বৃষ্টিশেষে প্রেমছন্দ পর্ব-৪৭

0
1517

#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন

৪৭.
পানি খাওয়ার জন্য নিচে নেমে এসে টায়রার চোখ চড়কগাছ। চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞেস করলো,

‘তুমি?’

রাহুল হেসে বলল, ‘হ্যাঁ আমি।’

টায়রা জোরপূর্বক হেসে বলল, ‘বউ দেখতে এসেছো?’

‘নাহ নিতে এসেছি।’

টায়রা আতংকিত গলায় বলল, ‘নিতে এসেছো মানে বিয়ের তো দেরি আছে।’

রাহুল উপরে যেতে যেতে বলল, ‘এখান থেকেই বউ নিয়ে যাবো।’

রাহুলের কথা শুনে টায়রা ছুটে গেলো টিকলির কাছে। নিজের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে যেতে না যেতেই রুহুল হকের ফোন এলো। রাহুল বিরক্ত মুখে ফোন রিসিভ করে বলল, ‘জি বলুন।’

রুহুল হক দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, ‘তুমি ওখানে কি করো? বিয়ের আগে এসব কি রং তামাশা?’

রাহুল দায়সারা জবাব দিলো, ‘তাহলে কোথায় থাকবো? ব্যাচেলর বাসা ছেড়ে দিয়েছি। বউ নিয়ে তো আর ব্যাচেলর বাসায় উঠবো না।’

‘আমি কি মরে গেছি। কতবার বললাম এ বাড়ি থেকে বিয়ে করতে কথা কানে যায় না তোমার। বিদায়বেলায় বউ নিয়ে কোথায় যাবে?’

রাহুল ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ ভাবলো এরপর আর উত্তর দিলো না। রুহুল হক ক্ষেপা গলায় বললেন, ‘এক্ষুনি ও বাড়ি থেকে এ বাড়ি আসো রাহুল।’

রাহুল এক বাক্যে না করলো, ‘কক্ষনো না।’

রাহুল থেমে শ্বাস ফেলল বলল, ‘আচ্ছা। বিয়ের আগেরদিন আপনার বাড়ি যাবো। এ কয়দিন এখানে থাকি। আপনার বাড়িতে আমার দমবন্ধ লাগে।’

,

সকালে মায়ের মুখোমুখি হয়ে আদর ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘কাল কোথায় গিয়েছিলে মা?’

মনোয়ারা খান অপ্রস্তুত হলেন। অপ্রসন্ন গলায় বললেন, ‘কাজে।’

‘কি কাজ?’

‘ছিলো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।’

‘বলো।’

মনোয়ারা খান আর উত্তর দিলেন না। কাজ করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আদর রোষাগ্নি গলায় বলল, ‘ নিজের ছেলের জীবন নষ্ট করা কি তোমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ মা?’

মনোয়ারা খান বিস্ময় দৃষ্টিতে চাইলেন, ‘আমি তোমার মা আদর। আমি তোমার জীবন নষ্ট করবো?’

আদর টেবিলে শব্দ করে বলল, ‘তাহলে কেনো কাল টিকলির সাথে দেখা করেছো? কেনো ওকে আমার থেকে দূরে যেতে বলেছো?’

মনোয়ারা খানের চোয়াল শক্ত হলো, ‘বেশ করেছি। যা করেছি একদম ঠিক করেছি। তোমাদের এসব প্রেম প্রেম খেলার আগে আমার সংসার৷ আমার চোখের সামনে আমার স্বামী কষ্ট পাচ্ছে বড় ছেলের জন্য। কিন্তু ছেলের ধ্যান জ্ঞান ওই এক মেয়ে। কি আছে ওই মেয়ের মাঝে? যখন বিয়ে দিতে চেয়েছিলো তখন তো কত কথা বলেছো! এখন কোন সাহসে ওই মেয়ের হয়ে সাফাই গাইতে আসো?’

আদর চমকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে উচ্চারণ করলো, ‘মা!’

