আলোছায়া পর্ব-১২

0
1800

#আলোছায়া
কলমে লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:১২

জুনায়েদ দ্রুতগতিতে নীলুর পাশে গিয়ে বসলো। মেয়েটা সারা শরীর ঘেমেঘেটে একাকার। চুলগুলো মুখের উপরে পড়ে আছে। ও আর অপেক্ষা করলো না। নীলুকে তুলে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। পারভীন বেগমের মুখে চিন্তার ছ‍্যাপ। মেয়েটার হঠাৎ কি হলো বুঝতে পারছেন না। শুভ্র তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে ফোন করলো। অরিনের পা নড়ছে না। সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এরকম হবে জানলে কখনও মেয়েটাকে ডাকতো না। নিজের দোষটা ঢাকার জন্য ও নীলুর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,

> সামান্য এইটুকুতেই অজ্ঞান? কামচোর মেয়ে হলে এমনিই হয় বুঝলে খালামনি?

জুনায়েদের এবার প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলো। এই মেয়েটাকে ওর সহ‍্য হচ্ছে না। তাই ধমক দিয়ে বলল,

> তোর স্বাধ হয়েছে রান্না করছিস ভালো কথা।তার মধ্যে ওকে কেনো নিয়ে গেছিস?

> আমি ওকে আহামরি কিছু করতে বলিনি। শুধু মাছগুলো ভাজতে বলেছি। তোর বউ তো ননির পুতুল।

জুনায়েদ এবার অপেক্ষা করলো না। নীলুকে সোফায় রেখে উঠে গিয়ে অরিনের হাত ধরে টানতে টানতে দরজার ওপাশে রেখে দরজা বন্ধ করে দিলো। অরিন হতভম্ব হয়ে গেছে ওর এমন ব‍্যবহার দেখে। ও এমন করবে অরিন কখনও ভাবেনি। পারভীন বেগম জুনায়েদকে ধমক দিলেন,

> ওর সঙ্গে এমন করছিস কেনো। মেয়েটা বুঝতে পারেনি।

> গতকাল থেকে নীলুর শরীর খারাপ। আজ হাসপাতালে নিয়েছিলাম কিন্তু ডাক্তার চলে গিয়েছিল আগামীকাল আবারও যেতে বলেছেন। এর মধ্যেই ওকে দিয়ে কাজ না করালে হতো না?

জুনায়েদ একদমে কথাগুলো বলে থামলত। পারভীন বেগমের চোখেমুখে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো। মেয়েটার এতোটা শরীর খারাপ অথচ উনি জানেন না। ছেলেমেয়েগুলোকে নিয়ে উনি হতাশ হচ্ছেন। দরজার ওপাশে অরিন বকবক করছে। পারভীন বেগম গিয়ে দরজা খুলে ওকে ভেতরে নিয়ে আসতেই শুভ্র বলল,

> ওকে বলে দাও এই বাড়িতে থাকতে হলে আত্মীয়র মতো করেই থাকতে হবে। বাড়ির বউয়ের উপরে টর্চার করার সাহস কে দিয়েছে ওকে? পরের বাড়ির মেয়ে এসে এই বাড়ির বউকে কথা শোনাবে এটা কেউ মানবে না।

শুভ্রর কথাগুলো শুনে অরিন খুব কষ্ট পেলো। ওর জন‍্যই এতকিছু করলো আর সেই ওকে অপবাদ দিচ্ছে। ও আর এখানে থাকবে না। আম্মুকে সব বলবে। বোনের বাড়িটা এখন আর ওদের আপন নেই। কথাগুলো ভেবে ও চোখের পানি মুছে নিজের ঘরে চলে গেলো। জুনায়েদ নীলুর হাত ধরে বসে আছে। পারভীন বেগম ওর চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলু নড়াচড়া করে উঠে বসলো। শরীর আবারও পূর্বের মতোই দুর্বল লাগছে। একদিনে সাধারণত দুবার শরীর খারাপ লাগে না। আজ হঠাৎ করেই এমন হচ্ছে। নীলুর চোখেমুখে আতঙ্ক খেলা করছে। শক্তি ক্রমশ ফুরিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ডাক্তার এসে হাজির। নীলুর ভয়টা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জুনায়েদ বিষয়টা বুঝতে পেরে ফিসফিস করে বলল,

> ডাক্তার দেখে জমের মতো ভয় পাচ্ছো কেনো? আগুনের মতো ডাক্তারেও ফোবিয়া আছে?

