বৃষ্টিশেষে প্রেমছন্দ পর্ব-১৪

0
1864

#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ💖
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন

১৪.
নিঝুম দ্বীপ, বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় অন্তর্গত বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে উঠা ছোট্ট একটি ভূ-খণ্ড। ২০০৯ সালের ৮ ই এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার পুরো দ্বীপটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। সৌন্দর্যের অপার শোভনীয় এই নিঝুম দ্বীপ একদম শান্ত-শিষ্ট নিরিবিলি প্রাকৃতিক লীলাময় ভূমি। প্রায় ১৪,০৫০ একর আয়তনের এই দ্বীপটির বিভিন্ন সময় হরেক রকমের নাম ছিলো। কখনো ইছামতীর দ্বীপ তো কখনো বাইল্যার ডেইল বা বালুয়ার চর অথবা চর ওসমান। সবশেষে দ্বীপটি একদম নিরব-নিস্তব্ধ হওয়ায় এর নাম হয় নিঝুম দ্বীপ।

নিঝুম দ্বীপের একটি খ্যাত স্থান হলো চোয়াখালী বন। এছাড়াও রয়েছে চোয়াখালী বীচ, নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান, কমলার চর, উপর বাজার সি বীচ, নামা বাজার সি বীচ, চৌধুরী খাল, কবিরাজের চর, কুমারী সি বীচ, চর কুকরি-মুকরি ইত্যাদি।
বেলা সাতটায় ওরা চারজন এসে পৌছালো চোয়াখালী বন। উদ্দেশ্য বনে হরিণ দেখা। সিএনজি এর পেছনে বসে ছিলো টিকলি এবং টায়রা। সামনে ড্রাইভারের সাথে বসে এসেছে আদর এবং আর্দ্র। বেলা সাতটায় রোদ উঠেছে চনমনা। সিএনজি থেকে নেমে কিছুটা পথ হাটতেই চোখে ধরা পরলো চোয়াখালী বন। চোয়াখালী বোনের সামনে এসে টায়রা ঠোঁট উল্টে আদরকে প্রশ্ন করলো,

‘এতো সকালে এতো তোড়জোড় করে নিয়ে আসলেন ভাইয়া কিন্তু এখানে তো কোনো হরিণের চিহ্নও নেই।’

সিএনজি ড্রাইভার তখন বলে উঠলেন, ‘হরিণ দেখতে বনের ভেতরে যাইতে হইবো আফা।’

টায়রা চোখ বড় বড় করে বলে, ‘বনের ভেতরে?’

‘জি।’

‘ওহ আল্লাহ, যদি বাঘ বের হয়?’

আর্দ্র চোখ মুখ কুচকে বলল, ‘বলদ নাকি? নিঝুম দ্বীপে হরিণ, মহিষ, গরু, শেয়াল, পোকামাকড় আর সাপ টাপ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। বলা যায়, সুন্দরবনের পরে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। সারা বন গাছ-গাছালিতে ভরপুর।’

আদর পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে সবসময়ের মতো কুঞ্চিত ভ্রুতে তাকিয়ে বলল, ‘হুম। এই সম্পূর্ণ বনটিতে একসময় বনবিভাগ বিশ বছর মেয়াদি দুই কোটি তেতাল্লিশ লাখ গাছ রোপণ করে। এখানে প্রায় তেতাল্লিশ প্রজাতির গাছ আছে। তবে কেওড়া গাছের সংখ্যাই বেশি।’

‘সব বাদ, আগে আপনি বলুন। আপনি আমাকে বলদ ডাকলেন?’ কোমড়ে হাত রেখে তীক্ষ্ণ চোখে টায়রা আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো।

আর্দ্র বিরক্তি ভঙ্গিতে মুখ দিয়ে চু শব্দ করে বলল, ‘ভাইয়া আজকে সারাদিন এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো?’

