মনের কোণে🥀
#পর্ব_২১
আফনান লারা
.
‘নাম কি তোমার?’
‘তৃননিকা চৌধুরী লিখি’
‘কিসে পড়ো?’
‘অনার্স থার্ড ইয়ার’
সামিয়া এর বেশি প্রশ্ন করেনি ওকে।এরপর মামাকে বললেন রুম দেখিয়ে দিতে,ফ্রেশ হবেন।নাবিলের কাছে নাহিদকে রেখে তিনি চলে গেলেন তখন।
নাহিদ রাগান্বিত চোখে লিখিকে দেখছিল।লিখি বিষয়টা বুঝে আরও জ্বালানোর জন্য ওকে ধরে ইচ্ছেমত গাল টিপে দিয়েছে।নাহিদ তো এবার রেগে আগুন।হনহনিয়ে নাবিলের পাশে ঘেঁষে বললো,’এই আপুটা এমন ক্যান?আমার গাল ব্যাথা হয়ে গেছে।একটুও ভাল না উনি’
নাবিল নাহিদের গাল মুছে বললো ‘হুম,ঠিক বলেছো।ও একটুও ভালনা।’
লিখি নাহিদকে এক টানে নাবিলের কাছ থেকে নিয়ে এসে বললো,’উলে বাবুটা!কিসে পড়ো তুমি?’
‘তোমায় বলবো কেন?ভাইয়া দেখো আবার আমার গাল টানছে।আম্মুকে ডাকো,আমার অস্বস্তি লাগছে’
নাবিল লিখির কাছ থেকে নাহিদকে টেনে আনতেই লিখি আবার টান দিয়ে ওকে নিয়ে নিলো।
একজন একদিকে টানছে।নাহিদ মাঝে থেকে বলছে,’বাবু ভাইয়া আমাকে বাঁচাও’
বাবু এসে ওকে কোলে তুলে নিলো শেষে।নাহিদ এবার ওদের দুজনের উপরই রেগে আছে।গাল ফুলিয়ে আর কোনো কথাই বলেনি।
——
নাহিদ বাবুর সাথে চলে যাবার পর লিখি তার রুমে এসে বসে ছিল।নাবিল ফোনটা ওর রুমে ফেলে এসেছে বলে সেটা নিতে আসলো তখনই মা এসে দেখলেন তারা এক রুমে।বিষয়টা তিনি অন্য চোখে দেখলেন।চুপচাপ নাবিলকে রুম থেকে ডেকে চলে গেলেন তিনি।নাবিল ও ভাল ছেলের মতন চলে গেছে।কিন্তু লিখি তার চাহনি দেখে ঠিক বুঝেছে কিছু একটা হয়েছে।আন্টি নির্ঘাত উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে বসেছেন।খাবার খাওয়ার সময়ে নাবিল ঘুরে ফিরে লিখির পাশেই বসেছে।
লিখি দুষ্টুমি করে নাবিলের পায়ের উপর পা রাখলো।নাবিল চোখ বড় করে ওর দিকে তাকালো একবার তারপর মায়ের ভয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো।
কোনোমতে আজ সে খাবার খেয়েছে।লিখি পুরোটা সময় ওকে জ্বালিয়েছিল।এবার এসেছে শোবার পালা।
যেহেতু গেস্ট রুম একটাই তাই ঠিক হলো মামি শোবেন লিখির সাথে,মামা শোবেন নাবিলের সাথে।নাহিদ আর মা শোবে বাবুর রুমে।আবার বাবু শোবে নাবিলের সাথে।
———
রাত ১টার সময় লিখির পানির তৃষ্ণা পেলো ভীষণ।মামি নাক ডাকছেন,গভীর ঘুমে।ঘড়ির কাঁটা ও তখন আওয়াজ ফেলে।
সে ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে নেমে ডাইনিংয়ের দিকে গেলো।পুরো বাসার আলো নেভানো।আলো না জ্বালিয়েই সে ফ্রিজ খুললো বোতল নিতে।ঠিক সেসময়ে নাবিল ও এসেছে পানি খেতে। দুজনে একসাথে ফ্রিজ খুলে এখন একজন আরেকজনকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।লিখি তো ভয়ে চিৎকার করা ধরছিলো পরে নাবিল ঠিক সময়ে ওর মুখে চেপে ধরে চিৎকার করা থামিয়েছে।
দুজনে এখন ফিসফিস করে কথা বলছে।
‘আপনি এখানে কি করেন?’
‘আমারও একই প্রশ্ন।তুমি এখানে কি করো?’
