#আলোছায়া
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২১
জুনায়েদ নীলুকে ইউনিভার্সিটির গেটে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গিয়েছিল। দুপুরে জরুরী ফেঁসে যাওয়ায় কাজের জন্য নীলকে আনতে যেতে ওর বেশ কিছুটা দেরী হয়ে গেলো।মেয়েটাকে এখানে রেখে ওর একটুও অফিসে মন টিকে না সেদিনের কথা মনে পড়ে। কিন্তু কিছু করার নেই। জুনায়েদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভবঘুরে না থেকে সংসারী হবে। নীলুকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করবে। নীলুর প্রতি রাগটা হঠাৎ করে ভালোলাগাতে পরিণত হয়েছে। তবে এটাকে ভালোবাসা বলা যায় কি এখনো সিউর হতে পারেনি। মেয়েটাকে ওর ভীষণ রকম দরকার। আশেপাশে থাকলে স্বস্তিতে থাকতে পারে। মনে শান্তি পাই। মনের শান্তির জন্য হলেও নীলুকে ও নিজের কাছে আটকে রাখবে। তাছাড়া নিজের বউয়ের প্রতি ভালোবাসা ভালোলাগা তৈরী হওয়াটা অনুচিত কিছু না বরং ভালো দিক। যেখানে মানুষের প্রথম দেখাতে ভালোবাসা তৈরী হয়ে যায় সেখানে ওর মুখটা ও নিয়মিত দেখছে।। দুর্বল না হয়ে কোথায় যাবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে জুনায়েদ নীলুর পাশে গিয়ে গাড়ি থামালো। নীলু গেটের একপাশে ওর জন্য অপেক্ষা করছিল।।ওকে দেখে নীলু হাসি মুখে গাড়িতে উঠে অসলো। নীরবতা ভেঙে ও বলল,
> এবার চলো। প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে কতদিন খায়না মনে হচ্ছে ।
> সরি লেট হয়ে গেলো। তুমি আশেপাশের কোনো রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে নিতে পারতে।
জুনায়েদ ড্রাইভ করতে করতে উত্তর করলত। নীলু চুপ থেকে বলল,
> নোট করতে লেট হয়েছে। আমি কিছুক্ষণ আগে এসেছি। তাছাড়া আমি ক্লাসের থেকে লাইব্রেরীতে বেশি সময় থাকি।
> এটা ঠিক না নীলু। তুমি ক্লাস করতে এসে লাইব্রেরীতে থাকবে কেনো? নোট পরেও নেওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছেড়ে তুমি এসব করে সময় নষ্ট করছো?
> সব কিছুই দরকার আছে। তাছাড়া আপনি দেখে নিবেন আমি ভালো রেজাল্ট এমনিতেও করবো। আসলে বইয়ের মধ্যে থাকতে ভালো লাগে।
> ইনশাআল্লাহ ভালো করবে। তবুও এমন আর করো না। নিয়মিত ক্লাস করো।
রাস্তায় ওদের আর কথা হলো না।জুনায়েদ ওকে নিয়ে একটা ভালো রেস্টুরেন্টের সামনে এসে থামলো। নীলু বুঝতে পেরে কোনো প্রশ্ন করলো না। তাছাড়া খাওয়াটা খুব বেশি দরকার। শরীরে শক্তি পাচ্ছে না।
দুপুরের শেষ ভাগ বিকেলের সূচনা লগ্ন লোকজন রেস্টুরেন্টে নেই বললেই চলে। চারদিকে কালো থাই কাচের জন্য ভেতরটা বেশ অন্ধকার। নির্জন শীতল পরিবেশ। জুনায়েদ একটা চেয়ার টেনে ওকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর সামনে বসে পড়লো। তারপর খাবারের অর্ডার দিয়ে কিছু একটা ভাবলো। কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার চলে আসবে কিন্তু হাতমুখে পানি দেওয়া খুব দরকার। জুনায়েদ নীলুকে রেখে ফ্রেস হতে আসলো। রেস্টুরেন্টের ওয়াশরুমটা বেশ বড়। ভেতরে তেমন আলো নেই আবার অন্ধকার ও নেই। জুনায়েদের লাইট অন করতে ইচ্ছে করলো না। ভাবলো এইটুকুর জন্য আর চোখের বারোটা বাজানোর দরকার নেই। কথাটা ভেবে ও বেসিনে হাত পরিস্কার করে মুখে পানি ছিটাতেই আয়নার দিকে চোখ গেলো। ওর পেছনে একজন দাঁড়িয়ে আছে। যার লাল টকটকে চোখ জোড়া ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। জুনায়েদের সারা শরীর বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। মনের মধ্যে ভয় জেগে বসেছে। তবুও ও সাহস হারালো না। ভাবলো এই আগন্তুক কি করে একটু দেখি না।ও না দেখার ভান করে আরেকবার চোখে পানি ছিটিয়ে নিতেই লক্ষ্য করলো লোকটা একটা ধারালো কুঠাল ওর দিকে উচু করছে।। জুনায়েদ ফট করে বসে পড়লো আর সেটা গিয়ে বেসিনের আয়নায় গিয়ে লাগলো। বিকট শব্দে আয়না ভেঙে চারদিকে ছড়িয়ে গেলো। জুনায়েদ দ্রুত পেছনে ফিরলো কিন্তু কাউকে পেলে না। ততক্ষণে নীলু চলে এসেছে আর ওর পিছু পিছু এখানের লোকজন। নীলুর চোখেমুখে আতঙ্ক খেলা করছে। ও ছুটে গিয়ে জুনায়েদকে জড়িয়ে ধরলো। ওকে এভাবে উত্তেজিত হতে দেখে জুনায়েদ ওর কানে ফিসফিস করে বলল,
> কিছু হয়নি আমি ঠিক আছি।
নীলু শুনলো না। ওর হাত মুখ ধরেধরে দেখছে কোথাও লেখেছে কিনা। নীলুকে উত্তেজিত দেখে জুনায়েদ ওকে দুহাতে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো। উপস্থিত সকলের নজর ওদের দিকে। বাথরুমে কি হয়েছে বা ওখানকার ঘটনা নিয়ে সকালের মনে কৌতূহল জেগেছে। জুনায়েদ ওদেরকে বলল হঠাৎ কাচ খুলে পড়ে গেছে। সকলে বিশ্বাস করলেও নীলুর মুখ দেখে তেমন কিছু বোঝা গেলো না। জুনায়েদ ওকে নিয়ে জোর করে খেতে বসলো। নীলু নিজে থেকে খাবারে হাত রাখলো না মুখটা থমথমে করে বসে আছে। ওকে এভাবে দেখে জুনায়েদ ওকে নিজের হাতে খাওয়ায়ে দিল। নীলু সেই থেকে চুপচাপ। জুনায়েদ ওর মুখে খাবার দিতে দিতে বলল,
> আমি দরজা বন্ধ করে ঢুকেছিলাম তুমি খুঁললে কিভাবে?
