সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-৪১

0
640

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৪১

বিকেলের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ছাদে বসে উপন্যাসের বই পড়ছে মিথিলা। মনোযোগ দিয়ে বইয়ে চোখ বুলাচ্ছে আর মাঝে মাঝে আনমনে কিছু ভেবে মুচকি হাসছে। তখন ইলোরা ছাদে এল। মিথিলার কাছে এগিয়ে গিয়ে তার পাশ ঘেঁষে বসে পড়ল। মিথিলা বোনের আগমন বুঝতে পেরেও বইয়ের থেকে চোখ সরাল না। মিনিট খানেক পর ইলোরা বলে উঠল,“এত বড়ো হয়ে গেলি কবে রে মিথি?”

মিথিলা বই থেকে চোখ উঠিয়ে প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,“বুঝলাম না।”

ইলোরা মৃদু হেসে সামনের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল,“লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছিস অথচ দেখে বুঝার উপায় নেই। অবাক করা বিষয়!”

মিথিলা থতমত খেয়ে গেল। শুকনো একটা ঢোক গিলে কাঁপা গলায় বলল,“এসব কী বলছো আপ্পি?”

ইলোরা একইভাবে বলল,“যা সত্যি তাই বলছি। যাইহোক, রনি ভাইয়ার সাথে কতদিনের রিলেশন?”

মিথিলা ভড়কে গেল। হাতের বইটা বন্ধ করে এদিক-ওদিক চঞ্চল দৃষ্টি বিচরণ করতে লাগল। এভাবে ধরা পড়ে যাবে তা সে ভাবেওনি। তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে তো তারা দুজন ছাড়া আর কেউ জানে না। তাহলে বোন জানল কীভাবে তাই ভাবছে সে। ইলোরা প্রশ্ন করল,“ভয় পাচ্ছিস না-কি?”

মিথিলা ভীতু কন্ঠে প্রশ্ন করল,“তুমি জানলে কীভাবে?”

“জেনেছি কোনোভাবে। এখন যা জিজ্ঞেস করলাম তার উত্তর দে।”

মিথিলা মাথা নিচু করে বলল,“প্রায় একবছর হয়েছে।”

“শুরু হলো কীভাবে?”

“উনি আমাকে আগে থেকেই পছন্দ করত। আমাকে প্রপোজ করার পর আমি প্রথমে ভয়ে একসেপ্ট করিনি। কিন্তু তারপর যখন দেখলাম উনি আমাকে নিয়ে খুব সিরিয়াস তখন একসেপ্ট করেছি।”

“কিন্তু তোদের দেখে তো মনেই হয় না তোদের মাঝে অন্য কোনো সম্পর্ক আছে।”

“আমরা একে অপরের সাথে খুব একটা কথা বলি না। উনি মাঝে মাঝে কলেজ গেইটের সামনে যায়। তখন দু’একটু কথা হয়। আর মাঝে মাঝে আম্মুর ফোন দিয়ে কথা বলি।”

ইলোরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,“ছাড়তে পারবি ভাইয়াকে?”

মিথিলা এবার চোখ তুলে তাকাল। তার চোখের কোণের চিকচিকে পানিটুকু ইলোরার দৃষ্টিগোচর হলো না। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। মিথিলা অসহায় কন্ঠে বলল,“সবাইকে জানিয়ে দিবে আপ্পি?”

ইলোরা থেমে গেল। তারপর ছাদের সিঁড়িতে পা রেখে বলল,“না।”

মিথিলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ধরা পড়ে গেলেও এখন আর ভয় করছে না। কিছুক্ষণ সেভাবেই বসে থেকে সেও বইটা হাতে নিয়ে উঠে ছাদ থেকে নেমে গেল।

আগামীকাল বৌভাতের অনুষ্ঠান হবে তাই আজ রাত থেকেই সব প্রস্তুতি চলছে। ইলোরাদের কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনরা এসেছে। তারা সবাই কাজে ব্যস্ত। মালিহা বেগম মুখ ভার করেই সব কাজ করছেন। সারাদিন এরেনের ফোন না পেয়ে রাতের বেলা ইলোরা নিজেই ফোন করল। কয়েকবার রিং হওয়ার পর এরেন ফোন রিসিভ করল। ইলোরা চিন্তিত কন্ঠে বলল,“সারাদিনে ফোন করলে না যে? আমি চিন্তায় ছিলাম জানো না? কী অবস্থা ওদিকের?”

