সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-৫৭

0
624

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৫৭

পরপর কয়েকবার কারো ডাক কানে যেতেই ঘুম ভেঙে গেল ইলোরার। পিটপিট করে চোখ খুলতেই সাকিবের মুখটা চোখে পড়ল। সাকিব তখনও তাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ডেকে চলেছে। এত রাতে ভাইকে এভাবে ডাকতে দেখে ইলোরা লাফিয়ে উঠে বসল। ওড়নাটা ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে চোখ কচলে প্রশ্ন করল,“কী হয়েছে ভাই?”

সাকিব ইলোরার হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল,“সেসব পরে শুনিস। আগে আমার সাথে চল।”

ইলোরা অবাক হয়ে বলল,“কোথায়?”

সাকিব ইলোরার হাত ধরে টেনে রুম থেকে বেরোতে বেরোতে বলল,“বেশি প্রশ্ন করিস না।”

সাকিবের তাড়ায় ইলোরা কিছু জিজ্ঞেস করারও সুযোগ পেল না। বসার ঘরে পা রাখতেই দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত তিনটা বাজে। ইলোরা আরও অবাক হয়ে বলল,“ভাই, রাত তিনটা বাজে কী হলো হঠাৎ তোমার?”

সাকিব ততক্ষণে ইলোরাকে নিয়ে দরজার বাইরে বেরিয়ে গেছে। ইলোরার হাত ছেড়ে দরজাটা লক করতেই ইলোরা হন্তদন্ত হয়ে বলল,“আরে দরজা লক করছো কেন? বাইরে যাবে না-কি? কিন্তু এত রাতে?”

সাকিব ইলোরার একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিলো না। ইলোরার হাত ধরে আবার হাঁটা শুরু করল। গেট পর্যন্ত এসে দেখল গেট আগে থেকেই খোলা। ইলোরা বিস্ময় নিয়ে শুধু প্রশ্ন করেই চলেছে। সাকিব ইলোরাকে নিয়ে গেট পেরিয়ে রাস্তায় নেমে এল। তারপর আবার হাঁটা শুরু করল। অদূরেই একটা বাস দাঁড় করানো। সাকিবকে সেদিকে ছুটতে দেখে ইলোরার বুকটা ধক করে উঠল। এত রাতে হঠাৎ কী এমন হলো? আজ বিকেলেই অনন্যা, মিথিলা আর ডালিয়া কিশোরগঞ্জ গেছে। ওদের কারো কিছু হলো না তো! নাহলে সাকিবের তো এতরাতে বাসের দিকে ছোটার কথা না। বাসের সামনে এসে দাঁড়াতেই ইলোরা উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল,“ভাই, কী হচ্ছে এসব? এতরাতে তুমি কোথায় যেতে চাইছো? অনু আপ্পি, মিথি, ডালিয়া ঠিক আছে তো?”

সাকিব ইলোরার কথাটা না শোনার ভান করে বলল,“বাসে ওঠ তাড়াতাড়ি।”

“ভাই, কিছু তো বলো। আমার খুব ভয় করছে।”

“ওঠ তুই। সময় নষ্ট করিস না। বাসে উঠে সব বলছি।”

ইলোরা মাথা ঝাঁকিয়ে দ্রুত বাসে উঠে গেল। কিন্তু পুরো বাস ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে আছে। ইলোরা কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সাকিব এখনও উঠছে না। এদিকে ইলোরার ঘুমের রেশ কাটছে না। অন্ধকারের মধ্যে সে আন্দাজে কোন সিটে বসবে বুঝে উঠতে পারছে না। সাকিবের তাড়ায় ফোনটাও ফেলে রেখে এসেছে। ইলোরা ভাবল পিছিয়ে গিয়ে সাকিবকে ডাক দিবে। তাই ঢোক গিলে পেছন ফিরে এক পা বাড়াতেই হঠাৎ বাসের লাইট জ্বলে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজনের মিলিত কন্ঠের আনন্দ সূচক চিৎকার কানে এল। ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটল যে ইলোরা চমকে উঠে নিজেই ভয়ার্ত চিৎকার দিয়ে উঠল। মুহূর্তে তার চোখ থেকে ঘুম উবে গেল। পরক্ষণেই চারপাশে কিছু পরিচিত মুখ দেখে থমকে গেল। থতমত খেয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখল সাকিব, অনন্যা, ডালিয়া, মিথিলা, জারিন, মুনা, আফসার, অরিশা, নাদিয়া, টুম্পা সবাই দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইলোরা আহাম্মক বনে গেল। ফ্যালফ্যাল করে সবার দিকে তাকাল আর ভাবল, আজ তো তার জন্মদিন না। তাহলে? এসব কী? ইলোরার মুখোভাব দেখে একেকজন হুঁ হা করে হেসে উঠল। অনন্যা হাসতে হাসতে বলল,“সারপ্রাইজ পেয়ে এভাবে চোখ বড়ো করে তাকিয়ে আছিস কেন? এবার তুইও একটু হাস।”

ইলোরা দুচোখে বিস্ময় নিয়েই প্রশ্ন করল,“কিসের সারপ্রাইজ? রাত তিনটা বাজে ঘুম থেকে টেনে তুলে এসব কী হচ্ছে বলবে কেউ?”

