ধর্ষিতা বউ পর্ব-৬

0
971

#ধষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা

#৬

দীর্ঘ এক বছর পর প্রাপ্তিদের বাড়ীতে আনন্দের ঝলক। অনেক ঝড়ঝাপটা দিয়েই কাটিয়েছে দিন গুলো।প্রাপ্তিদের বাড়ীটা সুন্দর করে সাজিয়েছে আসিফ।সব কাজ গুলো নিজের হাতেই করছে আসিফ।কারণ আজ তার আদরের বোন প্রাপ্তিকে দেখতে আসছে।কিন্তু প্রাপ্তির মন ভালো নেই।তারা কি তার ব্যাপারে সব জেনেই তাকে দেখতে আসছে? এই ব্যাপারে ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে। কথা বলবোই বা কিভাবে সকাল থেকে একটা বারের জন্য ভাইয়ার দেখা পেলাম না।কাজ নিয়ে পড়ে আছে।মনে হচ্ছে আজকেই বিয়ে।আসিফ অরণীর রুমে গিয়ে, এই অরণী প্রাপ্তিকে একটু সাজিয়ে দিস তোর হাতে।ও তো সাজগোছ করতে একদম পছন্দ করেনা।

অরণী -ভাইয়া তুই চিন্তা করিস না আমি আছি না।তুই অন্য দিক সামলিয়ে নে।
প্রাপ্তির মা এসে বললো, আসিফ এইদিকের আয়োজনটা কেমন চলছে?

আসিফ -আম্মু আমি সব সামলিয়ে নিয়েছি।তোমরা চিন্তা করোনা।

নিলিমা বেগম -আসিফ! প্রাপ্তি তো সকাল থেকে রুমেই বসে আছে তুই ছাড়া তো কারো সাথে কথা ও বলে না।একটু গিয়ে দেখনা।

আসিফ -হেঁ ঠিকি বলেছো দেখি কি করে।
আসিফ প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখে গান ছেড়ে দিয়ে খাটের এক কোণায় চোখ বন্ধ করে মাথার উপর হাত রেখে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।আসিফ একটা চেয়ার টেনে সামনে বসলো। গালের মধ্যে হাত রেখে,আমার বোনের কি মন খারাপ আজকের দিনে?

প্রাপ্তি চমকে উঠে ভাইয়া তুই? কখন এলি?

আসিফ -এখনি। এইভাবে মনমরা হয়ে আছিস কেন?

প্রাপ্তি -ভাইয়া! ছেলেরা কি সব জেনেই আসছে নাকি না জেনে?
আসিফ কথা কাটানোর জন্য তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে একটু পর ওনারা এসে যাবে।

প্রাপ্তি -ভাইয়া এইটা আমার আনসার নয়।
আমি চাইনা আমার কোনো বিষয় গোপন থাকুক।ওনারা যদি সব জেনে এগুতে চান তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।

আসিফ -এই নিয়ে তুই চিন্তা করিসনা,আমি আছিতো।কথাটা বলেই আসিফ উঠে গেলো।
অরণী প্রাপ্তির রুমে এসেছে প্রাপ্তিকে রেডি করাবে বলে।অরণী কে দেখে প্রাপ্তি মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে আমাকে তোর সাজাতে হবেনা।আমি নিজেই হালকা সেজে নিচ্ছি।

অরণী -ওকে আপু।আমি তাহলে আসি।ছেলেরা নাকি এসে গেছে আমি দেখে আসি।
নিলিমা বেগম অরণীকে ডেকে তুই এখন ওদের সামনে যাওয়ার দরকার নেই।প্রাপ্তিকে নিয়েই একসাথে যাস।

অরণী -ঠিক আছে আম্মু।(নাস্তার প্লেট হাতে নিতে নিতে)আচ্ছা আম্মু আপুকে যে দেখতে আসছে ওই ছেলের নাম কি? কি করে?

