#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
৩৯.
নিশুতি রাতে নেই কোনো কোলাহল। রাস্তায় নেই কোনো যানবাহন। দূর দূরান্তেও নেই মানুষের পদচ্ছাপ। নেই অযথা মানুষের গিজগিজ। দম আটকানো ফাঁকা চারিপাশে। সোডিয়ামের টিমটিমে এক প্রকার আলোয় মুখচ্ছবি অস্পষ্ট। রাত তখন বাজে বারোটা। গলির মুখের মোড়ে দাড়াতেই দেখতে পেলো আদর আর্দ্র গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যস্ত পায়ে ঢিপঢিপ বুকে এগিয়ে যেতেই আদর বিরক্ত মুখে বলল,
‘আধ ঘন্টা লেট।’
টিকলি মাথার স্কাপ টাকে আরেকটু টেনে নিলো। মুখের মাস্ক ঠিক করে এদিক ওদিক চঞ্চল চোখে তাকিয়ে বলল, ‘গাড়িতে উঠুন। এখানে থাকা সেফ না। কে কোথা থেকে দেখে ফেলে।’
আদর ভাবলেশহীন ভাবে ক্লান্ত হয়ে গাড়ির সাথে শরীর এলিয়ে দিয়ে টিকলির সারা মুখে চোখ বুলালো। সেই প্রথমদিনের মতো মুখে মাস্ক চোখে লেন্স মাথায় স্কাপ কাধে ঝুলানো ব্যাগ। একদম সেই প্রথম দিনের টিকলি। আদর হঠাৎ বলল,
‘মিস. পনেরো দিনের প্রেগন্যান্ট মহিলা আপনার বেবির এখন কত মাস চলে? আমার হিসেব নেই।’
টিকলি বড় বড় চোখ করে আদরের দিকে তাকিয়ে নিজের পেটের উপর হাত রাখলো। একবার পেটের দিকে তাকিয়ে আরেকবার আদরের দিকে তাকালো। আদরের বাহুতে একটা শক্ত থাপ্পড় মেরে বলল,
‘ফাইযলামি করেন?’
আদর বোকা বোকা চেহারায় বলল, ‘ফাইযলামি করলাম? আরে আপনি তো বলেছিলেন আপনার বয়ফ্রেন্ড এক মাস আগে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে আর আপনি পনেরো দিনের প্রেগন্যান্ট।’
আদর হেসে দিয়ে আবার বলল, ‘সিরিয়াসলি মানুষ কতটা বোকা গাধা হলে এই কথা বলতে পারে।’
‘বাদর সাহেব, খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।’
আদর ঠোঁট কামড়ে হাসলো। টিকলি ফুসে উঠে বলল, ‘আপনি যান। আমি আপনার সাথে কোত্থাও যাবো না। অসভ্য লোক একটা।’
আদর আবার হাসলো মাথা নাড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আর্দ্রর চিৎকার শোনা গেলো, ‘ভাইয়া….’
আদর চমকে উঠলো। আকস্মিক চিৎকারে টিকলি আদরের হাত খামচে ধরলো। দাঁত কিড়িমিড়ি করে আদর বলল, ‘ঠাটিয়ে দিবো এক চড়।’
আর্দ্রর কোনো হেলদোল হলো না। ও টায়রার দিক তাক করে আঙ্গুল তুলে বলল, ‘এই শাকচুন্নিও আমাদের সাথে যাবে? তুমি তো বলোনি।’
টায়রা গরম চোখে তাকালো। তেজি গলায় বলল, ‘কে শাকচুন্নি? আপনার বউ শাকচুন্নি। ফালতু লোক একটা।’
আদর বিরক্ত হয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল, ‘সারাটাদিন শুধু ঝগড়া ঝগড়া ঝগড়া। তুই ভাবলি কি করে তোকে আনলে টায়রাকে আনবো না?’