ইলোরার কথায় জারিন খুক খুক করে কেশে ইলোরার কানের কাছে মুখ নিয়ে নিচু স্বরে বলল,“বেশি‌ প্রশ্ন না করে নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়ো। উত্তর এমনিতেই পেয়ে যাবে।”

ইলোরা ভ্রু কুঁচকে জারিনের দিকে তাকাল। জারিন চোখের ইশারায় সিটে বসতে বলল। ততক্ষণে সবাই নিজ নিজ সিটে বসে পড়েছে। ডান পাশের সামনের সিটে বসেছে সাকিব-অনন্যা। বাঁ পাশের দ্বিতীয় সারির সিটে বসেছে আফসার-মুনা। বাঁ সারির তৃতীয় সিটে বসেছে অরিশা-নাদিয়া। ডান সারির চতুর্থ সিটে বসেছে ডালিয়া-টুম্পা। পঞ্চম সারির বাঁ পাশে বসেছে জারিন-মিথিলা। ইলোরা হা করে সবার দিকে তাকিয়ে রইল। এভাবে বসার মানে কী? মনে হচ্ছে পরীক্ষার হলে সবাই নিজ নিজ সিটে বসেছে। একটুও ওলট-পালট হওয়া চলবে না। ইলোরা সবার দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে প্রশ্ন করল,“আমি কোথায় বসব?”

মুনা বলল,“পিছনে চলে যা। একদম ফাঁকা আছে।”

ইলোরা মুখ ফুলিয়ে বলল,“পিছনে আমি একা একা বসব?”

“আরে আমি তো ভালোর জন্যই বললাম। একা একা একদম নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবি।”

সাকিব সামনের সিট থেকে মাথা উঠিয়ে বলল,“বোন এত প্রশ্ন করিস না তো। ঘুম পাচ্ছে, পিছনে গিয়ে বসে পড়।”

সাকিবের কথায় ইলোরা অবাক হলো। তার ভাই কি না তাকে পিছনের সিটে একা বসতে বলছে! এটাও বিশ্বাস করতে হবে তাকে! বউকে পেয়েও তো এমন পালটায়নি তার ভাই। তাহলে এক রাতে কী হয়ে গেল? সবাই ইলোরাকে পিছনের সিটে বসতে তাড়া দিচ্ছে, তাদের ঘুম পাচ্ছে। সবাই যার যার সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করেছে। ইলোরা মুখ গোমড়া করে পেছনের দিকে এক পা এগিয়েও আবার থেমে গিয়ে মিথিলাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,“এই মিথি, বল না আমরা কোথায় যাচ্ছি।”

মিথিলা মুখ ফুলিয়ে বলল,“আপ্পি তুমি কি যাবে? আমার ঘুম পাচ্ছে।”

ইলোরা গাল ফুলিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে পিছনে চলে গেল। পিছনের দিকে দুই সারি ফাঁকা পড়ে আছে। ইলোরা ভাবল একদম পেছনে না বসে সামনেরটায় বসবে‌। কিন্তু তার ভাবনার মাঝেই হুট করে আবার বাসের লাইট বন্ধ হয়ে বাস চলতে শুরু করল। তার সাথে সাথে দুটো শক্ত হাত তাকে টেনে ডান দিকের একদম পিছনের সিটে নিয়ে নিল। ইলোরা তাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল। ভয়ে সে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে চিৎকার দিতে যেতেই একটা হাত তার মুখ চেপে ধরল। ইলোরার বুকে হাতুড়ি পেটা শুরু হলো। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে সে এক হাত মুখের কাছে এনে মুখ থেকে শক্ত হাতটা ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগল। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেল। হঠাৎ একটা কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই ইলোরা থমকে গেল। অতি পরিচিত কন্ঠে কেউ তার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,“আমি তোমাকে খেয়ে ফেলব না রাগ কুমারী। ছটফটানি থামাও।”

