#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব :১৫
🍂
মানুষের মন বড়ই অদ্ভুত।এই মন নামক ব্যপারটা খুব জটিল বিষয়।কখন কি এই মনের ভেতর ঢুকে পড়ে কেউ বলতে পারে না।এমন কি মানুষ নিজেই নিজের মন বুঝতে অক্ষম।ঠিক তেমনই মেহবিনের মনে যাকে নিয়ে এত ভয় আর রাগ কাজ করছিল এতদিন সেই তাকে নিয়েই সে এখন ভাবনায় ডুবে আছে সারাদিন।মেহবিন বসে আছে নিজের ঘরের বেলকনিতে একটা বেতের চেয়ারে।আর দৃষ্টি তার আকাশের সচ্ছ মেঘগুলো তে।তার দৃষ্টি আকাশে থাকলেও তার মন আর চিন্তাভাবনা সবকিছু জুড়ে শুধু একজনই।সেদিন মাইজার কাছ থেকে মায়ানের ঐ ছেলেগুলোকে মারার কথা শুনার পর সে না চাইতেই বারবার মায়ানকে নিয়ে ভাবছে।শুধু ভাবছে বললে ভুল একদম মন প্রাণ ধ্যান সব উজার করে ভাবছে।তার কেবল একটা কথাই মাথায় আসছে।মায়ান এসবকিছু ওর জন্য করেছে।সবে কৈশোরে পা রাখা কিশোরীর মনে নাম না জানা নতুন অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে।সে নিজেও টের পাচ্ছে না যে সে একজনের প্রতি গভীর ভাবে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।যেই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া এত সহজ না।
——–
স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেহবিন আর মাইজা।মাত্র স্কুল ছুটি হয়েছে।মাইজা এখনও দাড়িয়ে আছে।না কোনো রিক্সা ডাকছে আর নাই বা কিছু বলছে।তার চোখ শুধু এদিক সেদিক কাউকে খুঁজে চলছে।মেহবিন ও প্রথমে চুপ ছিল।কিন্তু এবার সে আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারল না।মেহবিন মাইজার দিকে তাকিয়ে অধৈর্য হয়ে বলল-
-”’কি কখন থেকে দেখছি এদিক সেদিক তাকাচ্ছিস।কি হয়েছে বল?কাউকে কি খুজছিস?আমার কিন্তু অনেক ক্লান্ত লাগছে।
মাইজা তার মনোযোগ কাউকে খুজায় ব্যাস্ত রেখে বলল-
-”’মায়ান ভাই বলেছিলেন আজকে নাকি আমাদের বাসায় উনিই ড্রপ করে দিবেন।শুধু আজই না,এখন থেকে নাকি রোজই পৌঁছে দিবেন।
মায়ান আসছে কথাটা ভাবতেই ওর ক্লান্তি সব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।এই তো কিছুদিন আগেও মায়ানের ছায়াও আশেপাশে দেখলে ভয়ে আর বিরক্ততে তার মনটা একদম বিষিয়ে যেত, কিছুদিনের ব্যবধানে সেই একই মানুষ এর উপস্থিতি ভাবতে পেরেই মনটা খুশিতে নেচে উঠছে।মেহবিনের ভালোলাগার মাঝেই গাড়ির হর্ণের আওয়াজ পাওয়া গেল।চোখ তুলে বাদিকে তাকাতেই মায়ানকে দেখতে পেল।মায়ান গাড়ি থেকে নেমে দাড়িয়ে তাকায় মেহবিনের দিকে।মেহবিনের দিকে তাকাতে দুইজনের চোখাচোখি হয়ে গেল।মেহবিন তৎক্ষণাৎ চোখ সরিয়ে ফেলল।কিন্তু মায়ান চোখ নামায় নি।তার স্থির দৃষ্টি যে স্কুল ড্রেস পরিহিত ছোটো মানবীর দিকে।মেহবিন আবারো আড়চোখে তাকাল মায়ানের দিকে।মায়ানকে এখনও তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে আবার চোখ নামিয়ে নিল।মেহবিনের কেন জানি হঠাৎ খুব লজ্জা লাগছে।কেন এমন লাগছে সে নিজেও জানেনা।মাইজা এতক্ষণ মায়ানকে খেয়াল করেনি।সে এখনও মায়ানকে খুজছে। বা দিকে তাকাতেই মাইজা দেখতে পেল মায়ানকে।সে ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে মেহবিনের হাত ধরে তারাতারি মায়ানের সামনে দাঁড়াল।ওরা গিয়ে দাড়াতেই মায়ান মেহবিনের থেকে চোখ সরিয়ে মাইজার দিকে তাকিয়ে বলল-
