ভালোবাসার_ফোড়ন পর্ব_২৫
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
হঠাৎ করে বাহু ধরে টেনে নেওয়া আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। তাকিয়ে দেখি আহিয়ান। এখন তার ছোঁয়ায় কেমন আমার অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। আমাকে নিয়ে একটু আড়ালে চলে গেল, আমি তাকে বলতে শুরু করি…
– এরকম হুটহাট করে আমাকে একদম ধরবেন।
– কেন?
– এমনেই আমি বলেছি তাই!
– ঝগড়া করা শেষ এখন ওখানে তাকায়।
আমার গাল ধরে ওদিকে ঘুরিয়ে দিল। তাকিয়ে দেখি ইতি এখনও সেই ছেলেটার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও আমরা জানি সেই ছেলেটা আকাশ ভাইয়া। ইতি তাকে ডাক দিলো। আকাশ ভাইয়া ইতি’র দিকে ফিরল। ইতি তাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। আমিও হলাম কারন আকাশ ভাইয়া কে সত্যি’ই অনেক সুন্দর লাগছিলো। আমি আর আহিয়ান দুজনে উঁকি দিয়ে দেখছিলাম। উনি বললেন…
– কতোক্ষণ এভাবে ওরা শুভদৃষ্টি করবে, তাড়াতাড়ি প্রপোজ করেই দিলে তো হয়।
– আপনি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছেন যে বুঝবেন।
– হ্যাঁ তুমি তো পাকনি! সব বুঝে বসো আছো। বুঝছি না এতো তাকিয়ে থাকার কি আছে।
– আপনার কি হয়েছে?
– অধৈর্য লাগছে আমার!
– প্রেম করছে ওরা আর অধৈর্য আপনার কি লাগছে!
– রিলেশনেই তো গেলো না! প্রেম করলো কোথায়?
– হয়েছে এইসব আপনি বুঝবেন না রাখুন!
– আসলেই বোঝার ইন্টারেস্টি ও নাই।
– এখন ওদের দেখুন!
আহিয়ান এর কথা মতো তারা দুজন অনেক্ষণ ধরে শুভদৃষ্টি করল। তারপর হুট করেই আকাশ ভাইয়া হাঁটু গেড়ে বসে ইতি কে প্রপোজ করল। আমি হাঁ করে দেখছি। হঠাৎ উনি খোঁচা মেরে বলল…
– হাঁ করে দেখার কি আছে?
– দেখছেন আপনি! হাউ কিউট! কি সুন্দর প্রপোজ!
– এতো এক্সাইটেড কেন তুমি!
– আরে ব্যাপার টায় তো এরকম। বুঝতে পারছেন ইতি কি ভাগ্যবতী।কতো সুন্দর করে প্রপোজ করছে আকাশ ভাইয়া!
– হুম দেখছি!
– আচ্ছা আপনার আর বন্ধুরা কোথায়?
– ওরা আসেনি!
– কেন?
– আকাশ ইতি’র ব্যাপার টা শুধু আমাকে বলেছে তাই!
– ওহ্!
আবার ওদের দিকে মনোযোগ দিলাম। আমার বান্ধবীরা একটু ধৈর্য্য নেই বলতে হবে। সে তাড়াতাড়ি করে ফুল টা নিয়ে নিল। অতঃপর ভাইয়া হেসে দাঁড়াল। ইতি হুট করেই ভাইয়া কে জরিয়ে ধরল। আমি সাথে সাথে মুখে হাত দিলাম। আহিয়ান আমাকে হুট করেই তার দিকে ঘুরাল। আমি ভ্রু কুঁচকে বলি..
– কি হলো?
– কিছু না। ওদিকে আর তাকিয়ে না!
– কেন?
– ওরা প্রেম করছে এখন আর ওদের দেখা লাগবে না।
– না আমি দেখবো!
– নাহ এটা ওদের পার্সোনাল ব্যাপার দেখা লাগবে তুমি আমার সাথে আসো আইসক্রিম খাবো।
– সত্যি!
– হ্যাঁ চলো।
অতঃপর আমি আর উনি চলে এলাম আইসক্রিম খেতে। আমি একে একে ৩টা আইসক্রিম খাওয়া শেষ করলাম তখন তারা আসলেন। ইতি তো আকাশ ভাইয়ার হাত ধরে এক পাটি দাঁত বের করে হাসতে হাসতে আসছে। একটু ও শরম লজ্জা নেই মেয়েটার। আকাশ ভাইয়া আর ইতি আমাকে দেখে একটু অবাক হলো। কারন আমি আহিয়ান এর পাশে বসে ছিলাম, উনার মনোযোগ হলো ফোনে। আমি ওদের দেখে উনাকে খোঁচা দিলাম। উনি আমার দিকে তাকালে আমি চোখের ইশারায় সামনে তাকাতে বলি, উনি আকাশ ভাইয়া দেখে বলে..
– প্রেম শেষ আপনাদের! আমি তো ভাবলাম সারারাত এই ভূতনি’র সাথে বসে থাকতে হবে।
– এই কি বললেন আপনি আমাকে!
