সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-২১

0
676

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ২১

সাকিব, রনি আর এরেনের আড্ডার মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো জারিন। জারিনকে দেখে সাকিব আর রনি তার সাথে কুশল বিনিময় করল। এরেন অবাক হয়ে বলল,“তুই ভার্সিটিতে আসবি বলিসনি তো।”

জারিন হেসে বলল,“বললে কি এমন অবাক হতিস?”

সাকিব বলল,“তা, হঠাৎ ভার্সিটিতে এলে যে?”

জারিন গাল ফুলিয়ে বলল,“কেন ভাইয়া? এই ভার্সিটিতে পড়ি না বলে কি আমার আসা বারণ?”

“বারণ হবে কেন? তুমি তো কখনও আসো না, তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

“আজ ইচ্ছে হলো তাই এলাম। শুনলাম তোমার বোনও এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।”

“হ্যাঁ।”

“পরিচয় করাবে না?”

“অবশ্যই করাব। ওর ক্লাস শেষ হোক।”

রনি প্রশ্ন করল,“জারিন, তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?”

জারিন হাসিমুখে উত্তর দিলো,“ভালো।”

“শুনলাম তোমার জন্য না কি প্রায়ই বিয়ের প্রস্তাব আসছে। তো রাজি হচ্ছ না কেন?”

রনির প্রশ্নে জারিন প্রথমে অবাক হলো। যার সাথে সে বিয়ের স্বপ্ন দেখে, সে-ই কি না বলছে বিয়েতে রাজি হচ্ছ না কেন! এর থেকে দুঃখজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে? এই মুহূর্তে এক গ্লাস পানি পেলে সে তাতে ডুবে মরতো। কিন্তু এদের সামনে দুঃখ প্রকাশ করা যাবে না। তাই আপাতত জারিন দুঃখটাকে সরিয়ে রেখে ভাবল, রনি ভাইয়া জানল কীভাবে? পরক্ষণেই কটমট চাহনিতে এরেনের দিকে তাকাল। যার অর্থ, ‘চল আজ বাড়িতে, আজকেই তোর শেষ দিন।’ জারিনের চাহনি দেখে এরেন জোরপূর্বক হেসে বলল,“আরে তুই আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? বলল তো রনি, আমি কী করেছি?”

রনি বলল,“তুই বলেছিস বলেই তো আমি বললাম। নইলে আমি জানলাম কীভাবে?”

এরেন অস্বীকার করে বলল,“ডাহা মিথ্যা কথা। আমার নামে কোনো মিথ্যা এলিগেশন আমি মানবো না।”

সাকিব অবাক হয়ে বলল,“এখন এমন মিথ্যা কথা কেন বলছিস এরেন? সেদিনই তো তুই কথায় কথায় আমাকে আর রনিকে বললি জারিন বিয়েতে রাজি হচ্ছে না।”

জারিন ঠোঁট উল্টে বলল,“ভাইয়া, তুই এসব বলে বেড়াস?”

এরেন বলল,“মোটেও না। এই সাকু, শেষমেষ তুইও রনির সাথে যোগ দিয়ে আমার বিরুদ্ধে কথা বলছিস! তোরা না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড?”

জারিন এরেনের বাহুতে হালকা একটা চড় মেরে বলল,“থাম তুই। তোকে আমার চেনা আছে।”

এরেন বাহু ঘষতে ঘষতে আকাশের দিকে তাকিয়ে অভিনয় করে বলল,“হায় খোদা! এ কেমন বোন দিলে তুমি আমার কপালে! বড়ো ভাইকে একটু সম্মানও করতে জানে না।”

জারিন সাকিবকে বলল,“ভাইয়া, তুমি তো তোমার বোনদের অনেক ভালোবাসো শুনেছি। আমার এই পাজি ভাইকে কিছু তো শেখাতে পারো।”

সাকিব একটু ভাব নিয়ে বলল,“ঠিক আছে, তুমি যখন বলছো তখন ভেবে দেখব।”

এরেন বলল,“বাহ্, অসাধারণ! এই দিন দেখার জন্যই বেঁচে আছি!”

ওদের দুষ্টুমির মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো ইলোরা। সে এসে এরেনের পাশে জারিনকে দেখে না চিনতে পেরে কিছুটা অবাক হলো। এরেনই আগে ইলোরাকে দেখল। সে বলে উঠল,“ইলোরা, তোমার ক্লাস শেষ?”

