সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-৪৭

0
579

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৪৭

সকালের সূর্যোদয় দেখার মাঝে আলাদা একটা আনন্দ আছে। পূর্বাকাশে একটু একটু করে লালচে আভা ছড়িয়ে পড়ে সূর্যের আগমন ঘটে। তারপর পুরো পৃথিবী ঝকমকে রোদে ভরে যায়। বেলকনির কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ সূর্যোদয় দেখল ইলোরা। মাথায় তার একরাশ দুশ্চিন্তা। তবু সবার সামনে ঠোঁট জোড়া প্রসারিত রাখতে হচ্ছে। নানা রকম চিন্তায় ছেদ পড়ল ফোনের রিংটোনের শব্দে। ইলোরা ভাবল এরেন ফোন করেছে। দ্রুত পায়ে রুমে ঢুকে শিয়রের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিল। কিন্তু স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল আননোন নাম্বার। সকাল সকাল আননোন নাম্বার দেখে রিসিভ করতে ইচ্ছে করল না। তাই ফোনটা রেখে দিলো। মিথিলা এখনও ঘুমাচ্ছে। ডালিয়া রুমে নেই।‌ ইলোরা ফোন রেখে রুম থেকে বেরোতে যেতেই পুনরায় ফোনটা বেজে উঠল। ইলোরা এবার গিয়ে ফোনটা রিসিভ করল। সালাম দিতেই ওপাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠস্বর শোনা গেল। ইলোরা ভ্রুকুটি করে ফেলল। লোকটা নিজেই জিজ্ঞেস করল,“কেমন আছো?”

ইলোরা বলল,“ভালো আছি। কে আপনি?”

“আমি তমাল।”

“কোন তমাল?”

“চেনোনি?”

“সরি। আপনি বোধ হয় ভুল নাম্বারে কল করেছেন। আমি আপনাকে চিনি না।”

“রিয়েলি?”

ইলোরা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,“আশ্চর্য! একজন অচেনা মানুষকে আমি মিথ্যা বলব কোন দুঃখে?”

ওপাশ থেকে লোকটার দৃঢ় কন্ঠ,“আচ্ছা মানলাম। কিন্তু তুমি আমাকে চেনো।”

“কীভাবে?”

“তোমার উডবি হাসবেন্ড তমালকে চেনো?”

ইলোরার এবার টনক নড়ল। চোখ বড়ো করে সে ফট করে ফোনটা কেটে দিলো। এই লোকটা তার নাম্বার কোথায় পেল সেটাই ভাবতে লাগল। ফোনটা টেবিলের ওপর রেখে রুম থেকে বেরুলো। গতরাত থেকে না খেয়ে থাকায় প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখল মালিহা বেগম আর অনন্যা সকালের নাস্তা বানাচ্ছে। ইলোরাকে দেখে অনন্যা একগাল হেসে বলল,“কী ম্যাডাম? ক্ষুধা পেয়েছে?”

ইলোরা উপর নিচে মাথা ঝাঁকাল। মালিহা বেগম বললেন,“এজন্য বলেছিলাম খেয়েদেয়ে ঘুমা। এখান থেকে রুটি নিয়ে খা।”

ইলোরা চুপচাপ একটা প্লেটে রুটি আর ডিম ভাজি নিয়ে চলে গেল। টেবিলে না বসে সোজা বসার ঘরে চলে গেল। ডালিয়া সোফায় বসে টিভি দেখছে। ইলোরা তার পাশে বসে পড়ল। ডালিয়া রিমোট দিয়ে টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে বলল,“শুনলাম, গতকাল রাতে ভাইয়ের থেকে তমাল ভাইয়া তোর নাম্বার নিয়েছে। ফোন করেছে?”

ইলোরা রুটি মুখে তুলতে গিয়েও থেমে গেল। বিরক্তি নিয়ে বলল,“একটু আগেই করেছে।”

ডালিয়া আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, তারপর?”

“প্রথমে আমি চিনতে পারিনি। পরে পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে ফোন কেটে দিয়েছি।”

“আর কোনো কথাই বললি না?”