– আমি দ্বিতীয় বার কোনো কথা বলি না বুঝলা।
– না বুঝলাম না!
আকাশ ভাইয়া বলে ওঠে..
– আহি তুই কবে থেকে এভাবে ঝগড়া করতে শুরু করলি।
উনি বললেন…
– যবে থেকে এই ভূতনি’র সাথে দেখা হয়েছে!
– তুই ওর কথা এতো ফ্রি মাইন্টে কথা বলতে শুরু করলি কবে থেকে।
আকাশ ভাইয়া’র কথায় আমি আর উনি থতমত খেয়ে খেলাম। কারন আমাদের বিয়ের ব্যাপার’টা তো কেউ জানে না। উনি কথা ঘুরিয়ে বললেন..
– তোর প্রেমের জন্য’ই বলতাম।
অতঃপর উনি আমার পাশ থেকে উঠে যান। ইতি এসে আমার পাশে বসে। আর উনি আমার সামনে বসে তার সাথে আকাশ ভাইয়া।
হঠাৎ ইতি বলে ওঠে..
– নিহা! অনেক রাত হয়ে গেছে আমরা এখন চলে যাই নাহলে তোর শাশুড়ি রাগ করতে পারেন।
উনি বলে উঠে…
– আমার মা এতো খারাপ না!
উনার কথায় সবাই উনার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।উনি বুঝতে পেরে বলেন..
– আরে আমি আমার কথা বলছি, মানে আমার দেরি হলে আমার মা কিছু বলবে না।
আকাশ ভাইয়া বলে…
– এটা বলার কি আছে, আন্টি অনেক ভালো। উনি কখনো তোকে কিছু বলবে না এটা আমরা জানি।
কিন্তু ইতি তুমি ঠিক বলেছো। নিহা’র তো বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তাহলে আমাদের যাওয়া উচিত।
আমি হুম বলি। কারন এমনেই তেই অনেক কিছু হয়েছে আর চাই না কিছু হোক।
আমি আর ইতি একসাথে যাই, আর আকাশ ভাইয়া উনি একসাথে যান। কিন্তু যাবার আগে আকাশ ভাইয়া সবার সামনে ইতি কে এক হাতে দিয়ে জরিয়ে ধরল। আর সাবধানেও যেতে বলল। ইশ কি কিউট। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম তখন উনি চোখ ঘুরিয়ে আমাকে না বললেন। আমি উনাকে মুখ ভেংচি দিয়ে স্কুটি তে ওঠে বসলাম। অতঃপর বাসায় যাবার জন্য রওনা দিলাম।
যাবার পথে ইতি কিছু বললো না আমি গ্লাসে দেখলাম ও মিটিমিটি হাসছে আর আমাকে জরিয়ে ধরে আছে। আমি বলে উঠি..
– আমি আকাশ ভাইয়া না।
– আমি জানি!
– এতো চুপচাপ কেন আজ। ভাইয়া কি তোর মুখ বন্ধ করে দিয়েছে।
আমার কথায় ইতি আরো লজ্জা পেয়ে যায়। এই মেয়ে এতো লজ্জা পাওয়া দেখে আমি হাসতে হাসতে শেষ।
এভাবে কেটে গেলো দুদিন। দুদিন ধরেই ইতি আমাকে বেশ নজরে রাখে। ভার্সিটিতে কোথাও একা যেতে দেয় না। আমি বুঝতে পারছি না ও কেন এমন করছে।
সেদিন হঠাৎ ও বলে ওঠল..
– ভার্সিটির পর শপিং এ যাবো। আর কয়েকদিন পরেই তো আনিকার বিয়ে। সেটার শপিং করা লাগবে।
– তুই না বললি যাবি না।
– এটা বিয়েতে যাওয়া তো সো শুধু,আসলে আকাশের সাথে মিট করবো।
– ওহ আচ্ছা!
– হুম আচ্ছা তোর ফোন সাইলেন্ট করেছিস!
– না তো কেন?
– ক্লাস রুমে ফোন সাইলেন্ট রাখতে হয় জানিস না। হঠাৎ করেই যদি তোর বর ফোন করে তখন রিং বাজলে সমস্যা। ফোন সাইলেন্ট কর।
আরে আমি যখন ক্লাসে উনিও ক্লাসেই থাকবে না। আর উনার দরকার হলে উনি আমাকে ফোন করবে না সোজা এসে নিয়ে যাবে। তবুও ওর কথায় সাইলেন্ট করলাম নাহলে হাজার টা প্রশ্ন করবে।
ভার্সিটি শেষে আমি আর ইতি বের হলাম শপিং করতে। আসার সময় উনার সাথে দেখা হয় নি। আমি ভাবলাম শপিং শেষে সোজা বাসায় চলে যাবো। এই ভেবে উনাকে আর জানানো হয় নি। প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই ইতি শপিং করছে আর আমি ওর সাথে ঘুরছি। বেশির ভাগই ঘুরছি কিন্তু কেন বুঝে উঠতে পারছি না। জিজ্ঞেস করলে বলছে, শপিং করতে গেলে সবাই ঘুরে। আমি আর কি চুপচাপ ঘুরছি।
হাঁটছিলাম হঠাৎ করেই আহিয়ান আমার সামনে এসে দাঁড়াল। উনাকে দেখেও আজ সেদিনের মতো লাগছে আমায়। ঘেমে একাকার,সামনের সব ছোট ছোট চুল গুলো কপালে ঠেকছে। রেখেও আছে বেশ। উনার চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। সেদিনের থেকে আজ বেশি রেগে আছে। আমি উনাকে দেখে ভয়ে ইতি’র হাত চেপে ধরলাম। উনি দাঁতে দাঁত চেপে বলেন..
