গোধূলী_বেলার_স্মৃতি
পর্ব- ৪২
#Jannatul_ferdosi_rimi
আমি প্রেগন্যান্ট!
কথাটি শুনে রুদ্রিক নিশব্দে বেড়িয়ে গেলো। আমার মনে অজানা ভয় ঢুকে গেলো। রুদ্রিক কী তাহলে এতো তাড়াতাড়ি বাচ্ছা নেওয়ার ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি?আমিও ডক্টরের থেকে পারমিশন নিয়ে বেড়িয়ে এসে দেখি,রুদ্রিক হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও রুদ্রিকের পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলাম,
—-“রুদ্রিক, শুনো?”
রুদ্রিকের দৃষ্টি সামনের দিকে। আমি আবারো মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বললাম,
—-“রুদ্রিক, তুমি শুনতে পারছো? তুমি কি এখন বেবী নিতে চাইছো নাহ?”
রুদ্রিকের নিরবতা আমাকে বড্ড কষ্ট দিচ্ছে। তাই আমি কিছুটা অভিমানের সুরেই বললাম,
–“তুমি যদি বেবী নিতে না চাও, ওকে ফাইন। আমি তাহলে এই মূহুর্তে বেবী নিবো নাহ। আমি ডক্টরের সাথে গিয়ে কথা বলবো। ”
কথাটি বলে আমি চলে যেতে নিলে,রুদ্রিক আমার হাত ধরে আমাকে একেবারে কাছে নিয়ে এসে আমার ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে বলল,
–“একবার বলেছো। ওকে ফাইন,বাট নেক্সট টাইম যেনো নাহ শুনি। ”
এমা! রুদ্রিকের চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে।
আমি রুদ্রিকের চোখের জল দ্রুত মুছিয়ে দিয়ে বললাম,
—“তুমি কান্না করছো কেন রুদ্রিক?”
রুদ্রিক আমার হাত নিজের গালের সাথেই মিশিয়ে বলল,
—“আমার মধ্যে ঠিক কী চলছে তোকে বলে বুঝাতে পারবো নাহ। এক অদ্ভুদ অন্যরকম সুখ উপলদ্ধি হচ্ছে। আমার নিজের ফিলিংশটুকু হয়তো প্রকাশ করতে ব্যর্থ। বাবা হওয়ার মধ্যে যে সুখ রয়েছে তা সহজে প্রকাশ করা যায়না। ”
রুদ্রিকের কথায় আমিও নিজেও কেঁদে উঠলাম।
রুদ্রিক আমার চোখের জলটুকু মুছিয়ে, আমার কপাল কপাল ঠেকিয়ে বলল,
—-“তুই কাঁদছিস কেনো কাজল? তুই আজকে আমাকে ঠিক কি দিয়েছিস তুই জানিস নাহ। প্রথমবার বাবা হওয়ার সুখগুলো সত্যি মূল্যবান।আমি কখনো ভাবিনি আমি এতো তাড়াতাড়ি বাবা হওয়ার সুখটা উপলদ্ধি করবো। তুই ঠিই বুঝতে পারছিস আমি ঠিক কী বুঝাতে চাইছি? ”
রুদ্রিক অনেক কিছু বলতে চাইছে কিন্তু সে বলতে পারছে নাহ।
আমাদের দুজনের চোখেই আজ জলে পরিপূর্ন। উহু
দুঃখের না এতো পরম সুখের।
রুদ্রিক আমাকে কোলে তুলে নিয়ে সারা হসপিটাল ঘুড়তে থাকে। এতো মানুষের সামনে হুট করে কোলে নেওয়ায়, আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে যাই,কিন্তু রুদ্রিই সাহেব এইসবের কেয়ার করে নাকি? উনি নিজের মতো আমাকে কোলে নিয়ে ঘুড়ছেন। যেনো আজ উনার মতো খুশি আর কেউ নেই।
নার্স ও ডক্টর সকলেই আমার দিকে তাঁকিয়ে মুঁচকি মুঁচকি হাঁসছে।
—-“রুদ্রিক কি করছো কী? সবাই কি ভাবছে বলো তো? ”
উনি বরাবরের মতো বলে উঠলেন,
–“হু কেয়ারস? রাফসিন শেখ রুদ্রিক এইসব কেয়ার করেনা। ইয়াহু তুই জাস্ট ভাবতে পারছিস আমি বাবা হবো। ”
—” হ্যা হ্যা আমি খুব করে বুঝেছি। বাট আমাকে নামাও প্লিয। বেবীর ক্ষতি হতে পারে;এতো ঘুড়লে।”
—“একদম ঠিক বলেছিস কাজল। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক আমাকে নীচে নামিয়ে দিয়ে,হসপিটালের সবার কাছে গিয়ে বলতে থাকে,
