Journey part-5

0
444

#Journey

#৫

জেসমিন জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে।বাহিরে আকাশটা অন্ধকার হয়ে এসেছে,ঠিক যেমন ওর মনের ভেতরটা হয়ে আছে।বাঁ হাত দিয়ে ও নাক চুলকায়,নাকে আবার কি হল?সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে জাফার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।দুজনের চোখাচোখি হলে জাফার মুখ খুলে,
“কি ব্যাপার?বাকিটা বলতে চাচ্ছেন না?”
“উহ,বলব,কেন বলব না?তবে তার আগে বলে রাখি।আমার কথাগুলো শোনার পর আমার প্রতি,আমার পরিবারের প্রতি ধারণা বদলে যেতে পারে।প্লিজ,এমনটা করবেন না।আমি এই জার্নির শুরু থেকে আপনার চোখে যেমনটা ছিলাম,শেষেও তেমনটাই থাকতে চাই”
জাফার একটু জোরেই হেসে ফেলে।
“আমরা একটা মানুষকে দেখে কত কি ভেবে ফেলি!কিন্তু সব কি আর সত্যি হয়?হয় না।তারপরও একটা কথা আছে, First impression is the last impression. তাই এত চিন্তা না করে বলতে পারেন।তবে ব্যাপারটা যদি এমন হয় যে,আপনারটা আপনার মাঝেই রাখতে চান,তাহলে বাদ দিন।জোর করে শুনতে চাই না আমি”

জেসমিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে।লুকিয়ে আর কি হবে?এতদিনের জমানো কথা কেউ তো শুনতে চাইল,তার কাছে না হয় সব বলেই দেয়া যাক!হাজার হোক,বুকের ভার কিছুটা হলেও কমবে,নিশ্বাস নেয়াটা ওর জন্যেই সহজ হবে।আবারো বলতে শুরু করে জেসমিন নিজের জীবনের লুকানো কথাগুলো।

“আমার মা যখন আমার খেয়াল রাখা শুরু করলেন,সেটা ছিল আমার জন্যে অনেক বেশি আনন্দদায়ক।মা তখন আমার খাওয়া, ঘুম,রূপচর্চা,পোষাক আশাক সব কিছু খেয়াল করতে শুরু করলেন।বহু বছর পর আমি একটা ভালো কিছু পাচ্ছিলাম মায়ের কাছ থেকে।সেসময়ের স্মৃতিগুলো মনে পড়লে এখনও মনটা ভালোলাগায় ছুঁয়ে যায়! I wish,life would have stayed the same till end! কিন্তু সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার হল,এই পরিবর্তনের পুরোটাই মিথ্যে ছিল!”
“মানে?!”
“মা আমার সাথে অভিনয় করছিলেন!”
“কিন্তু কেন?একজন মা কেন তার মেয়ের সাথে এমন করবে?!”
“বলছি।যখন মা আমাকে ভালোবাসতে শুরু করল,তখন আমিও খুশি ছিলাম,মা যা বলত,তাই করতাম,হোক তা আমার যতই অপ্রিয়। দেখতে দেখতে খুব দ্রুত ঐ ছেলের সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা ঠিক করে ফেলল,ওর নাম ছিল রুবায়েত। রুবায়েতের সাথে আমার খুব ঘটা করে আংটি বদলের আয়োজন শুরু হয়। এদিকে আমার ভাইয়ার সাথে এক বছর আগে মায়ের ঝামেলা হওয়ায় ভাইয়া চাকরি নিয়ে সিলেট চলে গেছে,আর আসে নি।আমার আংটি বদল উপলক্ষে মাকে বলি ভাইয়াকে ডাকতে,মা সাফ সাফ মানা করে দেয়,সে ডাকতে পারবে না।অগত্যা আমিই কল দেই ভাইয়াকে,চাচ্ছিলাম এই সুযোগে ওদের মাঝের সমস্যাটা মিটাতে।কিন্তু ভাইয়াকেও রাজী করাতে পারিনি।”
“আপনার ভাইয়া আর মায়ের মাঝে কি হয়েছিল?”
“মা স্বার্থপর, তা তো আগেই বলেছি।একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে মায়ের কাছে ভাইয়া টাকা চেয়েছিল,কিন্তু মা দেয়নি।সে বাবার সম্পত্তির কি আছে,কি নেই,কিছুই আমাদের কাউকে জানতে দেয়নি,ওতে নাকি তারই একচ্ছত্র অধিকার।সে যাক গে,ভাইয়ার অনুপস্থিতিতেই আমার অনুষ্ঠান শুরু হয়,ভালোয় ভালোয় আংটি বদল শেষও হয়।রুবায়েত সত্যিই অনেক সুদর্শন পুরুষ,ওকে দেখে আমারও ভালো লাগে।অবশ্য অবাকও হই,এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে ফেলে আমাকে কেন?তখন অবশ্য সবকিছুর এত গভীরে গিয়ে ভাবার সময় পাই নি,হুট করেই এত কিছু হল।

