তোমাকে বলার ছিল পর্ব-১৭

0
698

তোমাকে বলার ছিল…
সপ্তদশ পর্ব

-একটু কাছে আসবে তৃণা
তৃণা তখন সুজনের বুকের উপর মাথা রেখে শুয়েছিল I ডাক শুনে মুখ তুলে তাকালো I সুজন পরম যত্নে ওর কপালের উপর থেকে দুই হাতে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে খুব আলতো করে কপালে একটা চুমু খেলো I তৃণা কিছু বলল না শুধু হাসলোএকটু তারপর একটু এগিয়ে এসে সুজনের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো I বিস্ময়ের ঘোর কাটতে কয়েক মুহূর্ত লেগে গেল সুজনের I এরপর আর কেউই থেমে থাকেনি I সুজন শুধু একবার জিজ্ঞেস করেছিল
তুমি আমাকে আগে বলনি কেন ?
কি ? কি বলিনি?
যে তুমি আমার আদর চাও
আমাকে চেয়ে চেয়ে নিতে হবে ?
কোন জবাব দিতে পারেনি সুজন এ প্রশ্নের I তবে ওকে চেয়ে নিতে হয় নি I সেরাতে এক আকাশ ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিল সুজন তৃণাকে I এই ভালোবাসা উপেক্ষা করে তৃণা কি করে চলে গেল আজও ভেবে পায় না সুজন I তবে প্রতি রাতে ও এই একই স্বপ্ন দেখে ও I শুধু তৃণা যখন খুব কাছে আসে তখনই ঘুমটা ভেঙে যায় I

সুজন ধর্ মর করে উঠে বসলো I অচেনা ঘর , অচেনা জানালার পর্দা , এত দিন হয়ে গেছে তবু সুজন এখনো মানিয়ে নিতে পারেনি I সেদিন তৃণা চলে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ পর্যন্ত মাথা কাজ করছে না ওর I যখন সম্বিত ফিরে পেল দৌড়ে নিচে নেমে পাগলের মত খুঁজলো চারিদিকে i কিন্তু তৃনাকে কোথাও দেখা গেল না i দৌড়াতে দৌড়াতে বড় রাস্তা পর্যন্ত চলে গিয়েছিল তবুও খুঁজে পায়নি ওকে i ফোন করতে গিয়ে খেয়াল হল তৃণা ফোনটা ফেলে গেছে i হয়তো ইচ্ছে করে ফেলে গেছে , যেন ওকে আর কেউ খুঁজতে না পারে I

সুজন ওর ফোনটা চেক করলো i 37 সেকেন্ড কথা হয়েছে মায়ের সঙ্গে i এই 37 সেকেন্ডে এমনকি বলতে পারে মা যে তৃণা এইভাবে চলে যাবে I ভাবতে ভাবতেই আরেকবার ফোন এলো মায়ের I
– তুই এভাবে ফোন রেখে দিলি কেন ?
– তুমি ওকে কি বলেছ মা?
– কাকে?
– তৃণাকে
-ওই মেয়েকে আমি কিছু কেন বলব ?
– তোমরা কি বুঝতে পারছ তোমরা কারা ব্যাপারে কথা বলছ ?
– কার ব্যাপারে ?
বেশ ব্যঙ্গ ভোরেই বললেন সোনিয়া
– মা তুমি কি বাবাকে ফোনটা দেবে ?
জামান সাহেব ফোনটা হাতে নিয়ে বললেন
– কি হয়েছে সুজন?
– তৃণা চলে গেছে বাবা I আমি বুঝতে পারছি না , মা এমন কি বলেছে যেটা শুনে ও এইভাবে চলে যেতে পারে I তুমি কি আমাকে একটু বলবে কি হয়েছে I
জামান সাহেব আমতা আমতা করে বললেন
– আমার মনে হয় তোর মা ঠিকই বলেছে I আমি তো তখন জানতাম না I পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম যে মেয়েটার কোন বাবার পরিচয় নেই I এরকম একটা মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হোক এটা আমরা চাই না I
– বিয়েটা হয়ে গেছে বাবা I তোমার সঙ্গে কথা বলার পরেই হয়েছে I আর এখন তোমরা ওর সম্বন্ধে এভাবে কথা বলো এটা আমার ভালো লাগছে না I
– আমরা কি এমন বলেছি যেটা সত্যি সেটাই তো বলেছি I পাশ থেকে সোনিয়া বলে উঠলেন