মনোয়ারা খান কঠোর গলায় বললেন, ‘আদর এখান থেকে যাও। তুমি নিজে একবার ভেবে দেখো তুমি কেমন মেয়ের প্রেমে পড়েছো। মেয়েটাকে আমি ভেবেছিলাম অন্যরকম। আমি দেখা করেছি আর সে তোমাকে সাথে সাথে বলে দিলো। সে যদি ভালোই হতো, তোমার ভালো চাইতো, সবার কথা চিন্তা করতো, তাহলে নিরবে সরে যেতো। এভাবে তোমার কাছে আমার নামে নালিশ করতো না।’

আদর বিস্ময়কর দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল ক্ষণকাল। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই কঠিন মনের মানুষটি যে তার মা তা মানতে আদরের খানিকটা বেগ পেতে হলো। কীভাবে এতোটা কঠোর হতে পারে মা?

‘না জেনে কাউকে ব্লেম করা উচিত নয়। কেউ যদি অযথা তোমাকে ব্লেম করে তাহলে তোমার কেমন লাগবে? ভেবে দেখো।’

আদর শক্ত গলায় বলল। চোখের সাদা অংশের আশেপাশে লাল রেখার ছড়াছড়ি। শ্বাস-প্রশ্বাসের ফুসফুস শব্দ ভেসে আসছে। আদর রেগে চলে গেলো নিজের ঘরে।

_______________________________

চারিপাশে ভ্যাপসা গরমের তান্ডব। মাথার উপর তেজস্বী সূর্য। রোদের তাপে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পিচ ঢালা রাস্তা, ফুটপাত। টিকলির শুষ্ক চুলগুলো মৃদু উড়ছে। বড় শপিংমলের এসির নিচে বসে থেকেও গা থেকে অনবরত ঘাম ছুটছে। অপ্রসন্ন চোখে এদিক ওদিক তাকাতেই রাহুলের কথা শোনা গেলো। একটা নীল জামদানী শাড়ি নিয়ে রাহুল বলছে,

‘দেখ তো এটা কেমন লাগে?’

টায়রা ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে পাশে বসে ফোন টিপছিলো। এক ঝলক শাড়িটার দিকে তাকিয়েই আবার মুখ ফিরিয়ে নিলো। বাড়িতে রুহুল হক এসেছেন। এক প্রকার ধমকে জোর জবরদস্তি করে তিনজনকে পাঠানো হয়েছে শপিং এ। বিয়ের আর মাত্র চারদিন বাকি। রাগে টায়রার মাথা ফেটে পরলো। মনে হলো এক্ষুনি রাহুলের নাক বরাবর ঘুষি দিয়ে বিয়ের ভূত মাথা থেকে নামিয়ে দি। রাহুলের আচরণে টিকলি অবাক হলো। রাহুল কীভাবে এতোটা স্মুথলি বিয়ে ব্যাপারটা নিতে পারছে? টিকলি ভাষ্যমতে রাহুল নিজেও কখনো বোনের নজর ছাড়া অন্য নজরে ওর দিকে তাকায়নি। টিকলি চোখ মুখ কুচকে বিদ্বিষ্ট গলায় বলল, ‘তোমার যা পছন্দ হয় নাও।’

রাহুল কেমন করে যেনো মাথা ঝাঁকালো। নীল জামদানী শাড়িটা প্যাকেট করতে বলল৷ টিকলির চোখ গেলো শাড়ির স্তূপের নিচে পরে থাকা জলপাই রঙের জামদানী শাড়িটার দিকে। জলপাই রং আদরের খুব পছন্দ। আদর বলেছিলো একদিন, টিকলিকে বিয়েতে জলপাই রঙের শাড়ি পড়িয়ে সাজাবে। শাড়িটা হাতে তুলে নিতেই টিকলির হাত থেকে ছু মেরে রাহুল নিয়ে নিলো। টিকলি হতভম্ব চোখে তাকাতেই রাহুল হেসে অত্যাধিক খুশি গলায় বলল,

‘এই শাড়িটা পছন্দ? ভাই এই শাড়িটাও প্যাক করে দিন।’

টিকলির আশ্চর্য ভাব তখন অবধি কাটলো না। হতবুদ্ধির ন্যায় বসে রইল। অতি দুঃখী মানুষরা একটু খুশিতেই পাগল হয়ে যায়। রাহুলের অবস্থাও হয়েছে তেমন। টিকলি রাগে দুঃখে বাইরে চলে এলো। রাগে ফুসতে ফুসতে হাত মোচড়াতে লাগলো। ইচ্ছে করলো হাতের মুঠোয় রাহুলকে পিষে ফেলতে। ফোনে টুং করে শব্দ হলো। টিকলি ক্ষুব্ধ হাতে ফোন বের করতেই দেখলো আদর ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছে। কপালের পাতা কুচকিয়ে ভয়েস মেসেজ ওপেন করতেই শুনা গেলো আদরের কণ্ঠ,