—“এইযে শুনছেন? আমি বাবা হবো। রাফসিন শেখ রুদ্রিকের বেবী হবে, সেই বেবী আমার পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখবে।”
হসপিটালের একজন স্টাফ এসে বলল,
—“তা স্যার শুধু মুখে বললেই হবে? আমাদের বুঝি মিষ্টি পাওনা নেই। ”
রুদ্রিক কিছু ভেবে বললেন,
—“ইউ আর রাইট। রাফসিন শেখ রুদ্রিকের প্রিন্স বা প্রিন্সেস আসবে বলে কথা। আমি এখুনি হসপিটালের সবার জন্যে মিষ্টি আনাচ্ছি। ”
রুদ্রিক কান্ড দেখে আমি হাঁসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছিনা?কিন্তু মানুষটা খুশি এইটাই অনেক। মনে হচ্ছে রুদ্রিক গোটা পৃথিবীটাই যেনো পেয়ে গেছে। সত্যি রুদ্রিককে এতোটা খুশি আগে কখনো দেখিনি।
রুদ্রিকের কথা বলার মাঝেই ডক্টর এসে বলল,
—“মিঃ শেখ শুধু মিষ্টি বিলালেই তো হবেনা। এখন থেকে বেবী ও বেবীর মায়ের দায়িত্ব কিন্তু আপনার। দেখে তো কমবয়সী মনে হচ্ছে আপনাদের। আপনার বউকে সময়মতো চেকাপ করাতে নিয়ে আসবেন। কালকে আরেকবার চলে আসিয়েন। ”
ডক্টরের কথা শুনে রুদ্রিক বলল,
—“আপনি কোনো চিন্তা করবেন নাহ। আমি আমার বেবী এবং বেবীর মায়ের দুজনেই খেয়াল রাখবো।”
কথাটি বলে রুদ্রিক আমাকে আবারো কোলে তুলে নেয়।
—“আরে কি করছো? ”
আমাকে থামিয়ে রুদ্রিক বলল,
—“গাড়িতে গিয়েই একেবারে নামিয়ে দিয়ে আসবো।”
কথাটি বলে রুদ্রিক আমাকে হসপিটালের বাইরে নিয়ে চলে আয়।
ডক্টর মুঁচকি হাঁসে। একজন নার্স এসে বলল,
—“দুজনকে কি সুন্দর মানিয়েছে তাইনা? ”
ডক্টর চোখে চশমাটা পড়ে বললেন,
—“দোয়া করি এই ভালোবাসা যেনো আজীবন অটুট থাকুক। ”
,________________
সাদি সিথিকে একপ্রকার টেনেই লাইব্রেরিতে নিয়ে আসে। লাইব্রেরি দেখে সিথি বলে উঠলো,
–“তুমি নিশ্চই আমাকে এখানে পড়াশোনা করতে নিয়ে এসেছো তাইনা? একটা কথা আমি ভালোভাবে বলে দেই। আমি কিছুতেই আজকে পড়বো নাহ হুহ।”
সিথির এমন কথা শুনার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলো নাহ। সাদি বলে উঠলো,
—“সিথি, তোমার কী মনে হয়? আমি এখন এখানে তোমাকে পড়ানোর জন্যে নিয়ে এসেছি? “,
—“তুমি যা পড়ুয়া। তোমাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। ”
—“সিথি, আমি কিন্তু সিরিয়াস। ”
—“আমিও সিরিয়াস সাদি ভাইয়া। এখন আমার ক্লাস আছে। কাজল মেইবি আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। ”
—“সিথি, তুমি আমাকে এভোয়েড করছো কেন? ”
করুন সুরে বলল সাদি। সাদির প্রশ্নে সিথি হাত ভাজ করে বলল,
—“আমি তোমাকেএভোয়েড করি? তাতে তোমার কি আসে যায়? যাও নাহ নিজের সেই রুমির সাথে ঢলাঢলি করো সাদি ভাইয়া। কালকে তো দেখলাম তুমি লাইব্রেরিতে,কীভাবে রুমির সাথে ঘেসে ঘেসে বসেছিলে। আমি বুঝি সব বুঝি। তাছাড়া রুমিও তো অনেকদিন ধরে তোমাকে লাইন মারার জন্যে
বসে আছে। যাও তুমিও এক্সেপ্ট করে ফেলো।”
সিথিকে দেখে বেশ রাগি মনে হচ্ছে।
সাদি হাঁসলো।
সাদির হাঁসি দেখে সিথি এইবার কোমড়ে হাত ধরে বলল,
—“তুমি হাঁসছো? ”
—“হাঁসবো নাহ? রুমি জাস্ট আমাকে লাইক করে আর কিছু নাহ। আমি তো রুমিকে লাইক করিনা তাইনা? তাছাড়া রুমি একটা ম্যাথ বুঝতাছিলো নাহ;তাই আমি জাস্ট হেল্প করেছিলাম। ”
সিথি মুখ বেঁকিয়ে বলে,
—“হু হু সবকিছুই বুঝি আমি।”
—“সিথি ইউ নো তুমি দিনের পর দিন পসিসিভ হয়ে উঠছো। একদম নিজের ভাইয়ের মতো। ব্যাপার নাহ এইটাই স্বাভাবিক। ”