‘না চল।’

এই পুরো সময়টাতে টিকলি ছিলো একদম নিঝুম দ্বীপের মতোই শান্ত। নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরার জন্য আলাদা গাইডের প্রয়োজন নেই। সিএনজি বা মোটরসাইকেল ড্রাইভার রাই সব দেখিয়ে আনবে। এতে তারা পাঁচ-ছয়শ এক্সট্রা টাকা নিবে।
সিএনজি ড্রাইভার গেলো সবার আগে তারপর গেলো আর্দ্র। বনের মাঝে চিকন রাস্তা হওয়ায় এবং অগণিত শ্বাস মূল থাকায় এখানে দলগত ভাবে হেটে যাওয়া সম্ভব নয়। আর্দ্রর পেছন পেছন টায়রা পা বাড়ালো। টিকলি যাওয়ার পর আদর গেলো সবার পেছনে।

দেখা গেলো, বনের শুরুতেই রয়েছে প্রচুর শ্বাসমূল। টিকলি কোনো কারণে একটু অন্যমনস্ক ছিলো যার কারনে একটা শ্বাসমূলের উপর পা মাড়িয়ে যেতেই সে উল্টে পরে যেতে নিলো। আদর তৎক্ষণাৎ টিকলিকে ধরে রাগী গলায় বলল,

‘এই আপনি সবসময় এতো কি চিন্তা করেন হ্যাঁ? যেখানে সেখানে ধুপুসধাপুস করে পড়ে যাওয়া কি আপনার কোনো রোগ?’

টিকলির ভারি রাগ হলো আদরের এহেন আচরণে। একটা টু শব্দ না করে সে সাবধানে পা ফেলে বনের ভেতর চলে গেলো।

সকাল থেকেই টিকলির প্রতি প্রচন্ড রাগ হয়ে আছে আদরের। আদর বলেছিলো পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে থাকতে তারা সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই বেরোবে। কেনোনা যত ভোর বেলায় আসা যাবে এই বনে তত কাছ থেকে হরিণের দেখা পাওয়া যাবে। কিন্তু তারা ঘুম থেকেই উঠেছে ছয়টায়। এই বেলায় হরিণ দেখা যাবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যদি হরিণ দেখা না যায় তাহলে এই চোয়াখালী বনে আসাটাই বৃথা। তাই সিএনজি তে উঠার সময় আদর কিছু কটু কথা শুনিয়ে ফেলেছিলো টিকলিকে। টিকলির যাওয়ার পানে তাকিয়ে আদর এবার একটু জোরে জোরেই বলল,

‘এতো রাগ কেনো? একে তো নিজে ভুল করেছে তারউপর আবার আমার সাথেই রাগ দেখানো হচ্ছে?’

,

এই বনে যেতে হবে একদম নিরবচ্ছিন্ন নিরবতা পালন করে। একটু কোলাহল করলেই এখানে হরিণের দেখা পাওয়া মুশকিল। আদররাও সবাই এগোচ্ছিলো পিনপিন নিরবতা বজায় রেখে। বনের যত গভীরে যাওয়া যাচ্ছে এর সৌন্দর্য তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বলতে গেলে নিঝুম দ্বীপের প্রকৃতি কোনো অংশে সুন্দরবনের চেয়ে আলাদা নয়। প্রায় সত্তর দশকের দিকে বনবিভাগ থেকে পরীক্ষা মূলক ভাবে এই বনে চার জোড়া হরিণ ছাড়া হয়েছিলো। ১৯৯৬ সালে হরিণশুমারী মতে এখন বনের হরিণ সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। কিন্তু বনের ভেতর প্রায় এক ঘন্টা ঘুরঘুর করেও কোনো হরিণের দেখা না পেয়ে ওরা সবাই হতাশ। সিএনজি ড্রাইভারটির কাছ থেকে জানা গেলো,

‘ক্রমাগত বন উজাড়ের ফলে এবং গাছ কাটার ফলে এখানে হরিণের সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়াও সরকারের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ সংস্কারের অভাবে এবং হরিণ শিকারের ফলে বনে হরিণের দেখা পাওয়া দুষ্কর। তবুও দেখা পাওয়া যেতো যদি আপনারা খুব ভোরে আসতেন। ভোরের আলো ফুটছে ফুটছে এমন সময় এলে বনের সামনের দিকটাতেই হরিণের দেখা পেতেন।’

