অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৬

0
930

#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব :১৬
🍂
দুপুর ২ টা।আজ আর তেমন একটা গরম পড়ে নি।হালকা হালকা বাতাস বইছে।পরিবেশটা খুব সুন্দর।মেহবিন আর মাইজার স্কুল সবে ছুটি হয়েছে।তারা এখন করিডোরে হাটছে।ওদের স্কুলটা তিনতলার।ছেলেমেয়ে সব মিলিয়ে প্রায় অনেক ছাত্রছাত্রী।মেহবিনদের ক্লাসরুম হলো দুতলায়।মেহবিন আর মাইজা সিড়ি বেয়ে নেমে যায়।ওরা মেইন গেট দিয়ে বের হবে তখনই মাইজা ছোট খাটো আর্তনাদ করে বলে-

-”’হায় আল্লাহ মেহু এটা কি করলাম!

মেহবিন হকচকিয়ে তাকাল মাইজার দিকে।এই ছোট্ট চিৎকারেই মেহবিন ভয় পেয়ে গিয়েছিল।মেহবিন মাইজার আতংকিত চেহারা দেখে নিজেও ভয় পেয়ে যায়।সেও ভয় নিয়ে বলে-

-”’কি হয়েছে,এভাবে চেচালি কেন?

মাইজা কাদো কাদো ফেস করে বলে-

-”’আমার ইংলিশের নোট টা রিনুর কাছে।ওটা নিয়ে আসতে ভুলে গিয়েছি।

-”’তো যা গিয়ে নিয়ে আয়।ওর তো মেবি এখনও ক্লাস হচ্ছে।

মাইজা অসহায় মুখ করে বলে –

-”এটাই তো সমস্যা,ওর এখনও ক্লাস হচ্ছে।ছুটি হলে তো নিচেই নেমে আসত।আমার আর কষ্ট করতে হতো না।এখন তো নোট নিতে তিনতলা বেয়ে উপরে যেতে হবে।মরার একটা লিফট ও নাই।

মেহবিন একটা ভেংচি দিয়ে বলে-

-”’আহহহহ আরামের শেষ নাই।তিনতলার জন্য এখন তোমাকে লিফট লাগিয়ে দিব।যত্তসব আইলসা পোলাপাইন।যাহ তারাতারি আমি এখানে দাঁড়াই।

মাইজাও অসহায়ভাবে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল।মেহবিন মাইজার যাওয়ার দিকে একটু তাকিয়ে মেইন গেটের দিকে এগিয়ে যায়।গেটের সামনে এসে মেহবিন দাঁড়িয়ে পড়ে।একটু দূরে মায়ানকে দেখা যাচ্ছে।মায়ান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে।আজকে ফুল ব্লাক পড়ে আসছে।ব্লাক শার্ট,ব্লাক জিন্স, উপরে আবার জেকেট ও পড়েছে।মেহবিন ভ্রু কুঁচকালো।এই গরমের মধ্যে জেকেট পড়ার কি মানে।কিন্তু মায়ানকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।মেহবিন খুটিয়ে খুটিয়ে মায়ান কে দেখতে লাগল।আজকে মায়ান কে বেশিই সুন্দর লাগছে মেহবিনের কাছে।আচ্ছা মায়ানকে কি আগে থেকেই সুন্দর লাগত নাকি তার কাছে শুধু আজকেই সুন্দর লাগছে।মেহবিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ানের দিকে।তার তাকিয়ে থাকার মাঝেই কেউ এসে জোরে একটা ধাক্কা দেয়।ধাক্কাটা বেশি জোরে না লাগলেও মেহবিনের ঘোর ঠিকই কেটে যায়।মেহবিন কপাল কুঁচকে পাশে তাকায় এটা দেখার জন্য যে তাকে কে ধাক্কাটা মারল।পাশে তাকিয়ে দেখে তাদের ক্লাসেরই বাট অন্য গ্রুপের একটা মেয়ে ধাক্কা মেরেছে।কিন্তু মেয়েটার তাতে কেনো হেলদোল নেই।সে বত্রিশ টা দাত বের করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।মেহবিন ও ওই মেয়ের তাকানো অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে মায়ানকে দেখতে পায়।তারপর আবার ওই মেয়েটার দিকে তাকায়।মেয়েটা মায়ানের দিকেই তাকিয়ে আছে।মেহবিন একটু কেশে নিজের উপস্থিতি জানান দিল মেয়েটাকে।কিন্তু এই মেয়ের দিনদুনিয়ার খবর নেই।মেহবিন এবার একটু জ্বলে উঠে।ওভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে পরপুরুষের দিকে।মেহবিন আর না পেরে মেয়েটাকে জোরে হাত দিয়ে ধাক্কা দেয়।ধাক্কা খেয়ে মেয়েটার হুশ ফিরে।মেয়েটা এদিক সেদিক তাকায় দেখার জন্য যে কে তাকে মারল।পাশে তাকিয়ে মেহবিন কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে।মেয়েটা একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে-

-”’আরে মেহবিন?তুমি কমার্সের স্টুডেন্ট মেহবিন না?কেমন আছো?