‘টিকলি, আমার না অসুখ করেছে! আপনাকে দেখার অসুখ।’

বাতাস থেমে গেলো। রোদের ঝলকানি নরম হলো। সব শূন্যে উঠে লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে লাগলো। মুহুর্তেই অদৃশ্য এক স্তব্ধতা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো টিকলিকে। নিশ্চল চোখের কোণায় বিন্দু বিন্দু করে জমতে থাকলো পানি। বুকে জমলো পাহাড় সমান মেঘ। হঠাৎই খেয়াল করলো তার শ্বাস আটকে আসছে। শরীরের ভর ছেড়ে দিচ্ছে। এই কণ্ঠকে ভুলে যাবার মতো ক্ষমতা তার নেই। টিকলি তড়িঘড়ি করে আবার দোকানের ভেতরে পা রাখলো। এখানে আর এক সেকেন্ড থাকতে পারবে না সে৷ টায়রাকে চোখের ইশারায় কিছু বুঝিয়ে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ভাইয়া, আমি বাসায় গেলাম।’

রাহুল তাক লাগা চোখে বলল, ‘বাসায় যাবি মানে? মাত্র তো শাড়ি কিনলাম।’

‘আমার শরীর ভালো লাগছে না। অস্থির লাগছে এতো মানুষের ভীড়ে।’

রাহুল কথা বাড়ালো না। বলল, ‘তাহলে চল আমরাও চলে যাই। পরে আসবোনি।’

টায়রা উচুঁ গলায় বলল, ‘না।’

রাহুল টিকলি ভ্রু কুচকে তাকালো। চিৎকারে দোকানদার পর্যন্ত বিহ্বল হয়ে পরলো। আমতা আমতা করে টায়রা বলল,

‘না মানে। টিকলি বাসায় গেলেই তো বাবা মা বকা দিবে তারউপর যদি দেখে আমরাও শপিং করা বাদ দিয়ে এসে পরেছি তাহলে তো..’

রাহুল ভাবলো কিছুক্ষণ। টিকলি মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘হ্যাঁ টায়রা তো ঠিকই বলেছে।’

‘আচ্ছা সাবধানে যাস।’

,

একটু আগের প্রবল রোদখানি এখন নেই। তেজস্বী সূর্য ঢাকা পড়েছে মেঘের আড়ালে। চারিপাশে ঠান্ডা বাতাস। নৃত্য করতে করতে হেলে পরছে বৃক্ষসমাজ। টিকলি ফুটপাতের ব্যস্ত পায়ের সমাচারে পিষ্ট হয়ে ধীর পায়ে হেটে যাচ্ছে। গাল ভিজে উঠেছে তপ্ত নোনা জলে। ফুটপাত ছেড়ে নিচে নেমে এলো সে। হেটে হেটে অনেকখানি দূরে এসে পরেছে। জনসমাগমহীন রাস্তার বাকল ধরে যেতেই কেউ হেচকা টানে গাড়ির পেছনের সিটে তুলে নিলো। টিকলি চিৎকার দিয়ে উঠতে নিলেই আগুন্তকঃ টিকলির দু’ হাত চেপে ধরলো। টিকলি বার কয়েক পলক ফেলে আদরকে দেখে রাগীস্বরে বলল,

‘আপনি? এভাবে কেউ টেনে ধরে?’

আদর দ্বিগুন তেজ দেখিয়ে বলল, ‘আমার ফোন কেনো তুলছেন না?’

টিকলি নির্লিপ্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো, ‘ভালো লাগছিলো না তাই?’

