গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব- ৪৩
#Jannatul_ferdosi_rimi
রুদ্রিকের বুকের মাঝে আবদ্ধ হয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছি। রুদ্রিক হয়তো বুঝতে পারছে নাহ আমার হঠাৎ কান্নার কারণ। রুদ্রিক আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–“জানেমান, কি হয়েছে তোর?এইভাবে কাঁদিস নাহ প্লিয। আমার যে খুব কষ্ট হয়। আজকে এতোটা খুশির খবর পেলাম আমরা আর তুই কাঁদছিস।”
আমি রুদ্রিকের কাছে আরো ঘেসে বসে বলে উঠলাম,
—“রুদ্রিক, আমার কেন যেনো বড্ড ভয় হচ্ছে জানিনা। ”
—-“কিসের এতো ভয় তোর? একদম ভয় পাবিনা কাজল। সবসময় মনে রাখবি একটা কথা জীবনে অনেক কঠিন মূহুর্ত আসবে। সেই কঠিন মূহুর্তের মোকাবেলা করতে হবে আমাদের। আমাদের অনাগত সন্তানের জন্যে হলেও শক্ত হও। ”
—-“মোকাবেলা করতেই তো ভয় করে রুদ্রিক। আগে আমার নিজের জন্যে কখনো ভয় করতো নাহ,কিন্তু এখন আমাদের সাথে আমাদের বেবীও রয়েছে।”
রুদ্রিক আমার কথা শুনে কিছুটা ভ্রু কুচকে বলল,
—“বুঝেছি প্রেগ্ন্যাসির জন্যে তোর মাথায় একটু ঝং ধরেছে। থাক ব্যাপার নাহ। আমি আছি তো। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক আমাকে কোলে নিয়ে বারান্দায় নিয়ে আসে। আমাদের বারান্দাটা বেশ বড় হওয়ায়,বারান্দার বিশাল অংশ জুড়ে বেলীফুলের ছোটখাটো একটি বাগান রয়েছে। বেলীফুলের সুমিষ্ট গন্ধে পুরো বারান্দা মো মো করছে।
রুদ্রিক আমাকে বেলীফুলের ছোট্ট দোলনায় বসে আমাকে নিজের কোলে বসিয়ে, আমার পেটে মুখ গুজে দেয়। আমার পুরো শরীর যেনো কেঁপে উঠলো।
আমি থেমে বললাম,
—“কি করছো? ”
রুদ্রিক মুখ তুলে তাঁকিয়ে দেখে বলে,
—” আপাতত এখন তোর পেটে আমার বেবী কি করছে তা বুঝার চেস্টা করছি। বুঝেছিস?”
রুদ্রিক কথা শুনে আমি গালে হাত দিয়ে বললাম,
—-“তা মিঃ বেবী এখন কি বলছে। ”
রুদ্রিক কিছু একটা ভেবে বলে,
—“বেবী বলছে মাম্মা যেনো তার বাপিকে এত্তোগুলো আদর করে দেয়। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে আমি না হেঁসে পারলাম নাহ। হেঁসেই দিলাম। রুদ্রিক ও হাঁসলো। এই মানুষটি আমাকে হাঁসাতে যথেষ্ট। তবুও কিছু ভয় থেকেই যায়।
_________
আমি বই-খাতা হাতে নিয়ে নীচে নেমে এসে দেখি বাবা-মা, সিথি, দিয়া পিপি টেবিল বসে ব্রেকফাস্ট করছে। আমাকে দেখে রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
—“কাজল তুই এইসব বই-খাতা নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? ”
—-“কোথায় আবার সিথির সাথে ভার্সিটি যাবো।”
আমার কথায় রুদ্রিক সোজা এসে আমার বই খাতা আমার হাত থেকে নিয়ে বলল,
—“তোর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। সিথি তোর নোটস তুলে রাখবে এন্ড আমি তোর জন্যে টিউটর রেখে দিবো। ”
আমি মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলাম,
—“মাত্র ১ মাস ও হয়নি বেবীর আর আমি নাকি
এখন থেকেই ভার্সিটি কামাই করা শুরু করবো। ”
আমার কথাকে একপ্রকার পাত্তা না দিয়েই রুদ্রিক
টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করা শুরু করে দিলো।
সিথি আমার অবস্হা খানিক্টা বুঝতে পেরে বললো,
—-“ভাইয়ূ, কাজল তো বাসায় থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাবে। ”
—–“বোর হলে ফোন ঘাটবে দরকার পড়লে টিকটকাদের মতো প্রতিবন্ধ হয়ে টিকটক করবে তবুও বাইরে বের হওয়া যাবে নাহ। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে রাগে যেনো আমার নাকের ঢগা লাল হয়ে যাচ্ছে।
রুদ্রিক এইবার দিয়া পিপির দিকেও তীক্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