“কী বলব আমি ওই লোকের সাথে? নিজের চিন্তায় বাঁচি না আবার আসছে আরেক ঝামেলা।”

ডালিয়া আর কথা বাড়াল না। চুপচাপ টিভির দিকে মনোযোগ দিলো। টিভিতে একটা গান হচ্ছে। ইলোরা যখন টিভির দিকে তাকাল তখন গানের নায়িকার চরিত্রে থাকা মেয়েটার অন্য একটা ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে, আর তার প্রেমিক অদূরে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের চোখে শ্রাবণের ঢল আর বুকের মধ্যে পাথরচাপা কষ্ট। ইলোরার গলায় খাবার আটকে গেল। চোখ দুটোও হঠাৎ ছলছল করে উঠল। টিভির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করল। ডালিয়া কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ইলোরা আধখাওয়া প্লেটটা টেবিলে রেখে পানি খেয়ে রুমে চলে গেল। মিথিলা বিছানা গোছাচ্ছিল।‌ ইলোরার আসার শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। বোনের চোখে পানি দেখে সে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। সে কোনো প্রশ্ন করার আগেই ইলোরা এক ছুটে বেলকনিতে গিয়ে দরজা আটকে দিল। মিথিলা হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইল। বেলকনির দিকে পা বাড়াতেই ডালিয়া রুমে এসে বলল,“কী করছিস মিথি?”

মিথিলা সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল,“আপ্পির চোখে পানি কেন? বেলকনিতে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।”

ডালিয়া বেলকনির দরজার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে মেকি হেসে বলল,“ওসব কিছু না। বিয়ে করে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে তো, সেজন্যই কষ্ট হচ্ছে ওর।”

মিথিলার মনটাও এবার খারাপ হয়ে গেল। ডালিয়া বলল,“ওকে ডাকাডাকি করিস না। চল, ফুপি খেতে ডাকছে।”

ডালিয়ার সাথে মিথিলা চলে গেল। ইলোরা বেলকনির মেঝেতে বসে দুহাতে মুখ ঢেকে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। ঘনঘন শ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করছে। কেন জানি সে একটুও ভরসা পাচ্ছে না। এরেন এত বুঝানোর পরও তার মন কু গাইছে। বারবার মনে হচ্ছে সব শেষ হয়ে যাবে।


“বাবা রাজি হয়েছে।”

এরেন ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল। পেছন থেকে জারিনের উৎফুল্ল কন্ঠ শুনে ঘুরে দাঁড়াল। তার চোখে-মুখেও আনন্দ ঝলক দিয়ে উঠল। সেও জারিনের মতোই উৎফুল্ল হয়ে বলল,“সত্যি বলছিস বুড়ি? কখন? কীভাবে?”

জারিন ভাব নিয়ে বলল,“সম্পূর্ণ ক্রেডিট আমার। আমি বাবার পেছন পেছন ঘ্যানঘ্যান করে রাজি করিয়েছি। বলেছে আগামীকাল ভাবীর বাবার সাথে কথা বলবে। এখন আমার ঋণ পরিশোধ কর।”

এরেন ভ্রু নাচিয়ে বলল,“কী চাই?”

“এখন না। ভেবেচিন্তে পরে জানাব। আপাতত থ্যাংকস দে।”

এরেন ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে রুম থেকে বেরোতে বেরোতে বলল,“থাংকু।”

বড়োসড়ো একটা দুশ্চিন্তা থেকে এরেন মুক্তি পেয়েছে। এখন ইলোরাকে খবরটা জানালে মেয়েটাও দুশ্চিন্তামুক্ত হবে। এরেন ভাবল ইলোরাকে এখন ফোন না করে ভার্সিটিতে গিয়েই বলবে। কিন্তু ভার্সিটিতে যাওয়ার পর আজ ইলোরার সাথে কথা বলার কোনো সুযোগই পেল না। পুরোটা সময় সাকিব সাথে ছিল। তারপর ভাবল বাড়ি ফিরে ফোন করবে। বাড়ি ফেরার পর দুপুরে খাবার টেবিলে জাকির জামান আর আন্নি হকের সাথে কিছুক্ষণ কথাও হলো। যা বুঝা গেল, জাকির জামান খুব একটা সন্তুষ্ট না। তবে বিয়েতে অমত করছেন না। এরেন তাতেই খুশি। বিকাল তিনটার দিকে এরেন ইলোরাকে কল করল। কয়েকবার রিং হওয়ার পর ইলোরা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলল। এরেন সঙ্গে সঙ্গেই বলল,“সুখবর আছে মিসেস।”

ইলোরা কিছুটা আঁচ করতে পেরে বলল,“আঙ্কেল রাজি হয়েছে?”