ইলোরা এগিয়ে এসে বলল,“না, ভাই মেসেজ করে এখানে আসতে বলল আমাকে।”

এরেন প্রশ্ন করল,“কখন?”

সাকিব বলল,“হ্যাঁ, জারিনের সাথে কথা বলার জন্য মেসেজ করে আসতে বলেছি।”

ইলোরা প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সাকিব কিছু বলতে যাবে তার আগেই জারিন দ্রুত গিয়ে ইলোরার দুহাত ধরে উৎফুল্ল হয়ে বলল,“তুমি ইলোরা?”

ইলোরা উপর নিচে মাথা দোলালো। জারিন উত্তেজিত হয়ে ইলোরাকে জড়িয়ে ধরে বলল,“তোমার সাথে দেখা করার কত ইচ্ছে ছিল আমার জানো?”

জারিনের আচমকা এমন আচরণে ইলোরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। এরেন মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবল,“জারিন যা উত্তেজিত হয়ে গেছে, সাকিবের সামনে আবার কী না কী বলে বসে আল্লাহ্ জানে।”

জারিন আবার বলল,“আরে, তুমি এভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছো কেন? আমাকে চিনতে পারোনি তো? আমি হচ্ছি তোমার একমাত্র……..।”

এরেন চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই জারিন চুপ হয়ে গেল। জারিনকে থামিয়ে দিয়ে এরেন দ্রুত বলল,“ও হচ্ছে আমার একমাত্র বোন জহুরা জারিন। হঠাৎ করে ভার্সিটিতে চলে এসেছে, তাই তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।”

ইলোরা এবার বুঝতে পেরে মুচকি হেসে জারিনকে প্রশ্ন করল,“কেমন আছেন আপু?”

জারিন হেসে বলল,“ভালো আছি। তুমি?”

“ভালো।”

“তুমি তো খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। শোনো, আমাকে আপনি বলবে না। তুমি ফার্স্ট ইয়ার আর আমি সেকেন্ড ইয়ার। মাত্র এক বছরের তফাৎ। তুমি করে বলবে, ওকে?”

ইলোরা হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলল,“ওকে।”

জারিন হঠাৎ ইলোরার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,“তোমার সাথে কিছুক্ষণ আলাদা কথা বলা যাবে?”

ইলোরা প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে জারিনের দিকে তাকাল। ইলোরা কিছু বলার আগেই রনি সন্দিহান কন্ঠে বলল,“এই, তোমরা ফিসফাস করে কী কথা বলছো?”

জারিন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“মেয়েদের কথায় কান দিতে নেই ভাইয়া।”

সাকিব বলল,“জারিন, ইলোরার সাথে তো দেখা হয়েছেই। পরে একসময় দেখা হলে না হয় গল্প করবে। এখন ওর ক্লাস আছে, ও চলে যাক।”

জারিনের মুখটা চুপসে গেল। সে মন খারাপ করে বলল,“একটা ক্লাস না করলে কী হবে?”

ইলোরা মুচকি হেসে বলল,“আপু, তুমি আবার এসো একদিন। সেদিন তোমার সাথে অনেক গল্প করব। আজ আসছি।”

জারিন গাল ফুলিয়ে এরেনের দিকে তাকাল। তারপর মন খারাপ করে বলল,“ঠিক আছে। কী আর করা? অন্য একদিন না হয় কথা বলব। ভালো থেকো তুমি।”

ইলোরা হাসিমুখে বলল,“তুমিও ভালো থেকো। বাই।”

ইলোরা আড়চোখে একবার এরেনের দিকে তাকাল। এরেনের মুখটাও জারিনের মতো চুপসে গেছে। ইলোরা কিছুটা অবাক হয়ে ভাবল,“এদের দুই ভাই বোনের আবার কী হলো?”

ইলোরা সেখান থেকে চলে গেল। সাকিব বলল,“জারিন, চলো আমরা ক্যান্টিনে গিয়ে বসি।”

জারিন মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাল। এরেন, সাকিব, রনি আর জারিন চলল ক্যান্টিনের দিকে। জারিন একটু পিছিয়ে রনির পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল,“রনি ভাইয়া, অনেকদিন ধরে আমাদের বাসায় যাও না। ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ও বলেছিল এক্সামের পর যাবে। তা-ও তো গেলে না।”

রনি শান্ত দৃষ্টিতে একবার জারিনের দিকে তাকাল। তারপর মুচকি হেসে বলল,“সময় করে একদিন যাব।”

জারিন উৎসুক কন্ঠে বলল,“কবে যাবে?”

