অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৭

0
1020

#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব :১৭

আমার সারাটাদিন,মেঘলা আকাশ,বৃষ্টি তোমাকে দিলাম☁
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।🌷

বৈশাখ মাসের আগমন হলো সপ্তাহ খানেক হবে।এর মধ্যেই প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি লেগেই থাকবে।আজ সকাল থেকে আকাশ মেঘলা।বৃষ্টি হবে হবে এমন ভাব।কিন্তু বৃষ্টি যেন আকাশ বেয়ে পড়তে নারাজ।মনে হচ্ছে কিছুতেই সে এখন ধরণীর বুকে ধরা দিতে রাজি নয়।তাইতো সকাল থেকে আকাশ মেঘলা হয়ে আছে তবুও বৃষ্টির দেখা নেই।মাঝে মাঝে আকাশে মেঘ ও ডাকছে।কিন্তু তবুও বৃষ্টির চিহ্ন নেই।মেহবিনের মনটা আজকে অনেক খারাপ।ভীষণ রকম খারাপ।যতটা খারাপ হলে মরে যেতে ইচ্ছে করে ততটাই খারাপ।ওর মন খারাপের সাধারণত তেমন কোনো কারণ থাকে না।শুধু শুধুই কারণে অকারণে মন খারাপ করে বসে থাকে।এই যেমন দেখা যায় হাসতে হাসতেই হঠাৎ করে চুপ হয়ে যাবে।তারপর অজানা কারণে জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকবে।যেন তার মতো কষ্টে আর কেউ নেই।এটাকে সাধারণত মুড সুইং বলে।যেটা টিনেজ বয়সে বেশি হয়।কিন্তু আজ মেহবিনের মন খারাপের একটা কারণ আছে।সেটা হলো বৃষ্টি না হওয়া।মেঘেদের আড়ালে বৃষ্টির এই লুকোচুরি খেলা তার মন খারাপ করে দিয়েছে।মেহবিন জানলার কাছ থেকে উঠে গিয়ে বিছানায় বসল।আজ বৃহস্পতিবার ছিল।তাই হাফ ক্লাস হয়েছে।যার কারণে বারোটা বাজেই ছুটি হয়ে গিয়েছে।রোজকার মতো আজও মায়ান ওদের বাসায় ড্রপ করে দিয়েছে।মায়ানের সাথে ওর সম্পর্ক আগের থেকে অনেকটাই ভালো হয়েছে।আগের মতো মেহবিন আর মায়ানকে তেমন একটা ভয় পায়না।মাঝে মাঝে মায়ান ওকে শাস্তির ভয় দেখালেও এখন পর্যন্ত কোনও শাস্তি না দেওয়ায় মেহবিনের ভয়টাও তেমন একটা নেই।মেহবিন বিছানায় শুয়ে আছে চুপ করে।আজকে সকালে যখন আকাশ মেঘলা দেখেছিল তখন মনে মনে অনেক খুশি হয়েছিল।ভেবেছিল আজকে স্কুল ছুটির পর যেভাবেই হোক এসে ভিজবে।মাইজাও ওর তালে তাল মিলিয়েছিল।কিন্তু বাসায় ফিরার পর যখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল কিন্তু তবুও বৃষ্টির দেখা পাওয়া গেল না তখন মেহবিন ভীষণ ভাবে আশাহত হলো।ও মন খারাপ করেই আরেকবার তাকাল বাইরে।নাহ বৃষ্টি পড়ছে না।মেহবিন আবারো চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বন্ধ করে ফেলল। কষ্টে এখন অনেক বেশি ঘুম পাচ্ছে মেহবিনের।সে মন খারাপের মাঝেই আস্তে আস্তে হারিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে।

———–
কারো উচ্ছ্বসিত কন্ঠে ঘুম ভেঙে যায় মেহবিনের।ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি ওর।তবুও অতি কষ্টে চোখ মেলে তাকাল।মাইজা উৎফুল্লিত কন্ঠে ডেকে চলেছে মেহবিন কে।মেহবিন উঠে বসে মাইজার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলে-

-”’সমস্যা কি তোর শান্তি তে ঘুমোতেও দিবি না?

মাইজা ওর রাগকে পাত্তা না দিয়ে আবারও উৎফুল্লিত হয়ে বলে-

-”’মেহু বাইরে তাকিয়ে দেখ তো একটু।

মেহবিন বিরক্ত হয়ে বলে-

-”’বাইরে কেন তাকাব।তুই কি আমার ঘুম থেকে জাগিয়েছিস বাইরে তাকানোর জন্য?