— “আমি আর কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাইনা। ”
দিয়া পিপি হয়তো কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে গেলো।
আমি ব্যাগটা কাঁধ থেকে ফেলে দিয়ে মায়ের এসে পাশে দাঁড়ালাম। আমার মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
বাবা রুদ্রিককে উদ্দেশ্য করে বললেন,
—“রুদ্রিক আমার মনে হয় কাজলকে এখন বের হতে দিলে ভালো হয়। ”
রুদ্রিক বেডে জেলি লাগাতে লাগাতে বলল,
—“কাজল বাইরে যাবে নাহ মানে যাবে নাহ।
দ্যাটস ইট। বাইরে বের হলে অসাবধানত বশত কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে গেলে আমার বাচ্ছার কিংবা কাজলের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। নাহ আমি এতো রিষ্ক নিতে পারবো নাহ। ”
কথাটি বলেই রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে অফিসের টাইটা লাগাতে লাগাতে চলে গেলো। সিথিও আর কি করবে? সে ও হাতের ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
আমাকে ঘুমড়ো মুখ দেখে মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
—“মন খারাপ করিস নাহ রে মা। রুদ্রিক তো তোর এবং তোর বেবীর ভালো চায়। তাই তোকে বাইরে যেতে মানা করছে। ”
মায়ের কথা শুনে আমি ‘হ্যা ‘ সূচক জবাব দিলাম।
মা এইবার আমার হাত ধরে বলে উঠলেন,
—” কাজল, আমার সাথে একটু রুমে আসো তো। ”
মায়ের কথায় আমি মায়ের সাথে মায়ের রুমে আসলাম। মা আলমারি থেকে একটি বক্স বের করে, তা থেকে একটি হিরের গলার হার আমার গলায়ে পড়িয়ে দিয়ে বললেন,
—-“পছন্দ হয়েছে মা? ”
—-“মা এইসবের কি দরকার? ”
মা মিষ্টি হেঁসে বললেন,
—-“কেনো আবার? তুমি এই শেখ পরিবারকে এতো বড় একটা উপহার দিচ্ছো সেখানে এই হার তো কিছুই না। দোয়া করি মা স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাকো। ”
আমি মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম,
—“সবসময় আমাদের উপর এইভাবেই তুমি এবং বাবা ছায়া হয়ে থেকো।”
—-“অবশ্যই। ”
মাও আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
________
রুদ্রিক অফিস থেকে এসে নিজের কাঁধের ব্যাগটা বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়। আমি সেদিকে
গুরুত্ব না দিয়ে, নিজের মতো ডাইরিতে লিখতে থাকি।
রুদ্রিক বেড়িয়ে এসে আমার দিকে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে থেকে বলে,
—“কি করা হচ্ছে? ”
আমি চুপ হয়ে রইলাম। রুদ্রিক বোধহয় আমার চুপ হয়ে থাকার কারণটা জানে তাই সে আমার পাশে এসে বলে,
—“কাজল,তুই কী আমার উপর রেগে আছিস? আচ্ছা কাজল একটা জিনিস বুঝার চেস্টা কর। এই অবস্হাতে তোর বাইরে যাওয়া ঠিক নয়। ”
আমি বায়নার সুরে বললাম,
—“তুমিও আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করো। বাসায় থেকে থেকে আমি শুধু বোর হচ্ছি। ”
রুদ্রিক আমার বায়নাকে তয়োক্কা না করে বলল,
—“তোর বাইরে যাওয়া হবে নাহ। ”
—“তাহলে আমিও তোমার সাথে কথা বলবো নাহ হুহ। ”
কথাটি বলে আমি আবারো ডাইরিতে লিখা শুরু করলাম। । রুদ্রিক খেয়াল করে দেখলো আমার হাতে
লালা মোরাটে খয়েরি রংয়ের একটি সুন্দর ডাইরি। তাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘গোধূলী বেলার স্মৃতি ‘।
রুদ্রিক ডাইরাটার উদ্দেশ্য বলল,
—“তা এইটা হলো তোর সেই ফেমাস ডাইরিটা তাইতো? ”
আমি কিচ্ছু বললাম নাহ।
আমাদের মাঝে অনেকক্ষন নিরবতা চলল
নিরবতা ভেঁঙ্গে রুদ্রিক বলল,
—-“তা তোর এই ফেমাস ডাইরিটাতে ঠিক কী লেখা হচ্ছে? ”
—-“অভিযোগ তোমার বিরুদ্ধে। ”
রুদ্রিক ভ্র কুচকে বলল,
—“আমার বিরুদ্ধে? তা ঠিক কার কাছে?”
