ভালোবাসার_ফোড়ন পর্ব_২৮ ( #বোর্নাস_পার্ট )
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
ছেলেটাকে মারতে মারতে স্টেজে’র সামনে নিয়ে আসে আহিয়ান। ছেলেটাকে অনেক মারছেন উনি। ছেলেটার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে তবুও মারছেন উনি। উনাকে দেখে আমি মারাত্মক ভয় পেয়ে গেছি। টেবিলের সাথে ঠেসে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি। ইতি আমার পাশে দাঁড়ানো।
ছেলেটার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। আকাশ, নাহান, আনাফ ভাইয়া আসে উনাকে থামাতে। কিন্তু উনি থামতেই চাইছেন না। টিনা আর নিতি এসে ছেলেটাকে ধরে। আকাশ আহিয়ান কে একটা ধাক্কা মারে। উনি কিছুক্ষণ’র জন্য থামে। আকাশ ভাইয়া আহিয়ান এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? উনি এক দৃষ্টিতে সেই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটাকে আজ মেরে ফেলবে বলে মনে হচ্ছে। আকাশ ভাইয়া আরো কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পর উনি দাঁতে দাঁত চেপে বলেন…
– নিহা শাড়ি’র আঁচল ধরেছে!
আকাশ ভাইয়া আহিয়ান এর কথা শুনে হতবাক হয়ে যায়। শুধু আকাশ ভাইয়া না অল মোস্ট সবাই। সবার আগ্রহ এখন আমি। আকাশ ভাইয়া বলেন..
– আহি তুই আগে শান্ত হ আমি পুলিশ কে ফোন করছি উনি এই ব্যাপার টা দেখবে। তুই এসবে জরিয়ে যাস না।
– জড়াবো না মানে! কি বলছিস তুই। তুই বুঝতে পারছিস ওর সাহস কতো ও নিহা’র সাথে বেয়াদবি করেছে। নোংরামি করার চেষ্টা করেছে আর তুই আমাকে শান্ত হতে বলছিস। ( চেঁচিয়ে )
– আহি তুই…
এর মধ্যে নিতি বলে উঠে…
– আহি তুই এটা কিভাবে বলতে পারিস শুধু ওর দোষ!
নিতি কথায় সবাই এখন তাকিয়ে আছে নিতি’র দিকে। এমনকি আমিও। আহিয়ান তাকিয়ে আছে নিতি’র দিকে আকাশ ভাইয়া বলে ওঠে..
– নিতি তুই কি বলছিস?
নিতি রেগে আহিয়ান এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে…
– ভুল কিছু বললাম। বল আমায়! একটা ছেলে একটা মেয়ের কাছে তখন’ই যেতে পারে যখন মেয়েটা যেতে দেয় তাই নয় কি!
উনি শান্ত গলায় বললেন…
– নিতি যা জানিস না সেই ব্যাপারে কথা বলিস নাহ!
নিতি বলতে শুরু করে…
– ওহ্ আচ্ছা! তাহলে তুই বলতে আমি অন্ধ, ইনফেক্ট আমরা সবাই অন্ধ তাই কি! আচ্ছা একটা কথা বল নিহা তো বিবাহিত। তাহলে ওর হাসবেন্ড কোথায়? সবসময় তো দেখি তোর সাথে চিপকে থাকে এমনকি একটু আগে তোর সাথে কিভাবে নাচছিল তাও সবাই দেখেছে। তাহলে… এই ছেলেটাকে যে ও নিজে উসিলায় নিয়ে যায় নি তুই বলতে পারবি আমায় সেটা। বল! আহি একটা চরিত্রহীন মেয়ের পাশে তুই এভাবে দাঁড়ালি কিভাবে বল! ওর কি আদৌও বিয়ে হয়েছে কি না এতে আমার অনেক সন্দেহ আছে। আর এছাড়াও এই মেয়ের চরিত্র নিয়ে আমার আগে থেকেই অনেক সন্দেহ ছিল। আমি বলছি আহি এই মেয়ে তোকে ফাঁসাচ্ছে আর কিছু না। তোকে ভুলভাল বুঝিয়ে ওকে মার খাইয়েছে ব্যস।
নিতি কথা শুনে সবাই থমকে আছে। আহিয়ান চুপ হয়ে আছে। আমার চোখে পানি আর থামছে না। আমি এক পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছি। সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে। সবাই আমাকে নিয়ে কথা বলাবলি করছে। ইতি কিছু বলতে চাইলে নিতি তাকে থামিয়ে আবার বলতে থাকে….
– ইতি প্লিজ তুমি কিছু বলো না। তুমি তোমার ফ্রেন্ড এর সার্পোট টানবে এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আহি তুই… তুই কেন এই মেয়ের সার্পোট করিস বল। কি হয় এই মেয়ে তোর! চিনিস তো এই কয়েকদিন! এর মধ্যে এই মেয়ে তোর মাথায় কি ঢুকালো যে এই মেয়ের প্রতি তোর এতো টান বল! কি হয় এই মেয়ে তোর!
আকাশ ভাইয়া বলে…
– নিতি বন্ধ কর এখন! অনেক বলেছিস!
– অনেক বলেছি, হ্যাঁ তা তো বলেছি। বলবো না কেন বল? এই মেয়েটা কি বাকি রেখেছে বলতে।
আহিয়ান শান্ত গলায় বলে উঠে…
– নিতি এই মেয়ে এই মেয়ে বলা বন্ধ কর!
– আহি তুই আবার এই মেয়ের সার্পোট টানছিস!
– হ্যাঁ টানছি!
– কিন্তু কেন? কি হয় এই মেয়ে তোর?
