অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৪

0
918

#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব:১৪
(বোনাস পর্ব)

🍁
ব্রীজের উপর দিয়ে হাটছে মেহবিন।মাথার উপর চৈত্র মাসের খা খা রৌদ্রুর।গরমে সবার নাজেহাল অবস্থা।এখন দুপুর ২.৩০ মিনিট বাজে।মেহবিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরছে।আজকে মাইজা স্কুলে যায়নি।তার নাকি ভালো লাগছে না।মেহবিন অনেকবার জোর করার পরও যেতে রাজি হয়নি।তার নাকি আজকে বাসায় থাকতেই ভালো লাগছে।মাইজা কে ইদানিং মেহবিনের কাছে খুব অদ্ভুত লাগে।কেমন জানি আজব একটা বিহেভিয়ার।সেদিন মায়ান ওদের গাড়ি করে স্কুলে দিয়ে যাওয়ার পর মাইজা ওর সাথে কেন জানি কথা বলছিল না।বহু বার কি হয়েছে জিজ্ঞেস করার পরে ও মাইজা নিরুত্তর ছিল।যদিও একটু পরে আবার ঠিক হয়ে গিয়েছিল।তবু মাইজা কে ওর কাছে অদ্ভুত মনে হচ্ছে আজকাল।মেহবিন বিরবিরিয়ে বলল-

-”’যেদিন থেকে ঐ মায়ানের সাথে দেখা হলো সেদিন থেকে যতসব অদ্ভুত লাগছে সবকিছু।খবিশ একটা।

সমস্ত দোষ মায়ানকে দিয়ে তবেই ক্ষান্ত হলো মেহবিন।মেহবিন এবার দাড়িয়ে পরল।ভীষণ গরম লাগছে তার।হাপিয়ে উঠেছে সে।মেহবিন একটু দাড়িয়ে শ্বাস নিয়ে বলল-

-”’আচ্ছা আমি রিক্সা নিচ্ছি না কেন।রিক্সা দিয়েই তো আমরা স্কুলে আসা যাওয়া করি। উফ,এই মাইজা টা সাথে নেই বলেই এমন উল্টাপাল্টা লাগছে সবকিছু।

আসলে সব সবসময়ই মাইজা নিজে রিক্সা ডেকে তারপর স্কুল যাওয়া আসা করে।মেহবিন কখনো এসব করেনি।আর ওদের স্কুলটাও বাসা থেকে মোটামুটি ভালই দূরে।মেহবিন ভাবল তাকে এখন ব্রীজ টা হেটেই যেতে হবে।কারন ব্রীজের মাঝপথে দাড়িয়ে রিক্সা নেওয়া যাবেনা।তাই সে হাটা ধরল।কিন্তু বিপত্তি বাধল আরেকটু সামনে গিয়েই।সামনে ছয়সাতজন ছেলে দাড়িয়ে আছে।সবার দুই হাতে দুই টা করে সিগারেট।দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা বখাটে।মেহবিন সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।এদের ক্রস করে সামনে এগিয়ে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব।মেহবিন এসব ভেবে পিছনে হাটা দিবে তার আগেই ঐ ছেলেদের নজরে পরে যায় ও।ছেলে গুলো কে ওর দিকে তাকাতে দেখেই কলিজা লাফিয়ে উঠে মেহবিনের।সে আর না দাঁড়িয়ে পিছন দিকে হাঁটা শুরু করে।মাইজা কে ছাড়া কেন যে সে আজ আসতে গেল।মেহবিনের হাত পা কাঁপছে।সে পিছনে ঘুরে একবার তাকাল।ছেলেগুলো তার পিছনেই আসছে।মেহবিনের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল।সে সামনের দিকে তাকিয়ে দ্রুত হাটছে।তার শরীর থরথর করে কাপছে।সে আবার পিছনে তাকাল।ছেলে গুলো খুব কাছেই হাটছে।প্রত্যেকের ঠোঁটে সয়তানি হাসি।মেহবিন আর হাটতে পারছে না।সে এবার দৌড়াতে লাগল।ছেলে গুলোর হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।কিন্তু মেহবিনের এখন এসবে কান দেওয়ার সময় নেই।সে তারা প্রান হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছে।কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হয়নি।একটা ছেলে এসে ওর ব্যাগ নিয়ে টানাটানি শুরু করল।মেহবিন ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিল।সে মোচরামোচরি করছে ব্যাগ ছাড়ানোর জন্য।ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে খুব বাজে ভাবে বলে-