—“কার কাছে আবার? আমার বাবুর কাছে। সে বড় হলে এই ডাইরিটা পড়ে বুঝবে তার বাবাই কীভাবে তার মাকে বাইরে যেতে দিতো নাহ। সে তোমাকে বড় হয়ে মজা দেখাবে। ”
রুদ্রিক হেঁসে বলল,
—“ওকে তুই কনটিনিউ কর। আমি জানি আমার বাবু কিছুতেই তার মায়ের পক্ষ নিবে নাহ। কেননা সে জানে তার বাবাই একদম ঠিক। ”
আমি বেঁকিয়ে বললাম,
—“ঠিক আছে সময় আসলে ঠিক দেখা যাবে।”
______
সকালে প্রায় লুকিয়েই বই-খাতা গুলো ব্যাগে রেখে দিলাম। অনেক হয়েছে এই বাসায় থাকা। বাবাগো কি বোরিং হচ্ছি। নাহ আমি আজকে কিছুতেই বাসায় থাকবো নাহ। রুদ্রিক আজকে অফিসে চলে গেলেই, আমি আজকে সিথির সাথে লুকিয়ে ভার্সিটি চলে যাবো।
কথাটি ভেবে আমি আনমনে হাঁসলাম। তখনি রুদ্রিক পিছন থেকে বলল,
—“কি এতো ভাবা হচ্ছে ম্যাম। ”
রুদ্রিককে দেখে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।
হসপিটালে একপ্রকার দৌড়েই ছুটে চলেছে ইশানি।
মাহিরের কেবিনের সামনে এসে ইশানি থেমে যায়। মাহিরের মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো।
ইশানি শেখ পুলিশদের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
—“আমার হাজবেন্ড এর এমন অবস্হা হলো কী করে?”
একজন অফিসার নিচুস্বরে বলে উঠেন,
—-“আপনার হাজবেন্ড ঢাকা দিয়ে পালাতে যাওয়ার সময় গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছিলো তখন সেখানকার লোকেরা আমাদের ইনফর্ম করে। আমরা তখন সেখানে গিয়ে মাহির আহমেদকে উদ্ধার করি।”
ইশানি হাত তালি দিয়ে বলে,
—“বাহ এক্সিলেন্ট! আমার হাজবেন্ডকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিলো সবাই আজকে। ওয়াও। নাহ, আমি থাকতে মাহিরের কিচ্ছু হবে নাহ। ”
ইশানি মাহিরের কাছে যেতে নিলে,একজন ডক্টর এসে তাকে থামিয়ে বলে উঠে,
—“পেশেন্টের অবস্হা খুব ক্রিটিকাল। এমন অবস্হায় আপনি তার কাছে যেতে পারবেন নাহ।”
ইশানি শেখ গলা উঁচু করে বললো,
—“আমার হাজবেন্ডকে আমি দেখতে যাবোই। কেউ আমাকে আটকাতে পারবে নাহ। ”
ইশানি শেখের কথার মাঝেই একজন মহিলা পুলিশ এসে কড়া বলল,
—“ডক্টর যেহুতু বলেছেন এই মূহুর্তে আপনি যেতে পারবেন নাহ। মানে পারবেন নাহ। আপনি আমাদের ওর্ডার মানতে বাধ্য মিস শেখ। ”
ইশানি নির্ভয় বলে,
—“জাস্ট শাট আপ ওকে? ইশানি শেখকে তোমরা আটকাবে? অনেক শুনেছি আজকে আমাকে কেউ আটকাতে পারবে নাহ। কেউ পারবে নাহ মানে পারবে নাহ। ”
কথাটি বলে ইশানি শেখ গটগট করে মাহিরের কেবিনে ঢুকে পড়লো।
মাহিরের অবস্হা সত্যি খারাপ। অক্সিজেন কোনোরকম চলছে। ইশানি মাহিরের অবস্হা দেখে প্রায় কেঁদেই দিলো। ইশানি মাহিরের হাত ধরে কান্নার সুরে বলে উঠলো,
—“কিচ্ছু হবেনা তোমার মাহির। আমি আছি তো তাইনা? জাস্ট একটু ভরসা রাখো। আমি থাকতে কিচ্ছু হতে দিবো নাহ তোমার। যারা তোমার এই অবস্হার জন্যে দায়ী সবাইকে দেখে নিবো। ”
ইশানি শেখ কাঁদতে কাঁদতে মাহিরের হাতে নিজের হাতে রেখে শক্ত করে চেপে ধরলো।। মাহিরের এই অবস্হা যেনো ইশানি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে নাহ।
বাকীটা আগামী পর্বে….
চলবে কী?
[আমি খেয়াল করছি এক্সাম এর চাপের জন্যে গল্পটা আমি ঠিক মতো গুছিয়ে লিখতে পারছি নাহ। তার জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী]