#অব্যক্ত ভালোবাসা
#পর্ব :৩৬(স্পেশাল পর্ব)
#সুমাইয়া ইসলাম নিশা
মেহবিনের সকাল সকাল ঘুম ভাঙল।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।আজকে প্রায় অনেকদিন পর তার ভালো ঘুম হলো।পুরো রাত সে ঘুমোতে পেরেছে।মনটাও ভালো লাগছে।মেহবিন বেড থেকে নামতেই মাইজা ওয়াশরুম থেকে বেরুলো।মাইজা মেহবিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো-
-”গুড মর্নিং।
-”গুড মর্নিং।
মেহবিন মুচকি হেসে বলতেই মাইজা কপালে ভাঁজ ফেলে বললো-
-”সত্যিই কি আজকের মর্নিং টা তোর জন্য গুড।
মেহবিনের হুশ ফিরে এলো।মাইজার কথার অর্থ বুঝতে পেরে মেহবিনের মন আবারো কালো মেঘে ছেয়ে গেলো।আজকে যে মাইজার আর মায়ানের বিয়ে।কিন্তু তার তো মন খারাপ করা নিষেধ।মেহবিন ঠোটের হাসি প্রসারিত করল।তারপর মাইজার কাধে হাত রেখে বললো-
-”অবশ্যই গুড।আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা।
মেহবিন কথাটা বলে এক সেকেন্ড ও দাড়ালো না।ওয়াশরুমে চলে গেলো।মাইজা ঠোট গোল করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল।
মায়ান আজো নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে।তার চোখে মুখে আধার নেমে আসছে।নিজের ঘরের বেলকনিতে এক পা ভেঙ্গে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।হৃদয়ের যন্ত্রণা তাকে কুরে কুরে শেষ করে দিচ্ছে।মেহবিনকে ছাড়া সে অন্য কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে চায়না।কিন্তু তার কি করার আছে।মায়ান চোখ বন্ধ করল।নিজমনেই গুনগুনিয়ে গাইতে লাগলো-
-pas aaye
Dooriyaan phir bhi kam naa hui
Ek adhuri si hamari kahani rahi
Jaa mile..ja mile
Isq saccha wahi
Jisko milti nahi mazilein…….manzilein
Rang thhe,noor tha
Jab kareeb tu tha
Ek jannat sa tha,yea jahaan
Waqt ki ret pe kuch mete naam sa
Likh ke chhod gaya tu kahaan
Hamari adhuri kahani
Hamari adhuri kahani
Hamari adhuri kahani
Hamari adhuri kahani💔
মায়ানের চোখের কোণের জল গড়িয়ে পড়ল।ছেলেদের নাকি কাদতে নেই।কিন্তু এটা কি সত্যিই যুক্তিসংগত কথা হতে পারে।ছেলেরাও তো মানুষ। তাদেরো তো কষ্ট হয়।তাদেরো তো অনুভূতি আছে।হারানোর যন্ত্রণা আছে।তাহলে ছেলেদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে কেনো।কাদার অধিকার সবার আছে।মায়ান হুট করেই বসা থেকে দাড়িয়ে পড়ে।মাথার চুলগুলো দুহাতে খামছে ধরে নিজেকে শান্ত করে তারপর মনকে ধাতস্থ করে বলে-
-”আমাকে মেহবিনের সাথে কথা বলতেই হবে।শেষবারের মতো হলেও।