আমাদের আংটি বদলের পরদিন মা এসে আমাকে একটা গোলাপী রঙের শাড়ী দিয়ে বললেন আমি যেন ওর সাথে সন্ধ্যায় দেখা করতে যাই উত্তরার এক রেস্টুরেন্টে, সেখানে সে অপেক্ষা করবে।যেহেতু আংটি পড়ানো শেষ,আমিও দ্বিরুক্তি করিনি।শাড়ী পড়ে সেজে গুজে দেখা করতে গেলাম।সেখানে যাওয়ার পর দেখি আমার জন্যে স্পেশালী সেটা সাজানো,এবং অনেক সুন্দর করে ফুল দিয়ে পুরোটা সাজিয়েছে,তাও আবার আমার প্রিয় বেলী ফুল দিয়ে! আমার মনে হচ্ছিল,স্বপ্নও এত সুন্দর হতে পারেনা।আমাকে হাত ধরে সে নিয়ে বসালো,আমার জন্যে স্পেশালী ভায়োলিন বাজছিল।আমার যে ভায়োলিন পছন্দ,এটাও সে জানে।আমাকে সে নিজে গাড়িতে করে নামিয়ে দিয়েছে বাসায়।সেই সন্ধ্যা থেকে যতক্ষণ আমরা ছিলাম,আমি একটা ঘোরের মাঝে ছিলাম যেন।

সেদিনের এই ঘটনাটা একটা ডেমো ছিল,ধীরে ধীরে এসব আরো বাড়তে থাকে।নানারকম উপহার,ফুল দেয়া,মাঝরাতে আমার বারান্দার নিচে দাঁড়ানো,হুটহাট দেখা করতে চলে আসা,সব করত আমার জন্য।এতটা মনোযোগ কখনও কারো কাছে পাইনি,তাই আমিও খুব বেশিই ভালোবেসে ফেলেছিলাম রুবায়েতকে।যদিও মাত্র এক সপ্তাহ হয়েছিল,কিন্তু এর মাঝেই আমি ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম,আমাদের বাবুদের নামও ঠিক করে ফেলেছিলাম!”

জাফার একটু হেসে ফেলে,আর সেই হাসি আটকাতে কাশি দেয়।
“আচ্ছা,আপনারা মেয়েরা এত দ্রুত কিভাবে বাচ্চা,তাদের নাম এসবে চলে যান?!আমার ভীষণ হাসি পায়।বিয়ের আগেই এত চিন্তা কিভাবে আসে?…সরি,কিছু মনে করবেন না প্লিজ!”

জাফারের কথা শুনে জেসমিনের বেশ রাগ হয়।আশ্চর্য! ছেলেরা সব কি একরকম হয় নাকি!
“ঠিক এই কথাটা আমাকে রুবায়েত বলেছিল!আমি বুঝি না,পুরুষ সব একভাবে চিন্তা করে কেন??আপনারা পুরুষরা সংসারে মন বসাতে বিয়ের পরও কয়েক মাস লাগিয়ে দেন,অনেকে তো আবার বছরও পার করে!যদি আমরা মেয়েরাও আপনাদের মত হতাম,তবে আর সংসার হত না,সংসার ধর্ম চুলোয় যেত!!”
জেসমিনের রাগ করা দেখে জাফার জোরে জোরে মাথা নাড়ে,
“পয়েন্ট!একেবারে ঠিক বলেছেন!আমি তো এটা ভেবেই দেখিনি!আপনি একদম ঠিক মিস জেসমিন,একদম!”

জেসমিনের রাগ আরও বাড়ে।জাফার কি মজা নিচ্ছে??মেজাজ খারাপ করে ব্যাগ থেকে চুইংগাম বের করে মুখে পুড়ে কানে হেডফোন গুঁজে দেয়।তারপর সামনের বইটা নিয়ে পড়া শুরু করে।নিজের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে,জার্নিটা একা করলেই ভাল হত,হুহ!!