-”’আরে বইন তাকা না একবার।

মেহবিন অতিশয় বিরক্ত নিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়েই চোখ আটকে গেল।আস্তে আস্তে তার চোখে মুখে খুশির ঝলক ফুটে উঠল।মেহবিন বৃষ্টির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বলল-

-”’বৃষ্টি!

মাইজা বিছানা থেকে নেমে বলল-

-”হুম বৃষ্টি।ভিজবি না,আয় দ্রুত।

মেহবিন তারাতারি বিছানার পাশ থেকে স্কার্ফ নিয়ে গলায় পেচিয়ে মাইজার সাথে রুমের বাইরে চলে গেল।ড্রয়িং রুম পেরিয়ে মেইন দরজা খুলে ছাদের সিড়ির দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে ধমকের সুরে কেউ বলে উঠে-

-”’এখন দুইটায় ছাদে গিয়ে ভিজবি তো এক চড়।

ওরা ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে মিসেস রুকাইয়া হাতে খুন্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেহবিন আর মাইজা থম মেরে দাড়িয়ে রইল সেখানেই।মাইজা একটা ঢোক গিলে হাসার চেষ্টা কলে বলল-

-”হে হে আন্টি,একটু ভিজি না প্লিজ।কিছু হবে না।আমরা বেশিক্ষণ ভিজব না।গায়ে একটু বৃষ্টির ছিটে ফোটা লাগিয়েই চলে আসব প্রমিজ।

মিসেস রুকাইয়া একরোখা হয়ে বললেন-

-”’নাহ মানে নাহ।তোরা দুইটাই বৃষ্টিতে ভিজলে জর বাধিয়ে বসে থাকিস।কোনোভাবেই না।

মেহবিনের মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেল ওরা দুজন দুজনেরমুখ চাওয়াচাওয়ি করে ভিতরে যেতে নিলেই কেউ বলে ওঠে-

-”’একদিন ভিজলে কিছু হবে না আন্টি।

ওরা সবাই ফিরে তাকিয়ে দেখে মায়ান সিড়ি বেয়ে নামছে।মায়ান নেমে এসে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে মিসেস রুকাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-

-”’একদিন ভিজলে কিছু হবে না।তাছাড়া মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে ভেজা ভালো।এতে মন আর শরীর দুটোই ভালো থাকে।তাছাড়া বড় বড় সাইনটিস্টরাও এমনটাই বলেছেন যে বৃষ্টির পানি কোন কোনো সময় শরীরে লাগালে ক্ষতির চেয়ে বরং ভালোই হয়।তাই আমার মনে হয় ওদের না করা উচিত হবে না আন্টি।

মায়ানের কথাগুলো মন দিয়ে শুনলেন মিসেস রুকাইয়া।একদম ফেলে দেওয়ার মতো কথা না।মিসেস রুকাইয়া আলতো হেসে সম্মতি জানাতেই মেহবিন আর মাইজা এক দৌড়ে লিফট ছাড়াই সিড়ি ভেঙে ছাদে চলে গেল।মাইজা আর মেহবিন ছাদে গিয়ে লাফাতে শুরু করে।ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।মেহবিন আর মাইজা আনন্দে মেতে উঠল।দুই কিশোরী এদিক সেদিক লাফালাফি করছে আর হাসছে।ওদের হাসির ঝলকানি তে চারপাশ মুখোরিত হয়ে যাচ্ছে।মেহবিন লাফাতে লাফাতে এক পর্যায়ে কি মনে করে যেন পিছনে তাকাল।মায়ান দাড়িয়ে আছে।তবে সে বৃষ্টি তে ভিজছে না।ছাদের দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহবিনের দিকে।ওর দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল যার কারণে অকারণেই মেহবিন লজ্জায় মিইয়ে গেল।এতক্ষণ লাফালাফি করা মেয়েটা হঠাত করেই দাড়িয়ে মাথা নিচু করে রইল।মাইজা ওকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হাত দিয়ে একটু ধাক্কা দিয়ে বলল-

-”কিরে এভাবে দাড়িয়ে পরলি কেন ভূত দেখলি নাকি।

মেহবিন আবারো তাকায় মায়ানের দিকে।মায়ান এখনও তার দিকেই তাকিয়ে আছে।মাইজা মেহবিনের দৃষ্টি অনুসরণ করে দরজার দিকে তাকাতেই মায়ানকে দেখতে পায়।মাইজা খুশি হয়ে মায়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে-

-”’মায়ান ভাই,এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন?আসুন আপনিও ভিজবেন আমাদের সাথে।

মাইজার কথায় ঘোর ভাঙে মায়ানের।সে মেহবিনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাইজার দিকে তাকিয়ে বলে-

