আলোছায়া পর্ব-১৪

0
2004

#আলোছায়া
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৪

মাথার উপর থেকে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢুলে পড়েছে। কর্মব্যস্ত শহরেরর রাস্তায় হাজারো মানুষের আনাগোনা। ক্লাস শেষে বন্ধুরা সবাই চলে গেছে শুধুমাত্র নীলু ইউনিভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে আছে। অন‍্যদিন জুনায়েদের সঙ্গে যাওয়া আসা করেছে তাই সঙ্গে টাকা নেবার দরকার পড়েনি। আজকেও কাছে কোনো টাকা নেই। কথাটা বন্ধুদের যাওয়ার পরে মনে পড়েছে। তাছাড়া কাছে ফোন নেই। নীলুর নিজের পার্সোনাল কোনো ফোন নেই তার ব‍্যবহারটাও ওর অজানা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘেমেঘেটে একাকার অবস্থা। নীলুর মুখ লাল হয়ে উঠেছে। তাছাড়া ঘনঘন মুখ মোছার জন্য মুখটা জ্বলছে খুব। জুনায়েদ হুট করে ওর সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ছো। নীলু চমকে উঠে সরে গিয়ে ভ্রু কুচকে ফেলল। জুনায়েদ দ্রুত গাড়ি থেমে নেমে ওর সামনে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

> ভাইয়া ব‍্যস্ত আছে, আসতে পারবে না। দেখছো লেট হচ্ছে তবুও সং সেজে দাঁড়িয়ে আছো কিনো? অসুস্থ হলে তো আমাকেই খোট দেওয়া হবে।

জুনায়েদ ঝাড়ি দিয়ে অপেক্ষা করলো না। নীলুর হাতটা টেনে নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ওকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও গিয়ে বসলো। নীলুর নীরবতা দেখে ওর শরীর জ্বলছে। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল,

> বাসা থেকে আসার সময় সঙ্গে টাকা রেখো। মহারানির জন্য সবাই কাজকর্ম ফেলে ছুটে আসতে পারবে না।
.
নীলু এবার মলিন হেসে বলল,

> আপনি তো এসেছেন। পানি আছে গাড়িতে?

জুনায়েদ আশেপাশে তাকিয়ে রাস্তায় পাশে গাড়ি থামিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো পানি কিনতে। গাড়িতে পানির বোটল নেই। কিন্তু কথাটা বলতে ওর ইচ্ছা করছে না। জুনায়েদ চুপচাপ পানির বটলটা নীলুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিল। নীলু কয়েক ঢোক পানি গলাই ঢেলে নিয়ে বলল,

> রাতে বাইরে যাওয়াটা কি খুব দরকার? বিপদ মাথায় নিয়ে ঘুরতে খুব পছন্দ তাই না? আপনার কিছু হলে লোকজন আমাকেই বলবে বউটা অপয়া।

জুনায়েদের এতক্ষণে ভীষণ বিরক্ত লাগলেও এই কথাটা ওর বেশ মনে ধরলো। ওর ভাগ্যের সঙ্গে নীলু জড়িয়ে আছে। নিজেকে খারাপ ভালো যায় হোক তার সাফার করবে নীলু। কথাটা ভেবে ওর মনটা আবার খারাপ হলো। এই মেয়েটার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। নিজেকে নিয়ে কখনও তেমন চিন্তা করতে হয়নি। সব সময় ভেবেছে বাবা মা ভাইয়া থাকতে আমার চিন্তা কিসের কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আগে থেকেই চিন্তা করা উচিৎ ছিল। নীলু ওকে চুপচাপ থাকতে দেখে বলে উঠল,

> আইসক্রিম খাওয়াবেন? মুখটা দেখুন কেমন লাল হয়ে গেছে? একটু ঠান্ডা কিছু হলে ভালো হতো।

> গরমের মধ্যে আইসক্রিম খেলে শরীর খারাপ হবে তখন…

> কথা দিচ্ছি জ্বর ঠান্ডা কিছুই হবে না। ওসব আমাদের হয়না চিন্তা করবেন না।

> তোমাদের হয়না মানে কি? তোমাদের গ্রামের সবাই এলিয়েন নাকি?

জুনায়েদ কথা শুনে নীলু হেসে ফেলে বলল,

> আপনার চোখে তো আমি প্রথম থেকেই এলিয়েন। আচ্ছা তর্কাতর্কি ছাড়ুন দাঁড়িয়ে পড়ুন রাস্তায় পাশে।

জুনায়েদ রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ভেতরে থেকেই আইসক্রিম কিনে নিলো বাইরে যেতে হলো না। নীলু মনোযোগ দিয়ে খেতে খেতে বলল,

> খারাপ না বেশ ভালো আপনি কি খাবেন?
> না। আচ্ছা নীলু হাসপাতালে যাবে? তোমার শরীর খারাপ হয়েছিল আর?

নীলু উত্তর করলো না। উদাসীন হয়ে খেতে থাকলো। জুনায়েদ উত্তর না পেয়ে বাড়ির সামনে ওকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে ফিরে গেলো। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুভ্র রুমের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসলো। অভিশপ্ত একটা দিন পার হলো। একটা প্রেজেক্টের কাজ ছিল ঝামেলাটা আজকে মিটে গেলো।। জুনায়েদ খুব মনোযোগ দিয়ে ল‍্যাপটপে কাজ করছিল শুভ্র ওর দরজায় উঁকি দিয়ে বলল,

> নীলুর কথা ভূলে গেছি তুই কিছু জানিস?