আদর আরো জোরে চেপে ধরলো টিকলির হাত। ব্যথায় চোখ মুখ কুচকে ফেলল টিকলি। আদর টিকলির দিকে ঝুঁকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘আপনার সাহস তো কম না৷ বিয়ের শপিং করতে এসেছেন।’

আদরের থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা চালানো হলো কয়েকবার। বার বার ব্যর্থ হয়ে ক্লান্ত মাথা সিটে হেলান দিলো টিকলি। তখন চারিপাশে ঝুমঝুম করে নেমেছে বৃষ্টির সৈন্যদল। তাদের প্রধান কাজ হলো ভিজিয়ে দেওয়া। কিন্তু আসল কাজ হলো কারোর মন ভালো করা, কারোর মন খারাপ করা কিংবা কারোর বিরক্তির কারণ হওয়া। আদর গাড়ির জানালা আটকে বলল,

‘আপনার মনে আছে টিকলি, আমি প্রথম কি বলে আমার অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলাম?’

টিকলি হালকা করে মাথা দুলিয়ে বলল, ‘In the end of rain, the love is beginning.’

আদর স্মিত হেসে বাইরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো, ‘দেখুন আজও বৃষ্টি পড়ছে। একটু পর থেমে যাবে। ভালোবাসার সূচনা ঘটবে।’

বন্ধ চোখের পাতা মৃদু কেপে উঠলো। আদর অসহায় কণ্ঠে বলল, ‘আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন কোনো পরিস্থিতিতে আমার থেকে দূরে সরে যাবেন না।’

টিকলি আদরের বুকে হালকা করে মাথা রাখলো। অপ্রতুল গলায় বলল, ‘সরি।’

আদর পরম যত্নে টিকলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘আমি রাহুলের সাথে কথা বলতে চাই।’

টিকলি মাথা উঠালো। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো। আদর টিকলির ফোনের দিকে ইশারা করে বলল, ‘নাম্বার দিন। আমি সব জানি। টায়রা কাল সব বলেছে।’

টিকলি আদরকে নাম্বার দিলো। আদর ভ্রু কুচকে বলল, ‘এই নাম্বার তো আমার কাছেও আছে। কিন্তু বন্ধ।’

টিকলি চিন্তিত মুখে বলল, ‘বন্ধ? কই দেখি।’

টিকলি ফোন দিলো। যথারীতি ফোন বন্ধ এলো। টিকলি হতাশ নিঃশ্বাসে বলল, ‘বন্ধ। নাম্বার বোধহয় চেঞ্জ করেছে। নাহলে রাহুল ভাইয়ার ফোন কখনো বন্ধ থাকেনা।’

আদর সিটে বাড়ি মেরে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে বলল, ‘এখনি সিম পাল্টাতে হলো।’

টিকলি অসংলগ্ন চোখে তাকিয়ে থাকলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদর টিকলির গালে হাত রেখে বলল, ‘কান্নাকাটি করবেন না। আমি আছি তো!’

টিকলি আদরের হাতের উপর হাত রেখে ভরসায় সুরে বলল, ‘হুম।’

আদর টিকলির দিকে গভীর প্রেম নয়নে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল। হঠাৎ টিকলির কপালে চুমু দিয়ে বলল, ‘আজও একটা টিকলির অভাবে চুমু সম্পূর্ণ হলো না।’

টিকলি তৃপ্তি নিয়ে হাসলো। ফিসফিস করে বলল, ‘আপনার স্পর্শ এমন কেনো বাদঁর সাহেব? বিষের চেয়েও জ্বালাধরণকারী!’

আদর টিকলির কপালের সাথে কপাল ঠেকালো। ভারী নিঃশ্বাসে বলল, ‘আমি আপনাকে সবরকম আদর দিতে চাই টিকলি। যেনো আদরের আদরে বিষের ব্যথায় চেয়েও ভয়ংকর জ্বালায় আপনি লাল নীল বর্ণ ধারণ করেন।’

‘এতো প্রেম সইবে আমার কপালে?’

আদর ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসি একেঁ বলল, ‘মুন্সিগঞ্জের একটা দারুন সুন্দর জায়গা আছে। জায়গাটির নাম মোল্লারচর।’

টিকলি দুষ্টুমি করে বলল, ‘এই ব্যাদনার সময়ে তবে আনন্দদায়ক ভাবে একটু ঘুরাঘুরি নামক নীল ব্যথা তৈরি করা যাক!’