মায়ান ঘর থেকে বেরোয়।তার মন বলছে মেহবিন এখন ছাদে।সে লিফট দিয়ে দ্রুত ছাদে চলে যায়।ছাদে গিয়ে দাড়াতেই তার ধারণা সঠিক হয়।মেহবিন ছাদের রেলেং এর উপর দুইহাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।মায়ান মেহবিনকে দেখে নিজের বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে।নিজের উপর ঘেরাও করে রাখা সব বিধিবদ্ধ ভেঙে ফেলে।ধীর পায়ে এগোতে থাকে মেহবিনের দিকে।মেহবিনের একদম পিছনে গিয়ে দাড়ায়।আরো উষ্ণ নিঃশ্বাস মেহবিনের ঘাড়ে পড়তেই মেহবিনের মস্তিষ্ক সচল হয়।কে এসেছে দেখার জন্য পিছনে ঘুরতে নিতেই মায়ান পেছন থেকে মেহবিনকে জড়িয়ে ধরে।মেহবিন থমকে যায়।শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল শ্রোত বয়ে যায়।হ্যা এই স্পর্শ সে আগেও অনুভব করেছে ।এই স্পর্শ তার কাছে অতি কাছের,পরিচিত।মেহবিন শ্বাস আটকে রেখে বিক্ষিপ্ত হয়ে বললো-
-”কি করছেন।
মেহবিন ছাড়ানোর জন্য নড়তে লাগলে।তাতে বিশেষ লাভ হলোনা।মায়ান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।মেহবিন তবুও থামলো না।সারাজীবনে শরীরে যত শক্তি সন্চয় করেছিল তার সব এখন মায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ব্যায় করছে।মায়ান কতিপয় বিরক্ত হলো।তারপর বিরক্ত নিয়েই বললো-
-”নড়ছো কেনো এতো?প্লিজ নড়ো না।আই ফিল বেটার নাউ।
মেহবিন থেমে গেলো।মায়ানের কথার ঝলকানিতে তার অন্তরের প্রশান্তি এলো।তবে সেটা বেশিক্ষন টিকলোনা।মেহবিন গলার স্বর নিচে নামিয়েই বললো-
-”আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে কিন্তু আপনি আবারো নিজেকে ক্যারেক্টারল্যাস প্রমাণিত করলেন।
মেহবিনের কথার পরিপ্রেক্ষিতে মায়ান নিজের স্তম্ভিত ফিরে পায়।সত্যিই তো তার তো এখন মেহবিনকে ছোয়ার কোনো রাইট নেই।এটা যে মাইজা আর মেহবিন দুজনকেই ঠকানো হলো।মায়ান মেহবিনকে ছেড়ে দিল।মেহবিন পিছনে ঘুরে মায়ানের দিকে তাকাতেই বিষ্মিত হলো।এ কি অবস্থা মায়ানের।কিছুদিন আগেও তো ঠিখ ছিলো।মায়ানের বিধ্বস্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে মেহবিন আনমনেই জিজ্ঞেস করল-
-”আপনি কি কেদেছেন মায়ান ভাই?
মায়ান কিছু বললো না।শুধু হাসল।মেহবিন সেই হাসির দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপ করে বললো-
-”আমিও যে কি আপনি কেনো কাদবেন।আপনি তো নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে যাচ্ছেন।
মায়ান মেহবিনের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো-
-”আমি তোমাকে ভালোবাসি মেহু।
মেহবিনের চোখ স্থির হয়ে গেলো মায়ানের উপর।মায়ানের মুখ থেকে একবছর পর কাঙ্খিত কথাটা শুনতে পেয়ে মেহবিনের চোখ ভরে এলো।সে ফট করে মায়ানের বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে মায়ানকে।মায়ানের বুকে মাথা রেখেই হু হু করে কেদে দেয়।মায়ান ধরে না মেহবিনকে।তার ইচ্ছে তো করছে মেহবিনকে একদম নিজের বুকের ভিতর ঢুকিয়ে রাখতে।মায়ান শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।তারপর বললো-
-”আমি এই কথাটাই বলতে তোমার কাছে এসেছিলাম।আমি ভালোবাসি তোমাকে।আজকে এই মুহূর্তে না বললে আর কোনোদিন বলা হবেনা।তাই প্রথম আর শেষবারের মতো ব্যাক্ত করলাম আমার #অব্যক্ত ভালোবাসা।
