বৃষ্টিশেষে প্রেমছন্দ পর্ব-৩৭

0
1260

#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন

৩৭.
ক্লান্ত দেহখানি চেয়ারে এলিয়ে দিতেই চেম্বারের দরজা ঠেলে হুড়মুড় করে কেউ ডুকলো। গর্জনাধিকারী আকাশটা ধীরে ধীরে কালো রঙা মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে। ঘরময় জুড়ে ঠান্ডা বাতাসের বিচরণ। আদর ভ্রু কুচকে অস্বাভাবিক অবাকতা নিয়ে তাকিয়ে থাকার কালেই জামা ঝেড়ে বিরক্ত মুখে টিকলি এসে বসলো চেয়ারে। বাইরে একদম হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। টিকলির বদ্ধ কালো চুলের উপর বিন্দু বিন্দু সাদা উজ্জ্বল পানির আলোড়ন। চুল ঝাড় দিয়ে চোখের চশমাটা ঠিক করে টিকলি অত্যন্ত বিরক্ত কন্ঠে বলল,

‘ওমন হা করে তাকিয়ে রয়েছেন কেনো? এক গ্লাস পানি খাওয়ান। নাকি আপনাদের এখানে পানিও পাওয়া যায়না? থাক, এসব ডাক্তার ফাক্তারের পানিও রোগী রোগী গন্ধ করবে। খাবো না।’

আদর ছোট ছোট চোখে তাকালো। হঠাৎ মনে হলো, চশমা পড়ুয়া টিকলি বেশি সুন্দর। ওই ফোলা রক্তিম ফর্সা গাল দুটোর সাথে কালো চশমায় টিকলিকে মনে হয় অধিক চিন্তাশীল, বিচক্ষণ, মেধাবী, বুদ্ধিসম্পন্ন নারী এবং ভীষণ চতুর। অন্যরকম আলাদা আদুরী টিকলি। আদর নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে তুলে গম্ভীর মুখে বলল,

‘আপমি এখানে কেনো?’

‘উফফ ডাক্তার…সবসময় গম্ভীর মুখে কথা বলবেন না তো।’

আদর নড়েচড়ে বসলো। এরপর বলল, ‘আমরা বাইরে দেখা করতাম…’

আদরের কথা শেষ হওয়ার আগেই টিকলি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

‘বাইরে দেখা করতাম মানে? আমি এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছি। আপনি কি বাইরে রেস্টুরেন্ট কিংবা পার্কে বসে আমার চিকিৎসা করতেন?’

আদর থতমত খেলো। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই উদ্ধিগ্ন গলায় বলল, ‘চিকিৎসা নিতে এসেছেন মানে? মাথা ব্যথা আবার বেড়েছে নাকি? ঠিকমতো ওষুধ খান না ?’

টিকলি গালে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টে বলল, ‘ওসব কিছু না ডাক্তার।’

আদর ভ্রু কুচকে বলে, ‘তবে?’

টিকলি ভিষণ হতাশ কন্ঠে বলে উঠলো, ‘আমি স্বপ্ন দেখি না বাদর সাহেব।’

আদর ভ্রুর কোণা উঠিয়ে তাকালো। টিকলি আবারো দুঃখে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলে উঠলো,

‘আমি স্বপ্ন দেখি না। রাজপুত্র রাগ করে রাজকন্যার স্বপ্নে ধরা দেয় না।’

আদর চেয়ারে হেলান দিলো। মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চেয়ারটাকে দুলাতে দুলাতে গোপনে বাকাঁ হেসে বলল,

‘স্বপ্ন দেখার জন্য ঘুমাতে হয় মিস টিকলি। আমি আপনাকে ঘুমের ওষুধ লিখে দিচ্ছি। খেয়ে ঘুমাবেন। ভালো ঘুম হবে। আর হ্যা হুড়মুড় করে ঢুকে পরেছেন। নিশ্চয়ই ভিজিট দেননি। এখন ভিজিট সহ ৬০০ টাকা জরিমানা দিবেন আমার টাইম ওয়েস্ট এর জন্য।’

‘ডাক্তারগুলো সত্যি কিপটা হয় সাথে আবেগহীন।’

আদর হাসলো। হাতের কলম নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘তো? আপনার বুঝি খুব আবেগ?’

‘অবশ্যই। তা নাহলে এমনি এমনি এসেছি?’

‘নিজে ভুল করেছেন আবার দুদিন ফোন দেননি। তারউপর আবার বড় বড় কথা?’