জেসমিন কিছু বলছে না দেখে জাফার কয়েকবার গলা খাঁকারি দেয়,তবু জেসমিনের কোন পাত্তা নেই।সে তার মত করে বইয়ে আর গানে ঢুকে গেছে।জাফার জেসমিনের চোখের সামনে হাত নাড়ে,তবুও পাত্তা নেই,যেন এই হাত দেখাই যায় না!জাফার চুপ করে সিটে সোজা হয়ে বসে।মেয়েটা অমন রেগে গেল কেন???

বেশ কিছুক্ষণ পর জেসমিন উঠে যায়,কফি নিবে বলে।ট্রেনে আবার কফির ব্যবস্থাও আছে।কফি এনে চুপচাপ তাতে চুমুক দেয়।ওর দেখাদেখি জাফারও আনে।জেসমিন আড়চোখে ওর দিকে তাকায়,জাফার তখন একটা দন্তবিকশিত হাসি দেয়।ওর হাসি দেখে জেসমিনও হেসে ফেলে।দুজনে আবার স্বাভাবিক হয়ে গল্প করতে শুরু করে।এ কথা ও কথার পর জাফার জিজ্ঞাসা করে,
“আপনার কথাগুলো কিন্তু শেষ করেননি”
“হুম…রুবায়েতের কথা বলছিলাম।ও আমাকে ইম্প্রেস করার জন্য এসব করছিল।প্রায় দশদিন পার হওয়ার পর একদিন আমাকে কল দিয়ে বলল আমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যেতে চায়।আমি ইতস্তত করে বললাম যে,মাকে জানিয়ে দেখি মা কি বলে।সে প্রথমে কিছুতেই রাজী হচ্ছিল না,অনেকবার বলার পর মাকে জানাতে গেলাম,মা এক কথায় রাজী।উল্টো আমাকে বলে,এটা কোন জিজ্ঞাসা করার কিছু হল? রুবায়েত বললে আবার না করার কি আছে! এখনও বিয়ে হয় নি,এখনই না করার কি আছে,এটা বলার অর্থ তখনও বুঝিনি।

সেদিন ওর গাড়িতে করে অনেক ঘুরাঘুরির পর রুবায়েত আমাকে নিয়ে একটা রিসোর্টের সামনে আসে,অনেক দামী রিসোর্ট।প্রথমে জিজ্ঞাসা করলাম,আমরা কি থাকব কিনা,সে বলল,এটা নাকি আমার উপর নির্ভর করে।কিছুই বুঝলাম না।ওখানে গিয়ে যখন ও রুম বুকিং দিচ্ছে,তখন বেশ অস্বস্তি লাগছিল।যতই ভালোলাগা কাজ করুক,আমাদের বিয়ে তো হয়নি!আমার অস্বস্তি দেখে ও আমার হাত ধরে রুমে নিয়ে গেল।দেখলাম,একটাই বিছানা। এটা দেখে অস্বস্তি আরো বেশি লাগছিল।ওর উদ্দেশ্য ভাল কিছু মনে হয়নি।ও বলল ফ্রেশ হয়ে আসতে।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি খাবার আনা হয়ে গেছে।দুজনে খাওয়ার পর রুবায়েতের আচরণ কেমন যেন লাগছিল,ওর চাহনি দেখে আমার একদম ভাল লাগছিল না।কেমন যেন সাপের মত,শীতল আর লোভী দৃষ্টি। আমার মগজে ব্যাপারটা বারি না দিলেও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়তে বারবার এলার্ম বাজছিল।কয়েক মিনিটের মধ্যে ও আমাকে জোর করে টেনে…”

জেসমিন থামে।জাফার বিস্ফোরিত চোখে ওকে দেখছে।একটা লম্বা দম নিয়ে আবার শুরু করে।
“আমাকে জোর করে ও কাছে টেনে নেয়,এরপর সোফাতেই ধস্তাধস্তি করতে থাকে।ওর শক্তির সাথে পেরে ওঠা আমার জন্যে খুব মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল।যখন আমাকে ঠেলে।সোফায় ফেলে দিল আর আমাকে উপর থেকে জোর করছিল,আমি কোনোমতে ডান হাত ছুটিয়ে পাশের টেবিলে থাকা গ্লাস দিয়ে পর পর দুবার মেরে বসি,মাথায় আর তারপর ভাঙা গ্লাস দিয়ে গলায়!”

জেসমিন এটুকু বলে থামে।ও এখন ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে,যেন ওর দম আটকে যাচ্ছে।ওকে।একটু সময় দিয়ে জাফার জিজ্ঞাসা করে,
“তারপর???!”

চলবে…

লেখনীতে, #AbiarMaria

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here