Journey part-23

0
453

#Journey

#২৩

জেসমিন যখন সেলিমকে বুকের সাথে চেপে ধরেছে,তার ঠিক এক সেকেন্ড পরেই ধুম করে গাড়িটা বারি খায় বিরাট ওকে গাছের সাথে।জেসমিন কিছু বোঝার আগেই সেলিম সহ সিট থেকে ছিটকে গাড়ি থেকে নিচে পড়ে,ওর মাথা ঠেকে যায় ভারী কিছুর সাথে। এত জোরে মাথায় আঘাত পায় যে চোখে অন্ধকার দেখে।আচ্ছা,ও কি জ্ঞান হারাচ্ছে? জ্ঞান হারাবার শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সেলিমকে নিজের সাথে ধরে রাখে। সব কিছু ওর কাছে ততক্ষণে ঝাপ্সা হতে শুরু করেছে,তবে তার আগে শুনতে পায় রাইফ আর জাফারের চিৎকার।

জ্ঞান ফেরার পর থেকে জেসমিনের কাছে সব অস্পষ্ট।চারপাশ এতটা অচেনা কেন?ওরা কোথায় আছে এখন? আশেপাশে সব সাদা,এটা কি মৃত্যুপুরী? নাহ,মৃত্যুপুরীতে ডাক্তার নার্স ছোটাছুটি করে না।তার মানে এটা হাসপাতাল।হাসপাতাল বুঝতে পেরে জেসমিনের মনে পড়ে এক্সিডেন্টের কথা, সেলিম! সেলিম কোথায়? জেসমিন মাথা ঘুরিয়ে সেলিমকে খোঁজে,ওকে তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না! জেসমিনের বুক মোঁচড় দেই।
“সেলিম!” জেসমিন চিৎকার করে ওঠে।মাথার কাছে বসে থাকা সেলিম সাথে সাথে ওর কাছে আসে। জেসমিন কেঁদে ফেলে সেলিমের নাকে মুখে এলোপাথাড়ি চুমু খায়।বুকে চেপে ধরে হাউমাউ শুরু করে। ভালভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে,নাহ,ছেলেটার কিছু হয়নি,ও একেবারে ঠিক আছে এত বড় এক্সিডেন্টের পর।সেলিমকে জড়িয়ে বার বার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়।

জেসমিনের জ্ঞান ফিরেছে বুঝতে পেরে ডক্টর এগিয়ে আসে।
“থ্যাংক গড,আপনার জ্ঞান ফিরেছে,আপনার ছেলে গত দুঘন্টা ধরে বার বার এটাই জিজ্ঞাসা করেছে যে,আপনি ঘুম থেকে কখন ওঠবেন!”
ডক্টর মিষ্টি করে হাসে।জেসমিন শোয়া অবস্থাতেই সেলিমকে বুকে চেপে ধরে রাখে।চোখ খুলে বলে,
“আমার সাথে আরো দুজন ছিল,উনারা কোথায়?”
ডক্টের মুখে এতক্ষণ যে হাসি ছিল,তা মলিন হয়ে যায়।ওর রিপোর্ট দেখতে দেখতে বলে,আপ্নি অপেক্ষা করুন,বিশ্রাম নিন,সব জানবেন”

জেসমিন বারবার পেছন থেকে ডেকেও ডক্টরের কাছ থেকে কোন রেস্পনস পায়না। জাফার আর রাইফের কি হল? আচ্ছে,ওরা ঠিক আছে তো? উঠে বসতে গিয়ে মাথার রগ দুটো টান দিয়ে ওঠে।মনে হচ্ছে মাথা ছিঁড়ে যাবে ওর।নিজের অজান্তেই মাথায় হাত চলে যায়,সেখানে বিশাল আলু হয়ে গেছে।মাথার ভেতর তীব্র ব্যথা জানান দিচ্ছে ওর মাথার আঘাত নেহাত ফেলনা নয়। সেলিমকে সাথে নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।ওর হাতে পায়েও কয়েক যায়গায় ব্যান্ডেজ লাগানো।সেসব অবজ্ঞা করে সারা ঘরে চোখ বুলায়,ওরা দুজনের কেউ এখানে নেই।সেলিমের উপর হাল্কা ভর করে ঘর থেকে বের হয়,দেখে সামনেই রিসিপশন।সেখানে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে রাইফ ৪০৬ নাম্বার ঘরে আছে,আর জাফারের ইনফো জানার পর হাত কাঁপতে শুরু করে।

কোনোমতে ঢোক গিলে রাইফের ঘরে যায়।দরজা ঠেলে ঢুকতে গিয়ে দেখে,রাইফের পাশেই ডক্টর দাঁড়িয়ে দেখছে।ওর ডান হাতে কনুই পর্যন্ত প্লাস্টার করা।কপালের ডান পাশে একটা ব্যান্ডেজ,গালে আরেকটা বড় ব্যান্ডেজ।জেসমিনের উপস্থিতি টের পেয়ে রাইফ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।জেসমিন চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে,অনেক কষ্টে কান্না আটকে,ঢোকের পর ঢোক গিলে কান্নাটাকে বুকের ভেতর আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়।

ওদিকে ডক্টর পাশের বেডের পেশেন্টের কাছে চলে যেতেই অপেক্ষারত জেসমিন রাইফের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।ওর কান্না দেখে রাইফ কাঁদতে শুরু করে,পাশে দাঁড়ানো সেলিমও জেসমিনের পাশ ঘেঁষে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“পাপার কাছে যাব,আমি পাপার কাছে যাব”

সেলিমের কথা শুনের জেসমিনের মনে নতুন করে উথাল পাথাল কান্না শুরু হয়ে যায়।সেলিমকে জড়িয়ে রাইফের দিকে তাকিয়ে বলে,
“জাফার ভাইয়ের অবস্থা ভাল না! ডাক্তার বলল,আইসিইউতে আছে,রাইফ…রাইফ…আমি কি করব বল না?কি থেকে কি হয়ে গেল?সেলিমের কি হবে?জাফার ভাই…রাইফ,আমি জানি না কিছু!ওকে আমরা কি বলব জাফার ভাইয়ের কিছু হলে?”

