অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব-৩৮

0
1257

#অব্যক্ত ভালোবাসা
#পর্ব :৩৮(haldi&wedding part-1)
#সুমাইয়া ইসলাম নিশা

হলুদ লালের মিশ্রনে লেহেঙ্গা পরিহিত মেহবিনকে আজ অপরূপ সুন্দর লাগছে।সন্ধ্যার আবছা আলো আর মরিচাবাতির আলোতে মেহবিনের পুরোমুখময় লাল আভাতে ভরে আছে।মেহবিনের হলুদ সন্ধ্যা আজকে।আজো স্টেজ ছাদেই করা হয়েছে।মেহবিন লেহেঙ্গা পড়ে কাচা ফুলের গহনা পরে বসে আছে স্টেজে।মাইজা বরাবরের মতো মেহবিনের পাশে ওর জন্য বরাদ্দ করা জায়গাতে বসে আছে।মাইজা আজ কমলা রঙের লেহেঙ্গা পরেছে।মাইজাকেও ভীষণ সুন্দর লাগছে।একটু পরেই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো।একে একে সবাই এসে হলুদ লাগাতে লাগল।মাইজাও সেই কখন মেহবিনকে হলুদ লাগিয়ে বসে আছে।গতরাতের সেই ছেলে অর্থাৎ রনক এর কথা মাইজা বেমালুম ভুলে গিয়েছে।কারণ আজ সারাদিনেও মাইজার সাথে রনকের দেখা হয়নি।মেহবিন মায়ানকে খুজছে।মায়ান আজ সকালে বলেছিলো সে নাকি ওকে হলুদ লাগাতে আসবে কিন্তু মায়ানের কোনো খবর নেই।মেহবিন চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরো ছাদে চোখ বুলালো।কিন্তু মায়ান কোথাও নেই।সুপ্ত অভিমান জমলো তার মনে।মায়ান কেনো এলো না।সবাই হলুদ ছোয়ালো অথচ সে কেনো ছোয়ালো না।মেহবিন অনেক মুভিতে দেখেছে।নায়ক সবার প্রথমে নাইকা কে হলুদ লাগানোর জন্য পাইপ বেয়ে চোরের মতো বাসায় এসে হলুদ ছুঁইয়ে যায়।সেইসব মুভির কথা মনে পড়তেই মেহবিনের অভিমান গাঢ় হলো।অভিমান নিয়ে মুখ ফুলিয়ে রইল।মাইজা তখন ওর পাশে ফোন নিয়ে গুতাগুতি করছে।কিসের যেনো ভিডিও মনোযোগ দিয়ে দেখছে।

-”মাই ডিয়ার ভাবি,আপনি যার জন্য বেলুনের মতো মুখ ফুলিয়ে বসে আছেন সেই ব্যক্তি বর্তমানে আপনার ফ্লাটে আপনার বেডরুমে আছে।অনুগ্রহপূর্বক আপনার বেলুনের মতো ফুলানো মুখটা কাঙ্খিত ব্যাক্তির কাছের গিয়ে ফাটিয়ে আসুন।

এমন উদ্ভট কথা শুনে মেহবিন আর মাইজা দুইজনেই সামনে তাকায়।রনক দাড়িয়ে আছে।গতরাতের মতোই ঠোটে দুষ্টুমি ভরা হাসি।তবে আজকে গতরাতের মতো অদ্ভুত বেশভূষায় নেই।আজকে সে লাল রঙের পাঞ্জাবি পরেছে।মেহবিন কিছুসময় চুপ করে রইল।রনকের কথাটা বুঝতে পারল গুনে গুনে দুসেকেন্ড পরেই।মেহবিনের ঠোট প্রসারিত হলো।মাইজা কপাল কুঁচকে রনকের দিকে তাকিয়ে আছে।এই এলিয়েনের কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই সবসময় এমন আজব কথা বলে।মাইজা রনকের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে থেকেই মেহবিনকে বললো-

-”না মেহু,তুই একা যাবিনা।আমিও তোর সাথে আসছি।

কিন্তু ততক্ষণে মেহবিন স্টেজ থেকে নেমে ছাদের সিড়ি বেয়ে চলেও গিয়েছে।মাইজা মেহবিনকে না দেখতে পেয়ে ওর পেছনে যাওয়া ধরলে রনক মাইজার কনুই ধরে টান দেয়।মাইজা চমকে রনকের দিকে তাকায়।তারপর রেগে গিয়ে বললো-

-”কি সমস্যা হাত ধরে টানছেন কেনো?

