায়হান স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আছে, সে দিন যদি ওই?জা’নো’য়ার টার জন্য সেখানে না গিয়ে এক বার মিফতার কক্ষে ঢুকতাম হয়তো আমাদের মিফতা বেঁ’চে থাকতো? স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যখন আমার বোনের নিথর দেহটা পরে আছে তখন আমি ঠিক থাকতে পারিনি চন্দ্রাবতী৷ আমার বোনের জন্য কিছু করতে পারিনি আমি ব্যার্থ ভাই৷ ফারহান যখন বাবা কে বললো ময়না ত’দ’ন্ত করতে তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিলো৷ সন্দেহ টা ঠিক কিনা জানার জন্য আমি শাহনেওয়াজ এর বাড়িতেও গিয়েছিলাম তখন ওকে এসব নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে শুনি৷ নিজের কান কে সে দিন বিশ্বাস করতে পারিনি৷ শাহনেওয়াজ যে আমার প্রাণ প্রিয় ছিলো, সে আমার বোনকেই মে’রে দিলো? এ কথা আমি কি করে বলতাম বাবাকে যাকে তারা মানুষ করলো তারাই তাদের মেয়েকে মে’রেছে? আমি কমিশনার আশরিফের কাছেও যাই সে প্রমাণ ছাড়া কিছু করতে নারাজ ছিলো৷ তোমাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি সে বার ও প্রমান ছাড়া কেউ কিছু করেনি৷ কিন্তু এবার তেমন প্রমান না থাকলেও মানুষটাকে তো চিনি? আইন না শা’স্তি দিক আমি তো পারবো? আমরা তো এ রাজ্যের শাসকই? পুরো এক দিন শাহনেওয়াজ কে হন্যে খুঁজেছি৷ পাওয়ার পর ওকে আমার মত শাস্তি দিয়েছি আমার বোনের প্রতি অন্যায় তোমাদের প্রতি অন্যায় কি করে মেনে নিতাম আমি? আইন ওকে শাস্তি দেয়নি বরং রক্ষক হয়ে ভক্ষক এর মত আসামির সাহায্য করেছে৷ আমার কাছে ব্যাপারটা ঘোলাটে ছিলো৷ কেন আমার বন্ধু আমার বোন কে খু’ন করলো? শাহনেওয়াজ সে দিন বাঁ’চার লোভে সব বলে আমায়৷ সব জেনেও কি করে বাঁ’চিয়ে রাখি ওকে? আমার বোন কে ও মে’রেছে, সদ্য যৌবনে পা রাখা আমার চন্দ্রাবতীকে কষ্ট দিয়েছে৷ এমন নরপিচাশ কে কি করে বাঁ’চিয়ে রাখি আমি? ওরা বেঁ’চে থাকার যোগ্য না৷ ওরা বাঁ’চতে পারেনা ওদের একটাই শাস্তি মৃ’ত্যু৷ ফারহান যা করেছে বেশ করেছে ফারহান যদি এক বার বলতো আমায় এসব আমি ওর হাতে মিফতাকে তুলে দিতাম আশরিফ, রায়হান, ইকবাল, শাহনেওয়াজ এর এ পৃথিবীতে বাঁ’চার কোন যোগ্যতা নেই৷ ”