নিলিমা বেগম -ওমাঃ তুই জানিসনা?
ছেলের নাম সিয়াম,বিজনেস করে।
কথাটা শুনেই অরণীর হাত থেকে প্লেট গুলো পড়ে গেলো।

নিলিমা বেগম -তুই এইটা কি করলি আজকের এই শুভ দিনে ভাঙাভাঙি শুরো করলি।
নিলিমা বেগমের মুখে সিয়ামের নামটা শুনে অরণী অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো সিয়াম পারলো আমাকে এইভাবে ঠকাতে? আমরা দুজন দুজনকে এতো ভালোভাসি আর সে কিনা,,,,,,,, এইটা কিভাবে পারলো সিয়াম।ঠিক আছে ও যখন ভেবে নিয়েছে আপুকে বিয়ে করবে তাহলে আমি এর মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না।আমার আপু অনেক কষ্ট পেয়েছে আমি আর ওকে কোনো কষ্ট পেতে দিবোনা।সিয়ামকে নিয়ে আপু যেন সুখে থাকে তার ব্যবস্থাই করবো। আসিফ এসে আম্মু তোমাদের হলো ওদেরকে নাস্তা দিতে হবেতো।

অরণী আস্তে করে আসিফকে জিজ্ঞাস করলো,ভাইয়া ছেলে আসছে?

আসিফ -নারে,,,,,ছেলের মা,বাবা,চাচা,আর বোন আসছে,ছেলে নাকি বিজনেসের কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেনি।যাইহোক তুই প্রাপ্তিকে নিয়ে আয়।আমি এইদিকটা দেখছি।

প্রাপ্তির ইচ্ছে করছিলোনা ছেলে পক্ষের সামনে যেতে কিন্তু কি করবে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে যেতে হবে।অরণী প্রাপ্তিকে এনে তাদের সামনে বসালো। সিয়ামের মা উঠে এসে প্রাপ্তি সাথেই বসলো।অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে,কি নাম তোমার?

প্রাপ্তি -জ্বী,,, মিফতাহুল জান্নাত প্রাপ্তি।

সিয়ামের মা -মানুষ টা যেমন সুন্দরী নামটাও রেখেছে সেই রকম।

সিয়ামের মা -আমার আর কিছু জিজ্ঞাস করার নেই তোমাদের আছে?

সিয়ামের বাবা- না আমাদেরও নেই।প্রাপ্তির বাবার দিকে তাকিয়ে,আজাদ সাহেব! মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।

আজাদ সাহেব -আলহামদুলিল্লাহ্‌। অরণী প্রাপ্তিকে নিয়ে যাও।

সিয়ামের বাবা -আজ তো আমার ছেলে আসতে পারিনি।আগে আপনারা সিয়ামকে দেখুন। দেখে পছন্দ হলে না হয় দিন তারিখ ফেলা যাবে।

আজাদ সাহেব -আমাদের কিন্তু দুটো বিয়ে একসাথেই হবে।

আজাদ সাহেবের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আসিফের মনে প্রশ্ন জাগলেও সবার সামনে করা ঠিক হবেনা ভেবেই আর কিছু বলেনি।

সিয়ামের বাবা -এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।তো বেয়াই সাহেব আজ তাহলে উঠি।মেয়ে কিন্তু আমার ঘরের লক্ষ্মী হয়েই থাকবে।

ছেলের বাড়ীর সবাইকে বিদায় দিয়েই আসিফ আজাদ সাহেব কে বললো,আব্বু! দুটো বিয়ে মানে? কার কার বিয়ে?

আজাদ সাহেব মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে আসিফের কাঁধে হাত রেখে, অরণীর বিয়ে।
ভাবছি দুই বোনের বিয়ে একসাথেই দিবো।

আসিফ -অরণীর জন্য ছেলে দেখেছো নাকি?
আজাদ সাহেব-আচ্ছা পরে বলবো।এখন আমার কাজ আছে।
আসিফ -আব্বু তোমার যা ভালো মনে হয়।

প্রাপ্তি বারান্দায় বসে বই পড়ছে।পাশে অরণী গিয়ে দাঁড়িয়ে আপু জানিস আজকে তোকে পরীর মতো লাগছে।

প্রাপ্তি বইয়ের দিকে তাকিয়েই ওইটা তোর মনের ধারনা।

অরণী -আচ্ছা আপু তুই এই বিয়েতে খুশী?