জুনায়েদ সেদিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলো,” বাড়িতে আছে। টেনশনের কিছু নেই।”

শুভ্র হাফ ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। জুনায়েদ বিড়বিড় করে বলল, “নিজের বউ হলে ঠিকই মনে থাকতো। আমার কোনো কিছুই কারো পছন্দের না।”

কথাগুলো বলে ও তৃপ্তি পেলো না। মনে হলো ভিত্তিহীন কথাবার্তা।কাজকর্ম শেষ করে জুনায়েদ বেরিয়ে আসলো। রাস্তায় অনিক ওর জন্য অপেক্ষা করছিল। ও রাস্তা থেকে অনিককে সঙ্গে নিয়ে নাইট ক্লাবের দিকে এগিয়ে গেলো। সেখানে একটা বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি আছে। ওর ইচ্ছে ছিল না অনিকের জন্য যেতে হবে। জুনায়েদ প্রথম থেকেই এসব নিয়ে খুব আগ্রহ দেখাতো হঠাৎ ওর এই নীরবতা কেউ মানতে পারছে না। রাত দশটা প্রায়। নাইট ক্লাবের হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। জুনায়েদ একপাশে চেয়ার টেনে বসে আছে। হাতে সফট ড্রিঙ্কসের গ্লাস। ঘরে অশান্তি নিয়ে বাইরে এসে আনন্দ করাটা খুবই কঠিন বিষয়। অনিক বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বসিয়েছে। সামনে কিছু ছেলেমেয়ে ক্লান্তহীনাবে অনবরত নাচছে। জুনায়েদের সেদিকে তাকাতে বিরক্ত লাগছে। মনে হলো এখানে না থেকে নির্জনে কিছুক্ষণ বসে থাকলেও মনে শান্তি। কথাটা ভেবে ও গ্লাস হাতে এগিয়ে আসতে গিয়ে কারো সঙ্গে ধাক্কা খেলো। প্রচণ্ড ধাক্কায় হাতের গ্লাসটা ছিটকে গেলো। জুনায়েদ বিরক্তি নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটাকে ও এক ঝলক দেখেই অবাক। নীলু একটা ছেলেকে তাড়া করছে। জুনায়েদ তাড়াতাড়ি নীলুর পিছু নিয়ে এগিয়ে গেলো। জুনায়েদ নাইট ক্লাবের বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলো রাস্তার উপরে নীলু সেই ছেলেটাকে মারধর করছে। মেয়েটার গায়ে পা পযর্ন্ত আবৃত সাদা রঙের গাউন। জুনায়েদ দুবার নীলুর নাম ধরে ডাকলো কিন্তু মেয়েটা শুনলো না। মারতেই থাকলো। এদিকে হঠাৎ পেছনে থেকে জুনায়েদকে কেউ শুনে ও পেছনে তাকিয়ে দেখলো অনিক দাঁড়িয়ে আছে। জুনায়েদ অনিকের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে রাস্তার দিকে তাকালো তখন আর কাউকে পেলো না। শূন্যে রাস্তা আশেপাশে কেউ নেই। দু একটা দোকান খোঁলা আছে সেগুলোতে লোকজন নেই বললেই চলে। জুনায়েদ তাড়াতাড়ি অনিকের কাছে ফিরে গিয়ে বলল,

> তুই এখানে থাক আমি বাড়িতে গেলাম খুব জরুরি কাজ আছে।

জুনায়েদ কথাটা বলতে বলতে গাড়িতে উঠে বসলো। বাড়িতে পৌঁছাতে ওর দশ মিনিটের মতো সময় লেগেছে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে জুনায়েদ হন্তদন্ত হয়ে উপরে দিকে নীলুর রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই পারভীন বেগম দরজা আটকে ধরলো। জুনায়েদ বিরক্তি নিয়ে বলল,

> নীলু কোথায়? ও বাইরে গিয়েছিল কেনো?
পারভীন বেগম বিরক্ত হলেন। উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

> নীলু রুমে আছে। কোথাও যায়নি। ওর সঙ্গে কি দরকার?

> একটু দেখা করবো। কথা বলবো না শুধুমাত্র একবার দেখেই চলে যাবো।

পারভীন বেগম দরজা খুলে দিলেন। জুনায়েদ উঁকি দিয়ে দেখলো নীলু বিছানায় বসে বই পড়ছে। ওর পড়নে কালো রঙের একটা পাড় দেওয়া শাড়ি। বাড়িতে যেমন থাকে তেমনি সাধারণভাবেই আছে। জুনায়েদ ভ্রু কুচকে কথা বলতে গেলে কিন্তু পারভীন বেগম ওকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে বলল‍,

> দেখা শেষ আশাকরি আর দেখতে হবে না। বউয়ের জন্য উথলা হচ্ছে অথচ তাকে খুন করতে কিলার ভাড়া করা হয়েছিল।

উনি রাগ করে চলে গেলেন। জুনায়েদের চোখ থেকে সেই দৃশ্যটা কিছুতেই সরছে না। মেয়েটা কে ছিল? নীলু যদি এখানে থাকে তাহলে নীলুর মতো দেখতে ওই মেয়েটা কে? মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। কার কাছে গেলে মেয়েটার সম্পর্কে জানা যাবে ভাবতে থাকলো।

চলবে।

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গল্পের রিচ অনেক কমে গেছে তাই লিখতে মন বসছে না। গল্পটা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

আসুন নামাজ ও কোরআন পড়ি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here