নীলু উত্তর করলো না। মধ্য বয়সী ডাক্তার জহির উদ্দিন নীলুর পাশে গিয়ে বসলেন। উনি নীলুর হাত ধরে কি বুঝলেন ঠিক বোঝা গেলো না কিন্তু কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। জুনায়েদ কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলো,

> আঙ্কেল কি বুঝলেন?

> শরীর বেশ দুর্বল। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতে হবে। কিছু টেস্ট দিচ্ছি করিয়ে নিবেন।

ভদ্রলোক ওষুধ দিয়ে চলে গেলেন। পারভীন বেগম জুনায়েদকে হুকুম দিলেন ওকে রুমে নিয়ে যেতে। শুভ্র এবার মাথা ঠান্ডা করে অরিনের ঘরে উঁকি দিয়ে বলল,

> আমি তোকে বোন ছাড়া অন‍্য কিছু ভাবতে পারবো না। তুই যেই আশা নিয়ে আমাদের বাড়িতে আছিস সেটা কোনো অবস্থায় সম্ভব না। আশাকরি তুই এবার বুঝতে পারবি। আব্বুকে আমি বলে দিয়েছি আমার জন্য মেয়ে খুজতে। উনি অলরেডি খোঁজ শুরু করেছেন। খালামনিকে ফোন করেছি উনি আসছেন তোকে নিতে। রেডি হয়ে থাক।

শুভ্র কথাটা শেষ করে দ্রুত উপরে চলে গেলো। অরিনের চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরছে। সেই ছোট থেকেই শুভ্রকে নিয়ে মনের মধ্যে নানারকম স্বপ্ন বুনন করে এসেছে। সেগুলো এভাবে ভেঙে যাবে কখনও ভাবেনি। তাছাড়া জুনায়েদ ওকে সব সময় সাপোর্ট করে এসেছে। আজ হঠাৎ ওর বউয়ের জন্য ওর পক্ষ নিলো না। ছেলেটার উপরে ওর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে এর প্রতিশোধ না নিলে গায়ে কাটার মতো বিধছে। জুনায়েদ যদি প্রথম থেকে ওকে আশ্বস্ত না করতো তাহলে এতো দূর অবদি কখনও পৌঁছনোর সাহস পেতোনা। সব দোষ গিয়ে পড়লো জুনায়েদের উপরে। অরিন পারভীন বেগমের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে রুমের দরজা বন্ধ করে ফোন নিয়ে বসলো। এই বাড়ির সুখের বারোটা না বাজিয়ে ও এখান থেকে যাবে না।

পড়ন্ত বিকেলে জুনায়েদ ল‍্যাপটপ নিয়ে বিছানায় গড়াগড়ি করছে। নীলু সোফায় বসে বইয়ের পাতায় মুখ ডুবিয়ে আছে। সামনে চায়ের কাপ রাখা আছে। নীলু গরম খাবার খেতে পারেনা। তাছাড়া বইয়ের পাতায় একবার মন বসে গেলে সামনে চা কফি সব শরবত হয়ে বরফ জমলেও সেদিকে ওর খেয়াল থাকে না। জুনায়েদ আড়চোখে ওকে দেখে নিয়ে বলল,

> কি এতো পড়ছো শুনি? অনার্স লেভেলে এসে এতোসব পড়তে হয়না। বাড়ির বউ হয়ে তো আর অফিস করতে যাবে না। টেনেটুনে পাশ করলেই হবে।