-”’সরি ফর লেইট।আমি একটা কলে আটকে গিয়েছিলাম।এক্সট্রেমলি সরি।
মাইজা হেসে বলল-
-”’সরি বলতে হবে না মায়ান ভাই।আমার কোনো সমস্যা হচ্ছিল না।
মায়ান ওদের পিছনের সিটের দরজা খুলে দিল।ওরা দুজনেই বসে পড়ে।মায়ানও গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
গাড়িতে তিনজনই চুপচাপ বসে আছে।কেউই কিছু বলছে না।অথচ তাদের তিনজনের মনেই অনেক কথা জমে আছে।যা তারা ব্যাক্ত করতে পারছে না।মেহবিন জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।কি ভেবে যেন সামনে তাকাতেই ফ্রন্ট মিররে দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল।মেহবিন আবারো ইতস্তত করে চোখ ঘুরিয়ে আবার বাইরে তাকাল।এবার মায়ানকেও চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকাতে হলো।নাহলে যে এক্সিডেন্ট হতে পারে। অন্যথা কখনোই সে চোখ ফিরাত না সেই মায়ায় ঘেরা অক্ষিযুগল থেকে।তাদের এই চোখাচোখির মাঝেই গাড়ি এসে থামল তাদের গন্তব্য স্থানে।ওরা তিনজনই গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায়।মায়ান ওদের দিকে তাকিয়ে বলে-
-”’ভিতরে যাও।
মাইজা বলল-
-”’আপনি যাবেন না মায়ান ভাই?
-”’নাহ আমি আর রাফিজ একটু শপিং এ যাব।
-”ওহ আচ্ছা।
ওদের কথার মাঝে রাফিজ এসে দাঁড়াল।মাইজার দিকে তাকিয়ে বলল-
-‘আমি একটু শপিং এ যাব।তোর কিছু লাগলে লিস্ট করে দে।আমিও একটু বাসায় যাব।মায়ান এক মিনিট দাড়া।
মায়ান সম্মতি জানাতেই রাফিজ আর মাইজা ভিতরে চলে গেল।মেহবিন ও ধীর পায়ে ভিতরে ঢুকতে নিয়ে কি মনে করে যেন আবার দাড়িয়ে পড়ল।পিছন ফিরে তাকাল মায়ানের দিকে।মায়ান উল্টো দিক ফিরে ফোনে কি যেন করছে।মেহবিন কিছু একটা ভেবে একটা শুকনো ঢোক গিলে এগিয়ে গেল মায়ানের দিকে।আশ্চর্য!তার বুকের ভিতর কেমন যেন ধুকপুক করছে।
আগে তো মায়ানের আশেপাশে থাকলে তার এমন লাগত না।মেহবিন একটু হাত কচলিয়ে নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে হালকা গলায় ডাক দিল-
-”’মা-মায়ান ভাই?
মায়ান ঘুরে তাকাল মেহবিনের দিকে।মেহবিন কে তার নিকট দাড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো।তবুও সেটা প্রকাশ না করে মুচকি হেসে বলল-
-”’কিছু বলবে পিচ্চি?
এই পিচ্চি ডাকটা শুনেও মেহবিনের ভিতর পূর্বের ন্যায় কোনো রাগ কাজ করছে না।তার কাছে বর্তমানে এই পিচ্চি ডাকটা পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধতম ডাক মনে হচ্ছে।মেহবিন চুপ করে আছে দেখে মায়ান নিজেই বলল-
-”’কিছু বলছো না কেন পিচ্চি?উহফ সরি তোমায় তো আবার কেউ পিচ্চি বললে রেগে যাও।আচ্ছা এগেইন সরি আর পিচ্চি ডাকবনা।
মেহবিন ফট করে মাথা তুলে কিছু না ভেবেই বলল-
-”’না না ডাকবেন না কেন?অবশ্যই ডাকবেন।আপনি আমায় পিচ্চি ডাকলে আমার খুব ভালো লা-
এটুকু বলেই জিভ কাটল মেহবিন।ঘোরের মাঝে এসব কি বলে ফেলল সে।মায়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ মেহবিনের দিকে।তারপর টেডি স্মাইল দিয়ে বলল-
-”’ভালো লাগে?