নীলু চমকে উঠে নিজের শান্ত করে উত্তর দিল,
> ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। তাছাড়া তখন আপনাকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে এসব ভাবিনি।
> নীলু আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ফলো করছে। লোকটার উদ্দেশ্য ঠিক ভালো না। লোকটা হয়তো আমাকে মারার জন্য পরিকল্পনা করছে। সব কেমন এলোমেলো লাগছে। আমি বুঝতে পারছি না লোকটা কার হয়ে কাজ করছে।
জুনায়েদ একে একে গতকাল রাত আর এখনকার ঘটনা ওকে খুলে বলল। সব শুনে নীলুর মুখটা চুপসে গেছে। ও দ্রুত জুনায়েদকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসলো। বাড়িতে ফিরে নীলু অবাক হলো। বাড়িতে আরেক ঝামেলা এসে হাজির হয়েছে। শুভ্রর হবু বউয়ের সময় তীব্র ডাইনিং রুমের সোফায় আরাম করে বসে কফি খাচ্ছে। জুনায়েদও বিরক্ত হয়েছে কিন্তু মুকে প্রকাশ করলো না। ভদ্রতার খাতিরে ওদের সামনে গিয়ে বসলো। তীব্র জুনায়েদকে বলল,
> আপনাদের দুজনকে এক সঙ্গে দেখে ভীষণ ভালো লাগে। একদম পারফেক্ট জুটি নজর না লাগে। যদিও আমি এসবে বিশ্বাস করিনা। তবে আমার দাদি আম্মা বলেন নজর খুব বাজে জিনিস। কখন কি হয়ে যায় বলা কঠিন।
জুনায়েদ ভ্রু কুচকে ফেলল ওর এমন ছন্নছাড়া কথা শুনে। ডাক্তার মানুষের চিন্তাধারার একি অবস্থা। ভাবলো কড়া করে উত্তর দিবে কিন্তু তার আগেই নীলু উত্তর করলো,
> ঠিক বলেছেন কিছু লোকের নজর খুবই বিষাক্ত। তবে ভাববেন না আমি খুব ভালো নজর কাটাতে পারি। আমাদের ক্ষতি করতে চাইলে তার এমন অবস্থা করবো পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।
তীব্র অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
> মিস আপনি কথা বলতে পারেন? আমি ভেবেছিলাম পারেননা।
> আপনি ভূল বললেন আমি মিস না,মিসেস। জুনায়েদ সাইদের মিসেস। আর দরকার পড়লে আমি মুখ না তলোয়ার ও চালাতে জানি। প্রিয় মানুষের জন্য সব পারি।
উপস্থিত সকলে মজা নিচ্ছে কিন্তু জুনায়েদ বেশ বিরক্ত হচ্ছে। এই দুজন মনে হচ্ছে বাক্য দ্বারা যুদ্ধ করছে। নীলু কিছুক্ষণ আগেও ভয়ে কাপছিল হঠাৎ এর কথাগুলো এমন ধারালো কিভাবে হলো এটাও চিন্তার বিষয়। ওকে এভাবে আকাশ পাতাল ভাবতে দেখে পারভীন বেগম বললেন,
> জুনায়েদ নীলুকে নিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও। শুভ্র আসলে সবাই মিলে ঘুরতে যাবে। বিয়ের এক মাস বাকি আছে। ওদের একটু কথাবার্তা বলা দরকার। শুভ্র একা যেতে চাইছে না তাই তোরাও সঙ্গে যাবি।
জুনায়েদের ইচ্ছা করছিল মানা করবে কিন্তু করতে পারলো না। নিজের ভাইয়ের সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে। একা একা সে কখনও এই মেয়েটার সঙ্গে কোথাও যাবে না। সেই ওদেরকে নিয়ে টানাটানি করবে তাই চুপচাপ যাওয়ায় ভালো হবে।
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।
আসুন নামাজ ও কোরআন পড়ি।