মেহবিন মাথা তুলে তাকাল মায়ানের দিকে।চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়তেই মায়ান বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছে দিলো।তারপর করুন কন্ঠে বললো-
-”আই’ম সরি পিচ্চি।পারলে ক্ষমা করে দিও তোমার খবিশকে।
মায়ান দাড়ালো না।চলে গেলো।মেহবিনের চোখের প্রতিটি অশ্রুধারা তাকে দুর্বল করে দিতে এক মুহূর্ত সময় নেয়না।তবে তাকে যে দুর্বল হলে চলবেনা।
———————
মেহবিন রেডি হয়ে বসে আছে।আজ সে নরমাল একটা গাউন পরেছে।সাজসজ্জা নেই বললেই চলে।সে এখন ছাদে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে স্টেজে বসা মায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।যে বর্তমানে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে ব্যাস্ত।মায়ান আজ গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানি পরেছে।মায়ানকে এত সুন্দর লাগে কেনো।মেহবিন চোখ সরাল তড়িৎ গতিতে।কেনো শুধু অন্যের ব্যাক্তিগত সম্পদের দিকে তাকাবে।মেহবিন চোখ সরিয়ে অন্যদিকে হাটা দিতেই মিসেস রুকাইয়া কোথাথেকে ঝড়ের গতিতে এসে মেহবিনকে বললো-
-”মেহু যা তারাতারি গিয়ে মাইজা কে নিয়ে আয়।
বলেই আবার ঝড়ের গতিতে চলে গেলেন।মেহবিনের হৃৎপিণ্ড দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে।বুকের ভেতর ধিপ ধেপ করছে।মেহবিন নিজের পা দুটো চালিয়ে কোনোরকমে নিজের ফ্ল্যাটে গেলো।মাইজার ঘরের কাছে দাড়াতেই ওর ভ্রু কুচকে এলো।ঘরের দরজা ভেতর থেকে লাগানো।মেহবিন কপাল কুঁচকে কয়েকবানক করল।কোনো সাড়া এলোনা।মেহবিন এবার ধীর গতিতে মাইজাকে ডাকতে লাগলো।তবুও ভিতর থেখে কোনো সাড়া পাওয়া গেলোনা।মেহবিন এবার ভয় পেয়ে গেলো।সে জোরে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো-
-”মাইজা তুই ভিতরে দরজা লাগিয়ে কি করছিস।খোল না দরজা।মাইজা।
মাইজা তবুও সাড়া দিলো না মেহবিন ভয়ে কাঁপতে লাগলো।মাইজা কি খারাপ কিছু করছে।কিন্তু এমন তো করার কথা না।সে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে উপরে চলে গেলো।উপরে গিয়ে জোরে বলে ফেললো-
-”সবাই প্লিজ নিচে চলো।মাইজা দরজা আটকে রেখেছে।
মেহবিনের কথায় সবাই চমকে গেলো।সবাই নিজেদের কাজ রেখে মেহবিনের ফ্লাটে গেলো।গিয়ে সত্যিই দেখল মাইজা দরজা আটকে বসে আছে।রাফিজ গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।তবুও মাইজার কোনো আওয়াজ এলোনা।মায়ান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।মাইজার নতুন নাটক তার বিরক্তিকর মনে হচ্ছে।রাফিজ এবার জোরে বলে উঠে-
-”মাইজা তুই দরজা খোল নাহলে আমি কিন্তু দরজা ভাঙবো
রাফিজ দরজা ভাঙার প্রস্তুতি নিতেই খট করে দরজা খোলার আওয়াজ এলো।মাইজা দরজা খুলেছে।মাইজাকে দেখে সবাই আকাশ থেকে পড়ল যেনো।মাইজা একটা সুতির কালো রঙের থ্রি পিস পরে আছে।গায়ের সেই লাল রঙের লেহেঙ্গা আর মেকআপ কিছুই নেই।রাফিজ মাইজাকে এভাবে দেখে কিছু বলত নিবে তখন মেহবিন মাইজার কাছে গিয়ে বললো-
-”তুই কি করছিলি ভিতরে।সবাই এত ডাকলাম শুনিস নি?
