আমার_গল্পে_তুমি ২২_পর্ব
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
,
একি তুমি আর্দ্র কে এগুলো কি দিচ্ছো?? আর ভাবি ওই মেয়েটা আর্দ্র কে কি সব ভুলভাল জিনিস গায়ে লাগিয়ে দিচ্ছে আর তুমি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছো??
আহ লিজা এভাবে চেঁচাচ্ছো কেনো দেখছো তো আর্দ্র ঘুমাচ্ছে আর ইয়ানা কোনো ভুলভাল জিনিস দিচ্ছে না ,, আমিই ওকে এটা দিতে বলেছি, ইয়ানা আর্দ্র কে তেল মালিশ করে দিচ্ছে।
কিহ?? তেল? ইয়াক, আর্দ্র যদি জানতে পারে ওকে তোমরা এসব ভুলভাল জিনিস দিচ্ছো তাহলে কিন্তু ও ভীষণ রেগে যাবে।
আপু তেল দেওয়া হয়ে গেছে আমি বরং যায় পরশ কে পড়াতে হবে,, আর হ্যাঁ লিজা ম্যাম কাউকে তেল দিলে তার কোনো ক্ষতি হয়না বরং ভালোই হয় সেটা আপনি না বুঝলেও আমি বুঝি, আপু আমি গেলাম রুমে পরশ একা আছে।
দেখলে ভাবি মেয়েটা কীভাবে আমায় ইনসাল্ট করে গেলো?? ওর এতো সাহস কীভাবে হয়।
আহ লিজা এতো রাগ করছো কেনো, আচ্ছা শোনো তোমাকে আমার একটা কথা বলার আছে।
কিহ বলো। বিরক্তি নিয়ে বলল লিজা
বলছি যে অনেক তো হলো তুমি আর কত আর্দ্রর জন্য অপেক্ষা করবে আর আর্দ্র ও তো বয়স কম হচ্ছে না তাই আমি বলছি কি তুমি তোমার মা বাবা কে আসতে বলো এবার তোমাদের বিয়েটা বরং দিয়ে দেওয়াই ভালো, আমি অনিক আর মা বাবা কে বলবো।
সত্যি বলছো ভাবি?? ইস তুমি তো আমাকে একদম খুশি করে দিলে আমার যে কি খুশি লাগছে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না আমি এখুনি যাচ্ছি মম আর ড্যাড কে ফোন করতে, আমি ওদের সামনের সপ্তাহেই আসতে বলছি।
আচ্ছা ঠিক আছে যাও।
এবার জমবে মজা, আসল খেলা তো এখন শুরু হবে আমার কিউট দেবর মশাই,, আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল অন্তরা।
ইয়ানা পরশকে পড়ানো শেষ করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে ডয়িং রুম পার করে কেবলি বেরোতে যাবে তখনি শুনতে পেলো অন্তরা বাড়ির সবাইকে বলছে আর্দ্র আর লিজার বিয়ের কথা অন্তরার কথাশুনে অনিক সহ আর্দ্রর বাবা মা বলল।
এসব কি বলছো অন্তরা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?? তুমি জানো না লিজা কত মর্ডান ও আমাদের সাথে খাপখাইয়ে নিতে পারবে না।
হুমম তেমার মা ঠিকি বলেছে অন্তরা, লিজা যতই বলুক ও আর্দ্রকে পছন্দ করে তবুও আমার মনে হয় না ও পারবে।
আরে ওকে তো একটা সুযোগ দিয়ে দেখতেই পারি আমরা তাইনা, আর ও সেই ছোট থেকে আর্দ্র কে পছন্দ করে আমি লিজাকে বলেছি ওর বাবাকে ফোন করে আসতে ওনারা মনে হয় সামনের সপ্তাহে আসবে,, ইয়ানার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল অন্তরা।
কিন্তু অন্তরা তুমিই তো সেদিন বললে,, আহ অনিক সেদিন বলেছি তো কি হয়েছে আমি আজকে দেখেছি আর্দ্রর অসুস্থ হওয়ায় লিজা কতটা পাগল হয়ে গিছিলো।
ওদের কথা শুনে ইয়ানা ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেলো,,, আগুন লাগিয়ে দিয়েছি এবার শুধু দেখার পালা কি হয়।
কিন্তু অন্তরা আর্দ্র যদি রাজি না হয় তখন??
আরে তোমাকে ওতো ভাবতে হবে না আর্দ্রকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার তুমি এতো চিন্তা করো না, আর হ্যাঁ তোমার সাথে কথা আছে আমার।
দেখো যেটা ভালো মনে হয় করো, আর্দ্র বিয়ে করলেই হলো নয়তো ও যা ছেলে দেখা গেলো বিয়ে আর করলো না আর আমাদের শেষ বয়সে ওর বউটাও দেখা হলো না,।
বাবা আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আর্দ্রর বউ আমি আপনাকে দেখিয়েই ছাড়বো তাও আবার সুন্দরী বউ,, বাঁকা হেসে বলল অন্তরা অনিক তো হা করে ওর বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে কি হচ্ছে বেচারা কিছুই বুঝতেছে না।
,,,,,,
রাগে রাগে কোনো রিক্সা না নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছে ইয়ানা আর একা একাই বকবক করছে,, কি ভাব ওনি বিয়ে করবে কত সখ করুক গা বিয়ে তাতে আমার কি আমি কেনো এতো ভাববো ধুত ভালো লাগে না ওনি বিয়ে করবে টা কেনো ,, বিয়ে না করলে কি হয় না ওনি তো ওনিই বিয়ে করবেই,, এভাবে নিজে নিজেই ভুলভাল বকছে আর হাঁটছে ইয়ানা রাগে চোখে পানি চলে এসছে এভাবে হাঁটতে হাঁটতেই বাড়ি চলে এসেছে , পায়ের সান্ডেল টা ছুড়ে ফেলে ধপধপ করে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে শুয়ে পড়লো,,।
—কিরে দরজা আটকে দিলি কেনো?? খাবি না??