এরেন বলল,“ভালো না। বুড়ি প্রথমে বলল আমি বাচ্চা নই। আমাকে নিয়ে ভাবিস না। অথচ এখন তো তার উল্টো কাজ করছে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে বসে আছে। থেকে থেকে কেঁদেই চলেছে।”

“আঙ্কেল জানে?”

“বাবা এখনও বাসায় ফেরেনি। তাকে নিয়েই চিন্তায় আছি। কী উত্তর দিবো তার কাছে?”

ইলোরা প্রশ্ন করল,“খেয়েছো?”

এরেন ছোটো একটা শব্দ করল,“উঁহু।”

“কেন?”

“ইচ্ছে করছে না।”

ইলোরা গম্ভীর গলায় বলল,“অসুস্থ হতে চাও তুমি?”

“বাদ দাও। ক্ষুধা পেলে খেয়ে নেব। তোমাদের বাসার কী খবর?”

“এখানে সবাই কাজে ব্যস্ত। কাল আসছো তো?”

এরেন ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,“জানি না।”

ইলোরা ব্যস্ত হয়ে বলল,“জানি না মানে কী? আমি কোনো ‘না’ শুনতে চাই না। আপুকে সাথে নিয়ে আসবে তুমি।”

“ওর যা মনের অবস্থা তাতে ও রাজি হবে না। তাছাড়া ওখানে রনি-মিথিলা দুজনেই থাকবে। ওদের একসাথে দেখলে ও আরও বেশি কষ্ট পাবে।”

ইলোরা কিছু বলল না। জারিনের জন্য তারও কষ্ট হচ্ছে। এত ভালো মনের মেয়েটাকে আল্লাহ্ এমন কষ্ট কেন দিলো? এরেনের কথা ভেবে ইলোরার আরও খারাপ লাগছে। বোনের চিন্তায় ছেলেটা কতটা কষ্ট পাচ্ছে তা ইলোরা কথা শুনেই বুঝতে পারছে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর এরেন মৃদু কন্ঠে ডাকল,“ইলোনি।”

ইলোরা নড়েচড়ে বসে সাড়া দিলো,“হুঁ।”

এরেন ভার গলায় বলল,“তোমাকে খুব মিস করছি। শক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।”

ইলোরার চোখে পানি এসে গেল। ছেলেটা মনের একটু প্রশান্তির জন্যই যে এ কথা বলছে তা সে বেশ বুঝতে পারছে। কিন্তু কথাটা শুনে এখন তার কান্না পাচ্ছে। ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে মানুষটার কাছে। একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে কষ্ট পেয়ো না। তবু সে নিজেকে সামলে বলল,“কাল আসছো তো। তখন না হয় শক্ত করে জড়িয়ে ধোরো।”

এরেন মেকি হেসে বলল,“তখন তো লজ্জা পাবে।”

