সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-৩৫

0
682

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৩৫

বিকেলে মালিহা বেগম ফোন করে জানালেন সাকিব আজ ফিরতে পারবে না। পাত্রপক্ষ অনন্যাকে খুব পছন্দ করেছে। দুদিন পরেই বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। কারণ পাত্রের বাবা চাইছেন বিয়েটা তাড়াতাড়ি হোক। তাই অনন্যার বাবা-মাও আপত্তি করেননি। মালিহা বেগম ইলোরার কাকিকে ফোন করে বলেছেন আজ রাতটা গিয়ে ইলোরাদের সাথে থাকতে। মিজানুর রহমান এরেনকে আর ডালিয়ার সব বন্ধুদেরও দাওয়াত করেছেন। তাই সাকিব বলেছে আগামীকাল ওদের সবাইকে একসাথে যেতে। সে নিজেই নিতে আসত কিন্তু বিয়ে বাড়িতে তো অনেক কাজ আছে। তাই সে ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে একসাথে যেতে। আর এরেনকে দায়িত্ব দিয়েছে সবাইকে দেখেশুনে সুস্থ মতো নিয়ে যাওয়ার। এরেন তো মহাখুশি। একে তো বিয়ে বাড়িতে সবসময় ইলোরার আশেপাশে থাকতে পারবে তারপর আবার যাবেও তার সাথেই। প্রথমবারের মতো আজ আবার একসাথে কিশোরগঞ্জ যাবে ভেবে ইলোরাও বেশ খুশি হলো। তাহসিন, অরিশা আর নাদিয়া ওদের সাথে যেতে রাজি হলো। টুম্পা নিজেই যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে। আর মুনার শ্বাশুড়ি অসুস্থ বলে সে ইচ্ছে থাকলেও যেতে পারবে না। ডালিয়া আর ইলোরা মিলে প্যাকিং শুরু করে দিয়েছে। ডালিয়া আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করতে করতে প্রশ্ন করল,“ইলো, বিয়েতে কী পরবি?”

ইলোরা বলল,“কী পরব মানে কী? দেখছিস না ড্রেস নিচ্ছি‌। এগুলোই পরব।”

ডালিয়া ভ্রুকুটি করে বলল,“ভাইয়া সাথে যাচ্ছে আর তুই ড্রেস পরবি বলছিস?”

“তো?”

“তো কী? তোর অবশ্যই শাড়ি পরা উচিত।”

“ধুর! এখন শীত নেই যে আরামসে শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াব। তাছাড়া অরিশা বা নাদিয়া কেউই তো কিছু বলল না শাড়ি পরার কথা। তো আমি একা পরব?”

“আরে…………..।” ডালিয়ার কথা শেষ না হতেই ইলোরার ফোন বেজে উঠল। ইলোরা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে এরেন বলল,“শাড়ি নিয়েছ?”

ইলোরা বলল,“না, কেন?”

“কেন মানে? গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত সব অনুষ্ঠানে তুমি অবশ্যই শাড়ি পরবে।”

ইলোরা চোখ বড়ো করে বলল,“পাগল হয়েছ তুমি! গরমে আমি বেহুঁশ হয়ে যাব।”

“বেহুঁশ হলে আমি কোলে নিয়ে বসে থাকব। তবু তুমি শাড়ি পরবে ব্যাস। আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না। ওকে বাই।”

ইলোরা আর কিছু বলার আগেই এরেন ফোন কেটে দিলো। ইলোরা ফোন রেখে অসহায় মুখে ডালিয়ার দিকে তাকাল। ডালিয়া দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“এখন কী করবা? আমার কথা তো শুনলা না। এখন বরের কথা পারলে অমান্য করো।”

ইলোরা বিরক্তি নিয়ে শাড়ি বের করতে করতে বলল,“ধুর! ওদেরকেও ফোন করে বলে দে শাড়ি নিতে।”

“ওকে।”

অরিশা আর নাদিয়াকে ফোন করে ডালিয়া শাড়ি নিতে বলে দিলো। প্যাকিং শেষ করে ওরা দুজন ডিনার করে নিল। তারপর তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল। কাল সকাল আটটায় বাস ধরতে হবে।

সকাল সাতটা দশে এরেন ইলোরাদের বাসার সামনে এসে তাকে ফোন করল। ইলোরা আর ডালিয়া আগেই রেডি হয়ে এরেনের আসার অপেক্ষায় ছিল। এরেনের ফোন পেয়ে তারা নিজেদের লাগেজ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এল। এরেন ওদেরকে দেখে মুচকি হেসে প্রশ্ন করল,“তোমার কাকি চলে গেছে?”