নীলু অবাক চোখে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

> আমি না হয় বাড়ির বউ কিন্তু আপনি তো বাড়ির ছেলে। আপনার রেজাল্ট এতো বাজে কেনো? অনিক ভাইয়া বলল আপনার রেজাল্ট নাকি ক্লাসের যে কয়জন ছেলেমেয়ে অল সাবজেক্টে পাশ করেছে সবার নিচে। লজ্জাজনক বিষয়।

> শুনো আমি চাকরি করবো না তাই ওসব প‍্যারা নিয়ে কাজ নেই। আব্বুর বিজনেস আছে ওখানে গিয়ে বসে যাবো। ঝামেলা বিহীন জীবন। যারা জব করবে তারা নিজেকে প্রামণ করুক আমার কিসের দায়।

জুনায়েদ খাপছাড়া ভাবে কথাগুলো বলল। নীলু ওর কথা শুনে হতাশ। এই ছেলের লজ্জা শরমের কোনো বালাই নেই খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছে। সাধারণত সবাই লজ্জা পাই রেজাল্ট খারাপ নিয়ে কথা বললে কিন্তু এর বেলাতে ভিন্ন। নীলু চোখের পাতা নাড়িয়ে বলল,

> শুভ্র ভাইয়া আপনার বড়ভাই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আচ্ছা আপনি কার মতো হয়েছেন?

> তোমার আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। নিজের চিন্তা করো। এই বাড়িতে আর দুমাসের মতো আছো। নিয়মিত খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠো নয়তো সবাই ভাববে তোমাকে আমরা খেতে দেয়নি।

নীলু মলিন মুখে বইয়ের দিকে নজর ঘুরিয়ে নিলো। এই ছেলেটার চরিত্র বৈচিত্র্যময়। এই ওর জন্য উতলা হচ্ছে আবার এই কষ্ট দিচ্ছে। জুনায়েদ খুব মনোযোগ দিয়ে এসাইনমেন্ট তৈরী করছে। এভাবে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হলো। হঠাৎ বাইরে থেকে চেচামেচির শব্দে দুজনেরই ধ‍্যান ভাঙলো। জুনায়েদ বিরক্তি নিয়ে নীলুকে বলল,

> আবারও শুরু হয়েছে ড্রামা। তুমি এখানে থাকো আমি আসছি।

জুনায়েদ ওর উত্তরের অপেক্ষা করলো না দ্রুতগতিতে নিচে চলে গেলো। ওর যাবার পর নীলু কিছু ভেবে নিচেযাবার জন্য উঠে আসলো। ডাইনিং রুমে পিউ এসেছে সঙ্গে অরিন ওকে সাপোর্ট দিচ্ছে। শুভ্র ওদেরকে ধমক দিচ্ছে। জুনায়েদ বিষয়টা না বুঝে জিঞ্জাসা করলো,

> সমস্যা কি?
শুভ্র বিরক্তি নিয়ে ওকে বলল,

> তুই নীলুকে মারার জন্য কিলার ভাড়া করেছিস। ওকে বিষ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বিফল হয়েছিস। কি বলছে পিউ এসব?

জুনায়েদের চোখেমুখে বিস্ময়। কিলার ভাড়া করেছিল ওটা পিউয়ের কথা শুনে। মেয়েটা ওকে কছম দিয়েছিল যদি জুনায়েদ সুবাসের কাছে না যায় তবে ও সুইসাইড করবে। আর বিষের ব‍্যাপারে ও কিছুই জানেনা। জুনায়েদ ভ্রু কুচকে পিউকে বলল,

> বিষ খাওয়ানো বিষয়টা ঠিক বুঝতে পারলাম না। বুঝিয়ে বলবে?