পরক্ষণেই অতিপরিচিত পারফিউমের গন্ধটা নাকে ধাক্কা লাগতেই ইলোরা একদম চুপ মেরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হাত দুটো থেকে সে ছাড়া পেয়ে গেল। ছাড়া পেয়ে ইলোরা সিটে সোজা হয়ে বসে অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে পাশের সিটের মানুষটার মুখ স্পর্শ করল। তখনই একটা ফ্ল্যাশ লাইট জ্বলে উঠল আর তার আলো পড়ল পাশের মানুষটার মুখে। ইলোরা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই এরেন শব্দ তুলে হেসে উঠল। ইলোরা রাগে-ক্ষোভে এরেনের বাঁ হাতের বাহুতে দু ঘা লাগিয়ে দিলো। এরেন একহাতে ইলোরাকে কাছে টেনে নিয়ে হাসতে হাসতে বলল,“কুল ডাউন বউ, কুল ডাউন। আর রেগে যেয়ো না।”

ইলোরা এরেনের থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে বলল,“ছাড়ো। রাত তিনটা বাজে ফাজলামি হচ্ছে?”

এরেন ইলোরাকে আরেকটু চেপে ধরে বলল,“উঁহু, প্রেম হচ্ছে।”

ইলোরা রাগত স্বরে বলল,“একদম ফাজলামি করবে না এখন। রাত তিনটা বাজে আমাকে ঘুম থেকে টেনে এনে এসবের মানে কী? এসব তোমার বুদ্ধি তাই না?”

এরেন দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,“এছাড়া কী আর করতাম বলো? আমার বউ তো দুদিন ধরে রেগে বোম হয়ে বসে আছে। হাজারটা ফোন দেয়ার পরও রিসিভ করছে না। এদিকে আমি বউয়ের শোকে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই বাধ্য হয়ে এসব করা‌।”

ইলোরা রাগত কন্ঠে অভিমান মিশিয়ে বলল,“গত এক সপ্তাহ ধরে যে নিজে ঠিকমতো ফোন করছো না আবার আমি ফোন করলেও তাড়া দেখাচ্ছ, সেই বেলায় কিছু না?”

এরেন অসহায় মুখে বলল,“আমার কী দোষ এতে? এক্সামের ডেট দিলো একমাস পিছিয়ে। তা না হলে তো এতদিনে এক্সাম শেষও হয়ে যেত। পরশু দিন এক্সাম শুরু। এখন আমার অবস্থাটা ভাবতে পারছো? পড়ার চিন্তায় মাথা ঘুরে যাচ্ছে। তোমাকে তো বলেছিলাম এক্সামের সময় একটু এমন হবেই।”

ইলোরা থমথমে মুখে বলল,“ভাইয়েরও তো এক্সাম। ও তো সারা দিন-রাত বই নিয়ে বসে থাকে না। তাহলে তুমি কেন বসে থাকো। এমন তো নয় যে তুমি সারা বছর পড়নি তাই এখন বইয়ে মুখ গুঁজেছ।”

এরেন বলল,“তোমার ভাইয়ের বউ সবসময় তার কাছেই থাকে, তাই ফোনে বকবক করা লাগে না। কিন্তু আমার তো সেই ভাগ্য হয়নি এখনও।”

ইলোরা কপাল কুঁচকে বলল,“বকবক মানে? আমার সাথে ফোনে কথা বলাকে তোমার বকবক মনে হয়?”

এরেন আমতা-আমতা করে বলল,“কী আশ্চর্য! এত ভুল ধরছো কেন? এটা তো আমি জাস্ট কথার কথা বললাম। তুমি জানো না? আমি পারলে তোমার সাথে চব্বিশ ঘন্টাও কথা বলতে পারি। তাহলে শুধু শুধু রাগ করছো কেন?”

এরেনের হাত আলগা দেখে ইলোরা তার থেকে সরে এসে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,“কথা বলতে হবে না। ভালোবাসা কি সারাজীবনই একরকম থাকে না-কি? আগে নতুন ছিলাম, এখন তো পুরোনোই হয়ে গেছি।”

এরেন ফোনটা হাত থেকে কোলের ওপর রাখল। তারপর ইলোরার দিকে ঝুঁকে এসে একহাত সিটে ঠেকিয়ে আরেক হাতে ইলোরার মুখটা নিজের দিকে ঘুরাল। এরেনের সাথে চোখাচোখি হতেই ইলোরা চোখ নামিয়ে নিল। এরেন মুচকি হেসে ইলোরার মুখটা আবার তুলে ধরে বলল,“তুমি আমার কাছে কোনোকালেই পুরনো হবে না ইলোনি। সেই প্রথমদিন জোৎস্নার আলোয় মনের অজান্তে আমি যেভাবে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তোমাকে দেখেছিলাম, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ঐ একই দৃষ্টিতে দেখব। যুগ যুগ ধরে একইভাবে ভালোবাসব। একইভাবে আমার রাগ কুমারীর রাগ ভাঙাব। হ্যাঁ আমার বয়স বদলাবে, কিন্তু আমি মানুষটা বদলাব না।”

ইলোরার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। সে কাঁপা গলায় বলল,“এমন কেন তুমি?”