“হুম। কাল তোমার বাবার সাথে কথা বলবে।”

দুদিনের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়ে ইলোরা আনন্দিত কন্ঠে বলল,“কীভাবে রাজি হলো?”

“জারিন রাজি করিয়েছে। দয়া করে এখান আর নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে বসে থাকবেন না।”

ইলোরা আবার চিন্তিত কন্ঠে বলল,“আঙ্কেন তো রাজি হলো। কিন্তু আব্বু আর ভাই যদি বিয়ে ভাঙতে না চায়?”

এ ব্যাপারে এরেনেরও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবু সে বলল,“তারা তোমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো শুনলে হয়তো জোর করে বিয়ে দিবে না। বিশেষ করে সাকিব এতটা নির্দয় হতে পারবে না। আমি এটা বুঝতে পারছি না, তোমার মতামত জানার কোনো প্রয়োজন বোধ করল না কেন তারা?”

“আমি তো তাদের কোনো সিদ্ধান্তে অমত করি না। সেজন্যই ভেবেছে এ ব্যাপারেও করব না। তাছাড়া তারা তো আমার ভালোই চায়।”

“হুম। দেখা যাক কী হয়।”

ইলোরা কিছু একটা ভেবে মুখ ফুলিয়ে বলল,“তুমি আজ সারাদিন পর মাত্র ফোন করলে।”

“সকালে ভেবেছিলাম ভার্সিটিতে গিয়েই তোমাকে খবরটা জানাব। কিন্তু সেই সুযোগটাই তো পাইনি।”

“মেসেজ করলেই হত।”

“মেসেজ করলে তোমার এই আনন্দিত কন্ঠটা শুনতে পেতাম।”

ইলোরা মুখ ভার করে বলল,“আজ ওই লোকটা ফোন করেছিল।”

এরেন প্রশ্ন করল,“কোন লোক।”

“যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

“স্বাভাবিক। লোকটার তো আর দোষ নেই। সে তো হবু বউ ভেবেই কথা বলতে চেয়েছে। কী কথা হলো?”

ইলোরা বিরক্তি নিয়ে বলল,“আমি কোনো কথা বলার সুযোগ দেইনি। পরিচয় জেনেই ফোন কেটে দিয়েছি। একটু আগে আবার কল করেছিল। আমি ধরিনি।”

এরেন ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,“ভালো করেছ। দুপুরে খাওয়া হয়েছে?”

“হুঁ।”

তারপর যেটুকু কথা হলো পুরোটা সময় ইলোরা তাদের বিয়ে নিয়েই বলল। এরেন মুগ্ধ হয়ে শুনল। মেয়েটার দুশ্চিন্তা দূর করতে পেরে তার শান্তি লাগছে। মনে মনে আল্লাহর কাছে চাইল এই সুখটা যেন স্থায়ী হয়।


পরদিন সকালেই জাকির জামান স্ত্রী আর ছেলে নিয়ে ইলোরাদের বাসায় চলে গেল। দোতলায় ওঠার সময় জাকির জামান বললেন,“এ বাড়ি ওনাদের নিজস্ব হলে নিচ তলায় থাকে না কেন?”

এরেন বলল,“নিচ তলা ভাড়া দিয়েছে।”

“এতটুকু জায়গা নিয়ে বাড়ি করেছে, তা আবার ভাড়া দেয়ার কী দরকার?”