—তুমি যাও তো আম্মু খেয়ে শুয়ে পড়ো আমি খাবো না ভালো লাগছে না।
—খাবি না কেনো?? কি হয়েছে মাথা বেথ্যা করছে নাকি আয় তেল দিয়ে দিই।
— আম্মু তুমি যাও প্লিজ আমি খাবো না ভালো লাগছে না।
–কি যে হলো মেয়েটার,, আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়।
আরে কি হয়েছে আমাকে এভাবে টেনে আনলে কেনো অনিক তুমি জানো না আমার এই অবস্থায় এভাবে টানাটানি করা নিষেধ।
ওহ সরি,, কিন্তু তুমি আমায় এটা বলো যে তোমার মাথার মধ্যে কি চলছে তুমি হঠাৎ করে আর্দ্রর বিয়ে দিতে চাইছো কেনো তাও আবার লিজার সাথে ব্যাপারটা কি বলো তো।
আরে তুমি তো জানোই আর্দ্র আর ইয়ানার বিষয় টা, দুজন দুজনকে মনে মনে পছন্দ করে ঠিকি কিন্তু বলছে না আর আজকে আমি ইয়ানার সামনে আর্দ্রর বিয়ের কথা বলেছি দেখবা ও সারারাত ভেবে কালকে ঠিকই আর্দ্র কে ওর মনের কথা বলে দিবে, আর আমাদের আর্দ্র কালকে ওর বিয়ের কথা শুনলে ও ইয়ানা কে হারানোর ভয়ে নিজের মনে যা আছে সেটা বলে দেবে আর এটাই আমার প্লান।
তুমি শিওর তো তোমার এই প্ল্যান কাজ করবে?? ওরা দুজন দুজনের মনের কথা বলবে??
আরে আমি ১০০% শিওর আর তাছাড়া তুমি দেখলে না পরশের জন্মদিন এর দিন ওতো ঝড় বৃষ্টির রাতে আর্দ্র কেমন ছুটে গিয়েছিলো ইয়ানার কাছে আবার আর্দ্র লিজার হাত ধরায় ইয়ানা কেমন পা পুড়ে যাওয়ার অভিনয় করল,, এমন আরো অনেক কারণ আছে, আমি ওদের দুজনের চোখে একে অপরের জন্য ভালোবাসা দেখেছি,, তুমি শুধু দেখতে থাকো কাল সকালে কি হয়, আমি তো শিওর আর্দ্র লিজাকে বিয়ে করার কথা শুনে সাফ মানা করে দিবে।
অন্তরা এতোটা শিওর হওয়া ভালো নয় কিন্তু, দেখো যেনো হিতে বিপরীত না হয়ে যায়।
,,,সকালে,,,,
আর্দ্র রেডি হয়ে নিচে নেমে সবার সাথে খাওয়ার টেবিলে বসল তাও আবার লিজার পাশে এতে তো লিজা লজ্জায় মাথায় তুলতে পারছে না তখনি কবির বলল,,, আর্দ্র তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।
হ্যাঁ বাবা বলো, খেতে খেতে বলল আর্দ্র।
বলছি যে আমরা সবাই ভেবেছি যে তোর এবার বিয়েটা করা দরকার এবার কিন্তু তুই না করতে পারবি না,, তাই আমরা লিজার বাবা মাকে আসতে বলেছি।
কবিরের কথা শুনে আর্দ্রর গলায় খাবার আটকে গেলো, হঠাৎ তোমাদের মাথায় আমার বিয়ের ভূত চাপলো কেনো, আর তোমরা লিজার বাবা মাকেই বা আসতে বলেছো কেনো??
কারণ আমরা ঠিক করেছি লিজার সাথেই তোর বিয়ে দেবো কেননা লিজা তোকে ছোট বেলা থেকে চেনে জানে বোঝে তাই আমরা ঠিক করেছি লিজাকেই তোর বউ করে আনবো,,, এদিকে তো লিজার লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে।
কবিরের কথা শুনে আর্দ্র জোরে বলল হোয়াট??
দেখেছো অনিক আমি বলেছিলাম না আর্দ্র না করে দেবে দেখেছো আমার কথা মিললো তো, আমি আগেই জানতাম এখন দেখবা আর্দ্র ইয়ানার কথাটা বলবে। ফিসফিস করে অনিকের কানে বলল অন্তরা
আহ অন্তরা তুমি একটু চুপ থাকবা আগে দেখো তো আর্দ্র কি বলে।
ওকে তোমরা যখন ঠিকিই করে নিয়েছো কথা যখন দিয়েই ফেলেছো তখন ঠিক আছে আমি বিয়ে করে নেবো,, আমার খাওয়া শেষ আমি আসছি কথাটা বলে আর্দ্র অফিসের উদ্দেশ্য চলে গেলো।
অন্তরা কেবল গ্লাসে জুস নিয়ে খাচ্ছিলো আর্দ্রর কথা শোনে জুসটা গলায় আটকে গেলো, কাশতে কাশতে ভয়ে ভয়ে অনিকের দিকে তাকিয়ে দেখলো অনিক খাইয়া ফেলাইমো একটা লুক নিয়ে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে,, এদিকে তো লিজা খুশিতে হা করে আর্দ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ওর যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না ,, অন্তরা ভয়ে ঢোক গিলে বলল,,, এটা কি হলো এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না , এখন কি হবে তাহলে??
চলবে,,,,??