প্রাপ্তি -সবাই খুশী মানে আমিও খুশী। আমি সবার মতের বাহিরে নয়।
আচ্ছা তুই,,,,, এইসব কেন বলছিস।তোর ভালো লাগেনি?

অরণী নিজের চোখে পানি লুকাতে চেষ্টা করছে আর বলছে, আরে নাহ্ আমি অনেক খুশী তবে তোকে অনেক মিস করবো।

প্রাপ্তি -আমি কি বরাবরের জন্য যাচ্ছি নাকি?

অরণী -তুই দেখিস সিয়াম তোকে এতো ভালোবাসবে তোকে আসতেই দিবেনা।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি বইয়ের থেকে মুখ উঠিয়ে অরণীর দিকে তাকিয়ে, তুই এমন ভাবে বলছি মনে হচ্ছে তোর আগে থেকেই ওই ছেলেকে চেনা।

অরণী -না আপু এমনিই বললাম।

প্রাপ্তি -আব্বু কি বলেছে শুনেছিস?তোকে নাকি কাল দেখতে আসবে।

অরণী -হুম শুনেছি।ভাইয়াকে বলবো আব্বুকে বুজিয়ে এই বিয়ে বাদ দিতে।

প্রাপ্তি -কেন? তোর কি পছন্দের কোনো ছেলে আছে নাকি?

অরণী -আরে নাহ্ এমনি বললাম।আসলে আমার এখন বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই।কথাটা বলেই অরণী চলে গেলো।
প্রাপ্তির কাছে অরণী কথা গুলো একটুও ভালো লাগেনি। মনে হচ্ছে কথার মধ্যে কিছু একটা লুকাচ্ছে।প্রাপ্তি ছোট্র একটা নিশ্বাস ফেলে আবার বইয়ের দিকে মন দিলো। আজাদ সাহেব মাগরিবের নামাজ পড়ে বাহিরে থেকে এসে নিলিমা বেগম কে চা দিতে বললেন।আসিফ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে, আব্বু তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।

আজাদ সাহেব -হ্যাঁ কি বলবি বল?

আসিফ তার মাকে ডেকে বললো তাকেও চা দিতে,আচ্ছা আব্বু অরণীর হঠাৎ করে বিয়ে দিতে চাইছো? ছেলেটা কি তোমার জানা শুনা কেউ?
আজাদ সাহেব -আরে নাহ্ তেমন চিনিনা।আমার এক কলিং এর ভাগ্নে। শুনেছি প্রখ্যাত ব্যবসায়ী আবিদ চৌধুরীর ছোটো ছেলে ইকবাল মাহমুদ আয়ান। যদি অরণীকে দেখে ভালো লাগে তাহলে নাকি একসাথে আংটি পরিয়ে যাবে।

আসিফ -তাহলে তো ভালো কথা।
নিলিমা বেগম রান্নাঘর থেকে আসতে আসতে বললেন এতো বড় ঘরের ছেলে আমাদের মেয়েকে কি পছন্দ হবে?

আসিফ -আম্মু এখনকার ছেলেরা টাকাপয়সা দেখে বিয়ে করেনা।মেয়ে সুন্দরী দেখে বিয়ে করে।
নিলিমা বেগম মুচকি হাঁসি দিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে তুমি কিছু বুজেছো? তোমার ছেলে বোন কে দিয়ে আগেই বুজিয়ে দিচ্ছে ঘরে কেমন মেয়ে আনতে হবে।
আজাদ সাহেব -হুম ভাবছি মেয়ে দুটোকে পরের ঘরে দিয়ে নতুন আরেক টা মেয়ে নিয়ে আসবো।কি বলো আসিফের আম্মু?

নিলিমা বেগম -কথাটা ফেলে দেওয়ার মতো না বলে হেঁসে দিলেন।

আসিফ লজ্জা পেয়ে আম্মু তুমিও না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।

নিলিমা বেগম পিছন থেকে ডেকে বললো মেয়েদের মতো লজ্জা পাচ্ছিস কেনো? বিয়ে তো একদিন করতেই হবে।

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here