‘আপনিও তো ফোন দেননি ডাক্তার।’

টিকলির চোখ টলমল করলো। আদর উঠে এসে টিকলির পাশে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ফ্যাচফ্যাচ করে কাদবেন তো চশমা ভেঙে চোখ উঠিয়ে আনবো।’

টিকলি চোখ কুচকে বলল, ‘আপনি আমার ডক্টর আমি আপনার পেসেন্ট। একজন পেসেন্টের সাথে প্রেমিকার মতো বিহেভিয়ার মানায় না।’

‘সারারাত বাসর করে সকালে উষ্ঠা দিয়ে কয়, এই তুমি কে? এই হচ্ছে আপনার দশা।’

আদর গিয়ে আবার নিজের জায়গায় বসলো। টিকলির গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো। ঠোঁট টিপে হেসে দিলো। আদর যে এতোটা বাজে কথা বলতে পারে তা কখনো কল্পনাও করেনি টিকলি। সংকোচ নিয়ে চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, ‘চলুন।’

‘কোথায় যাবো?’

‘দেখছেন না? বাইরে মেঘ করেছে। আজ আমরা বৃষ্টিতে ভিজবো।’

‘আমার কাজ আছে টিকলি।’

‘কোনো কাজ নেই। দুই ঘন্টা ম্যানেজ করাই যায়।’

‘আর আপনি? বাসায় গিয়ে কি বলবেন?’

‘বলে দিবো কিছু একটা।’

‘বৃষ্টিতে ভিজবেন ভালোকথা। যদি ঠান্ডা জ্বর লেগে ঘ্যানঘ্যানানি শুনি তবে আজন্মের বৃষ্টিতে ভেজার স্বাদ মিটিয়ে দিবো।’

‘চলুন তো।’

‘আচ্ছা আপনি ডুকলেন কীভাবে? বাইরে তমাল দাঁড়িয়ে ছিলোনা?’

‘হ্যাঁ তো আপনার এসিস্ট্যান্ট দাঁড়িয়ে ছিলো। আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি বলেছি আমি আপনার স্যারের হবু বউ। এক্ষুনি ডুকতে দেন তা নাহলে আপনার স্যার আপনার জান ধোলাই করবে।’

আদর ঠোঁট কামড়ে হাসলো। বলল, ‘মারাত্মক পাজি হয়ে গেছেন।’

‘প্রেমের প্রভাব।’

________________________________

দিন গড়িয়েছিলো তিনদিন। নিভা আদরদের বাসায়ই ছিলো একয়দিন। প্রতিদিনের রুটিনমাফিক কাজকর্মের সাথে জুড়ে নেওয়া হয়েছিলো নিয়মমাফিক বিকালে ছাদে যাওয়াও। সারাদিন ঘরে বসে থাকতে থাকতে ত্যক্তবিরক্ত নিভা ছাদে গেলেই চনমনা হয়ে উঠে। ছলচ্ছল কিশোরীর মতোন সারাদিন মন ছুটাছুটি করে কখন ছাদে যাওয়ার সময় আসবে। অকারণে বুকটা আনচান আনচান করে রাহুলের সাথে সময় কাটাতে। আজও ব্যতিক্রম হলো না। সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে দেখলো রাহুল আগে থেকে দাঁড়িয়ে আছে। নিভা হেসে পেছন থেকেই বলল,

‘বাহ! আজ আগে?’

রাহুল ঘুরে দাঁড়িয়ে মিষ্টি করে হাসলো। এই কয়েকদিনে নিভার সাথে তার ভালো সখ্যতা হয়েছে। না চাইতেও নিজের মনের অনেক কথাই বলা হয়েছে সাথে এও বুঝেছে এই মেয়েটাকে বিশ্বাস করা যায়। নিজের মনের সব কথা ঢেলে দিয়ে একটু হালকা হওয়া যায়। বয়সের গ্যাপ থাকলেও খুব বন্ধুসুলভ আচরণ ফুটে উঠেছে ওদের মাঝে। বিকেলের অনেকটা সময় ছাদে একসাথে বসে আড্ডা দিতে দিতে খুব গোপনেই ভীষণ পরিচিত হয়ে উঠেছে দুজন। একেক দিন একেকরকম খেজুরে আলাপে মত্ত তারা। হাসিতে মাতোয়ারা দুটি প্রাণ। খোশমেজাজে খোশগল্পে মজে উঠতে না উঠতেই দেখা যায় দু তিন ঘন্টা পার হয়ে গেছে। নিভা কানের পেছনে চুল গুঁজে দিয়ে ছাদের ছোট দেয়ালের উপর চড়ে বসলো। রাহুল একটু আতংকিত গলায় বলল,