হঠাৎ করেই প্রচন্ড জোরে কিছু একটা ভাঙ্গার শব্দ হলো I ভীষণ রকমের জোরে শব্দ করে ফোনটা কেটে গেল I জামান সাহেব এবং সোনিয়া হতভম্ব হয়ে গেলেন I সোনিয়া নিজের ছেলেকে চেনেন I এমনিতে ও চুপচাপ শান্ত ধরনের কিন্তু যখন রেগে যায় কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না I মনে আছে একবার ছোটবেলায় ও ঘরের সমস্ত জিনিস ভেঙ্গে ফেলেছিলো I জামান সাহেব এবং সোনিয়া দুজনেই বেশ ভয় পেলেন I ছেলেটা যদি কিছু করে বসে I তাড়াতাড়ি মজিদকে ফোন করে উপরে যেতে বললেন I

মজিদ ছাদে উঠে হতভম্ব হয়ে গেল I সমস্ত ছাদ লন্ডভন্ড হয়ে আছে I ভাঙ্গা ফুলের টব আর মাটি চারিদিকে ছড়ানো I মাঝখানে দুইহাতে মুখ ঢেকে সুজন বসে আছে I মজিদ সুজনকে জড়িয়ে ধরল I এই ছেলেটাকে একেবারে ছোট বেলা থেকে ও কোলে পিঠে করে বড় করেছে I প্রতি বছর মেলায় নিয়ে যেত ঘাড়ে বসিয়ে I তখন কত বয়স হবে সুজনের বড়জোর 4 I মজিদের মনে আছে কদিন আগে যখন বাসার রেনোভেশন এর কাজ হচ্ছিল I ও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল –
– এসব কার জন্য করছো আব্বা ?
সুজন বলেছিল যার জন্য তাকে একদিন নিয়ে আসব তোমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিব I দেখবে তোমারও ওকে খুব ভালো লাগবে I
তাকে আর দেখা হয়নি মজিদের I গতকাল রাতে বাড়ী ফিরে ও শুনেছে যে সুজন বউ নিয়ে এসেছে I রাত হয়ে গেছে বলে ও আর বিরক্ত করেনি I সকালে উঠে এমন একটা ব্যাপার হবে ভাবতেও পারিনি I মজিদ পরম স্নেহে দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলI সুজন কাঁদতে কাঁদতে বলল
– চাচা ও চলে গেছে I আমাকে ছেড়ে চলে গেছে I
মজিদ বলল আমরা ওকে খুঁজে নিয়ে আসবো যেখান থেকে পারব খুঁজে নিয়ে আসবো I তুমি শান্ত হও আব্বা শান্ত হও I
মজিদের ফোন বাজছে I মজিদ ফোনটা ধরে বললো
– জি ভাইজান সব ঠিক আছে I তারপর ফোনটা সুজনের দিকে এগিয়ে দিল
সুজন কোনমতে ফোনটা ধরে বলল
– বাবা কালকে তোমার সঙ্গে কথা বলেই আমি বিয়ে করলাম I তাহলে এখন তোমরা এমন কেন করলে ?
– শান্ত হও সুজন I তোমার মা বুঝতে পারেনি যে ফোনটা ও ধরেছে I
– আমি ওকে ফোনটা ধরতে বলেছিলাম I আমি এক্সপেক্ট করিনি যে তোমরা এই ধরনের কথা বলতে পারো I ও আমাকে বলেছিল যে আমার ফ্যামিলি কখনোই মেনে নেবে না I আমার সঙ্গে কোনো সম্পর্কে না গিয়ে ও অন্য জায়গায় বিয়ে করতে যাচ্ছিল I আমি ওকে দায়িত্ব নিয়ে নিয়ে এসেছি I এখন আমি ওর ফ্যামিলির কাছে কি জবাব দেব I
মিজান সাহেব বলার মত কিছু খুঁজে পেলেন না I সুজন হঠাৎ করে অসম্ভব শান্ত হয়ে গেল I তারপর থমথমে গলায় বলল
– আমি আর এখানে থাকবো না বাবা I যতদিন তৃণাকে খুঁজে না পাচ্ছি আমি তোমাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করব না I

