তোমার ছায়া পর্ব-১০

0
1199

#তোমার_ছায়া (পর্ব ১০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

চট্টগ্রাম পৌছাতে সকাল হয়ে গেলো তাদের। কারো ডাকে চোখ মেলে তাকায় ফারহা। বাইরে তাকিয়ে দেখে নতুন একটা শহরে এসে পৌছালো। সবে সকাল হয়েছে, ভোরের আলোয় চার পাশটা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার হয় নি।

সব কিছু আগে থেকেই রেডি ছিলো। যার যার ব্যাগ নিয়ে একটা হোটেলে গিয়ে উঠলো সবাই। আজ সারা দিন পাহারি অঞ্চল ঘুরে এর পর দিন কক্সবাজার। এর পর ডিরেক্ট ঢাকা ব্যাক করবে।

ব্যাগ কাধে নিয়ে ফারহা আয়রিন ও সাথি একটা রুমে গিয়ে বসলো।
সকালের নাস্তা শেষে চার পাশ টা ঘুরে ফিরে দেখছে সবাই। সাথি চার পাশটা দেখে বললো,
– জায়গা টা দারুন। সেই সাথে পরিবেশ ও আতিথেয়তা ও খারাপ না। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না, হাজার টাকা দিয়ে এতোকিছু করা যায়। আবার এর পর নাকি কক্সবাজার। হাজার টাকায় এতো কিছু কেমনে করছে কে জানে।
পাশ থেকে আয়রিন একটু হেসে বললো,
– তোর কি মনে হয়, তোদের সেই হাজার টাকায় এতো কিছু হয়ে যাবে? আরে টাকা গুলো তো নিয়েছে আমাদের টুকটাক খরচের জন্য। বাকি সব তো কলেজের প্রতিষ্টাতা মুমিন আহমেদ চৌধুরিই দিচ্ছে। নাহলে এতো স্টুডেন্ট নিয়ে দুই দিনের টুরে আসা কোনো সহজ কাজ নয়। আমরাই প্রথম যে কলেজ থেকে এত দুর ও দুই দিনের টুরে এসেছি।
পাশ থেকে ফারহা বললো,
– আমার একটুও ভালো লাগছে না। লং যার্নি করলে আমার মথা ঘুরতে থাকে। মনে হয় যেন চার পাশ টা আমার সাথে সাথে ঘুরছে।
আয়রিন একটা হাসি দিয়ে বললো,
– আচ্ছা ফারহা এখন বলতো পশ্চিম কোন দিকে?
ফারহা একটু ভাব নিয়ে উত্তর দিকে দেখিয়ে বললো,
– এই দিকে।
আয়রিন হাসতে হাসতে বলে,
– তাহলে দক্ষিন দিকে কি সূর্য উঠে? তুই পূর্ব দিকের সূর্য দেখেই তো বলতে পারতি পশ্চিম কোন দিকে।
পাশ থেকে সাথি বললো,
– তাকে নিয়ে তুই এতো মজা নিচ্ছিস কেন আয়রিন? সে তো বললোই তার মাথা টা ঘুরছে।
আয়রিন একটু রাগি ভাব নিয়ে বললো,
– আমার ভাবিকে নিয়ে আমি মজা নিবো না তো, কে নিবে? যান ভাবি, আপনি রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিন।
ফারহা একটু রেগে বললো,
– উল্টা পাল্টা কথা বললে চ’র খাবি একটা।
,
,
সারা দিন ঘুরে ফিরে সন্ধার আগে হোটেলে ফিরে আসলো সবাই। রাত টা এখানে কাটিয়ে, পরদিন সকালে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। তারপর সন্ধায় ডিরেক্ট ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।

