#তোমার_ছায়া (পর্ব ৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
বিষণ্ন মনে বেলকনিতে বসে আছে ফারহা। তখনই পাশে এসে বসে ফারদিন। ফারহার দিকে রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,
– তুই নাকি দুই দিন ধরে কোচিং-এ যাচ্ছিস না? সমস্যা কি?
ফারদিনের কথায় একটু বিষণ্ন মন নিয়ে বললো,
– কিছু না, এমনি ভালো লাগছিলো না তাই যাচ্ছি না। কালকে থেকে যাবো।
– হুম তা তো যাবিই, আর এমনিতেই আবরার বলেছে কাল থেকে দশ মিনিট আগে কলেজ ও কোচিং-এ না পৌছালে, ক্লাসের বাইরে দাড় করিয়ে রাখবে।
– আচ্ছা।
ফারদিন চলে গেলেও বিষণ্ন মনে বসে রইলো ফারহা। ফোনটা বের করে আয়রিনকে কল দেয়। একবার কল হতেই রিসিভ করে আয়রিন বললো,
– হুম ফারু বল।
ফারহা একটু অভিমানি কন্ঠে বললো,
– বল মানে, শশুর বাড়ি যাওয়ার পর একবার ফোন দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করলিনা তুই? আগে তো ঠিকই বলতি আমাদের বন্ধুত্ব চিরকাল থাকবে। আর এখন শশুর বাড়ি পা রাখতেই ভাব বেরে গেছে তোর।
আয়রিন শান্ত গলায় বললো,
– না রে, একটু ব্যস্ত চিলাম তো তাই ফোন দিতে পারিনি।
আয়রিনের কন্ঠ একটু গম্ভির দেখে ফারহা বললো,
– কি হয়েছে তোর, এভাবে কথা বলছিস কেন?
– না কিছুনা, মন টা ভালো ছিলো না তাই।
– মন কারাপ কেন, হাসবেন্ড বকেছে নাকি? হিহিহি,,,
– আরে না, ও তো খুব ভালো। ওর মতো মানুষ হয় না। আমি মনে কষ্ট পাবো বলে একটা ধমকও দেয় না থাকতো বকবে।
বলেই একটা শ্বাস নিলো আয়রিন। ফারহা বলে,
– আচ্ছা, কালকে থেকে কলেজে যাবি?
– না রে আরো দুই একদিন যাওয়া হবে না। তুই একাই যাস।
– হুম, কোচিং এ ও যাওয়া হয় না। কাল থেকে না গেলেও তোর বজ্জাত ভাই নাকি ক্লাসের বাইরে দাড় করিয়ে রাখবে।
আয়রিন একটু হাসার চেষ্টা করে বলে,
– বিয়ের আগেই, এতো অত্যাচার শুরু করেছে আমার ভাবিটার উপর?
– চুপ একধম বাজে বকবি না। তোর ভাই আমারও ভাই। তাই ভাই ইজ ভাই, অন্য কিছু নাই।
– থাক ঢং করা বাদ দে। যানি না আমি?
– চুপ কর তো, ফোন রাখ।
ফোন রাখার পর রুম থেকে মায়ের ডাক কানে ভেষে আসলো।
– ফারু খেতে আয়।
,
,
পরদিন সকালের নাস্তা সেরে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে ফারহা। কাধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরলো সে। রাস্তার পাশ ধরে হাটছে একটা খালি রিক্সাও চোখে পরছে না।
হটাৎ পেছন থেকে ফারহা ফারহা বলে কারো ডাক শুনতেই থমকে পেছন ফিরে তাকায় সে। দেখে সোহেল ভাই দৌড়ে তার সামনে এসে হাপাতে লাগলো।
তারপর সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললো,
– কেমন আছো?
যদিও তার সাথে ফারহা কথা বলতে ইচ্ছুক নয়, তবুও ভদ্রতার খাতিরে বললো,
– জ্বি ভালো, আপনি কেমন আছেন?
– হুম মোটামুটি। তোমাকে কতোক্ষন ধরে ডাকছিলাম, শুনতে পাও নি?
– খেয়াল করিনি।
– ওহ্,,,
– আচ্ছা ভাইয়া আমি যাই, ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে।
– শুনলাম আয়রিনের নাকি বিয়ে হয়ে গেছে?
– জ্বি, ঠিক শুনেছেন।
– তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো?
– আসলে ভাইয়া, বিষয়টা এমন না, ক্লাসের দেড়ি হয়ে যাবে তো তাই।
– আরে একদিন দেড়ি হলে কিচ্ছু হয় না।
– আপনার কিছু হবে না, তবে আমার জন্য এটাও অনেক কিছু।
– আচ্ছা, আমার তো জব হয়েছে শুনেছো?
– না শুনিনি, এখন শুনলাম। কনগ্রেচুলেশন। এবার আমি যাই?
– আমার জব হয়েছে শুনে খুশি হওনি তুমি?