আর্দ্র কাদো কাদো চোখে তাকিয়ে বলল, ‘বিয়ে না করতেই পর হয়ে যাচ্ছো? ভাইয়ের থেকে শালী আপন?’
আদর ধমকে বলল, ‘ তুই উঠবি?’
আর্দ্র সামনের সিটে বসতে গেলে আদর আবারো খেকিয়ে উঠলো, ‘এখানে বসছিস কেনো? এখানে টিকলি বসবে।’
‘তো আমি কোথায় বসবো?’
‘পেছনে যা।’
তৎক্ষণাৎ টায়রা আন্দোলনের স্বরে বলে উঠলো, ‘ইম্পসিবল। আমি মরে গেলেও এই মদনের সাথে বসবো না।’
আর্দ্র গলা উঁচিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই টিকলি সামনের সিটে বসে পরলো। রেগে বলল, ‘এই গাড়ি স্টার্ট দেন তো। দুটোকেই রেখে যাই।’
টায়রা ফুস ফুস করতে করতে পেছনের সিটে বসে বলল, ‘তোরে আমি আর কোনোদিন হেল্প করমু না। বোন নামের কলংক তুই।’
টিকলি টায়রার কথা পাত্তা না দিয়ে আর্দ্রকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ভাইয়া, বাসায় কি কাউকে বলে আসছেন?’
‘হুম নিভাকে বলছি।’
‘ওকে নিয়ে আসলেই তো পারতেন।’
আদর উত্তর দিলো, ‘এখানে সবাই কাপল কাপল ঘুরবে। মাঝখানে ও একা এসে কি করবে?’
অনতিবিলম্বে তক্ষুণি আর্দ্র টায়রা ক্ষিপ্ততা সহকারে সমস্বরে বলল, ‘কিসের কাপল? শুধু তোমরা দুজন কাপল।’
টায়রা আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে নাক ছিটকে বলল, ‘এই ডেমরা হবে আমার কাপল? ছি!’
টায়রার রিয়েকশন দেখে আর্দ্র থতমত খেয়ে বলল, ‘এই ঢেড়ি হবে আমার কাপল? থু!’
‘অসহ্য, আমি।’
‘অতিষ্ট, আমি।’
টিকলি কানে হাত রেখে আদরকে বলল, ‘গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে দুটোকে ফেলে দিন তো।’
______________________________
সকাল সকাল মনোয়ারা খান বিরবির করতে করতে গেলেন আদরের ঘরে। ছেলের তো এবার বিয়ে করা ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর কতদিন এভাবে বসে থাকবে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কি ভালো মেয়ে পাবে? এদিকে আজিম খান প্রত্যেক দিন এ বিষয় নিয়ে তার সাথে রাগারাগি করে। মনোয়ারা খানের শরীর জ্বলে যায়। সে বুঝে না, ছেলের বিয়ে নিয়ে বাপের এতো তড়জড় কিসের?
আদরের ঘরে গিয়ে আদরকে না পেয়ে মনোয়ারা খান ভাবলেন হয়তো ছেলে তার হাসপাতালে চলে গেছে। তবুও বড় ছেলের খোঁজে ছোট ছেলের ঘরে গেলেন। গিয়ে দেখলেন ছোট ছেলেও ঘরে নেই। মনোয়ারা খানের ভ্রু জোড়া স্বাভাবিক ভাবে কুচকে গেলো। এতো সকালে দু ভাই ঘরে নেই। ব্যাপারটা তো সহজ কথা নয়। ভিষণ রকম শরীর কাঁপা নিয়ে তিনি ঘর ছাড়লেন। মা মনটা অকারণেই ভাবতে বসলো, ‘দু ভাই মিলে কি আবার গণ্ডগোল পাকালো? হায় খোদা! এবার যদি কিছু হয় আমি ওর বাপকে সামাল দিবো কীভাবে?’
মনোয়ারা খান নিভার ঘরে গেলো। নিভার কাচা ঘুম ভাঙিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘মা, আদর আর্দ্র কোথায় জানিস?’