‘এই, পড়ে যাবেন। আস্তে।’

নিভা একবার পেছনে দেখে নিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘পড়বো না। আজকে কি টপিক? কি টপিকে গল্প করবো? দুদিনে এতো গল্প করেছি দুজন যে আমার চৌদ্দগুষ্ঠির সব খবর আপনি জানেন।’

রাহুল মাথা দুলিয়ে হাসলো। খানিক বাদেই মুখটা মলিন করে নিভা বলল, ‘কিন্তু আপনার ফ্যামিলি সম্পর্কে তেমন কিছুই বলেন না? শুধু এড়িয়ে যান। এটা কি ঠিক?’

রাহুলের মুখটা গম্ভীর হয়ে এলো। কালো মেঘের কোলে ভাসতে ভাসতে হারিয়ে গেলো সূর্য। চারিদিকে বৃষ্টি আসার আগামবার্তা। ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগতেই লোমকূপ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। রাহুল নিভার পাশে দূরত্ব বজায় রেখে দেয়ালে চড়ে বসলো। নিজের পরিচয়, আপন পরিবারের কথা ভাবলেই নিজেকে খুব নিষ্প্রয়োজনীয় মনে হয় রাহুলের। পরিবার নামক শক্ত দেয়ালটা যেভাবে আকড়ে ধরে সেভাবে রাহুলকে আঁকড়ে ধরেনি উল্টে সরিয়ে দিয়েছে নিজ স্থান থেকে। মেঘেরডাক শুনতে শুনতে রাহুল আকাশের দিকে ইশারা করে বলল,

‘ওই যে দেখছেন, কালো মেঘ। আমার জীবনটা ওই মেঘের মতোই।’

নিভা আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘প্রকৃতি দেখে মনে হয়না একটুপর ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামবে? হয়তো আপনার জীবনেও কেউ বর্ষা নামাতে আসবে।’

রাহুল হেসে বলল, ‘আমি যা চাই তা কোনোদিনও পাই না নিভা।’

নিভা কৌতূহল চোখে তাকালো রাহুলের দিকে। রাহুল উপহাসের ন্যায় হেসে মুখ আকাশের দিক তাক করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো,

‘ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মা নেউটা ছিলাম বুঝলেন? আমার জীবনে আমার মাই সব। বাবা ব্যবসার কাজে এদিক ওদিক থাকতেন তেমন কাছে পাইনি। আমার মা ছিলেন প্রচন্ড ভালো মানুষ। তার মতো নীতিবাদী নারী খুব কম রয়েছে। টিকলি অনেকটা আম্মুর মতোন। ভীষণ আবেগি। আবার টায়রাও খানিকটা আম্মুর মতোন প্রতিবাদী। সবকিছু বেশ ভালোই চলছিলো। সুখময় স্বস্তিতে দিন পার করছিলাম। কিন্তু সুখময় সময়গুলো সবসময় সুখের হয়না। আমার সুখের সময়টাতেও দুঃখ ঘনিয়ে এলো। ওই যে বললাম আমি জীবনে যা চাই তা কখনোই পাইনি। ছোটবেলায় চাইতাম বাবা কেনো সময় দেয়না। সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন আমরা একসাথে থাকতাম। সেই দিনগুলো বাবা-মায়ের মাঝখানে শুয়ে ঘুমাতাম নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান মনে করতাম।’

রাহুল ফিচেল হাসলো। নিভা উদ্বেগ নিয়ে বলল, ‘তারপর? তারপর কি হলো?’