আদর ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলল, ‘যাক। আমার কোনো সমস্যা নেই।’

,

টায়রা রাহুল ফিরলো দুপুরের দিকে। ভিজে জুবুথুবু হয়ে। শপিং ব্যাগ গুলোও অর্ধেক ভিজে গেছে। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ঢুকেই সোফায় আকিদা বেগমকে বসে থাকতে দেখা গেলো। রাহুল মাথার চুল ঝেড়ে ভ্রু কুচকে তাকালো। আকিদা হক উঠে এসে পেছনে উকিঁঝুঁকি দিয়ে একবার শপিং ব্যাগগুলোর দিকে তাকালেন। সন্দেহান গলায় বললেন,

‘টিকলি কোথায়?’

পেছনেই শায়লা আক্তার দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার পেছনের সোফায় জামিলুর রেজা বসে কিছু একটা আন্দাজ করে টায়রার দিকে আগুন গরম চোখে তাকালেন। টায়রা একটু মিইয়ে গেলো। তার এই ধুরন্ধর বাপের চোখে ফাঁকি দেওয়া বহুত কঠিন। রাহুল অবাক হয়ে বলল, ‘টিকলি বাড়ি ফিরে নাই?

আকিদা হক ভ্রু জোড়া উঁচু করে তাকিয়ে বললেন, ‘বাড়ি ফিরে নাই মানে? তোমাদের সাথে গেলো, তোমাদের সাথেই তো বাড়ি ফেরার কথা।’

রাহুল অপ্রস্তুত চোখে টায়রার দিকে তাকালো। টায়রা কি বলবে মুহুর্তের মাঝে বুঝে উঠতে পারলো না। মেয়েকে চুপ থাকতে দেখে জামিলুর রেজা আরো নিশ্চিত হলেন যে টিকলি আদরের সাথে গেছে। টায়রা মিনমিন করে বলতে ধরলেই চট করে মাথায় বানোয়াট কথারা ধরা দিলো। ও হেসে দাঁত বের করে বলল,

‘ও তো একটা বান্ধবীকে ইনভাইট করতে গিয়েছে। আমাদের খুব কাছের বান্ধবী তো বাসায় গিয়ে ইনভাইট না করলে বেচারা দুঃখ পাবে।’

জামিলুর রেজা এতোক্ষণে মুখ খুললেন। গমগমে আওয়াজে বললেন, ‘বান্ধবীর নাম্বার দেও। আমি তার সাথে কথা বলবো।’

টায়রা মিনমিন করে বলল, ‘বাবা টিকলিকে ফোন করলেই তো হয়।’

জামিলুর রেজা ধমকে বললেন, ‘দাড়িঁয়ে আছো কেনো? নাম্বার দিয়ে যেতে বলেছি।’

টায়রা নাম্বার দিলো। জামিলুর রেজা লাউডস্পিকার অন করে ফোন কানে ধরলেন। দু’বার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে ফ্যাসফ্যাসে গলায় কেউ বলে উঠলো,

‘বল। কি অবস্থা?’

রাহুলের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। চমকে জামিলুর রেজার কানে ধরা ফোনের দিকে তাকালো। জামিলুর রেজা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

‘আমি টায়রার বাবা।’

নিভা দাঁত দিয়ে জিহবা কাটলো। ব্যাস্ত কণ্ঠে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম আংকেল।’

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’

জামিলুর রেজা বাড়তি কথায় গেলেন না। সরাসরি প্রশ্ন করলেন, ‘টিকলি কি তোমার ওখানে?’

নিভা বুঝতে পারলো কোনো কিছু ঘাপলা আছে। তা নাহলে টিকলিকে ফোন না দিয়ে নিভাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হতো না টিকলি কোথায় এবং টায়রার ফোন দিয়েও জামিলুর রেজা ফোন করতেন না। নিভা খানিকক্ষণ ভেবে ধীরে ধীরে উত্তর দিলো,

‘জি আংকেল। আমাদের বাসায় এসেছে।’

‘ঠিকাছে, ওকে একটু দেও।’

এ কথা শুনে নিভা কি বলবে ভেবে পেলো না। নখ কামড়াতে কামড়াতে হঠাৎ অভিনয় শুরু করলো,

‘হ্যালো হ্যালো। হ্যালো আংকেল শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো৷ মরার ফোন খালি ডিস্টার্ব দেয়। নেট পাচ্ছে না আংকেল। আরেকবার বলুন। হ্যালো। আংকেল টিকলি ওয়াশরুমে গিয়েছে। আমাদের বাসায় এসেই পেট ভরে খেয়েছে তো। তাই প্রাকৃতিক কাজ সাড়তে গেছে। ও এলে আমি আপনাকে ফোন করতে বলবো। হ্যালো আংকেল শুনতে পাচ্ছেন। শালার ফোন!’