নিভার ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে বলে ফেলল, ‘ঘুরতে গেছে।’
মনোয়ারা খানের কপাল কুচকে গেলো। ঘুরতে গেছে তার মানে কি দুটো মিলে আবার পালালো? ঘুরতে গেলো তো বলে যেতো। কিন্তু পালিয়ে যাবার মতো তো এবার কিছু হয়নি। মনোয়ারা খান কপাল কুচকে প্রশ্ন করলেন, ‘কোথায় গেছে?’
নিভা বলতে যাবে তার আগেই মস্তিষ্কে ঢপ খেলো। ঘুম ছুটে পালালো। বিরাট বড় যে একটা ঝামেলা পাকিয়ে ফেলল তা বুঝে আসতেই ঢোক গিলল। ব্যস্ত কণ্ঠে তোতলানো স্বরে বলল, ‘আমি জানি না। জানি না তো ওরা কোথায়। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছিলাম তো তাই উল্টো পালটা বলে ফেলছি।’
মনোয়ারা খান জহুরি নজরে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ এরপর আর কোনো কথা বললেন না। কপালে চিন্তিত কয়েকটি ভাঁজ ফেলে উঠে চলে গেলেন। নিভা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। জানালা গলিয়ে বাইরে তাকাতেই মনের মেঘগুলো হঠাৎ ডুকরে উঠলো। কাল সারারাত ঘুমানো হয়নি। ফজরের নামাজ পড়ে একবারে ঘুমোতে গেছে। এখন হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠার ফলস্বরূপে মাথায় এক ধরনের চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। নিভা আবার শুয়ে পড়লো।
,
শায়লা আক্তার হাত খোপা করতে করতে মেয়েদের ঘরের দরজার সামনে গেলেন। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। পুরো রুমে চোখ বুলিয়েও কোথাও মেয়েদের অস্তিত্ব পাওয়া গেলো না। তার শরীর ধরধর করে ঘামা শুরু করলো। হাত দিয়ে মুখ হাপড়ে মুছলেন। সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও মেয়েদের পেলেন না। নিজ ঘরে গিয়ে তিনি স্বামীকে খবর লাগালেন। জামিলুর রেজা ব্যস্ত পায়ে মেয়েদের ঘরে গেলেন। ঘরে মেয়েদের না পেয়ে বললেন,
‘সারা বাড়ি খুঁজেছো?’
শায়লা আক্তার মুখে আচঁল দিয়ে কেদে উঠলেন। মাথা ঝাকিয়ে বললেন, ‘হুম’
জামিলুর রেজা চতুর চোখে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখতে পেলেন আলমারি কিঞ্চিৎ খোলা। আলমারির
হাতল ধরে টেনে পুরোপুরি খুলতেই দেখলেন মেয়েদের ব্যাগ নেই। সাথে বেশকিছু জামাকাপড়ও নেই। জামিলুর রেজা চোখ পাকিয়ে শায়লা আক্তারকে দেখে দাঁত কিড়িমিড়ি করে বললেন,
‘কেমন মা তুমি? মেয়েদের খেয়াল রাখতে পারো না? দু’বার মেয়েরা পালিয়ে গেলো।’
গম্ভীর লাল মুখে চটপট পায়ে ঘর ছাড়লেন জামিলুর রেজা। নিচে গিয়ে বিষন্ন মুখে সকালের নাস্তা তৈরি করলেন শায়লা আক্তার। একটু পর জমকালো শাড়ি পড়ে নিচে নেমে এলেন আকিদা হক। মাথায় ভেজা তোয়ালে বাধা। শায়লা আক্তার একবার দেখেই চোখ ফিরিয়ে নিলেন। আকিদা হক টেবিলে বসতে বসতে বললেন,
‘টিকলি টায়রা ঘুম থেকে উঠে নি আপা?’