সুজন কোন দিন বাড়ির বাইরে একা থাকেনি I ওর তেমন কোনো বন্ধু নেই I এই মুহূর্তে বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় যাবে ও জানে না I হোটেলে ওঠা যায় I খরচ টা কোন সমস্যা না I এ বাড়ির চারটা ফ্ল্যাট এর ভাড়া প্রতিমাসে ওর একাউন্টে জমা হয় I গত 18 বছর ধরে জমা হয়ে আসছে I প্রথমে ওর একাউন্ট জয়েন ছিল বাবার সঙ্গে I 5 বছর ধরে ওর পার্সোনাল একাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে I সেই টাকার অংকটা নেহাত কম নয় I কিন্তু হোটেলে উঠতে ইচ্ছা করছে না I সুজন ওর সহপাঠী রিপন কে ফোন দিয়ে বলল
– আমি কি কয়েকদিন তোর সঙ্গে হলে থাকতে পারি ?
রিপন ওর কণ্ঠস্বর শুনে কি বুঝলো কে জানে শুধু বলল
– তুই এখন কোথায় সুজন ?
– বাসায়
– ঠিক আছে আমি আসছি তোকে নিতে

রিপন ছেলেটার সঙ্গে ওর খুব একটা বন্ধুত্ব কখনোই ছিল না I রিপন গ্রামের ছেলে I টাকা পয়সার খুব টানাটানি I চার-পাঁচটা টিউশনি করে I সুজনের কাছ থেকে প্রায়ই নোট নিয়ে যায় I সারারাত বসে কপি করে I তারপর পরের দিন ফিরিয়ে দেয় I ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সুজন নিজেই একটা কপি করে ওকে দিয়ে দিত আর বলতো ফেরত দেয়ার দরকার নেই I মাঝে মাঝে পরীক্ষার আগে সুজনের কাছে আসতো এটা সেটা বুঝতে I সুজন কখনো কার্পন্য করেনি I কখনো বিরক্ত হয়নি I বিপদের সময় বন্ধুত্বের আসল পরিচয় বোঝা যায় I রিপন কোন প্রশ্ন না করে ওকে হলে নিয়ে গিয়েছিল I ফাইনাল ইয়ার বলে ওর নিজের রুম I সুজনের ব্যাগ রেখে বলেছিল
– তোর হয়তো একটু কষ্ট হবে I আমাকে বলিস আমি যদি আর কিছু করতে পারি I তোকে দেখে মনে হচ্ছে তুই সারারাত ঘুমাস নাই I এটা খেয়ে নে I
– কি এটা?
– মিডাজোলাম I শর্ট অ্যাক্টিং I তুই তো ভালো জানিস I চার-পাঁচ ঘণ্টা ভালো ঘুম হবে I
সুজন কিছু না বলে ওষুধটা খেয়ে নিল I যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন গভীর রাত I বালিশের নিচে থেকে হাতরে মোবাইলটা বের করল I সাড়ে এগারোটা বাজে I তাকিয়ে দেখল রিপন মাটিতে বিছানা করে ঘুমিয়ে আছে I হঠাৎ সুজনের মনে পড়লো আজ তৃনাকে কবিতা পাঠানো হয়নি I কিন্তু ওর কাছে তো মোবাইল নেই I কদিন আগে কয়েকটা প্রশ্ন পত্র ইমেইল করেছিল ওকে I ইমেইল এড্রেস টা নিশ্চয়ই আছে I কবিতাটা পাঠিয়ে সুজন অন্ধকারে চোখ বুজে পড়ে রইল I এটা কি সত্যি সত্যি তৃণা পাবে ? যদি পায় তাহলে কি ফিরে আসবে ? মনে মনে কবিতাটা আবার আওড়ালো সুজন

কোনও একদিন ফিরে এসো, যে কোনও একদিন, যেদিন খুশি
আমি কোনও দিন দিচ্ছি না, কোনও সময় বলে দিচ্ছি না, যে কোনও সময়।
তুমি ফিরে না এলে এই যে কী করে কাটাচ্ছি দিন
কী সব কাণ্ড করছি,
কোথায় গেলাম, কী দেখলাম
কী ভালো লেগেছে, কী না লেগেছে — কাকে বলবো!
যে কোনও একদিন ফিরে এসো, ভর দুপুরে হোক, মধ্যরাত্তিরে হোক —
তোমার ফিরে আসার চেয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই।
বিশ্ব ব্রম্মাণ্ডের সমস্ত সুন্দর জড়ো করলেও
তোমার এক ফিরে আসার সুন্দরের সমান হবে না।
ফিরে এসো,
যখন খুশি।
নাও যদি ইচ্ছে করে ফিরে আসতে,
তবু একদিন এসো, আমার জন্যই না হয় এসো,
আমি চাইছি বলে এসো,
আমি খুব বেশি চাইছি বলে।
আমি কিছু চাইলে কখনও তো তুমি না দিয়ে থাকোনি !