হুট করেই আহিয়ান এসে আমার হাত ধরে নিতি’র সামনে নিয়ে যায়। অতঃপর সবার সামনে আমার গালে হাত রেখে চোখের পানি মুছিয়ে দেন। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। উনি চোখের ইশারায় আশ্বাস। সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নিতি কিছু বলতে যাবে তখন আহিয়ান বলে উঠে…
– এই মেয়েটা না ও, ওর নাম নিহারিকা নিহা আহিয়ান চৌধুরী!
নিতি বলে উঠে…
– আহি…
নিতি’র সাথে সাথে সবাই অবাক। আহিয়ান আমার হাত শক্ত করে ধরে নিতি’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে…
– হুম ঠিক শুনেছিস, নিহারিকা নিহা আহিয়ান চৌধুরী, মানে আমার বিবাহিত বউ। আমার বউ বলেই ওর সার্পোট করি আমি, সবসময় ওর পাশে থাকি। তুই বললি না হাসবেন্ড এর উচিত পাশে থাকা, তাই আমি থাকি ওর পাশে। বিশ্বাস করি ওকে। আমি জানি আমার স্ত্রী চরিত্র সম্পর্কে তাও খুব ভালো করে। এই সম্পর্কে তোর থেকে আমাকে জানাতে হবে না। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার।
আমি একবার নিতি’র দিকে তাকালাম। ওর চোখে পানি ছল ছল করছিল। পরে যেতে নিচ্ছিল তখন টিনা এসে নিতি কে ধরল। টিনা বলে উঠে…
– আহি তুই এটা কিভাবে করতে পারিস? এই মেয়েটাকে তুই কিভাবে বিয়ে করতে পারিস?
আহিয়ান শান্ত গলায় বলে…
– ওর নাম কিছুক্ষণ আগেই আমি বলেছি। এতো তাড়াতাড়ি ভুলার কথা নয়। যাই হোক! এখানে থাকার আর কোনো ইচ্ছা নেই আমার। নিহা চলো!
বলেই আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলেন। আকাশ ভাইয়া আর ইতি আসছিল আমাদের পিছু পিছু। আনিকা এসে আহিয়ান এর সামনে দাঁড়ায়। আনিকা বলে ওঠে…
– এভাবে চলে যাবি, আহি আজ আমার গায়ে হলুদ তুই চলে যাবি এভাবে…
আহিয়ান আমার হাত ছেড়ে কিঞ্চিত হেসে আনিকা’র গালে হাত রেখে বলে…
– আজ তোর গায়ে হলুদ খুব ইনজয় করে হুম।
বলেই আমার হাত ধরে উনি বের হয়ে আসে। আনিকা বেশ কয়েকবার ডাকে কিন্তু উনি পিছনে ফিরে তাকান না। আকাশ ভাইয়া আর ইতি কে ওখানে থাকতে বলে গাড়িতে আমাকে উঠিয়ে দেন।
আমি গাড়িতে বসে কাঁদছিলাম কিন্তু উনি ধমক দেওয়ায় চুপ হয়ে গেলাম। কোনো কথা হয় নি গাড়িতে। উনি আমাকে নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসেন। গাড়ি থেকে নেমে আমার হাত ধরে রুমে নিয়ে এসে বলে “চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি আসছি” বলেই বাইরে চলে যান। আমি চুপচাপ চেঞ্জ করে বেলকনিতে এসে দাঁড়াই। আমার খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। চোখ বন্ধ করতেই নিতি প্রত্যেকটা কথা আমার কানে বাজছিলো। চোখ থেকেই আনমনে’ই পানি পড়তে থাকে। হঠাৎ উনি বলে উঠে…
– তোমার চোখের পানির কি দাম নেই যখন তখন কেঁদে দাও!
– চুপ করবেন আপনি!
আমার সামনে চায়ের কাপ দিয়ে…
– আচ্ছা নাও চা খাও। কেঁদে কেঁদে এতোক্ষণে তোমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। চা খেলে দেখবে মাথা ব্যাথা কমবে।
আমি চায়ের কাপ নিয়ে চা খেতে থাকি। আমার পাশে উনি দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। দুজনেই নিশ্চুপ!
অতঃপর আমি দোলনায় বসে পরি। সেখানে বসে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। কোন সময় ঘুমিয়ে পরি জানি না।
সকাল ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি এখনো দোলনায় বসে আছি। আমার পাশে আহিয়ান। মনে হচ্ছে আমি আর উনি সারারাত এখানে এভাবে বসেই ঘুমিয়ে ছিলাম। আমি ঘুম ঘুম চোখে উনাকে দেখতে থাকি। মনে পড়ে কালকে উনার প্রত্যেকটা কথা। সবার সামনে আমাকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েছেন তিনি। আমাকে নিজের স্ত্রী সম্মান দিয়েছে। কখনো ভাবি নি এভাবে সত্যি টা সামনে আসবে। কিন্তু আনিকা আপু র জন্য খারাপ লাগছে। আমার জন্য উনার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান নষ্ট হয়ে গেল। সবকিছু ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
#চলবে….
গল্প যত’ই বড়ো করে দিচ্ছি ততোই সবার কমেন্ট কমে যাচ্ছে। এর কারন কি? তাহলে কি আবার গল্প ছোট করে দিবো। এটা নির্ভর করবে আপনাদের কমেন্ট এর ওপর। আর আমি আগেই বলেছি বোর্নাস পার্ট ছোট দেবো তাই কেউ ছোট বলবেন না প্লিজ। ধন্যবাদ সবাইকে!
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/424737719248006/