ইলোরা বলল,“হ্যাঁ, কিছুক্ষণ আগে চলে গেছে।”

এরেন ওদের হাত থেকে লাগেজ দুটো নিয়ে সিএনজির ভেতরে রেখে ওদেরকে উঠতে বলল। ইলোরা আর ডালিয়া উঠে বসার পর এরেন গিয়ে সিএনজি চালকের পাশে বসে পড়ল। বাসস্ট্যান্ডে যেতে লাগল প্রায় বিশ মিনিট। বাসস্ট্যান্ড পৌঁছে তারা সেখানে অরিশা, নাদিয়া আর তাহসিনকে পেয়ে গেল। তাহসিন বলল,“বাস ছাড়তে এখনও প্রায় আধঘণ্টা বাকি। কেউই তো ব্রেকফাস্ট করেনি। আশপাশের কোনো হোটেলে ব্রেকফাস্ট করে নিলে ভালো হয়।”

এরেন সম্মতি জানিয়ে বলল,“হ্যাঁ, তাই চলো।”

ওরা সবাই বাসস্ট্যান্ডের পাশের একটা হোটেলে ঢুকে পড়ল। বড়ো একটা টেবিল দখল করে বসল সবাই। প্রায় নয় বছরের একটা ছেলে এসে জিজ্ঞেস করল ওরা কী খাবে। এরেন সবার জন্য পরোটা আর ডিম ভাজি আনতে বলল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেটা একে একে সবার খাবার টেবিলে দিয়ে গেল। সবাই তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করল। ইলোরা আর নাদিয়া ছাড়া বাকি সবাই চা-ও খেলো। খাওয়া শেষ করে সবাই হোটেল থেকে বেরিয়ে বাসে উঠল। ইতোমধ্যে বাসের প্রায় অর্ধেক সিট ভরে গেছে। তাহসিন আগে এসে সবার জন্য টিকেট কেটে রেখেছিল। এরেন আর ইলোরা একসাথে বসল। তাদের পেছনের সিটে বসল নাদিয়া আর অরিশা। আর তাদের বিপরীত পাশের সিটে বসল তাহসিন আর ডালিয়া। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাস পুরো পরিপূর্ণ হয়ে গেল। ঠিক আটটা একে বাস ছাড়া হলো। এরেন সিটে হেলান দিয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল,“প্রথম দেখা হওয়ার অনুভূতি হচ্ছে।”

এরেনের কথা শুনে ইলোরা হেসে ফেলল। এরেন ভ্রুকুটি করে বলল,“সেদিন কিন্তু তুমি আমার ওপর প্রচণ্ড বিরক্ত ছিলে। আমি সেটা বুঝতে পেরেছিলাম।”

ইলোরা বলল,“কারণ তুমি আমার কাঁচা ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলে। তাছাড়া একটার পর একটা কথা বলতেই ছিলে। অপরিচিত মানুষের সাথে এত কথা বলতে ভালো লাগে না আমার।”

“তো এখন কেন বলছো?”

“আর বলব না তো। কে আপনি? আপনাকে আমি চিনি না।” কথাটা বলে ইলোরা দুহাত ভাঁজ করে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। এরেন হেসে বাঁ হাতটা আলতো করে ইলোরার কোমরে রেখে কাছে টেনে নিয়ে এল। ইলোরা গিয়ে এরেনের বুকের সাথে ঠেকল। সে লজ্জায় মাথানত করে ফিসফিস করে বলল,“কী করছো? ওপাশে মুরব্বি বসে আছে। এটা তোমার বাসা না।”

এরেন একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ওপাশে তাকিয়ে সেও ইলোরার মতো ফিসফিস করে বলল,“মুরব্বিরা দুজনই ঝিমুচ্ছে। এখন কি আমিও তাদের মতো ঝিমাবো? আমার পাশে তো মিষ্টি একটা বউ আছে। বউ পাশে রেখে কারও ঝিমুতে ইচ্ছে করে?”

ইলোরা ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করল,“তো বউকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করে?”