আদর দাঁত কিড়িমিড়ি করে টিকলির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘শুনেছেন নাকি এখনো রাগ দেখাবেন? দেখান না দেখান এবার ড্রাইভারের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে হনহন করে চলে যান। পারেন তো এই একটা কাজ ই।’

টিকলি তবুও আদরের সাথে কথা বলল না। গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো এক কোণায়। ওর যখন কারো কথা ভালো লাগে না তখন ও খুব বেশি চুপচাপ থাকে। আর সেই থমথমে মুখটাই জানান দেয়, ‘আমার মন খারাপ। আমার সাথে কথা বলতে এসো না।’

আদর কিছুক্ষণ ক্রোধ নিয়ে কিন্তু আচ্ছন্নতা ভরপুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো টিকলির দিকে। আস্তে আস্তে রাগ শীতল হয়ে এলো। গরম চাহনি নরম হয়ে প্রকাশ পেলো চোখের পাপড়িতে। শ্যামল মুখশ্রী এই রোদ্রের সকালে ভ্যাপসা গরমে হয়ে উঠেছে ক্লান্ত। আরো আধ ঘণ্টা বনের ভেতর ঘুরঘুর করার পর যখন শ্বাসমূল, অসংখ্য গাছ-গাছালি, মেঠোপথে ছিপছিপে কর্দমাক্ত ভূমি এবং পাতার ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে অনুমতি না নিয়ে ঠিকরে চলে আসা সূর্যের আলো ছাড়া আর কিছুই পাওয়া গেলো না তখন শরীর ছেড়ে দিয়ে একটা উপুর হয়ে হেলে পড়ে যাওয়া গাছের উপর বসে নিস্তেজ গলায় টায়রা বলল,

‘আমি আর হাটতে পারবো না। আল্লাহ! কতটা পথ হেটে এসেছি। অলমোস্ট এক থেকে দেড় ঘন্টা। এই আবার এতোটা সময় হেটে যেতে আমি আর পারবো না।’

টায়রা হাপানো গলায় বলল। টিকলি ছিলো ভীষণ শান্ত। মন খারাপের কোনো প্রতিচ্ছবির রেশ তার মুখে নেই। তার মুখমন্ডল ভীষণ শক্ত এবং দৃঢ় অনুভূতিশূন্য শরীর নিয়ে সে পুতুলের মতো হেটে চলেছে অবিরাম, অন্তহীন। নেই কোনো ক্লান্তি, শ্লেষ এবং হয়রান। খুব ঠান্ডা মেজাজ। বলেছিলাম, টিকলি ঠান্ডা মেজাজের রাগী। এই যেমন সে একদম সাপের ন্যায় ঠান্ডা হয়ে আছে একদম চুপচাপ। তেমনি কারোর সাথে এখনো একটা কথা পর্যন্ত বলেনি।

টিকলি রোবটের মতো সাইড ব্যাগ থেকে একটা পানির বোতল বের করে টায়রার হাতে দিলো। টায়রা পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেতে খেতে টিকলির দিকে আড়চোখে তাকালো। টায়রা ধরতে পেরেছে হয় টিকলির মন খারাপ নয়তো সে ভয়ানক ভাবে রেগে আছে। অন্যদের মতো রাগ হলে গিজগিজ করা তার স্বভাব নয় টায়রা খুব ভালো করে জানে সাথে এও জানে এখন টিকলিকে প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর পাওয়া যাবে না। টায়রা আর কথা বাড়ালো না। কিছুক্ষণ বসে রইল গাছের উপর বনের ঠান্ডা বুনোফুলের গন্ধে মিশে থাকা বাতাসের পাতলা আবরণের সাথে।

,

আদর বার কয়েক গভীর চক্ষুদ্বয় মেলে দেখেছে শান্ত সেই রমণীকে। রমণীর হঠাৎ নিরব হয়ে যাওয়ার কারণ উদঘাটন করতে কিছুক্ষণ চিন্তিত ছিলো সে। কাল রাতেও এই শান্ত মেজাজের রমণীর সাথে তার খুব সুন্দর ভাবে কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু সকাল হতে না হতেই আদর কি একটা বলল না বললো এরপর থেকেই মহারানী মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছেন। কাহিনি কি?

রাতের কথা মনে করতেই মনে পরলো এক গুরুত্বপূর্ণ কথা। কাল রাতে, আদর চেতন থেকেও অবচেতন ভাবে মনের খুব গভীর কুঠিরে থাকা এক কুঠিয়ালের গোপন গল্প ফাঁস করে দিয়েছে। কুঠিয়ালের কিছু না থাকলেও তার কাছে ছিলো অধিক মূল্যবান কিছু। তার কাছে ছিলো, প্রতিদিনের সন্ধ্যায় জমিয়ে রাখা পশ্চিমাকাশের শুকতারা। যেই শুকতারার কথা সেই কুঠিয়ালের আপন মন ছাড়া আর কেউ জানতো না। সেই শুকতারা নিয়ে দেখা শত শত স্বপ্নের কথা বলে ফেলেছে এই মহারানীকে। মহারানীর রাজ্যে নিতান্তই কুঠিয়াল একজন সামান্য প্রজা। এই সামান্য প্রজাকে কি মহারানী পাত্তা দিয়েছে? নাকি প্রজার সকল দুঃখ-কষ্ট শুনে সে ব্যঙ্গাত্মক করছে? কিন্তু মহারানীর তো এমন আচরণ শোভা পায় না। সে তো আর রাক্ষসী মহারানী না। কুঠিয়াল জানে এই মহারানী কোমলপ্রাণ নীতিবাদী এক নারী। তবে কেনো প্রজার উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো? প্রজার সকল দুঃখ-কষ্ট শুনে কি মহারানীর তাকে পাগল মনে হয়েছে বা অহেতুক পাগলের প্রলাপ মনে হয়েছে? যার কারনে মহারানীর এই তুচ্ছ ব্যবহার।

ইশশ…কুঠিয়ালটা না বড্ড অবুঝ! তার সরল মনটা বুঝি একটু বেশি সরল। আর সেই সরল মনের সকল কাহিনি এবং দূর্বলতা ধরতে পেরে যদি মহারানীর এই তুচ্ছ ব্যবহার হয় তবে কুঠিয়াল কখনো মহারানীর সাথে আর বাক্য বিনিময় করবে না।

_________________________

বনের ঠিক মাঝখানে একটি পুকুর রয়েছে। যেই পুকুরে হরিণেরা জল খেতে আসে। সেইখানে গেলে হরিণের দেখা পাওয়া যেতে পারে। প্রায় আরো আধ ঘণ্টা হেটে পুকুরের কাছাকাছি আসার পর দেখা গেলো মেঠোপথে হরিণের পায়ের ছাপ। পুকুরের সামনা সামনি যাওয়ার পর দেখা গেলো চার-পাঁচটা হরিণ একসাথে জল খাচ্ছে। টায়রা তা দেখেই লাফিয়ে উঠলো। চিৎকার করে বলে উঠলো,

‘ইয়েস, পেয়েছি। ফাইনালি। হাইরে হরিণ! এই তোকে দেখার জন্য পাক্কা দুই ঘন্টা হেটে এসেছি। কি খেলা দেখালি রে তুই!’

মানুষজনের আওয়াজ পেয়ে হরিণ গুলো পুকুরের পানি থেকে মুখ উঠিয়ে ওদের দিকে তাকিয়েছে। আদর আস্তে আস্তে বলল, ‘এই মেয়ের জ্বালায় শেষ মুহুর্তে এসে বুঝি হরিণগুলোকে পেয়েও হারিয়ে ফেলবো।’