এরেন বেশ বুঝতে পারল বাবা এখনও খুঁত খুঁজছে। হয়তো ইলোরার বাবা রাজি না হলেই সে খুশি হবে। এরেন আর কোনো কথা না বলে চুপ থাকল। এরেনের পরিবার হঠাৎ বাসায় আসায় ইলোরার পুরো পরিবার একটু বেশিই অবাক হয়েছে। যেখানে এরেনই সহজে আসতে চায় না সেখানে আজ বাবা-মা সহ এল কী মনে করে? তাও আবার কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করে। কেবলমাত্র ইলোরা আর ডালিয়া অবাক হলো না। সাকিব এরেনের পাশে বসে বারবার খোঁচাচ্ছে আর জিজ্ঞেস করছে তারা কী ব্যাপারে এসেছে। এরেন শুধু বলেছে,“বাবা-ই বলবে। অপেক্ষা কর।”

অনন্যা মেহমানদের জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে এল। সাজিদ হোসেন প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,“ভাই আপনারা এসেছেন, খুব খুশি হয়েছি। আপনার সাথে তো ব্যক্তিগতভাবে তেমন পরিচয়ও ছিল না আমার।”

জাকির জামান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গম্ভীর মুখে বললেন,“হ্যাঁ,আসতে হয়েছে একটা জরুরী দরকারে। আপনাদের সাথে একটা ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করা খুব প্রয়োজন।”

সাজিদ হোসেন প্রশ্ন করলেন,“কোন ব্যাপারে?”

“আপনার মেয়ের বিয়ের।”

জাকির জামানের উত্তর শুনে সাজিদ হোসেন, মালিহা বেগম, সাকিব আর অনন্যা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। অর্থাৎ তারা কিছুই বুঝতে পারছেন না। মালিহা বেগম বললেন,“ভাই, আপনারা মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন ঠিকই। কিন্তু একবারও কি জানতে চেয়েছেন মেয়েটা বিয়েতে রাজি কি না? কিংবা ওর কোনো পছন্দ আছে কি না?”

সাকিব বলল,“ও আব্বুর সিদ্ধান্তের ওপরে কখনও কোনো কথা বলে না আন্টি। আর ওর কোনো পছন্দ থাকলে সেটা আর কেউ না জানলেও আমি জানতাম। কিন্তু আপনি এসব কেন বলছেন?”

মালিহা বেগম ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,“না বাবা। তোমার ধারণা ভুল। তোমার বোন এ বিয়েতে রাজি না। আর তার নিজের পছন্দও আছে।”

পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো ইলোরার বুকটা ধক করে উঠল। না জানি এখন কী বলে সবাই। সবাই হতভম্ব হয়ে মালিহা বেগমের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এরেন মেঝের দিকে দৃষ্টি রেখে বসে আছে। মালিহা বেগম বললেন,“মানে? এসব কী বলছেন আপা? এমন হলে আমরা জানব না? কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন?”

“কারণ আপনার মেয়ে যাকে পছন্দ করে সে আমারই ছেলে। ওরা দুজনই দুজনকে খুব পছন্দ করে।”

আন্নি হকের কথাটা কর্ণগোচর হতেই কক্ষমধ্যের সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। কথাটা তাদের কারোরই ঠিক হজম হলো না। সাকিব বিস্মিত দৃষ্টিতে এরেনের নত মুখের দিকে তাকাল। মিনিট দুয়েক কেউই কোনো কথা মুখে আনতে পারল না। তারপর অনন্যা বলল,“এটা কী করে সম্ভব আন্টি? এমনটা হলে আমরা কেউ জানতাম না?”

আন্নি হক অনন্যার দিকে তাকিয়ে বললেন,“এটাই সত্যি মা।‌ ওরা একে অপরকে অনেকদিন ধরে পছন্দ করে।”

সাজিদ হোসেন আর মালিহা বেগম হতবুদ্ধি হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। সাজিদ হোসেন বললেন,“আপনাদের মতো আমিও অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু ছেলে-মেয়ের ভালোর কথা ভেবে অন্যায় আবদার নিয়ে আপনাদের কাছে আসতে হলো। আপনারা হুট করে বিয়ে ঠিক করার কারণে ওরা কেউই কিছু বলার সুযোগ পায়নি। আমি গতকাল জেনেছি। এখন কথা হচ্ছে, এটা জেনেও আপনারা মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দেবেন? মেয়ে তো খুশি না এতে।”

সাজিদ হোসেন গম্ভীর মুখে বললেন,“হঠাৎ করে এমন একটা খবর দিলেন ভাই। যে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তা ভাঙব কীভাবে?”