-”’একা একা কই যাও।আমগোরেও একটু নিয়া যাও।নেইলে চলো তোমারে আমগো লগে নিয়া যাই।

মেহবিন এবার কেদে দিল।মেহবিনের খুব বাজে অনুভূতি হচ্ছে।সে আগে কখনোই এমন পরিস্থিতি তে পরেনি।সে কোনোভাবে ব্যাগটা ছাড়িয়ে নিয়ে সামনের দিকে দৌড় দিল।দৌড়াতে দৌড়াতে একপর্যায়ে সে মেইন রাস্তায় নেমে যায়।সে একবার পিছন তাকাচ্ছে তো একবার সামনে।ছেলেগুলো কে আর দেখা যাচ্ছে না তবুও সে দৌড়াচ্ছে।সে আরেকবার পিছনে তাকাতেই সামনে একটা গাড়ি এসে জোরে ঠিক ওর সামনেই ব্রেক কষল।মেহবিন সামনে তাকিয়ে মায়ানকে দেখতে পায়।কেন জানি মায়ানকে দেখে ওর মনে হলো যে সে এবারের মত বেঁচে গেছে।মায়ান গাড়ি থেকে নেমে বলল-

-”তোমার কি শুধু আমার গাড়ির সামনে এসেই পরতে হয়?পরে ব্যাথা পেলে তো আমাকে দোষ দিবে।

মেহবিন এখনো শান্ত হতে পারেনি।সে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।মায়ান এবার কপাল কুচকালো।মেহবিনকে কেমন যেন দেখাচ্ছে।মায়ান এবার চিন্তিত হয়ে মেহবিনের মাথায় এক হাত রেখে বলল-

-”’হোয়াট হেপেন্ড মেহবিন?আর ইউ ওকে?এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?

মেহবিন পিছনের দিকে ইশারা করে বলল-

-”’ও-ওরা আস-সছে।

মায়ান পিছনে তাকিয়ে বলল-

-”কারা আসছে মেহবিন?কাদের কথা বলছ?

মেহবিন আবারো পিছনে ইশারা করে কিছু বলবে তার আগেই হেলে পরল মায়ানের বুকে।
———–
মেহবিন চোখ পিট পিট করে খুলতে চেষ্টা করছে কিন্তু মাথার যন্ত্রণায় খুলতে পারছেনা।মেহবিন কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল।তারপর চোখ খুলে দেখতে পেল মাথার উপর শো শো আওয়াজে ফ্যান ঘুরছে।সে পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারল যে সে তার নিজের রুমে নিজের বেডে শুয়ে আছে।দুপুরের কথা মনে পরতেই মেহবিন ধরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে।মেহবিনের মাথা টনটন করছে।সে মাথায় হাত রেখেই একটু গলা বাড়িয়ে ‘আম্মু,বলে ডাক দিল।মেহবিনের ডাক দিতে দেরি কিন্তু মিসেস রুকাইয়া ঘরে ঢুকতে দেরি করেননি।শুধু তিনিই না মিসেস রুনা,মাইজা, রাফিজ এমনকি মায়ান ও রুমে ঢুকে পড়ে।মিসেস রুকাইয়া মেয়ের পাশে বসে চিন্তিত হয়ে বলেন-

-”কি রে মেহু,কি হয়েছে তোর মা?তুই জ্ঞান হারালি কিভাবে?

মেহবিন মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।মিসেস রুকাইয়া মেয়েকে আগলে ধরে বলল-

-”’কাদিস না কি হয়েছে বল আমাদের।

মেহবিন নিজেকে সামলে নিয়ে বলা শুরু করে-

-”স্কুল থেকে ফিরার সময় কয়েকটা ছেলে আমার পিছু নেয়।আ-আমি ওদের দেখে দৌড়াতে নিলে ওরা আমার ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করে।পরে আমি কোনোমতে ওদেরকে ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে আসি।

বলেই মেহবিন আবারো কেদে দিল।মিসেস রুকাইয়ার বুকটা হু হু করে উঠল।কি বাজে একটা ঘটনা ঘটেছে তার মেয়ের সাথে।মায়ান এতক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে সব শুনছিল।সব শুনে মায়ান চোখ বন্ধ করে ফেলল।তারপর একপলক তাকাল মেহবিনের কান্নারত মুখের দিকে।মায়ান কিছু একটা ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।মাইজার সবকিছু শুনে তারো ইচ্ছা করছেঐ ছেলেগুলো কে কেলাতে।মাইজা গিয়ে মেহবিন কে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে-