হরিণগুলো অবাক স্থির চোখে তাকিয়ে ছিলো। পুকুরের পানি খাওয়া বন্ধ করে ওরা মুখ তুলে তাকিয়েছে ওদের পাঁচজনের দিকে। চারিপাশে সবুজ কেওড়া গাছের অরন্য মাঝখানে অথৈ জলের নির্জন নীলাদ্রি রূপময় পুকুর যার একপাশে পানি পান করছে চার-পাঁচ টা হরিণের দল উপরে বিশাল বিস্তৃত নীল সাদা আকাশ। হঠাৎ হঠাৎ নির্জন পরিবেশ কাঁপাচ্ছে পাখিদের আনাগোনা। হরিণগুলো এমন নিরব দর্শক হয়ে তাকিয়ে ছিলো যেনো ওরা স্টোক করেছে কিংবা তব্দা খেয়েছে। হরিণদের সাথে স্টেচু হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওরা সবাই। হাত-পা নড়াচড়া বন্ধ। মুখে টু শব্দটি পর্যন্ত নেই। বেশ কিছুক্ষণ পর আদর খুব আস্তে গলায় বলল,

‘আর্দ্র ছবি তোল। ছবি তোল। ক্যামেরা কি তোর গলায় ঝুলিয়ে রাখার জন্য?’

আর্দ্র ক্যামেরা বের করলো। টিকলি অল্প একটু এগিয়ে গিয়ে সেলফি তুলল। এমনভাবে তুলল যে পুরো পুকুর এবং সাথে পুকুরের ওই পাড়ে হরিণের পাল কে দেখা যাচ্ছে। ছবির এককোণায় টিকলির মুখচ্ছবি।
আদর নিজের ফোনে হরিণের ছবি তুলতে এগিয়ে গিয়েছিলো। টিকলির পেছনে দাঁড়িয়ে হরিণের ছবি তুলছে। টিকলি নিজের ফোন ক্যামেরায় ক্লিক করতেই অজানায় এক সুশোভন চমৎকার ছবি তুলে ফেলল। ছবিটার এক কোণায় দেখা যাচ্ছে আদরকে এবং আরেক কোণায় টিকলিকে মাঝখান দিয়ে দেখা যাচ্ছে পুকুর গলিয়ে হরিণের পালকে। টিকলি অপ্রস্তুত হয়ে পরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল অনাকাঙ্ক্ষিত ছবিটির দিকে।

কিন্তু এতো সুন্দর মনোরম সুদৃশ্য রংবাহারী নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে বেঘাত ঘটালো আর্দ্রর ফটফট ক্যামেরার শব্দ। টায়রা মুখ দিয়ে চু শব্দ করে বিরক্ত হয়ে লাল চোখে তাকিয়ে রইল আর্দ্রর মুখের দিকে। হরিণের পাল গুলো ছুটে চলে গেলো বনের ভেতর। আর্দ্র টায়রার দিকে তাকিয়ে ছন্নছাড়া গলায় বলল,

‘হোয়াট? ক্যামেরার শব্দ হলেও কি আমার দোষ নাকি? কুটিল মহিলা।’

‘আপনার জন্য আমি একটাও ছবি তুলতে পারিনি হরিণদের সাথে। মাত্রই ছবি তুলতে যাচ্ছিলাম ওমনি ওরা দৌড়ে পালালো। আর আপনি আমাকে কুটিল বলছেন? মন চায়ছে, আপনাকে এই পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখি। তারপর আজীবন আপনি ওই হরিণের মতো ঘাট থেকে জিহবা দিয়ে লেলিয়ে পানি খাবেন। জটলা পাকানো লোক একটা।’

টায়রা এত জোরে জোরে চিতকার করে করে কথা বলল যে আশেপাশে তাও যে কয়টা হরিণ ছিলো সব পালিয়েছে।

‘আর আমার ইচ্ছে করতাছে আপনাকে ওই হরিণ গুলোর গলার সাথে বেধে দিতে। এরপর আপনি সারাদিন ওদের সাথে মুখ ত্যাড়াব্যাকা করে সেলফি তুলবেন। কখনো হরিণ ছুট লাগাবো আর আপনি দোল দোল দুলানি খেতে খেতে পিঠের ছাল-বাকল তুলে ওদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামবেন। একদম আই লাভ ইউ ছবির মধ্যে দেব যেমন লাঙ্গল দেওয়ার সময় গরুর সাথে প্রতিযোগিতা দিয়েছিলো তেমন। আহ! কি দারুণ সিনারি!’

চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here