বলেই থামলো শ্রেয়াস, নেত্র থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো তার৷ চোখ মুখ রক্তিম হয়ে আছে তার চন্দ্রিকা বিস্মিত হলো শ্রেয়াসের কথায়৷ তার মানে শ্রেয়াস সব জানে?
চন্দ্রিকা বিস্মিত কন্ঠেই বললো,
“তারমানে আপনি জানেন আমি ধর্ষিতা? ”
শ্রেয়াস মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বোঝালো চন্দ্রিকা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বললো,
“তাহলে আমায় বিয়ে করলেন কেন শ্রেয়াস?”
“ভালোবাসি তাই৷ ”
চন্দ্রিকা আরো অবাক হলো৷ সবটা যেনেও লোকটা বলছে ভালোবাসে?
চন্দ্রিকা এবার উঠে দাঁড়ালো কয়েক কদম হেটে শ্রেয়াসে ক্ষানিকটা দূরে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমাদের ভালোবাসা বারণ শ্রেয়াস৷ সমাজ আমাদের মেনে নেবে না এমন করবেন না শ্রেয়াস নিজের ভালো সবাই বুঝে আপনি কেন বাচ্চামো করছেন? আমি পবিত্র নই শ্রেয়াস৷ ”
শ্রেয়াস এবার ক্রুদ্ধ হলো এগিয়ে এলো র’ক্তিম চোখে চন্দ্রিকার সম্মুখে৷যে সব সময় নারীদের শক্ত প্রমাণ করতে ব্যাস্ত থাকে আজ সে বলছে ধ’র্ষিতা দের ভালোবাসতে নেই? সমাজ দেখাচ্ছে? শ্রেয়াস চন্দ্রিকার থুতনি হাত দিয়ে চে’পে ধরে কঠিন কন্ঠে বললো,
“মে’রে দিবো এখনই এসব বললে৷ ”
বলে থামলো অতঃপর থুতনি থেকে হাত সরিয়ে বাহু আঁকড়ে ধরে কঠিন হয়েই বলে,
” তুমি এসব বলছো? তুমি তো সবার মত নও তবুও এসব কথার মানে কি? আর কিসের সমাজের কথা বলছো? আমার তুমি সমাজের নিয়মে চলবো নাকি আমি? দরকার পরে নতুন নিয়মে সমাজ গড়বো তবুও তোমাকে ছাড়ার প্রশ্নই আসে না৷ তুমি কাগজে কলমে আমার৷ আর তুমি অপবিত্র নও তুমি স্নিগ্ধ,পবিত্র৷ আমার প্রণয় তোমাকে আমি আরো সিক্ত করবো৷”
হুট করে চন্দ্রিকা ঝাপটে অলিঙ্গন করলো শ্রেয়াস কে, শ্রেয়াস যেন থমকালো৷ শ্রেয়াসের বক্ষ সিক্ত হচ্ছে চন্দ্রিকার নেত্র জলে৷ শক্ত মন তবে আজ গললো বুঝি? ভাবা যায় সেই শক্ত মেয়েও আজ কাঁদছে? তবে এ কান্না দূর্বলতা প্রকাশ নয় বরং হাল্কা করছে কঠিন মন টা কে৷ এটা দরকার ছিলো এ কান্না মেয়েটাকে আরো শক্ত করবে৷ তবে এ ক্রোধ শেষ ক্রোধ চন্দ্রিকার জন্য আগলে রাখবে শ্রেয়াস এ কঠিন মেয়েকে নিজের বাহুডোরে৷