জামিলুর রেজা অপ্রস্তুত হয়ে ফোন কেটে দিলেন। টায়রার দিকে ফোন এগিয়ে দিলেন। তার মনে খটকা টা রয়েই গেলো। সচেতন দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ টায়রার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন তিনি। রাহুলও তড়িঘড়ি করে উপরে চলে গেলো। সবাই যেতেই আকিদা হক ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘ঘটনা কি খুলে বলো তো টায়রা!’

টায়রা কিছু বলতে চেয়েও বলল না। শয়তানি হাসি দিয়ে ক্রমাগত ভ্রু নাচিয়ে আকিদা হকের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ঘটনা হলো আমি আপনাকে নিয়ে দারুন একটা ছন্দ বানিয়ে ফেলেছি। হাউ টেলেন্টেড আই এম!’

আকিদা হক খুশিতে গদগদ করে বললেন, ‘তাই? আমাকে নিয়ে ছন্দ? শুনাও। শুনাও।’

টায়রা বলতে গিয়ে আবার চুপ হয়ে গেলো। বিষন্ন ভাব ধরে বলল, ‘না থাক বলবো না। কারণ ছন্দতে আপনার নাম মুখে আনতে হবে। তুই করেও ডাকতে হতে পারে। আপনি আমার এতো প্রিয় একজন ভাল্লু…না মানে এতো প্রিয় একজন পছন্দের মামী। আপনার সাথে আমি বেয়াদবি করতে পারিনা। ছি ছি ছি! তওবা! তওবা!’

আকিদা হক টায়রার এমন ব্যবহারে ভাব নিয়ে দাঁড়ালেন। খুশিতে আকাশে উড়তে উড়তে বললেন, ‘আরে বলো আমি কিছু মনে করবো না। এই প্রথম আমাকে নিয়ে কেউ ছন্দ লিখেছে। এ তো আমার জন্য বিরাট খুশির সংবাদ।’

টায়রা মাথা দুলিয়ে বলল, ‘তাহলে বলি। আপনি আবার রাগ করবেন না।’

গলা উঁচিয়ে ধমকে টায়রা বলা শুরু করলো,

“এই আকিদা, ওইদিকে তাকা।
দা দিয়ে কেটে দিবো তোর পা আর কাল্লা।
তাড়াতাড়ি তোর এই নাম পাল্টা।
এই আকিদা, গরু কেটে করে ফেল তোর আকিকা।”

আকিদা হক চোখ বন্ধ করে খুব উৎসাহ নিয়ে ছন্দ শুনছিলেন। টায়রা এই সুযোগে পা টিপে টিপে স্থান থেকে সরে এক দৌড়ে ঘরে চলে গেলো। ছন্দ শেষ হতেই তিনি টপাস করে চোখ খুলে আহাম্মক এর মতো সামনে তাকিয়ে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর গগনবিদারী চিৎকার দিলেন, ‘টায়…রা……..।’

চলবে❤️

বিঃদ্রঃ আমি খুব অসুস্থ। অসুস্থ শরীর নিয়ে গল্প দিলাম। সাথে সামনে ঈদ। সব মিলিয়ে আগামী সাতদিন গল্প বন্ধ থাকবে। এই সাতদিনে আমি একটু সুস্থ হই সাথে নিজেকেও একটু গুছিয়ে নেই। তারপর আবার পরবর্তী পর্ব গুলো আপলোড করা হবে।

বিঃদ্র-২ঃ আপনারা ভীষণ মাত্রায় অধৈর্য্য হয়ে উঠেছেন। গল্পে টুইস্ট না থাকলে এক ঘেয়েমি লাগবে। টুইস্ট যদি আমি না দেই তাহলে তো দুই পর্বেই শেষ করতে পারতাম। কেনো আপনারা ইন্ডিং পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরতে পারছেন না? আর গল্প টাকে সিরিয়াস না নিয়ে এক্সাইটমেন্ট হিসেবে নিন এবং লেখিকাকে চাপ দেওয়া বন্ধ করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here