রনি বলল,“শিওর বলতে পারছি না। গেলে তো দেখবেই।”

জারিন মন খারাপ করে বলল,“আচ্ছা।”


কফিশপের একটা টেবিলে মুখোমুখি বসে আছে মুনা আর আফসার। মুনা কফি মগের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছে। আফসার কফি মগে চুমুক দিয়ে মুনার দিকে তাকিয়ে বলল,“কফিটা খাও। ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুনা কফি মগটা হাতে নিল। আফসার কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে মুনার দিকে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করল,“কী কথা বলতে এখানে নিয়ে এলাম জিজ্ঞেস করবে না?”

মুনা শুধু একবার প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে আফসারের দিকে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গেই আবার চোখ নামিয়ে পূর্বের ন্যায় বসে রইল। আফসার ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মৃদু কন্ঠে ডাকল,“মুন।”

ডাক শুনে মুনা নত মুখেই কপালটা হালকা কুঁচকে ফেলল। এই স্যার আবার তাকে মুন ডাকে কবে থেকে সেটাই ভাবতে লাগল। একদিন বলেছিল মুনার থেকে আ-কার বাদ দিয়ে মুন নামটা পারফেক্ট। কিন্তু নিজে এই নামে ডাকছে কী মনে করে? আফসার আবার ডেকে বলল,“মুন, মাথা তুলে বসো। এভাবে মাথা নিচু করে থাকবে না আমার সামনে।”

মুনা একটু নড়েচড়ে বসে মাথা উঁচু করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। আফসার হাতের মগটা টেবিলে রেখে দিলো। তারপর টেবিলের উপর দুহাত রেখে মুনার দিকে তাকিয়ে বলল,“আমি জানি তুমি আমার উপর খুব বিরক্ত। বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে সেও এমন বিরক্ত হত। অন্য কারও সাথে তোমার তফাৎটা হচ্ছে, অন্য কেউ হলে আমার উপর বিরক্ত হয়ে কোনোকিছু না ভেবে বিয়ে ভাঙার কথা ভাবত‌। কিন্তু তুমি সেটা করোনি, কারণ তুমি সবার আগে নিজের বাবার কথা ভেবেছ।”

মুনা ভ্রুকুটি করে তাকাল। আফসার হেসে বলল,“অবাক হয়ো না। আমি জানি তুমি তোমার বাবার জন্যই বিয়েতে রাজি হয়েছ। আজ তোমাকে কিছু কথা বলব। আগেই বলতাম, কিন্তু সময় হয়ে ওঠেনি। আশা করি তুমি মন দিয়ে শুনবে আমার কথাগুলো।”

মুনা মৃদু কন্ঠে বলল,“বলুন।”