“সেটা অবশ্যই আপনার ব্যাপার। হুট করে এভাবে বিয়ে ঠিক করাটা আপনাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এখন হুট করে আবার বিয়ে না ভাঙলে আপনার মেয়ের অমতে আপনি তাকে বিয়ে দিতে চান? তাছাড়া এতে আমার ছেলের জীবনও জড়িয়ে আছে। ওরা যখন একে অপরকে পছন্দ করে তখন আমাদের উচিত ওদের পছন্দকে সমর্থন করা। আপনার মেয়েকে আমি আমার ছেলের বউ করতে চাই। এবার বাকিটা আপনাদের সিদ্ধান্ত।”

সাজিদ হোসেন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কী বলবেন কিছুই মাথায় আসছে না। তাদের ভুলটা তারা ঠিকই বুঝতে পারছে। কিন্তু ঠিক হওয়া বিয়ে কীভাবে ভাঙবেন? সাকিব হঠাৎ অনন্যাকে বলল,“ইলুকে ডাকো।”

ইলোরা চমকে উঠল। শুকনো একটা ঢোক গিলে সে হাত কচলাতে লাগল। অনন্যা এগিয়ে গিয়ে ইলোরার হাত ধরে পর্দার আড়াল থেকে সবার সামনে নিয়ে এল। ইলোরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। ভয়ে তার শরীর মৃদু কাঁপছে। সাজিদ হোসেন আর আন্নি হক সূক্ষ্ম চোখে ইলোরার মুখের দিকে তাকালেন। ভাবলেন, ছেলের পছন্দ খুব একটা খারাপ না। সাকিব এরেনের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,“এরেন, এসব কি সত্যি।”

এরেন মুখ তুলে সাকিবের দিকে তাকাল। তারপর দৃষ্টি ফিরিয়ে বড়ো একটা শ্বাস নিয়ে বলল,“হ্যাঁ।”

সাকিব এবার ইলোরার দিকে তাকিয়ে একই প্রশ্ন করল,“ইলু, এসব সত্যি?”

ইলোরা নত মাথাটা উপর নিচে হালকা ঝাঁকাল। সাকিব শান্ত গম্ভীর মুখে সোফা ছেড়ে উঠে কোনোদিকে না তাকিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগাল। অনন্যা তার পেছন পেছন গিয়ে কয়েকবার দরজা ধাক্কাধাক্কি করেও লাভ হলো না। ইলোরার চোখ পানিতে ভরে গেল। ভাইয়ের রাগটা যে সম্পূর্ণটা তার আর এরেনের ওপর, তা সে স্পষ্ট বুঝতে পারল। মালিহা বেগম মুখ ভার করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। সাজিদ হোসেন মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,“বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমাদের জানালে না কেন?”

ইলোরা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মুখ খুলে কোনো কথা বলতে পারল না। সাজিদ হোসেন মেয়ের নীরবতা দেখে বললেন,“ভেতরে যাও।”

ইলোরা মাথা নিচু করেই ধীর পায়ে হেঁটে ভেতরে চলে গেল। তারপর এরেন আর অনন্যা বাদে বড়োরা নিজেদের মধ্যে অনেকক্ষণ আলোচনা করল। সাজিদ হোসেন জানালেন তিনি এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। তবে আগামীকালের মধ্যে অবশ্যই একটা সিদ্ধান্ত জানাবেন। সাজিদ হোসেন, আন্নি হক আর এরেন সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার সময়ও সাকিব রুম থেকে বেরুলো না। এমনকি কিছুক্ষণ আগে ইলোরাও পর্দার আড়াল থেকে সরে নিজের রুমে চলে গেছে। এরেন পুনরায় আবার একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে বাড়ি ফিরল।

চলবে…………………..🌸

(রিচেক দেয়ার সময় পাইনি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here