এরেন টুকুস করে ইলোরার বাঁ গালে একটা চুমু খেয়ে বলল,“আমার লজ্জাবতীর লাজুক মুখ দেখার জন্য।”

ইলোরা অভিমানভরা গলায় বলল,“আমি কিন্তু এখনও রেগে আছি।”

এরেন ভ্রু উঁচিয়ে বলল,“আচ্ছা? তো আপনার রাগ ভাঙানোর উপায় বলুন‌ তো ম্যাম।”

ইলোরা মুখ ফুলিয়ে এরেনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল,“কোনো উপায় নেই।”

এরেন হেসে উঠে ইলোরাকে এক টানে নিজের বুকে নিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,“উপায় না থাকলে আমি খুঁজে নিব। আপাতত আপনি একটু ঘুমিয়ে নিন।”

ইলোরা এরেনের বুক থেকে মাথা তুলে বলল,“ভাইকে দিয়ে এত রাতে আমাকে বাসে নিয়ে এলে। এসে দেখি বাসে সবাই আছে। মানে এত রাতে এসব কী হচ্ছে? এসব যে শুধু আমার রাগ ভাঙানোর জন্য না তা কিন্তু আমি বুঝতে পারছি। আমরা কি কোথাও যাচ্ছি?”

এরেন বাঁকা হেসে বলল,“হুম, হানিমুনে যাচ্ছি।”

ইলোরা বিরক্তি নিয়ে বলল,“ধুর! কথা ঘুরাবে না। এক্সামের দুদিন আগে তুমি যাবে হানিমুনে? তাছাড়া আমাদের হানিমুন হয়ে গেছে। সত্যি করে বলো কোথায় যাচ্ছি।”

এরেন ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট বন্ধ করে ইলোরার মাথাটা বুকে চেপে ধরে বলল,“গেলেই দেখতে পারবে। আর একটা কথাও যেন না শুনি। চোখ বন্ধ করো আর ঘুমাও। আমি সময়মতো জাগিয়ে তুলব।”

ইলোরা তবু কয়েকবার একই প্রশ্ন করল। কিন্তু এরেন একবারও মুখ খুলল না। ইলোরা হতাশ হয়ে চোখ বন্ধ করল।

আফসার তখন থেকে গালে হাত দিয়ে মুনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে মুনা সিটে হেলান দিয়ে ঘুমে মগ্ন। আফসার ভেবে পায় না এই মেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়েই কেন ঘুমিয়ে পড়ে। সব রোমান্টিক সময়গুলো ঘুম দিয়ে নষ্ট করে দেয়। অথচ আফসারের দুঃখকে মুনা কখনও পাত্তাই দেয় না। হতাশ আফসার এক তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে পকেট থেকে ফোন বের করে পাওয়ার বাটন অন করতেই পেছন থেকে অরিশা বলে উঠল,“স্যার, মুনা ঘুমিয়ে পড়েছে?”

আফসার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে দেখল অরিশা ফোন চাপছে। তার ফোনের আবছা আলোয় পাশের সিটের ঘুমন্ত নাদিয়ার মুখ দেখা যাচ্ছে। আফসার বলল,“তা আর বলতে? লাফিং কুইন তো বিয়ের পর থেকেই স্লিপিং কুইনও হয়ে গেছে। কবে আবার দেখব তোমার বান্ধবী মা হওয়ার পর বেবি রেখেও ঘুমাবে।”

অরিশা হেসে বলল,“আপনি তো আছেনই। সমস্যা কী?”

“হ্যাঁ। আমি তো আছিই ওনাকে পাহারা দেয়ার জন্য। তুমি ঘুমাচ্ছ না কেন?”