—-“মানে? ”
—“তোমাকে রোগে ধরেছে।”
সিথি শুকনো ঢুগ গিলে বলে,
—“আমাকে আমার কিসের রোগে ধরেছে? ”
—-“হুম রোগে তো ধরেছেই।যাকে বলে ‘প্রেমরোগ। ‘
কথাটি বলে সাদি বাঁকা হেঁসে চলে যায়।
সিথি থম মেরে বসে থাকে। সবকিছুই যেনো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
________
শেখ বাড়িতে বিয়ের আগেই যেনো আরেকটি খুশির খবর পেয়ে সবাই আনন্দে আত্বহারা হয়ে গিয়েছে। বাবা ও রুদ্রিক মিলে মিষ্টির প্যাকেট এনে বাড়িকেই মিষ্টির দোকান বানিয়ে ফেলেছি। মায়ের তো খুশির শেষ নেই,তিনি সবাইকে ফোন করে খুশির খবরটা জানাচ্ছে। সিথি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—-“ওয়াও কাজল! আমি জাস্ট ভাবতে পারছি নাহ। আমাদের বাড়িতেও নতুন পুচু সোনা আসবে। আমাকেও পিপি বলে ডাকবে। ”
আমি হাঁসলাম।
দিয়া পিপি কোমড়ে হাত দিয়ে, কিছু একটা ভেবে চলেছে। সিথি ভ্রু কুচকে বলে,
—“তোমার আবার কি হলো? ”
দিয়া পিপি বললেন,
—“দেখ আমার বিয়েটার আগেই আমি দাদি হয়ে গেলাম। দূর। আচ্ছা যাই হোক তার আগে একটা সেল্ফি হয়ে যাক।”
(শুধু তুমি না দিয়া আমি নিজেও হয়েছি 🙂)
আমি হাঁসলাম।
________
অন্যদিকে,
ইশানি লকাপে বসে আছে। তখনি একজন পুলিশ মহিলা লকাপে প্রবেশ করে বলে,
—“আপনার স্বামীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। ”
পুলিশের কথা শুনে ইশানি উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
—“কোথায় মাহির?”
—“তার আগে আপনাকে এক জায়গায় যেতে হবে। ”
ইশানি এইবার কিছুটা ক্ষিপ্ত গলায় বলল,
—“কোথায় যেতে হবে আমাকে? কোথাও যাবো নাহ
আমি। আগে আপনি বলুন আমার মাহির কোথায়?”
—“দেখুন আপনার হাজবেন্ড এর একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে,তাই এই মূহুর্তেই আপনাকে হসপিটালে যেতে হবে। ”
ইশানি কথাটি শুনে যেনো থমকে দাঁড়ায়।
____________
বিছানায় বসে আছি আমি। রুদ্রিক চারপাশে শুধু পাইচারি করে যাচ্ছি। কি এতো ভাবা হচ্ছে শুনি?
রুদ্রিক আমার একেবারে কাছে এসে বলল,
—“আমার না এখনো বিশ্বাস হচ্ছে নাহ আমি বাবা হবো। মানে বুঝতে পারছিস কাজল? এইতো সেদিনের কথা আমি পার্টি করতাম,ড্রিংক করতাম। যাকে বলে একেবারে বিঘরে যাওয়া ছেলে বলে। আই কেন্ট বিলিভড দ্যাট, আদো আদো গলায় আমাকে কেউ বাবা বলে ডাকবে। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে আমি রুদ্রিকের বুকে মাথা রাখি। কেনো যেনো আমার কান্না পাচ্ছে।
রুদ্রিক আমার গালে হাত দিয়ে বলে,
—“কি হয়েছে কাজল? ”
আমি কিছুটা ভিতু গলায় বললাম,
—“ভয় হচ্ছে,ভীষন ভয় হচ্ছে। ”
বাকীটা আগামী পর্বে…
চলবে….
নোটঃ যারা প্রেগ্ন্যান্সি নিয়ে কথা বলছে,তাদের উদ্দেশ্যে এক্টাই কথা ভাই। গল্পটা কাল্পনিক। সুতরাং কাল্পনিক ভাবেই নিয়েন। বাস্তবের সাথে মিল খুজে লাভ নেই।
আরেকটা কথা যারা বলছিলেন যারা বলছিলেন পর্ব কি অনেক ছোট হয়ে যাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আমি আগেই বলেছি আমার পরীক্ষা চলছে। যেহেতু আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট তাই আমার পড়ার চাপ অনেক বেশি। পরীক্ষার মাঝে গল্প দিতেই আমি হিমশিম খাচ্ছি। তাও আমি নিয়মিত গল্প দেওয়ার ট্রাই করি। সেখান আপু এইসব কমেন্ট না করলে খুশি হবো।