-”সরি মেহু।আমি স্কুলে যাইনি বলেই তোকে একা যেতে হলো।আমি আর কোনোদিন তোকে একা ছারব না।প্লিজ তুই কাদিস না।

সবাই মেহবিন কে নানা কিছু বলে শান্তনা দিচ্ছে।কিন্তু মেহবিনের কান্না কিছুতেই থামছে না।আসলে মেয়েরা এখন কোথাও নিরাপদে নেই।সবজায়গাতেই পুরুষরূপি কিছু জানোয়ার আছে।যাদের জন্য ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে যুবতী কেউ নিরাপদে নেই।আর আমাদের সমাজের মানুষগুলো আরো খারাপ।তারা কখনোই এসবে রুখে দাঁড়াবে না এই যেমন ঐ ছেলেগুলো যখন মেহবিনের সাথে বাজে ব্যবহার করছিল তখন তো ভরদুপুর ছিল।রাস্তায় অনেক মানুষ ও ছিল।কেউ কি দেখেনি এসব?কই কেও তো এল না মেহবিন কে সাহায্য করতে।কিন্তু যখন খারাপ কিছু ঘটে যেত তখন দোষ ঐ মেয়েটার ই হতো।আবার কিছু ডিজিটাল মহিলারা তো বলেই দিত-

-”আজকাল সব পুরুষেরাই এমন কেউ ধোঁয়া তুলসী পাতা না।

আসলে সব পুরুষ রা খারাপ না।খারাপ হলো কিছু পুরুষরূপি জানোয়ার আর আমাদের সমাজের মানুষের চিন্তা ভাবনা।যাদের জন্য দেশটা একদম বিষিয়ে গেছে।

🍁
আজ দুই দিন পর মেহবিন স্কুল যাবে।যদিও সে যেতে চাইছিল না।মাইজা ওকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে।তাকে নাকি কি দেখাবে মাইজা।যেটা দেখলে ওর মন ভালো হয়ে যাবে।মেহবিন আর মাইজা একটা রিকশা নিয়ে উঠে পরেছে।ঐ ব্রীজের সামনে যেতেই মেহবিন ভয়ে মাইজার গা ঘেঁষে বসল।মাইজা মেহবিনের এক হাত শক্ত করে ধরল।তারপর বলল-

-”’ভয় পাস না।

কিছুদূর যেতেই মেহবিন ঐ ছেলেদের দেখতে পেল।দেখেই মেহবিনের মুখ হা হয়ে গেল।সবগুলোর হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ।আর সবকটা চুপচাপ বসে আছে।মেহবিন অবাক হয়ে মাইজার দিকে তাকাল।মাইজা ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল-

-”’কেমন দিলাম সারপ্রাইজ?

মেহবিন অবাক হয়ে বলল-

-”’ তুই মেরেছিস?

মাইজা মুখ লটকিয়ে বলল-

-”ধুর বলদি আমি মারতে যাব কেন।মেরেছে তো মায়ান ভাই।

মেহবিন অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে বলল-

-”মায়ান ভাই?

মাইজে হেসে বলে-

-”হুম কালকে তোর মুখে সব শোনার পর মায়ান ভাই পুরা ক্ষেপে যান।রাফিজ ভাইয়ার সাথে গিয়ে এলাকার ছেলেপুলেদের নিয়ে বেদম কেলান।ওনার নাকি রক্ত মাথায় চড়ে যায় কেও মেয়েদের অসম্মান করলে।কি ভালো ওনি বল।

হঠাৎই মেহবিনের ভিতর ভালো লাগা ছেয়ে গেল।তার মন বলছে মায়ান তার জন্যই ওদের মেরেছে।মেহবিন বলল-

-”হ্যা অনেক ভালো।

বলেই সামনে তাকিয়ে হেসে চোখ বুজে ফেলে।ছোট বিষয় থেকে নতুন অনুভূতি নতুন ভালোলাগার বর্ষন শুরু হয় এই কিশোরীর মনে।তবে কি এভাবেই শুরু হবে নতুন প্রনয়ের?

(বিঃদ্রঃ আজকে একটু বড় করেই কিন্তু দিয়েছি।সবাই প্লিজ জানাবেন কেমন হয়েছে।ভালো খারাপ সব মন্তব্য করবেন আশা করছি। রি-চেইক করি নি।তাই বানান ভুল থাকতে পারে।ধন্যবাদ ❤।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here