মেহবিন মায়ানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল-
-”ক-কি?
মায়ান একটু মেহবিনের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে দুষ্ট হেসে বলল-
-”’তুমিই তো বললে আমি পিচ্চি বলে ডাকলে নাকি তোমার ভালো লাগে।
মেহবিন নিজের কথায় নিজেই লজ্জায় পড়ে গেল।তার এখন মায়ানের দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগছে।মায়ান মেহবিনের এমন অবস্থা দেখে মুখ চেপে হেসে বললো-
-”’তুমি যখন চাইছো তখন আমি নাহয় ডাকলাম।বাট তুমি হঠাৎ আমার কাছে কি মনে করে?
মেহবিন এবার আরো বিপাকে পড়ল।সে কিভাবে কোনদিক থেকে কথা শুরু করবে বুঝতে পারল না।মিনিট এক সময় নিয়ে কথা সাজিয়ে মিনমিনিয়ে বলা শুরু করল-
-”’সেদিনের জন্য থ্যাংকস।সেদিন আপনি সঠিক টাইমে এসেছিলেন ভাগ্যিস।আর ঐ ছেলেগুলোকে ও উচিত শিক্ষা দিয়েছেন।সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ মায়ান ভাই।
এইটুকু বলে থামলো মেহবিন।মায়ান একটু তাকিয়ে থেকে আবারো ঠোঁটে দুষ্ট হাসির রেখা টেনে বলল-
-”’এটা আমার দায়িত্ব ধরে নেও।এর জন্য থ্যাংকস লাগবেনা।আচ্ছা তুমি কি খাওয়াদাওয়া করো না ঠিকমতো।সেদিন তোমাকে কোলে নেওয়ার পর মনে হলো একটা ছয়সাত বছরের বাচ্চা কে কোলে নিয়েছি।
-”’কি বলছেন মায়ান ভাই? সবাই তো বলে আমি নাকি একটু হেলদি,আর আপনি কি না বলছেন-
এইটুকু বলেই থেমে গেল মেহবিন।তারপর চোখ বড় বড় করে তাকাল মায়ানের দিকে।একটু আগে কি বলল মায়ান তাকে।মায়ান তাকে কবে কোলে নিল?মেহবিন উত্তেজিত হয়ে বলল-
-”’আপনি আমায় কবে কোলে নিলেন মায়ান ভা-ভাই?
মায়ান বাকা হাসল।তারপর মেহবিনের দিকে একটু ঝুঁকে বলল-
-”’বাসায় যাও।
মেহবিন জেদ নিয়ে বলল-
-”’নাহ আগে বলুন আপনি আমায় কবে কোলে নিলেন?
মায়ান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল-
-”’সেটা তুমি ভেবে নিও।এখন বাসায় যাও।
মেহবিন তাও ঠায় দাড়িয়ে থেকে বলল-
-”না আগে বলুন আ-
কথা শেষ হবার আগেই মায়ান আচমকা মেহবিনের এক হাত টেনে গাড়ির সাথে মিশিয়ে দাড় করাল।মেহবিন হতবাক হয়ে গেল।মায়ান এক হাত দিয়ে শক্ত করে মেহবিনের হাত ধরে আছে।আর অন্য হাত গাড়িতে রেখে মেহবিনের দিকে একটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে-
-”’তোমার কিন্তু শাস্তি পাওয়া বাকি আছে।যেকোনো সময়ে যেকোনো ভাবে শাস্তির প্রকোপ শুরু হতে পারে।তাই তোমার উচিত আমার কথা শুনে এখন বাসায় যাওয়া।নাহলে শাস্তির ডোস বেড়ে যেতে পারে।পরে নিতে পারবে তো সেই শাস্তি?
মেহবিন কে আর পায় কে?শাস্তির কথা শুনা মাত্র সে মায়ানের থেকে হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে ভিতরে চলে গেল।মেহবিন যাওয়ার পর মায়ান শব্দ করেই হেসে ফেলল।
(কি খবর সবার।ঈদ কেমন কাটলো? একবার ভেবেছিলাম দিবনা গল্প।পরে আবার ভাবলাম যে দিয়ে দেই।কেউ কি মিস করছিলেন গল্পটা?)