Journey part-16

0
466

#Journey

#১৬

রাইফ চুল দুহাতে মুঠ করে খামচে ধরে, জেসমিন কি কিছুই শুনতে পায়নি?এদিকে ট্রেন দ্রুত ছুটতে শুরু করেছে,ধরা অসম্ভব!আর এটা তো বাংলাদেশ না যে ট্রেনের পিছে দৌড়ে উঠে যাওয়া যাবে! রাইফ চুল টানতে টানতে পকেটে হাত দেয়,ফোন বের করে অন্তত জেসমিনকে কথাটা বলতে হবে! পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল খুঁজে পায় না।আরে!গেল কোথায়! সারা শরীরে খুঁজে দুম করে মনে পড়ে,মোবাইল গাড়িতে ফেলে এসেছে! এক দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে আসে।তাড়াহুড়ো করে চাবি বের করতেই হাত থেকে পড়ে যায় চাবি।আবার তুলে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসে।ফোনে ডায়াল করে জেসমিনের নাম্বার।ওপাশে রিঙ হচ্ছে!

এদিকে জেসমিনের ভীষণ মন খারাপ লাগছে।মনে হচ্ছে এক সপ্তাহ ফুঁ দিয়ে উড়ে চলে গেল।সময় এত দ্রুত কেটে গেল! আরও বেশি খারাপ লাগছে রাইফের শেষ মুহূর্তের কান্ড দেখে।ও এরকম freak out হল কেন? ওর কি অনেক খারাপ লাগছে? একটা কল দিয়ে দেখা যাক।সিটে বসে ব্যাগে হাত দিয়ে ফোন বের করতেই দেখে রাইফ কল করছে।হাসি মুখে কল রিসিভ করে।
“What a coincidence! আমিও তোকেই ডায়াল করছিলাম। সরি দোস্ত,এভাবে চলে আসতে হল। বাস্তবতা বুঝিসই তো!”

জেসমিনের কথাগুলো রাইফের ভেতর শীতলতায় ছুঁয়ে যায়।একটা নিশ্বাস ফেলে হেসে বলে,
“ইটস ওকে।তুই এসেছিস,সেইই বেশি! সমস্যা নেই,আবার আসিস। আর যখনই কোন দরকার হয়,আমাকে জানাবি কিন্তু,আমি আছি…ঠিক আছে?”
“আচ্ছা।এই,তুই শেষে কি যেন বলেছিলি? দরজা বন্ধ হয়ে গেল তাই শুনলাম না”

রাইফ বড় করে নিশ্বাস নেয়।কপাল বেয়ে দু বিন্দু ঘাম পড়ছে।চোখ বুঁজে বলে,
“তেমন কিছু না রে।তুই সাবধানে যাস,আর আমাকে গিয়ে জানাস কিন্তু!”
“আচ্ছা, গুড বাই”
“গুড বাই”

কল কেটে মিনিট খানেক এক দৃষ্টিতে ফোনের দিকে রাইফ তাকিয়ে আছে। জেসমিনকে কিছু বলতে গিয়েও বলা হল না,সবটা মনের ভেতর রয়ে গেল।গাড়ির স্টেয়ারিং এ হাত রেখে চোখ বন্ধ করে মাথা ঠেকায়।এমন একটা কথা না বলে কতক্ষণ থাকবে?জেসমিনকে ওর দরকার!

….……………………

ট্রেনে বসে জেসমিন আর কি করবে,আগের সেই বইটা বের করে,সিলভিয়া ডে এর Bared to You।এবার মুখোমুখি বসেছে দুই বিদেশী, ইটালিয়ান।ওরা যে যে যার যার মত কাজ করছে,একজন গান শুনছে,আরেকজন ফোন ব্রাউজ করছে।একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ও নিজেও ফোন বের করে।