অরিশা মেকি হেসে বলল,“ঘুম আসছে না।”

“আচ্ছা, আমি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেই। গুড নাইট।”

আফসার আবার সোজা হয়ে বসতেই অরিশা ফোনের দিকে তাকাল। মাহাদির মেসেজ,“ঘুমিয়ে নাও কিছুক্ষণ। নইলে পরে মাথা ব্যথা করবে। কথা বলার জন্য দিন বেলা অনেক সময় পাওয়া যাবে।”

অরিশা মৃদু হাসল।‌ ছেলেটা গম্ভীর স্বভাবের হলেও বড্ড কেয়ারিং। এই ছোটো ছোটো কেয়ারগুলোই অরিশাকে মুগ্ধ করে।

পাশে কারো গুনগুনিয়ে কথার শব্দ কানে যেতেই জারিন নড়েচড়ে পিটপিট করে চোখ খুলল। পাশে তাকিয়ে দেখল মিথিলা ইয়ারফোন কানে ঢুকিয়ে মুচকি হাসছে। জারিন মিথিলার দৃষ্টি অনুসরণ করে তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল মিথিলার হাতে ইলোরার ফোন। ফোনের স্ক্রিনে হাস্যোজ্জ্বল রনিকে দেখে জারিনের বুকটা ধক করে উঠল। রনি হাসিমুখে মিথিলাকে কিছু একটা বলছে আর মিথিলা তা শুনে মুচকি হাসছে। জারিন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে একটা সুখী প্রেমী যুগলের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখতে লাগল। অথচ এতেই তার দম আটকে আসতে চাইছে। মিথিলা রনির সাথে কথা শেষ করে পাশ ফিরে তাকাতেই জারিন অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। মিথিলাও অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল,“আপুর ঘুম ভেঙে গেছে?”

জারিন মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল,“হ্যাঁ, আসলে বাসে আমার তেমন ঘুম হয় না।”

“ওহ্।”

মিথিলা ছোট্ট একটা শব্দ করে সিটে গা এলিয়ে দিলো। তারপর মাথা উঁচু করে চারপাশে তাকাল। বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোয় সিটের ওপর দিয়ে কারো কারো মাথাটুকুই দেখা যাচ্ছে। মিথিলার মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি ভর করল। সে দুষ্টু হেসে ফোন ঘেঁটে সাকিবের নাম্বারে ডায়াল করল। সাকিব মাত্রই অনন্যাকে কাছে টেনে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে যাচ্ছিল। তখনই প্যান্টের পকেটে ফোনটা হঠাৎ স্বশব্দে বেজে উঠল। সাকিব-অনন্যা দুজনেই কিছুটা চমকে উঠল। অনন্যা দ্রুত সাকিবের কাছ থেকে সরে গেল। সাকিব পকেট থেকে ফোন বের করে কপাল কুঁচকে ফেলল। সিট থেকে মাথা উঁচিয়ে পেছনের দিকে তাকিয়ে জোরে বলল,“মিথি, তোকে ফোন গিফট করব বলেছিলাম না? ওটা কিন্তু ক্যানসেল হয়ে যাবে।”

মিথিলা দাঁতে জিব কেটে মাথা নিচু করে ফেলল। সাকিব ফোন পকেটে ঢুকিয়ে পুনরায় অনন্যাকে কাছে টানতেই অনন্যা ফিসফিস করে বলল,“কী শুরু করেছ? পাজিগুলো বোধ হয় একটাও ঘুমায়নি।”

সাকিব হেসে বলল,“না ঘুমাক, আমার কী? আমি তো বউয়ের সাথে প্রেম করার জন্য জেগে আছি।”


শরীরে মৃদু ধাক্কা অনুভব করতেই ইলোরার ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে আড়মোড়া ভাঙতে যেতেই অনুভব করল সে কারো বাহুবন্ধনে আবদ্ধ। ইলোরা মাথা তুলতেই এরেন মিষ্টি হেসে বলল,“উঠুন ম্যাম।”

ইলোরা এরেনের বুক থেকে সরে এসে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল,“কোথায় এসেছি?”

এরেন সিট থেকে উঠতে উঠতে বলল,“নামলেই বুঝতে পারবে। চলো ওঠো।”

ইলোরা উঠতে উঠতে বলল,“শীত লাগছে।”

এরেন বলল,“হ্যাঁ, এখানে এখন শীত পড়েছে। ঢাকায় এখনও পড়েনি বলে আমাদের কাছে বেশি শীত মনে হচ্ছে। তাড়াতাড়ি চলো, নইলে আমার কাঁপুনি উঠে যাবে।”

ইলোরা সিট থেকে উঠতেই এরেন তার হাত ধরে সামনের দিকে হাঁটা দিলো। ইলোরা চারপাশে তাকিয়ে দেখল সবাই ঘুমাচ্ছে। ইলোরা অবাক হয়ে বলল,“আরে, সবাই তো ঘুমাচ্ছে এখনও। আমরা একা নামছি কেন? সবাইকে জাগাবে না?”