ইলোরাও মেকি হাসল। আরও কয়েক মিনিট কথা বলে তারা ফোন রেখে দিলো।


সকাল দশটার মধ্যেই অনন্যার বাবা-মা তাদের কয়েকজন আত্মীয় নিয়ে ঢাকা চলে এসেছেন। ইলোরাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও আসা শুরু হয়েছে। গতরাত থেকেই ডেকোরেশনের কাজ চলছে। বাবুর্চিরা রান্নায় ব্যস্ত। সাকিব, রনি আর সাকিবের চাচাতো ভাই সব দেখাশোনা করছে। সকাল থেকে সাকিব-রনি এরেনকে কয়েকবার ফোন করেছে। কিন্তু এরেন বলছে তার শরীরটা ভালো লাগছে না, তাই সে কিছুক্ষণ পরে আসবে। একমাত্র ইলোরাই জানে এরেন মিথ্যা বলেছে। দুপুরের কিছুক্ষণ আগে ইলোরার বন্ধুমহল চলে এল। তারা এসে অনন্যাকে সাজানোর কাজে লেগে পড়েছে। তারপর এরেনও চলে এল। ইলোরা এরেনকে দেখে ছুটে গিয়ে প্রশ্ন করল,“আপুকে আনলেই না?”

এরেন বলল,“বলেছিলাম, ও রাজি হয়নি।”

আশেপাশে আত্মীয়-স্বজনরা থাকায় এর থেকে বেশি কথা বলতে পারেনি তারা। দুপুরের মধ্যে মানুষজনে বাড়ি ভর্তি হয়ে গেল। শুরু হলো খাওয়া-দাওয়া। অনন্যাকে সাজিয়ে তাকে নিয়ে ইলোরারা সবাই বসার ঘরে বসে আছে। মেহমানরা একটু পর পর এসে বউ দেখে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার অনন্যার হাতে গিফট বক্স ধরিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। অনন্যাকে দেখে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বেশি মানুষের ভিড়ে তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। ইলোরা এত গরম সহ্য করতে না পেরে বলল,“আমি এই ভারী ড্রেস চেঞ্জ করে হালকা ড্রেস পরে আসছি। নইলে আজ গরমে ইন্তেকাল করব মনে হচ্ছে।”

ইলোরা রুমে ঢুকে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে আলমারি থেকে ড্রেস বের করল। তখনই দরজা আটকানোর শব্দে সে চমকে ফিরে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে এরেন দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে তাকে জাপটে ধরল। হঠাৎ এরেনের এহেন কাজে ইলোরা তাল সামলাতে না পেরে দু’পা পিছিয়ে আলমারির সাথে ধাক্কা খেল। আকস্মিক ঘটনায় সে প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরে নিজেকে স্বাভাবিক করে এরেনের পিঠে হাত রাখল। এরেন তাকে এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে তার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তবু সে কিছু বলল না। এরেনের নিঃশ্বাস দ্রুত বইছে। তার গরম নিঃশ্বাস ইলোরার ঘাড়ে পড়ছে। এরেনের কোনো হেলদোল নেই দেখে ইলোরা এরেনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,“কী হলো হঠাৎ? এমন করছো কেন?”

এরেন কোনো উত্তর দিলো না। ইলোরা নরম কন্ঠে বলল,“শান্ত হও। এমন কেউ করে? বাড়ি ভর্তি মেহমান। দরজা আটকে রুমে বসে থাকলে সবাই কী ভাববে?”

এরেন ইলোরাকে আরও কাছে টেনে কানের দু ইঞ্চি নিচে গভীরভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ইলোরা মৃদু কেঁপে উঠল। সে কাঁপা হাতে এরেনের মুখটা তুলে ধরে বলল,“আমি না-কি বেশি ইমোশনাল? তো এখন তুমি এমন করছো কেন?”

এরেন দুহাতে ইলোরার কোমর জড়িয়ে ধরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,“সত্যিকারের ভালোবাসাগুলো এমন কেন ইলোনি? যারা গভীরভাবে ভালোবাসে তাদের বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়। কষ্ট পেয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রেও কি এমন হবে? আমি পারব না তোমাকে হারিয়ে ওমন কষ্ট পেতে।”

ইলোরার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। সে এরেনের শার্টের কলার চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ধরা গলায় বলল,“কেন এমন কথা বলছো? আমি তোমার স্ত্রী। হারাবে কেন? কোনোদিন আমাকে হারিয়ে যেতে দেখলে এভাবে শক্ত করে ধরে আটকে রাখবে। তোমার থেকে হারানোর সাধ্য নেই আমার। স্ত্রীকে আটকে রাখো না নিজের কাছে। সেই প্রথম থেকে তুমিই তো আমাকে সবসময় বুঝিয়েছ। আর আজ তুমিই হারানোর ভয় পাচ্ছ!”