‘তারপর? হঠাৎ একদিন শুনি আমার মায়ের ব্রেন টিউমার ধরা পড়েছে। আমি তখন সবে নাইনে উঠেছি। মায়ের একদম লাস্ট স্টেজ। এক দু মাসের মধ্যেই আমি কিছু বুঝে না উঠতেই আমাকে অন্ধকার জগতে ফেলে দিয়ে মা চলে গেলো। আমি সেদিন প্রথম বাবাকে কাদতে দেখলাম। নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলো। আমার বাবা অনেক চেষ্টা করেছিলো মাকে বাচাঁনোর। কিন্তু পারেনি। আল্লাহর হুকুম কি কেউ ফেরাতে পারে? বিশ্বাস করবেন না কিন্তু আমার মায়ের মৃত্যুর চল্লিশ দিন পার না হতেই আমার বাবা গ্রাম থেকে বিয়ে করে নিয়ে আসে আরেক মহিলাকে। আমার পুরো দুনিয়া যেনো থমকে গেলো। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। ওই দিনটাই যেনো হয়ে উঠলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অভাগা কালোদিন। এরপর থেকেই আমার জীবন হয়ে উঠলো নরকের মতো। হতভাগ্য মানুষ আমি!’

রাহুল বিদ্রুপের মতো হাসি হাসলো নিজের উপর। নিভা অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলল, ‘সব শুনে মনে হয়েছিল আপনার বাবা আপনার মাকে ভালোবাসতেন। কিন্তু চল্লিশ দিন না যেতেই বিয়ে করেছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।’

রাহুল মেকি হাসি দিয়ে বলল, ‘আমিও পারিনি। প্রথম কিছুদিন মহিলার সাথে আমি কোনোরকম কথা বলিনি। কিন্তু দিন গড়াতে গড়াতে একসময় দেখলাম, মহিলাটি বাবার সামনে আমাকে খুব আদর করেন। কিন্তু আড়ালে ভীষণ রকম শাসায়। তার চোখে মুখে ফুটতো হিংসের আগুন। এক বছরের মাথায়ই তাদের আরেকটা মেয়ে হলো রুমকি। আমি তখন ক্লাস টেন। মহিলাটি আমাকে দিয়ে সকল কাজ করাতো। বাচ্চার কাঁথা ধোয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল কাজ। বাচ্চাকে ফিডারে দুধ পর্যন্ত আমি খাইয়ে দিতাম। একটু উনিশ থেকে বিশ হলেই মহিলাটি আমাকে ধরে মারতেন। কেনো মারতেন জানিনা। অকারণেই ভিষণ মারতেন। এরমধ্যে আমার এসএসসি পরীক্ষা ঘনিয়ে এলো। রুমকির তখন প্রায় এক বছর। আমার খুব ভক্ত ছিলো। আমিও ওকে প্রচন্ড আদর করতাম। কিন্তু অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই আলাদা ম্যাচে থাকা শুরু করলাম। তাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেলাম। মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে যেতাম রুমকিকে দেখতে। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত খরচ বাবাই চালিয়েছেন। কিন্তু তারপর থেকে কষ্ট করে না খেয়েদেয়ে থাকলেও তার থেকে এক টাকা নেই না আমি। ‘

নিভার ওই বড় বড় পাপড়ি বিশিষ্ট চোখে পানি জমেছে। রাহুল হেসে দিয়ে বলল বলল, ‘আরে আপনি কাদছেন কেনো?’

নিভা জানে না কেনো কাদছে। কিন্তু একটা ছেলের এতো করুন জীবনকাহিনী শুনলে পাথরও কাদবে। নিভা চোখ মুছে বলল, ‘তো এখন কি প্ল্যান? কি করছেন?’

‘জব খুঁজছি।’

‘বিয়ে করবেন না?’

‘দেখি। ভাবিনি এখনো।’

হালকা হেসে কথাগুলো বলে রাহুল ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে খুব ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,

‘আমাকে একটু ফুফির বাসায় যেতে হবে। এমনিতেও অনেক দেরি হয়ে গেছে।’

‘কেনো?’

রুমকি এসেছে। ওকে একটু দেখতে যাবো। মেয়েটা ভাইয়া বলতেই অজ্ঞান।’

______________________________

ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হুট খোলা রিক্সায় ঘোরা হলো ঢাকা শহর। কর্দমাক্ত রাস্তাতে পাশাপাশি হাটাও হলো। ভিজে জুবুথুবু হয়ে একে অপরকে লুকিয়ে ক্যামেরাবন্দী করাও হলো। খোলা আকাশের নিচে ফাঁকা রাস্তায় ইচ্ছেমতোন দু পাশে দু হাত মেলে দিয়ে ভিজা হলো। ঠোঁট মেলে হাসিতে হাসিতে আত্মহারা হয়ে উঠলো দুই মানব মানবী। তৃপ্তি করে ভিজা হলো প্রাণোচ্ছল কিশোর-কিশোরীর ন্যায়। বৃষ্টিভেজা প্রেমছন্দে মাতোয়ারা শহরজুড়ে ওরা যেনো মুক্ত প্রেমপাখি। আদর টিকলিকে এগিয়ে দিলো। বাড়ির খানিকটা দূরে থেকেই টিকলি রিক্সা থেকে নেমে গেলো। আদর পেছন ডেকে বলল,

‘স্বাদ আহ্লাদ মিটেছে?’