এরেন বলল,“বলেছিলাম প্রশ্ন করবে না।”

বাস থেকে নেমেই ইলোরার বিস্ময় আরও বাড়ল। বাসের সামনের হেডলাইটের আলোয় অদূরেই এরেনের গাড়িটা দেখা যাচ্ছে। এরেন ইলোরাকে নিয়ে সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। ইলোরা বলল,“আরে! তোমার গাড়ি এখানে কীভাবে?”

এরেন উত্তর না দিয়ে গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে জানালায় টোকা দিলো। সঙ্গে সঙ্গে দুপাশের দরজা খুলে বেরিয়ে এল রনি আর তাহসিন। দুজনের গায়েই শীতের পোশাক। ইলোরা অবাক কন্ঠে বলল,“তোমরা?”

রনি হেসে বলল,“হ্যাঁ। এখন কথা বলার সময় নেই। এখানে কী শীত, বাপ রে! এই এরেন আমরা যাচ্ছি।”

এরেন মাথা দুলিয়ে বলল,“যা।”

রনি আর তাহসিন ছুটে গিয়ে বাসে উঠে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে বাস ছেড়ে দিলো। বাস চোখের আড়াল হতেই ইলোরা চারপাশে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে ফেলল। এতক্ষণ অতিরিক্ত বিস্ময়ে সে আশেপাশে তাকাতেও ভুলে গিয়েছিল। ইলোরা পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল এরেন গাড়ির ভেতর থেকে একটা ব্যাগ খুলে শীতের পোশাক বের করে গায়ে ঢুকাচ্ছে। ইলোরা এরেনের পিঠে হাত রেখে বলল,“এই, এটা তো কিশোরগঞ্জ যাওয়ার রাস্তা। আমরা কিশোরগঞ্জ যাচ্ছি?”

এরেন জ্যাকেট, শাল সব গায়ে জড়িয়ে তারপর একটা জ্যাকেট নিয়ে ইলোরাকে পরিয়ে দিতে দিতে বলল,“কিশোরগঞ্জের রাস্তা যেহেতু সেহেতু সেখানেই যাচ্ছি।”

“তো এতে এত কাহিনির কী ছিল? তাও আবার এই সময়ে! আর তুমি এক্সামের আগে সবাইকে নিয়ে দলবেঁধে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছ কী ভেবে?”

এরেন মুচকি হেসে বলল,“আমার ইচ্ছে।”

এরেনের উত্তরে ইলোরা সন্তুষ্ট হতে পারল না। এরেন ইলোরার গায়ে শাল জড়াতে নিতেই ইলোরা বলল,“আমার আর লাগবে না। জ্যাকেটই ঠিক আছে। তোমার মতো প্যাকেট হওয়া লাগে না আমার।”

এরেন শালটা গাড়ির ভেতরে রেখে দিলো। ইলোরা অধৈর্য হয়ে বলল,“তুমি কি স্পষ্ট করে বলবে কিছু?”

এরেন ইলোরাকে অপরদিকে ঘুরে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখল। তারপর ইলোরার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,“হ্যাপি ওয়ান ইয়ার ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি মাই ইলোনি।”

ইলোরা থমকে গেল। অবাক দৃষ্টিতে এরেনের দিকে তাকাতেই এরেন তার মুখটা একহাতে সামনের দিকে ঘুরিয়ে বলল,“সামনে দেখো। ঐ যে দেখছো ভাঙা ঘরটা? আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে ওখান থেকেই আমাদের পথচলা শুরু হয়েছিল।”

ইলোরা বাকরুদ্ধ হয়ে সামনের ভাঙা ঘরটায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মাথা ঝাঁকাল। পরক্ষণেই এরেনের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত হয়ে বলল,“আজ আমাদের বিয়ের এক বছর হয়ে গেছে? আমার তো একদমই খেয়াল ছিল না।”

এরেন মুচকি হেসে বলল,“সেজন্যই তো সারপ্রাইজড করতে পারলাম।”

“ওহ্ আচ্ছা। এইজন্যই এই অবেলায় এখানে ছুটে আসা?”

“জি ম্যাম। যেই জায়গাটা থেকে আমার প্রেমাসুখের ঔষধ খুঁজে পেয়েছি, সেই জায়গাটা ভুলি কী করে? এখান থেকেই তো আমি আমার জীবনের বেস্ট গিফট ইলোনিকে পেয়েছি।”

ইলোরা মেকি হেসে বলল,“বাধ্য হয়ে।”

এরেন ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,“সেজন্য আমার আর আফসোস নেই ইলোনি। তোমাকে নিজের করে পেয়েছি, ব্যাস, আমি এর বেশি আর কিছু ভাবতে চাই না।”

“তুমি তো অন্যভাবেও সারপ্রাইজ দিতে পারতে। শুধুমাত্র এই কারণে এমন সময়ে এখানে ছুটে আসার কোনো মানে হয়?”