“উঁহু। কোলে বসিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে।”
ইলোরা লজ্জা পেয়ে এরেনের থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে বলল,“অসভ্য! ছাড়ো।”

এরেন আরও শক্ত করে কোমর চেপে ধরে ইলোরাকে আরেকটু কাছে নিয়ে এল। তার থেকে যে এখন ছাড়া পাওয়া যাবে না তা ইলোরা বেশ বুঝতে পারল। তাই সে মুখ কাচুমাচু করে বলল,“ঘুম পাচ্ছে।”

এরেন ইলোরার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে বলল,“ঘুমাও।”

এবার ইলোরা চাইলেও সরে যেতে পারল না। ভালোবাসার মানুষটার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর ভাগ্য কতজনের হয়? আজ প্রথম সে নিজের স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছে। এটাই তো তার আসল জায়গা। অনাবিল শান্তির জায়গা। ইলোরা চোখ বন্ধ করে মৃদু কন্ঠে ডাকল,“শোনো।”

এরেন মুচকি হেসে বলল,“এভাবে ডাকলে না শুনে রেহাই আছে?”

ইলোরা বলল,“আমরা যখন একসাথে থাকব তখন তুমি প্রতিদিন আমাকে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর সুযোগ দেবে?”

এরেনের মনটা একরাশ শান্তিতে দুলে উঠল‌। নিজের স্ত্রী যখন আবদার করে বসে প্রতিদিন আমাকে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর সুযোগ দেবে। এমন আবদার ফেরানোর সাধ্য কোন সহৃদয়বান পুরুষের আছে? তার তো নেই। সে তো এটাই চায়। এই মেয়েটাকে বুকে চেপে ধরলে তার বুকটা এক মুহূর্তে প্রশান্তিতে ভরে যায়। এরেন ইলোরার মুখের কাছে ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বলল,“আমি তো তোমাকে আমার বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে দেবো পাগলী। সারাজীবন এভাবেই আমাকে আঁকড়ে ধরে রাখবে।”

ইলোরা এরেনের শার্টটা আরও শক্ত করে খামচে ধরে তার বুকে মুখ গুঁজে বলল,“খুব খুব খুব ভালোবাসি। কোনোদিনও বুক থেকে সরিয়ে দিও না। নিঃশ্বাস আটকে যাবে আমার।”

এরেন ইলোরার মাথায় ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে বলল,“এত আবেগী হলে চলে? আমার ঘাড়ে কটা মাথা আছে যে এই আবেগী পাগলীটাকে বুক থেকে সরিয়ে দিবো? এমন দিন এলে তো আমি নিজেই হার্ট অ্যাটাকে মারা পড়ব। তবে তোমার আবেগ কিন্তু একটা উপকার করল।”

ইলোরা প্রশ্ন করল,“কী?”

“এই যে ভালোবাসি বললে। আজ প্রথমবার স্বীকার করলে যে তুমি তোমার হাসবেন্ডকে খুব ভালোবাসো।”

ইলোরা এরেনের বুকে ছোটো একটা চিমটি কেটে বলল,“তুমি তো ভুল করেও একবার বলোনি আজ পর্যন্ত।”

এরেন হেসে বলল,“বললেই প্রমাণ হবে আমি তোমাকে ভালোবাসি? না বললে কি বাসি না?”

ইলোরা মুখ ফুলিয়ে বলল,“তাই বলে একবারও বলবে না?”

“শোনো ইলোনি। মুখে ভালোবাসি বলি না মানে এই না যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না। ভালোবাসা হচ্ছে একটা অন্যরকম অনুভূতি। শুধু মুখে বললেই সেই অনুভূতি সম্পূর্ণ প্রকাশ করা যায় না। তার চেয়ে ভালো হৃদয়ের থেকে শোনা। এই যে তুমি আমার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছো। বুকের মধ্যের ঢিপঢিপ আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছ তো। কান পেতে শোনো এই হৃদস্পন্দন কী বলতে চাইছে। প্রত্যেকটা স্পন্দন তোমাকে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিবে।”

ইলোরা মুগ্ধ হয়ে গেল এরেনের ভালোবাসার বিশ্লেষণ শুনে। সে এরেনের বুক থেকে মাথা তুলে তার চোখে চোখ রেখে বলল,“আমি জানি এই মানুষটা আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।”

এরেন প্রশস্ত হেসে ইলোরার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর আবার ইলোরাকে বুকের সাথে চেপে ধরল। ইলোরা চোখ বন্ধ করে এরেনের বুকে মাথা রেখে চুপটি মেরে বসে রইল। একসময় ইলোরার চোখ দুটো লেগে এল। ঘুম ভাঙল এরেনের ডাকে। ইলোরা চোখ পিটপিট করে খুলে এরেনের বুকে মাথা রেখেই বলল,“পৌঁছে গেছি?”