“হ্যালো,কে,সেলিম?!”
জেসমিনের কন্ঠ শুনে ওপাশ থেকে সেলিম তারস্বরে চিৎকার করেই যাচ্ছে আর আবোলতাবোল বকছে।জেসমিন হাসতে থাকে,পিচ্চিটা এত্ত কিউট! বাবার ফোনে জেসমিনের কল দেখেই নাকি ও রিসিভ করেছে।জেসমিন কেন আসছে না,কেন আসবে না,ও কোথায়,ওকে দেখতে চায়,ওর জন্য অনেকগুলো চকলেট জমিয়ে রেখেছে,এসব বলতে থাকে হড়বড়িয়ে।প্রায় পাঁচ মিনিট ভাঙা ইটালিয়ান ভাষায় বকবক করার পর জাফারকে সে ফোন দেয়।ফোন ধরেই জাফার হেসে ফেলে,
“শুনো জেসমিন,তোমার ফ্যান আমার এই কয়েকদিনে জ্বালিয়ে খেয়ে ফেলেছে!তুমি কেন কল দাও না,তোমাকে কেন আমি কল দেই না,দিনে চার পাঁচ বার এসবের উত্তর দিয়েছি!আর পারছি না বুঝলে!ও আমাকে বাদ দিয়ে তোমার এত বড় ফ্যান হয়ে গিয়েছে যে আমি এখন সেটা সামলাতেই পারছি না,হা হা হা!”
জেসমিনও হাসে,
“জাফার ভাই,ও তো আমার ফ্যান না,এসি হয়ে গিয়েছে! এজন্যেই সামলাতে পারছেন না! সেলিম তো ঠিকই বলেছে,আমি নাহয় ব্যস্ত ছিলাম,তাই কল দিতে পারিনি,আপনি কেন আমাকে দিলেন না?”
“বোকা,তুমি ব্যস্ত ছিলে তাই তো আমি কল দেইনি!কল দিলে ব্যস্তেতার কারণে কি কথা বলা যেত?!”
“ভাল যুক্তি! বাই দা ওয়ে,আপনাদের দুজনকে খুব মিস করছি!”
“তাই?ওহ হো! আজ তো তোমার ভেনিসে যাবার দিন! তা কেমন ইঞ্জয় করলে সিসিলিতে?”
“আর ইঞ্জয়!জাফার ভাই,আপনি তো সবই জানেন,রাইফকে খুঁজতে খুঁজতেই তো দিন শেষ!”
“হুম,তা ওকে যে ভাল লাগে,সেটা জানিয়েছ?”

জেসমিন থমকে যায়।জাফারের কাছে তো ও স্বীকার করেনি এটা!
“আপনি কিভাবে জানলেন?আর…আমিই বা ওকে…প প পছন্দ কেন করব!”
“হা হা হা!জেসমিন!আমি মানুষের কথা পড়তে জানি,তাই আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই।রাইফকে না পেয়ে তোমার যে ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন ছিল,ওকে পেয়ে যে পরিমাণ খুশি হয়েছ,বুঝাই যায় কতটা পছন্দ কর ওকে।যদি না করতে,তাহলে তোমার উপর কি এতটা প্রভাব পড়ত?এই প্রশ্ন তুমি নিজেকে কর,উত্তর পেয়ে যাবে।জানি না আমার সাথেই শুধু লুকাচ্ছো,নাকি নিজের কাছেও লুকিয়েছ।যদি লুকিয়ে থাক,তবে ভুল করছ।এভাবে নিজেকে নিজে বঞ্চিত করো না।জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছ,আর কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ? আরেকটা ব্যাপার দেখ।তোমরা যথেষ্ট বড় হয়েছ,দুজনেই বুঝতে পার। বলে ফেল,ও না বললে তুমি বলো,দেখ কি হয়।বসে থেকে লাভ নেই,বলে দাও বলে দাও!”

জাফারের কথা গুলো মাথায় ঘুরছে জেসমিনের।হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে কোনোমতে কলটা রাখে। রাইফকে কি এসব বলা ঠিক হবে?এখনই? মন একবার হ্যাঁ বলছে,একবার না।অনেক চিন্তা করে ঠিক করল,কিছুদিন রাইফকে একটু অবজার্ভ করা যাক,তারপর নাহয় একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে।

ভেনিসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে পরদিন দুপুর হয়ে যায়।লাগেজ হাতে ট্রেন থেকে নামতেই লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে।আহ!আবার সেই ব্যস্ত পৃথিবীতে! ঘরে এসে ফ্রেশ হওয়া,রান্না আর গোছগাছে ব্যস্ত।ওদিকে রাইফকে যে জানাবে,সে কথা জেসমিন বেমালুম ভুলে বসে আছে।

জেসমিন ভুলে গেলেও রাইফ ভুলেনি।কিছুক্ষণ পর পর ঘড়ি দেখে আর ভাবে জেসমিন নিশ্চয়ই এটা করছে,এখন নিশ্চয়ই ওটা করছে।পরদিন দুপুর নাগাদ বসে থেকেও যখন জেসমিনের কোন কল আসেনি,রাইফ অস্থির হয়ে যায়।কল দিবে নাকি দিবে না?ও যদি এখন ব্যস্ত থাকে?হয়ত ব্যস্ত আছে,নাহয় কেন কল দিল না! ভাবতে ভাবতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা,সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত।জেসমিনের নাম রাইফের স্ক্রিনে আর ওঠে না।অস্থিরতার কারণে ঠিক ভাবে কাজ গুলোও করতে পারে না রাইফ।বাসায় এসেই সহ্য করতে না পেরে জেসমিনের নাম্বারে ডায়াল করে।

“হ্যালো!কিরে,তুই কি ওখানে যেতে না যেতেই আমাকে ভুলে গেছিস!”
“সরি রে,ব্যস্ত ছিলাম আসলে।বাসার অবস্থা যাচ্ছেতাই হয়ে আছে।আর এত কাজ!মেইলে মেইলে আমার ইনবক্স একেবারে ভর্তি! তাই সুযোগ হয়নি রে,সরি।প্লিজ মাইন্ড করিস না?”
“আরে নাহ,ইটস ওকে…তারপর এখন কি করিস?”

এভাবেই ওদের কথাবার্তা এগিয়ে যায়,আর সেই কথা শেষ হয় দেড় ঘন্টা পর! ফোন রেখে জেসমিন আর রাইফ দুজনে ফোনের দু’প্রান্তে বসে হাসে।আজ দুজনের মনেই ভাল লাগা ছুঁয়ে যাচ্ছে।পছন্দের মানুষের সাথে কথা বলতে কার না ভাল লাগে!

পরদিন সকালে জেসমিন কা ফোস্কারির ক্যাম্পাসে পা রাখে।প্রফেসর দামেস্কার রুমে যায়।জেসমিনকে দেখে এক গাল হাসি দিয়ে বলেন,
“ডিয়ার জেসমিন!এসেছ তাহলে ভাল ভাবে! কেমন ছুটি কাটালে বল?”
“এইত স্যার,গুড।শহরটা খুব সুন্দর।”
“একদম ঠিক বলেছ,এর ইতিহাসও কিন্তু সুন্দর, জেনে এসেছ তো?”
“জ্বী স্যার,ইতিহাসের দিক থেকে অনেক সমৃদ্ধ শহরটা”
“গুড।ইতিহাসের ছাত্রী হয়ে এদিকটা খেয়াল রাখবে।ইতিহাস যত জানবে,তত তা কাজে দেবে! ঠিক সময়ে চলে এসেছ,সেজন্য খুশি হয়েছি।অনেক কাজ জমে গেছে।আসো,বসো”

জেসমিন বসতে বসতে বলে,
“স্যার,এই মাস তো প্রায় শেষের দিকে।আগামী মাসে কি কিছু ছুটি পাওয়া যাবে?…মানে কিছু দরকার ছিল আর কি?”

দামেস্কার মুখের ঔজ্জ্বল্যে কিছুটা ছায়া পড়ে।
“সরি জেসমিন,আমি মনে হয় না আগামী তিন মাস তোমাকে কোন ছুটি দিতে পারব।এখন হচ্ছে কাজের প্রচুর চাপ।অনেক গুলো কর্মশালা হাতে নিতে হবে,সেমিনারে এটেন্ড করতে হবে।আমার সাথে তোমাকে তো থাকতেই হবে।বুঝতেই পারছ…।সরি জেসমিন।এত বড় ছুটি এভাবে দিতে পারব না।”

বেচারির মন খারাপ হয়ে যায়।ভেবেছিল আবার রাইফের সাথে দেখা করবে,জাফারের কথা মত মনের কথা বলবে,অন্তত চেষ্টা তো করবেই,কিন্তু কিছুই হবে না।মুখে কৃত্রিম হাসি দিয়ে কাজ শুরু করে।

বাস্তবতার কাছে ভালোবাসা কি চাপা পড়তে চলেছে?

চলবে….

লেখনীতে, #AbiarMaria

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here