ইসস আজ বক্ষ যে শীতল হয়ে উঠেছে, বাতাসো আজ বলছে অবশেষে কৌমুদিনী তার৷ শুধুই তার৷
সে দিন রাতে চন্দ্রিকার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র দেখে বলেছিলো চন্দ্রিকাকে কৌমুদিনী রুপে আঁধারের রানী কিন্তু না এ যে তার কৌমুদিনী তার কাজই আলো ছড়ানো৷ আলোকিত করে দেওয়া সব কিছু আলোকিত করেছে সব কিছু৷

হঠাৎই কড়া নাড়ার শব্দে দুজনেরই ধ্যান ভঙ্গ হয় দুজনেরই৷ শ্রেয়াসের বক্ষ থেকে মুখ সরিয়ে সিক্ত নেত্রে কপাটের দিকে দৃষ্টি দেয় চন্দ্রিকা শ্রেয়াস উচ্চ কন্ঠে শুধায়,
“কে?”
ওপাশ থেকে আয়াশের কন্ঠ ভেসে আসে সে বলে,
“জনাব আমি আয়াশ বলছি, ফারহানের জ্ঞান ফিরেছে সে কথা বলতে চায় ম্যাডামের সাথে৷”
চন্দ্রিকা এবার মুখ খুললো গম্ভীর কন্ঠে ‘আসছি’ বলে আর দাঁড়ালো না৷ বড় বড় পা ফেলে বেড়িয়ে গেলো৷ শ্রেয়াসের হঠাৎই বুক ভারি হয়ে এলো৷ আচ্ছা চন্দ্রিকা আসবে তো ফের ওর বক্ষস্থলে? এখন তো সত্যি জেনে গেছে আর ও নিজে একজন ডিফেন্স অফিসার চন্দ্রিকা কিছু বলে গেলো না তাহলে কি শাস্তি দিবে ওকে? মিলন হয়েও কি অর্ধ রয়ে যাবে সব?

শ্রেয়াস ও এবার ছুটলো চন্দ্রিকার পিছু পিছু৷ কে জানে আজ কি হবে? হততো সব ইতি ঘটবে? নয়তো নতুন করে শুরু হবে?

৬৫

ফারহানের সামনে বসে আছে লাল বেনারসি পরিহিত চন্দ্রিকা৷ শ্রেয়াসের অবস্থা অবনতি ঘটছে গু’লিটা বের করা যায়নি তাই বাঁ’চার কোন উপায় নেই৷ চন্দ্রিকার পিছনের শ্রেয়াস, চন্দ্রিকার মা আর মারজিয়া৷ এর একটু দূরে আয়াশ৷ মারজিয়া ছেলের এই অবস্থায় একেবারেই ভে’ঙে পরেছে খারাপ হোক যেমন হোক তারি তো? চন্দ্রিকাকে বেনারসি পরিহিত দেখে বুকের মধ্যে তীব্র ব্যাথার আভাস পেলো ফারহান৷ মুখের থেকে অক্সিজেন মাস্ক টা খোলালো ঠিক তখনই চন্দ্রিকা বাঁধ সেধে কিছুটা নরম কন্ঠে বললো,
“ফারহান ভাই এটা খুলছেন কেন? কষ্ট হবে আপনার৷”