– সরি, আপনার আনন্দে আমি কেন আনন্দিত হবো? আর হ্যা আসি, সময় নেই আমার।
এমনিতেও আজ রাস্তায় খালি রিক্সাও পাচ্ছে না। তার উপর ওর সাথে বক বক করে অনেকটা সময় নষ্ট হলো। হাত ঘরির দিতে তাকিয়ে দেখে ৮ টা ৫৫ বাজে। আর ঐ দিকে নয়টায় ক্লাস। আর আজ মঙ্গল বার। প্রথম ক্লাস ওই খাটাস টার। লেট হলেই ক্লাসের মঙ্গল উদ্ধার করে ছাড়বে।
কলেজ গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখে ৯ টা ৩ বাজে। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। সব স্টুডেন্ট ক্লাস রুমে চলে গেছে। ভয়ে দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে ক্লাস রুমের দিকে চলে গেলো সে। যেতে যেতে সব মিলিয়ে অলরেডি ক্লাসের পাঁচ মিনিট লেট।
দরজার সামনে দাড়িয়েই ফারহা বললো,
– ম্যা আই কাম ইন স্যার?
ভেতর থেকে কড়া জবাব,
– নো, স্ট্যান্ড আউট সাইড দ্যা ডোর।
– সরি স্যার আর এমনটা হবে না। আসলে গাড়ি পেতে লেট হয়ে গেছে।
– নো এক্সকিউজ।
এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ক্লাসের বাইরে দাড়িয়ে আছে ফারহা। সোহেলকে মনে মনে ইচ্ছা মতো গালি দিচ্ছে সে। ওর কারণেই একটা গাড়ি মিস করেছিলো তখন। অবশেষে পাক্কা দশ মিনিট পর ক্লাসে প্রবেশ করার অনুমতি পেলো সে।
,
,
– কি ভাবি জি, শুনলাম আজ নাকি ক্লাসের বাইরে দাড় করিয়ে রেখেছিলো তোমাকে? আমার ভাইটা পারেও বটে।
আয়রিনের কথায় মাথাটা এবার আরো গরম হলো তার। রাগ নিয়ে বলে,
– তোর ভাই যেমন খাটাস, ঠিক তুইও তেমন খাটাস। একজনে নাচায় আরেকজনে তালি বাজায়।
– হা হা, আচ্ছা, শুন, কাল থেকে আমিও যাবো কলেজে।
– সত্যি?
– হুম, এখানে সারা দিন বসে থাকতে ভালো লাগে না।
– আচ্ছা চলে আয়, মজা হবে অনেক।
– হুম।
পর দিন একটু আগে আগেই ভার্সিটিতে চলে গেলো তারা। ক্লাস রুমে ব্যাগ রেখে বাইরে আড্ডা দিচ্ছিলো বান্ধবিরা মিলে। কিছুক্ষন পর ক্লাসের সময় হওয়ায় সবাই ক্লাস কক্ষের দিকে হাটা ধরলো।
টেবিলে এসে বসে ব্যাগ সরাতেই একটা ঝাটকা খেলো ফারহা। দেখে ব্যাগ এর নিচে একটা গোলাপ ফুল আর একটা চিরেকুট। চিরেকুট না, এটাকে চিঠি বলা যায়। কারণ চিরেকুট হলে লেখা অল্প হতো। আর এখানে লেখা অনেক। আর শেষে চোট্ট করে লেখা,, ইতি আবরার।
ভয়ে হাত পায়ে হালকা কাঁপুনি তৈরি হলো তার। আবরার হুট করে চিঠি আর ফুল দিলো কেন? সে তো এমনটা করবে বলে কল্পনাও করতে পারেনি ফারহা।
তবুও সকলের আড়ালে চিঠি আর ফুল টা ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে নিলো ফারহা।
নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও ক্লাসে মন বসছে না কিছুতেই।
প্রথম ক্লাস টা শেষ হতেই ব্যাগ থেকে হালকা বের করলো চিঠি টা। একটু একটু পড়তে শুরু করলো।
প্রিয় চোরাবালি,,,
প্রথমেই অবাক হচ্ছো সম্বোধন টা দেখে। ভাবছো চোরাবালি আবার কেমন সম্বোধন? তবে এটারও যথেষ্ট কারণ আছে। তোমায় যেদিন প্রথম দেখেছি, সেদিন থেকেই ধিরে ধিরে কখন তোমার প্রেমে পরে গেলাম, তা নিজেও বুঝতে পারিনি। তোমার মাঝে সেভাবেই হারিয়ে যেতে শুরু করলাম, যেভাবে কোনো মানুষ চোরাবালিতে পরলে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। আমিও ঠিক সেভাবেই তোমার মাঝে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে। আহত হয়েছি, তোমার মায়াবি চোখের দৃষ্টিতে। আমি আহত, ভিষন আহত।
ইতি আবরার,,,,,
চিঠিটা পরে হাত পা আরো কাঁপতে শুরু করলো ফারহার। এগুলো কি সব লিখেছে আবরার স্যার? তাহলে কি সত্যি আবরার স্যার তাকে ভালোবাসে? তারতো আজ বিশ্বাসই হচ্ছে না।
চিঠিটা বেগে ঢুকিয়ে, ব্যাগের উপর মাথা রেখে মুখ লুকিয়ে বসে আছে ফারহা। হয়তো এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে।
To be continue…..
~ সকলের প্রতি রইলো ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।