মাইজা শান্ত চোখে তাকিয়ে রইল মেহবিনের দিকে।মেহবিন আবারো বললো-
-”কি হলো ব-
পুরো কথা শেষ করার আগেই মাইজা এক অবাকককান্ড করে বসল।ঠাটিয়ে এক চড় লাগিয়ে দিলো মেহবিনকে।মেহবিন সহ বাকিরা সবাই অবাক হয়ে গেলো মাইজার এমন অপ্রত্যাশিত কাজে।মায়ানের রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো। সাহস কি করে হলো তার পিচ্চির গায়ে হাত তোলার।মেহবিন অবাক নয়নে তাকিয়ে কিছু বলতে নিতেই মাইজা ক্রোধ নিয়ে বলে-
-”আমায় করুণা করছিস তুই।মা মরা মেয়েকে করুণা করছিস?নিজের কষ্ট লুকিয়ে রেখে আমাকে সিমপ্যাথি দেখাতে আসছিস? কেনো বল ,আমি কি তোর কাছে করুনার পাত্রী?
মেহবিন বিষ্ময় নিলে বলে-
-”এসব কি বলছিস?আমি তোকে কেনো করুণা করব?
মাইজা আবারো জোরে চেঁচিয়ে বলে-
-”ঠিকিই বলছি।তুই তো মায়ান ভাইকে ভালোবাসিস।তাহলে কেনো সবকিছু মুখ বুজে চুপচাপ মেনে নিচ্ছিস।এইতো মায়ান ভাইয়ের কারন নিয়ে তুই আমার সাথে কথা ও বলতি না ঘৃনা করতি।আর আম্মু মারা যাওয়ার পর তোর সব রাগ চলে গেলো।মায়ান ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলো।
মেহবিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।মিসেস রুকাইয়া তো পুরো অবাক।সে তো এসব কিছুই টের পায়নি।
মাইজা আকস্মিক বলে উঠে-
-”আমি বিয়ে করবোনা মায়ান ভাইকে।
সবাই অবাক হয়ে গেলো।মায়ান তো মাইজার কাজে পুরোই চমকে গেছে।রাফিজ অবাক হয়ে বললো-
-”তোর মাথা ঠিকাছে?কি চাইছিস কি তুই মাইজা।
-”আম্মুর শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে।
মাইজার কথা বুঝতে না পেরে রাফিজ বললো-
-”মানে।
মাইজা এক মিনিট বলে ঘরে গিয়ে একটা কাগজ হাতে নিয়ে বের হলো।তারপর সেটা রাফিজের কাছে দিয়ে বললো-
-”এটা পড় ভাইয়া।আর জোরে পড়বি।যাতে সবাই শুনে।
রাফিজ কাগজটা হাতে নিলো।তারপর সেটা মেলে পড়া শুরু করল-
-আমার প্রাণপ্রিয় মাইজা,
আমি মনে হয় প্রথম মা যে কিনা মেয়েকে কিছু বলার জন্য চিঠি লিখতে হচ্ছে।আমি জানিনা কেনো কথাটা বলার শক্তি আমার নেই।কিন্তু কথাটা তোকে বলতেই হবে।জানিস মাইজা,আমি আর রুকাইয়া একসাথে মা হওয়ার খবর জানতে পেরেছিলাম।তুই আমার জন্য দ্বিতীয় সন্তান হলেও মেহবিন ছিলো রুকাইয়ার প্রথম সন্তান।সেদিন এই খবর পাওয়ার পর রুকাইয়া কেদে দিয়েছিলো খুশিতে।ওর খুশি দেখে আমারো মনে হচ্ছিলো যেই সন্তান আসতে চলেছে সে আমারো সন্তান।তারপর তোরা হলি।তোদের দুজনকেই আমি আর রুকাইয়া নিজ সন্তান মনে করতাম।আজ এতগুলো বছর পেরিয়ে সেই সন্তানের কষ্ট আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।তোর আর মায়ানের বিয়েতে যে মেহু এত কষ্ট পাবে সেটা আমি জেনেছি পর থেকে আমার বুকের ভেতরটা চিনচিন ব্যাথা করছে।জানিস আজকে ছাদে গিয়ে মায়ান আর মেহুর কথা শুনি।ওদের কথা শুনে যতটুকু বুঝেছি ওরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে।তবে তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা পাচ্ছে না তোর জন্য।বিশ্বাস কর মা,মায়ান যদি তোকে ভালোবাসত তাহলে হয়তো আমি মেহুর হয়ে কথা বলতাম না।কিন্তু এখানে তো ওরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে।আমার অনুরোধ তোর কাছে মা,এই বিয়ে তুই ভেঙে দে।মায়ান আর মেহবিনকে এক হতে দে।মায়ানকে বিয়ে করলে তুই,মেহু,মায়ান কেও ভালো থাকবেনা।আমারকেনো জানি মনে হচ্ছে এটাই তোর কাছে করা আমার শেষ অনুরোধ ।প্লিজ মা আমার শেষ অনুরোধ টা রাখ।
ইতি তোমার
আম্মু।
রাফিজের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।মাইজা কেদে যাচ্ছে অনবরত।মেহবিনের চোখেও জল।মাইজা বলা শুরু করে-
-”আম্মু মারা যাওয়ার দুইদিন পর আমি এই চিঠিটা পড়ি।আমি সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে মেহুর সাথে মায়ান ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে তনয়া আন্টির সাথে কথা বলবো।আমি তনয়া আন্টির সাথে কথাও বলি।তিনি সব শুনে আমাকে একটা বুদ্ধি দেন।আমি যাতে মেহুর সামনে বারবার বিয়ে নিয়ে কথা বলি,হলুদের অনুষ্ঠান,বিয়ের আয়োজন এই সবকিছুর নাটক করি।এতকিছু শুধুমাত্র এইজন্যই করা যাতে মেহু রেগে হোক বা কষ্টে একবার বলে যে সে মায়ান ভাইকে ভালোবাসে।কিন্তু মেহু যেনো শক্ত পাথর চেপে বসে আছে।আমাকে ভালো রাখার শপথ করেছে।
সব শুনে মেহবিন পুরো অবাক।মায়ান অবাক হয়ে মিসেস তনয়ার দিকে তাকায়।মিসেস তনয়া মায়ানের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে-
-”অনেক বেশি বড় হয়ে গেছো তুমি।নিজের কষ্ট লুকিয়ে মায়ের সামনে ভালো থাকার অভিনয় করো।আমি মাইজাকে পছন্দ করেছিলাম ঠিকই কিন্তু বিয়ের কথা শুধুমাত্র তুমি রাজি হয়েছিলে বলেই আমিও রাজি ছিলাম।তবে এবার তোমাকে রাজি না থাকলেও তোমাকে মেহবিনকেই বিয়ে করত হবে।
মায়ান অবাক হয়ে মিসেস তনয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-
-”মা তুমি?
মাইজা চোখ মুছে মেহবিনের হাত ধরে মায়ানের সামন এনে দাড় করিয়ে বলে-
-”নিন মায়ান ভাই আপনার পিচ্চিকে আপনার কাছে এনে দিলাম। এখন আপনি ওকে বিয়ে করবেন না ফেলে দিবেন সেটা আপনার ব্যাপার।
মেহবিন মাইজার দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায়।মাইজা মেহবিনের এক হাত মায়ানের হাতে রেখে বললো-
-”আমার মায়ের শেষ অনুরোধটা রাখো তোমরা।
মায়ান আকড়ে ধরে মেহবিনের হাত।তার এখনো কিছু বিশ্বাস হতে চাইছেনা।খুশিতে এতটাই পাগল মায়ান যে কাল বিলম্ব না করে সবার সামনে মেহবিনকে জড়িয়ে ধরে।মেহবিন প্রথমে অবাক হলেও পরে একহাত মায়ানের পিঠে রাখে।সবার ঠোটের কোণে কিঞ্চিত হাসি ফুটলেও মাইজার ঠোটে মায়ের শেষ অনুরোধ রাখতে পারার তৃপ্তির হাসি।
(সবার কথা রেখে মায়ান আর মেহবিনের মিল দিলাম।সবাই প্লিজ রেসপন্স করবেন।😇 ধন্যবাদ।হ্যাপি রিডিং)
চলবে……