পিউ তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,

> ঢং করোনাতো। তুমিই তো আমাকে বিষ কিনে নীলুর খাবারে মিশিয়ে দিতে বলেছিলে আমি সেটা করি। কিন্তু পরে ভূল করে আমি সেটা খেয়ে ফেলি। যাইহোক বেবি তুমি তো আমাকে কথা দিয়েছো নীলুকে সরিয়ে আমাকে বিয়ে করবে তাই না? এখন কেনো নেকা সাজার নাটক করছো

জুনায়েদের বিষয়টা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো। সেদিন নীলুকে এই মেয়েটা মারার জন্য জুসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে ভূল করে নিজেই খেয়ে নিয়েছিল আর ও কি বোকামিটাই না করলো। ভাবতেই রাগে শরীর রী রী করছে। নীরবতা ভেঙে শুভ্র এসে জুনায়েদের হাত নাড়িয়ে দিয়ে বলল,

> ও যা বলছে সব সত্যি?

> ভাইয়া ও তোমাকে অর্ধেক সত্যি বলছে। সুবাসের সঙ্গে ও আমাকে হুমকি দিয়ে পাঠিয়েছিল আমি ইচ্ছে করে যায়নি। আর…

জুনায়েদ বাকী কথা শেষ করতে পারলো না শুভ্র ওর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। পারভীন বেগম আর সৈয়দ সাহেব অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অরিনের ঠোঁটে রহস্যময় হাসি। পিউ ইনোসেন্ট মুখ করে নেকা ক‍ান্না করছে। জুনায়েদের ইচ্ছে করছে নিজের চুল গুলো নিজেই উপড়ে ফেলতে। এই মেয়ের প্রেমে অন্ধ হয়ে উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল। এখন বাঁশ খেতে হচ্ছে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সৈয়দ সাহেব হুঙ্কার দিয়ে বললেন,

> বাদরের গলাই মুক্তার মালা দিয়েছিলাম সহ‍্য হচ্ছে না তো হতে হবেও না। নীলুমা আজ থেকে তোর সঙ্গে থাকবে না। তুই যা ইচ্ছে করে বেড়া। তোর থেকে আমাদের কিছু আশা নেই।

জুনায়েদ বাবার কথায় প্রচণ্ড ধাক্কা খেলো। শরীর কেঁপে উঠলো। ও তাড়াতাড়ি নিজেকে প্রস্তুত করে বলল,

> বাবা বিশ্বাস করো আমি এতোটা খারাপ না। ওই মেয়েটা আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। ওকে তো আমি মেরেই ফেলবো।

জুনায়েদ পিউয়ের দিকে তেড়ে গেলো কিন্তু সবাই ওকে থামিয়ে দিলো। রীতিমতো যুদ্ধ লেগে গেলো জুনায়েদের হাত থেকে পিউকে ছাড়িয়ে নিতে। পারভীন বেগম দােঁতে দাঁত চেপে জুনায়েদর গালে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,

> খুনীর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমার ছেলে কখনও খুন করতে পারে না। তুই আমার ছেলে না।

অরিন বিড়বিড় করে বলছে, “বাংলা সিনেমার বস্তা পচা ডাইলগ দিচ্ছে। ঠাটিয়ে দু চার ঘা বসিয়ে দিবে তানা সব নাটক। আমাকে ভিলেন শাশুড়ি বলার মজা।” অন‍্যদিকে নীলু সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে।। জুনায়েদ যে ভালো ভাবে ফেঁসেছে এটা বুঝতে ওর বাকী নেই। কিভাবে ছেলেটাকে রক্ষা করবে ভাবতে পারছে না। নীলু দ্রুতগতিতে এসে জুনায়েদের হাত ধরে বলল,

> মানুষ মাত্র ভুল করে এটা স্বাভাবিক। ছেলেটা আগে যায় করেছে সেগুলোকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। ও যদি অন‍্যায় করে সেটাতো আমার সঙ্গেই করেছে। আমি যদি ওকে ক্ষমা করতে পারি তাহলে আপনাদের কি সমস্যা?