শায়লা আক্তার জবাব দিলেন না। আকিদা হক ভ্রু কুচকে তাকাতেই শায়লা আক্তার নড়েচড়ে উঠলেন। এই মহিলা তিল কে তালের রস বানিয়ে ছাড়ে। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
‘ওই তো….ঘুরতে গেছে ওরা। বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে গেছে।’
‘কখন গেলো? এই এতো সকালে ঘুরতে গেলো? কোথায় গেছে আপা?’
শায়লা আক্তার বিরক্ত হলেন। এতো প্রশ্নের কি দরকার? গমগমে মুখে শায়লা আক্তার উত্তর দিলেন,
‘এইতো আশেপাশেই গেছে।’
নিচে নেমে এলেন রুহুল হক। টেবিলের কাছাকাছি আসতেই স্ত্রীর বেশভূষা দেখে ভ্রু কুচকালেন। মুখটাকে ভীষণ রকম তিক্ততায় ভরিয়ে তুলে চাপা গলায় বললেন,
‘তোমাকে তো আমি গোসল করতে দেখলাম না।’
আকিদা হক জবাব দিলেন না। টেবিল থেকে একটা পেয়ারা নিয়ে খেতে লাগলেন মনের সুখে। রুহুল হক চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন,
‘একটু তো লজ্জা সরম করো। সাতসকালে তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় প্যাচিয়ে নিচে নেমে এসেছো নাটক দেখাতে? তুমি কি নতুন বউ? বুইড়া বয়সে ভীমরতি। এসব ক্রিমিনালগিরি ভাব ছাড়ো। তা না হলে লাত্থি মেরে ওই ফুটা টিনের চালের বাপের বাড়ি দিয়ে আসবো।’
আকিদা হক রুহুল হকের কথা শুনে সাপের ন্যায় ফুসে উঠলেন। ক্যাট ক্যাট করে বললেন, ‘বোনের বাড়ি এসে কথা ফুটেছে না?’
‘তোমার কথা বন্ধ করার ব্যবস্থা করো না। জিহবায় আগুন লাগিয়ে দিবো।’
আকিদা হক বড় বড় পা ফেলে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরটায় চলে গেলেন। রুমকিকে ঘুম থেকে টেনে তুললেন। উঠতে না চাইলে দু চারটা চর থাপ্পড়ও লাগালেন।
____________________________
ওরা এসেছে গাজীপুর ফাউগান ইকো রিসোর্টে। শুনশান জনমানবহীন রাস্তা পেয়ে গাড়ি একটানে দেড় ঘণ্টার মাঝেই এসে পড়েছে এই রিসোর্টে। আদর আগে থেকেই রুম বুক করে রেখেছিলো। রিসোর্টে পৌঁছেই টিকলি টায়রা এক রুমে চলে গেলো। আদর আর্দ্র আরেক রুমে গেলো। খুব সকালে আদর টিকলিকে ফোন করে জাগালো। ফোনের শব্দে টায়রাও উঠে পড়েছে। ঘুমু ঘুমু চোখে টিকলি কান থেকে ফোন রাখতেই টায়রা বলল,
‘কে ফোন করেছিলো?’
‘উনি।’
‘কি বলল?’
‘ফ্রেশ হয়ে বাইরে যেতে বলল দুজনকেই।’
ঘড়িতে দেখলো সাতটা বাজে। টায়রা ক্লান্ত গলায় বলল, ‘এতো সকালে?’
‘হুম।’ টিকলি চোখ কচলিয়ে ফোন সামনে ধরলো। ধরতেই অবাক হয়ে দেখলো মায়ের আট টা কল। টিকলি ভয়ার্ত গলায় বলল,
‘আম্মু ফোন দিছিলো।’
টায়রা ঘাড়ে হাত রেখে হাই তুলছিল। টিকলির কথা শুনে হাই তুলা মুখটা হা হয়েই রইল। বিস্ফোরিত নয়ন দুটো মেলে দিয়ে বলল,
‘তুই এইবারেও ফোন খোলা রাখছস?’