টিকলি ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে দিয়ে বলল, ‘ইশশ ডাক্তার এমন স্বাদ আহ্লাদ প্রতিদিন মিটালেই আপনি হয়ে যাবেন পৃথিবীর সেরা প্রেমিক।’

‘তাই না? ঠান্ডা লাগলে পরে দেখাবো মজা। এবার তাড়াতাড়ি বাসায় যান। গিয়েই আমাকে কল করবেন।’

,

কাক ভেজা হয়ে বাসায় ডুকতেই দেখা গেলো বসার ঘরে সেইভাবেই সবাই বসে আছে সাথে শুধু রাহুল যোগ হয়েছে। রুমকিকে কোলে নিয়ে বসে আছে সে। জামিলুর রেজা ঘাড় ঘুরিয়ে টিকলিকে দেখে বললেন,

‘ঘরে গিয়ে তাড়াতাড়ি জামা পাল্টাও।’

শায়লা আক্তার তোয়ালে নিয়ে সেখানেই হাজির হয়ে গেছেন। মেয়ের মাথা মুছে দিয়ে বললেন, ‘জ্বর আসলে হাড্ডি এক জায়গায় করবো মাংস এক জায়গায় করবো।’

টিকলি মাথা নিচু করে চলে যেতে নিলেই আকিদা হক চুড়েল গলায় বললেন, ‘তা এই বৃষ্টির মধ্যে ওতো জরুরি ভাবে বের হওয়ারই কি দরকার ছিলো? আর এতো বৃষ্টিতে ভিজে আসারই বা কি দরকার ছিলো? বৃষ্টি কমলে আসতে পারলে না?’

আকিদা হকের কথা তেমন পাত্তা দিলো না টিকলি। রাহুল ব্যস্ত কণ্ঠে বলল, ‘যা যা। তাড়াতাড়ি ঘরে যা। এমনভাবে ভিজেছিস যেনো মনে হচ্ছে ইচ্ছা করে ভিজেছিস।’

টিকলি ভীত চোখে তাকিয়ে বিরবির করে বলল, ‘তুমি এতো চালাক না হলেও পারতা রাহুল ভাই।’

সকলের কথা শুনে ঘর থেকে নিচে নেমে এসেছে টায়রা। টিকলিকে দেখে বলল, ‘হায়হায় এমন ভাবে ভিজেছিস কেনো? এমনি তোর ঠান্ডার সমস্যা।’

আকিদা হক বললেন, ‘বাইরে গিয়েছিলে বুঝি বৃষ্টিতে ভিজতেই?’

টায়রা মুখ টানা মেরে বলল, ‘এতো সুন্দর জামা পড়ে সাজুগুজু করে কেউ নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে কাদায় গড়াগড়ি খেয়ে ভিজতে যাবে না? এটা আপনার থেকে ভালো আর কে জানে মামীজান। আমি তো শুনেছি আপনার ওই বয়স্ক স্কিন নষ্ট হয়ে যাবে বলে আপনি রান্নার ঘরে উঁকিও দেন না।’

রাহুল ঠোঁট টিপে হেসে দিলো। আকিদা হক রুহুল হকের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চাপলেন। নিশ্চয়ই এসব রুহুল হকই বলেছেন। তাছাড়া আর কে বলবে? পরমুহূর্তেই আকিদা হক টায়রার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললেন,

‘এই এক মিনিট টায়রা, তুমি কি বললে? বয়স্ক স্কিন? আমার স্কিন বয়স্ক? আপা আপনার মেয়ের কথা শুনেছেন? টিকলির আগে এরই বিয়ে দিতে হবে আপা।’

‘আমার মনে হয় আমার আগে আপনাকে বিয়ে দিতে হবে। যেভাবে বিয়ে বিয়ে করছেন। মনে হচ্ছে, নতুন করে কবুল বলার স্বাদ জেগেছে।’

কথাগুলো বলেই টায়রা দৌড়ে টিকলিকে নিয়ে উপরে চলে গেলো। ঘরের দরজাও আটকিয়ে দিলো।

চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here