পাশেই একটা বড় লিচু বাগান আছে। ওখানেই সময় কাটাচ্ছে অনেকে। তাদের থেকে ঠিক কিছুটা দুরে একটা বেঞ্চিতে বিষণ্ন মনে বসে আছে আবরার।
কলেজে স্যার হলেও এখানে স্যার নয়, কথা বলাই যায়। তাই এক পা এক পা করে আবরারের পাশে গিয়ে দাড়ালো ফারহা। চার পাশের সবাইকে দেখে আবরারকে বললো,
– সবাই কতো আনন্দ করছে, আর আপনি বিষণ্ন মনে বসে আছেন কেন স্যার? মন খারাপ?
আবরার ফারহার দিকে চেয়ে বললো,
– তোমার যেনে কি লাভ?
ফারহা একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– সব সময় এতো তেঁতো কথা বলেন কেন? আপনি কি কখনো মিষ্টি খান নি?
– খাই তো কেন?
– তাহলে মিষ্টি আর তেতো কড়লার মাঝে পার্থক্যটা নিশ্চই বোঝেন। আচ্ছা আপনাকে যদি একটা পাত্রে তেতো কড়লা আরেকটা পাত্রে মিষ্টি রাখা হয়, তাহলে আপনি কোনটা বেছে নিবেন?
– অবশ্যই মিষ্টি।
– ঠিক তেমনই তেতো কথা কারো পছন্দ না। একটু মিষ্টি করে কথা বলাটাই সকলে পছন্দ করে।
আবরার এক হাতে ইশারা করে থামিয়ে বললো,
– ওয়েট ওয়েট, তুমি কি আমাকে ইনডিরেক্টলি তেতো কড়লার সাথে তুলনা করলে?
ফারকা ছোট্ট করে জ্বিভে কামর কেটে বললো,
– এই না না স্যার, আমি মোটেও এমনটা বলিনি। একটু মিষ্টি করে কথা বলতে বলেছি যাস্ট।
আবরার একটু হেসে বললো,
– চলো আজ তোমাকে ডিরেক্ট মিষ্টি কিছুই খাওয়াবো।
ফারহা একটু অবাক হয়ে বললো,
– কিভাবে?
আবরার রাস্তার দিকে দেখিয়ে দিয়ে বললো,
– ওই যে দেখছো একটা লোক রাস্তায় দাড়িয়ে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছে।
ফারহা তাকিয়ে বললো,
– হাওয়াই মিঠাই আমার খুব প্রিয়।
– তাই? তাহলে আসো।

আবরার রাস্তায় দাড়িয়ে তিনটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে বললো,
– একটা আয়রিন আরেকটা সাথি কে দিবে। অন্যটা তোমার।

তখনই একটা গাড়ি এসে তাদের সামনে দাড়িয়ে দুজনকেই মুখ চেপে ধরে গাড়ির মাঝে উঠিয়ে নেয়। তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই এক টানে অনেকটা দুর চলে আসে। গাড়িতে বসে ফারহা হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করতেই দুইটা ছেলে দুইটা ছু’রি নিয়ে ফারহা ও আবরারের গলায় ধরে বললো,
– আর একবার আওয়াজ করলে ডিরেক্ট গ’লা নামিয়ে দিবো।
ভয়ে ফারহার সারা শরির থর থর করে কাঁপছে। ইতি মধ্যে কপাল জুড়ে চিকন ঘাম দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো কেউই বুঝতে পারছে না। চিৎকার করতে পারছে না, বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে শুধু।
,
,
বেশ কিছুক্ষন পর একটা জঙ্গলে এসে গাড়ি থামালো তারা। ফারহা ও আবরারের গলায় ছু’রি ধরে দুইজনকে দুইটা গাছের সাথে বেধে নিলো। তারপর একজন তাদের সামনে এসে বললো,
– দুজনের ফ্যামিলি কেই ফোন কর। আর বল আজকের মধ্যে বিশ লাখ টাকা রেডি করতে নয়তো দুজনকে এই জঙ্গলেই পু’তে রেখে দিব।