– ফোন কোথায় তোমার!
– আমি নিশ্চুপ!
– নিহা ফোন কোথায় তোমার!
আমি ভয়ে ভয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে উনাকে দিলাম। উনি ফোনটা হাতে নিয়ে বললেন..
– যে জিনিসটা’র সঠিক ব্যবহার করতে জানো না সেটা রেখে লাভ নেই।
বলেই ধপ করে একটা আছাড় মারল। ফোনটা দূরে গিয়ে পড়ল। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে দেখি উনি নেই চলে গেছে। আমি ইতি’র দিকে তাকিয়ে আছি। ইতি বলল…
– ভাইয়া মনে হয় তোকে খুঁজছিল। একটু আগে আমাকে মেসেজ করে জিজ্ঞেস করছিল আমরা কোথায়? আমরা শপিং করতে এসেছি।
– এটা তুই এখন বলছিস আমায়!
– আরে আমি কি সিউর ছিলাম নাকি যে তোকেই খুঁজছে,ভাবলাম আকাশের ফোনে হয়তো ব্যালেন্স নেই তাই ভাইয়া জিজ্ঞেস করতে বলেছে। আর আসল কথা হলো ভাইয়া কে যে তোর ওপর এতো রাগ দেখাবে!
আমি বলে উঠি…
– উনি’ই আমার সব!
অতঃপর আমি ওখানে আর দাঁড়ালাম না। দৌড়াতে লাগলাম। অনেকক্ষণ দৌড়ানোর পর উনাকে পেলাম। আমি পেছন থেকে ডাক দিলাম…
– এই যে শুনুন!
আমার আওয়াজ পেয়ে উনি দাঁড়িয়ে আমার দিকে ঘুরলেন। আমি উনার সামনে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম….
– সরি আমার ফোন সাইলেন্ট ছিল! তাই বুঝতে পারি নি আপনি কল করেছেন!
উনি আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন..
– সরি! তাহলেই সব শেষ!
আমি নিচু গলায় বললাম..
– সরি বলছি তো!
উনি ফোন বের করে দেখালেন..
– দেখো! ১৫০ টা কল! ১৫০ বার কল করলাম তোমায় আর তুমি বুঝতে পারো নি।
– সরি এমন ভুল আর হবে না।
– ভুল! রাইট ভুল। তোমার হাত টা দাও তো।
– হাত দিয়ে কি করবেন।
– দাও তুমি!
আমি উনাকে আমার হাত দিলাম। উনি আমার হাত টা ধরে বাঁকা হেসে হুট করেই কামড় দিলো। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম…
– আমমুউউঊউ
উনি হাত ছেড়ে দিয়ে বললেন..
– সরি!
– সরি মানে! এতো জোরে কামর দিয়ে এখন সরি বলছেন! মগের মুল্লুক নাকি।
আশপাশ তাকিয়ে দেখি কিছু লোক তাকিয়ে আছে আমার দিকে। উনি আমার হাত ধরে একটু সাইডে নিয়ে গেলেন। অতঃপর বলতে শুরু করেন…
– হুম সেটাই, বার বার আমাকে জ্বালিয়ে তুমি এখন আমাকে সরি বলবে, মগের মুল্লুক নাকি। জানো কি অবস্থা হয়েছে আমার, পুরো ভার্সিটি খুঁজেছি তোমায়। তার মধ্যে আকাশ এমন এমন কথা বলছিলো আমার ভয় আরো বেড়ে গেলো। মা কে কল করে জিজ্ঞেস করলাম মা বললো এখনও বাসায় ফিরো নি। আর তুমি নিশ্চিতে ঘুরছিলে..
আমি মাথা নিচু করে কথা শুনছি। আসলেই কথা টা ঠিক বলেছেন উনি। দোষ তো আমার’ই আমি যদি এমন একটা কাজ না করতাম তাহলে এতো টেনশন করতেন না উনি। কিন্তু হঠাৎ কামড়’এর কথা মনে পড়ল। হাত জ্বলছে। আমি রেগে বলতে থাকি…
– তাই বলে এভাবে কামড় দিবেন আপনি আমায়, এটা কি ঠিক!
উনি আমার হাত ধরে..
– হুম এটাই তোমার শাস্তি!
– আর তোমাদের শাস্তি ঠিক করবে কে?
হঠাৎ এমন কথা শুনে দুজনেই পিছু ঘুরলাম। তাকিয়ে দেখি আকাশ ভাইয়া আর ইতি দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওদের থেকে একটা শুকনো ঢোক গিললাম।
#চলবে….
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/422891452765966/