“অন্য সারপ্রাইজে তো এই ফিলটা আসত না। এই জায়গাটায় এসে তোমার সেই এক বছর আগের কথা মনে পড়ছে না? স্মৃতিগুলো অন্যরকম সুখ দিচ্ছে না?”

ইলোরা ওপর নিচে মাথা ঝাঁকাল।‌ এরেন হেসে ইলোরাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে বলল,“ঠিক এই ফিলটার জন্যই এখানে আসা। এই দিনটা আমার কাছে খুবই স্পেশাল। তবে এই স্পেশাল দিনটা আমি সেলিব্রেট করে, হৈ-হুল্লোড় করে কাটাতে চাই না। আমার ইলোনিকে বুকে জড়িয়ে রেখে গত এক বছরের প্রত্যেকটা দিন স্মৃতিচারণা করতে চাই।”

ইলোরা এরেনের বুকে মাথা রেখে বলল,“এক বছর আগের এই দিনটাতে ভাবতেও পারিনি এক্সিডেন্টলি যেই মানুষটার সাথে একটা ভিত্তিহীন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি, আজ এক বছর পর তারই বুকে মাথা রেখে আমি জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষের একজন হব।”

এরেন ইলোরার মাথায় চুম্বন করে বলল,“আল্লাহর নিকট শুকরিয়া, তিনি তোমাকে আমার স্ত্রী করে পাঠিয়েছেন। তোমাকে আমি কীভাবে পেয়েছি সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় ইলোনি। তোমাকে পেয়েছি এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

ইলোরা এরেনকে দুহাতে জাপটে ধরে চোখ বন্ধ করে বলল,“ভালোবাসি। যুগ যুগ ধরে আমি তোমারই ভালোবাসায় সিক্ত হতে চাই।”

কাছের এক মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসতেই ইলোরা এরেনের বুক থেকে মাথা তুলে বলল,“এখন কি মামার বাড়ি যাবে?”

এরেন মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,“হুম, বাকি সবাই সেখানেই গেছে। হানিমুনে সবাই পিছু নিতে চেয়েছিল কিন্তু আমি নেইনি। তাই আজ সবকটাকে নিয়ে এসেছি।”

ইলোরা এরেনের থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলল,“গ্রামের মানুষ এখন এই রাস্তা দিয়ে মসজিদে যাবে। চলো আমরা রওনা দেই।”

এরেন সম্মতি জানিয়ে বলল,“হ্যাঁ চলো।”

এরেন গাড়ির দরজা খুলতেই কারো মোটা কন্ঠস্বর শুনে থেমে গেল। ইলোরা এরেনের কাছে সরে দাঁড়িয়ে বলল,“বলতে না বলতে লোকজন চলে এসেছে।”

এরেন বলল,“সমস্যা নেই। এক বছর আগের সেই দিন এখন আর নেই। আজ আবার না হয় তৃতীয়বারের মতো একই কনেকে বিয়ে করব। তবে এবার কোনো দ্বিধা থাকবে না।”

এরেনের কথা শুনে ইলোরার হাসি পেল। ততক্ষণে তাদের সামনে দুজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ এসে দাঁড়িয়েছে। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় এলাকার চেয়ারম্যান মহোদয়কে চিনতে এরেনের কষ্ট হলো না। কিন্তু চেয়ারম্যানের মুখ দেখে মনে হচ্ছে লোকটা তাদের চিনতে পারেনি। এক বছর আগে দেখেছিল, না চেনারই কথা। এরেন বেশ হাসিমুখেই লোক দুটোকে সালাম দিলো। লোক দুটো অবাক হয়েই সালামের জবাব দিলো। চেয়ারম্যান প্রশ্ন করল,“তোমরা কারা বাবা? এই ফজরের সময় এখানে কী করছো?”

এরেন বলল,“আমাদের চিনতে পারেননি। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে ঐ ভাঙা ঘরটায় দুজন ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। মনে পড়ে?”

চেয়ারম্যান সাহেব কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ ভেবে ওপর নিচে মাথা ঝাঁকালেন। এরেন বলল,“আমরা তারাই।”

চেয়ারম্যান সাহেব অবাক দৃষ্টিতে একবার এরেনের দিকে তো আরেকবার ইলোরার দিকে তাকাচ্ছেন। ইলোরা এতক্ষণ লোকটাকে চিনতে পারছিল না। এবার সেও চিনতে সক্ষম হলো। চেয়ারম্যান সাহেব চোখ কপালে তুলে বললেন,“তুমি এই মেয়ে নিয়ে সংসার করতেছো না-কি?”