রাইফ কান্না একহাতে মুছে জেসমিনের মাথায় হাত রাখে,
“কেন এত ভয়ানক কথা ভাবছ?জাফার ভাইয়ের কিছু নাও তো হতে পারে,প্লিজ,আমরা দুজন ছাড়া ওর এখন আর কেউ নেই।ভেঙে পড়ো না,প্লিজ শক্ত হও”
“তুমি…তুমি জানো… তুমি জানো,ওখানে বলল,জাফার ভাই নাকি গাড়ির বাইরে পড়ে ছিল।উনার… উনার মাথায় আর পেটে অনেক আঘাত পেয়েছে,অনেক ব্লাড…অনেক…মানে এত্তগুলো ব্লাড গেছে!এখন…এখন উনার সেন্স নেই।রাইফ,এই রাইফ! জাফার ভাইয়ের কিছু হলে সেলিমের কি হবে? ওর…ওর তো মা নেই,এখন বাবাও… রাইফ! কি হল? আল্লাহ আমাদের কিসের মাঝে…কিসের মাঝে ফেলল?”

জেসমিন হেঁচকি তুলছে কাঁদতে কাঁদতে।আশেপাশের রোগীরা ওদের দিকে মন খারাপ করে তাকাচ্ছে,কেউ কেউ ধরেই নিচ্ছে,হয়ত তাদের নিকটাত্মীয় মারা গেছে।হুম,জাফার নিশ্চিত ওদের নিক্টাত্মীয়,এতে কোন সন্দেহ নেই।কিছু কিছু মানুষকে আত্মীয় হতে রক্তের কিংবা জাতিগত সংযোগেরও দরকার হয় না।আগাগোড়া পাকিস্তান আর ইটালিতে বেড়ে ওঠা একটা মানুষ আজ ওদের দুজনের আপন মানুষগুলোর থেকেও আপন।তবে ও মারা যায় নি,অন্তত এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্য তাই বলে।

ওরা স্বামী স্ত্রী যখন কাঁদছে আর নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছে,তখন ঐ কামরাতে একজন পুলিশ অফিসার প্রবেশ করেন।দরজা থেকে পর পর তিনটে বেড পেরিয়ে রাইফের বেডের পাশে এসে দাঁড়ান।আ্মেরিকান এক্সেন্টে প্রশ্ন করেন,
“ড়াইফ সুবহ্যান?”
এই আমেরিকান গুলোর এই এক সমস্যা,এশিয়ানদের নামগুলো ঠিক ঠাক উচ্চারণ করতে পারে না! কপাল খারাপ যে রানী এলিজাবেথ ষোলশ শতাব্দীতে একটু একটু করে পৃথিবীর সব প্রান্তে সাম্রাজ্যবাদ ছড়িয়ে দিয়েছেন,আর তাতেই ইংরেজদের যত নাচনকুদন! যদি এই মহিলা ইংল্যান্ডে জন্ম না নিয়ে এশিয়াতে জন্মাতেন,তাহলে সব ড় ড় করে কথা বলা ইংরেজগুলো ব্যাগ কাঁধে স্কুলে দৌড়াত বাংলা,হিন্দি,উর্দু আর চাইনিজ শিখতে! এত গম্ভীর এক মুহূর্তেও ইতিহাসের প্রাক্তন ছাত্র রাইফ নিজেকে এমন অদ্ভুত ভাবনা থেকে সরাতে পারে না।অফিসার আবারো যখন এই উদ্ভট উচ্চারণে ওর নাম জিজ্ঞাসা করে,রাইফ মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

অফিসার ইশারায় তার সহকারীকে একটা চেয়ার দিতে বলে সেখানে বসতে বসতে হাত বাড়িয়ে দেয়,
“আমি রাদ্রিগেজ মার্টিন,আপ্নি আমাকে অফিসার মার্টিন বলেও ডাকতে পারেন”
“অফিসার,আমি কিভাবে আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”
“আপনাদের এক্সিডেন্ট স্পট থেকে আমরাই নিয়ে এসেছি।যেহেতু এটা একটি এক্সিডেন্ট এবং আপনাদের গাড়ি প্রাইভেট প্রপার্টিতে ঢুকে গিয়েছে,তাই এতে যিনি ড্রাইভার ছিলেন,তার লাইসেন্স,কিভাবে গাড়ি চালিয়েছেন গাড়ি,সেসময় ড্রাংক ছিলেন কিনা,এসব এনভেন্সটিগেটের ব্যাপার আছে। তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল,যেটা আপনাদের না জানালেই না,আপনাদের এটা স্বাভাবিক কোন এক্সিডেন্ট নয়”

রাইফ আর জেসমিন দুজনেই চমকে ওঠে একসাথে বলে ওঠে,
“মানে?!”
“আপনাদের কি কোন ব্যাক্তিগত শত্রু আছে এমন ক্ষতি করার মত?”

রাইফ আর জেসমিনের বিস্ফোরিত চোখে এক্টাই প্রশ্ন,
ওদের শত্রু???অফিসার কি বোঝাতে চাইছে???

চলবে…

লেখনীতে, #AbiarMaria

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here