#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব :২২
🍁
-”সত্যি আম্মু,কায়াপির বিয়ে ঠিক হয়েছে?
মেহবিন উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠে।চোখে মুখে খুশির ঝলক।মিসেস রুকাইয়াও হেসে বলেন-
-”হ্যা রে।তোর খালা কল করে বললো এই মাসের ২০ তারিখ বিয়ে ঠিক হয়েছে ।আমাদের আগেই যেতে বললো।
মেহবিন বলল-
-”হ্যা তো যাব।উফ আম্মু আমার যে কি খুশি লাগছে।কায়াপির বিয়ে।ভাবতেই খুশি লাগছে।
মিসেস রুকাইয়া বললেন-
-”হয়েছে এবার।আমাদের কাছে আজকের দিনটাই সময় আছে।যা গোছগাছ করার আজকের মধ্যেই করতে হবে।তুইও তোর সবকিছু গুছিয়ে ফেল।
মেহবিন একটু ভেবে বললো-
-”আচ্ছা মাইজারা যাবে না আমাদের সাথে?
-”যাবে না কেনো?এমন কোনোদিন হয়েছে যে আমরা ওদের ছাড়া কোথাও গিয়েছি।তোর খালা আমাকে বারবার বলেছে রুনাদের সাথে নিয়ে আসতে।আর রুনাকেও কল করবে বলেছে।
-”তাহলে আমি যাই গিয়ে মাইজাকে বলে আসি।
মেহবিন নাচতে নাচতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।মিসেস রুকাইয়াও হালকা হেসে নিজের কাজে চলে যান।আজ প্রায় তিনবছর পর সে সিলেট যাবে।মিসেস রুকাইয়ারা তিনবোন এক ভাই।মেহবিনের নানা নানী কেউ জীবিত নেই।এখন তিনবোনের খবরাখবর তার ভাই ই রাখে।মিসেস রুকাইয়ার দুই বোনের বিয়ে সিলেটেই হয়েছে।আর তারা সিলেটেই থাকে।শুধুমাত্র তিনিই ঢাকা থাকেন।কায়া তার ছোট বোনের মেয়ে।কায়ার বিয়েও সিলেটে মিসেস রুকাইয়ার পিতৃগৃহে হবে।যেখানে বর্তমানে তার ভাই এর পরিবার থাকে।এতদিন পর নিজের পিতৃগৃহে যেতে পারবেন ভেবেই খুশি লাগছে তার।যতই তার বাবা জীবিত না থাকুক।তার বাবা মায়ের সৃতি গুলো তো জীবিত আছে।মিসেস রুকাইয়ার চোখের কোণে জমে থাকা জল মুছে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
——-
🍁
মেহবিন মাইজার ঘরে বসে আছে।মাইজাকে কায়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে বলার পর দুইজনের খুশি দেখে কে।দুইজন এই সেই কত কি প্ল্যান করছে।মেহবিন আর মাইজা তো এটাও ঠিক করেছে যে তারা বিয়েতে কি পড়বে।সেই অনুযায়ী সিলেট গিয়ে শপিং ও করবে।তাদের কথার মাঝেই রাফিজ এসে মাইজার মাথায় গাট্টা মেরে বলে-
-”যেই শুনলি একটা অনুষ্ঠান আছে সেই কিভাবে পেত্নি সাজা যায় ওই প্লানে আছিস।না জানি কোন হতভাগা তোদের রূপ দেখে বেহুঁশ হয় আল্লাহ মালুম।
রাফিজ মুখটা কে যথেষ্ট আফসোসে ভরা বানানোর চেষ্টা করছে।মাইজা মুখ ভেঙচি দিয়ে বলে-
-”তুই চুপ করতো।সবাই কি তোর মতো।আমি কি বেশি সাজি নাকি যে বেহুঁশ হবে।আর আমার সাজ দেখে কত ছেলে ক্রাস খেয়ে বেহুঁশ হয় সেই খবর কি রাখিস?