এরেন ইলোরাকে সোজা করে বসিয়ে দিতে দিতে বলল,“না রে পাগলী। বাইরে তাকাও।”

এরেনের কথায় ইলোরা ভ্রু কুঁচকালো। এরেন জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে ইশারা করতেই সে বাইরে তাকাল। বাইরে তাকিয়েই প্রশ্ন করল,“কী?”

এরেন বাইরে দৃষ্টি রেখে বলল,“কিছু মনে পড়ে না তোমার? ছয় মাস আগে এখানেই বাস নষ্ট হয়েছিল। আর সেই কারণেই আজ তুমি আমার স্ত্রী।”

ইলোরা এবার বুঝতে পেরে হালকা হাসল। এরেন ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে বলল,“চলো আরেকবার বিয়ে করি। করবে না-কি আবার বিয়ে?”

ইলোরা আবার হাসল তবে সেই সাথে ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাসও বেরিয়ে আসলো। এরেন ইলোরার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,“আমাদের বিয়েটা নিয়ে এখনও কি আফসোস হয় তোমার?”

ইলোরা এরেনের দিকে তাকিয়ে বলল,“তোমার কী মনে হয়? এমন একটা মানুষকে নিজের করে পেয়েও কোনো মেয়ে আফসোস করতে পারে? আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। বরং এর জন্য আমি শুকরিয়া জানাই আল্লাহর কাছে। আমার আফসোস শুধু আমার পরিবারের জন্য। বাবা-মা আজও জানতে পারল না তাদের আদরের মেয়ের বিয়ের ছয় মাস পার হয়ে গেছে। ভাই যেদিন জানবে সেদিন সে খুব কষ্ট পাবে। কারণ আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ঘটনাটাই তার থেকে লুকিয়েছি।”

ইলোরার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। এরেন বুঝতে পেরে ইলোরার মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,“কষ্ট পেয়ো না। আমার ফাইনাল এক্সাম পর্যন্ত সময় দাও। তারপর সব ঠিক করে দেবো আমি। এখন মন খারাপ করে থেকো না প্লিজ।”

ইলোরা কোনো কথা বলল না। এরেন কিছুক্ষণ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তারপর ফিসফিস করে ডাকল,“ও বউ।”

ইলোরা ভ্রুকুটি করে এরেনের মুখের দিকে তাকাল। এরেন দুষ্টু হেসে বলল,“কিশোরগঞ্জ গিয়ে তোমাকে মাঝরাতে অন্ধকারে বসিয়ে রাখব।”

“কেন?”

“অনেকদিন ধরে তোমার ভীতু চেহারাটা দেখি না। সেই যে প্রথমদিন দেখেছিলাম। তারপর আর তোমার ভূত ভীতি দেখার সুযোগ হয়নি। তুমি জানো? সেদিন তোমার ওমন বোকা বোকা কথা শুনে আমার আক্কেলগুড়ুম হয়েছিল। মানে আজকালও কেউ ওসব আজগুবি কথা বিশ্বাস করে?”

ইলোরা গাল ফুলিয়ে বলল,“আমি ছোটো বেলা থেকেই ভয় পাই। মজা করছো কেন তুমি?”

“মজা করছি না তো।”

“করছো তো। ওহ্ হ্যাঁ, মনে পড়েছে। সেদিন তোমাকে ওমন প্যাকেট সাজতে দেখে আমার পেটফাটা হাসি পাচ্ছিল। কিন্তু সেদিন বেয়াদবি হয়ে যাবে ভেবে হাসতে পারিনি।”

“সিরিয়াসলি? ওই সিচুয়েশনে পড়েও তোমার হাসি পাচ্ছিল? তুমি যেমনি ছোটো বেলা থেকে ভূতে ভয় পাও তেমনি আমি ছোটো বেলা থেকে শীতে ভয় পাই। অতিরিক্ত শীত পড়লে রীতিমতো ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করি।”

ইলোরা ফিক করে হেসে বলল,“শীতকাতুরে।”

এরেন বলল,“তবে আগামী শীত থেকে আমার কাঁপা-কাঁপি অনেকটা কমে যাবে আশা করি।”

ইলোরা প্রশ্ন করল,“তাই না-কি? কীভাবে গো?”