রিপন একবারও জানতে চাইনি যে ওর কি হয়েছে I পরে অবশ্য সুজন নিজেই ওকে বলেছিল I এটাও বলেছিলো কাউকে না বলতে I নিজের জন্য নয় I হয়তো তৃণাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠবে তাই কাউকে জানাতে চায় নি I কিন্তু ভালো খবর এর চেয়ে খারাপ খবর যেমন দ্রুত আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ঠিক তেমনভাবেই ওদের বিয়ের কথাটা এবং তৃণার চলে যাওয়ার ব্যাপারটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে গেল ডিপার্টমেন্টে I সামনাসামনি এসে কেউ কিছু জিজ্ঞেস না করলেও আড়ালে-আবডালে সকলেই ফিসফিস করতে লাগলো I

সুজন নিজেকে অনেক গুটিয়ে ফেলল I ঠিক করল হল ছেড়ে একটা ভাড়া বাসায় উঠে যাবে রিপন দ্রুতই ওর জন্য একটা বাসার ব্যবস্থা করে দিল I বলল
– হয়তো একটু কষ্ট হবে কিন্তু বাসাটা ভালো আমার স্টুডেন্টের বাসা I চিলেকোঠার একটা ঘর সামনে পুরোটাই ছাদ I তোর জন্য ভালো হবে প্রাইভেসি বেশ ভালো I বাসাটা দেখে সুজনের অসম্ভব মন খারাপ হয়ে গেল I ঠিক এরকম একটা বাসাই তৃণা চেয়েছিল I রিপন সুজনের মনের কথা বুঝতে পেরে বলল
– এত চিন্তা করিস না I আমরা ওকে খুজে বের করব তারপর এখানে নিয়ে আসব I

সুজন সারারাত ঘুমাতে পারেনি I শেষ রাতের দিকে একটু চোখ বন্ধ হয়ে এসেছিল I ভোরের আলো ফুটতেই স্বপ্নটা আবার এলো I সুজন ধর মর করে উঠে বসলো I খেয়াল হল আজকে মিটিং আছে MAC স্যারের সঙ্গে I স্যার এত ব্যস্ত থাকেন এর মধ্যেও সময় বের করেছেন ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য I স্যার ওর জীবনের রোল মডেল I এখনো মনে আছে এসএসসি পরীক্ষার পর ওর কাজিন এর বন্ধুর সঙ্গে ডিপার্টমেন্ট এ এসেছিলো ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে I স্যারের স্পিচ শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল সুজন I সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পরবর্তীতে ও এই ডিপার্টমেন্টেই পড়বে এবং ঠিক স্যারের মত একজন টিচার হবে I এতটাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল সুজন যে বাবা-মায়ের সঙ্গে ইউএস যেতেও রাজি হয়নি I

তৃণা চলে গেছে এক মাস হয়েছে I এই এক মাসে সুজন এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ওকে খুঁজে নি I কোথাও ওর কোন চিহ্ন নেই I এরমধ্যে তৃতীয় বর্ষের রেজাল্ট হয়েছে I চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে I তৃণা ক্লাসে জয়েন করেনি I যদিও এবছর ওর রেজাল্ট অন্যান্য বছরের চাইতে অনেক ভাল হয়েছে I আর সুজন যথারীতি প্রথম হয়েছে I ক্লাস শুরু হওয়ার পরেও সুজন কিছুতেই মন বসাতে পারছিল না I জীবনে প্রথমবার ক্লাস টেস্ট এত খারাপ হয়েছে I স্যার খুব অবাক হলেও কিছু বলেননি I শুধু বলেছেন শনিবার সকালে দেখা করতে I