মেহবিন ও জোরপূর্বক হেসে বলে-

-”’আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তা তুমি কোন ধ্যান এ আছো।কখন থেকে তোমাকে ডাকছি শুনছোই না।

মেয়েটা একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলে-

-”না আসলে সামনের ঐ ছেলেটাকে দেখছিলাম।ঐ ছেলেটাকে প্রায়ই দেখি এখানে আসতে।খুব সুন্দর ছেলেটা তাই না।

বলেই লাজুক হাসল।মেহবিনের রাগে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে ।সে এবার রেগে গিয়ে বলে-

-”’কেন রে ভাই রাস্তায় সুন্দর ছেলে দেখলেই তাকিয়ে থাকতে হবে কেন?কার না কার জামাই এভাবে নজর লাগাতে হবে কেন।যত্তসব আজাইরা।

বলেই রাগে গজগজ করতে সামনে পা বারাল।মেয়েটা অবাক হয়ে গিয়েছে মেহবিনের হঠাৎ এমন ভাবে কথা বলায়।মেহবিন রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে মায়ানের সামনে গিয়ে দাড়ায়।মায়ান এখনও দেখেনি মেহবিন কে।সে এখনও ফোন স্ক্রল করতে ব্যস্ত। যা মেহবিনের রাগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।মেহবিন হালকা চেঁচিয়ে বলে –

-”’এই যে শুনছেন?

মায়ান চোখ তুলে তাকায় মেহবিনের দিকে।মেহবিন চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মায়ান ফোন পকেটে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে-

-”ছুটি হয়ে গিয়েছে পিচ্চি?

মেহবিন তেতো স্বরে বলে-

-”’আপনি এখানে কি করছেন?

মায়ান আশ্চর্য হয়ে বলে-

-”’মানে আমার তো তোমাদের ড্রপ করে দেয়ার কথা।ভুলে গেলে নাকি?

-”’না ভুলিনি।আপনাকে এত আগে আসতে কে বলেছে ।আর এত ফিটফাট হয়েই বা কে আসতে বলেছে।এরপর থেকে আর এভাবে আসবেন না আর এত তারাতারিও আসবেন না।দেরি করে আসবেন।মনে থাকে যেন।

মায়ান অবাক হয়ে শুনল মেহবিনের কথা।সে বুঝতে পারছে যে মেহবিন রেগে আছে।কিন্তু রাগের কারন টা ধরতে পারছেনা।মায়ান একটু হেসে বলল-

-”’কি ব্যাপার পিচ্চি? তুমি হঠাৎ হঠাৎ এমন অগ্নিরূপ ধারণ করো কেন বলো তো।এত রাগ কিন্তু শরীরের জন্য ভালো না।

মেহবিন একটু রাগ নিয়ে বলল-

-”’আচ্ছা আপনি আমাকে সবসময়ই পিচ্চি,বাচ্চা এসব বলে ডাকেন কেন?

মায়ান ঠোঁট বাকিয়ে হেসে জবাব দেয়-

-”’তুমিই না বললে আমি পিচ্চি ডাকলে তোমার ভালো লাগে।আর তাছাড়া পিচ্চি কে তো পিচ্চিই ডাকা উচিত।

মেহবিন মুখ ফুলিয়ে বলল-

-”’আপনি শুধু আমাকেই পিচ্চি ডাকেন।মাইজা আর আমি তো সেইম ইয়ারের।ওকে তো কখনো পিচ্চি বলে ডাকেন না।

মায়ান মেহবিনের দিকে একটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে –

-”’কিছু স্পেশাল ডাক স্পেশাল মানুষের জন্যই বরাদ্দ করা থাকে।যেটা সবাইকে ডাকা যায় না।

বলেই এক চোখ টিপে সোজা হয়ে দাড়ায়।মেহবিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ানের দিকে।কি বলল মায়ান।স্পেশাল মানুষ? মেহবিন কে মায়ান তার স্পেশাল মানুষ বলল কিন্তু কেন?সে কিভাবে তার স্পেশাল মানুষ হলো।তার ভাবনাচিন্তার মাঝেই মাইজা চলে আসে।ও আসতেই সবাই গিয়ে গাড়িতে বসে।মেহবিন গাড়ি তে বসেও ভেবেই যাচ্ছে মায়ানের বলা কথাটা।তার মাথায় কিছুতেই ডুকছেনা যে মায়ান কি তাকে তার স্পেশাল মানুষ বলল কিন্তু কেন? গাড়ি এসে ওদের বাসার সামনে থামতেই তিনজনই নেমে পরে।মাইজা মায়ানকে বলে-

-”’এখন কি বাসায় যাবেন না?

-”’নাহ একটু পরে যাব তুমি যাও।

মাইজা আচ্ছা বলে ভিতরে চলে গেল।মেহবিন ও ভিতরের দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে হাতে টান লাগল।মেহবিন থম মেরে দাড়িয়ে পরে।সে বুঝতে পারে যে তার হাত কে ধরেছে তবুও সে পিছনে তাকাল না মায়ান হাত ধরে রেখেই কানের কাছে মুখ এনে বলে-

-”’ পিচ্চি মাথায় বেশি চাপ দিও না।সঠিক সময়ে সব কারণ জানতে এবং বুঝতে পারবে।

তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে বলে-

-”’এবার বাসায় যাও।

মেহবিন এতক্ষণ দম আটকে ছিল।মায়ান ছেড়ে দিতেই দৌড়ে ভিতরে চলে যায়।মায়ান তাকিয়ে থাকে তার ছোটো মানবীর যাওয়ার পানে।তার অপেক্ষাকৃত হৃদয় যে ব্যাকুল হয়ে আছে তার কিশোরী প্রেয়সীকে নিজের মনের কথা জানানোর জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here