রাফিজ মাইজার চুল টেনে দিয়ে বলল-
-”লজ্জা করে না নিজের ভাইয়ের সামনে এসব বলিশ।
-”উফ ভাইয়া ছাড়।
মেহবিন মুখ টিপে হাসছে দুইভাইবোনের ঝগড়া দেখে।তারপর হাসি সরিয়ে মুখে যথেষ্ট কষ্টের ছাপ এনে বললো-
-”বাহ ভালোই তো।আমাকে কি দেখা যাচ্ছে না?।নাকি কেউ পাত্তা দিচ্ছে না।হুহ পাত্তা দিবেই বা কেনো আমি কার কি হই।
রাফিজ বুঝতে পারল কথাটা তাকে মিন করেই বলেছে।রাফিজ মুচকি হেসে মেহবিনের মাথায় হাত দিয়ে বললো-
-”তুই কেউ না মানে।তুই হলি আমার আরেকটা বোন।আসলে সত্যি হলো তুই আমার একমাত্র বোন।মাইজাকে তো ডাস্টবিনে পেয়ে এনেছিলাম।ছোট বেলায় তো এমন ছিলো না।চেহারাটা মায়া মায়া ছিল।কে জানত বড় হয়ে এমন পেত্নি হবে।আগে জানলে কোনোদিন আনতাম না।
মেহবিন খিলখিল করে হেসে ফেলে।মাইজার তো রাগে নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছা করছে।আর রাফিজ আর মেহবিন তো হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
-”এখানে দেখছি ভাইবোনের খুনসুটি চলছে।
মায়ান কথাটা বলতে বলতে রুমে ঢুকল।রুমে ঢুকেই চোখাচোখি হয়ে গেল মেহবিনের সাথে।মেহবিন চোখ সরিয়ে নিলেও মায়ান এস ইউসোয়াল খানিক সময় নিয়ে তাকিয়ে থেকে তারপর চোখ ঘুরিয়ে রাফিজের দিকে তাকিয়ে বললো-
-”কি নিয়ে এত খুনসুটি শুনি?
রাফিজ হাসতে হাসতে কিছু বলবে তার আগেই মাইজা কাদো কাদো ফেস করে বললো-
-”দেখুন না মায়ান ভাই।ভাইয়া বলছে আমাকে নাকি সাজলে পেত্নি লাগে।আপনিই বলুন আমাকে কি সাজলে সত্যিই এত খারাপ লাগে।
মায়ান যথেষ্ট সিরিয়াস সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললো-
-”মোটেও তেমন না মাইজা।তোমাকে সাজলে খুব সুন্দর লাগে।রাফিজের কথা ধরো না ।ও তোমাকে রাগাতে বলেছে এসব।
মাইজা লাজুক হাসল।রাফিজ মায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে-
-”উহফ ভুলে গিয়েছিলাম।মায়ান আমাদের একটা রিলেটিভসের বিয়ে ঠিক হয়েছে।সিলেটে মেহবিনের নানুবাড়িতে।আমাদের দাওয়াত পড়েছে।তুইও যাবি।
-”’আমি গিয়ে কি করবো।তোরা গিয়ে ঘুরে আয়।আমি যাবনা।
মেহবিন ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো-
-”যাবেন না মানে কি?আপনি না গেলে আমি কিভাবে থা-
এইটুকু বলতেই মেহবিন থেমে গেল।এটা কি বলতে যাচ্ছিল।এখনি তো সব শুনে ফেলত সবাই।মায়ান পুরোটা বুঝতে পেরে মনে মনে হাসলেও বাইরে না বুঝার ভান করে বলে-
-”কি বললে,বুঝিনি।আরেকবার বলবে প্লিজ।
মেহবিন দুইদিকে ঘন ঘন মাথা নেড়ে বললো-
-”কিছু না,কিছু না।
মায়ান হাসল।মাইজা এবার জোর করতে লাগল মায়ানকে।
-”মায়ান ভাই প্লিজ চলুন না আমাদের সাথে প্লিজ প্লিজ।
-”আরে-
মায়ান কিছু বলতে নিতেই মিসেস রুনা ঘরে ঢুকে বললেন-
-”কোনো কথা শুনবোনা মায়ান।তুমি আমাদের সাথেই যাচ্ছ।
অবশেষে সবার জোরাজুরিতে মায়ানের নাকোচ করা কেউ মানল না।অগত্যা মায়ান রাজি হলো।মায়ান রাজি হওয়াতে মাইজা যেন খুশিতে শেষ।মেহবিন ও খুব খুশি হয়েছে কিন্তু সেটা প্রকাশ করল না।