অতঃপর কিঞ্চিত ঠোঁট বাকিয়ে দূর্বল হেসে দূর্বল কন্ঠে বললো,
“কষ্ট? এ আমার কষ্ট নয় পরম সুখের ম’রন হবে৷ আজ আমি সুখের সর্গে ভাসছি মরেও অমরত্ব লাব করছি কেন জানিস? আমি যে আমার চন্দ্রের হাতে প্রান ত্যাগ করলাম৷ ”
এইটুকু বলে থামলো৷ ফের তাচ্ছিল্য হাসলো অতঃপর একবার শ্রেয়াসের দিকে তাকিয়ে আরেকবার চন্দ্রিকার দিকে তাকিয়ে বললো,
” বেঁ’চেই গেলি আমার বক্ষে ক্ষত তৈরি করে৷ তোর বেঁ’চে থাকায় একটুও খুশি নই আমি বিশ্বাস কর চন্দ্র৷ এখন থেকে তুই বাঁ’চবিও অন্য জনের হয়ে৷ এই যন্ত্রণা আজ আমায় না দিলেও পারতি৷ শ্রেয়াস তোকে ভালোবাসে জানার পর হিংসা হয়েছিলো আমার, একদিন তোদের এক সাথে দেখে৷ রাতে মহলে গিয়ে অচেতন করে ওর বক্ষ ক্ষ’ত বিক্ষ’ত করে দিয়েছিলাম৷ কারণ ওই বক্ষে যেন তোকে ঠাই দেওয়ার সাহস ও না করে৷ কিন্তু অবশেষে ও তোরি হলো৷ আজ তোর এমন ভয়ংকর সৌন্দর্য আমার জন্য নয় আর, তোর এই সাজ আমার জন্য নয় আজ এর থেকে তখন ম’রে গেলেও হয়তো শ্রেয় হতো৷”
বলে থেমে জোরে জোরে শ্বাস টানলো ফারহান৷ ডাক্তার কথা বলতে নিষেধ করলেও শুনে না৷
ফারহান এবার চন্দ্রিকার চোখে চোখ রাখলো অতঃপর নমনীয় কন্ঠে বললো,
” আমি শেষ অধ্যায়ে বিশ্বাসী ছিলাম না, মিফতা আমার সব ছিলো৷ মিফতার ছায়া হিসেবে তোকে ভালোবেসেও তোর ওই কঠিন দৃষ্টির প্রেমে পরেছি৷ আমার জীবনে শেষ অধ্যায় হয়ে এলি কিন্তু আমার হয়ে রইলি না৷ ”
বলেই জোরে জোরে শ্বাস টানলো অতঃপর মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো ক্ষানিকটা৷ এই অদ্ভুত ভালোবাসা দেখে সবার নেত্র জুরে পানি৷ ফারহানের কি হলো কে জানে? মায়ের দিকে তাকিয়েই হঠাৎ সেলাইন আর র’ক্ত যাওয়ার ক্যানেলটা ধরে টান দিলো৷ ডাক্তার এগিয়ে আসতে আসতেই শ্বাস কষ্ট উঠে গেলো ফারহানের৷ চন্দ্রিকা অক্সিজেন মাস্ক টা পরিয়ে দিতে নিলেও সরিয়ে দিলো ফারহান৷ অতঃপর কয়েক মিনিটের মধ্যে সবাইকে থমকে দিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো৷
সত্যি সত্যি থমকে গেলো চারোপাশ ডাক্তার এসে নাড়ি পরিক্ষা করে থমথমে কন্ঠে জানালো,
“ডাক্তার ফারহান আর নেই৷ ”
তখনই পাথর হয়ে থাকা মারজিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো৷ চন্দ্রিকা চুপ করে গেলো৷ শ্রেয়াস আর আয়াশের মুখ জুরে বিস্ময় বিরাজমান৷ এ ধরনি সত্যি অদ্ভুত মানুষের অন্তকরণের অনুভূতি আরো অদ্ভুত৷ আর সবচাইতে বিচ্ছিরি কষ্ট হলো ভালোবাসার কষ্ট সে কষ্ট মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে মানুষকে মৃ’ত্যু কোলে ঢ’লে দেয়৷ একজন কে পাওয়ার জন্য একজন কে হাড়িয়ে কত কিছুই না করলো? অতঃপর মিললো কি? মৃ’ত্যু৷ তবুও স্বার্থপর মানুষ গুলো বলে ‘ভালোবাসারা ভালো থাকুক৷’
ফারহান কে মহলে নিয়ে আসা হলো, শেষ গোসল করানো হলো, সাদা কাফনে মোড়ানো হলো মারজিয়া নিজে ছেলের চোখে সুরমা লাগিয়ে দিলো অতঃপর শেষ আর প্রথম বারের মত ভালোবাসা পূর্ণ হয়ে ছেলের ললাটে ভালোবাসার শেষ পরশ এঁকে দিলো৷ কবর দেওয়া হলো মিফতার পাশেই৷ মৃ’ত্যুর আগে পেলো না ভালোবাসার ছোঁয়া মৃ’ত্যুর পরেই না হয় ভালো থাকুক দু’জন? এ এক সূক্ষ্ম প্রেমের গল্প ছিলো অপূর্ণতার মাঝেও যেন পূর্ণতা রয়ে গেলো ফারহান মিফতা?