সুজন উঠে তৈরি হয়ে নিল I গত একমাস ধরে ও চুল কাটেনি শেভ করে নি I ওর চেহারার সেই পরিপাটি ভাবটা আর নেই I বরং এখন কেমন রুক্ষ উস্কোখুস্কো দেখায় I সুজন গোসল করে নিজেকে একটু ঠিকঠাক করে নিল I তারপর রওনা দিল I

স্যারের পার্সোনাল অফিস ল্যাবের ঠিক পাশেই I ল্যাবটা কার্জন হলের একেবারে শেষমাথায় I গেটের বাইরে স্যারের নেমপ্লেট দেয়া I বড় বড় হরফে লেখা মুনীর আহমেদ চৌধুরী I একবার নামটা ছুঁয়ে দেখল সুজনI ওর খুব শখ ছিল একসময় এরকম একটা ল্যাব ওর হবে I অফিসের বাইরে লেখা থাকবে হাবিবুল বাশার I সুজন হাসলো এখন আর এসব ইচ্ছা করে না I

– স্যার আসবো?
– হ্যাঁ এস সুজন I বস
– স্যার আপনি কি আমার লাস্ট ক্লাস টেস্টের মার্কস নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন ?
– না I তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে তোমাকে কয়েকটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করব
– জি স্যার বলেন
– তোমার ব্যাপারটা আমি শুনেছি I বুঝতে পারছি তুমি খুব আপ্সেট I তবে একটা ব্যাপার বুঝতে পারছিনলাম না যে তোমার মতো বুদ্ধিমান একটা ছেলে এখনো পর্যন্ত কি করে তুমি ওকে খুঁজে বের করতে পারোনি I তোমার ক্লাস টেস্টের মার্কস দেখে বুঝলাম I তুমি আসলে অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে আছো I
– ঠিক বুঝলাম না স্যার
– আমাকে একটা কথা বল একটা মেয়ে যে যথেষ্ট ভালো ছাত্রী এবং পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস I যে তার থার্ড ইয়ার শেষ করেছে কিন্তু এখনো ফাইনাল ইয়ার শেষ করেনি তাকে তুমি কোথায় খুঁজতে পারো I সবচাইতে বড় বিষয় হচ্ছে ওর ট্রান্সক্রিপ্ট , সার্টিফিকেট সব কিন্তু এখনো এখানে I
সুজন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল I তারপর বলল স্যার আপনাকে একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি ?
– হ্যাঁ করো I আমি অবশ্য জানতাম তুমি এই প্রশ্নটা করবে
– আপনি কি সত্যিই ম্যাডামের জন্য 13 বছর অপেক্ষা করেছেন ?
– আমার আসলে অপেক্ষা করার মতো সিচুয়েশনে ছিলনা I তোমার অবস্থা কিন্তু সেই তুলনায় অনেক বেশি ভালো I ও তোমাকে ছেড়ে গেছে কিন্তু সম্পর্কটা ভেঙে যায় নি I
– স্যার আপনি এত কিছু কি করে জানেন ?
মুনিরএকটু হাসলো I তারপর বলল I আমার বড় মেয়ে প্রায় তোমাদের সমবয়সী I আমার কাছে আমার স্টুডেন্টরা আমার সন্তানের মতো I ছেলেমেয়েদের খবর আমাকে রাখতে হয় I

সুজন তাকিয়ে আছে I সবাই ঠিকই বলে I HE HAS A KILLER SMILE . এখনো প্রতিদিন কত মেয়ে যে স্যারের প্রেমে পড়ে I সুজন বলল

– থ্যাঙ্ক ইউ স্যার I
-ইওর ওয়েলকাম I ভালো করে পড়াশোনা করো I আর নিজের যত্ন নাও I কাউকে খুঁজে বের করা যথেষ্ট পরিশ্রমের কাজ I

সুজন কার্জন হল থেকে বেরিয়ে রেজিস্টার বিল্ডিং এর রিক্সা নিল I ওখানে গিয়ে জানতে পারল তৃণা গতকাল ওর মার্কশিট গুলো তুলেছে I সুজন মনে মনে বলল
– এবার তুমি আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে না তৃণা I

চলবে….
লেখনীতে
অনিমা হাসান
তোমাকে বলার ছিল ….
সপ্তদশ পর্ব

এই পর্বে যে কবিতাটা দেয়া হয়েছে তার নাম ফিরে এসো লিখেছেন তসলিমা নাসরিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here