এরেন ইলোরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,“তখন আমার বউ আমার কাছে থাকবে গো। বউকে সারাক্ষণ অক্টোপাসের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখব নিজের সাথে।”

ইলোরা এরেনের বাহুতে হালকা ধাক্কা দিয়ে লাজুক হেসে বলল,“অসভ্য!”

এভাবেই তাদের দুজনের ফিসফিস আলাপন চলতে থাকল। পেছনের সিটে অরিশা আর নাদিয়া বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তাদের বিপরীত পাশে ডালিয়া আর তাহসিন মিলে হাজারো কথার মালা গাঁথছে। বেলা এগারোটা চারে কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে বাস থামল। ওরা সবাই বাস থেকে নেমে একটা লেগুনায় চড়ে বসল। ড্রাইভারকে মিজানুর রহমানের নাম বলার সাথে সাথেই সে চিনে ফেলেছে। লেগুনার একপাশের সিটে বসেছে এরেন,ইলোরা আর ডালিয়া। আর অপর পাশে বসেছে তাহসিন,অরিশা আর নাদিয়া। নানা কথার মাঝে অরিশা এরেনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,“ভাইয়া, আমরা কিন্তু ডাবল ট্রিট পাওনা।”

এরেন হেসে প্রশ্ন করল,“ডাবল কেন?”

“একা একা আমাদের বান্ধবীকে বিয়ে করে নিয়েছেন সেই ট্রিট। আরেকটা হচ্ছে আজ যে আমরা আপনার বউয়ের সাথে একসাথে এতটা সময় কাটানোর সুযোগ করে দিলাম সেইজন্য।”

“তোমরা সুযোগ দিলে মানে?”

নাদিয়া বলল,“মানে আমরা কেউ যদি ইলোরার পাশে বসতাম তাহলে তো আপনি এমন সুবর্ণ সুযোগ পেতেন না। সো এই কারণে তো আমরা ট্রিট পেতেই পারি তাই না?”

এরেন বলল,“ওরে শ্যালিকারা, নিষ্পাপ শিশুর মতো দুলাভাই পেয়ে এমন অবিচার করার প্ল্যান করেছ?”

ইলোরা ভ্রু কুঁচকে বলল,“তুমি নিষ্পাপ শিশুর মতো জানতাম না তো। হায় হায়! এই শিশুর সাথে আমি সংসার করব কীভাবে?”

এরেন বলল,“তুমিও কি এখন আমার বিপক্ষে কথা বলার প্ল্যান করেছ? এটা কিন্তু ঠিক হবে না বলে দিলাম।”

ডালিয়া বলল,“কেন ঠিক হবে না? অবশ্যই ঠিক হবে। ও তো সত্যের পক্ষে আছে। তাই না ইলো?”

ইলোরা ঠোঁট টিপে হাসল। তাহসিন বলল,“তাহলে এই কথাই রইল। ঢাকায় ফিরে এরেন ভাই আমাদের সবাইকে ট্রিট দিবে।”

বাকি সবাই মিলে তাহসিনের কথায় তাল মিলালো। ইলোরা ফিক করে হেসে উঠল। ইলোরাকে হাসতে দেখে এরেন মুখটা ছোটো করে বলল,“হাসো হাসো, এদিকে যে ঢাকায় ফিরে তোমার জামাই ফকির হতে চলেছে তাতে তোমার কিচ্ছু যায় আসে না।”

ইলোরা বলল,“তুমি যে এত কিপ্টা জানতাম না তো। ট্রিট দিলেই তুমি ফকির হয়ে যাবে? এমন কথা কস্মিনকালেও শুনিনি আমি।”

“শোনোনি তো আজ শোনো। যেদিন আমি ফকির হয়ে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ঘরজামাই থাকব সেদিন বুঝবে।” এরেনের কথায় এবার ইলোরার সাথে সবাই মিলে হাসতে শুরু করল।

চলবে………………….🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here