ফারহা এখনো থর থর করে কাঁপছে। আবরার পাশ থেকে বললো,
– ফ্যামিলি কোথায় পাবো ভাইয়া? আমরা দুই ভাইবোন এতিম খানায় মানুষ হয়েছি। এর পর কলেজে ভর্তি হয়ে কোনো রকম টিউশনি করে পড়াশুনা ও নিজেরা চলি। এই বিশাল পৃথিবীতে আমার শুধু সে আছে আর তার শুধু আমি আছি। বিশ্বাস করুন, আমাদের আপন বলতে আর কেও নেই। আর আপনারা খুজে ফিরে আমাদের দুইজন এতিম ভাই বোনকেই কেন তুলে এনেছেন বলুন।
ছিনতাইকারীর দলের লোকটা বললো,
– একধম মিথ্যা বলতে যাবি না। তোদের দজনকেই দেখে মনে হচ্ছে ভালো ফ্যামিলির ছেলে মেয়ে। কিসব মিথ্যা নাটক করছিস?
আবরার আবারও কাঁন্নার ভান করে বললো,
– মৃ’ত্যুর মুখে দাড়িয়ে মিথ্যা বলবো কেন ভাইয়া? সত্যিই আমরা এতিম।
লোকটা এবার পাশের একটা ছেলেকে থা’প্পর মেরে বললো,
– কিসব ফকির ধরে আনলি? কোনো কাজ ঠিক ভাবে করতে পারিস না। বললাম বড় ফ্যামিলির কোনো ছেলে মেয়ে থাকলে তুলে আনবি। আকাইম্মার দল সব আমার ঘাড়ে এসে চাপে।
এর পর আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– এই চুপচাপ যা আছে তাই বের কর। এই মিলন, যা কি কি আছে সব নিয়ে নে।

মুহুর্তেই কয়েকটা ছেলে এসে তাদের থেকে সব নিয়ে নিতে লাগলো। আবরারের দুইটা ফোন ও ফারহার একটা ফোন। সাথে আবরারের মানিব্যাগ এ পনেরো হাজারের মতো টাকা ছিলো আর ফারহার পার্সে ছিলো দুই হাজারের মতো।
সব নিয়ে তাদের জঙ্গলে ছেরে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো তারা।
আবরার ও ফারহার কাছে এই মুহুর্তে জামা কাপর ব্যাতিত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

চার দিকে খুটখুটে অন্ধকার নেমে এলো। জঙ্গল জুড়ে ভৌতিক পরিবেশ। ফারহা ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে এসে আবরারকে জড়িয়ে ধরলো। আবরার একটু অবাক হলেও বিষয়টা মাথায় নিলো না। বুঝতেই পারছে ভয়ে ফারহা থর থর করে কাঁপছে। আপাতত এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুজতে হবে। তাই ফারহাকে ওভাবেই এক হাতে চেপে ধরে জঙ্গলের পথ ধরে হাটা ধরলো সে। বের হতে কতোক্ষন লাগবে কে জানে। কিছুই চিনেনা এখানকার। কাউকে ফোন দিবে, সেই উপায়ও নেই।

কিছুদুর যাওয়ার পর হটাৎ গাড়ি ব্রেক করে দাড়ায় লোক গুলো। একটা ছেলে বললো,
– বস, এতিম ছেলে, টেনে টুনে সব কিছু চালায়। বিষয়টা এমন হলে তারা একসাথে দুইটা ফোন চালানোর কথা না৷ তাছারা দুজনের কাছেই এতো জিনিস আর এতো টাকা, একসাথে পাওয়া যেতো না। আর আরেকটা বিষয় কিন্তু আমরা মিস করে ফেলে যাচ্ছি।
টিমের বস বললো,
– কি জিনিস?
– মেয়েটাকে দেখেছেন আপনি? চিকন চাকন একটা মেয়ে, যেমন চেহারা তেমন তার ফিগার। আর এতো বড় জঙ্গলে তার সাথে শুধু একটা ছেলে। এমন সুজুগ খুব কমই আসে। প্রয়োজনে ছেলেটাকে মে’রে দিয়ে মেয়েটাকে তু’লে নিয়ে সারা রাত পার্টি হলেও তো মন্দ হয় না।
পাশ থেকে আরেকটা ছেলে বললো,
– গুড আইডিয়া।
এর মাঝে টিমের বস বললো,
– গাড়ি ঘুরা, আর সারা জঙ্গলে ছড়িয়ে খুজে বের করবি দুজনকে। মেয়েটাকে আমার চাই।

To be continue…..

– এইবার থেকে হয়তো পাঠক পাঠিকারা গল্পের কাহিনি কিছুটা বুঝতে পারবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here