এরেন হাসিমুখেই বলল,“ছাড়লে কি আর আজ আমার সাথে থাকত? যাইহোক, আপনাকে ধন্যবাদ।”

“কেন?”

“এই যে, এমন একটা মেয়েকে আমার জীবনে জড়িয়ে দিয়েছেন। তবে আমরা কিন্তু সত্যিই তখন একে অপরকে তেমন চিনতামও না। আর আমাদের কথাগুলোও সেদিন মিথ্যা ছিল না।”

চেয়ারম্যান সাহেব ভ্রুকুটি করে বললেন,“তাহলে এখনও দুজন একসাথে আছো কীভাবে?”

“জীবন তো একটাই। এক জীবনে এমন একজন স্ত্রী পেয়ে দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবতে পারিনি। আমরা নিজেরাই ব্যাপারটা মিটমাট করে নিয়েছিলাম। আর এখন আমাদের দুজনের পরিবার আমাদের আবার বিয়ে দিয়েছে।”

এরেনের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,“বাবা, তোমার মতো ছেলে খুব কমই আছে। আমার ভুলের কারণে আমি লজ্জিত।”

“পুরনো কথা আর উঠাতে চাই না। আমাদেরকে এখন যেতে হবে।”

“ভালো থেকো বাবা। খুব সুখী হও মা।”

শেষের কথাটুকু চেয়ারম্যান সাহেব ইলোরাকে উদ্দেশ্য করে বললেন। ইলোরাও মাথা নেড়ে বলল,“আপনিও ভালো থাকবেন।”

এরেন ইলোরাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ইলোরা বলল,“একই লোকের সাথে পুনরায় দেখা। ইন্টারেস্টিং!”

এরেন মুচকি হেসে বলল,“আমি তো ভাবলাম আবার বিয়ে করা যাবে।”

ইলোরা ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে বলল,“দুইবার করেও তোমার আরও একবার করার ইচ্ছে জাগছে?”

“আমার তো ভালোই লাগে ব্যাপারটা।”

“কিশোরগঞ্জ থেকে আবার ঢাকা ফিরবে কখন?”

“আজ রাতেই।”

ইলোরা বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল,“আব্বু-আম্মুকে কী বলেছ তোমরা?”

“বলেছি আমরা এক জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি।”

“অনু আপ্পিরা কোথায় ছিল?”

“আমাদের বাড়িতে। বাবা তো বাসায় ছিল না, আর আম্মী তো সবটা জানেই। সারপ্রাইজ কেমন লাগল তা তো বললে না।”

ইলোরা এরেনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,“অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছি না। তবে এটা বেস্ট ছিল। একই পথে আবার একসাথে চলছি।”

“হুম। এই পথচলা যুগ যুগ ধরে চলবে।”

ইলোরা হঠাৎ শব্দ করে হেসে উঠে বলল,“সেদিনও তুমি ঠান্ডা থেকে বাঁচতে প্যাকেট হয়ে ছিলে, আজও প্যাকেট হয়েই আছো। শীতকাতুরে!”

“আর তুমি একই রকম ভীতু আছো। ডাকব না-কি দু একটা ভূত?”

ইলোরা আবার হেসে উঠল। ভোরের আবছা আলোয় পাশে বসা রমনীর প্রাণবন্ত হাসিটা এরেনের বুকে এসে লাগল। নিজের অজান্তেই সে ইলোরাকে এক হাতে কাছে টেনে নিল। ইলোরা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,“ড্রাইভিংয়ের সময় এমন করতে না করেছি না?”

এরেন ইলোরাকে নিজের চাদরের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে বলল,“খুব শীত লাগছে গো বউ। বলেছিলাম না এবারের শীতে বউকে সারাক্ষণ নিজের সাথে জড়িয়ে রাখব? মনে করো আজ থেকে তা শুরু। আহ্! কী রোমান্টিক মোমেন্ট!”

ইলোরা এরেনের বুকে ছোট্ট একটা চিমটি কেটে বলল,“অসভ্য!”

“আমি সারাজীবনই তোমার কাছে অসভ্য থাকব ইলোনি।”

ইলোরা লাজুক হেসে এরেনের বুকে মুখ লুকিয়ে বলল,“আমি চাইও না তুমি পালটাও।”

চলবে…………………..🌸

(রিয়্যাক্ট, কমেন্ট করার অনুরোধ রইল। হ্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here