এরেন ইলোরাকে বুকে চেপে ধরে মাথায় চুমু খেল। ইলোরা চোখ বন্ধ করে প্রিয় মানুষটার স্পর্শ অনুভব করল। কিছুক্ষণ সেভাবেই কাটানোর পর ইলোরা বলল,“শান্ত হও। বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে?”

এরেন ছোটো একটা শব্দ করল,“হুঁ।”

“আচ্ছা এখন বলতে হবে না। বাসায় ফিরে ফোনে বোলো। স্বাভাবিক হয়ে বাইরে যাও। নইলে সবাই খোঁজাখুঁজি করবে।”

এরেন ইলোরাকে ছেড়ে দিলো। যত্ন করে ইলোরার চোখের কোণে জমে থাকা জলটুকু মুছে দিয়ে গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো। তারপর মেকি হেসে দরজা খুলে বাইরে চলে গেল। ইলোরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল। খাওয়া-দাওয়া শেষে আস্তে আস্তে বাড়ি খালি হতে শুরু করল। বিকেলের দিকে সবার থেকে বিদায় নিয়ে অনন্যা আর সাকিবকে নিয়ে মিজানুর রহমানরা কিশোরগঞ্জ রওনা দিলেন। মিথিলা, ডালিয়া আর ইলোরার চাচাতো ভাইও তাদের সাথে গেল। তারা চলে যাওয়ার পর এরেন, রনি আর ইলোরার বন্ধুরাও সবাই চলে গেল।


রাত এগারোটা পাঁচ বাজে। বাসায় আজ ইলোরা, মালিহা বেগম, সাজিদ হোসেন আর ইলোরার কাকার পরিবার আছেন। ইলোরা ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। ইলোরা চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছে। একটু পর পর সে ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। এখনও এরেনের ফোন এল না। সে নিজেও কয়েকবার কল করেছে, কিন্তু প্রতিবারই রিং হয়ে কেটে গেছে। এরইমধ্যে ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠল। ইলোরা লাফ দিয়ে উঠে বসল। ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরেই ব্যস্ত হয়ে বলল,“এতক্ষণ কী করছিলে? নিজেও ফোন করোনি আর আমার ফোনও ধরোনি।”

এরেন ওপাশ থেকে বলল,“আম্মু পাশে ছিল তাই ধরিনি ম্যাম। উতলা হয়েন না।”

ইলোরা প্রশ্ন করল,“আপু কোথায়?”

“রুমে আছে।”

“আঙ্কেল জানে সবকিছু?”

এরেন বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে বলল,“বুড়ি সবসময় বাবা বাসায় এলে তার সাথে ডিনার করে। গতকাল ও খেতে আসছিল না বলে বাবা ওর রুমে গিয়েছিল। আম্মী অনেক বারণ করেছিল তবু শোনেনি। বুড়ির রুমে গিয়ে দেখে ওর সম্পূর্ণ রুম এলোমেলো। আর ওর মুখের অবস্থা দেখে বাবা অস্থির হয়ে উঠেছিল। বারবার জিজ্ঞেস করছিল কী হয়েছে। বুড়ি কিছু বলতে পারেনি। আর আম্মী ভয়ে চুপ ছিল। তাই বাবা আরও সন্দেহ করে। তারপর আমি ভেবেছিলাম বাবা রনিকে খুব পছন্দ করে। বুড়ি ওকে পছন্দ করে বললে হয়তো রাগ করবে না। তাই আমি বুড়ির ব্যাপারটা ঠান্ডা মাথায় বাবাকে বুঝিয়ে বলেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম বাবা হয়তো বুড়িকে বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু সে করল তার উল্টোটা।”

ইলোরা আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করল,“কী?”