টায়রা বিরক্তে চোখ মুখ কুচকে আবার বলল, ‘মানে, মানুষ এতো বলদও হয়? এক ভুল বারবার করস।’
,
ফাউগান ইকো রিসোর্টটা গাজীপুরের বেশ একটু গভীরে। বন জঙ্গলের মাঝে। দু’পাশে গজারি গাছের বন। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা। রিসোর্টের এক পাশে আছে মাছ ধরার জন্য পুকুর। একপাশে সুইমিংপুল। একপাশে টিনের ঘর। কেউ যদি চায় তবে টিনের ঘরেও থাকতে পারে গ্রামীণ পরিবেশ উপভোগের উদ্দেশ্যে। রিসোর্টে ভেতরে বাইরে হরেকরকম ফলের গাছ। এক পাশে খোলা সবুজ মাঠ। আদর আর টিকলি পাশাপাশি হাটছিলো। হালকা এক ফোটা দু ফোটা বৃষ্টি। আদর প্যান্টের পকেটে হাত ডুকিয়ে হাটতে হাটতে বলল,
‘মাথায় উড়না দিন।’
টিকলি বিনাবাক্যে মাথায় উড়না টেনে নিলো। আদর হাটতে হাটতেই প্রশ্ন করলো, ‘বাসা থেকে কেউ ফোন দিয়েছিলো?’
‘হুম মা দিয়েছিলো। আপনার?’
‘হুম। মা ফোন দিয়েছিলো।’
‘ধরেছিলেন?’
‘হুম। বলেছি, ঢাকার আশেপাশে দুদিনের জন্য এসেছি।’
টিকলি কথা বাড়ালো না। নির্বাকে মন খারাপে হেটে যেতেই আদর বলল, ‘বিষয়টা কি আপনার বাবা বেশি বেশি করছে না?’
টিকলি ভ্রু কুচকে তাকালো। আদর বলল, ‘না আমার বাবারও দোষ আছে। কিন্তু আপনার বাবা তো ব্যাপারটা শুনতেই চাইছে না। আমাকে ভুলে যেতে বলছে আবার বাড়ি থেকে বের হওয়াও বন্ধ করে দিচ্ছে।’
টিকলি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘নাথিং টু ছে।’
‘বাস্তব কথার কোনো উত্তর থাকে না।’
টিকল ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে বলল, ‘আপনার কাছে যেমন আপনার ফ্যামিলির দোষ নেই। তেমনি আমার কাছেও আমার ফ্যামিলির দোষ নেই। আমার বাবার রিয়েক্ট করা স্বাভাবিক। কেউ নিশ্চয়ই তার মেয়ে সম্পর্কে খারাপ কথা শুনতে চাইবে না।’
আদর আর কথা বাড়ালো না। নিশ্চুপ কদম ফেলতে ফেলতে খুব দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেলল। টিকলি বলল,
‘ আমরা হঠাৎ এখানে কেনো এলাম?’
গম্ভীর মুখে আদর জবাব দিলো, ‘আপনি তো বলেন আমি আপনাকে সময় দেই না। তাই কালকে সুযোগ পেয়ে দুদিনের ছুটি নিয়েছিলাম। পরে রাতে টায়রার কাছ থেকে সব শুনে মাথায় জেদ উঠে গেলো।’
টিকলি আবারো ভ্রু কুচকে তাকালো। হাটা থামিয়ে দিলো। আদরও থেমে দাঁড়িয়ে খুব নিঃসহায় গলায় বলল, ‘আপনার থেকে আমি আলাদা থাকতে পারবো না।’
টিকলি স্তম্ভিত হয়ে শুনলো। কানে যেনো তালা লেগে গেলো। আদর আবারো হাটা ধরলো। মুচকি হেসে টিকলি দৌড়ে গিয়ে আদরের হাত ধরলো।
,
জামিলুর রেজা রাগে থরথর করে কাঁপছেন। আকিদা হক আর রুহুল হক চলে গেছেন ঘন্টা খানেক হলো। এখন বাজে সকাল দশটা। ঘরের মেঝেতে রাগের সাইনবোর্ড হিসেবে কিছু ফুলদানি ভেঙে পরে আছে। জামিলুর রেজা কাউকে ফোন লাগালেন। ওপাশে ব্যক্তি ফোন ধরতেই তিনি হুঙ্কার ছেড়ে বললেন,
‘নিজের ছেলেকে সামলে রাখতে পারেন না? কেমন কুলাঙ্গার ছেলের জন্ম দিয়েছেন মশাই?’