আফসার জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করল,“আমার আম্মাকে তো দেখেছ তুমি। ওনাকে ওপর থেকে দেখলে সবাই ভাবে উনি খুব হাসি-খুশি, সুস্থ-স্বাভাবিক একজন মানুষ। কিন্তু ওনার শারীরিক কন্ডিশন মোটেও ভালো না। গত কয়েক বছর ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। ইদানীং সমস্যাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চিকিৎসা চলছে, বাকিটা আল্লাহ্ ভরসা। ডক্টর বলেছে আম্মাকে সবসময় সময় দিতে, হাসি-খুশি রাখতে। কিন্তু আমার সেই সময়টা হয়ে ওঠে না। তবু যেটুকু পারি সেটুকু সময় দেয়ার চেষ্টা করি সবসময়। বড়ো ভাইয়ার জবের জন্য সে ভাবিকে নিয়ে খুলনা থাকে। আর ছোটো বোন তো শ্বশুর বাড়িতে থাকে। বাবার বয়স হয়েছে, তার তো নিজেরই শরীরের ঠিক নেই। বলতে গেলে আম্মাকে সময় দেওয়ার মতো কেউ নেই বাড়িতে। গত কয়েকমাস ধরে সবাই আমাকে বিয়ে করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এখনই বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিল না আমার। তবু আম্মার কথা ভেবে বিয়ে করতে রাজি হই। কিন্তু আমি সবাইকে বলে দিয়েছি হাসি-খুশি, উচ্ছল কোনো মেয়েকে বিয়ে করব, যে সবসময় আম্মাকে হাসি-খুশি রাখবে। এমন মেয়ে কেউ খুঁজে বের করতে পারেনি। আমিও এককথায় বলে দিয়েছিলাম এমন মেয়ে ছাড়া বিয়ে করব না। তারপর দেখা হলো তোমার সাথে। তোমার সবসময় হাসি-খুশি মুখ দেখে আমি কয়েকদিন তোমাকে খেয়াল করেছি। তারপর তোমার বন্ধুদের সাথে কত গল্প করেছি। আস্তে আস্তে বুঝলাম তুমি ঠিক তেমনই, যেমনটা আমি খুঁজছি। তারপর তোমার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তোমার বাবার সাথে কথা বলি। সেদিন তোমাকে আমি মিথ্যে কথা বলেছিলাম। আমার ফ্যামিলি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়নি, তারা গিয়েছিল তোমাকে দেখার জন্য। তার আগেই তোমার বাবার কাছে আমার আম্মার কথাটা বলে আমি নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আর আমি নিজেই ওনাকে বলেছিলাম তোমাকে যেন আগেই কিছু না জানায়। কারণ আমি জানতাম তুমি আমার কথা জানলে সঙ্গে সঙ্গে বিয়েতে না বলে দিবে। তোমার বাবা সবকিছু শুনে ভেবেচিন্তে আমার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন। তারপর আমার কথায় রাজি হয়েছিলেন। কারণ উনি আমাকে যথেষ্ট পছন্দ করেছিলেন। আমি ওনাকে বলেছিলাম বিয়ের ডেট ফিক্সড হওয়ার পর আমি নিজেই তোমাকে জানাব। এ কদিন একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই বলার সুযোগ পাইনি। তোমাকে একদিন ফোন করেছিলাম কিন্তু তুমি রিসিভ করোনি। তাই ভাবলাম ফোনে না বলে সরাসরি বললেই ভালো হবে।”

মুনা অবাক হয়ে তাকিয়ে কথা শুনছে। আফসার একটু থেমে আবার বলতে শুরু করল,“এমনিতেই তো তুমি আমার উপর বিরক্ত ছিলে, এখন হয়তো আরও বিরক্ত হয়ে গেছ। কিন্তু আমার কিছু করার নেই মুন। আমার আম্মাকে আমি খুব ভালোবাসি। প্লিজ, তুমি এটা ভেবো না যে আমি আমার মাকে ভালো রাখতে বিয়ের জন্য তোমাকে বাধ্য করেছি। বিয়ের পর তুমি তোমার প্রাপ্য সম্মান, স্নেহ, ভালোবাসা সব পাবে। তোমার স্বাধীনতায় কেউ বাঁধা দিবে না। তোমার মতো তুমি থাকবে। বিয়ে করে আম্মার সেবাযত্ন করার জন্য আমি তোমাকে ঘরে আটকে রাখব না। তুমি শুধু আম্মাকে সবসময় হাসি-খুশি রাখবে। ব্যাস, এটুকুই চাই আমি। পারবে না নিজের খুশি থেকে কিছুটা ভাগ আমার আম্মাকে দিতে?”

আফসার প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে মুনার দিকে তাকিয়ে রইল ওর উত্তরের আশায়। মুনা হা করে এখনও তাকিয়ে আছে। এতকিছু শোনার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। এই বিয়েটার জন্য স্যারকে নিয়ে সে কতকিছু ভেবে বসে আছে। শুধু শুধু লোকটার ব্যাপারে সব ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। ওসব ভাবতেই তার অনুশোচনা হতে লাগল। মায়ের প্রতি স্যারের এত ভালোবাসা দেখে অবাকও লাগছে। মুনাকে চুপ থাকতে দেখে আফসার আবার বলল,“আমি জানি তুমি পারবে। তুমি তো তোমার বাবাকে ভালোবাসো বলেই বিয়ের মতো এত বড়ো একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছ। তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো আমার আম্মাকেও আমি এমনই ভালোবাসি। তুমি জানো? তোমাকে দেখার পর আম্মা কত খুশি হয়েছে! প্রথমদিন তোমাকে দেখে গিয়ে আমাকে বলেছিল, দিহান, বিয়ে করলে এই মেয়েকেই করবি। আমি বারণ করেছি বলেই তোমার বাবা তোমাকে কিছু বলেনি। তুমি তাকে ভুল বুঝো না প্লিজ। সবটাই তো আমার জন্য হয়েছে। সেজন্য আমি দুঃখিত। আমি চাই তুমি খুশিমনে বিয়েটা করো। কারণ বিয়েটা নিয়ে তুমি অসন্তুষ্ট থাকলে আমার নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হবে।”

মুনা স্তব্ধ হয়ে কথা শুনে যাচ্ছে। আফসার আবার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর মুনাকে প্রশ্ন করল,“তোমার কিছু বলার নেই?”