এরেন হতাশ গলায় বলল,“আমি ভাবতেও পারিনি বাবার রাগ গিয়ে পড়বে মিথিলার ওপর। বুড়ির অবস্থা দেখে বাবার মাথা ঠিক নেই এখন। গতকাল রাত থেকে শুধু মিথিলা আর সাকিবকেই বকে যাচ্ছে। তার ধারণা সাকিব ওর বোনকে বেশি ভালোবাসলেও ঠিকমতো শাসন করেনি। তাই এই বয়সে প্রেম করছে। আমি আর আম্মী তাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেও পারছি না। বাবা বুড়িকে শান্ত করার জন্য বলেছে যে করেই হোক রনির সাথে ওর বিয়ে দিবে।”

ইলোরা অবাক হয়ে বলল,“কিহ্! কিন্তু কীভাবে? রনি ভাইয়া তো আপুকে ভালোবাসে না।”

এরেন চিন্তিত কন্ঠে বলল,“আমিও বুঝতে পারছি না। বাবাকে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না। আবার আমাদের সম্পর্কটা নিয়েও ভয়ে আছি। এসব কারণে বাবা আমাদের সম্পর্কে আপত্তি জানালে কী করব আমি?”

ইলোরা থমকে গেল। সত্যিই তো। এরেনের বাবা যদি নিজের মেয়ের জন্য এখনই মিথিলা আর সাকিবের ওপর রেগে থাকে, তাহলে তো তাদের বিয়ের কথা তুলতেই পারবে না। ইলোরা মন খারাপ করে বলল,“তাহলে এখন উপায়?”

এরেন ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,“জানি না। এখন বাবা কী করে তাই দেখতে হবে। দেখি বুড়িকে দিয়ে বাবাকে বুঝানো যায় কি না।”

ইলোরা থমথমে গলায় বলল,“আমার ভয় লাগছে।”

এরেন বলল,“পাগলী, একটু ভয় তো আমারও হচ্ছে। কিন্তু তুমি ভেঙে পড়ো না প্লিজ। আমি তো বলেছি আমি তোমাকে ছাড়ব না। আমার লজ্জাবতীটাকে ছাড়া কি আমি ভালো থাকতে পারব? নিজের ভালোবাসার ওপর একটু ভরসা রাখো।”

ইলোরা নিজেকে সামলে বলল,“আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়বে না। কিন্তু কোনো একটা ঝামেলা তো হবেই। আমার সেজন্যই বেশি ভয় লাগছে।”

“দেখা যাক কী হয়।”

ইলোরা কিছু একটা ভেবে বলে উঠল,“এই, এখন তুমি আমাকে বলছো নিজেকে সামলাতে। অথচ দুপুরে তুমি নিজে কী করেছ? এই প্রথম আমি তোমার চোখে ভয় দেখেছি।”

এরেন মেকি হেসে বলল,“তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। বারবার বাবার কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাছাড়া আমার কী দোষ? তুমিই তো গতকাল রাতে বলেছিলে আজ তোমার বাসায় গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। তুমি যা বলেছো আমিও তাই করেছি।”

ইলোরা হালকা শব্দ করে হাসল। এরেনও হেসে বলল,“এভাবে হেসো না লজ্জাবতী। নিজেকে আটকাতে না পেরে চলে আসতে পারি তোমার কাছে। কাছে চলে গেলে কিন্তু বাসরও করে ফেলব।”

ইলোরা লজ্জা পেয়ে মৃদু কন্ঠে বলল,“কোনো কথা মুখে আটকায় না? অসভ্য!”

এরেন হাসল। এক মুহুর্তের জন্য সে সব দুশ্চিন্তা ভুলে প্রেয়সীর সাথে একের পর এক কথামালা সাজাতে লাগল।

চলবে……………………🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here