৬৬
অতঃপর ফুরালো সময়, কা’টলো চার দিন৷ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে সব৷ চন্দ্রিকা ‘ আন্ডার কভার ‘ অফিসার ব্যাপারটা সবাই জেনে গেছে৷
শ্রেয়াস চন্দ্রিকার তেমন একটা কথা হয়নি এর মাঝে চন্দ্রিকা মেহনুবার সাথে থেকেছে মেহনুবাই নিজের সাথে রেখেছে অসুস্থ তাই৷ শ্রেয়াস পরেছে মহা বিপদে এ মেয়ের মতিগতি বুঝতে পারে না সে বিয়ের পরেও৷

প্রিয়ম, তমা সারাদিন ঝগড়া করে করেই কা’টে৷ প্রিয়ম যদিও চায় কিছু একটা ঘটুক তাদের মাঝে কিন্তু এ মেয়ের সাথে ঝগড়া ছাড়া কিছুই ঘটে না৷ কে যানে আদৌ ওর কপালে কোনো মেয়ে আছে কি না?

আজ মহলের বৈঠকখানায় বৈঠক বলেছে হেড অফিসার রা চন্দ্রিকাকে দেখতে এসেছে আর আহসান মীরের সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছে৷
সবার কথার মাঝেই হঠাৎ আয়াশ বলে উঠলো,
“এ কেস টা বড়ই অদ্ভুত ছিলো৷ প্রথমত রাজকুমারী মিফতার খু’ন হলো৷ সেই খু’ন করলো শাহনেওয়াজ, তারপর রায়হান সুস্থ হওয়ার পর ও ফারহান তাকে খু’ন করলো৷ ফারহান ইকবাল আর শাহনেওয়াজ কে অপহরণ করলো ইকবাল কে খু’ন ও করলো শাহনেওয়াজ পালালো৷ এর তিন, চার দিন পর শাহনেওয়াজ এর লা’শ পাওয়া গেলো তার পনেরো দিন পর আশরিফের লা’শ পাওয়া গেলো, আশরিফ কে ফারহানই খুন করলো৷ তাহলে শাহনেওয়াজকে কে খু’ন করলো?
আয়াশের এহেন কথায় শ্রেয়াস থতমত খেলো চন্দ্রিকার দিকে তাকালো চন্দ্রিকা শ্রেয়াসের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো৷ শ্রেয়াস আরো ভরকালো৷ হঠাৎই শ্রেয়াস কে চমকে দিয়ে চন্দ্রিকা বললো,
” আশরিফ খু’ন করেছে৷ যেন ওর মাদক ব্যাবসার সত্যিটা না বেরিয়ে আসে৷ ”
বলে শ্রেয়াসের দিকে তাকালো৷ শ্রেয়াস বিস্মিত দৃষ্টিতে চন্দ্রিকার দিকে তাকালো৷ চন্দ্রিকা এবার বেপরোয়া দৃষ্টি ফেলে এগিয়ে গেলো নিজের কক্ষের দিকে৷
সবাই বিদায় নিয়ে একে একে বেরিয়ে গেলো৷