আজিম খান খেপে গেলেন। অনেক দিন বাদে জামিলুর রেজার কল পেয়ে তার ভ্রু জোড়া নিতান্তই বিরক্তিতে কুচকে উঠেছিলো। তারউপর স্নেহের ছেলের সম্পর্কে এমন কথা শুনে মাথায় রক্ত চড়ে গেলো।
‘মুখ সামলে কথা বলুন।’
‘কিসের মুখ সামলে কথা বলবো? আমার মেয়েকে নিয়ে আপনার ছেলে পালিয়েছে। এই আপনার ডাক্তার ছেলে? ডাক্তারের চরিত্র এমন হয়?’
আজিম খান অবাক হলেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রীর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালেন। তবুও ছেলের পক্ষ হয়ে বললেন,
‘আপনার মেয়ে যেতে না চাইলে তো আর আমার ছেলে ধরে বেধে নিয়ে যায়নি। নিজের মেয়ের চরিত্র আগে ঠিক করুন।’
জামিলুর রেজা গলা ফাটানো চিৎকার দিলেন,
‘আজিম খান… আপনার মুখ আমি বটি দিয়ে কেটে ফেলবো সাথে আপনার ছেলেকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে কুত্তাকে খাওয়াবো।’
‘আগে নিজের মেয়ের চরিত্র ঠিক করুন। তারপর কোপাতে আসবেন। প্রেগন্যান্ট মেয়েকে তো গছিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।’
জামিলুর রেজা হাত মুঠো করে রাগ সংবরনের চেষ্টা করলেন। দাঁত কিড়িমিড়ি করে বললেন, ‘বানোয়াট কথা বলবেন না।’
‘কিসের বানোয়াট? আপনার মেয়ে নিজে আমার ছেলেকে বলেছিলো, সে পনেরো দিনের প্রেগন্যান্ট। এখন আবার আমার ছেলের সাথেই ফষ্টিনষ্টি করছে।’
জামিলুর রেজা হতবাক হয়ে গেলেন। টিকলি বলেছিলো? তবে কি বিয়ে করতে চায়নি দেখেই এই মিথ্যে পথের অবলম্বন? জামিলুর রেজা হুঙ্কার ছেড়ে আবার বললেন,
‘আপনি মূর্খ নাকি? পনেরো দিনের কেউ প্রেগন্যান্ট হয়? পড়ালেখা করেন নাই? বাপ-দাদা স্কুলে পাঠায় নাই? যত্তসব অশিক্ষিত। আপনার মতো বাড়িতে আমি মেয়ে বিয়ে দেইনি বলে নিজেকে সৌভাগ্য মনে হচ্ছে। আল্লাহ চোখ খুলে দিয়েছে। খুব শীঘ্রই আমার মেয়ের বিয়ে দিবো আমি।’
জামিলুর রেজা ফোন কাটলেন। আজিম খান জোরে জোরে শ্বাস ফেলে মনোয়ারা খানের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমার ছেলেরা আমার মান সম্মান কিচ্ছু রাখলো না।’
জামিলুর রেজা শায়লা আক্তারের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললেন, ‘পনেরো দিনের মধ্যে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো।’
চলবে❤️
আজকেও কত্ত বড় করে দিলাম! আমি অবাক!