মুনা শান্ত স্বরে বলল,“আমি আর কী বলব? আমার বলা না বলায় কারো কিছু যায় আসে না স্যার।”

আফসার আহত চোখে তাকিয়ে বলল,“সরি মুন।”

মুনা মুখে হাসি টেনে বলল,“সরি বলতে হবে না। আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এটাই করত। তবে আপনার মায়ের প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রশংসার যোগ্য।”

আফসার মৃদু হাসল। হাসিমুখেই প্রশ্ন করল,“আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তোমার?”

মুনা এই প্রশ্নের উত্তর দিলো না। আফসার হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,“চলো ওঠা যাক।”

আফসার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ল। মুনাও উঠে তার সাথে কফিশপের বাইরে চলে এল। আফসার আবার বলল,“এতকিছু শোনার পরও তুমি কিছুই বললে না, এটা ঠিক মানতে পারলাম না। আমি ভেবেছিলাম তুমি কত কথা বলবে। না কি আমি তোমার স্যার বলে মনের কথাগুলো বলতে পারছো না?”

মুনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। আফসার বুঝল মুনা এখন কিছুই বলবে না। তাই এসব কথা বাদ দিয়ে প্রশ্ন করল,“এখন কি বাসায় ফিরবে?”

মুনা উপর নিচে মাথা দোলালো। আফসার কিছু একটা ভেবে বলল,“তাহলে তোমাকে রিকশা ডেকে দিচ্ছি। আমি নিজেই দিয়ে আসতে পারতাম, কিন্তু আমাকে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।”

মুনা হালকা হেসে বলল,“আমি একা যেতে পারব।”

আফসার একটা রিকশা ডেকে মুনাকে উঠতে বলল। মুনা রিকশার দিকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়েও থেমে পড়ল। ঘুরে দাঁড়িয়ে ইতস্তত করে তাকাল আফসারের দিকে। আফসার ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করল,“কিছু বলবে?”

মুনা কিছু বলতে গিয়েও ডানে বামে মাথা নেড়ে দ্রুত রিকশায় চড়ে বসল। আফসার প্রশ্ন করল,“ফোন করলে রিসিভ করবে?”

মুনা আফসারের দিকে তাকাল। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর দিলো না। আফসার মুচকি হেসে বলল,“সাবধানে যেয়ো। আল্লাহ্ হাফেজ।”

রিকশা চালক রিকশা চালাতে শুরু করলেন। আফসার সেদিকে তাকিয়ে বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিল।


ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরে রুমে ঢুকতে নিতেই হঠাৎ জারিনের মাথায় সজোরে এক চাটি মারল এরেন। আকস্মিক ঘটনায় জারিন মাথায় হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে তাকাল। রাগে গজগজ করতে করতে বলল,“মারলি কেন আমাকে?”

এরেন রাগত কন্ঠে বলল,“আরেকটু হলেই তো হাঁটে হাঁড়ি ভেঙে দিতি। সাকিব আর রনি যে ওখানে ছিল তা তোর মুন্ডুতে ছিল না? গাধি!”

জারিন কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,“এক্সাইটমেন্টের কারণে খেয়াল ছিল না। তুই এটা নিয়ে পড়েছিস, আর আমি ওর সাথে কোনো কথাই বলতে পারলাম না সেই দুঃখে বাঁচি না। শুধু শুধু গেলাম আর এলাম।”

এরেন নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,“ঢং একটু কমিয়ে কর। ওর সাথে কথা বলতে পারিসনি তো কী হয়েছে? রনির সাথে তো দেখা হয়েছে। দুঃখ হচ্ছে, না ডান্স করতে ইচ্ছে করছে?”

এরেন নিজের রুমে চলে গেল। জারিন হা করে এরেনের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইল। তার মনের কথা এরেন ইতিপূর্বে কোনোদিন বুঝেছে বলে তার মনে পড়ে না। তাহলে আজ কী হলো? পরক্ষণেই জারিন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বিড়বিড় করে বলল,“স্ট্রেন্জ! ভাইয়া বুঝল কী করে?”

চলবে……………………..🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here