জুনায়েদ নীলুর কথায় কেঁপে উঠলো। বাড়ির সবাই যেখানে ওর বিপক্ষে সেখানে এই মেয়েটা ওকে বিশ্বাস করে পাশে দাঁড়িয়েছে। নিজের কাছে নিজের লজ্জা লাগছে। পারভীন বেগম ওর কথা শুনে তেড়ে এসে জুনায়েদের থেকে ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

> অনেক হয়েছে মা আর না। এই ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে দিয়ে খুব ভূল করেছি সেটা খুব তাড়াতাড়ি আমরা শুধরে নিব। ওর চিন্তা তোকে করতে হবে না।

> কিন্তু আম্মু উনি সত্যিই দোষী না। উনি একটু রাগী কিন্তু সরল। সবাইকে আপন ভেবে বিশ্বাস করে।

> তুই থাম ওর হয়ে কথা বলতে হবে না। সরল হলে মানুষকে খুন করার বুদ্ধি কিভাবে আসে? রাগ আছে মানছি তাইবলে নিজের বউকে খুন করবে? শোন মেয়ে বলে ওর মতো লোকের সঙ্গে তোর থাকতে হবে না। তোর দায়িত্ব নিয়েছি ভালোভাবে পালন করবো তোর সে চিন্তা করতে হবে না। বাড়িতে উকিল ডাকা হোক।

নীলু পারভীন বেগমের কথায় হতভম্ব হয়ে গেলো। ওর মনে হলো সামান্য এইটুকু কারণে এতো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। তাছাড়া জুনায়েদ নিজের অজান্তেই ওকে কতবড় একটা সাহায্য করেছে সে ও নিজেও জানেনা। নীলু ওকে ক্ষমা করেছে যদিও ভেবেছিল নিজের মতো একটা শাস্তি ঠিক দিবে কিন্তু সেটাতো এভাবে না। জুনায়েদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের কাছে নিজের ছোট লাগছে পিউর কথা ভেবে। এই মেয়েটাকে বিশ্বাস করে কতবড় ভূল করেছে আজ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। সৈয়দ সাহেব এর মধ্যেই ভয়ানক একটা কথা বলে বসলেন। উনি বললেন, যেহেতু ওদের বিয়েটা খুব ঘরোয়াভাবে হয়েছে তাই এটা আত্মীয় স্বজন তেমন কেউ জানেনা। তাই জুনায়েদের সঙ্গে ওর বিচ্ছেদ ঘটিয়ে শুভ্রর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে বন্ধুর কথা রাখবেন। জুনায়েদ রাগে কাঁপছে। এতক্ষণ শান্ত হয়ে থাকলেও এবার থাকলো না। ঝাঝালো কন্ঠে বলল,

> মজা পেয়েছো আমার সঙ্গে? আমার বউকে আমি যা ইচ্ছা তাই করবো। কোনো রকম ডিভোর্স নিয়ে আলোচনা হলে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিবো।

কথাটা বলে ও সামনে রাখা ট্রি টেবিলে লাথি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। অরিনের মুখের হাসি মিলিয়ে গেছে কিন্তু পিউ আপাতত সন্তুষ্ট। অরিন ওকে নিয়ে এসেছিল জুনায়েদকে জব্দ করতে কিন্তু এখানে এরকম হবে ভাবেনি। পিউ তো আসতে রাজি ছিল না। অর্ধেক মিথ্যা গুলো ওকে শিখিয়ে দিয়েছিল। ও হতাশ হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। পিউ সুযোগ বুঝে বেরিয়ে গেলো। পারভীন বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। শুভ্র ডাইনিং রুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। নিলু চুপচাপ শাশুড়ির পাশে গিয়ে বসলো। সৈয়দ সাহেব রাগে ফুলছেন। নীলু উনার কাছে যেতেই পারভীন বেগম ওকে জড়িয়ে নিজের কোলের কাছে টেনে নিলেন। মেয়েটাকে উনি নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন। আর তাকে দুবার মারার চেষ্টা করা হয়েছে। তাও কাজটা নিজের ছেলে করেছে ভাবতেই রাগে উনার চোখ জ্বলছে।

(চলবে)

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। একদিন গল্প না দেবার জন্য আজকের পর্বটা একটু বড় করে লেখার চেষ্টা করেছি।

অসুন নামাজ ও কোরআন পড়ি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here