-”কতবার বলেছি কারো মাঝে থার্ড পারসন হওয়ার চেষ্টা করবেননা।জানেন তো কোনো ছেলে আর মেয়ে যখন নির্জনে থাকে তখন তাদের মাঝখানে সয়তান থাকে থার্ড পারসন।যদিও কথাটা অন্য টপিক নিয়ে বলা হয়েছে।তবে আপনাকে দেখলে বর্তমানে আমার এই কথাটাই মনে পড়ল।

মাইজার রাগ আকাশ ছোয়াল।মাইজা রনকের হাত ঝারা মেরে সরাতে নেয়।কিন্তু সেখানেই বিপত্তি ঘটে।হাত ঝারা মারতে গিয়ে মাইজার কাধের থেকে পিন খুলে ওরনাটা নিচে পরে যায়। এহেন কান্ডে মাইজা হকচকিয়ে যায়।রনক ও বিপাকে পড়ে যায়।সে মাইজার হাত ছেড়ে দেয়।মাইজা তড়িঘড়ি করে ওরনা তুলবে তখনই ফিসফিস হাসির শব্দ শুনা গেলো।মাইজা চমকে সামনে তাকায়।কয়েকটা ছেলে দাত বের করে ওর দিকেই তাকিয়ে থেকে ফিসফিস করছে।মাইজা অবশ হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।এমন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন রনক এর আগে কখনো হয়নি।সে ঠান্ডা চোখে তাকাল ছেলেগুলোর দিকে।তারপর নিচ থেকে ওরনা তুলে মাইজার গায়েমেলে দিল।রনক নামল স্টেজ থেকে।মাইজা এখনো স্টেজে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছে।রনক ছেলেদের দিকে এগিয়ে এসে ওদের মধ্যে একটা ছেলের চোখ বরাবর ঘুষি মারল।উপস্থিত সবাই হতভম্ব।মাইজা নিজেও বেশ চমকেছে।ছেলেটা ছিটকে নিচে পরে যায়।বাকি ছেলেগুলোর মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেছে।রনকের চোখ মুখ এখনো শান্ত।সে কি আদৌ রেগে আছে কিনা তা বুঝার উপায় নেই।রনক ছেলেটার সামনে এক হাটুভেঙে বসল।ছেলেটা ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে রনকের দিকে।রনক ঠোট বাকিয়ে ছেলেটার আঘাত পাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে বললো-

-”তুই যেই গরুর মতো চোখগুলো দিয়ে একটা মেয়ের দিকে কুনজর দিয়েছিলি সেই চোখটাই আমি আমার হাতের স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দিয়ে ইঁদুরের মতো চোখ বানিয়ে দিলাম।নাউ ইটস পারফেক্ট।

অপমানে ছেলেটার মুখ থমথমে হয়ে গেলো।ঐ ছেলের বাকি সাথী গুলো ওকে টেনে কোনোমতে নিচে নিয়ে গেলো।মাইজা মাথা নিচু করে কাদছে।রনক মাইজার সামনে দাঁড়িয়ে হেসে বললো-

-”যাস্ট ফরগেইট ইট।তোমাকে এইভাবে কাদতে একদমই মানায়না শুকনো মরিচ।তোমাকে তো আমার ভাবীর দিকে তাকিয়ে জেলাসি ভরা লুকেই মানায়।

মাইজা থমথমে মুখে তাকাল রনকের দিকে।চাইলেও রনকের কথায় রাগতে পারল না মাইজা।কিছুক্ষণ আগের করা রনকের কাজে মাইজা কৃতজ্ঞ।

———————

মেহবিন নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে নিজের বেডরুমের দিকে পা বারাল।বাসায় আপাতত কেউ নেই।ড্রয়িং রুমে লাইট জ্বলছে।তবুও মেহবিনের কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে।ভয়ে ভয়ে রুমের দিকে এক পা দিতেই কেউ একটানে ভিতরে নিয়ে গেলো।তারপর দেয়ালের সাথে একদম মিশিয়ে দাড় করাল।মেহবিন চোখ মুখ কুচকে বন্ধ করে আছে ভয়ে।অবশেষে ভয়ের অবসান ঘটে মায়ানের মোহনীয় কন্ঠস্বরে-

-”ভয় পেয়েছো?

মেহবিন পিটপিট করে চোখ খুলল।বাইরে থেকে আসা ল্যাম্পপোস্টের আলোতে মায়ানের মুখটা দেখা যাচ্ছে।মেহবিন উত্তর দিলোনা।সে যে বর্তমানে নতুন করে মায়ানের প্রেমে পরেছে।এই ছেলেটার প্রেমে সে ক্ষনে ক্ষনে হাবুডুবু খেতে রাজি।মায়ান আবারো জিজ্ঞেস করলো-

-”ভয় পেয়েছো মেহু?

মেহবিন হুম বললো আস্তেকরে।মায়ান মুচকিহেসে মুচকি হেসে বললো-

-”হলুদ ছোয়াইনি বলে অভিমান করেছো?