তখন রজনী গভীর হচ্ছে সবে, হীম শীতল হাওয়াটা আজ বেশ মিষ্টি৷ শ্রেয়াসের কক্ষের বিশাল অলিন্দের এক কোণে আসমানি রঙের শাড়িটা শরীরে জরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ চুল গুলো আজ মুক্ত বাতাসের তালে তালে দোল খাচ্ছে পাশেই প্রাণ আর প্রণয় অনেক দিন পর আজ তাদের সাথে কথা বলা হলো৷ আজ চন্দ্রিকাকে কেয়ে যেন তারা খুশি৷
হঠাৎ চিরচেনা পুরুষালি কন্ঠে ধ্যান ভা’ঙলো চন্দ্রিকার৷ শ্রেয়াস পাখি দুটো কে বলছে,
“কি অদ্ভুত আজ তোদের মুখে চন্দ্র ডাকটা বিরক্ত লাগছে না কেন বলতো?”
পাখি দুটো কি বুঝলো কে যানে? তারা আরো জোরে চন্দ্র চন্দ্র বলে ডাকছে৷ পাখি দুটোর কান্ডে ক্ষানিকটা হাসলো চন্দ্রিকা৷ আহা কি সুন্দর সেই হাসি৷ মেয়ে টা হাসতেও জানে বুঝি? কই জানা ছিলো না তো৷
এবার শ্রেয়াস চন্দ্রিকার সম্মুখে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো পিছন থেকে৷ অতঃপর বললো,
“আজ বাচিঁয়ে দিলে যে আমায়?”
লোকটা বিয়ের দিন থেকে তুমি তুমি বলছে আজ খেয়াল করলো৷ চন্দ্রিকা কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে উত্তর দিলো,
“বাঁচিয়ে দিলাম কই? আমি তো ফা’সিয়ে দিলাম৷ ”
শ্রেয়াস প্রশ্ন সূচক কন্ঠে শুধালো,
” ফাসিয়ে দিলে?”
চন্দ্রিকা এবার পিছন ফিরলো৷ শ্রেয়াসের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলালো অতঃপর চোখে হেসে বললো,
“আমার জালে৷ ”
শ্রেয়াস এবার হেসে উঠলো৷ চন্দ্রিকা প্রথম বারের মত পূর্ন ভাবে চোখ বুলালো৷ মুগ্ধ হাসি৷ শ্রেয়াস এবার দুষ্টু চোখে তাকালো চন্দ্রিকার দিকে৷ বুঝলো বুঝি চন্দ্রিকা, শ্রেয়াসের সেই দৃষ্টির কথপোকথন৷ চন্দ্রিকা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে এর আগেই শ্রেয়াস কোমর ধরে নিজের সাথে সন্তপর্ণে মিশিয়ে নিলো৷ উষ্ঠ জোরায় আঙুল রেখে চুপ করিয়ে দিলো অতঃপর কর্ণকুহর এর সম্মুখে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
” চুপ মূহুর্ত চুপ,
ঠোঁটের তুরুপ
এই তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম৷ ”

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত৷,,,,,,,,,,,,,,,,

[দীর্ঘ আড়াই মাস পর গল্প টা শেষ হলো৷ গল্পটার পর্বে পর্বে আমি টুইস্ট আনার চেষ্টা করেছি রহস্য গুলো সুন্দর উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি৷ গল্পটা পুরোটাই কাল্পনিক ছিলো এটা কেউ বাস্তবের সাথে মিলাবেন না৷ হয়তো বলবেন এখন কি রাজ বংশ টংশ আছে নাকি? তাই বলে রাখলাম আমি কাল্পনিক ভাবেই সাজিয়েছি আধুনিকতাও রেখেছি৷ আধুনিক জমিদার নিয়ে সাজিয়েছি আশাকরি এ নিয়ে আর আলোচনা করবেন না? কাল্পনিক হিসেবেই ধরবেন৷ তা ছাড়া গল্পে অনেক হয়তো বানান ভুল ছিলো? যে গুলো রিচেক করতে পারিনি আমি বলে দিয়েছিলাম, ‘ব্যাস্ততায় রিচেক হয়নি’ আমি সব গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি বানান বাদে তবুও আমার ভুল ভ্রান্তি হলে আশাকরি বুঝে নিবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন৷ চন্দ্রিকা চরিত্রটা আমি একটু বেশি প্রাধান্য দিয়েছি৷ আন্ডার কভার অফিসার, আর ধর্ষণের ব্যাপারটা আমি গল্পের শুরুতেই ভেবে রেখেছিলাম৷ সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি গল্পটা উপস্থাপনা করেছি৷ আর রিভিউ দিতে ভুলবেন না পারলে রিভিউ গ্রুপেই রিভিউ দিতে পারেন৷ আমার গ্রুপ তো আপনাদের জন্য উন্মুক্তই৷ সব মিলিয়ে জানাতে কিন্তু ভুলবেন না৷ গল্পটা আমার নিজেরই বেশ প্রিয় ছিলো৷ আসসালামু আলাইকুম ভালো থাকবেন৷ “]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here