‘পানি খেতে এসেছি’
‘আমি ফিরনি খেতে এসেছি’
নাবিল তাই ফিরনির বাটি নিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে।লিখি পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে ২/৩ ঢোক পানি খেয়ে বোতল আগের জায়গায় রেখে দিয়ে বললো,’ওমন করে কি দেখছেন?বোতল চুরি করিনা আমি’
‘ফিরনিতে তিন আঙ্গুলের দাগ বসা।তোমার কাজ এটা’
‘না তো’
নাবিক বাটি রেখে এগিয়ে এসে লিখির গাল টিপে ধরলো।ওর থুঁতনিতে পোলাও চাল একটা শুকিয়ে আটকে আছে।
নাবিল তখন দাঁত কেলিয়ে বললো,’ঠিক ধরেছিলাম।আমার আগে এসে চুরি করে ফিরনি খেয়েছো তাই না?’
‘মোটেও না।আমি খাইনি’
‘তবে তোমার থুঁতনিতে পোলাও চাল ভূতে এসে রেখে গেছে নাকি পোলাও চাল নিজে হেঁটে হেঁটে এসে জায়গা দখল করেছে?’
লিখি লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গেছে।
আসলে ঘটনাটা একটু ভিন্ন ছিল।
মনি আজকে সামিয়ার জন্য ফিরনি করেছিলেন।নাহিদকে সামিয়া খেতে দেয়নি কারণ রাতে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেলে ওর সারারাত পেটে ব্যাথা করে।তাই কেউ তাকে ফিরনি খেতে দেয়নি,বরং সবাই তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ফিরনি খেয়েছে।এত স্বাদের ফিরনি তো মিস করা যায়না।
তো রাতে সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর নাহিদ লুকিয়ে -চুরিয়ে ফ্রিজ খুলে ফিরনি খেতে এসেছিল,তার সাথে এসেছিল লিখি ও।তার খিধে পেয়েছিল বলে সে এসেছে।ফ্রিজে তো সবসময় একটা না একটা খাবার পাওয়াই যায়।
দুজনের দেখা হয়ে গেলো সেখানে।নাহিদ ডিল করলো লিখির সাথে।দুজনেই ফিরনি খাবে কিন্তু ৩য় ব্যাক্তি জানবে না।লিখি রাজি হয়ে গেলো তাতে।
দুজন মিলে ফিরনি খেয়ে দুদিকে চলে গেছে।
কিন্তু এই ফিরনি খাওয়ার ইতিহাস চাপা থাকলো না।ফিরনি খেয়ে পানি খেতে ভুলে গিয়েছিল লিখি।তাই আবারও পানি খেতে এসে শেষমেষ ধরা খেয়ে গেলো নাবিলের কাছে।
দুই ভাইয়ের মাঝে কি তফাৎ!!
একজনে চুরিতে সঙ্গী হয় আর আরেকজন চুরিতে দারোগা হয়ে ওঠে।
লিখি নাবিলের হাত ছাড়িয়ে বললো,’আমার কি দোষ বলুন?আপনার ভাই ও তো খেয়েছে”
‘ও তো বাচ্চা।কিন্তু তুমি কি? এত বড় মেয়ে হয়ে…’
‘ফ্রিজের খাবার খাওয়াকে চুরি বলেনা।দাওয়াত হতে পারে এক ধরণের। ফ্রিজে খাবার সাজিয়ে রাখার কারণ তো খাওয়াই,তাই না?
তখনই সামিয়ার রুমে আলো জ্বলে উঠলো হঠাৎ।নাবিল আর লিখি দুজনে ভয় পেয়ে ডাইনিং টেবিলের তলায় ঢুকে গেছে।
লিখি নাবিলের বুকের সাথে লেগে মুখ ঢেকে বসে আছে আর নাবিল দেখছে মা কি করে।
মা বের হলো তার রুম থেকে।নাবিল আর লিখির বুকের ভেতর ধুকধুক করছে অনবরত।মা হেঁটে এসে ফ্রিজের কাছে থামলেন।টানটান উত্তেজনা!!!
নাবিলের কপাল ঘেমে গেছে লিখির হাতে এসে পড়লো সেই ঘাম।সে ফিসফিস করে বললো,’কপাল মুছেন!আপনার ঘামের গরমে তো আমি এবার সেদ্ধ হয়ে যাব’
‘ঘামের গরম কি আবার?’
‘চুপ !এত জোরে কেউ ফিসফিস করে??মাইকিংয়ের সাউন্ড ও তো আরও আস্তে হয়’
‘ওকে আমি কিছুই বলবোনা’
সামিয়া ফ্রিজ থেকে ফিরনির বাটি নিয়ে চেক করলেন আধ খাওয়া কিনা।সত্যি সত্যি আধ খাওয়া দেখে তিনি কোমড়ে হাত দিয়ে বাটি সমেত তার রুমের দিকে চলে গেলেন।নাহিদকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ঝাড়বেন এবার।নিশ্চয় ওর পেট ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে!
নাবিল আর লিখি মাকে চলে যেতে দেখে তখন উঠতে গিয়ে ধুরুম করে একজনের মাথার সাথে আরেকজন বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ে গেলো আবার।🥴
চলবে♥