মেহবিন মিছেমিছি অভিমান দেখিয়ে মুখ ফিরাল।মায়ান হাসল।মেহবিনের আরেকটু গা ঘেঁষে দাড়াল।দূরত্ব কমলো।মেহবিন তখনো মুখ ফিরিয়েই ছিলো।মায়ান নিজের মুখটা মেহবিনের গালের কাছে এনে নিজের গাল ছুঁয়ে দেয়।মেহবিন চমকে যায়।মায়ান কিছুসময় সেভাবেই থাকে।কেটে যায় কিছু মুহূর্ত।মায়ান সরে আসে।মেহবিন নিজের গালে হাত দিয়ে দেখে হলুদ।ঠোটে কিঞ্চিত হাসি ফুটে ওঠে মেহবিনের।মায়ান সেই হাসির দিকে নেশাভরা চোখে তাকিয়ে থাকে।হুট করেই মায়ান প্রশ্ন করে বসে মেহবিনকে-

-”এখন যদি আমি তোমাকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেই তুমি কি কষ্ট পাবে মেহু?

মেহুর শরীর কেপে উঠল।ভেতরের শীতল হাওয়া কাপনি ধরিয়ে দিলো মেহবিনের।থরথর কাপতে লাগলো।মায়ান উত্তরের অপেক্ষা করলো না।মুখ এগিয়ে নিয়ে গেলো মেহবিনের দিকে।ভয়ে মেহবিন চোখ বন্ধ করে ফেললো।অনেকটা সময় যাওয়ার পরও কিছু হচ্ছে না দেখে মেহবিন চোখ খুলার সিদ্ধান্ত নিলো।তার আগেই কপালে কিছু অনুভব করলো।চোখ মেলে দেখলো মায়ান পরম যত্নে ওর কপালে উষ্ণ পরশ একেঁ দিচ্ছে।মেহবিন আবেশে চোখ বুজলো।ভেতরটা প্রশান্তিতে ভরে গেলো মেহবিনের ছোট্ট হৃদয়।

—————–
এখন মধ্যসকাল।পোনে এগারোটা বাজে।মেহবিন,মাইজা,কায়া আর মেহবিনের আরো দুইটা কাজিন ভিলে পার্লারে গিয়েছে।এখন ওরা সবাই পার্লারে আছে।সবার সাঝ কমপ্লিট।শুধু কনের সাজ বাকি।পার্লারের মেয়েটা মেহবিনকে সাজাতে নিলে মাইজা বাধ সাধে।

-”আপনি না আপু,কনে কে আমি সাজিয়ে দিবো।আপনাকে আপনার পেমেন্ট করা হবে।আপনি শুধু আমাকে মেকআপ প্রোডাক্ট গুলো ইউজ করতে দিন।

পার্লারের মেয়েটা আর দ্বিরুক্তি করল না।মেহবিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-

-”তুই সাজাবি মানে?

-”তুই ভুলি গেলি তুই না একবার আমাকে বলেছিলি যে তোর বিয়েতে যেনো আমি তোকে সাজিয়ে দেই।তুই ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি।

মেহবিনের মনে পড়ে গেলো।কিন্তু সে এখন চায়না মাইজা তাকে সাজাক।এতে মাইজার কষ্ট হবে।মেহবিন মাইজাকে না বলতে যাওয়ার আগেই মাইজা হাতে ফেস প্রাইমার তুলে নিয়ে বললো-

-”তোর না আমি শুনবোনা।সো শাট আপ।

মেহবিন চুপ মেরে গেলো।টানা দুইঘন্টা মাইজা সাজিয়ে দিলো নিজের প্রাণপ্রিয় বন্ধু কে।সাজানো শেষে মেহবিন আয়নায় তাকায়।হ্যা আজকেও মাইজার হাতের সাজে মেহবিনকে দারুণ লাগছে।মেহবিন অবাক হলোনা কেনো যেনো।চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল।মাইজা বিরক্ত হলো।মেহবিনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললো-

-”তোর আবার কোথায় সমস্যা হলো?আমার এত কষ্টের সাজ নষ্ট করার জন্য উঠে পরে লাগলি কেনো?তুই জানিস কালকে থেকে হাজারটারো বেশি ব্রাইডাল মেকোভার দেখেছি।শুধু তোকে সাজানোর জন্য।আর তুই কিনা সেটা নষ্ট করছিস।

মেহবিন ভে করে কেদে দিলো।মাইজা মেহবিনের মাথায় হাত রেখে বললো-

-”দেখ সাজ যদি নষ্ট হয়েছে তাহলে তোর কান্না করার শখ একদম ঘুচিয়ে দিবো।

মাইজা হেসে কথাটা বলে সবার অগোচরে চোখের কোণে জমা জলটুকু সাবধানে মুছে নিলো।

চলবে……..

*(ছোট হয়েছে জানি।একটু মানিয়ে নিন।সারাদিন কলেজ,স্টাডি সামলে লিখতে সময় আর শক্তি পাই না।কেমন হয়েছে পর্বটা জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here