—-
বিকেল চারটা।মেহবিন,মাইজা,মায়ান,রাফিজ সবাই ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আড্ডার টপিক সিলেট গিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরবে,কি পড়বে এসব।ওরা চারজন বসে থাকলেও কথা শুধু বলছে মেহবিন আর মাইজা।ওদের কথা যেন ফুরাতেই চাইছেনা।রাফিজ গালে হাত দিয়ে বারবার হাই তুলছে।আর মায়ান মেহবিনের দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে আছে।মেহবিন যে এত কথা বলতে সেটা ওআর জানা ছিলো না।এদিকে মেহবিনের কোনো ধ্যান নেই।যদি দেখতে পেতো মায়ানে এমন চাহনি তাহলে হয়তো লজ্জায় এতক্ষনে মিইয়ে যেত।মেহবিন আর মাইজার কথার টপিক পাল্টে এবার এলো। তারা সিলেট যাবে কিভাবে।রাফিজ কে জিজ্ঞেস করতেই রাফিজ বললো-
-”কেনো আমাদের তো নিজেদেরই কার আছে।ওটা দিয়েই যাবো।
মেহবিন আর মাইজা এবার আবদার করে বসলো তারা ট্রেনে করে সিলেট যাবে।প্রাইভেট কার তাদের ভালো লাগেনা।রাফিজ ধমক দিয়ে বললো-
-”তোদের নকশার শেষ নেই।এখন আবার ট্রেনে যাওয়া নিয়ে আবদার করে বসে আছিস।
মাইজা একরোখা হয়ে বললো-
-”প্লিজ ভাইয়া আমরা তো সবসময়ই কারে যাই এবার নাহয় ট্রেনে যাব।প্লিজ এমন করিস না।
রাফিজও একরোখা হয়ে বললো-
-”বলেছি না মানে না।আর মেহু বাসে উঠে বমি করে তুই জানিস না।
মেহবিন ইনোসেন্ট ফেস করে বলে
-”সেটা তো বাসে। আমরা তো ট্রেনে যেতে চাই।
তবুও রাফিজ না করে দিল।তারপরও মেহবিন আর মাইজা প্লিজ প্লিজ বলে পাগল করে দিচ্ছে।অবশেষে বিরক্ত হয়ে ছাদ থেকেই নেমে যায় রাফিজ।মাইজাও তার পিছনে পিছনে যায়।মেহবিন ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।তার যে ইচ্ছা করছে ট্রেনে যেতে।ছোট থেকে রিক্সা আর প্রাইভেট কার ছাড়া আর কিছুতে উঠেনি।একবার পিকনিকে বাসে করে যেতে গিয়ে বমি করে অবস্থা নাজেহাল হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু তবুও মেহবিনের বাসে উঠতেই ভালো লাগে।
-”মন খারাপ করছো কেনো?
মায়ানের কথায় হুশ ফিরে মেহবিনের।মেহবিন মায়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে বলে-
-”কিছুনা।
-”মিথ্যা বলছো।আমি জানি তুমি ট্রেনে করে যাওয়া নিয়ে মন খারাপ করছো।
মেহবিন একটা শ্বাস ছেড়ে বললো-
-”’হুম আসলেই তাই।আমি ট্রেনে চড়ে যেতে চাই মায়ান ভাই।
-”ঠিক আছে।
মেহবিন কপাল কুঁচকে বলে-
-”কি ঠিক আছে?
-”আমি ব্যবস্থা করবো।
মেহবিন বিষ্ময় নিয়ে বলে-
-”সত্যিই?কিন্তু কিভাবে?
-”এসব তোমার চিন্তা করতে হবে না।যা করার আমিই করবো।
মেহবিন চেয়ার থেকে উঠে মায়ান কে বলে-
-”তাহলে আমি যাই গিয়ে প্যাকিং শুরু করে দেই।
মায়ান হেসে সম্মতি জানাতেই মেহবিন চলে যায়।মায়ান আনমনেই বলে-
-”কবে বলতে পারবো মেহু আমার মনের কথাগুলো তোমাকে।কবে ব্যক্ত করতে পারবো তোমায় ঘিরে থাকা আমার অনুভুতি।অন্তরালের অনুভূতি গুলোর সাথে কবে তোমায় পরিচয় করিয়ে দিব❤।
চলবে……