-”’নাহ তোমরা ভিজো।আমি ভিজবনা।তার চেয়ে আমি বরং এখানে দাঁড়াই।

মাইজাও জেদ নিয়ে বলল-

-”’না না আপনাকেও আমদের সাথে ভিজতে হবে।আপনার জন্য আমরা ভিজতে পারছি।এখন আপনাকেও ভিজতে হবে।চলুন।

বলেই মায়ানের হাত ধরে ভিতরে নিয়ে আসল মাইজা।মায়ান গিয়ে দাড়াতেই মেহবিনের হার্ট জোরে জোরে বিট করা শুরু করে।কেন এমন হচ্ছে সে নিজেও জানেনা।মায়ানের কাছে মেহবিনকে এখন কোনো অপ্সরীর থেকে কম লাগছে না।সাদা গোল ফ্রক,সাদা প্লাজু,সাদা স্কার্ফ।মুখে নেই কোনো কৃত্রিম ছোয়া,আছে শুধু মায়া।মায়ানের ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মেহবিনের মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে।সে বুঝতে পারছে না মায়ান কেনো তার দিকে এতক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে।তাদের দুজনের ভাবনার মধ্যে কিছুপড়ে যাওয়ার শব্দে দুজনের ঘোর কাটে।ওরা পাশে তাকিয়ে দেখে মাইজা পড়ে গিয়েছে।এমন একটা পরিস্থিতিতে মাইজার এভাবে পড়ে যাওয়ায় মায়ান প্রথমে বিষয়টা ধরতে পারেনি।পরীক্ষনেই ব্যপারটা বোধগম্য হতেই মায়ান এসে মাইজার সামনে এক হাটূ ভেঙে বসে বলে-

-”’ঠিক আছো মাইজা?পড়ে গেলে কিভাবে?

মাইজা কোনো জবাব দেয়না।তার এখন ভীষণ লজ্জা লাগছে।নিজের ক্রাশের সামনে এভাবে পড়ে যাওয়াটা নেহাতই লজ্জাজনক।সে কোনোভাবে উঠে দাঁড়িয়ে মেহবিনকে বলে-

-”গায় কাদা মেখে গিয়েছে।ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে।আমি নিচে গেলাম।তুইও তারাতারি আসিস।

বলেই এক দৌড়ে নিচে নেমে পড়ে।মায়ান বুঝতে পারল না মাইজার এইভাবে চলে যাওয়ার কারণ।সে মেহবিনের দিকে ফিরে কিছু বলবে তার আগেই মেহবিন খিলখিল করে হেসে উঠল।মায়ান কপাল কুঁচকে মেহবিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-

-”’তোমার ফ্রেন্ড পড়ে গেল আর তুমি এভাবে হাসছ?

মেহবিন হাসতে হাসতে বলল-

-”’তো হাসব না।জানেন বৃষ্টির সময়ে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য কি?

মায়ান আগ্রহ নিয়ে বলে-

-”কি?

-”’বৃষ্টির সময়ে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হলো কাউকে ধপাস করে পড়ে যেতে দেখা।

বলেই আবারো খিলখিল করে হেসে উঠে।মায়ান বোকা বনে গেল কথাটা শুনে।কি সাংঘাতিক মেয়ে।কাউকে পরে যেতে দেখা নাকি সুন্দর দৃশ্য।মায়ান কিছুক্ষন মেহবিনের দিকে তাকিয়ে থেকে বাকা হাসে।ওর মাথায় মেহবিনকে জ্বালানোর একটা বুদ্ধি এসেছে।সে বাকা হেসে মেহবিনকে এক টানে নিজের কাছে এনে দাড় করিয়ে বলে-

-”তাহলে তোমাকেও ফেলে দেই।আমিও নাহয় একটু দেখলাম বৃষ্টির দিনে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।আর তোমার শাস্তিও পাওয়া হলো।

মেহবিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল –

-”ফেলে দেন।

মায়ান অবাক হয়ে যায় মেহবিনের কথা শুনে।এই মেয়ে কি এখন তাকে ভয় পায় না।নাকি বুঝে গিয়েছে যে কিছুই করবে না শুধু ভয় দেখানোর জন্যই এমন করে।মায়ান অবাক হয়ে বলে-

-”’ভয় পাও না এখন আমাকে?

মেহবিন দুষ্ট হেসে বলে-

-”নাহ আপনাকে দেখলে এখন আর আমার ভয় ভয় লাগে না বরং আপনাকে দেখলে এখন আমার প্রেম প্রেম লাগে।

বলেই মায়ান কে একটা ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে যায়।মায়ান কিছু সময় চুপ করে থেকে হঠাৎই হো হো করে হেসে উঠে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here